Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
১৩৩ তম সংখ্যা । ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫
এই সংখ্যায় থাকছে :
“গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের”
“সৌদি আরব বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চায় কিন্তু বিগত সরকার তা হতে দেয়নি”
“লস অ্যাঞ্জেলেসে পুড়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট”
“ঘুষের মামলায় দোষী সাব্যস্ত, তবুও নিঃশর্ত খালাস পেলেন ট্রাম্প”
“দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশ আসছে”
“জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ১০০ জনকে কর্মসংস্থানের প্রস্তাব”
“মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত”
“সব মসজিদে একই খুতবা দেওয়ার আহ্বান জামায়াত আমীরের”
“গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের”
খবরঃ
শিল্পখাতে গ্যাসের প্রতি ইউনিটের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। দেশকে অস্থিতিশীল করতে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের জবাবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “দাম বাড়ানো বা বিভিন্ন কর বাড়ানো সরকারের পক্ষে কিন্তু স্বস্তিদায়ক নয়। তারপরেও অনেক ক্ষেত্রে করতে হচ্ছে, কারণ বিগত সরকার এ দেশে বড় নৈরাজ্য করে গেছে। প্রচুর টাকা পাচার করে নিয়েছে।” (https://www.jugantor.com/tp-firstpage/900941)
মন্তব্যঃ
এই মূহুর্তে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে নজিরবিহীনভাবে দেশের শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত, শতাধিক পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর বা (ভ্যাট) ৫-১০% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করা, ব্যাংক ঋণে সুদের হার বৃদ্ধি এবং ইলেকট্রনিক্স খাতের কর্পোরেট ট্যাক্স একলাফে ১০% থেকে ২০% বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এই সবকিছু যে আইএমএফ এর শর্ত অনুসরণ করে করা হয়েছে তা নিয়ে কারো মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এর বাইরেও সামগ্রিক কর আদায় বৃদ্ধি, ভর্তুকি কমানো, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়গুলো পাইপলাইনে রয়েছে যা হয়ত সামনের দিনগুলোতে প্রকাশিত হবে। এই সবই করা হচ্ছে, আইএমএফ থেকে প্রতিশ্রুত ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের মধ্যে বাকি মাত্র ২৩৯ কোটি ডলার পাওয়ার জন্য, যা কিনা প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো ১ মাসের রেমিটেন্সের সমান। গত মাসেও (ডিসেম্বর, ২০২৪) ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে এসেছে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এবং এর সাথে ব্যাংকিং খাতের বাইরের রেমিট্যান্সতো রয়েছেই। এই সামান্য ২৩৯ কোটি ডলার ঋণের অর্থ পেতে দেশের অর্থনীতির মূল নিয়ামক খাতগুলোকে ধ্বংস ও জনজীবনকে দু্র্বিষহ করে ফেলার সিদ্ধান্তকে পৃথিবীর প্রচলিত বা অপ্রচলিত কোন অর্থনৈতিক তত্ত্ব দিয়েই জাস্টিফাই করার নূন্যতম সুযোগ নেই।
অথচ, ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন এই অন্তর্বর্তী সরকার শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ থাকতে মার্কিন প্রতিষ্ঠান আইএমএফ-এর কাছে দেশের অর্থনীতিকে সমর্পন করছে এবং জনগণের দুর্দশার কোন তোয়াক্কাই করছে না। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত যে, আইএমএফ-এর পরামর্শ অনুসরণ করে কোন দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর নজির নাই, বরং এসব দেশসমূহ চরম পরনির্ভরশীল ও দারিদ্র অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সুদানকে একসময় বলা হতো “রুটির ঝুড়ি”, আর আইএমএফ-এর পরামর্শ অনুসরণ করে সুদান বর্তমানে অন্যতম দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশে পরিণত হয়েছে। সুতরাং, যেসব শাসক, রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিরা মার্কিনীদের পক্ষে সাফাই গায়, তারা এই দেশে একই নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে এগিয়ে নিতে মার্কিনীদের সহায়তা করছে। তাই, দেশের সাধারণ জনগণকে এই গোষ্ঠীর চক্রান্ত সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।
আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের কাজ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আমেরিকার নেতৃত্বে যে বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তা রক্ষা করার হাতিয়ার। এর মাধ্যমে আমেরিকা উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর স্বনির্ভরতাকে ধ্বংস করে দেশগুলোর ‘চলতি হিসাবের’ মধ্যে গরবর করে দিয়ে ঋণের জালে আটকে ফেলে। এই ব্যর্থ বিশ্বব্যবস্থার ‘সেন্টার অব গ্র্যাভিটির’ কেন্দ্রবিন্দুতে আমেরিকার অবস্থানকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা হিসেবে খিলাফতের উত্থানকে ঠেকানোর জন্য আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এবং এই কাজে তাদের হয়ে মুসলিম নামধারী কিছু ব্যক্তিত্ব মুসলিম উম্মাহ্’র মধ্যে ভাইরাস (চর) হিসেবে কাজ করছে। আমেরিকার সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ থেকে দেশকে মুক্ত করার উদ্যোগে এই উম্মাহ্ প্রকৃত অভিভাবক হিযবুত তাহ্রীর-কে সহায়তা না করে শুধু ‘ক্ষোভ প্রকাশে’ সীমাবদ্ধ থাকলে সামনের দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য আরো কঠিন ও নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে।
