working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 63

Weekly

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা

৬৩ তম সংখ্যা ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

 

 

 

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

 

“শেখ হাসিনার ভারত সফর: আওয়ামী লীগের লাভ-ক্ষতির হিসাব”

“মা’ হাসিনার জন্য চা-শ্রমিকরা বালা কেনেন যেভাবে”

পোশাকের স্বাধীনতারবিরুদ্ধে ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন

এখন নারীদের পোশাকের দৈর্ঘ্য নির্ধারণের সময় নয়

ইনুঃ ফেরেশতাকেও যদি ক্ষমতায় বসান পণ্যের দাম কমাতে পারবে না

“মুক্ত হয়েই দলবল নিয়ে সম্রাটের মহড়া”

চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

 

 

 

  

 

“শেখ হাসিনার ভারত সফর: আওয়ামী লীগের লাভ-ক্ষতির হিসাব”

খবরঃ

প্রায় তিন বছর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লী সফর করছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য নির্বাচনের আগের বছরে শেখ হাসিনার এই সফরের গুরুত্ব নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। বিগত দু’টি নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো নিয়ে সে সময় প্রশ্ন উঠেছিল, তখন আওয়ামী লীগের পাশে ছিল ভারত। টানা তেরো বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ ভারতকে বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ বা ট্রানজিট- ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু যেসব বড় ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ জড়িত – সেগুলোর মীমাংসা হচ্ছে না। তিস্তা নদীর পানিবন্টন নিয়ে চুক্তি ঝুলে রয়েছে লম্বা সময় ধরে। অন্যদিকে, ভারতের প্রতিশ্রুতির পরও সীমান্তে মানুষ হত্যা থামছে না। ফলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরকে ঘিরে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির প্রশ্নে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে… (https://www.bbc.com/bengali/news-62771132)

মন্তব্যঃ

আওয়ামী নেতৃত্বাধীন বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার ভারত সফরকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন এবং ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই সফরটিকে বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততা, আঞ্চলিক সংযোগ বা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যকে শক্তিশালীকরণ যেভাবেই অভিহিত করা হোক না কেন, এটিকে এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের আলোকে দেখতে হবে, অর্থাৎ চীনকে মোকাবেলা করার জন্য ভারতকে শক্তিশালী করার মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং এই অঞ্চলে দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্‌ প্রত্যাবর্তন রোধ করার নীতি। যেহেতু রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কিংবা আদর্শিকভাবে দেউলিয়া হাসিনা সরকারের নিকট জনগণকে দেওয়ার মতো কোনো আকর্ষণীয় প্রস্তাব নেই, তাই তাদের একমাত্র আশা সাম্রাজ্যবাদীদের আঞ্চলিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতের আশীর্বাদ পাওয়া। ফলে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক তথাকথিত বহুপাক্ষিক সমঝোতা ও চুক্তির নামে উম্মাহ্‌’র সার্বভৌমত্ব ও কৌশলগত সম্পদ ভারতের কাছে হস্তান্তর করে আসছেন হাসিনা সরকার। ভারত ইতিমধ্যে অনেক আত্মঘাতী চুক্তির মাধ্যমে আমাদের কৌশলগত এবং জ্বালানী খাত যেমন বন্দর, বিদ্যুৎ এবং প্রতিরক্ষায় প্রবেশাধিকার পেয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করকে বাংলাদেশের প্রধান বন্দর-চট্টগ্রাম বন্দর- ভারতের ব্যবহারের জন্য হস্তান্তরের প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা! এর আগে সরকার বাংলাদেশের নিজস্ব অবকাঠামো এবং নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে অকল্পনীয়ভাবে কম ফি দিয়ে ভারতকে তার দীর্ঘ লালিত নৌ এবং স্থল ট্রানজিট দিয়েছিল। ভারতীয় কোম্পানীগুলোকে সুযোগ করে দিয়েছে যাতে তারা আমাদের সেবা খাত এবং সমুদ্রবন্দর, খনি, টেলিকম, বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিক্ষা এবং গার্মেন্টসসহ প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে ইচ্ছামত তাদের কায়েমী স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। হাসিনা সরকারের এই দাসত্ববরণ নীতি ও আচরণের কারণে ভারত এখন বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রবেশে সব ধরনের রপ্তানি শুল্ক ও বাধা অপসারণের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থ হাসিনা সরকারের কাছে মূল্যহীন এটাই প্রমাণিত সত্য। তাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সরকার কাফির-মুশরিক শত্রুদের সন্তুষ্ট রেখে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যেহেতু তাদেরকে বিদেশী শক্তির মদদে ক্ষমতায় আনা হয়েছিল, তাই তারা সর্বদা তাদের সেই প্রভুদের প্রতি অনুগত, এবং বাংলাদেশে তাদের এজেন্ডাকে রক্ষা ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

বিশ্বাসঘাতক হাসিনা সরকার আমাদের অর্থনীতি, কৌশলগত সম্পদ এবং অবকাঠামো এসব কাফির ও মুশরিক শত্রুদের হাতে তুলে দিয়ে উম্মাহ্‌’র সার্বভৌমত্বের সাথে আপস করতেই থাকবে যতক্ষণ না আমরা পশ্চিমা মদদপুষ্ট ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থার পাশাপাশি এই মেরুদণ্ডহীন ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদদের ঘৃণ্য বিশ্বাসঘাতক রাজনীতির মূলোৎপাটন না করি। তাই, কাফির ও মুশরিকদের দাসত্বের অবসান ঘটাতে দেশের নিষ্ঠাবান জনগণ ও রাজনীতিবিদদের অবশ্যই প্রতিশ্রুত খিলাফতে রাশিদাহ্‌ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী বিশ্বব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে, যা এ অঞ্চল থেকে কাফির ও মুশরিকদের আধিপত্য চিরতরে নির্মূল করবে।“তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে এই দ্বীন অন্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী হয়- যদিও মুশরিকরা (তা) অপছন্দ করে” (সূরা আছ-ছফ: ৯)

  • মোহাম্মদ সিফাত

 

 

 

 

“মা’ হাসিনার জন্য চা-শ্রমিকরা বালা কেনেন যেভাবে”

