working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 69

Weekly

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা

৬৯ তম সংখ্যা ৭ নভেম্বর, ২০২২

 

 

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

 

  • করঅব্যাহতি কমানো করজাল বাড়ানোর চাপ আইএমএফের
  • “প্রকাশ্যে বৈরি হলেও ভেতরে তারা বন্ধু”
  • দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিটি বাহিনীকে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে
  • পতাকা বৈঠক: সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করবে বিজিবিবিজিপি
  • বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেবল কাগজে কলমে
  • হাসিনার পতনে অর্থনীতি বাঁচবে কী?”
  • “ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ১৭ জেলায় ৩৮ প্রাণহানি: তছনছ উপকূলীয় অঞ্চল”
  • বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়, বাড়ছে ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা
  • ঢাকার বুকে হ্যালোইন নাইট
  • অ্যাম্বার হার্ডকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে নিখুঁত চেহারার নারী জোডি কমার, সেরা দশে দীপিকা

 

 

করঅব্যাহতি কমানো করজাল বাড়ানোর চাপ আইএমএফের

খবরঃ

সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল এনবিআরের আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্ক এই তিন খাতেই কর অব্যাহতি কমাতে বলেছে আইএমএফ। কোন কোন খাতে কর অব্যাহতি আছে, এর তালিকা চেয়েছে আইএমএফ। এছাড়া ভ্যাটখাতের সংস্কারে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। …অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। সংস্থাটি আপত্তি জানিয়ে বলেছে ব্যাংকগুলোর পর্ষদে আমলাদের প্রাধান্য দূর করতে হবে। … সুদের হারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া, মূল্যস্ফীতি কমানোর কৌশল প্রণয়ন এবং বছরে চারবার মুদ্রানীতি প্রকাশের কথা বলেছে আইএমএফ। (www.prothomalo.com/business/analysis/4l0lnedgg4)

মন্তব্যঃ

কোন ‘প্রটোকল’ কিংবা ‘অর্ডার অব প্রিসিডেন্স’-এর তোয়াক্কা না করে রাষ্ট্রের নার্ভ-সেন্টারগুলোতে সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফ যেভাবে দৌড়ঝাপ করছে, আদেশ-নিষেধ ও চাপ প্রয়োগ করছে এবং এসকল বিভাগগুলোর কর্মকর্তারা যেভাবে আইএমএফ-এর কাছে তাদের আমলনামা পেশ করছে তা মূলত আমাদের রাষ্ট্রের উপর সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। অথচ তাদের নগ্ন হস্তক্ষেপ ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকে কিছু বুদ্ধিজীবী অত্যন্ত চতুরভাবে জনগণের জন্য কল্যানকর হিসেবে উপস্থাপন করছে। যেমন, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আইএমএফের প্রতিনিধিরা রাজস্ব আয় বাড়ানোর ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানোর দাবী জানিয়েছে যা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে দুর্বল জায়গা’। আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশে কর অব্যাহতির পরিমাণ অনেক বেশি, যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই কোন কৌশল নয়। বাজার-দরের ভিত্তিতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্য নির্ধারণ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বোর্ডে সরকারি আমলার সংখ্যা কমানো এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ, যার প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই অনুভূত হচ্ছিল’। জাহিদ হোসেন আরো বলেন, ‘এসব সমস্যার কথা সবাই জানলেও সরকার বিগত বছরগুলোতে এর সমাধানে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, এখন আইএমএফ-এর চাপের কারণে সরকার বাধ্য হবে’। বাস্তবতা হল আইএমএফ ভাল করেই জানে খেলাপি ঋণ, ব্যাংকিং খাতে সরকারী হস্তক্ষেপ ও লাগামহীন দুর্নীতি/লুটপাট, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা-বাজারে অস্থিরতা ইত্যাদির মাধ্যমে কোন দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা যদি তৈরী না হয় তাহলে কোন দেশই তার কাছে কখনো ঋণের জন্য হাত পাতবে না। আইএমএফ এটাও জানে যে বাংলাদেশের মত একটি অব্যবস্থাপনাপূর্ণ অর্থনীতিতে কর-অব্যাহতি কমালে ও করজাল বাড়ালে বিভিন্ন উপায়ে তা দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা ও চাপ তৈরী করবে, যার ফলে আবার নতুন করে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। এটি এখন প্রমাণিত সত্য যে, কোন দেশের অর্থনীতিকে ঋণের জালে আটকানোর জন্য আইএমএফ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই সমস্যাগুলোকে তৈরী করে ও জিইয়ে রাখে (An Economic Hit Man Confesses and Calls to Action, John Perkins: TEDx Talks)।

ক্রুসেডে পরাজিত হয়ে ইউরোপীয় খ্রীস্টানরা পরবর্তীতে ‘হলি লীগ’ (Holy League) প্রতিষ্ঠা করে মুসলিমদের পরাজিত করতে একদিকে সামরিক আগ্রাসন ও অপরদিকে মিশনারি আগ্রাসন পরিচালনা শুরু করে। ১৬৮৩ সালে মুসলিম সেনাবাহিনী ‘ভিয়েনা অবরোধ’ উঠিয়ে নিতে বাধ্য হওয়ার পর থেকে মিশনারি আগ্রাসন ধীরে ধীরে ব্যাপক আকার ধারণ করতে শুরু করে যা ১৯২৪ সালে চূড়ান্তভাবে খিলাফত ধ্বংসের মাধ্যমে পরিনতি লাভ করে। এরপরও থেমে থাকেনি মিশনারি আগ্রাসন। বর্তমানে চার্চ অব ইংল্যান্ড, চার্চ অব সুইডেন, চার্চ অব ডেনমার্ক, ইভ্যাঞ্জেলিক্যাল লুথারিয়ান চার্চ সহ আরো বিভিন্ন চার্চ অনুদানের নামে অকাতরে অর্থ বিলিয়ে বাংলাদেশে হাজার হাজার এনজিও পরিচালনা করছে যেগুলো মূলত মিশনারি আগ্রাসনের পোশাকী ও ছদ্মরূপ। এই চার্চগুলোর পাশাপাশি USAID, UKAID, DANIDA প্রভৃতি সংস্থাগুলো যেভাবে বছরের পর বছর ধরে দৃশ্যমান কোন অবকাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়াই অকাতরে অর্থ ঢালছে, তাদেরই প্রতিষ্ঠান আইএমএফ এত মরিয়া হয়ে শর্তারোপ করবে শুধুমাত্র সামান্য কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণের কিস্তি ঠিকঠাক মত পাওয়ার জন্য, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। প্রকৃতপক্ষে এনজিও-রূপী মিশনারিগুলো দেশের আনাচে কানাচে কাজ করে যাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর বিশ্বাস, ধ্যানধরণা, কৃষ্টি-কালচার প্রভৃতিকে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে এর প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে এবং বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ কাজ করে যাচ্ছে আমাদের উপর এই সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর নিয়ন্ত্রনকে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য। সুতরাং আইএমএফ-এর ঋণ ও শর্তারোপের বিষয়টিকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তা হবে খুবই সংকীর্ণ একটি দৃষ্টিভঙ্গী। এই কাফির রাষ্ট্রগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্যের ব্যাপারে সতর্ক করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, “তারা (কাফিররা) তোমাদের ক্ষতি সাধনের কোন উপায়ই বাদ রাখবে না তারা তোমাদের ধ্বংস কামনা করে তোমাদের প্রতি তাদের শত্রুতাতো তাদের মুখ দিয়ে প্রকাশিত হয়েই পড়েছে, আর তাদের অন্তরে যা লুকায়িত রয়েছে তা আরো ভয়ঙ্কর (আলি-ইমরানঃ ১১৮)।

  • রিসাত আহমেদ

 

 

 

“প্রকাশ্যে বৈরি হলেও ভেতরে তারা বন্ধু”

খবরঃ

রাজনীতির মাঠে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিরোধিতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকায় কর্মরত রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের সমালোচনা করলেও ওরা এক টেবিলে বসেছিলেন। এই ‘ওরা’ হলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তারা একে অপরকে বন্ধু বলেও সম্বোধন করেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি টিভি চ্যানেল আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ দৃশ্য দেখা যায়। নিজ বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে নিজের ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেন। (m.dailyinqilab.com/article/528007)