– রিসাত আহমেদ
“সৌদি আরব বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চায় কিন্তু বিগত সরকার তা হতে দেয়নি”
খবরঃ
সৌদি তেল কোম্পানি আরামকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু বিগত সরকার তাদের স্বাগত না জানিয়ে বিমানবন্দর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো। এমন তথ্য দিলেন অর্থ উপদেষ্টা। সৌদি রাষ্ট্রদূতও অভিযোগ করেছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পথে বাঁধা তৈরি করতো আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা। (https://www.itvbd.com/economy/193949/‘সৌদি-আরব-বাংলাদেশে-বিনিয়োগ-বাড়াতে-চায়-কিন্তু-বিগত)
মন্তব্যঃ
বিগত সরকার কর্তৃক সৌদি তেল কোম্পানী আরামকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংকে বিনিয়োগে বাঁধা তৈরি করার বিষয়কে যেভাবে বর্তমান সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সরলভাবে উপস্থাপন করছেন প্রকৃত সমীকরণ ততটা সরল নয়। বরং, এর পিছনে রয়েছে বিগত সরকার এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যেকার উপনিবেশবাদী ব্রিটিশ-ভারত বলয় থেকে সম্পূর্ণভাবে উপনিবেশবাদী আমেরিকান বলয়ে দেশকে নিয়ে যাওয়ার লড়াই। স্বাধীনতার পর পরই ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত শেখ মুজিবুর রহমান সরকার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম অ্যাক্ট ১৯৭৪ এর অধীনে দেশের কৌশলগত জ্বালানী সম্পদকে উত্তোলনে নিজস্ব স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানীগুলোর (Big Oil) কাছে উন্মুক্ত করে দেয়। কার্যত, ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর মত তৎকালীন এই ৭ টি সেভেন সিসটার Big Oil কোম্পানী শেল, বিপি, মবিল, শেভরন, গালফ, টেক্সাকো এবং এসসো এর কাছে দেশের জ্বালানী সম্পদ উন্মুক্ত করার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে বিদেশী কোম্পানীর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে শেখহাসিনা সরকার ব্রিটিশ কোম্পানী শেল, কেয়ার্ন এনার্জি এবং অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি সান্টোস এর কাছে আরো ৪ টি হাইড্রো-কার্বন ব্লক তুলে দেন। তারপর ধারাবাহিকভাবে বিএনপি-জামাত সরকারের সময় ২০০৫ সালে শেভরন, শেখ-হাসিনার আমলে ২০০৯ সালে কনোকোফিলিপস্, ২০১২ সালে গ্যাজপ্রম, এবং ২০২১ সালে ওএনজিসি বাংলাদেশের জ্বালানীর সম্পদের প্রায় ৬০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সুতরাং, বাংলাদেশে বর্তমান সেভেন সিস্টার তেল কোম্পানীগুলোর অন্যতম প্রো-আমেরিকান সৌদি তেলকোম্পানী সৌদি-আরামকোর এবং টেক জায়ান্ট স্যামসাং-এর বিনিয়োগ করতে চাওয়া, ফিরিয়ে দেয়া এবং পুনরায় সুযোগ দেওয়াকে এই ছকে বুঝতে হবে। মূলত, হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ অধিক পরিমানে ব্রিটিশ-ভারত নিয়ন্ত্রিত থাকায় তৎকালীন সময়ে প্রো-আমেরিকান কোম্পানীগুলো অনেকক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত হয়েছে। সৌদি-আরামকো এবং স্যামসাং-এর ফিরে যাওয়া এরই কারণ। আবার, ক্ষমতায় টিকে থাকার শর্তে আমেরিকান হুমকী মোকাবেলায় অনেকক্ষেত্রে সুবিধাও দিয়েছে। যেমন, ২০২৩ সালে গভীর সমুদ্রের ১৫টি হাইড্রো-কার্বনে ব্লকের সবকয়টি আমেরিকান উপনিবেশবাদী কোম্পানী এক্সোন-মবিলের হাতে তুলে দেওয়া যার প্রমাণ। একই ধারাবাহিকতায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রো-আমেরিকান বলয়ের হওয়ায় এখন প্রো-আমেরিকান কোম্পানীগুলোর সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা প্রমাণ করে বাংলাদেশ জুলাই’২৪ এর অভ্যুত্থানের পর দ্বিতীয়বার আসলে স্বাধীন হয়নি বরং ব্রিটিশ-ভারতীয় গোলামীর বলয় থেকে আমেরিকান গোলামীর বলয়ে দ্রুততার সাথে প্রবেশ করছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, উপনিবেশবাদী শক্তির গোলামীর বলয়ে আর কতদিন? এত রক্ত, জীবন দেওয়ার পরে আবারো সেই আমেরিকান কুফর উপনিবেশবাদী শক্তির কাছে দেশ ও জনগণের ভাগ্যকে তুলে ধরার যে প্রতিযোগীতা বর্তমান সরকারের মধ্যে দৃশ্যমান তা কি মুসলিম উম্মাহ্কে জুলুম ও বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে পারবে? স্পষ্টতই যা সম্ভব নয়। কেননা, ব্রিটেন, ভারত কিংবা আমেরিকান গোলামি করে মুসলিম উম্মাহ্ কখনোই মেরদণ্ড শক্ত করে দাঁড়াতে পারবে না। বরঞ্চ, আজীবন এদের আধিপত্য মেনে চলতে হবে। এর থেকে মুক্তির একমাত্র পাথেয় আল্লাহ্ প্রদত্ত মুক্তির সমাধান ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা, যা উম্মাহ্’র কৌশলগত সম্পদকে উপনিবেশবাদী শক্তির বলয় থেকে মুক্ত করে উম্মাহ্কে আবারো শক্তিশালী করবে।
– আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“লস অ্যাঞ্জেলেসে পুড়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট”
খবরঃ
বিনোদন জগতের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লস অ্যাঞ্জেলেসে ছয়টি দাবানলের মধ্যে তিনটি নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি বাইরে চলে গেছে। এরই মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের। প্রাণে বাঁচতে লস অ্যাঞ্জেলেসের ১ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। এদিকে দাবানলে বিপর্যস্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে লুটপাটের খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় বোর্ড অব সুপারভাইজারসের প্রধান ক্যাথরিন বার্জার বলেন, “অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। দুর্বৃত্তরা পরিত্যক্ত ওই বাড়িগুলোয় লুটপাট চালাচ্ছে”। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
(www.amadershomoy.com/international/article/134174/লস-অ্যাঞ্জেলেসে-পুড়েছে-৫)
মন্তব্যঃ
সর্বশেষ খবর বলছে লুটপাট ব্যাপকতা লাভ করায় ইতিমধ্যে সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস আমেরিকার একটি অন্যতম প্রধান অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত। দাবানলের মধ্যে সেখানে অন্য অঞ্চল থেকে মানুষ এসে লুটপাট চালাবে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। মূলত: এই লুটপাট কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দাবানলের কারণে সুযোগ তৈরী হওয়ায় প্রচন্ড রকমভাবে ভোগবাদে অভ্যস্ত, লোভী ও নৈতিকতাহীন আমেরিকানদের আসল ‘নৈতিক’ চেহারা বের হয়ে এসেছে। ইতিপূর্বে ২০২৩ লস অ্যাঞ্জেলেসে একই রকম গণ-লুটপাটের ঘটনা ঘটেছিল (https://www.youtube.com/watch?v=Po4Jo834eos)। একই বছর ফিলাডেলফিয়াতে গণ-লুটপাটের ঘটনায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল (https://www.youtube.com/watch?v=e5kOHGwmqjc)। এছাড়া, শপ-লিফটিং বা সুপারশপ থেকে চুরির ঘটনায় আমেরিকা পৃথিবীতে চ্যাম্পিয়ন এবং প্রতি চারজন আমেরিকানের মধ্যে অন্তত একজনের জীবনের কোন না কোন সময়ে এই শপ-লিফটিং এর ‘গর্বিত’ অভিজ্ঞতা রয়েছে (USA Today, August 2024) (https://www.usatoday.com/story/money/2024/08/11/shoplifting-on-the-rise/74693321007/)। এমনকি বিষয়টি এতটাই ‘স্বাভাবিক’ ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে চলে এসেছে যে, চুরির পরিমাণ ৯৫০ ডলারের উপরে না হলে পুলিশ কোন লিখিত অভিযোগও গ্রহণ করে না (Why Shoplifting Is Now De-Facto Legal In California?, Hoover Institution; https://www.hoover.org/research/why-shoplifting-now-de-facto-legal-california)।
মূলত: আমেরিকার পুরো অর্থনীতি হলো একটি ফাঁপানো বেলুন এবং এই রাষ্ট্রটির পুঁজিবাদী ‘অর্থনৈতিক মডেলের’ চুড়ান্ত ব্যর্থতার প্রমাণ হলো এই গণ-লুটপাট ও নিকৃষ্ট চৌর্যবৃত্তি পেশার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা। শুধু তাই নয়, লেখাপড়া ও দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের জন্য ১৮-২৫ বছর বয়সী আমেরিকান নারীদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে অন্তত ১ জন ওয়েবক্যাম ভিত্তিক ‘প্রাইভেট’ পর্ণোগ্রাফিতে যুক্ত, যা সম্মানের পাত্র নারীদের মর্যাদা রক্ষা ও আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিতে এই রাষ্ট্রটির স্বদিচ্ছার অভাব ও ব্যর্থতার পরিচায়ক। ফলে, বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের এই ব্যর্থ ‘অর্থনৈতিক মডেল’ ফেরি করা এবং মুসলিম দেশগুলোকে মানবাধিকার ও নৈতিকতার ছবক দিয়ে বেড়ানোর কোন যৌক্তিক অধিকার আমেরিকার নেই।
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলের ঘটনাকে ফিলিস্তিনের গাজায় আমেরিকা-ইসরাইলের নির্মমতম গণহত্যার প্রতিফল হিসেবে মুসলিম উম্মাহ্ সোশাল মিডিয়ায় উদযাপন করছেন। প্রকৃত সত্য হলো: মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ কাফিরদেরকে তাদের অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘনের কারণে অনেক আগেই পরিত্যাগ করেছেন এবং তাদের সকল অপকর্ম ও ষড়যন্ত্রকে পূর্ণ নজরদারির মধ্যে রেখেছেন! আল্লাহ্ মুসলিমদের সাথেই আছেন এবং মুসলিম উম্মাহ্ বিজয়ের শর্ত পূরণ হিসেবে কাফিরদের বস্তুগত সক্ষমতার ভয়কে পরাস্ত করে খিলাফত পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও ‘মরণপণ’ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হলে আল্লাহ্ তার গায়েবী সাহায্যের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়ে উম্মাহ্-কে চূড়ান্ত বিজয় উপহার দিবেন। এতে সা’দ বিন মুয়ায (রা.)-এর উত্তরসূরীদের জন্য সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে। “হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহ্-কে সাহায্য করো, তবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে দৃঢ়পদে অধিষ্ঠিত করবেন” (সূরা মুহাম্মাদ: ০৭)
– রিসাত আহমেদ
