working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 97

 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৯৭ তম সংখ্যা । ০৫ আগস্ট, ২০২৩

এই সংখ্যায় থাকছে:

 

“আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে দানা বাঁধছে কলো মেঘ”

“কারামুক্ত হলেন টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেফতার শিক্ষার্থীরা” 

“…সন্ত্রাসের বিষয়ে সতর্ক থাকুন: প্রধানমন্ত্রী”

“অভিন্ন মূল্যবোধই যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্কের চালিকা শক্তি: পিটার হাস”

“ঋণের টাকায় ‘রোল মডেল’”

“রেকর্ড পরিমাণ টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক”

“ভারতের হরিয়ানায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় নিহত তিন, মসজিদে অগ্নিসংযোগ“

 

 

“আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে দানা বাঁধছে কলো মেঘ”

খবরঃ

জাতীয় নির্বাচনের আর বাকি ছয় মাসেরও কম সময়। বিএনপির রাজপথের কর্মসূচীর মূল উদ্দশ্য হল হাসিনা সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করা যেন আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হয়। অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হাসিনা সরকারের অধীনেই নির্বাচন আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে, যদি বিএনপি নির্বাচনে নাও আসে। ফলে দুই দল রাজনীতির ময়দানে মারমুখী হয়ে পড়েছে যা সামনের মাসগুলোতে আরো বাড়বে। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে কালবৈশাখী দানা বাঁধছে, কেউ জানেনা এই মেঘ কিভাবে দূর হবে। (https://thediplomat.com/2023/07/political-storm-brews-in-election-bound-bangladesh/)

মন্তব্য:

আওয়ামী-বিএনপিগোষ্ঠী কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত করে রেখেছে। এই দলীয় মেরুকরণের ফলে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে জনগণ ব্যাপক দুর্যোগ ও দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। এই মেরুকরণের ফলে সামাজিক সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়ে পড়েছে, একে অন্যের প্রতি সহিংস ও মারমুখী অবস্থানের কারণে দেশের রাজনৈতিক আকাশ সবসময়েই অস্বাস্থ্যকর ও মেঘাচ্ছন্ন থাকে। রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এদেশে একটি অতি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল সবসময়ই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য হত্যা, গুম, জেল-জুলুম, রিমান্ডের নামে অত্যাচার, ব্যবসা ও স্থাবর সম্পদ জবরদখল ইত্যাদি নানা উপায় ব্যবহার করে থাকে। এই রাজনৈতিক বিভক্তি ও শত্রুতার কারণে দেশের সকল সম্ভাবনাগুলো দিন দিন বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, দেশের জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং মানুষের মনে ভর করেছে চরম ভয় ও অনিশ্চয়তা। দেশের জনগণের ভাগ্য আজ হুমকির মুখে।

এই রাজনৈতিক বিভক্তি ও মেরুকরণ আমেরিকা-বৃটেনের সৃষ্টি এবং তাদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে এই বিভক্তি এখনো টিকে আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয় বৃটেনের ছত্রছায়ায় এবং বিএনপি তার অস্তিত্বের জন্য আমেরিকার উপর নির্ভরশীল। এই সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে তাদের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে এই দুই দলকে ব্যবহার করে আসছে। এই সাম্রাজ্যবাদী মোড়লরা দেশের জনগণকে বোঝায় যে বহুদলীয় ও প্রতিনিধিত্বকারী গণতন্ত্র দেশের জন্য কল্যানকর; অথচ এই মডেল ব্যবহার করেই দেশে আজ এই গভীর রাজনৈতিক মেরুকরণ ও বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে এটা প্রতিষ্ঠিত যে, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলো দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিগোষ্ঠী কিংবা সাম্রাজ্যবাদীগোষ্ঠী কিংবা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দলের বি টিম ইত্যাদি কোন না স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী। সুতরাং, বহুদলীয় গণতন্ত্র মানেই স্বার্থান্বেষীগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারীদের স্বার্থের সংঘাত। খোদ আমেরিকায়, তেল কোম্পানীগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী রিপাবলিকান ও টেক কোম্পানীগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ডেমোক্রেটদের দ্বন্দ্ব বিশ্ববাসী দেখেছে। তথাপিও তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা আওয়ামী-বিএনপি নেতৃত্বের মধ্যে সমঝোতার কথা বলছে, অথচ আমেরিকা-বৃটেনের মধ্যে সমঝোতা না হলে তা কখনোই সম্ভব নয়। দুই দলের দালাল নেতৃত্বের মধ্যে সমঝোতা হোক বা না হোক তাতে দেশের জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না; কারণ তাদের রাজনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হল সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা-বৃটেন যাদের কাজই হল তাদের নিয়ন্ত্রিত ‘কলোনি’র জনগণকে বঞ্চিত করে মূল্যবান সম্পদ লুটে নেওয়া।