মন্তব্যঃ

নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান। আর তাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্কের মূলভিত্তি হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক দর্শন, অর্থাৎ স্যেকুলারিজমের ভিত্তিতে গড়ে উঠা ‘গণতান্ত্রিক-পুঁজিবাদী’ ব্যবস্থা। তবে তাদের এই বন্ধুত্বের মধ্যে কিছুটা শ্রেণিভেদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে এখানে মনিব গোত্রীয়, আর আওয়ামী-বিএনপি হচ্ছে এখানে দাস গোত্রীয়। তবে একাধিক দাসগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতায় আরোহনের তীব্র প্রতিযোগীতার কারণে যারা যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি সার্ভিস দিতে চুক্তিবদ্ধ হয় যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকেই ক্ষমতায় আনে। ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা এ বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন, “১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন গ্যাস বিক্রির জন্য আমাদের প্রস্তাব দিয়েছিল। এরপর আমাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েও তারা একই প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমি তখন তাদের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই। ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব পালন করে। তখন আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বাংলাদেশে এসেছিল। লতিফুর রহমানের বাসায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষে আমি এবং তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মরহুম জিল্লুর রহমান গিয়েছিলাম আর বিএনপির পক্ষে গিয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া এবং মান্নান ভূঁইয়া। সেখানেও আমাকে একই প্রস্তাব দিয়েছিল। বিএনপি তখন তাদের সাথে প্রস্তাবে সম্মত হয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। সেখানে লাঞ্চের আয়োজন করা হয় আর এই কথা আলোচনা হয়। আমি চলে আসি। খালেদা জিয়া থেকে যায়। জিমি কার্টার এতোই খুশি হন যে, খালেদা জিয়ার ঘাড়ে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে যান। সেখানে বসে তাদের চুক্তি হয়- খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসলে গ্যাস বেচবে। বিএনপিকে ক্ষমতায় তারা নিয়ে আসল।” (উৎসঃ www.dailyinqilab.com/article/53633)

মূলত এসকল বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠানে কি নির্ধারণ করা হয় তা আমরা বুঝতে পেরেছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আওয়ামী-বিএনপি জোট যদি একে অপরের বন্ধুই হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক আমরা পরিলক্ষিত করি এর বাস্তবতা আসলে কি? এই পারস্পরিক মতভেদ মূলত তথাকথিত গণতন্ত্র চর্চার আড়ালে জনগণকে প্রতারিত করার উপাদান বৈ আর কিছুই নয়। বাস্তবতা হচ্ছে, এই দুই দলই গণতান্ত্রিক-পুজিবাদি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পশ্চিমাদের দালালীতে সিদ্ধহস্ত। অপরদিকে, এরা আদর্শিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার কারণে পশ্চিমা তথা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থাকে সমস্যার সমাধানের জন্যে। এমনকি তা যদি হয় মেয়েদের বিবাহের বয়স নির্বাচন কিংবা করোনার সময়ে লকডাউন দেয়ার মত ছোট ছোট সিদ্ধান্ত গ্রহনেও। অপরদিকে এই দুই দলই ইসলাম বিদ্বেষের ব্যাপারে আপোষহীন। হাসিনা ও তার দলের ইসলাম বিদ্বেষ প্রকাশ্য হলেও সম্প্রতি বিএনপির ইসলামের প্রতি বিরূপ মনোভাবও প্রকাশ্যে এসেছে। যেমন, গত ১২ অক্টোবর বিএনপির এক সমাবেশে হুম্মাম কাদের ‘নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিলে সমাবেশ পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “এটা বিএনপির রাজনীতির অংশ নয়। হুম্মাম কাদেরের বক্তব্যের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।” মূলত, এরা পশ্চিমাদের কৃপা লাভের জন্য ইসলামকে পরিত্যাগ করতেও কুন্ঠাবোধ করে না!

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, মুমিনগণ যেন ঈমানদারদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে নিজেদের বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক রূপে গ্রহণ না করে। [সূরা আলি ইমরান: ২৮]। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্থাৎ খিলাফত রাষ্ট্র কখনোই বিদেশী কোন রাষ্ট্রের কাছে নিজেদের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে নিজেদের উপর কর্তৃত্ব করতে দিবে না। এমনকি অভ্যন্তরীণভাবে কোন রাজনৈতিক দল বিদেশী শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পায়তারা করবে না। আর যদি করে তবে সেটা হবে দন্ডনীয় অপরাধ। কুর‘আন-সুন্নাহ্‌ মোতাবেক হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক গৃহীত খসড়া সংবিধানের ১৮২ নং অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, কোন ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী অথবা সংঘের সাথে বিদেশী কোন রাষ্ট্রের সম্পর্ক থাকাকে সম্পূর্নরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক শুধুমাত্র রাষ্ট্রই নির্ধারন করবে এবং অনুচ্ছেদ ১৮৫’তে বলা হচ্ছে খিলাফত রাষ্ট্রের সাথে বিদেশী রাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে: “খিলাফত রাষ্ট্র সবসময় শত্রু রাষ্ট্রের অপরাধসমূহকে প্রকাশ করে দিবে, তাদের ভুল রাজনৈতিক দর্শনের ভয়ংকর দিকসমূহ তুলে ধরবে, উম্মাহর প্রতি তাদের ক্ষতিকর ষড়যন্ত্রসমূহকেও প্রকাশ করবে”। সুতরাং খিলাফত ব্যবস্থায় কাফির মুশরিক ও শত্রুরাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বতো দূরের কথা সবসময় তাদের কার্যকলাপকে নজরদারীর মধ্যে রাখা হবে।

  • মো. হাফিজুর রহমান

 

 

 

দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিটি বাহিনীকে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে

খবরঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিটি বাহিনীকে সক্ষম করে গড়ে তুলছে। আমরা শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না। বহিঃশক্তির আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে, যাতে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সবসময় ধরে রাখতে পারি। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে উপযুক্ত করে তৈরি করছি।… আমাদের সুশৃঙ্খল সশস্ত্রবাহিনী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিপুলভাবে প্রশংসিত পেশাদার একটি বাহিনী। ২০১০ সাল থেকে ভূ-মধ্যসাগরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে আমাদের যুদ্ধ জাহাজ সার্বক্ষণিকভাবে অংশগ্রহণ করছে। এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানেও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্ট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। (https://mzamin.com/news.php?news=27590)

মন্তব্যঃ

অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত বিভিন্ন বাহিনী গড়ে তুললেই কি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা পায়? যদি তাই হয় তবে আমাদের সুসজ্জিত, দক্ষ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিপুলভাবে প্রশংসিত পেশাদার সশস্ত্রবাহিনী ও বর্ডার গার্ড থাকা সত্ত্বেও, ১৯৭২ সাল থেকে অক্টোবর ২০২২ পর্যন্ত বর্ডারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী কর্তৃক ১,৮৯২ বাংলাদেশী হত্যা কিংবা মিয়ানমারের মত ভঙ্গুর রাষ্ট্র কর্তৃক বর্ডারে অব্যাহত হামলা ও হত্যাকান্ডের বিপরীতে আমরা কেন পুরোপুরি অকার্যকর? যদিও আমরা পাদুয়া ও রৌমারি যুদ্ধে আমাদের এই বাহিনীর কাছে ভারতীয় বাহিনীকে নাস্তানাবুদ হতে দেখেছি। আমরা আরও দেখি ১৪শ বছর আগে মদিনার মত একটা দুর্বল গোত্র ভিত্তিক রাষ্ট্র কিভাবে ইসলামী আদর্শ গ্রহণ করার মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী নিয়েও পারস্য এবং রোমান সাম্রাজ্যের মত পরাশক্তিগুলোকে গুড়িয়ে দিয়ে পরাক্রমশালী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।

একটি রাষ্ট্রের ধরণ যদি জাতিরাষ্ট্র ভিত্তিক হয়, তখন সেই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব হচ্ছে তাত্ত্বিক সার্বভৌমত্ব। অর্থাৎ, যে সার্বভৌমত্বের অস্তিত্ব শুধু কাগজে কলমে কিংবা মুখের বুলিতে আছে কিন্তু বাস্তবে নাই। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, জাতিরাষ্ট্রটি অন্যকোন শক্তিশালী রাষ্ট্রের অধীনে থেকে উক্ত রাষ্ট্রের স্বার্থ হাসিলে ব্যবহৃত হয়। আর এর শাসকগোষ্ঠী এবং সশস্ত্রবাহিনীও উক্ত শক্তিশালী রাষ্ট্রের দালাল কিংবা ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে কাজ করে। যেমন আমাদের বর্তমান অবস্থা। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বর্তমান শাসকগোষ্ঠী একদিকে ভারতকে যেমন দেশের অভ্যন্তরে ধারাবাহিকভাবে ট্রানজিট, করিডোর, অর্থনৈতিক অঞ্চল দিচ্ছে; অন্যদিকে, মার্কিন স্বার্থরক্ষায় TIFA, GSOMIA, ACSA এর মত একের পর এক দেশ-বিরোধী চুক্তি করছে। জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় সশস্ত্র বাহিনীকে অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ব্যানারে পশ্চিমাদের স্বার্থ সুরক্ষায় ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ, নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও জনগণের নিরাপত্তায় নিশ্চুপ ও নিমজ্জিত রাখছে। সুতরাং জাতিরাষ্ট্র মানেই হচ্ছে সেটা কোন না কোন পশ্চিমা শক্তির গোলাম, তাই যতই সুসজ্জিত বাহিনী থাকুক না কেন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এখানে সর্বদাই অরক্ষিত।