“ঘুষের মামলায় দোষী সাব্যস্ত, তবুও নিঃশর্ত খালাস পেলেন ট্রাম্প”
খবরঃ
যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘অর্থের বিনিময়ে তথ্য গোপন’ করার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হলেও, আদালত তাকে কোনও শাস্তি প্রদান করেনি। বিচারক রায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করলেও, শাস্তির আওতায় না এনে তিনি নিঃশর্তভাবে খালাস পেয়েছেন। এর ফলে, ট্রাম্প কোনও সমস্যা ছাড়াই হোয়াইট হাউসে ফিরে যেতে পারবেন। শনিবার (১১ জানুয়ারি) আল জাজিরা ও ভয়েস অব আমেরিকা এর মতো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৪টি গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল, যার মধ্যে প্রতিটি অভিযোগেই তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়। নিউইয়র্কের ম্যানহাটান আদালতের বিচারক হুয়ান এম মার্চান জানিয়েছেন, ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্পকে চার বছরের কারাদণ্ড প্রদান করার সুযোগ থাকলেও তিনি সাংবিধানিক বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে মামলার পরিসমাপ্তি টানেন। বিচারক বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প যে আইনি সুরক্ষা পাবেন, তা অন্যান্য বিষয়কে ছাড়িয়ে গেছে। (https://www.dhakaprokash24.com/international/united-states-of-america/70509)
মন্তব্যঃ
একটি বিচার ব্যবস্থার কাজ যেখানে অপরাধীর শাস্তি কার্যকর করে তাকে অপরাধ থেকে বিরত (Deter) রাখা সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে গুরুতর অপরাধী অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাকে “শর্তহীন মুক্তি”ই প্রমাণ করে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বিচারব্যবস্থায় ‘সেপারেশন অফ পাওয়ার’, কিংবা ‘আইনের চোখে সবাই সমান’ নামে যে সকল নীতি প্রচলিত রয়েছে তা বিত্তশালী, প্রতিপত্তি কিংবা ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য নয়। গণতান্ত্রিক আইনের মারপেঁচে শুধুমাত্র দরিদ্র কিংবা অসহায় ব্যক্তিরাই নিপতিত হয়। তাই কোনরকম অপরাধ না করা সত্ত্বেও ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে মার্কিন আদালত ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। অথচ, জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন চলতি বছরের ১১ জুন অবৈধভাবে বন্দুক কেনা, কমপক্ষে ১.৪ মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার এবং মাদক গ্রহণ সম্পর্কে মিথ্যা বলার জন্য জন্য ফৌজদারি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলেও জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার Presidencial Power ব্যবহার করে ছেলে হান্টারকে পূর্ণ ও শর্তহীন ক্ষমা প্রদান করেছে (tbsnews, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪)। আমাদের দেশেও আমরা দেখেছি, প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে টেক্স ফাঁকির মামলা থাকলেও তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যবহার করে তা থেকে দায়মুক্তি নিয়েছেন। সম্ভাব্য ভবিষ্যত সরকারী দল বিবেচনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতাকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। হাসিনার শাসনামলে, প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফসহ বহু অপরাধীকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ক্ষমা ও বিচারিক দায়মুক্তি দিয়েছিল।
সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেহেতু মানুষকে “Legislative Power” দিয়ে থাকে, তাই ক্ষমতাধর এবং প্রতাপশালী ব্যক্তিদের দ্বারা বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে দায়মুক্তি নেওয়াটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। কারণ, সেক্যুলার রাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, যিনি অন্যদেরকে জবাবদিহিতা ছাড়াই ক্ষমা করতে পারেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই ধরনের দায়মুক্তি শাসকশ্রেণী, বিত্তশালী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিদেরকে সীমাহীন অপরাধ এবং দুর্নীতিতে ব্যাপক উৎসাহ যোগায়।
অপরদিকে, ইসলামী ব্যবস্থায় আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তার, আর শাসকের দায়িত্ব শুধুমাত্র সেই আইন বাস্তবায়ন করা। ফলে, খিলাফত রাষ্ট্রে নির্বাহী বিভাগ এবং বিচারবিভাগের মধ্যে প্রকৃত ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং একটি অন্যটির প্রভাব থেকে মুক্ত। ফলে, শাসকগোষ্ঠী কিংবা কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তি অপরাধ করে তা থেকে দায়মুক্তি নেওয়ার সুযোগ থাকে না। এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল খলিফা আলী (রা.)-(রা.)