খবরঃ

চা-শ্রমিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনার বিষয় ছাড়িয়ে এক দশক আগের সোনার বালা উপহার পাওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় দুই হাত উঁচু করে বালা দুটি দেখিয়ে বলেছেন, এটি তার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। তিনি বলেন, ‘আপনারা গণভবনে আমার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় আমার জন্য সোনার চুড়ি উপহার নিয়ে এসেছিলেন। সেই উপহার এখনও আমি হাতে পরে বসে আছি। ‘আমি কিন্তু ভুলিনি। আমার কাছে এটা হচ্ছে সব থেকে অমূল্য সম্পদ। চা শ্রমিক ভাইবোনেরা চার আনা, আট আনা করে জমিয়ে আমাকে এই উপহার দিয়েছেন। এত বড় সম্মান, এত বড় উপহার আমি আর কখনও পাইনি।’… বালা কেনার বিষয়ে শ্রমিক নেতা কাঞ্চন পাত্র জানায়, ‘তখন শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই। আমরা বালার জন্য চাঁদা তুলতে শুরু করি। কেউ আট আনা, কেউ এক টাকা, কেউ ১০ টাকা আবার কেউ এক শ, দুই শ টাকা দিয়েছিল। সব মিলিয়ে হবিগঞ্জের বাগানগুলো থেকে আমরা আড়াই লাখ টাকা তুলেছিলাম। সেই আড়াই লাখ টাকা দিয়ে ৫ ভরি ওজনের একজোড়া বালা কিনি। (https://www.newsbangla24.com/news/205350/The-way-the-tea-workers-buy-bala-for-Ma-Hasina)

মন্তব্যঃ

অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটানো, শিক্ষা-চিকিৎসা-বাসস্থানসহ মৌলিক অধিকার থেকে চরমভাবে বঞ্চিত চা শ্রমিকরা শেখ হাসিনাকে পাঁচ ভরি সোনার বালা উপঢৌকন দিয়ে পেল ১৭০ টাকা দৈনিক মজুরি! দখলদার বৃটিশদের নিষ্পেষণের দগদগে স্মৃতি বয়ে বেড়ানো চা শ্রমিকদেরকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম দাস বানিয়ে রেখে শেখ হাসিনা ও তার পূর্ববর্তী সকল শাসকরা এখনো কুখ্যাত দাসব্যবসায়ী ‘ডানকান ব্রাদার্স এন্ড গং’-দের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। বাংলাদেশের সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার চা বাগানগুলোতে কাজ করার জন্য ১৮৫৪ সাল থেকে ব্রিটিশ ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি বিহার, উড়িষ্যা, চেন্নাই, নাগপুর, সাঁওতাল পরগনা, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকাগুলোর গরিব, দুর্বল, নিম্নবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের প্রলোভন কিংবা ভয় দেখিয়ে, অপহরণ করে, ভুল বুঝিয়ে, অনেক সময় সহিংসতার মাধ্যমে ধরে আনা শুরু করেছিল। বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের সর্বশেষ দলটিকে নিয়ে আসা হয়েছিল ১৯৪৬ সালে, ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। এই শ্রমিকদের সন্তানরাই বর্তমানে বংশপরম্পরায় চা বাগানের কর্মী হিসাবে কাজ করছে। ১৮৬৫ ও ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ সরকার এমন আইন প্রণয়ন করে যার ফলে কোন শ্রমিক বাগান থেকে পালিয়ে গেলে তাকে কোন পরোয়ানা ছাড়াই ধরে এনে বন্দী করে রাখতে পারবে বাগান মালিকরা। ১৯২১ সালের ২০শে মে ১২,০০০ চা শ্রমিক তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিলেটের বিভিন্ন বাগান থেকে এসে চাঁদপুরে জড়ো হয়। সেখান থেকে স্টিমারে করে গোয়ালন্দে পৌঁছে রেলে করে তারা জন্মভূমিতে ফিরতে চেয়েছিল। কিন্তু তখনকার ‘ইউরোপিয়ান টি এসোসিয়েশন’-এর আদেশে স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট তাদের বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে গুর্খা সৈন্যদের দিয়ে শ্র্রমিকদের ওপর হামলা করে এবং গুলি চালায়। সেদিন প্রায় ৩০০ চা শ্রমিক নিহত হয়। সেই ঘটনার পর থেকে আর কখনো নিজেদের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেনি চা শ্রমিকরা। পরবর্তীতে তাদেরকে নামকাওয়াস্তে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার দেওয়া হয় যা নিয়ে হাসিনা সরকার বড়াই করে। অথচ শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপনের নূন্যতম কোন পরিবর্তন হয়নি। সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলন তারই প্রমাণ।

সরকারপ্রধান একতরফাভাবে নিপীড়নকারী বাগান মালিকদের সঙ্গে বসে শ্রমিকদের দৈনিক সর্বোচ্চ মজুরি মাত্র ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যা করার কোন কর্তৃত্ব বা অধিকারই তার নেই। এদেশের চা বাগানগুলো থেকে মাত্র ৩-৪ কিলোমিটার দূরে আসামের চা শ্রমিকরা যেখানে দৈনিক ৫০০-৬৫০ টাকা মজুরী পায়, সেখানে এদেশে সর্বোচ্চ মজুরি ১৭০ টাকা কোন যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ইসলামী অর্থনীতির নিয়ম অনুসারে যদি নিয়োগকারী ও শ্রমিকদের মধ্যে মজুরী বা পারিশ্রমিক নিয়ে কোন দ্বন্দ বা মতানৈক্য তৈরী হয় তাহলে ন্যায্য মজুরী কত হবে তা নির্ধারণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের পারিশ্রমিক বিশেষজ্ঞদেরকে নিয়োগ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা এই কাজের প্রকৃত সুবিধার মূল্যমান (benefit of  the work) বিশ্লেষণ করে পারিশ্রমিক কত হবে তা নির্ধারণ করে দিবেন, যা নিয়োগকারী ও শ্রমিক উভয়কেই মেনে নিতে হবে। কুর‘আন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫৫ অনুযায়ী: “নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির বেতন তার নিকট হতে প্রত্যাশিত কাজ বা সেবার মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে, তার জ্ঞান কিংবা যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে না বাৎসরিক কোন বেতনবৃদ্ধি নেই, বরং তারা যে কাজ করেন তার পূর্ণ আর্থিক মূল্যের সমমানের বেতন তাদেরকে দিতে হবে”। এখানে উল্লেখ্য যে, পারিশ্রমিক-বিশেষজ্ঞগণ কোনভাবেই শ্রমিকদের জীবনধারণের জন্য সর্বনিম্ন কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তার ভিত্তিতে মজুরি নির্ধারণ করতে পারবেন না, অথচ বর্তমানে এর ভিত্তিতেই দেশের সকল শ্রমনির্ভর শিল্পে শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করা হচ্ছে। এই ভুল ও শোষনমূলক নীতির ফলে দেশের সকল শ্রমিক-কর্মচারিরা বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে, শ্রমিকের উৎপাদিত পণ্যের বাজারমূল্য বেশি বলে তার ভিত্তিতে বেশি মজুরি নির্ধারণ করা যাবে না, যা নিয়োগকারীদের উপর একধরণের যুলুম। মজুরি নির্ধারণ করতে হবে কেবলমাত্র শ্রমিকের ‘প্রদত্ত শ্রমের’ মূল্যমান এবং এর থেকে নিয়োগকারীর প্রাপ্ত সুবিধার ভিত্তিতে, যা শ্রমিকের দক্ষতা, কাজের স্থান/পরিবেশ ও কাজের সময়কে বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারণ করতে হবে। এর ফলে শ্রমিক তার ন্যায্য পারিশ্রমিক পাবে এবং নিয়োগকারীরও স্বার্থ রক্ষা হবে। ইসলামে শ্রমিককে তার ন্যায্য পারিশ্রমিক না দেওয়া একটি কঠোর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, শেষ বিচারের দিনে আমি তিন ব্যক্তিকে আমার শত্রু হিসেবে বিবেচনা করব; যে ব্যক্তি আমার নামে শপথ করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে, যে ব্যক্তি কোন মুক্ত ব্যক্তিকে জোরপূর্বক দাস হিসেবে বিক্রি করে এর মূল্য গ্রহণ করে এবং যে ব্যক্তি কোন শ্রমিক নিয়োগ করে তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয় কিন্তু তার ন্যায্য মজুরি প্রদান করে না (হাদীস ক্বুদসী, বুখারী)।

