working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 59

Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৫৯ তম সংখ্যা । ৯ জুলাই, ২০২২

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

 

“সহসা থামছে না লোডশেডিং”
“জাতীয় মুদ্রানীতি ২০২৩: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাড়ল নীতি-সুদহার”
“পদ্মা সেতু: কীভাবে লাভবান হবেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার ব্যবসায়ীরা?”
“১৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ওয়াসা এমডির বিরুদ্ধে মামলা নেননি আদালত”
“ফেরির টোল বাড়ছে”

“সহসা থামছে না লোডশেডিং”

খবরঃ

সরকারের সাশ্রয় নীতিতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে উচ্চ দরের এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে কমেছে গ্যাস সরবরাহ। কমেছে বিদ্যুতের উৎপাদন। অনুসন্ধান বলছে, দিনে অন্তত ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি কম সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। তাই সহসা লোডশেডিং থামবে বলে আশা করা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকারের এই সাশ্রয়ের কথা উল্লেখ করে জনগণকে সহনশীল হওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। …সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হলে তেল বা কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হতো। এবার তা হতে দেখা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। (banglatribune.com/business/power-and-fuel/751921/সহসা-থামছে-না-লোডশেডিং)

মন্তব্যঃ

“আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি”- এই কথাটিকে বর্তমান সরকার বিভিন্ন খাতে তার অন্যায় এবং দুর্নীতিকে আড়াল করার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ, যেকোন সচেতন ব্যক্তি সরকারের কথায় ধোঁকায় না পড়ে যখন সমস্যার পিছনের কারণগুলো অনুসন্ধান করে; তখন তার সামনে যে বাস্তবতা উঠে আসে তা এই লোডশেডিং-এর মতই অন্ধকারাচ্ছন্ন। বিদ্যুৎখাত নিয়ে প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, দেশীয় জ্বালানির ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কেন এই খাতকে ধীরে ধীরে আমদানিনির্ভর করে পরনির্ভরশীল করা হলো? এইক্ষেত্রে দুর্নীতির যে চিত্র পাওয়া যায় তা হচ্ছে, দেশে বছরের পর বছর ধরে নতুন ভূগর্ভস্থ ও অফশোর গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ থাকা, ভুল জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, আবিষ্কৃত জ্বালানি উৎস ও খাতগুলোকে সঠিকভাবে কাজে না লাগানো, দেশীয় গ্যাসকূপগুলোকে বিদেশি কোম্পানীগুলোর মুনাফার ক্ষেত্র করে দেওয়া এবং জ্বালানি খাতে সরকারের প্রযুক্তি ও লোকবল সংক্রান্ত কর্মদক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে উদাসীনতা অন্যতম দায়ী (সূত্রঃ বণিকবার্তা)। গত আড়াই দশকে বিদ্যমান গ্যাস উৎপাদনের ৬৩ ভাগ চলে গেছে বিদেশি কোম্পানিগুলোর দখলে অথচ ১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত শতভাগ উৎপাদন করত দেশীয় কোম্পানি- (সূত্রঃ যুগান্তর)। উল্লেখ্য, দেশের বর্তমান গ্যাস চাহিদা দৈনিক ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট আর পেট্রোবাংলা সরবরাহ করতে পারছে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, “আমরা যদি সব পুরনো কূপ ওয়ার্কওভার এবং ছাতক গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়ন করতে পারি, তাহলে আগামি ২০২৫ সালের মধ্যে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস উত্তোলন করতে পারব। এতে এলএনজির উপর চাপ কমবে, আমাদের যে গ্যাস সংকট আছে সেটা অনেকাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে”। আর দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোকে বিদেশী কোম্পানি মুক্ত করলে যা পর্যাপ্ত পরিমানেই দেশীয় চাহিদা পূরণ করবে। অথচ, সরকারে দুর্নীতি এবং লজ্জাহীন দালালির কারণে তা সম্ভব হচ্ছেনা। পাশাপাশি আমরা দেখতে পাই, সরকার ২০১০ সাল থেকে বিদ্যুৎ খাতের মত জনগণের মৌলিক প্রয়োজনকে কুইকরেন্টালের নামে দেশীয় পূঁজিপতিদের ব্যবসায়িক উপকরণে পরিণত করেছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সরকার এদের থেকে চুক্তি অনুযায়ী পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সংগ্রহ না করেই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ৯-১০ হাজার কোটি টাকা অযথা দিয়ে যাচ্ছে, যা দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনাকে সরকারিভাবেই অনেক উন্নত করা যায়। অন্যদিকে, গত পঞ্চাশ বছরেও বাংলাদেশের ধারাবাহিক ধর্মনিরপেক্ষ সরকারগুলো দেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনকে ঠিক করেনি। ২৮ জুন ২০২২ সালের বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। চাহিদা আছে ১৩-১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের। আর নিয়মিত উৎপাদনও হয় ১২- ১৩ হাজার মেগাওয়াট। সরকার তার বিদেশী প্রভুদের খুশি করতে আবার ১-১.৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎও চড়া মূল্যে আমদানি করে। কিন্তু, সঞ্চালন সক্ষমতা মাত্র ৭-৮ হাজার মেগাওয়াটের। যার ফলে, উৎপাদিত এবং ক্রয়কৃত বিদ্যুতের প্রায় অর্ধেকই মানুষের কাছে পৌঁছেনা। অথচ, তারা নানাভাবে জনগণের কাছ থেকে ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের মূল্য ঠিকই আদায় করে নিচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে এমন চুরি, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও সিস্টেম লসের পরেও এই ধোঁকাবাজ সরকার “আন্তর্জাতিক বাজার”, “উন্নত দেশেও বিদ্যুতের সংকট আছে” এমন কথা বলে জনগণকে নির্লজ্জ্বভাবে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করেই যাচ্ছে, আর তাদের অন্যায়কে ন্যায্য হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