-এর ঘটনা। তিনি নিজের হারানো বর্ম এক ইহুদি ব্যবসায়ীর কাছে দেখতে পেয়ে বিষয়টি কাজি শুরাইহ’র আদালতে নিয়ে যান। বিচারক উভয় পক্ষকে সমান মর্যাদায় বসান। খলিফা যখন প্রমাণ হিসেবে তার পুত্র হাসান (রা.) ও ক্রীতদাস কানবারকে উপস্থিত করেন, বিচারক তা গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, “পুত্রের সাক্ষ্য পিতার পক্ষে এবং ক্রীতদাসের সাক্ষ্য প্রভুর পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।” তাই, প্রমাণের অভাবে তিনি ইহুদি ব্যক্তির পক্ষে রায় দেন। এই নিরপেক্ষ বিচার দেখে ইহুদি ব্যবসায়ী এতটাই মুগ্ধ হন যে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং স্বীকার করেন যে, বর্মটি সত্যিই খলিফার ছিল। খিলাফত রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থায় আরও উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল যে, খলিফা কোন কাজির ইসলামসম্মত রায় বাতিল করতে পারতেন না। শারীরিক ক্ষতি, হত্যা, কিসাসসহ হুদুদ শাস্তি তিনি ক্ষমা করতে পারতেন না, কারণ ইসলামী শরীয়া তাকে সেই ক্ষমতা দেয়নি। এমনকি মাহকামাতুল মাযহালিম কোর্টে খলিফার বিরুদ্ধে মামলা চলাকালীন তিনি বিচারক অপসারণ করতে পারবেন না, যা সেক্যুলার পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে অকল্পনীয়। “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো, আল্লাহ্’র জন্য সাক্ষ্য প্রদানকারী হিসেবে – যদিও তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে অথবা পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। সে ধনী হোক বা দরিদ্র হোক, আল্লাহ্ উভয়ের অধিক হিতাকাঙ্ক্ষী। অতএব তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না যাতে তোমরা ন্যায়বিচার থেকে বিচ্যুত হও” (সূরা আন-নিসা: ১৩৫) ।
– আবি আব্দুল্লাহ
“দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশ আসছে”
খবরঃ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের দাবি অনেকটা জোরালো হয়ে উঠেছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় অনেকেই এর পক্ষে প্রস্তাব দিয়েছেন। আলোচনায় এবং লিখিতভাবে বিভিন্ন দল, সংগঠন ও শ্রেণী-পেশার মানুষ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছেন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে দেওয়া প্রস্তাবেও এমন সুপারিশ করেছেন অনেকে।… (https://samakal.com/bangladesh/article/272952/দ্বিকক্ষবিশিষ্ট-সংসদের-সুপারিশ-আসছে)
মন্তব্যঃ
সংস্কারের নামে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সুপারিশ ‘নতুন বোতলে পুরান মদ ভরা’র সুপারিশ করার মতোই একটা অদ্ভুত ও অকার্যকর প্রস্তাবনা। এটি প্রবর্তনের পেছনে যুক্তি দেয়া হচ্ছে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা চালু থাকলে জনগণের প্রতিনিধি (নিম্ন কক্ষ) তাদের নিজেদের স্বার্থে বা স্বৈরাচারী উদ্দেশ্যে কোনো ইচ্ছামত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কারণ, সাধারণত এই ধরনের আইনসভায় নিম্ন কক্ষের সদস্যরা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন এবং তাদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকে, তবে সেই আইন কার্যকর করতে উচ্চ কক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এই ধরনের আইনসভায় আইন প্রণয়নে সমান ক্ষমতার ভারসাম্য বা ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ নিশ্চিত করা হয়।
বিশ্বে উচ্চ কক্ষের বিভিন্ন রকম কাঠামোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেমন, সরাসরি নির্বাচিত (যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে); নিযুক্ত (যেমন যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডস); পরোক্ষভাবে নির্বাচিত (সংসদের সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত, যেমন ভারতের লোকসভার (নিম্ন কক্ষ) সদস্যরা রাজ্যসভার (উচ্চ কক্ষ) সদস্যদের নির্বাচিত করে)। অর্থাৎ উচ্চ কক্ষের সদস্যরা হয় নির্বাচিত অথবা নিযুক্ত। সেক্ষেত্রে, যদি উচ্চ ও নিম্ন উভয় কক্ষে একটি দলের সংখ্যাগরিষ্টতা থাকে অথবা উচ্চ কক্ষের সদস্য নিয়োগ যদি নিম্নকক্ষের বিজয়ী দলের পছন্দের লোকদের মাধ্যমে হয় তবে কিভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত হবে, এই প্রশ্নের সমাধান নাই। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বাংলাদেশের মত রাজনৈতিক মেরুকরণের একটি দেশে সংসদে একটি দলের সংখ্যাগরিষ্টতা থাকবে এবং তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পছন্দের লোকেরা উভয় কক্ষ নিয়ন্ত্রণ করবে তা বোঝার জন্য অনেক জ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নাই। এখানে মূল সমস্যা হলো, মানুষের হাতে আইন প্রণয়নের সার্বভৌম ক্ষমতা, যা আইনপ্রণয়নকারী গোষ্ঠীকে লোভী ও স্বৈরাচারে পরিণত করে। তাই এটাকে মানুষের হাত হতে আইন প্রণয়নের এই সার্বভৌম ক্ষমতা তুলে না নেয়া পর্যন্ত ক্ষমতার ভারসাম্য কখনোই নিশ্চিত হবে না।