  • রিসাত আহমেদ

 

 

 

পোশাকের স্বাধীনতারবিরুদ্ধে ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন

খবরঃ

‘পোশাকের স্বাধীনতার’ বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন চার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাকের কারণে তরুণীকে হেনস্তা প্রসঙ্গে ‘উচ্চ আদালত মন্তব্য করেছেন’ এমন দাবি করে আদালতকে অভিবাদন জানিয়েছেন তারা। সেইসঙ্গে পোশাকের নামে ‘মূল্যবোধবিরোধী’ ও ‘পশ্চিমা অপসংস্কৃতি’ আমদানিকারকদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। রবিবার (২৮ আগস্ট) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় দেশীয় ‘মূল্যবোধবিরোধী’ পোশাকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। প্রসঙ্গত, নরসিংদীতে শিক্ষার্থীকে হেনস্তা ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত মার্জিয়া আক্তারের জামিন শুনানির সময় আদালত দেশের কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর পোশাক সংগতিপূর্ণ কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। এরপর শুরু হয় সমালোচনা। (www.banglatribune.com/my-campus/760360/‘পোশাকের-স্বাধীনতার’-বিরুদ্ধে-৩-বিশ্ববিদ্যালয়ে)

মন্তব্যঃ

তরুণীর পোষাক নিয়ে উচ্চ আদালতের মন্তব্যে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই, কারণ তাদের অস্পষ্ট (Undefined) এবং সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী চেতনার দোষে দুষ্ট পর্যবেক্ষণ সমাজকে পোষাকের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা প্রদান করেনি। বরং এই মন্তব্যকে পশ্চিমা চিন্তায় মোহাবিস্ট কতিপয় বুদ্ধিজীবী, উদারবাদীগোষ্ঠী এবং সেক্যুলার সংগঠন শরীর ও পোশাকের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ দাবী করে ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, পশ্চিমা অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থানকারী ছাত্রসমাজের ভূমিকা প্রমাণ করে এদেশের মুসলিমগণ কখনোই পোশাকের স্বাধীনতার নামে পশ্চিমা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে মেনে নেবে না, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু এই আন্দোলন ও আলোচনাকে শুধুমাত্র দেশীয় মূল্যবোধবিরোধী সংস্কৃতি কিংবা পোশাকের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, বরং পশ্চিমাদের প্রচারিত পোশাকের স্বাধীনতার কাল্পনিক ন্যারেটিভকে শক্তিশালীভাবে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা পোশাকের বিষয়ে যে তথাকথিত ‘স্বাধীনতাকে’ দাবি করছে বিশ্বের কোনও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে আদৌ কি তার অস্তিত্ব আছে?

প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র একদিকে পোশাকের স্বাধীনতার কথা বলে, অন্যদিকে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে মিডিয়া, কর্পোরেট সেক্টর এবং বিনোদন জগতের সর্বত্রই যখন একজন নারীর জন্য সুনির্দিষ্ট পোশাক নির্ধারণ করে দেয় তখন এই পোশাকের স্বাধীনতাকামীদেরকে বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপ করতে দেখা যায় না। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র যখন স্কুল-কলেজে একজন মেয়ের জন্য নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম নির্ধারণ করে দিচ্ছে তখন কি একজন নারীর পোশাকের স্বাধীনতা খর্ব হয় না? আমরা দেখতে পাচ্ছি এয়ারলাইন্স ইন্ড্রাস্ট্রিতে এখন নারী কেবিন ক্রুর জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট পোশাক। যখন আইন পেশায় নিয়োজিত একজন নারীকে আদালত কর্তৃক নির্ধারিত গাউন পরেই আদালতে প্র্যাক্টিস করতে হয় তখন কি নারীর পোশাকের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয় না? হাসপাতালে একজন নার্সের পোশাকের স্বাধীনতা কোথায়? কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য একজন নারীকে কি কর্পোরেট ড্রেস কোড মেনে চলতে হয় না? অন্যদিকে পোষাকের স্বাধীনতাকে নারীর অধিকার হিসেবে দাবী করা নারীবাদীদের অবস্থান সর্বদাই পক্ষপাতমূলক। তারা কিছুদিন পূর্বে টিপ পড়ার অধিকারের ব্যাপারে খুবই সরব ছিলেন, কিন্তু দেশে-বিদেশে আক্রমণের শিকার মুসলিম নারীদের হিজাব পড়ার অধিকার নিয়ে তারা নিরব থাকেন! পশ্চিমাদের কাছ থেকে ধার করা নারীর অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার, ইত্যাদি যেসব চিন্তার প্রচার তারা করে থাকেন, খোদ সেই পশ্চিমা সমাজই কিন্তু নারীর প্রতি যথেষ্ট সহিংস, সেখানে মি-টু আন্দোলন, পারিবারিক সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র এখন সর্বজনবিদিত।