বিদ্যমান রাজনৈতিক বিভক্তি ও মেরুকরণ জনগণের ‘তাক্বদির’ বা ভাগ্য নয়; বরং এটি কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট ও একটি আরোপিত পরিস্থিতি। এই বিভক্তি ও মেরুকরণ টিকিয়ে রাখার জন্য যারাই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে, দেশের জনগণের উচিত তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা। দেশের এই মেরুকরণকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে প্রয়োজন এমন একটি আদর্শকে ভিত্তি হিসেবে আকড়ে ধরা, যা শুধু আওয়ামী-বিএনপিই নয় বরং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের আপামর জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম। আর জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার সেই একমাত্র ও কার্যকর ভিত্তি হল ‘ইসলামী আক্বীদাহ’ তথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্‌, যা দ্বারা খুব সহজেই এদেশের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব এবং ব্যর্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপরীতে এটিই শ্রেষ্ঠ জীবনব্যবস্থা ও মানব সমস্যার সমাধানের ‘উৎস’ হিসেবে খুব সহজেই অ-মুসলিম জনগোষ্ঠীকে এই আক্বীদা দ্বারা ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব। ঠিক যেভাবে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) মদীনার আওস এবং খাজরাজ গোত্রের দ্বন্দ্ব বিলীন করে দিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। সর্বোপরী, এটি যে একমাত্র ও কার্যকর সমাধান শুধু তাই নয়, বরং এটি মহান আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র এক অলঙ্ঘনীয় আদেশ: তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহ্‌’র ‘হাব্ল’-কে (similar to ‍an umbilical cord) (ইসলামকে) শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌’র অনুগ্রহকে স্মরণ কর; তোমরা ছিলে পরষ্পরের চরম শত্রু, তারপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে পরষ্পরের প্রতি ভালবাসা ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দিলেন, ফলে তোমরা একে অপরের প্রাণের ভাইয়ে পরিণত হলে। তোমরাতো ছিলে এক বিশাল অগ্নিকুন্ডের (জাহান্নামের বা ধ্বংসের) প্রান্তসীমায়, সেখান থেকে আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে উদ্ধার করলেন। আর এভাবেই আল্লাহ্‌ উপমা/রূপক প্রদান করেন, যেন তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পাও। (সূরা আলি ইমরান: ১০৩)।

    –    রিসাত আহমেদ

“কারামুক্ত হলেন টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেফতার শিক্ষার্থীরা” 

খবরঃ

টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেফতার বুয়েটের ২৪ জনসহ ৩২ শিক্ষার্থী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। …সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহিরপুর আদালতের বিচারক ফারহান সাদিক এর আদালতে আটক ৩২ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেন। আসামিদের আইনজীবী তৈয়বুর রহমান বাবুল জানান, আসামিরা দেশের মেধাবী শিক্ষার্থী, তারা হাওরে ঘুরতে এসেছেন। পুলিশ শুধু সন্দেহের বশে এতজন মেধাবী শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে পারে না। …উল্লেখ্য, গত রবিবার বিকালে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের নতুনবাজার পাটলাই নদী দিয়ে ট্যাকেরঘাট পর্যটন এলাকায় যাওয়ার পথে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যাওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৪ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। (https://www.bd-pratidin.com/chayer-desh/2023/08/03/908390)

মন্তব্যঃ

মূলতঃ তথাকথিত জঙ্গী নাটক দ্বারা জনমনে ইসলামভীতি তৈরি করা সরকারের পুরাতন কৌশল, যা হতে খিলাফত প্রতিষ্ঠার নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক কর্মী, আলেম-ওলামা, সরকারবিরোধী দল কিংবা বুদ্ধিজীবি এমনকি সাধারণ মুসলিমরাও রেহাই পায়নি। এই কৌশলকে তারা কখনো তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে, কখনো জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে, কিংবা ইসলাম ও মুসলিমদের দমনে পশ্চিমাদের কাছে নিজেদের সক্ষমতাকে জানান দিতে ব্যবহার করেছে। টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যাওয়া বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আটকের ঘটনা সরকারের সেই কৌশলেরই প্রতিফলন।

প্রথমত, ২১ বিংশ শতাব্দীতে ইসলাম এবং মুসলিমদেরকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, উগ্রবাদী, মৌলবাদী, জিহাদী গালি দিয়ে আটক, নির্যাতন, অপমান এবং হত্যা করার এই নব্য-কৌশল শুরু হয় ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকা কর্তৃক টুইনটাওয়ার হামলার নাটক মঞ্চস্থ করার পরপরই। যা ছিলো কার্যত ইসলাম এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে আমেরিকা কর্তৃক বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ ঘোষণা করার কৃত্রিম প্রেক্ষাপট তৈরি করা। এরপর থেকে পশ্চিমা বিশ্ব তথা ইউরোপ এবং আমেরিকা বিশ্বব্যাপী ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম এবং মুসলিমদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বিশ্ব-মিডিয়া, নিউজ সাইট, নাটক-সিনেমা, রাজনৈতিক অঙ্গন ব্যবহার করে একযোগে মিথ্যা প্রচারণা চালাতে থাকে। এমনকি ইসলাম, কুর‘আন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) কে নানাভাবে হেয় করে বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রতি ঘৃণাকে প্রতিনিয়ত আরও বেশি প্রজ্জলিত করছে এই কাফের জোট শক্তি। গত কয়েকদিন ধরে সুইডেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কুর‘আন পোড়ানো এরই প্রতিফলন। এর আগে ২০০৫ সালে ডেনমার্কের জায়ল্যান্ড-পোস্টেন, ২০০৬ সালে নরওয়ের প্রত্রিকা ম্যাগাজিনেট, ২০০৭ সালে সুইডিশ প্রত্রিকা নেরিকেস এ্যালেহানডা, ২০১২ সালের ফ্রেঞ্চ ম্যাগাজিন চার্লি হেবডো কর্তৃক রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর বিকৃত কার্টুন আঁকা। ২০১৩ সালে রাশিয়ার ওকতিয়াবারস্কি ডিস্ট্রিক কোর্ট অব নভোরোসসিস্ক কুর‘আন-এর অনুবাদকে উগ্রবাদী বলে রায় দেওয়া। ২০১৪ সালে জার্মানিতে পিইজিআইডিআ(PEGIDA) কর্তৃক হাজার হাজার মানুষের ধারাবাহিকভাবে এন্টি-ইসলাম সমাবেশ আয়োজন করা। ২০০১-২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ২২ বছরে আমেরিকা কর্তৃক সারা বিশ্বে ২০ লক্ষের বেশি মুসলিম হত্যা করা হয়। কোটি কোটি মুসলিমদের বাস্তুচ্যুত-রাষ্ট্রচ্যুত করা। এর সবকিছুই ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কিছু উদাহরণ মাত্র। আর এই যুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোতে আওয়ামী-বিএনপির মত দালাল শাসকগোষ্ঠী অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতারের এই ঘটনাকে নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা কিংবা দলীয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ছকে না দেখে বিশ্বব্যাপী চলমান ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ছকে না দেখলে প্রকৃত সত্য বুঝা যাবেনা।