বাস্তবিক অর্থে একটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা পায় যখন শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনীর পাশাপাশি রাষ্ট্রটির নিজস্ব কোন সঠিক আদর্শিক ভিত্তি থাকে, যে আদর্শিক ভিত্তিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রটি নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধান করে এবং বহিঃবিশ্বের সাথে সম্পর্কের ধরণ নির্ধারণ করে। যেখানে তার শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনীর কাজ থাকে দেশের অভ্যন্তরে আদর্শটাকে সুরক্ষিত রাখা এবং বহিঃবিশ্বকে দিনকে দিন এই আদর্শিক রাষ্ট্রের সাথে একিভূত করা। অন্যকোন রাষ্ট্রের স্বার্থে ভাড়া খাটা নয়। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এই রাষ্ট্র প্রথমে নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধান করে। তারপর, এক এক করে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলগুলোকে তার অধীনে নিয়ে এসে উক্ত অঞ্চলগুলোর সমস্যা সমাধানে কাজ করে। যেখানে সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রিটি কোন ধরণের অবহেলা কিংবা অসমতার পরিচয় রাখেনা। এভাবে, রাষ্ট্রটি তার আঞ্চলিক পরিধি বিস্তৃত করে দিনকে দিন আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠে। আর এক্ষেত্রে তার সশস্ত্রবাহিনীর কাজ থাকে সমস্ত বস্তুগত বাধাকে অপসারণ করে রাষ্ট্রটিকে তার উদ্দেশ্য হাসিলে সামনে এগিয়ে নেওয়া। আর এভাবেই, কোন রাষ্ট্রের প্রকৃত সার্বভৌমত্ব রক্ষা পায়।

এমতাবস্তায়, আমরা যদি আবার ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ইসলামী জীবনাদর্শের ভিত্তিতে একটা আদর্শিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করি তাহলে যেমন আমাদের প্রকৃত সার্বভৌমত্ব রক্ষা পাবে, তেমনি এই অঞ্চল খুব দ্রুত ১৪শ বছর আগের মদিনার মত পরাক্রমশালী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হবে, ইনশাআল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত সত্যদ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তা অন্যান্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী হয়, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে” [সূরা-তাওবাঃ ৩৩]।

  • আসাদুল্লাহ্নাঈম

 

 

 

পতাকা বৈঠক: সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করবে বিজিবিবিজিপি

খবরঃ

সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে, মিয়ানমারের গোলা বাংলাদেশ এসে পড়া এবং আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে, ভবিষ্যতে এরূপ ঘটনা ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি। বৈঠক শেষে, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি-বিজিপি এক সঙ্গে কাজ করবে বলে সম্মতি প্রকাশ করে। (www.voabangla.com/a/6811836.html)

মন্তব্যঃ

যেদেশ আরাকানের মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে, আমাদের সার্বভৌমত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অহরহ হেলিকপ্টার নিয়ে ঢুকে পড়ছে, কিংবা মর্টার ও গুলি ছূড়েছে, সীমান্তে অসংখ্য মাইন পুতে রেখেছে; সেই দেশের সাথে বন্ধুত্বের স্বারক বিনিময়পূর্বক একসাথে কাজ করার ঘোষণা স্বভাবিকভাবেই একটি আশ্চর্যজনক ব্যাপার। অবশ্য সরকারের এধরনের সীমান্তনীতি নতুন নয়, ভারত বছরের পর বছর সীমান্তে একজন বাংলাদেশী মুসলিমের রক্ত মাটিতে শুকানোর আগেই আরেকজনকে হত্যা করে আসছে, অথচ সেই দেশের সাথে সরকারের বন্ধুত্ব নাকি রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ! সরকারের বাইরের বিরোধীদল, মিডিয়া, বুদ্ধিজীবিসহ অনেকেই সরকারের এই নীতির বিপক্ষে বলছে না। অনেকে আবার যুদ্ধ উন্নয়নবিরোধী এবং মিয়ানমার-ভারত যতই উস্কানি প্রদান করুন না কেন আমাদের কোনভাবেই তাদের ফাঁদে পা দেয়া ঠিক হবেনা বলে এই নীতিকে জায়েজ করছে। সর্বোপরি “কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়, সকলের প্রতি বন্ধুত্ব এই বিদেশনীতির পাটাতনে আজ শুধু দেশের জনগণের জান, মাল, মর্যাদা ভূলন্ঠিত হয়েছে তা নয়, দেশের সার্বভৌমত্বও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তাই এই নীতি আসলে কোথা থেকে আসলো এবং এর প্রকৃত অর্থ কি তার ময়নাতদন্ত করা প্রয়োজন।

বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় থেকেছে, তারা তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের স্বার্থ অনুযায়ী বন্ধু কিংবা শত্রু নির্ধারণ করেছে। যেমন আমরা জানি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ভারতবিরোধীতার মূলে রয়েছে, মার্কিন স্বার্থ। কারণ যতদিন বৃটেন সমর্থিত কংগ্রেস সরকার ভারতে ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা ভারতবিরোধী অবস্থানে ছিল। কিন্তু যখন মার্কিন দালাল মোদী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো তখন বিএনপিও তার ভারতবিরোধী অবস্থান হতে সরে এলো। আবার মিয়ানমারে যতদিন বৃটেন সমর্থিত সামরিক জান্তা সরকার ক্ষমতায় থাকবে বিএনপিও ততদিন মার্কিনীদের সূরে মিয়ানমারের সমালোচনা করবে। অপরদিকে, হাসিনা সরকারের মার্কিনবিরোধীতার  মূলে রয়েছে তার সাম্রাজ্যবাদী প্রভু বৃটেনের স্বার্থ। একইভাবে, বৃটেনের স্বার্থেই বর্তমান মিয়ানমার সরকারের প্রতি তার নীতি আবর্তিত হচ্ছে। বৃটেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী রোহিঙ্গা মুসলিম দমনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের স্বার্থে শরনার্থী ক্যাম্পের নামে মুলত জেলবন্দি করেছে। হাসিনা সরকার সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপকে দমন করেছে এবং রোহিঙ্গা শিবিরে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে।

বর্তমান বিশ্বের ভু-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত পরাশক্তিগুলো থেকে সম্পূর্ণ বের হয়ে একটি সত্যিকারের শক্তিশালী আদর্শের ভিত্তিতে যদি আমরা আমাদের দেশকে না গড়তে পারি, তাহলে এই অবমাননাকর বিদেশনীতি থেকে আমরা মুক্ত হতে পারবো না। আওয়ামী লীগ, বিএনপির মত রাজনৈতিক দল কিংবা যেসব বুদ্ধিজীবী বা মিডিয়া আমাদেরকে এক বলয় থেকে আরেক বলয়ে আশ্রয়ের প্রতিযোগিতায় ফেলতে চায় তাদের সবাইকে পরিত্যাগ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) কর্তৃক মদিনাতে ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের আগে মদিনার আউস ও খাজরাজ গোত্রদ্বয় শতবছর ধরে পারস্পারিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে বহিঃশক্তির সহযোগিতার মুখাপেক্ষী ছিল। যখন তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে নেতা হিসেবে এবং ইসলামকে সমাধান হিসেবে গ্রহণ করলেন তখন তারা দ্রুত তাদের সীমান্তবর্তী ইহুদি ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী থেকে শুধু যে সম্মান ও সমীহ অর্জন করেছিলেন তা নয় বরং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাহিনীদ্বয়ের মিলিত শক্তি ও ইসলামের প্রভাবে তারা দ্রুত পুরো আরব অঞ্চল বিজয় করেন এবং তৎকালীন বিশ্বের একটি অন্যতম শক্তিশালী ফেক্টরে পরিণত হন। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহ্‌’র নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ্‌ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলেআর তোমরা ছিলে আগুনের গর্তের কিনারায়, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন (সূরা আলি ইমরান: ১০৩) একইভাবে যদি আমরা রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর সুন্নাহ্‌ অনুসরণ করে খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহ্‌রীর-এর নিকট আমাদের নেতৃত্ব তুলে দেই এবং মদিনা রাষ্ট্রের আদলে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করি, তাহলে আমরা এমন একটি সম্মানজনক বিদেশনীতি পাবো যা দিয়ে দ্রুত আমরা শুধু এই অঞ্চলে সমীহ অর্জন করবো তা নয় বরং একটি বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবো, ইনশা‘আল্লাহ্‌।

  • মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 

 

 