সুতরাং, পোশাকের স্বাধীনতার তথাকথিত যে ন্যারেটিভ তা বিভ্রম ছাড়া আর কিছুই না। উল্টো নিরপেক্ষ আদর্শ পিররবীিশ্বব্যাপসকল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রেই তথাকথিত এই স্বাধীনতা চর্চার দুমুখো নীতি উপস্থিত। তারা ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার কথা বলে কিন্তু মুসলিম নারীদের হিজাব ছাড়া অন্য সকল পোষাককে ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ সাথে সঙ্গতিপূর্ণ গণ্য করে তার সুরক্ষা দেয়। আর এই বাইরের পোশাক পরিধানকারীদের কটাক্ষ ও অপমান করে। তাইতো আমরা লক্ষ্য করলাম নরসিংদী রেলস্টেশনে অর্ধনগ্ন পোশাক পড়া (ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ) নারীর সমালোচনাকারীকে তৎক্ষণাৎ পুলিশ হেফাজতে নেয়া হলো কিন্তু হিজাব নিয়ে কটাক্ষকারীরা স্বসম্মানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একদিকে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিজাব পরিহিতাদেরকে “জীবন্ত তাবুর” সাথে তুলনা করে কটাক্ষ করেছেন এবং অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষবাদের সূতিকাগার বৃটেনের সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন হিজাবকে চিঠির বাক্স” ও ব্যাংক ডাকাত” বলে আক্রমণ করছেন। অতএব, পোশাকের স্বাধীনতার চিন্তাটি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অসাঢ় এবং বৈপরীত্যে পরিপূর্ণ। সমাজ পরিচালনায় অসীম সত্ত্বা সৃষ্টিকর্তাকে সরিয়ে সীমাবদ্ধ জীব মানুষ নিজেই সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে এই দ্বন্দ্ব ও বৈপরীত্যের জন্ম হবে এটাইতো স্বাভাবিক।

অন্যদিকে সীমিত মানব মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভাবিত ব্যবস্থার বিপরীতে ইসলামী শারীয়াহ্‌ মানবজাতির স্রষ্টার কাছ থেকে এসেছে যিনি সকল সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে। ইসলামী শারীয়াহ বিশ্বাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ মানবজীবনের সকল বিষয় সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়। ইসলাম ব্যক্তিগত এবং      সামাজিক জীবনের মধ্যে পার্থক্য করে। ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফত কারও উপর জোরপূর্বক কোন বিশ্বাস কিংবা পোশাকের বিধান চাপিয়ে দেয় না। জনসাধারণকে শুধুমাত্র রাষ্ট্রের প্রকাশ্য আইন মেনে চলতে হয়। খিলাফত রাষ্ট্র তার অধীনে বসবাসরত সকল নাগরিকদের জন্য একটি সার্বজনীন ড্রেসকোড নির্ধারণ করে যা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তাঘাট, পাবলিক স্কয়ার, পার্ক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রের সকল পাবলিক প্লেসে রাষ্ট্রের প্রকাশ্য আইন হিসেবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই মেনে চলতে হয়। সামাজিক জীবনে নির্দিষ্ট ড্রেস কোড থাকলেও, ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের বিশ্বাস ও পছন্দ অনুযায়ী পোশাক পড়তে পারেন। উদাহরণস্বরুপঃ রাষ্ট্রীয় ড্রেসকোড হিজাবকে মুসলিম নারীগণ তাদের বিশ্বাস ও ইবাদতের দৃষ্টিকোণ থেকে মেনে চলবেন, অন্যদিকে অমুসলিমরা তা রাষ্ট্রের প্রকাশ্য আইন হিসেবে মেনে চলবেন, যার ফলে একদিকে মুসলিমদের ইবাদত পালন করতেও যেমন সমস্যার সৃষ্টি হবে না, অন্যদিকে ব্যক্তিগত কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ না করায় অমুসলিমরাও ব্যক্তিজীবনে তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস সংরক্ষণ করতে পারবেন। ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা ও ভারসাম্য নিশ্চিত হবে। যার ফলে অতীতে যেমনটি খিলাফতের অধীনে মুসলিম-অমুসলিম কাউকেই পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে রাস্তায় নামতে হয়নি, আল্লাহ্‌’র ইচ্ছায় ভবিষ্যতেও তার প্রয়োজন পড়বে না।

  • মোহাম্মদ সিফাত

 

 

  

 

এখন নারীদের পোশাকের দৈর্ঘ্য নির্ধারণের সময় নয়

খবরঃ

নারীদের পোশাক নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে মৌলবাদী তৎপরতার তীব্র সমালোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, “এখন আধুনিক যুগ, রোবটিক্সের যুগ, এখন নারীদের পোশাকের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করার সময় নয়। যারা নারীদের পোশাক নিয়ে তৎপর হয়েছেন তারা বাংলাদেশের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কপালে টিপ আছে কিনা, এখন সেটা কোন প্রশ্ন হতে পারে না।” সোমবার (২৯ আগস্ট) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশের (ইবার) সঙ্গে মতবিনিয়ম সভায় শিক্ষামন্ত্রী এমন কথা বলেন। (http://dhakajournal.com/archives/47686)

মন্তব্যঃ

ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা ধর্মকে তথাকথিত মুক্তচিন্তা ও বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রার পথে প্রতিবন্ধক মনে করে। শিক্ষামন্ত্রী চলমান পোষাক বিতর্কে ইসলামের সাথে প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে সাংঘর্ষিকভাবে দাঁড় করিয়ে যে বক্তব্য দিলেন সেটা তারই প্রতিফলন। কিন্তু ইতিহাস পর্যবেক্ষন করলে দেখা যাবে তাদের চিন্তা কতটা প্রতিক্রিয়াশীল ও অজ্ঞানতায় ভরা। তারা মধ্যযুগীয় ইউরোপে চার্চের কর্তৃত্ববাদী-নিপীড়নমূলক অভিজ্ঞতাকে সার্বজনীন ধরে ইসলামকেও একই কাতারে ফেলতে চায়। মধ্যযুগীয় ইউরোপ ছিল চার্চের নিয়ন্ত্রণাধীন, তখন ব্যক্তিজীবন এবং সমাজ পরিচালিত হতো চার্চের একক কর্তৃত্ব দ্বারা। চার্চ Scholastic philosophical vision দ্বারা তার স্বার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব বজায় রাখত, যা ছিল ১৩শ শতাব্দীতে এরিস্টটলীয় ও খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বের দর্শনের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে গৃহীত কিছু চিন্তার সমন্বয়ে গঠিত। এই চিন্তাগুলোর মধ্যে মহাবিশ্ব ও জীবন সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা ও শিক্ষার সংমিশ্রণ ছিল, তথাপি তারা এগুলোকে অসীম স্রষ্টার কাছ থেকে আগত absolute thought দাবী করত। প্রত্যেকের উপর এসকল চিন্তার প্রতি বিশ্বাস, সমর্পন এবং অনুগত থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। যেকোন চিন্তা যা চার্চের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুন্ন করত তা প্রত্যাখ্যান করা হত। যেমন, “সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে” এই মতামতের জন্য বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকে তারা কারারুদ্ধ করেছিল। তারপরও বিজ্ঞানিক আন্দোলনের পথিকৃৎ, যেমন কোপার্নিকাস, জোহান্স কেপলার এবং গ্যালিলিও গ্যালিলির দ্বারা বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংগঠিত হয়েছিল যা চার্চের চিন্তাগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে এবং চার্চের প্রতি জনগণ আস্থা হারায়। পরবর্তিতে নিউটন, লিনিয়াস, ল্যাভয়েসিয়ার, ক্লদ বার্নার্ড এবং ডারউইন চার্চের ধারণাগুলোকে এমনভাবে আঘাত করে যা চার্চের আধিপত্য ধীরে ধীরে হ্রাস করতে থাকে। মার্টিন লুথার এবং জিন কেলভিনের ৩০ বছর দীর্ঘ আন্দোলনের (১৬১৮-১৬৪৮) পর চার্চের অবস্থা এমন পর্যায়ে উপনীত হয় বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকরা চার্চকে কোন রকম সংস্কারের চিন্তা না করেই সমাজ থেকে পুরোপুরি অপসারণ করতে সক্ষম হয়। দার্শনিক এবং বিজ্ঞানিরা Divine Church and its Theology কে Human Reasoning and Science দ্বারা প্রতিস্থাপন করে চার্চ পরবর্তি যুগকে “The age of Enlightenment and Modernism” বলে আখ্যায়িত করে। তাই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের নিকট ধর্মীয় যেকোন আলোচনাই হচ্ছে সেকেলে এবং অগ্রগতির অন্তরায়। কিন্তু তারা ভুলে যান, বিষয়টি খ্রীস্টান ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল বলে ইসলামের ক্ষেত্রেও হবে তা কতটা যুক্তিযুক্ত? বরং ইসলাম সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা কিংবা কানে তুলো দিয়ে রাখা যাতে তারা ইসলামী চিন্তাগুলো শুনতে না পান যেকারণে তারা সত্যকে উপলব্দি করতে পারেন না।