আমাদের নিষ্ঠাবান বুদ্ধিজীবী, সচেতন অভিভাবকদের এই সত্য অবশ্যই বুঝতে হবে যে, কাফিরদের বিশ্বস্ত দালাল কিংবা শয়তানের আউলিয়া(বন্ধু) ছাড়া কেউ ইসলামকে কিংবা আল্লাহ্‌ভীরু মুসলিমদের সন্ত্রাসী বলতে পারেনা। কুর‘আন-এ ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা, হক ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার কথা স্বয়ং আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেন। সুতরাং, এটিকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা মানে কাফেরদের সাথে হাত মিলিয়ে স্বয়ং আল্লাহ্‌’র বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। এই দালাল শাসকগোষ্ঠীতো আল্লাহ্‌’র বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিস্কার করেছে। আমাদেরকেও আল্লাহ্‌’র সামনে আমাদের অবস্থান পরিস্কার করতে হবে। হয় আমরা ইসলাম এবং হকের পক্ষে না হয় কুফর কিংবা বাতিল সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর পক্ষে।

    –    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

“…সন্ত্রাসের বিষয়ে সতর্ক থাকুন: প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ

…প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে পঞ্চম ধাপে ৮টি বিভাগের ৩৪টি জেলায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী নতুনগুলোসহ এ পর্যন্ত সারা দেশে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ৫৬৪টির মধ্যে ২৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেছেন।… প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সারা দেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করে সমাজে ইসলামের প্রকৃত চেতনা ছড়িয়ে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। …তিনি বলেন, ‘আলেম-ওলামাদের এমনভাবে ওয়াজ করা উচিত, যাতে যুবকেরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং মাদকের সাথে জড়িত না হয়।’… এ ছাড়া হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র…সুবিধা থাকবে মসজিদে।(www.prothomalo.com/bangladesh/tf3euv3bun)

মন্তব্যঃ

সন্ত্রাসের বিশ্ব প্রচলিত সংজ্ঞা (যে সকল বিধ্বংসী কার্যকলাপ জনমনে ভীতির উদ্যোগ ঘটায়; ধর্মীয়, রাজনৈতিক অথবা নীতিগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কৃত রুচি বিরুদ্ধ কাজ, ইচ্ছাপূর্বক সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার বিষয় উপেক্ষা অথবা হুমকি প্রদান করা)-কেও যদি ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়, তবে বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসীর নাম হিসেবে ‘শেখ হাসিনা’র নামটি চলে আসবে। ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকে পিলখানায় ৫৭ জন সামরিক অফিসার হত্যাকান্ডে সহায়তা করা থেকে শুরু করে শাপলা চত্বরে ওলামা হত্যাকাণ্ডসহ অগণিত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ তাকে এই ‘শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসী’র আসনে বসিয়েছে। আর তার সরকার যখন সন্ত্রাস দমনে মডেল মসজিদ বানায়, তখন বুঝতে হবে প্রকৃত সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘সন্ত্রাস’ আর শেখ হাসিনা কিংবা তার পশ্চিমা প্রভুদের সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘সন্ত্রাস’ এক জিনিস নয়। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছিল, “সন্ত্রাসীরা বিশ্বাস করে একটি দেশকে নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে তারা মুসলিম উম্মাহ্‌কে ঐক্যবদ্ধ করবে যাতে সেসব অঞ্চলের সকল উদারপন্থী সরকারকে উৎখাত করতে পারে এবং একটি চরমপন্থী (তার ভাষায়) ইসলামী সাম্রাজ্য (খিলাফত) প্রতিষ্ঠা  করতে পারে। যেটি স্পেন থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হবে’। বুশের মতো মুখে না বললেও শেখ হাসিনা তার ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তার অবস্থান ঠিকই পরিষ্কার করেছে। তার সরকার মসজিদের খুতবায় নজরদারি করতে বিশেষ সেল গঠন করেছে। ওয়াজ-মাহফিলগুলোতো বাধা প্রদান করেছে। দেশে ইসলামোফোবিয়া তৈরি করার জন্য একের পর এক জঙ্গি নাটক সাজিয়ে অগণিত মানুষকে জেল-জুলুম-নির্যাতন; এমনকি হত্যা পর্যন্ত করেছে। ইসলাম দমনে আলেম ওলামাদেরকে গ্রেফতার-হয়রানি ও নির্যাতন করেছে। এমনকি সে ইসলাম ও আলেমদেরকে মানহানি করার জন্য ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি রাখার মত মিথ্যা মামলাও দিয়েছে। আরো দুঃখের বিষয় হল, এই সকল মডেল মসজিদে সে ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র নামে নতুন বিভাগ খুলেছে যেখানে নাকি ইমামদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী ইমামদের ‘বেলে ড্যান্স’ প্রশিক্ষণ দানের জন্য ইতিমধ্যে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন। তাই এ সকল ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডসহ আরো সকল জঘন্য কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করার জন্যই যে এই মডেল মসজিদগুলো হাসিনা সরকার বানাচ্ছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