ইসলামে বিধান প্রণয়নের একমাত্র এখতিয়ার আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট ন্যস্ত। আর শাসন কর্তৃত্ব জনগণের। আল্লাহ্’র বিধানকে বাস্তবায়নের শর্তে জনগণ শাসককে নির্বাচিত করেন এবং এই শর্ত ভঙ্গের সাথে সাথে শাসকের আর বৈধতা থাকে না। যা বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসনের সাথে একটি মৌলিক পার্থক্য। ফলে শাসক, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ সবাই একই শারীআহ্ বিধান দ্বারা আবদ্ধ এবং স্বৈচ্ছাচারীতার কোন সুযোগ নাই। সুতরাং, বর্তমানে ক্ষমতার ভারসাম্যের যে বিতর্ক ইসলাম সহজেই এটাকে এভাবে সমাধান করেছে। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বিধানের নড়চড় করা খলিফার (ইসলামী শাসনব্যবস্থা বা খিলাফত রাষ্ট্রের প্রধান) পক্ষে সম্ভব নয়। এই বিধানে রয়েছে ‘মজলিস আল উম্মাহ্’র মত কাউন্সিল, যার সদস্যগণ জনগণের ভোটে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে শাসক নির্বাচন করেন এবং শাসকদেরকে জবাবদিহিতা করেন। এই সদস্যদের বিধি-বিধান প্রণয়নের কোন ক্ষমতা থাকে না। শাসকের যোগ্যতা যাচাই হয় ‘মাজালিম কোর্ট’ নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়ায় চুল-চেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে যেমন একদিকে উম্মতের মধ্য থেকে শাসনের জন্য সর্বাপেক্ষা ন্যায়পরায়ণ ও যোগ্য ব্যক্তিটি নির্বাচিত হওয়া সম্ভব, তেমনি তার কঠোর জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা সম্ভব। এই জবাবদিহিতা এতটাই সুনির্দিষ্ট যে, একজন ব্যক্তিও যদি ক্ষুধার্ত থাকেন, তাহলে তিনি শাসকের বিরুদ্ধে মাযালিম কোর্টে মামলা করতে পারবেন। আর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট বিচার দিবসে জবাবদিহিতার বিষয়টিতো রয়েছেই। তাই জনগণের জন্য ক্ষতিকর মানুষের তৈরি বিধানের পরিবর্তে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র বিধানের পবিত্র পানীয় দ্বারাই ‘রাষ্ট্র’ নামক বোতলটি পূর্ণ করা উচিত।
– মোঃ জহিরুল ইসলাম
“জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ১০০ জনকে কর্মসংস্থানের প্রস্তাব”
খবরঃ
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ১০০ জনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই তথ্য সাংবাদিকদের জানান। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আহতদের স্বচ্ছলতায় ফেরাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাঁরা আহত হয়েছেন, সবাইকে তো সব জায়গায় দেওয়া সম্ভব না। আমাদের প্রস্তাবে যাঁকে যেখানে সম্ভব, সেখানে তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। [জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ১০০ জনকে কর্মসংস্থানের প্রস্তাব | প্রথম আলো]
মন্তব্যঃ
১৯৭১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে বেকারত্বের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, মেধাবী-অমেধাবীদের মধ্যে অনেকেই আকাশপথ নয়তো নিশ্চিত মৃত্যু সমুদ্রপথে বিদেশে যাওয়াকে শ্রেয় মনে করছে। এরকম অবস্থায় জুলাই অভ্যুত্থানের ২২ হাজার আহত ছাত্রদের মধ্য থেকে কয়েকশ ছাত্রদের চাকরির ব্যবস্থা করা মূলতঃ ছাত্রজনতাকে খুশি করার নামে বেকারত্ব নামক মৌলিক সমস্যাকে সমাধান না করার আবহমান কালের ধারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একজন সাধারণ মানুষও যেখানে এখন বুঝতে পারছে যে বাংলাদেশের মত সম্ভাবনাময় অঞ্চলে চামড়া শিল্প, পাট শিল্প, চিনি শিল্প, ভারী মেশিন তৈরি, অস্ত্র উৎপাদন এবং তেল-গ্যাস উত্তোলনে স্বনির্ভরতা ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে রাষ্ট্র যেমন ব্রিটিশ-আমেরিকার নিয়ন্ত্রন থেকে বের হয়ে সার্বভৌমত্ব অর্জন করবে, অন্যদিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এরকম সামগ্রিক এবং মৌলিক পরিবর্তনের পথে না হেঁটে কেন তারা কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন বাস্তবায়নে সংকল্পবদ্ধ? যেখানে এধরনের ইপিজেডগুলোর মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানিগুলো মূলতঃ রপ্তানির মাধ্যমে ডলারের মুলা দেখিয়ে কর অবকাশ, শুল্কমুক্ত আমদানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সহজলভ্যতা, সস্তা শ্রম ইত্যাদি অভিজাত শ্রেণীসুলভ সুযোগ সুবিধা উপভোগ করে। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশীয় শিল্পগুলোকে এই সুযোগ দিলে এতদিনে বাংলাদেশ ডলারের নির্ভরতা থেকেও বের হয়ে আসতে পারত। বেকারত্বও দূর হয়ে যেত।
প্রশ্ন চলেই আসে যে বিগত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রগুলো কেন এই কাজ করে গেছে এবং কেন এই অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথে হাঁটছে? এমনকি প্রতারণার স্টাইলও কপি করে যাচ্ছে। যেমন করে আওয়ামী লীগ “মুক্তিযোদ্ধাদের” বিশেষ সুবিধা দেয়ার ভান করে মূল সমস্যা আড়াল করত, একইভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও “ছাত্রজনতাকে” বিশেষ সুবিধা দেয়ার ভান করে মূল সমস্যাকে আড়াল করে যাচ্ছে। আদর্শগত কারণে তারা এই প্রতারণাগুলো করে। কারণ ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী আদর্শ যা বর্তমানে বিরাজমান তা কখনোই জনমানুষের দায়িত্ব নেয় না, তারা দায়িত্ব নেয় কতিপয় পুঁজিপতি বা ধনিক শ্রেণীর। সেই বৈশিষ্ট্যকে অনুসরণ করেই এই শাসকদের দায়িত্ব হল পশ্চিমা প্রভুদের খুশি রাখা।