এমতাবস্থায় দেশের বিদ্যুৎ খাতকে এই দুর্নীতিবাজ ও প্রতারক শাসকগোষ্ঠী থেকে মুক্ত করতে একমাত্র ইসলামই প্রকৃত সমাধান দিতে পারে। কেননা, বিদ্যুৎ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে এটি জনগণের মৌলিক প্রয়োজনীয় উপকরণ যা শাসক জোগান দিতে বাধ্য। কেননা, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “একজন মানুষের জন্য এটাই যথেষ্ট গুনাহ যে, সে যাদের উপরে দায়িত্বশীল তাদেরকে অবহেলা করে” (আবু-দাউদ)। এবং এর উৎপাদনের কাঁচামাল সম্পর্কে ইসলামী শারীয়াহ্‌ হুকুম হচ্ছে, এটির মালিক জনগণ এবং তা জনগণের চাহিদা পূরণেই ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “ প্রত্যেক মুসলিমের তিনটি জিনিসের উপর সমান অধিকার আছে, মিনারেল, চারণভূমি এবং আগুন (জ্বালানি)” – (আহমাদ)। তাই কখনোই বিদ্যুৎ খাত এবং এর কাঁচামালের উৎসকে ইসলামী সরকার দেশীয় ও বিদেশী কোম্পানি কিংবা কোন সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা করার সুযোগ করে দিবেনা। পাশাপাশি, ইসলামী তথা খিলাফত রাষ্ট্র কোন সময় তার জনগণের মৌলিক প্রয়োজনকে কাফির-মুশরিক রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল রাখেনা। তাই খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথেই মুসলিম উম্মাহ্‌’র বিপুল পরিমাণ জ্বালানি সম্পদকে বিদেশী কিংবা ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানি মুক্ত করে সম্পূর্ণ উম্মাহ’র চাহিদা পূরণে জরুরী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিবে।

আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

 

 

“জাতীয় মুদ্রানীতি ২০২৩: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাড়ল নীতি-সুদহার”

খবরঃ

বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘নীতি-সুদহার’ (policy rate) হিসেবে পরিচিত রেপো হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। নীতি সুদহার বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে ব্যাংকগুলোকে এখন বেশি সুদ দিতে হবে। পাশাপাশি বিলাসজাতীয় দ্রব্য যেমন বিদেশি ফল, অশস্য খাদ্যপণ্য, টিনজাত ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে ডলারের ওপর চাপ কমবে, যার বদৌলতে সুরক্ষিত রাখবে রিজার্ভ ও মুদ্রার বিনিময় হার। (www.prothomalo.com/business/bank/মূল্যস্ফীতি-নিয়ন্ত্রণে-কমল-নীতি-সুদহার)