তবে আশার কথা, ইসলামের প্রত্যাবর্তন তথা খিলাফত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় পশ্চিমা কাফির ও দালালদের বাধা প্রদানের এই ‘অতি তৎপরতা’ এটা প্রমাণ করে যে এই ব্যবস্থা খুব শিগগিরই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র ইচ্ছায় আবারো প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই এই লক্ষ্যে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা বেগবান হওয়া জরুরী। এই ব্যবস্থায় মসজিদগুলো কখনো কুফরদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করবে না। বরং তা হবে পূর্বের ন্যায় শাসন, বিচারসহ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য মুসলিমগণ ও তাদের ইমামগণের (শাসকগণের) মিলনস্থল।

    –    মোঃ জহিরুল ইসলাম

“অভিন্ন মূল্যবোধই যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্কের চালিকা শক্তি: পিটার হাস”

খবরঃ

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, একই ধরনের মূল্যবোধ যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আর এসব মূল্যবোধই দুই দেশের সম্পর্কের চালিকা শক্তি। … দুই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণার ক্ষেত্রে একই আদর্শের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, ‘১৭৭৬ সালের প্রায় দুই শতাব্দী পর যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ চারটি মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। অভিন্ন এসব মূল্যবোধ আমাদের দুই দেশকে আরও বেশি নিখুঁত করে গড়ে তোলার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।’… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/mour9ag62g)

মন্তব্যঃ

মার্কিন রাষ্ট্রদূত যতই অভিন্ন মূল্যবোধ খোঁজার চেষ্টা করুক না কেন ‘জাতীয়তাবাদ’, ‘সমাজতন্ত্র’, ‘গণতন্ত্র’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’- এগুলো কখনোই ইসলামপ্রিয় বাংলাদেশের মানুষের মূল্যবোধের অংশ ছিল না। বরং বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে এসব মতবাদের মূল অর্থ বাদ দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অন্য অর্থ বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে শাসক এবং বুদ্ধিজীবীরা। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মূল অর্থ ‘ধর্মকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্নকরণ’ কে লুকিয়ে রেখে তারা আমাদেরকে শিখিয়েছে এটি হলো ‘সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার’। ‘গণতন্ত্র’ এর মূল অর্থ ‘সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ্‌ নন, বরং জনগন’-কে লুকিয়ে রেখে তারা আমাদেরকে বুঝিয়েছে এটি হল ‘নির্বাচনে ভোট দেওয়া’। সমাজতন্ত্র নামক ধর্মকে অস্বীকারকারী মতবাদের মূল অর্থকে লুকিয়ে রেখে তারা বলেছে এটি হল সমাজের সব মানুষের সমান অধিকার। আবার জাতীয়তাবাদের আবেগের আড়ালে তারা সমগ্র বিশ্বের একক মুসলিম উম্মতের ধারণাকে ঢেকে দিয়েছে। পশ্চিমা কাফিররা ভালোভাবেই অবগত যে, ইসলামের আক্বীদার সাথে সাংঘর্ষিক কোন কিছুকেই মুসলিমরা কখনো মেনে নেবে না, তাই তারা তাদের মতবাদ ও মূল্যবোধগুলোকে প্রতারণামূলকভাবে উপস্থাপন করে যেন এগুলো ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। এই অপকৌশলকে কাজে লাগিয়ে তারা আমাদের রাষ্ট্রের সমস্ত বিভাগ, যেমন-শাসন, বিচার, শিক্ষা, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি সহ সকল ক্ষেত্র থেকে ইসলামের হুকুমসমূহ বাদ দিয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে সার্বভৌমত্ব ক্ষমতা (বিধান প্রণয়নের ক্ষমতা) অর্পন না করে তারা সেটি সংসদ সদস্যদের হাতে কিংবা একক কোন ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়েছে। জাতীয়তাবাদী চেতনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা উম্মতের নিপীড়িত অংশ রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোনদেরকে পাহাড়ে শরণার্থী শিবিরে কিংবা জনমানবহীন বসবাসের অযোগ্য ভাষাণচরে নির্বাসনকে বৈধতা দিয়েছে। বাবুরী মসজিদ ধ্বংস কিংবা মসজিদুল আকসাকে তারা ভারত ও পাকিস্তান কিংবা ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের ‘অভ্যন্তরীন ইস্যু’ বলে চালিয়ে দিয়েছে।

সুতরাং, পশ্চিমা চিন্তা ও মূল্যবোধগুলোকে আমাদের সমাজ থেকে মূলোৎপাটনের সহজ পথ হচ্ছে, এগুলো যে ইসলামের আক্বীদার সাথে সাংঘর্ষিক তা যুক্তি এবং কুরআন-সুন্নাহ্’র আলোকে উপস্থাপন করা। আশার কথা হল উম্মতের নিষ্ঠাবান অংশ সত্যনিষ্ঠ দল ‘হিযবুত তাহ্‌রীর’ এই কাজটি ক্রমাগত নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছে। এই দলটির নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ্‌ আবারও নবুয়্যতের আদলে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে, যার ফলশ্রুতিতে পশ্চিমা কুফর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। খিলাফতের উত্থান ঠেকানোর জন্য তারা ২০০৯ সালে বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীর-কে নিষিদ্ধ করতে এদেশের শাসকদের বাধ্য করেছে। তারপর শত দমন-নিপীড়ন চালিয়েও এটাকে প্রতিহত করতে না পেরে এখানে তাদের উপস্থিতি বহুগুনে বাড়িয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি হাতে নিয়েছে। ‘আকসা’ ও ‘জিসোমিয়া’ চুক্তি সম্পাদন করার জন্য সরকারকে র‍্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা, ভিসা-নীতি সহ বিভিন্ন উপায়ে চাপ প্রয়োগ করছে। সেই সাথে তাদের প্রতারণামূলক নীতিসমূহ আবারো উম্মতকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তারা এক ফুঁৎকারে আল্লাহ্‌’র নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু তিনি তা পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে”। (সূরা আস-সফঃ ৮)। তাই এসব মূল্যবোধ কখনোই শত্রুরাষ্ট্র ‘আমেরিকার’ সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চালিকাশক্তি হবে না, বরং খিলাফতের অধীনে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বিশ্বব্যপী মার্কিন কর্তৃত্ব অপসারন করে ইসলামের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই হবে তাদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত ও মূল চালিকাশক্তি।