দ্বিতীয়ত, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের আরেকটি প্রতারণা হচ্ছে তারা ধর্ম তথা খ্রীস্টান ধর্ম পরবর্তী যুগকে বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনার যুগ আখ্যা দিয়ে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং মানব মস্তিষ্কপ্রসূত ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থাকে এক করে দেখায়। অথচ, এদুটি সম্পূর্ণ বিষয়। পোষাক, রোবট, ইত্যাদি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, কিন্তু বিজ্ঞান বলে দেয় না একজন নারী কি দৈর্ঘ্য-প্রস্থের পোষাক পরিধান করবে। এটি নির্ধারণ করে হয় মানবমস্তিষ্ক বা মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। পশ্চিমারা এক্ষেত্রে মানবমস্তিষ্ককে সবকিছুর নির্ধারক হিসেবে স্থির করেছে, এটাই তাদের তথাকথিত আধুনিক বা বৈজ্ঞানিক যুগের ন্যারেটিভ। যার ফলে তারা মানবীয় সমস্যাগুলো সমাধান করতে শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং মানব সমাজকে একটি পশুর সমাজে পরিণত করেছে। তারা নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রকে ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর ছেড়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ যদি ফ্রিডম দ্বারা পরিচালিত হয় তাহলে নারীর প্রতি পুরুষের ভোগবাদী মানসিকতাই মুখ্য বিষয় হয়ে উঠে। যেমন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নারী সম্পর্কে তার এক মন্তব্যে বলেছিল, নারীদের সঙ্গে যা খুশী তাই করা যায় নারীর প্রতি ভোগবাদী মানসিকতা চরিতার্থ করার স্বার্থেই নারীকে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে যৌন প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা নারীদের নির্দিষ্ট কোন ড্রেসকোড মানতে নারাজ কারণ তা নারীদের প্রতি তাদের ভোগবাদী মানসিকতার প্রতিবন্ধক। অথচ নারীর প্রতি ভোগবাদী মানসিকতার ফলেই বিশ্বব্যাপী নারীরা যৌন হয়রানী, ধর্ষণ ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে।

ইসলাম ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মত চার্চের অত্যাচার-নিপীড়নের প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া প্রতিক্রিশীল কোন আদর্শ নয়, বরং ইসলাম এসেছে স্বয়ং আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে। বিষয়টি কোন অন্ধবিশ্বাস বা চাপিয়ে দেয়া বিশ্বাস না, বরং ইসলামের আক্বীদা বা মূলভিত্তি স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ, কুর‘আন আল্লাহ্‌’র গ্রন্থ, নবুয়্যতের প্রমাণ, পরকাল ইত্যাদি বিষয়গুলো বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। যার উপর ভিত্তি করে সঠিক জাগরণ (True Revival) হয়েছিল। ইসলাম বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নয়ন মানুষের উপর ছেড়ে দিয়েছে। অপরদিকে, মানবীয় সমস্যাগুলো সমাধানে ইসলাম মানুষকে তার Intellect এর উপর ছেড়ে দেয়নি কেননা মানুষের Intellect সীমাবদ্ধ এবং পক্ষপাতপূর্ণ বরং Divine Law এর মাধ্যমে সেগুলোকে Organise করেছে। ইসলাম নারী-পুরুষের সম্পর্ককে স্বাধীনভাবে ছেড়ে না দিয়ে বরং তা একটি সঠিক ব্যবস্থা দ্বারা সুশৃঙ্খল করেছে। ইসলাম নারীদেরকে সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের কোন স্তরে অশালীনভাবে উপস্থাপনও নিষিদ্ধ করেছে। হিযবুত তাহ্‌রীর প্রণীত আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ১১২ নং ধারায় বলা হয়েছে, “…তিনি (নারী) মর্যাদার পাত্র এবং তাকে অবশ্যই সুরক্ষিত রাখা বাধ্যতামূলকনারীদের সম্মানকে সুরক্ষিত করার ফলেই আল্লাহ্‌’র বিধান দ্বারা পরিচালিত খিলাফত রাষ্ট্র একটি আলোকিত সমাজে পরিণত হয়েছিল। খিলাফত রাষ্ট্রে সুদূর সান’আ থেকে হাজরামাউত পর্যন্ত নারীরা রাতের অন্ধকারে নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে এবং একাকী সফর করত কিন্তু এক আল্লাহ্‌ এবং হিংস্র জন্তুর ভয় ব্যতিত অন্যকোন ভয় তাদেরকে চিন্তিত করত না।

  • আবি আব্দুল্লাহ্

 

 

 

ইনুঃ ফেরেশতাকেও যদি ক্ষমতায় বসান পণ্যের দাম কমাতে পারবে না

খবরঃ

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, “আজকে যদি দেশের সরকার অদল-বদল হয়ে যায়, ফেরেশতাও যদি ক্ষমতায় বসে, তারপরও যুদ্ধের কারণে বৃদ্ধি পাওয়া পণ্যের দাম কমাতে পারবে না। কার কতটুকু ক্ষমতা অতীতে দেখেছি। আমরা জানি কে চোর আর কে ভালো মানুষ”। সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুর ১২টায় কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা অডিটোরিয়ামে শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। (https://bangla.dhakatribune.com/politics//2022/08/29/1661785429210)