মন্তব্যঃ

নামাজরত মুসল্লিরা যেমন নিশ্চিন্তে ইমামকে অনুসরণ করে তার পিছনে সিজদা দেয়, ঠিক তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংকও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের পিছনে নিশ্চিন্তে সিজদা দেয়। এই মুদ্রানীতির ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। ফেডারেল রিজার্ভ নীতি-সুদহার (policy rate) বাড়ানোর কয়েকদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক এই হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর ঘোষণা দিল। রপ্তানি উৎসাহিত করতে নিজ মুদ্রা ‘টাকার’ মান কমানো এবং রিজার্ভ ও মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি কমানোর যে নীতিমালা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছে তাও আইএমএফ কর্তৃক প্রদত্ত আমদানি-রপ্তানী ‘চলতি হিসাব’ সমন্বয়ের প্রেসকিপ্শনের হুবহু কার্বন কপি। ‘মনেটারি পলিসি’ যার মধ্যে রয়েছে সুদের হার ও অর্থ-সরবরাহ বাড়িয়ে বা কমিয়ে মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ এবং ‘ফিসক্যাল পলিসি’ যার মধ্যে রয়েছে কর বা শুল্ক ও সরকারী ‘উন্নয়ন ব্যয়’ বাড়িয়ে বা কমিয়ে অর্থনীতির গতিপথ নিয়ন্ত্রণ, এসবই হল সমস্যার কারণকে লুকিয়ে রেখে আপাত-সমাধানের চেষ্টা করা। আপাত-সমাধান (deferring the real problem) সকল পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল, কেননা তাদের কাছে মূল সমস্যার কোন সমাধানই নেই।

মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে ইউক্রেন-যুদ্ধ ও করোনা মহামারীকে দায়ী করা হলেও তা সত্য নয়। এটা ঠিক যে চিংড়ি কিংবা বেগুন কিছু কিছু মানুষের এলার্জিকে উস্কে দেয়, কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটা প্রমাণিত যে, এই খাবারগুলো এলার্জির কারণ নয়, বরং এলার্জির কারণ লুকায়িত রয়েছে সেই মানুষের রক্তে বা যিনে। ঠিক তেমনিভাবে, ইউক্রেন-যুদ্ধ ও করোনা মহামারী বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দিলেও তা কখনোই এর মূল কারণ নয়। মূল্যস্ফীতির মূল কারণ হল পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জীবনীশক্তি হিসেবে পরিচিত আমেরিকান ডলার। গ্লোবাল টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির মূল কারণ হল যুক্তরাষ্ট্রের অনিয়ন্ত্রীত ডলার ছাপানো। করোনা মহামারি মোকাবিলায় আমেরিকান সরকার সে দেশের জনগণকে প্রণোদনা দিতে বিপুল পরিমাণ ডলার ছেপেছে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ১৮ ট্রিলিয়ন বা ১৮ লাখ কোটি ডলার ছেপেছে যা তার আগের কয়েক দশকের তুলনায়ও অনেকগুণ বেশি। এই অতিরিক্ত ডলারের কারণে সারা পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। তাছাড়া, সম্প্রতি ফেডারেল রিজার্ভ কয়েক দফায় ‘নীতি সুদহার’ বৃদ্ধি করেছে এবং আরও কয়েকবার বৃদ্ধি করবে বলে জানা গেছে। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করে। সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ডলার ফেডারেল রিজার্ভে জমা রাখা লাভজনক, নিরাপদ। ফলে ভারতের মত বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গোটা এশিয়াতেই স্থানীয় মুদ্রা এখন দুর্বল- চীনের ইউয়ান, জাপানের ইয়েন-সব কটিরই পতন ঘটছে। পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের মুদ্রারও পতন হয়েছে, অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে সকল পণ্যের দাম।