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেবল কাগজে কলমে

খবরঃ

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এখন কেবলমাত্র কাগজে কলমে যদিও নির্বাহী বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে ১ নভেম্বর ২০০৭ সালে আপীল বিভাগের ১২ দফা নির্দেশনার আলোকে।… সুপ্রিম কোর্টের বাৎসরিক রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৭ সালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ২,৪০,৪৮৩ টি বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪০,২১,৭৮৩ টি যার মধ্যে নিম্ন আদালতে ৩৪,৮২,৯১৩, হাইকোর্টে ৫,২১,৯৯৯ এবং আপীল বিভাগে ১৬,৮৫১ টি মামলা বিচারাধীন আছে ৩১ মার্চ ২০২২ তারিখের পরিসংখ্যান অনুসারে।… আপীল বিভাগের অবসারপ্রাপ্ত বিচারপ্রতি কৃষ্ণা দেবনাথ তার গত ২ সেপ্টেম্বরে তার বিদায়ী বক্তব্যে বলেছেন, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কখনোই সম্ভব না যদি না বিচারকগণ তাদের কার্য্য সম্পাদনে নিজেদেরকে স্বাধীন ভাবতে পারে”। তবে তিনি বলেন কাগজে কলমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।… বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ১৫তম বার্ষিকী উৎযাপনে সুপ্রিম কোর্ট কোন বিশেষ আয়োজন করেনি। (www.newagebd.net/article/185212/independence-of-judiciary-still-on-paper)

মন্তব্যঃ

বিচারবিভাগ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বিচার পাওয়া মানুষের অধিকার আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল ন্যায়বিচার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। যদিও প্রকৃত অর্থে ‘ন্যায়বিচার’ বলতে কি বোঝায় তা নিয়ে বিস্তর আলোচনার অবকাশ আছে, অন্ততপক্ষে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে যথাসময়ে নিরপেক্ষেভাবে বিচারকার্য সম্পন্ন হবে এটুকু আশা মানুষ করে থাকে। কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামোতে মানুষের সে আশাও এখন হতাশায় রূপ নিয়েছে। প্রথমত, শাসকগোষ্ঠী সময়মত বিচারকার্য সম্পন্ন করতে ব্যর্থ, দ্বিতীয়তঃ শাসকগোষ্ঠীর নগ্ন হস্তক্ষেপে বিচারকার্যের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। এদেশের বিচারব্যবস্থা এখনও সাধারণ মানুষের জন্য ভোগান্তির কারখানা আর শাসকদের কাছে নিজেদের দায়মুক্তির ও বিরোধীদের নাজেহাল করার মোক্ষম হাতিয়ার। যদিও ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশ ছেড়ে চলে গেছে তবে তাদের অনুগত শাসকশ্রেণী ও স্যেকুলার বুদ্ধিজীবীগোষ্ঠীর মাধ্যমে উপনিবেশিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও বিচারব্যবস্থা এখনও আমাদের উপর বলবৎ আছে। এদেশে ব্রিটিশ বিচারব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল না ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, বরং সাধারণ মানুষের ক্ষোভ যাতে বিদ্রোহে রূপ না নেয় সেজন্য নামকায়াস্তে একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া চালু রাখা অর্থাৎ ন্যায়বিচারের মুলা ঝুলিয়ে মানুষকে শান্ত রাখা। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবী করি কিন্তু আইন, শাসন ও বিচারব্যবস্থা এখনও উপনিবেশিকদের চাপিয়ে দেওয়াটাই বলবৎ আছে।

এদেশের ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীগণ অন্ধভাবে সেই উপনিবেশিক ব্যবস্থাকে অনুসরণ করে, ঘষামাজা করে পশ্চিমাদের তত্ত্ব separation of powers অনুযায়ী রাষ্ট্রের আইন, শাসন ও বিচারবিভাগের ক্ষমতায় ভারসাম্য নিয়ে আসার কথা বলে। কিন্তু বাস্তবিকভাবে এদেশে আইনের শাসন বা ন্যায়বিচার কোনটাই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নাই। ‘এইতো সবকিছু ঠিক হয়ে যাচ্ছে, বিচার বিভাগ এখন নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন হয়েছে’, ‘গণতন্ত্র পরিণত হতে একটু সময় লাগে’ ইত্যাদি মুলা এখনও তারা আমাদের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এসব কপট স্যেকুলারগোষ্ঠী বুদ্ধিভিত্তিকভাবে এতটাই পরাজিত যে তারা পরজীবী হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে বেশি কিছু চিন্তা করতে পারে না। অথচ একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট বোঝা যায় ইউরোপীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উদ্ভব তৎকালীন ইউরোপীয় সমাজে ধর্মযাজকদের গোঁড়ামি ও ভণ্ডামির প্রতিক্রিয়া থেকে; কোন আলোকিত চিন্তা থেকে নয়। কিভাবে ধর্মগুরুদের হটিয়ে মুক্তমনা বুদ্ধিজীবী-দার্শনিকরা সমাজের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে সে চিন্তা থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থার পত্তন হয়। তারা সৃষ্টিকর্তার পরিবর্তে আইন প্রণয়ন, শাসন ও বিচার করার ক্ষমতা মানুষের হাতে তুলে দেয়। কোন একগোষ্ঠী যদি এ তিনটি ক্ষমতা একচ্ছত্রভাবে ভোগ করে তবে সে অতি ক্ষমতাবান বা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পরে তাই তারা separation of powers নামক তত্ত্বের প্রবর্তন করে। এসব তত্ত্ব ও চিন্তাধারা ইউরোপীয় সমাজে কিছুটা কাজে আসতে পারে কিন্তু আমাদের সমাজে তা একেবারেই বেমানান। কারণ ধর্মনিরপেক্ষ আইন ও ব্যবস্থার প্রতি এদেশের মানুষের কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই। তাই বিত্তশালী ও ক্ষমতাবানেরা বরাবরই আইনকে ফাঁকি দিয়ে পার পেয়ে যায়, কেবলমাত্র গরিব ও দুর্বলরা আটকে পড়ে থাকে আইনের জালে।

দেশের বিচারব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হলে পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার অপসারণ করে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত বিধান বাস্তবায়নের জন্য খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রে বিচারকগণ প্রকৃত অর্থে স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারেন কারণ বিচারকদের ক্ষমতার উৎস হল কুর‘আন ও সুন্নাহ্‌, খলিফা ইচ্ছে করলেই সে ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। আল্লাহ্‌ তাঁর নবীকে সুবিচারের নির্দেশ দিতে গিয়ে বলেন, আর আমরা নির্দেশ দিচ্ছি যে, তুমি তাদের মধ্যে আল্লাহ্‌র নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করবে এবং তাদের খেয়ালখুশীর অনুসরণ করবে না। আর তাদের ব্যাপারে সতর্ক থেকো যেন তারা তোমাকে আল্লাহ্‌প্রেরিত কিছু বিধানের ব্যাপারে বিভ্রান্তিতে না ফেলে(সূরা মায়িদাহ্‌: ৪৯)।

  • আবু যায়েদ

 

 

 

হাসিনার পতনে অর্থনীতি বাঁচবে কী?”

খবরঃ

বাংলাদেশের অবস্থা সঙ্গীন হয়েছে হাসিনা আর তার পোষ্যদের লুটপাটের জন্য। অন্যসব দেশের মানুষের একটা অপশন থাকে, ভোট দিয়ে সে শাসক বদলাতে পারবে। আমরা তো ভোট দিতে পারছি না লাস্ট দুই টার্ম। হাসিনা চুরি করে প্রতারণা করে নৈশভোট করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তাই হাসিনার বদলে বিএনপি আসবে নাকি আসবে না সেটা প্রশ্ন না। বিএনপি আসলে দেশের অবস্থা ভালো হয়ে যাবে কিনা তাও প্রশ্ন না। প্রশ্ন এটাও না যে হাসিনার বদলে যারা আসবে তারা দুর্নীতি করবে নাকি করবে না। এক নাম্বার প্রশ্ন হচ্ছে আপনি ভোট দিয়ে শাসক বদলাতে পারবেন কিনা? এদেশের যা উন্নতি হয়েছে তা হয়েছে মূলত খালেদা জিয়ার হাত ধরে। খালেদার ১৯৯১-৯৬ শাসন আমলেই দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যার ফলাফলই হল দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির বর্তমান বর্ধিত হার। (source: https://www.youtube.com/watch?v=jqUTWYDvKwA)

মন্তব্যঃ

রাজনৈতিক আশ্রয়ে ফ্রান্সের প্যারিসে বসবাসরত ব্লগার এবং সোশ্যাল একটিভিস্ট হিসেবে পরিচিত পিনাকী ভট্টাচার্য সাম্প্রতিক সময়ে হাসিনা সরকারের বিরোধীতা ও সমালোচনার কারণে বেশ নামডাক লাভ করেছেন। যুবসমাজতো বটেই, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় অভ্যস্থ ও দেশের ব্যাপারে চিন্তাশীল অনেকেও তার বক্তব্য দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন। তার রাজনৈতিক পরিচয় ও আকাঙ্খা এই আলোচনার বিষয়বস্তু নয়, বরং তার প্রদত্ত বক্তব্য ও জনগণকে দেওয়া তার সমাধানমূহের মধ্যে বিদ্যমান সূক্ষ্ম ফাঁকিগুলোর ব্যাপারে চিন্তাশীল ও সচেতন জনগণকে সতর্ক করা।

আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠী এদেশের জনগণের জন্য এক বিরাট অভিশাপ, এ নিয়ে সুস্থ মস্তিষ্কের কারো মধ্যে কোন দ্বিমত নেই। তাই আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের যুলুমের সুযোগে বিএনপিকে ‘মন্দের ভাল’ হিসেবে পুনরায় সমাধান হিসেবে উপস্থাপন করা নিতান্তই দুর্বৃত্তপনা। তাছাড়া, ‘শেখ হাসিনার বদলে যারা আসবে তারা অর্থনীতির দুরাবস্থার সমাধান করবে কিনা কিংবা দুর্নীতি করবে নাকি করবে না, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জনগণ ‘ভোট’ দিতে পারল কিনা’-এই বক্তব্য সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর নতুন হাতিয়ার, যা দিয়ে তারা এখন জনগণের মগজ-ধোলাইয়ের চেষ্টা করছে। ভোটাধিকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারীর সমান অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়ন এশব্দগুলো একই উৎস থেকে আগত। এই চিন্তাগুলোকে সমাজের মধ্যে ক্রমাগতভাবে আলোচনায় রেখে আমেরিকা ও অন্যান্য কাফির রাষ্ট্রগুলো আমাদের উপর তাদের কর্তৃত্বকে দীর্ঘায়িত করছে। বস্তুতঃ দেশের জনগণের জন্য শেখ হাসিনা কিংবা তার সরকার মূল সমস্যা নয়, মূল সমস্যা হল কাফির-সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর এই নিয়ন্ত্রণ। যখনই কোন দালাল জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে তখন এই রাষ্ট্রগুলো অত্যন্ত চতুরতার সাথে জনগণকে বোকা বানিয়ে নতুন উপায়ে তাদের নিয়ন্ত্রণকে ধরে রাখে। ক্ষমতায় যে-ই আসুক না কেন; বিএনপি কিংবা সরকার বিরোধী সম্মিলীত শক্তি, অথবা আওয়ামীলীগ ও বিরোধী দলগুলোর আসন ভাগাভাগীর সরকার; নিয়ন্ত্রণ সবসময়েই থাকবে কাফির-সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর হাতে – এটাই হল পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার হেজেমনি। এই সামগ্রীক প্রেক্ষাপটেই পিনাকী ভট্টাচার্যের বক্তব্য ও সমাধানগুলোকে দেখতে হবে।

আমাদের মূল সমস্যা আওয়ামীলীগ ও বিএনপি এই নাম দুটোর চেয়েও অনেক গভীরে। খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করে কাফির শক্তি বৃটেন ও পরবর্তী সময়ে আমেরিকা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে উম্মাহ্‌’র উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করেছে। এই কৌশলগুলো হল, প্রথমতঃ বুদ্ধিবৃত্তিক নিয়ন্ত্রণ, যার উপাদান হল শিক্ষাব্যবস্থা ও সিলেবাস/পাঠ্যসূচী কি হবে তা নির্ধারণ করে দিয়ে তাদের প্রতি আনুগত্যশীল ও ইসলামের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ চিন্তাশূণ্য প্রজন্ম তৈরী করা; দ্বিতীয়তঃ অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, যার উপাদান হল বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর মাধ্যমে ঋণের জালে আবদ্ধ করে দেশের জ্বালানী সম্পদ, শিল্পের কাঁচামাল ও পণ্যের বাজারের উপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলার ব্যবহারে বাধ্য করা, খাদ্য-নিরাপত্তা ধ্বংস করা; তৃতীয়তঃ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, যার উপাদান হল জাতিসঙ্ঘকে ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতার নামে মুসলিম ভূখন্ডকে বিচ্ছিন্ন রাখা (জাতিরাষ্ট্রের নামে), তাদের অনুগত দালাল শাসকদেরকে টিকিয়ে রাখা, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে বাস্তবায়ন করা ও সাম্রাজ্যবাদীদের এই নিয়ন্ত্রণকে যে রাজনৈতিক দল চ্যালেঞ্জ করবে তাকে কঠোরভাবে দমন করা। এবং চতুর্থতঃ সামরিক নিয়ন্ত্রণ, যার উপাদান হল বিভিন্ন সামরিক চুক্তির আড়ালে আমাদের সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োজন মাফিক ব্যবহার, তাদের সামরিক বাহিনীকে আমাদের ভূখন্ডে প্রবেশাধীকার প্রদান এবং সামরিক সরঞ্জামের জন্য আমাদেরকে তাদের উপর নির্ভরশীল করে রাখা।

কাফির-সাম্রাজ্যবাদীদের এই সর্বগ্রাসী নিয়ন্ত্রণ ও ষড়যন্ত্রকে যতই শক্তিশালী মনে হোক না কেন, আদতে তা খুবই ভঙ্গুর। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কাফিরদের পরিকল্পনাকে মাকড়সার জালের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন, “যারা আাল্লাহ্‌‘কে পরিত্যাগ করে অন্যকাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তাদের তুলনা হল মাকড়সার মত যারা (অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে জাল বুনে) ঘর বানায় নিশ্চয়ই ঘরের মধ্যে সবচেয়ে ভঙ্গুর দুর্বলতম হল মাকড়সার ঘর (সূরা আনকাবুত: ৪১)। সুতরাং, সাম্রাজ্যবাদীদের নানামুখী নিয়ন্ত্রনের এই বাস্তবতায় শুধুমাত্র শাসকদল পরিবর্তনের কাজে সময় ও শ্রম ব্যয় করলে আমাদের শুধু শক্তিই ক্ষয় হবে, আমেরিকা-বৃটেন-ভারতের এই নিয়ন্ত্রণের বিন্দুমাত্র কোন পরিবর্তন হবে না। আমাদেরকে সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হবে খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার কাজে যে খিলাফত ব্যবস্থা সাম্রাজ্যবাদীদের মাকড়সার জাল সদৃশ এই কূটকৌশলের নিয়ন্ত্রনকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে তাদেরকে তাদের নিজেদের ভূমিতে ছুড়ে ফেলবে, যদি তাদের সেরকম কিছু অবশিষ্ট থাকে! ইনশা’আল্লাহ্‌।

  • রিসাত আহমেদ

 

 

 

“ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ১৭ জেলায় ৩৮ প্রাণহানি: তছনছ উপকূলীয় অঞ্চল”

খবরঃ

প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের ভাষ্য, ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কার চেয়ে কম হয়েছে। অথচ আস্তে আস্তে যা খবর আসছে তাতে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠেছে। গত বুধবার পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী সব মিলিয়ে সিত্রাং কেড়ে নিয়েছে ৩৮ জীবন। বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি, উপড়ে যায় গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি, ভেসে গেছে ঘেরের মাছ, ডুবে গেছে ক্ষেতের ফসল। আধাপাকা আমনে মই দিয়েছে সিত্রাং। দেশের একটি বড় অংশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার ৪ দিন পরও অনেক অঞ্চলে বিদ্যুৎ আসেনি। পূর্বাভাসে ঘাটতি ও ভুল ছিল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রস্তুতি ছিল নড়বড়ে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে ও ক্ষতিপূরণে লক্ষ্য করা যাচ্ছে চরম অবহেলা। (www.mathabhanga.com/দেশের-খবর/ঘূর্ণিঝড়-সিত্রাংয়ে-১৭-জেলায়-৩৮-জনের-প্রাণহানি-তছনছ-উপকূলীয়-অঞ্চল/)

মন্তব্যঃ

সিত্রাং-এর সঠিক পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে সরকার ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতির অস্বাভাবিক দ্রুত পরিবর্তনকে দায়ী করছে। কিন্তু দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিষয়টি বুঝার জন্য যথেষ্ট গতিতে কাজ করেনি। এমনকি যে পূর্বাভাস তারা দিচ্ছিল সেটির প্রচারণাতেও এক ধরনের অবহেলা ও মন্থরতা পরিলক্ষিত হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবজনিত বৃষ্টি ও হাওয়া দেশজুড়ে বয়ে গেলেও আশ্চর্যজনকভাবে কর্তৃপক্ষ সতর্কতার সংকেতও পরিবর্তন করেনি! একদিকে আমরা দেখছি যে ঘূর্ণিঝড়টি সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত ৬-৭ থাকা অবস্থায় আঘাত হানলো এবং ৩৮ টি প্রাণ কেড়ে নিল, অপরদিকে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলছেন তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলছেন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শতভাগ লাইন ঠিক করে দেয়া হচ্ছে, অথচ ৫দিন পরও জায়গায় জায়গায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় লাইনগুলো পড়ে ছিল। আর প্রধানমন্ত্রী তার দলের নেতাকর্মীদের জনগণের কাছে থাকতে আহবান করে তার দায়িত্ব সম্পন্ন করে ফেলেছেন। আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে এরা সবাই নিজেরা ঢাকায় বসেই নিশ্চিত করে ফেলছেন যে বিভিন্ন প্রসাশনের লোকেরা সবাই মাঠে দুর্যোগপূর্ণ মানুষের পাশে থেকে দিনরাত পরিশ্রম করছেন! সরকার একদিকে ঘূর্ণিঝড়টিকে ডাউনগ্রেড করেছে অন্যদিকে সর্বত্র জনগণের দুর্ভোগ নিরসনে চরম অবহেলা ও অকার্যকারিতার পরিচয় দিয়েছে।