মন্তব্যঃ

দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক দূরাবস্থায় যখন জনজীবন অতিষ্ট, তখন এর মূল কারণ এবং সমাধান নিয়ে আলোচনা না করে বরং আমরা দেখি ক্ষমতাসীন শাসক ও রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে বর্তমান দূরাবস্থাকে ন্যায়সঙ্গত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। মূলত, তারা দুটো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাদের দাবীকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন: (১) নিজেদের দায়িত্বহীনতাকে আড়াল করা, এবং (২) তাদের শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতাকে আড়াল করা। বর্তমানে আমরা যেমন দেখছি তারা সবসময় যেকোন অর্থনৈতিক সমস্যার কারণ হিসেবে বিশ্ববাজার কিংবা বিশ্বপরিস্থিতিকে দায়ী করেন। আর যদি তা না পারেন তাহলে সমস্যাকেই অস্বীকার করেন, কিন্তু যখন সমস্যা প্রকাশিত হয়ে যায় তখন অন্যকিছুর উপর দায় চাপান। উদাহরণস্বরূপ, গত ২৭শে জুলাই’২২ প্রধানমন্ত্রী অকটেন ও পেট্রোল আমদানি করা লাগে না বলে দেশের জ্বালানি সংকটকেই অস্বীকার করলেন; অতঃপর আইএমএফ-এর শর্তপূরণে জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি করলেন, কিন্তু দোহাই দিলেন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির। ১৬ জানুয়ারী ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী দাবী করেন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু ০৬ জুন ২০২২ ঢাকাপোস্টের একপ্রতিবেদন অনুযায়ী “দাম বেড়েছে সবকিছুরই কিন্তু বাড়েনি শুধু বেতন”। এরই ধারাবাহিকতায় সত্য যখন প্রকাশিত তখন হাসানুল হক ইনু বিশ্ব পরিস্থিতির দোহায় দিয়ে দাবী করছেন ফেরেশতাও যদি ক্ষমতায় বসে তাহলেও পণ্যের দাম নাকি কমবেনা। আসলেই কি তাই?

কথাটা আসলে অন্যভাবে সত্যি। কেননা, পণ্যের দামবৃদ্ধির মূল-কারণ বাংলাদেশে বিদ্যমান পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অপসারণ না করে কোন ফেরেশতাকে ক্ষমতায় বসালেও পণ্যের দাম কমানো সম্ভব না। কারণ, একটা অঞ্চলে যেসব কারণে সাধারণত পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পায় সেগুলোর সবকিছুই পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিদ্যমান। যেমনঃ (১) পূঁজিবাদ বাজারে পণ্যের দাম তদারকিতে সরকারের কোন নজরদারি কিংবা কার্যকর হস্তক্ষেপকে না করে “অদৃশ্যহাত” এর উপর বাজারকে ছেড়ে দিতে বলে। যার ফলে, দেশী-বিদেশী পূঁজিপতিরা খুব সহজেই পণ্যের মজুত, পাচার ও সিন্ডিকেট করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধি করতে পারে। যেমনটি আমরা কিছুদিন আগে ডিমের মূল্যবৃদ্ধি কিংবা ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেখেছি। (২) এমন মূদ্রানীতি যা সরকারকে ইচ্ছেমত টাকা ছাপানোর সুযোগ করে দেয়। পূঁজিবাদের বর্তমান কাগুজে বা প্লাস্টিক মুদ্রা ব্যবস্থার কারণে একটি দেশের সরকার ইচ্ছেমত বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতে পারে কিংবা কমাতে পারে। আর যখনই বাজারে পণ্যের তুলনায় টাকার পরিমাণ বেশি চলে আসে তখনই টাকার মান কমে আর পণ্যের দাম বাড়ে। (৩) ইচ্ছেমত বাজেট প্রণয়ন ও বাজেট ঘাটতি পুরণে জনগণ বা শিল্প-পণ্যের উপর ইচ্ছেমত ট্যাক্স-ভ্যাট বসানোর কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়, যা আমরা পূঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রতি বাজেট প্রণয়নে দেখি। (৪) আইএমএফ কিংবা বিশ্বব্যাংকের নীতি অনুযায়ী সবকিছুকে বেসরকারিকরণ করে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের একচেটিয়া মুনাফার ক্ষেত্র তৈরি করা। এর ফলে, সরকার যেসব জায়গায় ভর্তুকি প্রণয়ন কিংবা সরকারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পণ্যের দাম কমাতে পারতো সেখানে বরং উল্টো পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। ফলে দিনকে দিন দেশের অর্থনীতি পরনির্ভরশীল হওয়ায় বিশ্ববাজারের প্রভাব লেগেই থাকছে এবং পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই গত পঞ্চাশ বছরে দেশের পূঁজিবাদী সকল সরকারগুলোই ধারাবাহিকভাবে পণ্যের দাম কমানোর নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েও কিছুই করতে পারেনি। স্বাধীনতার শুরুতে সয়াবিন তেলের দাম মণ প্রতি প্রায় ২৭১ টাকা ছিল আর আজকে ৫০ বছর পর ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৮০-১৮৫ টাকা।

একটি গাড়ীর ইঞ্জিনে যখন সমস্যা থাকে তখন যত ভালো ড্রাইভারই চালকের আসনে বসুক না কেন সমস্যার সমাধান হবে না। মানবমস্তিষ্ক হতে তৈরি ত্রুটিপূর্ণ পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বহাল রেখে যত ভালো মানুষই শাসকের আসনে বসুক না কেন সমাধান হবে না। অন্যদিকে, ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এসেছে স্বয়ং মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র পক্ষ থেকে, তাই এই ব্যবস্থা সকল ত্রুটিমুক্ত। আমরা যদি ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে ফিরে যাই, যা পণ্যের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধির কারণমুক্ত তাহলে খুব সহজেই একজন সাধারণ মানুষের পক্ষেও পণ্যের দাম কমানো সম্ভব হবে ফেরেশতা লাগবেনা। আসুন আমরা খিলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থায় ফিরে যাই। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি অতি সূক্ষ্মদর্শী, পূর্ণ অবহিত[সূরা আল মুলক: ১৪]

  • আসাদুল্লাহ্নাঈম

 

 

 

 

“মুক্ত হয়েই দলবল নিয়ে সম্রাটের মহড়া”

খবরঃ

জামিনে মুক্ত হওয়ার তিন দিন পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসেই দলবল নিয়ে রাজপথে বড় ধরনের মহড়া দিয়েছেন যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট। আজ শুক্রবার দুপুরে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যান তিনি। তার গাড়ির সামনে ছিল মোটরসাইকেলের বহর। অনেক কর্মী-সমর্থক ছিলেন পিকআপে। বিকেল সোয়া চারটার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পৌঁছান সম্রাট। এর আগে বেলা আড়াইটায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন অংশ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল আসতে থাকে সেখানে। গত সোমবার রাতে জামিনে মুক্ত হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সাবেক নেতা সম্রাট। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে কারাগারে না থেকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জামিন পাওয়ার পরও গত তিন দিন তিনি হাসপাতালেই অবস্থান করছিলেন। আজ হাসপাতাল থেকে প্রথমে শান্তিনগরে তার মায়ের বাসায় যান সম্রাট। সেখান থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। (www.prothomalo.com/politics/bckwcqbkph)