শাসকগোষ্ঠীর পশ্চিমা প্রভুদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে যতক্ষণ না আমরা প্রকৃত প্রভু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র দিকে ফিরে না যাব, ততক্ষণ জনমানুষের স্বার্থ কখনোই রক্ষা হবে না। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেককে তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। শাসক তার শাসনকাজের ব্যাপারে, একজন পুরুষ তার পরিবারের ব্যাপারে, একজন দাস তার মালিকের ব্যাপারে” (সহীহ্ বুখারী)। তাই ইসলামী শাসনামলে খলিফারা ছিলেন জনমুখী। আল্লাহ্’র আধিপত্য ছাড়া আর কারো আধিপত্য শাসকরা বরদাশত করতেন না। রাষ্ট্রকে স্বনির্ভর করার জন্য শিল্পনীতি ও শিক্ষানীতি অনুসরণ করা হত। যার ফলে কলকারখানা ও দক্ষ লোকবল তৈরি হত। নানামুখী কাজে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হত। যেমন ওমর (রাঃ) এর সময়ে ইরাক ও সিরিয়ার কৃষকদের পানি সেচের সুবিধা দেয়ার জন্য তিনি ইউফ্রেটিস নদীর পথ পরিবর্তন করান, এতে অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার ও ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে এসেছিল।
– জাবির জোহান
“মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত”
খবরঃ
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমরা নীতি সুদ হার বাড়িয়েছি। জানুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি কমে আসবে বলে আশা রাখছি। যদি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, ফের নীতি সুদ হার বাড়ানো হবে”। (https://www.youtube.com/watch?v=14vg4vxpYI8)
মন্তব্যঃ
বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো টাকা ছেপে এবং সুদ কমিয়ে-বাড়িয়ে মূলত পুরো অর্থনীতিই নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যাংকে কোন সত্যিকারের সম্পদ উৎপাদন বা তৈরি না হলেও এর নিয়ন্ত্রণকারীরা বাজারে ইচ্ছামত টাকার প্রবাহ কমাতে বাড়াতে পারে। এই ব্যবস্থার জ্ঞানীরা সবাইকে বুঝায় যে এই Trickle Down পদ্ধতিতেই অর্থনীতির উন্নতি হয়। অথচ এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার যে টাকা আসলে উপর থেকে নিচে ঝরে না। টাকা ছাপানো ও সুদের কারণে উপরে যখন বেশি টাকা জমা হয় তা একটি শক্তিশালী চুম্বকের মত কাজ করে যা নিচে অসংখ্য সাধারণ মানুষের কাছে থাকা লুজ কম পরিমাণ টাকা বা সম্পদগুলো উপরে টেনে নিয়ে যায়।
সম্পদ উৎপাদন এবং সেবা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতির মূলচালিকা শক্তির কাজ করে কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ সেবাখাতের সাথে সম্পৃক্ত শ্রেণী। সুদের হার বৃদ্ধির ফলে সত্যিকার উৎপাদনের বা ব্যবসার খরচ বেড়ে যায়, ফলে এদের সক্ষমতা কমে যায় এবং জনগণ ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করার চেয়ে উচ্চ সুদের আশায় আমানতে উজ্জীবিত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা আসে, কর্মসংস্থান কমে ও দারিদ্রতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া, সুদ বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়ায় জনগণের কাছে থেকে টাকা অর্থনীতির উপরের দিকে থাকা অধিক টাকাওয়ালা কতিপয় পুঁজিপতির হাতে পুঞ্জিভূত হয়। বলাবাহুল্য বর্তমান পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই গোষ্ঠীটি আইন তৈরিকারী এবং আইনের প্রয়োগকারী সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই ক্ষমতাধররা সাময়িকভাবে উচ্চ সুদে টাকা ধার নিলেও তারা জানে এই টাকা ফেরত না দিলেও কোন সমস্যা নাই। এভাবে সম্পদের উপর সম্পদশালীদের অস্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণের ফলে পর্যায়ক্রমিকভাবে স্বাভাবিক উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যহত হয়ে কিছুদিন পরপর অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হয়। সুদের হার বৃদ্ধি একেকটি অর্থনৈতিক মন্দাকে ত্বরান্বিত করে। একেকটি মন্দা মানে হলো অসংখ্য সাধারণ মানুষের নিঃস্ব হওয়া, সম্পদ খোয়ানো, আর কতিপয় ক্ষমতাবানদের আংগুল ফুলে কলা গাছ হওয়া। দেশের বাস্তবতায় এটা পরিষ্কার যে সাধারণ মানুষ এক ভয়ংকর অর্থনৈতিক সংকটে আছে অথচ ইউনুস সরকার ভয়ংকর পুঁজিবাদী নীতির বাস্তবায়ন আরও ত্বরান্বিত করছে। সুদভিত্তিক অর্থনীতি যে এমন নিষ্ঠুর ও যুলুমের চক্র তা দারিদ্রতাকে জাদুঘরে পাঠানোর ফাঁকা বুলি আওড়ানো পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী ভালোভাবেই জানে। তবুও তারা আগের গণবিরোধী সরকারগুলোর মতই এই যুলুমের চক্র চালু রাখছে। অনেক ক্ষেত্রে এটা আরও প্রতারণামূলকভাবে সুন্দর মোড়কে উপস্থাপন করছে।