এছাড়াও ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলাবদ্ধতা, গ্যাস-বিদ্যুত ইত্যাদি বিষয়ে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি নিয়ে আমরা দেখছি শাসকরা শুধু অবহেলা অবজ্ঞা করছে তা নয় এগুলোর জন্য তারা একধরনের দায়মুক্তি গ্রহণ করে। তারা তাদের দায়িত্বের অবহেলা অবজ্ঞা জনিত জনদূর্ভোগকে নিয়তি বলে চালিয়ে দেয়! এর আগে আমরা দেখেছি ভারত থেকে হঠাৎ পানি এসে হাওরের কৃষকদের পাকা ধান ডুবিয়ে দিল, অথচ সরকার এটিকে ঢলজনিত প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতি বলে চালিয়ে দিয়েছে। তাদের দায়মুক্তি নেয়ার সংস্কৃতি এত গভীরে পৌঁছেছে যে তারা এখন এই বলে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেয়ার গুরুত্ব অস্বীকার করে যে সাধারণ মানুষ সচেতন না, তারা পূর্বাভাস শুনেও আশ্রয়কেন্দ্রে আসে না! আর সংগত কারণে রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও শিখে যায় কিভাবে দরকষাকষির ওজন মেপে অন্যের উপর দায় চাপাতে হয়। এমনকি এই শাসকরা রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে রাষ্ট্রের কোন একটা বিশেষ প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নিজে দায়মুক্তি নেয়া হতেও পিছপা হয় না। যেমন এবছর সিলেটের ভয়াবহ বন্যায় চরম অবহেলার পর এক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ না দিয়ে সরকার সেনাবাহিনীকে নামিয়ে দেয় এবং এর মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, বন্যা এত ভয়াবহ যে এমনকি সেনাবাহিনীও তেমন কিছু করতে পারেনি।

কিন্তু ইসলামে বিষয়টি সম্পূর্ণ বিপরীত। মা’ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাঃ) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তিকে যদি আল্লাহ্তাআলা প্রজাপালনের দায়িত্ব প্রদান করেন আর সে তাদের জন্য কল্যাণকর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় বা না পারে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না (বুখারী ও মুসলিম)। ইসলামে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং তাদের উপর প্রতিটি জুলুমের বিষয়ের সাথে শাসকের জান্নাত-জাহান্নাম জড়িত। শুধু তাই নয়, ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থায় মাযালিম আদালত নামে একটি বিশেষ আদালত আছে যেখানে একজন ব্যক্তিও তার উপর হওয়া অন্যায়ের ব্যাপারে খলিফা অথবা খলিফার নিয়োগকারী যেকোন প্রতিনিধি, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন। যদি খলিফার বিরুদ্ধে ঐ আদালতে কোন মামলা চলমান থাকে এমন অবস্থায় আদালতের বিচারককে খলিফা চাকরিচ্যুত বা বদলি কোনটাই করতে পারবেন না। ইসলাম অনুযায়ী শাসকের জবাবদিহিতার মাত্রা এমন যে এখানকার দরকষাকষিতে নাগরিক এগিয়ে থাকে শাসক পিছিয়ে থাকে। যেমন খলিফা ওমর (রা.) কর্তৃক জনগণের দেখভালের জন্য ছদ্দবেশে করা নিয়মিত রাতের টহলের সময় এমন অন্তত দুটি বর্ণনা পাওয়া যায়। একটিতে একজন মা বলছেন আমি কেন খলিফাকে জানাবো যে আমার সন্তান ও আমার আজ রাতের খাবার নেই, এটাতো খলিফার দায়িত্ব আমার খাদ্য নিশ্চিত করা। আরেকটিতে এক সন্তানপ্রসবা স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যাপারে জনৈক ব্যক্তি একইভাবে ছদ্দবেশের ওমরকে বলছেন আমি কেন খলিফার কাছে আমার স্ত্রীর সন্তান প্রসবজনিত সেবা দাবী করতে যাবো, এই সেবা নিশ্চিত করাতো তার দায়িত্ব।

  • মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 

 

 

বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়, বাড়ছে ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা

খবরঃ

রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, সংসদ ভবন এলাকা, পল্টন, শ্যামলী, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১, মিরপুর-১৪, গুলিস্তান ও কমলাপুরসহ রাজধানীর ১০ স্থানে অনুসন্ধান করে ডেইলি স্টার দেখেছে, সম্প্রতি শহরের রাস্তায় যৌনকর্মীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। যদিও এই তথ্যের পক্ষে সরকারি কোনো তথ্য নেই, তবে ১০ জন যৌনকর্মীর সাক্ষাৎকার নিয়ে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে ডেইলি স্টার। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে এ ১০ জন যৌন পেশায় আসতে বাধ্য হয়েছেন। বিশেষ করে মহামারির কারণে তারা একপ্রকার নিরুপায় হয়ে পড়েন। সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, এ পেশায় সদ্য আসা প্রত্যেকেই দারিদ্র্যের কষাঘাতে বিপর্যস্ত। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম এবং বিশেষ কোনো দক্ষতাও নেই। সেই কারণেই তারা যৌন পেশায় আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান।  (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-409971)

মন্তব্যঃ

পুঁজিবাদ, দারিদ্রতা ও দূর্নীতি যে কতটা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে এই সংবাদটি যার জ্বলন্ত উদাহরণ। অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা প্রত্যক্ষ করছি শুধু দুবেলা খাওয়ার জন্য আমাদের মা বোনদেরকে সম্ভ্রম বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ, ২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বানিজ্যের আড়ালেই বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা। লক্ষ কোটি টাকার বাজেট, হাজার হাজার কোটি টাকার মেঘা প্রজেক্টের নামে মেগা দূর্নীতি, যা বালিশ, বাতি, কেলেংকারি নামে পরিচিত এবং যার বেশির ভাগই বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ও পুঁজিবাদীদের সম্মিলিত চুরি। নির্বাচনী হলফনামায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ আছে জানিয়ে গত ৪ বছরে ৫১০ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া শীর্ষ ধনী ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মর্তূজা। যদি ফরিদপুরের ছাত্রলীগ নেতা নিশান মাহমুদ শামিম একাই ২০০০ কোটি টাকার দূর্নীতির সাথে জড়িত থাকে তবে রাঘব বোয়ালদের ঝুড়িতে কত লক্ষ কোটি টাকা যায় তা সহজেই অনুমেয়।

লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার দূর্নীতি আর লুটপাটের ফলাফল হচ্ছে বর্তমানে মানুষের এই মানবেতর জীবন যাপন। আর ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা তাদের এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা তাদেরকে যৌনকর্মী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। ২০০০ সালে হাইকোর্টের এক রুলে বলা হয় যৌনকর্মীদের গ্রেফতার করা ও পতিতালয়গুলোতে অভিযান চালানো আইনত নিষিদ্ধ যেহেতু পতিতাবৃত্তি বাংলাদেশে আইনগত স্বীকৃত একটি পেশা। মুলতঃ ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় জনগণকেই তার দায়িত্ব নিতে হয় এবং এই শাসনে যেকোন উপায়ে টাকা অর্জন করাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে, যা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলোর মোড়লদের দিকে তাকালে দেখা যায়। গত ১৮ই মে এর নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিন এর এক লেখায় এসেছে, যার শিরোনাম ছিলো “Naked Capitalists: There’s No Business Like Porn Business.” যেখানে বলা হয়েছে খোদ আমেরিকাতে পতিতাবৃত্তি একটি বড় ব্যবসা যা বছরে ১০ বিলিয়ন থেকে ১৪ বিলিয়ন এর মতো আয় করে। বর্তমান শাসকগন নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে পশ্চিমাদের ধাচে আমাদের মা বোনদেরকে দুবেলা থাকা-খাওয়া ও জীবন ধারনের জন্য যৌনকর্মীতে পরিনত করেছে অথচ তাদের মৌলিক অধিকার খাদ্য-বস্ত্র ও বাসস্থান এর নিশ্চয়তা দেয়ার দায়িত্ব ছিলো সরকারের।