এটাতো হল বর্তমান বাস্তবতা; আমেরিকান ডলার যে মূল্যস্ফীতির মূল কারণ তা একটি ঐতিহাসিক সত্য। ১৯৪৪ সালে ব্রেটন উড্স সম্মেলনের মাধ্যমে আমেরিকান ডলারকে স্বর্ণের বিকল্প হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার পরের ৬৭ বছরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬২৫%, যা ১৯৪৪ এর আগের ৬৭ বছরে ছিল মাত্র ১০%। স্বর্ণ বা রৌপ্যকে সংরক্ষণ না করে ইচ্ছেমত ডলার ছাপানোর প্রবনতার কারণ হিসেবে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ এলান গ্রীণস্প্যান বলেছেন: “এটি একটি ষড়যন্ত্র যার উদ্দেশ্য হল জাতিসমূহের সম্পদ লুট করা। স্বর্ণ ছিল এই লুটের একমাত্র প্রতিবন্ধকতা, কেননা স্বর্ণ জাতিসমূহের ন্যায়সঙ্গত ‘সম্পদের অধিকার’ সংরক্ষণ করে” (Gold and Economic Freedom, 1966; In Gold We Trust, 2012) । সুতরাং, আমেরিকান ডলারকে রিজার্ভ কারেন্সি রেখে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেনে এটিকে বহাল রেখে কোন ‘নীতিমালা’ দিয়ে মূল্যস্ফীতির সমাধান সম্ভব নয়। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র আমেরিকা লাভবান হবে, কেননা এর মাধ্যমে ডলার নামক মূল্যহীন কাগজ ছেপে আমেরিকা অন্যদেশের মূল্যবান সম্পদ হরণ করতে থাকবে। বর্তমান শাসকশ্রেণী কোন দিনও আমেরিকার এই ডাকাতি থেকে আমাদের উদ্ধার করবে না, কারণ তারা আমেরিকারই মদদপুষ্ট। আমরা আর কতকাল এই শাসকদের সকল অত্যাচার ও দালালি মুখবুঁজে সহ্য করব? যেখানে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: “তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা আল্লাহ’র নেয়ামতের পরিবর্তে কুফরকে বেছে নিয়েছে এবং নিজ জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংসযজ্ঞের (কষ্টের) মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য করছে?! [সূরা: ইব্রাহিম- ২৮]। মূল্যস্ফীতির ভয়াল থাবা থেকে দেশের জনগণকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় হল অতিদ্রুত একজন খলিফার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যিনি স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলবেন এবং ডলারকে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিবেন; কেননা, স্বর্ণ ও রৌপ্য হল আল্লাহ্‌’র অনুমোদিত একমাত্র বৈধ মুদ্রা।

রিসাত আহমেদ

 

 

 

 

“পদ্মা সেতু: কীভাবে লাভবান হবেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার ব্যবসায়ীরা?”

খবরঃ

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি আলোচনা হচ্ছে ভারতেও। পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে প্রতিবেদন, উৎসাহ বাণিজ্যিক মহল আর গবেষকদের মধ্যেও। পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরার বণিক মহলও পদ্মা সেতু থেকে সুবিধা পাওয়ার আশায়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে আগে যেখানে পেট্রাপোল থেকে ঢাকা এবং চট্রগ্রামে ভারতীয় পণ্য পৌছাতে কয়েকদিন লেগে যেত সেখানে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তা সম্ভব হবে। ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ত্রিপুরার সম্পাদক সুজিত রায়ের মতে, “পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে খুব কম সময়ের মধ্যেই আমরা কলকাতা থেকে পন্য নিয়ে আগরতলায় আসতে পারব।” অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, কলকাতা’র সিনিয়ার ফেলো অনসূয়া বসু রায় চৌধুরীর মতে, “যদি পদ্মা সেতু হয়ে ত্রিপুরা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয় তাহলে পদ্মা সেতু একটি গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করতে পারে।” (www.youtube.com/watch?v=QGFr1G0Gzuw)