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন, “…যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে…” (সুরা হাশর ৭)। সুদ এবং কাগুজে মুদ্রা উভয়ে এই নির্দেশের বিপরীত। ইসলামী ব্যবস্থায় খলিফা এই উভয়কে বন্ধ করার পাশাপাশি কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার, সেচ ইত্যাদি সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াবেন এবং সিন্ডিকেটসহ বাজারজাতকরণের সকল বাধা দূর করে সম্পদের সার্কুলেশন সহজ করবেন। ইসলামী ব্যবস্থায় সুদব্যবস্থা বিলুপ্ত এবং কারণ ছাড়া টাকা জমিয়ে রাখা নিষিদ্ধ হওয়ায়, জনগণ সম্পদ গচ্ছিত রাখার চেয়ে বিনিয়োগে উৎসাহী হবে, ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। সর্বোপরী, আল্লাহ্’র নাযিলকৃত ব্যবস্থার বাস্তবায়নের মাধ্যমে নাগরিকরা যেমন আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি লাভ করবে এবং পাশাপাশি একটি সুন্দর ও শক্তিশালী অর্থনীতি উপহার পাবে। “অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো, আর আল্লাহ্’র অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহ্-কে বেশি বেশি স্মরণ করো যাতে তোমরা সফল হতে পারো” (সুরা জুমু‘আ: ১০)।
– মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“সব মসজিদে একই খুতবা দেওয়ার আহ্বান জামায়াত আমীরের”
খবরঃ
সব মসজিদে একই খুতবা দেওয়ার জন্য ইমাম-খতিবদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এছাড়া জুমার খুতবাকে প্রাণবন্ত করতে আরবি খুতবার বিষয়বস্তু আগের বক্তব্যে তুলে ধরারও পরামর্শ দেন তিনি। মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জেলা পর্যায়ের ইমাম-খতিবদের নিয়ে বাংলাদেশ মসজিদ মিশন আয়োজিত প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। জামায়াত আমীর বলেন, মসজিদে নববীই ছিল রাসুল (সা.) এর পার্লামেন্ট, মসজিদই ছিল কেবিনেট। সেখানে বসেই সবকিছু পরামর্শ করা হতো, সেখানেই তিনি বিচার করতেন। এখন মসজিদে ইমাম-খতিব বয়ান দেন তা অনেকেই মিস করেন। পবিত্র জুমার যে প্রাণশক্তি তা পরিষ্কার করা হয়নি। (https://www.dailyamardesh.com/politics/amdrlqusjnw0v)
মন্তব্যঃ
জুম্মার খুতবা খিলাফতের (ইসলামী রাষ্ট্র) একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। এর মাধ্যমে শাসক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সচেতন এবং ঐক্যবদ্ধ করতেন। খিলাফতের কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক অঞ্চল পর্যন্ত সকল স্থানে শাসক (খলিফা/সুলতান/ইমাম) বা তার প্রতিনিধি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্র কর্মসূচীসমূহ প্রাণবন্তভাবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতেন, যাতে জনগণ রাষ্ট্রের স্বল্প মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচী সম্পর্কে অবগত থাকতে পারে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর খুতবাও ছিল খুবই প্রাণবন্ত এবং দিকনির্দেশনাপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যখন খুতবা দিতেন, তখন তাঁর চোখ লাল হয়ে যেত, তাঁর কণ্ঠস্বর উঁচু হত এবং তাঁর ক্রোধ বেড়ে যেত; যেন তিনি লোকেদেরকে এমন এক সেনাবাহিনী সম্পর্কে সতর্ক করছেন, যা আজই সন্ধ্যা অথবা সকালে তাদেরকে এসে আক্রমণ করবে (মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, সুনান)। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পরবর্তী খলিফারাও খুতবাকে একই গুরুত্বের সাথে প্রদান করতেন। সম্মানিত খতিবদের খুতবা মুসলিমদের উম্মাহ্’র ঐক্য সৃষ্টি এবং টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো।
খুতবা খুবই রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। তাই খিলাফত ধ্বংসের পর থেকে পশ্চিমারা ও তাদের দালাল শাসকেরা মসজিদের খুতবায় ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন (খিলাফত), রাজনৈতিক কর্তব্যের (সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ) এবং শাসকগোষ্ঠীর সমালোচনা যাতে না থাকে এই বিষয়ে সর্বদা তৎপর ছিল। যেমন, আমরা দেখেছি পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সময় ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে খুতবা তৈরি করে প্রত্যেকটি মসজিদে প্রেরণ করা হয়েছিল, যার বিষয়বস্তু ছিল পশ্চিমাদের War on terror প্রকল্পের নামে ইসলামের রাজনৈতিক দর্শনকে জঙ্গিবাদ হিসেবে লেবেলিং করা। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ সব মসজিদে একই খুতবা পাঠের আহ্বান, প্রথম আলো, ১৪ জুলাই ২০১৬। এমনকি, পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জুম্মার খুতবাকে নজরদারীতে রাখতো এবং শাসকগোষ্ঠীর প্রশংসা করতে বাধ্য করতো।
সুতরাং, ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠীর অধীনে সব মসজিদে একই খুতবা দেয়ার প্রক্রিয়া পশ্চিমা কাফিরদের কর্তৃক তাদের দালাল শাসকদের মাধ্যমে মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে সহায়তা করবে। সকল মসজিদে একই খুতবা প্রদানের বাধ্যবাধকতা নিষ্ঠাবান খতিবদেরও সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধের ইসলামী দায়িত্ব পালনে বাধা দিবে এবং এই প্রতিষ্ঠানটিকে সেকুলার শাসকগোষ্ঠী তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ব্যবহার করবে। সুতরাং, খিলাফতের তত্ত্বাবধানে সকল মসজিদের মিম্বর থেকে প্রদানকৃত খুতবাগুলো প্রকৃতপক্ষে খুতবা প্রথার প্রচলনের প্রকৃত ইসলামী উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
– মো: সিরাজুল ইসলাম