অন্যদিকে আমরা যদি ইসলামী শাসন খিলাফত ব্যবস্থার দিকে তাকাই তাহলে দেখবে কিভাবে সমাজে নারীদেরকে সম্মান করা হয়েছিল ও নারীসহ সকল নাগরিদের নাগরিক সুবিধাদির নিশ্চয়তা দিয়েছিল। কুরআন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ১১৯ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোন পুরুষ বা নারী এমন কোন কাজ করতে পারবে না যা সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় বিশৃঙ্খলা তৈরি করে তাই কোন নারী খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের বা অন্যকোন কারণে যৌনকর্মী হিসাবে কাজ করতে পারবে না। খিলাফত রাষ্ট্র শুধু এটা বলেই ক্ষান্ত হয়নি বরং শরীয়াহ খলিফার জন্য ফরজ করেছেন তার নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরনে ও কাজের নিশ্চয়তা প্রদানে। ইসলাম মানুষের চাহিদাগুলোকে সামষ্টিকভাবে না দেখে প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদাগুলোকে স্বতন্ত্রভাবে বিচার করে। ইসলাম প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত না করে সবাইকে সমাজ থেকে যেনতেনভাবে তা অর্জন করার জন্য বিচ্ছিন্নভাবে ছেড়ে দেয় না। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, ইমাম বা খলিফা হচ্ছেন অভিভাবক এবং তিনি তার নাগরিকদের উপর দায়িত্বশীল (বুখারী)। পরিশেষে আমাদের মনে রাখতে হবে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন শাসক যতদিন থাকবে ততদিন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণতো দূরের কথা, দূর্নীতি বা পতিতাবৃত্তির মতো ঘৃণ্য কাজকেও সমাজ থেকে নিমূল করবে না।

  • আতিকুল ইসলাম

 

 

 

ঢাকার বুকে হ্যালোইন নাইট

খবরঃ

অক্টোবরের শেষ রাতে ঢাকার রাস্তায় দেখা মিলতেই পারে ভূত-পেতনির। রাস্তা-ঘাটে না মিললেও রাজধানীর অনেক হোটেলে দেখা মিলছে নানা রং-রূপে তাদের। সেই ভূত-পেতনির ভয়ে ঘরের দরজা-জানালায় খিল আটকে বসে না থেকে অনেকেই গেছেন সাহস করে দেখতে। শিশুরাও দেখছে তাদের গা ছম-ছম করা ভূত-পেতনিদের। নিজেদের প্রিয় সব চরিত্রকেও দেখতে পাচ্ছে ঢাকার বুকেই। ব্যাটম্যান, জোকার, ওয়ান্ডার ওম্যানের মতো কল্পিত চরিত্রে রাজধানীর বনানী শেরাটন হোটেলে হাজির বেশ কিছু ভূত। রাতে যারা হোটেলটিতে গিয়েছেন তারা দেখতে পেয়েছেন এমন চরিত্রগুলো। কঙ্কাল-প্রেতাত্মা, শুনলেই শিশুরা তো বটেই, বড়রাও অনেকেই ভয় পান। তেমন সাজ দেখা গেছে হ্যালোইন নাইটে বনানী শেরাটন হোটেলে। (www.newsbangla24.com/lifestyle/211482)

মন্তব্যঃ

পশ্চিমারা যা করে তাই হচ্ছে আধুনিকতা এবং অনুকরনীয় মূলত এই চিন্তাই মুসলিম বিশ্বসহ অন্যান্য তৃতীয় বিশ্বের দেশে এই ধরনের উৎসব পালনকে উদ্ভুদ্ধ করেছে। ফলে আমরা দেখি সৌদি আরবের মত দেশ যেখানে মুসলিমদের দুটি পবিত্র স্থানের অবস্থান সেখানেও এই উদ্ভট হ্যালোইন উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। অথচ পশ্চিমাদের এই উৎসব নিতান্তই কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধ বিশ্বাস প্রসূত এবং পুঁজিপতিদের ব্যবসার উপকরণ। এই হ্যালোইন উৎসবের উৎপত্তি মূলত ২০০০ বছর পূর্বে ইউরোপে। তখন বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ডের উচ্চ ভূমি, ইংল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সে বসবাস করতো কেল্টিক জাতি। নভেম্বরের প্রথম দিনটি তারা নববর্ষ বা ‘সাহ-উইন’ হিসেবে পালন করতো। কেল্টিক জাতির ধারণা ছিলো অক্টোবরের শেষ দিনের রাত সবচেয়ে খারাপ। সে রাতে সব প্রেতাত্মা ও অতৃপ্ত আত্মারা মানুষের ক্ষতি করতে পারে। আর তাই কেল্টিক জাতির সদস্যরা এই রাতে বিভিন্ন ধরনের ভূতের মুখোশ ও কাপড় পরতো। তারা নির্ঘুম রাত কাটাতে আগুন জ্বালিয়ে মুখোশ পরে বৃত্তাকারে একসঙ্গে ঘুরতেন ও মন্ত্র যপতেন। আর সময়ের পরিক্রমায় কেল্টিক জাতির ‘সাহ-উইন’ উৎসবই বর্তমানে ‘হ্যালোইন’ উৎসব হিসেবে পালিত হচ্ছে।

মার্কিন মুল্লুকে এসে নিছক অন্ধবিশ্বাস থেকে উঠে আসা এই হ্যালোইন উৎসব হয়ে উঠে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসার মৌসুম। retaildive.com এর তথ্যমতে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হ্যালোইন উৎসবের বাজার ছিল প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের (১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি)। ক্রিসমাসের পর এটিই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যয়বহুল উৎসব। তাছাড়া ইউরোপ, কানাডা সহ এশিয়ার জাপান ও কোরিয়ার মত দেশেও এ উপলক্ষে ব্যাপক আয়োজন করা হয়। আর এ ব্যাপক খরচের মধ্যে রয়েছে, হ্যালোইন পোশাক কেনা, চকোলেট কেনা, ঘর-বাড়ী সাজসজ্জা করা, শুভেচ্ছা কার্ড প্রদান ইত্যাদিতে। ফলে, ওয়ালমার্টের মত বহুজাতিক কোম্পানি হ্যালোইন উপলক্ষে তাদের পণ্য বিক্রির জন্যে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের পিছনে ১৩.৮ মিলিয়ন ডলার খরচ করতেও কুন্ঠাবোধ করে না। পাশাপাশি, ডিজনীর মত চলচ্চিত্র নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহও তাদের নির্মিত Star Wars, Mickey Mouse, Incredibles, Captain Marvel ইত্যাদি চলচ্চিত্রের বিভিন্ন চরিত্রের আদলে হ্যালোইন কস্টিউম তৈরী ও বিক্রি করে থাকে। আর এই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখেই এটিকে ভ্যালেন্টাইনের মত সারা বিশ্বে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে ওয়ালমার্ট কিংবা ডিজনীর তৈরিকৃত হ্যালোইন কস্টিউমের বাজার যদি বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে তৈরী হয় তাতে অবাক হওয়ার মত কিছু থাকবে না।

দুঃখজনকভাবে, মুসলিম বিশ্বের মূর্খ ও অযোগ্য শাসকরা ভ্যালেন্টাইনস ডে, ক্রিসমাস ডে, হ্যালোইনের মত উৎসবগুলোকে সামাজিক উন্নতির সমার্থক হিসেবে তুলে ধরে। মূলত এসকল উৎসবের মাধ্যমে পশ্চিমা উদারনৈতিক যে জীবনধারা এবং সভ্যতা (হাদারাহ) তা চাপিয়ে দিয়ে মানুষদের ‘ফ্রিডম’ এর অনুসন্ধানে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে, তাদের চিন্তাশূন্য সত্ত্বায় পরিণত করা হচ্ছে। পশ্চিমাদের এসকল উৎসব ইসলামের সুউচ্চ মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক তবুও আমরা দেখেছি দুবাই বিভিন্ন রকম দামী স্বর্নালংকার দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং ব্যয়বহুল ক্রিসমাস ট্রি বানিয়ে কিভাবে উম্মাহ’র সম্পদ অপচয় করেছে। মুসলিম দেশসমূহে এসকল অনুষ্ঠান আয়োজনের ফলে তরুনদের মাঝে খুব সহজেই এগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করছে এবং এগুলোতে অংশগ্রহন করাকে স্মার্টনেসের সংজ্ঞাতে ফেলা হচ্ছে। এ যেন রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর হাদীসেরই বাস্তব প্রতিফলন, “তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেদের রীতি-নীতির অনুসরণ করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে। এমনকি তারা যদি গো-সাপের গর্তেও ঢুকে, তবে তোমরাও তাতে ঢুকবে।” তারা (রা.) বলল, হে আল্লাহ্‌’র রাসূল! আপনি কি ইহুদী এবং খৃষ্টানদের কথা বলছেন?” তিনি (সাঃ) বললেন, “তারা ব্যতীত আর কারা?”” (বুখারী/মুসলিম)