মন্তব্যঃ

‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রক্তের সম্পর্ক’ কিংবা ‘উভয় দেশের সম্পর্ক খুবই ভালো। অনেকটা স্বামী–স্ত্রীর সম্পর্কের মতো। টুকটাক মতানৈক্য থাকলেও মিটে যায়’ – বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এসব কথা নিছক হাস্যরসের কথা নয়, বরং ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই নীতিই বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করে আসছে। যেমন, ২০১০ সালে হাসিনা সরকার ভারতের সাথে ট্রানজিট চুক্তি করে। ২০১৫ সালে এই চুক্তির আওতায় একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয় যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ৪টি নৌপথ ভারতকে ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হয়। যা মূলত ভারতের কলকাতা ও মুর্শিদাবাদকে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়কে সংযুক্ত করে। অপরদিকে দুই দেশ ২০১৫ সালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে যার মাধ্যমে ভারত চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অধিকার লাভ করে। এর ফলে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে ভারতীয় পণ্য সড়ক, রেল কিংবা নৌপথে উত্তর-পূর্ব ভারতের উপরোক্ত রাজ্যসমূহে সহজেই পৌছে যাবার সুযোগ পায়। উপরন্তু এই ট্রানজিটকে সুগম করতে সম্পূর্ণ ভারতীয় অর্থায়নে ফেনী নদীর উপর ‘মৈত্রী সেতু’ নির্মাণ করা হয়, যা ২০১৫ সালে শুরু হয়ে ২০২১ সালে সমাপ্ত হয়। এই সেতু ত্রিপুরার সাথে চট্টগ্রাম বন্দরকে সংযোগ করে। উপরন্তু আমরা দেখেছি পদ্মা সেতু প্রকল্পেও ভারত ২০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান প্রদান করেছে। এ থেকে স্পষ্ট যে এসকল সেতু কিংবা সড়কপথের উন্নয়ন যতটা না বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে তার চেয়ে বেশি ভারতীয় ট্রানজিটের সুবিধার্থে। রক্তের সম্পর্কের প্রতিদানতো এভাবেই দিতে হয়!

প্রশ্ন হচ্ছে এসকল ট্রানজিট কি শুধুমাত্রই ভারতের স্বার্থে নাকি আরো অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের স্বার্থও এখানে জড়িত? উপরোক্ত ‘মৈত্রী সেতু’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে Think Tank Centre For Social And Economic Progress এর ফেলো Constantino Xavier বলেন, “There’s a huge demand in the region for export facilitation within the Indo-Pacific economies and so this bridge (Maitri Setu) is ultimately the ground zero for India’s Neighborhood First Policy, Act East Policy and Indo-Pacific Policy.” মূলত, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সংযোগস্থাপন মূলত ভারতের বৈদেশিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অর্থাৎ ‘Neighborhood Policy’ এবং ‘Look East Policy’র একটি ফলাফল যার মধ্যে অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রয়েছে ভারতের সুবিধার্থে দক্ষিন এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে সংযোগ স্থাপন। এ সংযোগের মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল, সড়ক, রেল ও আকাশ পরিবহন, Energy grid connectivity এবং Logistic chains ইত্যাদি। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে চীনের আধিপত্য খর্ব করে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের বাস্তবায়নের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে এসকল প্রজেক্ট। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক উত্থানকে ঠেকাতে দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলকে কেন্দ্র করে একবিংশ শতাব্দীতে শুরু হওয়া নতুন গ্রেট গেমের এক প্রান্তে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক জোট এবং Quadrilateral Security Dialogue (QUAD) যার সদস্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া এবং অপর প্রান্তে রয়েছে চীন। আর এই দুই ব্লকই নিজেদের দল ভারী করার জন্যে দক্ষিণ এশিয়া ও তৎসংলগ্ন দেশগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশকে তাদের জোটে টানতে আগ্রহী। মূলত ‘মৈত্রী সেতু’, ‘পদ্মা সেতু’, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় ট্রানজিট কিংবা মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দেয়া এসবই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নের অন্যতম বড় রক্ষাকবচ।