    –    মোঃ জহিরুল ইসলাম

“রেকর্ড পরিমাণ টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক”

খবরঃ

বাংলাদেশে চলতি অর্থ বছরের শুরুতেই রেকর্ড পরিমাণ টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি বছরে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দেয়ার ক্ষেত্রে আরও বড় রেকর্ড করার শঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা প্রকারান্তরে মূল্যস্ফীতিকেই আরও বাড়িয়ে তুলবে। এর আগে সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকেই সরকার বেশী টাকা ধার করতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কিছু ধার করলেও তার পরিমাণ ছিল তুলনামূলক কম। কিন্তু এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সেই অর্থে সক্ষমতা না থাকার কারণে সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ধার দেয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থ বছরের প্রথম আঠার দিনেই সরকারকে সহায়তা করতে ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে দশ হাজার আটশ কোটি টাকা সরকারকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া মানেই হচ্ছে নতুন করে ছাপানো টাকা বাজারে ছাড়া হচ্ছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা বাজারে গেলে পরবর্তীতে এই টাকার পরিমাণ পাঁচগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। (www.bbc.com/bengali/articles/c4nr8j9vjn4o)

মন্তব্যঃ

সরকারের পুঁজিপতিদের তোষণের মেগা প্রকল্প, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এবং নির্বাচন কেন্দ্রিক স্বস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের প্রকল্পগুলোর ব্যাপক অর্থায়ন করতে গিয়ে সরকারের খরচ আকাশ ছুঁয়েছে। উপর্যুপুরি কর আরোপ করেও সরকারের পক্ষে এই বর্ধিত অস্বাভাবিক খরচের যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। (বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ করের বোঝা বাড়ছে বাজেটে বাড়বে পরিধি, মে ২০, ২০২৩, দৈনিক মানব জমিন)। আভ্যন্তরীণ উৎস বা ব্যাংক খাত যা বরাবর সরকারের ঋণ গ্রহণের অন্যতম উৎস সরকারের ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর তোষণ নীতির কারণে তীব্র তারল্য সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সরকার তার উচ্চাবিলাসী এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক তথাকথিত জনতুষ্টির প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের জন্য নতুন টাকা ছাপানোর মাধ্যমে কৃত্রিম আর্থিক সংকট তৈরি করে জনদুর্ভোগকে আরও উসকে দিচ্ছে।  কোনপ্রকার ভিত্তি বা মূল্যমান ব্যাতীত ছাপানো নতুন টাকার ফলে বাজারে বিদ্যমান সম্পদের মূল্য ৫ গুণেরও বেশী হারে বাড়াবে যা মূল্যস্ফীতির নামে সাধারণ মানুষের ঘাড়েই আপতিত হবে। নতুন টাকা ছাপানো পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর নিকট খুব সাধারণ ঘটনা কারণ এর জন্য তাদের কোন প্রকৃত সম্পদ (স্বর্ণ বা রূপা) রাখতে হয় না, তাই শাসকগোষ্ঠী তাদের সুবিধা মতে অর্থ ছাপাতে পারে।  এই নতুন টাকা ক্রমর্ধমান হারে মূদ্রাস্ফীতির মাধ্যমে জনগণের আর্থিক চাপকে বাড়াতে থাকে। সরকারী হিসাব মতে বাংলাদেশে এখন প্রতি মাসে প্রায় ১০% মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। যদিও প্রকৃত মূল্যস্ফীতি আরও অনেক বেশী। যা বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের মূল্য থেকে সহজে অনুমেয়।

অন্যদিকে, খিলাফত রাষ্ট্রের অন্যান্য কার্যাবলীর মত মুদ্রাব্যবস্থাও শারীয়াহ দ্বারা বিধিবদ্ধ। শাসক (খলিফা) ইচ্ছা করলেই কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, বরং তাকে এই বিষয়ে শরীয়াহ হুকুম অনুসন্ধান করতে হয়। ইসলামে মুদ্রা ব্যবস্থা হচ্ছে প্রকৃত সম্পদ স্বর্ণ বা রূপা ভিত্তিক। এই ক্ষেত্রে স্বর্ণ এবং রূপার ওজনও শারীয়াহ দ্বারা নির্ধারিত। স্বর্ণের দিনারে ওজন ৪.২৫ গ্রাম এবং রূপার দিরহামের ওজন ২.৯৭৫ গ্রাম। বহনের সুবিধার্থে কাগুজে মুদ্রা ছাপানো যেতে পারে কিন্তু শর্ত থাকে ছাপানোর পূর্বে একই পরিমাণ স্বর্ণ বা রূপা বায়তুল মালে (খিলাফত রাষ্ট্রের আর্থিক বিষয়াদি দেখাশুনার জন্য দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান) জমা রাখতে হবে।  খলিফা (শাসক) ইচ্ছা করলেই জরুরী প্রয়োজনের দোহাই দিয়েও সম্পদ জমা রাখা ব্যাতীত মুদ্রা ছাপাতে পারবে না। তাই খিলাফতের মুদ্রা ব্যবস্থায় পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মত কাঠামোগতভাবে জনগণের সম্পদ লুটপাট করার কোন সুযোগ নাই। বরং, খিলাফতের মুদ্রা ব্যবস্থায় মূল্যস্ফীতি ছিল খুব অস্বাভাবিক ঘটনা।  যেখানে প্রতিবছর আমাদের দেশে ৫-১০ শতাংশ করে মূল্যস্ফীতি ঘটছে, সেখানে উসমানী খিলাফতের একটি সুদীর্ঘ সময়, আশি বছরেরও অধিক সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে মাত্র ৭ শতাংশ।  যার ফলে খিলাফতের ছায়াতলে রাষ্ট্রের নাগরিকরা বর্তমান সময়ের মত মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ঠ হতো না। আমরা এই পুঁজিবাদী কাগুজে মুদ্রা ব্যবস্থাকে কিভাবে দেখবো? এটা কি শুধু যুলুমের হাতিয়ার নাকি এটা একটি অপবিত্র বিষয় যা আমাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করা উচিত।  আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজেদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে” (সূরা আল-আহযাব:৩৬)। সুতরাং, কোন মুসলিম কখনও পুঁজিবাদী মুদ্রা ব্যবস্থা কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না, কারণ এই ব্যবস্থা একদিকে তাদেরকে দুনিয়াতে দুর্দশাগ্রস্ত করছে, অন্যদিকে আখেরাতে তারা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের অবাধ্য হিসাবে বিবেচিত হয়ে স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখিন হবে।