উন্নয়ন ও প্রগতিকে পশ্চিমাদের অনুকরনের মাধ্যমে নয় বরং ইসলামের দৃষ্টিতেই আমাদেরকে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। উমর (রা.) বলেন, “আমরা ছিলাম একটি মর্যাদাহীন জাতি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে ইসলাম দিয়ে সম্মানিত করেছেন আমরা যদি ইসলাম ব্যতিত অন্য কিছুতে সম্মান খুঁজতে যাই, তাহলে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে অসম্মানিত করবেন মুসলিমদের সম্মান ও প্রগতি সেকুলার পশ্চিমাদের সংস্কৃতি গ্রহনের মধ্যে নেই, বরং তা নিহিত রয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কর্তৃক প্রদত্ত দ্বীন পালন ও তা বাস্তবায়নের মধ্যে। পপুলার কালচার, সোস্যাল মিডিয়া কিংবা শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে যেসকল অপসংস্কৃতি আমাদের মধ্যে প্রবেশ করছে যার উৎপত্তি ইসলামের বাইরে, এগুলো যাতে মুসলিমদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেই নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারে একমাত্র ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠা খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রই তার কালচারিং প্রসেসের মাধ্যমে মুসলিমদের নিজস্ব পরিচয়, জীবন পরিচালনায় সুস্পষ্ট মানদন্ড, এবং ইসলামের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস প্রোথিত করতে পারে এবং এসকল ভিন্ন আদর্শের কুসংস্কারাচ্ছন্ন উৎসব থেকে মুসলিমদেরকে রক্ষা করতে পারে।

  • মো. হাফিজুর রহমান

 

 

 

অ্যাম্বার হার্ডকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে নিখুঁত চেহারার নারী জোডি কমার, সেরা দশে দীপিকা

খবরঃ

কয়েক বছর আগে বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত চেহারার অধিকারী নির্বাচিত হয়ে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ড। লন্ডনভিত্তিক প্লাস্টিক সার্জন ডা. জুলিয়ান ডি সিলভা একটি বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে অ্যাম্বার হার্ডকে এই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এবছর অ্যাম্বারভক্তদের জন্য দুঃসংবাদ রয়েছে। কারণ নিখুঁত চেহারার অধিকারীর তালিকা থেকে ছিটকে গেছেন ‘অ্যাকুয়াম্যান’ অভিনেত্রী, তার বদলে শীর্ষসারিতে জায়গা করে নিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনসহ অন্যান্য নবীনরা। ডা. জুলিয়ান ডি সিলভা প্রাচীন ‘গ্রিক গোল্ডেন রেশিও’ পদ্ধতি ব্যবহার করে মানুষের চোখ, নাক, ঠোঁট, চিবুক, চেহারার আকৃতিসহ প্রধান ১২টি কী পয়েন্ট বিশ্লেষণ করেন। এ পদ্ধতিতে ‘ফি’ মানে হলো সবচেয়ে নিখুঁত অনুপাত। (https://www.tbsnews.net/bangla//বিনোদন/news-details-114982)

মন্তব্যঃ

পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নারীদেরকে বোঝানো হয়, সৌন্দর্যের অন্বেষণের মাধ্যমেই নারী হয় আত্মবিশ্বাসী ও স্বাধীন। তার মুখাবয়ব, রুপলাবণ্য বা ফিগার দেখতে কেমন হবে তার সিদ্ধান্ত সে নিজেই নিতে পারে বলে সে গর্বিত। নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর, আত্মবিশ্বাসী ও স্বাধীন প্রমাণ করার জন্য তাই ব্রিটনি স্পিয়ার্স, জেনিফার লোপেজ থেকে শুরু করে উপমহাদেশের প্রিয়াংকা চোপড়া, মাধুরী দীক্ষিত, জয়া আহসান কিংবা শ্রুতি হাসানরা বোটক্সের মত বিষাক্ত ইঞ্জেকশন, ফিলার, কেমিক্যাল পিল বা সার্জারি করে হলেও টানটান মুখ, সরু নাক, পুরু ঠোঁট তৈরীর অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে।

প্রকৃতপক্ষে, সেক্যুলার পুঁজিবাদী সমাজের সৌন্দর্যের এই অবাস্তব মানদন্ড পশ্চিমা নারীকে স্বাধীন ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার পরিবর্তে নারীদের মধ্যে ব্যাপক হারে ডিপ্রেশন ও মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটাচ্ছে যা আসলে Dysmorphic Disorder নামে পরিচিত; বিল্লি এলিশ, মাইলি সাইরাস, শার্লি ম্যান্সনসহ অনেকেই এর উদাহরণ। যুক্তরাজ্যের একটি মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতি পাঁচজনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তার বডি ইমেজ নিয়ে লজ্জিতবোধ করেন, ৩৪ শতাংশ মানুষ নিচু বোধ করেন এবং ১৯ শতাংশ মানুষ রীতিমত নিজের শরীরকে ঘৃণা করেন। পশ্চিমা নারীবাদী লেখক জার্মেইন গ্রিয়ার বলেন, “প্রত্যেক নারীই জানে যে, তার অন্যান্য সমস্ত অর্জন ব্যর্থ যদি না তিনি সুন্দর হন”। সেক্যুলার পুঁজিবাদী সমাজে নারীর চিন্তা, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতা ফিকে হয়ে যায় যদি তারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত সেই সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারেন।

এছাড়াও, ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় বহুল প্রচলিত ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা তত্ত্ব’ প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার পুঁজি মাত্র। নারীর মুখের ইঞ্চি ইঞ্চি মাপের হিসাব নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতা নয়, বরং প্লাস্টিক সার্জন জুলিয়ান সিলভার মত সেক্যুলার পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ব্যবসায়ীরাই নির্ধারণ করে। নারীর সৌন্দর্যের প্যারামিটারকে পুঁজি করে দাঁড়িয়ে আছে তাদের ৫৩৪ বিলিয়ন ডলারের বিউটি ও পার্সোনাল কেয়ার ইন্ডাস্ট্রি, ১৯২ বিলিয়ন ডলারের ওয়েট লস ও ম্যানেজমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি এবং মাল্টিবিলিয়ন ডলারের বিনোদন ও বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রি। গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শহুরে পেশাদার নারীরা তাদের আয়ের এক-তৃতীয়াংশই শুধু সৌন্দর্য রক্ষায় ব্যয় করেন। অর্থাৎ, কোন ব্যক্তিস্বাধীনতা নয়, বরং পুঁজিবাদী ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসার হাতিয়ার হল নারীর সৌন্দর্য, যা ঠিক করে নারীর কপাল কতটা চওড়া হলে বা চোখের থেকে নাকের দূরত্ব কত হলে সেটা নিখুঁত হবে।

আল্লাহ্‌ মনোনীত জীবন বিধান ইসলাম আমাদের বলে, দুনিয়াতে আল্লাহ্‌’র সৃষ্ট সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ; আমাদের চেহারা, রং, আকার, আকৃতি যেমনই হোক সেটা আল্লাহ্‌’র সৃষ্টি, এবং এই আকৃতি সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেওয়া আমাদের ঈমানের অংশ। সুন্দর চেহারা, সুষম দেহ, উপযুক্ত প্রকৃতি ও অঙ্গসৌষ্ঠব, দুই পায়ে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আল্লাহ্‌’র বিশেষ দান। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে” (সুরা ত্বিন, আয়াত: ৪)। আল্লাহ্‌’র এই নিয়ামতকে স্বীকার করার মাধ্যমে বান্দা পায় তার অন্তরের প্রকৃত প্রশান্তি। পাশাপাশি, আল্লাহ্‌ আমাদেরকে দিয়েছেন অনন্য চিন্তাশীল মন, যাকে শরীয়াহ্‌ অনুসৃত যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ উভয়েই জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমস্ত শাখায়, সমাজ রাষ্ট্রের উন্নয়নে রাখতে পারে বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার ছাপ। ইতিহাস সাক্ষী মানবরচিত ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নারী যেখানে মনোরঞ্জনের ভোগ্যপণ্যবিশেষ, অন্যদিকে, ১৪০০ বছরের ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই চিন্তা, দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়িত। যার প্রমাণ পৃথিবীর সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় আলকারাইন ইউনিভার্সিটি যা ফাতিমা আল ফিহরি নামে একজন মুসলিম নারীর হাতেই প্রতিষ্ঠিত। মুখাবয়ব বা সৌন্দর্য দিয়ে নয়, বরং মারিয়াম আল আস্ত্রোলাবিয়াকে মহাকাশবিদ্যায়, আয়েশা (রা.)-কে হাদীসশাস্ত্রে, খাদিজা (রা.)-কে সমাজ পরিবর্তনে অবদানের জন্য এখনো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। কুর‘আন ও সুন্নাহ্‌’র আলোকে গড়া একমাত্র সেই খিলাফত রাষ্ট্রই পারবে নারীকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে, মেধা ও যোগ্যতাবলে বিকশিত হবার জন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে।

  • যায়নাব মাইসূরা