মন্তব্যঃ

বর্তমান সরকারের তথাকথিত শুদ্ধি অভিযানের সময় কিছু নেতাকর্মীকে লোক দেখানো আইনের আওতায় আনলেও এটিই মূলত এই সেকুলার-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতির ধরন। এখানে যেমন দলের মান বাঁচাতে কর্মীদের ছেটে ফেলা হয়, আবার নির্বাচনকে সামনে রেখে এদের শক্তিকে ব্যবহার করার জন্য জেল থেকে ছাড়িয়েও আনা হয়। মূলত পাওয়ার পলিটিক্সের ধরনটাই এমন। এখানে ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টিই মূখ্য বিষয়। আর এই ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা টিকে থাকার প্রক্রিয়ায় যদি কোন খুনের আসামীকেও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বলে ক্ষমা করতে হয় তাহলেও তারা তা করতে পিছপা হয় না। যেমন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ভাই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পেয়ে বিদেশে বহাল তবিয়তে আছেন। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় করা অপরাধের স্বীকৃতিস্বরুপ এখানে উচ্চতর পুরষ্কার ছাড়া আর কিছুই জোটে না।

সম্রাটের মত রাজনৈতিক ক্যাডাররা দলের আশির্বাদে কতদুর এগোতে পারেন তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক নেতা গোলাম ফারুক অভি। একাধিক হত্যাকান্ডের অভিযোগে ১৭ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত হলেও মাত্র তিন বছর কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান পরবর্তীতে উক্ত মামলাসমূহে খালাসও পান। শুধুমাত্র মামলা থেকে খালাসই পাননি বরং তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ পরবর্তীতে তিনি জাতীয় পার্টির ব্যানারে ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ৭ম সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন এবং বর্তমানে তিন্নি হত্যা মামলায় আসামী হয়ে কানাডায় আছেন, তথাপি এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বর্তমান এই মানবরচিত ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন যেকোন রাজনৈতিক দলের ক্যাডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে অভি কিংবা সম্রাটদের মত রাজকীয় জীবনযাপন করা যায় যেখানে শত অপরাধের পরও ফুলের মালা প্রস্তুত থাকে।

যেহেতু এই মানবরচিত জীবন ব্যবস্থায় মুনাফা অর্জনই সব কাজের মূখ্য বিষয় সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক কার্যক্রমের মূল বিষয়ও নিজের সর্বোচ্চ মুনাফা ও ভোগের বিষয়টিকে নিশ্চিত করা। আমাদের এটি ভাবার কোন কারণ নেই যে শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়া আমাদের সেবার জন্য ক্ষমতায় আছেন কিংবা যেতে চান। তাদের নিজেদের, তাদের পরিবার-পরিজনদের এবং তাদের অপরাধের সহযোগীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুবিধা প্রদানের জন্যই তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার এই প্রচেষ্টা। ফলে সম্রাট কিংবা অভিদের মত বাই-প্রডাক্ট এই ব্যবস্থার অপরিহার্য বিষয়। তাই বর্তমান এই ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের যে চক্র তৈরী হয়েছে তা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। আমাদেরকে বরং এমন রাজনৈতিক ব্যবস্থার অনুসন্ধান করতে হবে যেখানে রাজনৈতিক দর্শন হচ্ছে যে এটি একটি ইবাদত এবং জনগণের সেবা করাই হচ্ছে যেখানে মূখ্য বিষয়। এবং এই দর্শনের বাইরে গিয়ে যদি কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করতে চায় তবে সেখানেও তা শক্তিশালী অবস্থান গ্রহন করে। আর এই ইউনিক রাজনৈতিক দর্শনের অবস্থান শুধুমাত্র ইসলামেই বিদ্যমান আছে।

উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি খলীফা উমারের সময়কার দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে, তৎকালীন মিশরের গভর্নর আমর ইবনুল আস-এর এক ছেলে একবার এক মিসরীয় খ্রিষ্টানের ছেলেকে মারধর করে। তখন ঐ খ্রিস্টান লোকটি গভর্নরের কাছে অভিযোগ না করে বরং মদীনায় গিয়ে খলীফা উমারের কাছে গিয়ে গভর্নরের ছেলের বিরুদ্ধে নালিশ করেন। ফলে হযরত উমর (রা.) – আমর বিন আ’স ও তার ছেলেকে মদিনায় তলব করলেন। অতঃপর এই মামলার শুনানীর ব্যবস্থা করলেন। নির্দিষ্ট দিনে উভয় পক্ষের সাক্ষ-প্রমান নেয়া হল। বিচারে হযরত আমর (রা.)-এর ছেলে দোষী বলে সাব্যস্ত হল। তারপর অভিযোগকারীকে বললেন তুমি গভর্ণরের ছেলেকে প্রহার করো যেভাবে সে তোমাকে প্রহার করেছিল। খলিফার আদেশ পেয়ে খ্রিস্টান ছেলেটি সাহস পেল। সে তার কিসাস নিয়ে নিল। মূলত এভাবেই ইসলাম রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে গিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে এবং এখানে দল-মত-গোত্র-আত্মীয় ইত্যাদির বন্ধন আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র প্রদত্ত হুকুম বাস্তবায়নে কোনরকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে না।

  • মো. হাফিজুর রহমান

 

 

 

চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

খবরঃ

চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় চা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার পরপরই গণভবনে এ বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায়। ১৩ জন বাগান মালিক এ বৈঠকে অংশ নেন। … দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন দেশের ১৬৬ চা-বাগানের দেড় লাখের বেশি শ্রমিক। সেদিন থেকে চার দিন পর্যন্ত ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এরপর গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরোপুরি কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। গত ১৯ আগস্ট রাতে মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার বিষয়ে একটি চুক্তি হলেও সেটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যান শ্রমিকরা। (https://sharebiz.net/ চাশ্রমিকদেরমজুরি১৭০টা/)

মন্তব্যঃ

যেসব শ্রমিকরা একদিন কাজ করে যা আয় করে তা দিয়ে ঐদিনও ঠিক মত খেতে পায় না তারা একটু স্বস্তির মজুরি পাওয়ার আশায় খেয়ে না খেয়ে ১৯ দিন ধরে আন্দোলন করলো, যাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়। অবশেষে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসলো একজন চা শ্রমিক একদিন কাজ করে নূন্যতম পরিমাণ পাতা তুলতে পারলে ১৭০ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরাটা ঠিক মজুরি। প্রধানমন্ত্রীর সচিব হিসাব কসে দেখিয়েছেন থাকার বাড়ি, রেশন, বাচ্চাদের শিক্ষার পিছনে খরচ ও সবার জন্য দেয়া চিকিৎসা খরচ বিবেচনায় একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি নাকি পড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। যদিও এটা মিথ্যা। তাদের বিচারে এটাই সঠিক এবং এটাই এই শ্রমিকদের যথার্থ প্রাপ্য!