    –    মোঃ সিরাজুল ইসলাম  

“ঋণের টাকায় ‘রোল মডেল’”

খবরঃ

মন্তব্য প্রতিবেদনটি বলে ২০১০-১২ সালের দিকে হঠাৎ করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রেটিং প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক বিনিয়োগ কোম্পানী ও ব্যাংক বাংলাদেশকে উচ্চ সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে তুলে ধরতে থাকে। বাংলাদেশকে তারা তখন ‘নেক্সট ইলেভেন’, ফ্রন্টিয়ার ফাইভ’ তথা বিশ্বের উঠতি অর্থনীতির অন্যতম দেশ হিসেবে তুলে ধরে। তার পরবর্তিতে দেশে ব্যাপক বিদেশী ঋণ ও বিনিয়োগ আসতে থাকে। ২০১৫ সালেও যেখানে দেশের নিট বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এখন হয়েছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। মাত্র ৮ বছরের মাথায় বিদেশি ঋণ বেড়েছে ২০ গুণ! এসব ঋণে যেসব উচ্চবিলাসী প্রকল্প দেশে হয়েছে তাতে দেশের ঋণ মুক্ত হওয়া ও ঋণ শোধ করার সামর্থ কোনটাই বাড়েনি কিন্তু ঋণ পরিশোধের দায় ব্যাপকভাবে বাড়ছে। একদিকে ঋণের টাকার মেগা প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে একটি ক্ষুদ্র শ্রেণী ফলে তারা দ্রুত ধনী হয়েছে আর অন্যদিকে সাধারণ মানুষের উপর এই ঋণের টাকা পরিশোধের বোঝা হিসেবে নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি, ট্যাক্স-ভ্যাট বৃদ্ধি, চাকরি হারানো ইত্যাদি চাপ বাড়ছে। প্রতিবেদক অনেক প্রশ্ন রেখে গেছেন। কেন জনজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোকে আড়ালে রেখে বিদেশিদের রেটিং বা ব্র্যান্ডিং নিয়ে মাতামাতি করে দেশকে ঋণের স্রোতে ভাসানো হলো? অতিরিক্ত ঋণনির্ভর মেগা প্রকল্পগুলোয় অর্থনীতির অবস্থা ভালো হয়েছে, না খারাপ হয়েছে? এখন ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে জনগণকে পিষ্ট করা কেন? তিনি আরও প্রশ্ন রাখেন, এই যে রেটিং এজেন্সিগুলোর অতি উৎসাহী রেটিং–এর ওপর ভিত্তি করে ঋণের পাহাড় তৈরি হয়, এগুলো কি সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা? নাকি মূলধারার অর্থনীতিবিদেরা ঋণভিত্তিক মেগা প্রকল্প এবং প্রচুর পরিমাণে ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনৈতিক লেনদেনকেই ‘বাড়ন্ত অর্থনীতি’ হিসেবে দেখানো হয়? (https://www.prothomalo.com/bangladesh/cpai0for04)

মন্তব্যঃ

প্রতিবেদক প্রশ্নগুলোকে যথাযথভাবে আনলেও স্পস্টভাবে উত্তর দেননি বা দিতে পারেননি। হঠাৎ ফুলে-ফেঁপে গড়ে উঠা ‘বাবল অর্থনীতি’কে উন্নয়ন হিসেবে দেখানো এবং একেক সময় একেক দেশকে বিদেশী ঋণের টার্গেট বানিয়ে সেই দেশকে ঋণে ভাসিয়ে দেয়া এর কোনটিই নতুন নয়। আর বাংলাদেশের শাসকরা যে এরকম স্পষ্ট ক্ষতিকর ফাঁদকে আনন্দচিত্তে বরণ করে নেয়া পৃথিবীর একমাত্র নির্বোধ শাসক তাও নয়, বরং বর্তমান নব্য-উপনিবেশবাদী পুঁজিবাদী ব্যবস্থা চলমান আছে এগুলো তৈরি করার মাধ্যমে।

‘ঋণ’ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ‘উন্নয়ন’ বা গ্রোথের মূল নিয়ামক, কারণ ঋণের সাথে যুক্ত থাকে সূদ এবং এই সূদ দেয় গ্রোথের প্রণোদনা। পুঁজিবাদ মনে করে মানুষকে বা দেশকে যত ঋণ দেয়া যাবে বা ঋণী করে রাখা যাবে সে তত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড করবে ফলে সে তত বেশী উন্নত হবে। আর এই ঋণ দেয়া ও নেয়া (Demand & Supply of Debt) এর একটি ‘অন্তহীন ধারা’ তৈরী করার জন্য বর্তমান নব্য-উপনিবেশবাদী বিশ্বের মোড়ল আমেরিকা আইএমএফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম। বিশ্বের সব মুদ্রাকে ‘ফিয়াট মুদ্রা’য় পরিণত করা হয়েছে এবং মার্কিন ডলারকে বানানো হয়েছে বিশ্বের ‘রিজার্ভ মুদ্রা’ এবং অন্যান্য মূদ্রার মানের নির্ণায়ক। এই ব্যবস্থায় আমেরিকার মত ক্ষমতাধর দেশ বিনা বাঁধায় তাদের মুদ্রা ছাপে আর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির হাতে তুলে দেয় যাতে তারা বিশ্বজুড়ে তা বিনিয়োগ করতে পারে। এই ঋণের চাহিদা তৈরি করার জন্য তারা তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিকে ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০০৮ সালের ‘ক্রেডীট ক্রান্স’ তথা অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উত্তরণের জন্য আমেরিকা ব্যপক ডলার ছাপে। পরবর্তিতে এসব ডলারের বাজার তৈরীর জন্য বাংলাদেশ, তুর্কি, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ইত্যাদি দেশে বিনিয়োগের জন্য ঠেলে দেয়। সেসব ডলার যাতে সহজে লাভজনক ও ঝুকিমুক্ত খাতে বিনিয়োগ করা যায় সেজন্য তারা এসব দেশের শাসকদেরকে ব্যবহার করে। পুঁজিবাদে এই ডলার ও টাকা ছাপানোতে কোন বাঁধা বা সীমা নেই। এবং অস্তিত্বহীন এসব সম্পদ অর্থনীতিতে পুশ করা হয় ঋণ ও সূদের মাধ্যমে। এসব অবৈধ কৃত্রিম মূদ্রা বিনিয়োগ হয় জনগণকে জিম্মি করা মেগা (জ্বালানী, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইত্যাদি) প্রকল্পে যেখানে বিনিয়োগকারীরা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় মুনাফা নিশ্চিত করে। এসবের ফলে একদিকে তৈরি হয় ক্ষুদ্র প্রভাবশালী অলিগার্ক গোষ্ঠী যারা তাদের সীমাহীন আর্থিক ক্ষমতা দ্বারা সরকার, বাজার, গবেষনার বিষয়, বিশেষজ্ঞ, নোবেল পুরস্কার সবই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে নিজেরা ধনী থেকে ধনী হতে থাকে এবং অন্যদিকে অর্থনৈতিক বাবলের পুরো চাপ সাধারণ জনগণের উপর এসে পড়ে। এসবই পুঁজিবাদের নীতি, পুঁজিবাদ অনুযায়ী এতে কোন অন্যায় নেই। এই ব্যাখ্যাই দিয়ে থাকেন পুঁজিবাদী সরকার ও পুঁজিবাদী বিশেষজ্ঞরা।

ইসলামে সুদ যেমন হারাম, তেমনি মিথ্যা বা কৃত্রিম সম্পদ তৈরি করা তথা ‘ফিয়াট মূদ্রা’ও স্পষ্ট হারাম। ফলে খিলাফত ব্যবস্থায় কোন বিশেষজ্ঞ বা বিদেশী শক্তির পক্ষেই রাষ্ট্রে এই দুইয়ের কোনটিই প্রবেশ করানো সম্ভব না। খলিফা যেহেতু সত্যিকারে জমা থাকা স্বর্ণের বেশি মূদ্রা ছাপতে পারবেন না সেহেতু উপর থেকে কৃত্রিম টাকা তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। যার ফলে খিলাফত রাষ্ট্রে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের মতো ছাপানো টাকাকে নিচের দিকে পৌঁছে দেয়ার কৃত্রিম চ্যালেঞ্জ থাকবে না। যার ফলে খিলাফতের অর্থনীতিতে বাবল তৈরি হয় না। এখানে রাষ্ট্র নিশ্চিত করে সম্পদ কোথাও আটকে থাকবে না, কর্মক্ষম মানুষরা আয় করতে পারে এবং সহজে ও নির্বিঘ্নে আবার ব্যয়ও করতে পারে। এটা হয় একটি ‘ট্রু ইকোনমি’। ইসলাম মানুষের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে চলমান রাখে এখানে ‘কৃত্রিম ফ্লো’ তৈরি করার কোন প্রয়োজন হয় না ফলে মানুষ থাকে চাপ মুক্ত। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে” (সূরা হাশর: ৭)।

    –    মোহাম্মদ তালহা হোসেন

“ভারতের হরিয়ানায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় নিহত তিন, মসজিদে অগ্নিসংযোগ”

খবরঃ

ভারতের রাজধানী দিল্লির অদূরে হরিয়ানার নূহ-তে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে দু’জন নিহত ও আরও বহু লোক আহত হয়েছেন। ওই সহিংসতার পর গুরগাঁওতে একটি মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, হামলায় ওই মসজিদের ইমামও নিহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। গোটা এলাকা জুড়ে পরিস্থিতি থমথমে। হরিয়ানা সরকার অবশ্য দাবি করছে অবস্থা এখন নিয়ন্ত্রণে, প্রচুর সংখ্যায় পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। নূহ-তে এই সহিংসতার সূত্রপাত হয় গতকাল (সোমবার) বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে। মাসকয়েক আগে নূহ-তে জুনায়েদ ও নাসির নামে দুই মুসলিম যুবককে তাদের গাড়িতে জীবন্ত জ্বালিয়ে মারার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত, মোনু মানেসর নামে এক ব্যক্তি ওই শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন – এই খবর জানাজানি হলে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। (bbc.com/bengali/articles/c10z74nj7rno)