এখন আসি কয়েকটি বাস্তবতায়- ১. চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে বাংলাদেশের চা শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজারের মত আর চা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৭ লাখের মত, সেই হিসেবে প্রতিজন শ্রমিকের আয়ে চলে গড়ে ৫ জন। সেই হিসেবে এবং সম্প্রতি NewsBangla24.com এ প্রকাশিত ‘চা শ্রমিকদের বঞ্চনা শীর্ষক ৫ পর্বের লেখার আলোকে দেখা যায় (https://www.newsbangla24.com/news/204893/Where-does-the-two-crores-of-tea-workers-contribution-go?) সব সুযোগসহ একজন শ্রমিক আসলে পায় (মজুরি ১৭০+ রেশন ৫০ + বাসা  ৭৭ + শিক্ষা ৪.৫ + চিকিৎসা ৫.৫+ অন্যান্য ৩) দৈনিক ৩১০ টাকা। অর্থাৎ এদের ক্ষেত্রে দৈনিক মাথাপিছু আয় ৬২ টাকা। ২. World Vision Bangladesh এর হিসাব অনুযায়ী ৪ জনের পরিবারের ২ জন আয় করলে নূন্যতম বেঁচে থাকতে আয় লাগবে দৈনিক ৫৩০ টাকা সেই হিসেবে ৫ জনে একজন আয় করলে নূন্যতম আয় লাগবে ১১৭৫ টাকা। অর্থাৎ মাথাপিছু দৈনিক নূন্যতম ব্যয় ২৩৫ টাকা। অর্থাৎ সরকার যে মজুরি ঠিক করে দিল তা আসলে মাথাপিছু ৬২ টাকা যা একজন ব্যক্তির নূন্যতম বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ২৩৫ টাকা থেকে ১৭৩ টাকা কম। প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক বাস্তবতার দায়সারা যুক্তি দেখিয়ে শ্রমিকদের কাজে পাঠালেন, এবং বুঝানোর চেষ্টা করলেন যা তারা পাচ্ছে এটাই তো অনেক, এতেই তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। এর আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে তিনি কটাক্ষ করে বলেছিলেন যে বেতনতো বাড়বেই না পরে চাকরি চলে গেলে ‘আমও যাবে ছালাও যাবে’!

এই হলো বর্তমান শাসকদের চরিত্র; প্রতারণা কিংবা ভয়-ভীতি প্রদর্শন- এই দুই হাতিয়ার প্রয়োগে তারা সিদ্ধহস্ত। এখন প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক একটি দেশের সরকারপ্রধান কিভাবে মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে না পারা প্রতিনিয়ত ক্রমবর্ধমান পণ্যমূল্যের বাজারে ধুকতে থাকা মানুষগুলোর সাথে এমন আচরণ করতে পারেন? এটা কি এজন্য যে ব্যক্তি হিসেবে তিনি দয়ামায়াহীন অথবা লৌহমানবী, নাকি তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে অন্যকিছু? বর্তমানে বাংলাদেশসহ অধিকাংশ মুসলিম ভূ-খন্ডগুলো পশ্চিমাদের অনুকরণে মানবরচিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এখন এটা সর্বজনবিদিত যে, এই ব্যবস্থায় ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতায় টিকে থাকা সবই নির্ভর করে চা বাগান মালিকদের মত ধনী-পুঁজিপতি শ্রেণী এবং চা’র আমদানিকারক দেশগুলোর মত প্রভাবশালী দেশসমূহের কৃপার উপর। তাই এখানে সরকারপ্রধানদের মূল দায়বদ্ধতার জায়গা পুঁজিপতিদের ব্যবসার সুযোগ বাড়িয়ে দেয়া এবং পশ্চিমাদের কমমূল্যে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করাতে সীমাবদ্ধ। আর সাধারণ জনগণ এই কাজ দুটি সম্পন্ন করার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই না। পুঁজিবাদে যেহেতু সবকিছুকে কেবলমাত্র উপযোগিতার পাল্লায় বিচার করা হয় এবং এখানে দয়ামায়া ও আবেগের কোন জায়গা নাই। এখানে সাধারণ জনগণের জন্য ঠিক ততটুকুই বরাদ্দ দেয়া হয় যতটুকু না দিলে মানুষ বিদ্রোহ করে ফেলে কিনা সেই ভয়ে।

আর ইসলামে বস্তু বা মানুষের মূল্য তার উপযোগিতার ভিত্তিতে নয় বরং নির্ধারিত হয় ঐ বস্তু বা ব্যক্তির ব্যাপারে আল্লাহ্‌’র হুকুমের ভিত্তিতে৷ ইসলামের শাসক খলিফা তার নাগরিকদের বিষয়ে দায়িত্বশীল। অর্থাৎ কিয়ামতের মাঠে খলিফাকে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়েছে কিনা এই বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। বিনামূল্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রয়োজনে খলিফা নাগরিকদের বসবাসের ব্যবস্থা করবেন। খিলাফতের ইতিহাসে এইরকম অসংখ্য সরাইখানায় গরিব মুসাফিররা বিনামূল্যে খেতে ও থাকতে পারতো। ইসলামের এসব নীতির কারণে কোন ব্যবসায়ীর পক্ষে শ্রমিক কিংবা কর্মচারীদের চা-শ্রমিক বা গার্মেন্টস শ্রমিকদের মত এরকম দাসের মত জীবনমানে আবদ্ধ রাখা সম্ভব হবে না। তাছাড়া, উপনিবেশিক পশ্চিমাদের স্বার্থে গড়া এবং দাসত্বের ইতিহাস ভরা এতবড় চা শিল্প আমাদের আদৌ লাগবে কিনা তাও চিন্তা করে দেখা প্রয়োজন। কারণ এসব বাগানের জন্য এত ভুমি পুঁজিপতিদেরকে নামমাত্র মূল্যে লীজ দিয়ে রাখার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে? বরং এই জমিকে দেশের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় খাদ্যপন্য যেমন ডাল, ভোজ্যতেল ইত্যাদি উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। খিলাফত রাষ্ট্রে এধরনের শ্রমিকরা সহজেই নিজস্ব জমি পাবেন অথবা অন্যের জমিতে যথার্থ পারিশ্রমিকে কাজ করতে পারবেন।

  • মোহাম্মদ তালহা হোসেন