মন্তব্যঃ

জাতিগত দাঙ্গা বিশ্বের সবচেয়ে তথাকথিত বড় গণতন্ত্র সেকুলার ভারতের একটি সাধারণ ঘটনা। জাতিগত দাঙ্গা বলা হলেও এই দাঙ্গাগুলোর মাধ্যমে সংখ্যাগুরু হিন্দুরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে সংখ্যালঘু মুসলিম, খ্রিষ্টান এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের নির্যাতন করে। উল্লেখ্য, বিগত কয়েক বছর ধরে এই নির্যাতনের মাত্র পূর্বের সকল সীমাকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুন: ভারতে গত বছর পুরোটা সময় সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার, প্রথম আলো, জুন ৩, ২০২২)। কিছু কিছু মানুষ এই নির্যাতনগুলোর দায়ভার হিন্দুত্ববাদী সেকুলার বিজেপির উপর চাপিয়ে অধিকতর সেকুলার রাজনৈতিক গোষ্ঠী যেমনঃ কংগ্রেসকে সমাধান হিসাকে দেখতে চায়। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে অধিকতর সেকুলার কংগ্রেসের সময়ও সংখ্যালগু নির্যাতনের একই চিত্র দেখা যায়। (বিস্তারিত জানতে দেখুন: বাবরি মসজিদ: প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও কি বাঁচাতে পারতেন এই মসজিদ? বিবিসি বাংলা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৮)। যেহেতু সেকুলার ব্যবস্থায় ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় সুনির্দিষ্ট নয় বরং সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ বা তাদের প্রতিনিধিদের ইচ্ছা সংসদের আইন পাশের মাধ্যমে ন্যায়-অন্যায় হিসাবে বিবেচিত হয়। তাত্ত্বিকভাবে জনগণের মতামত সার্বভৌম। তাই, শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এই সংখ্যাগরিষ্ঠদের তোষণ করার নীতি এমনকি কূটকৌশলের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের সাম্প্রদায়িক আবেগকে উসকে দেয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতে যেমন সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দুদের হিন্দুত্বাবাদি নিপীড়ন থেকে মুসলিম-খ্রিষ্টানরা নিরাপদ নয় তেমনি পশ্চিমা দেশগুলোতে এশিয়ান ও আফ্রিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সাদা চামড়ার হোয়াইট সুপরিমিষ্টদেরও এসিড ও ছুরি সন্ত্রাস থেকে নিরাপদ নয়।

অন্যদিকে, ইসলামে মুসলিম এবং অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার এবং দায়িত্ব শারীয়াহ দ্বারা নির্ধারিত। ইসলামে সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু নাগরিক বলে কোন বিষয় নাই বরং রাষ্ট্রের সকল নাগরিক মুসলিম অমুসলিম নির্বশেষে সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা সমানভাবে ভোগ করার সুযোগ পায়। মুসলিম নাগরিকদের অমুসলিমদের উপন কোন অন্যায় বা যুলুম করার অধিকার নাই বরং ইহা একটি গর্হিত কাজ। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমের প্রতি অবিচার করল কিংবা তার অধিকার ক্ষুণ্ণ করল বা তাকে তার সাধ্যের বাইরে কষ্ট দিল অথবা তার সন্তুষ্টি ছাড়াই কোন কিছু তার কাছ থেকে কেড়ে নিল, এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন (আল্লাহ্‌’র দরবারে) আমি নিজেই ফরিয়াদী হবো”। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) হাদিস থেকে এটা সুস্পষ্ট ইসলামের দৃষ্টিতে অমুসলিম নাগরিকদের সম্পদ এবং জীবন একটি পবিত্র বিষয়। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসাবে খলিফারা এই পবিত্রতা দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করতে সচেষ্ট ছিলেন।  হযরত ‘আলী (রা.)-এর খিলাফতের সময়ের একটি ঘটনা এখানে আমরা উল্লেখ করতে চাই।  জনৈক মুসলিম একজন অমুসলিমের হত্যার দায়ে গ্রেফতার হয়। যথারীতি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তিনি মৃত্যুদন্ডের নির্দেশ দেন। এ সময় নিহত ব্যক্তির ভাই এসে বললো, “আমি ক্ষমা করে দিয়েছি”। কিন্তু তিনি সন্তুষ্ট না হয়ে বললেন, “ওরা বোধ হয় তোমাকে ভয় দেখিয়েছে।” সে বললো, “না, আমি রক্তপণ পেয়েছি এবং আমি বুঝতে পেরেছি যে, ওকে হত্যা করলে আমার ভাই ফিরে আসবে না।” তখন তিনি খুনীকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, “তারা জিজিয়া দিতে সম্মত হয়েছে এ শর্তে যে, তাদের ধন-সম্পদ ও জীবন আমাদের ধন-সম্পদ ও জীবনের মতোই সমমর্যাদা সম্পন্ন হবে’’। এটা স্পষ্ট খিলাফত রাষ্ট্রে সেকুলার রাষ্ট্রের মত কোন জাতিগত দাঙ্গা বা সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক কর্তৃক সংখ্যালঘু নাগরিকদের নির্যাতন কোনভাবে সম্ভব নয় কারণ তা শারীয়াহ্‌ দ্বারা নিষিদ্ধ। এমনকি, মুসলিমদের শাসনামলে একটি সুদীর্ঘ সময় ভারত উপমহাদেশের অমুসলিম নাগরিকরা সম্মানের সাথে মুসলিমদের সাথে বসবাস করতেন।  সুতরাং, জাতিগত দাঙ্গা থেকে মুক্তি পেতে ভারত উপমাহাদেশকে আবারও ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসতে হবে।

    –    মোঃ সিরাজুল ইসলাম