সাম্রাজ্যবাদীদের দাসে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর পক্ষেই কেবল এভাবে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়ে তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের খুশি করার নিমিত্তে ট্রানজিট আর জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে ব্যয়বহুল আর লুটপাটের প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এই শাসকেরা কতটা নির্লজ্জ যে, যেই ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে মুসলিমদের রক্ত লেগে আছে তাদের স্বার্থ রক্ষার্থে নিজেদের স্বাধীনতা আর নিরাপত্তাকে বিকিয়ে দিচ্ছে! এসকল বিক্রি হয়ে যাওয়া শাসকদের দিয়ে এদেশের জনগণের স্বার্থ কখনোই রক্ষা করা সম্ভব হবে না। আমাদের প্রয়োজন ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফত ব্যবস্থা যেখানে শাসক ইসলাম কর্তৃক নির্দশিত সুনির্দিষ্ট বৈদেশিক নীতি অনুযায়ী শত্রু রাষ্ট্রের সাথে আচরণ করবে, ট্রানজিট দেয়াতো দূরের কথা। উদাহরণস্বরূপ, কুরাইশদের নেতা আবু-সুফিয়ান যখন সিরিয়া থেকে তার ক্যারাভান নিয়ে মদীনার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ক্যারাভানকে আটক করার জন্য সৈন্যদল প্রেরণ করেন। মূলত এটাই হচ্ছে শত্রুরাষ্ট্রের সাথে আচরনের সঠিক পন্থা।

মো. হাফিজুর রহমান

 

 

 

 

“১৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ওয়াসা এমডির বিরুদ্ধে মামলা নেননি আদালত”

খবরঃ

১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ নয় জনের বিরুদ্ধে করা মামলার আবেদনটি গ্রহণ না করে ফেরত দিয়েছেন আদালত। আসামিদের এই আত্মসাতের বিষয়টি সমবায় অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া সমিতির গাড়িসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সমিতির হেফাজত থেকে স্থানান্তর করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ চুরি করেন আসামিরা। (https://samakal.com/bangladesh/article/2206118452/১৩২-কোটি-টাকা-আত্মসাৎ-ওয়াসা-এমডির-বিরুদ্ধে-মামলা-নেননি-আদালত)

মন্তব্যঃ

দায়িত্বশীল পদে থেকে অর্থ আত্মসাৎ-এর ঘটনা ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থায় একটি শিল্পের পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। পিকে হালদার, জি কে শামীম, হলমার্ক গ্রুপের তানভীর, ডেসটিনি ২০০০, বেসিক ব্যাংকের বাচ্চু, জনতা ব্যাংক কেলেঙ্কারির অধ্যাপক আবুল বারকাত, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির দরবেশ বাবা ইত্যাদি নাম ও ঘটনাগুলোর বদৌলতে দেশের মানুষ জানতে পেরেছে কত নিত্য নতুন উপায়ে অন্যের টাকা আত্মসাৎ করা যায়। এই তালিকার একটি নতুন সংযোজন হল ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান যিনি ওয়াসা কর্মচারীদের সমিতির তহবিল থেকে ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ১৯টি চেকের মাধ্যমে ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসা এমডি বলেন, “কীভাবে, কোথা থেকে, কাদের চেক? কার টাকা, কীসের টাকা, কোন কো-অপারেটিভ সোসাইটির? তাদের সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক?”

মূলতঃ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মূল উপাদান হল ‘মালিকানার স্বাধীনতা’ যেটা অর্জন করতে এই ব্যবস্থার বিবিধ ফাঁকফোকরের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি যেকোনো উপায়ে, যেকোনো সম্পদ, যেকোনো পরিমাণে অর্জন করার স্বাধীনতা লাভ করে। এই মালিকানার স্বাধীনতার ধারণা মানুষের লোভকে উস্কে দেয়, যার জন্য মানুষ যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকার পরও আরো বেশি পাবার আশায় নিত্যনতুন প্রতারণা বা জালিয়াতির উপায় বের করে। এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এসব জালিয়াতিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিকতার রুপ দেয়। উপরে উল্লেখিত ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত কোন ব্যক্তিই পেটের দায়ে বা দারিদ্রতার জন্য অর্থ আত্মসাতের কাজগুলো করেনি বরং তারা সকলেই স্বচ্ছল ও প্রত্যেকেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ‘মালিকানার স্বাধীনতা’ ধারণার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে। যেহেতু পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ হল মালিকানার স্বাধীনতা, তাই বর্তমান শাসনব্যবস্থা এই কাজগুলোকে অপরাধ হিসেবে গণ্যই করেনা। সরকার জনরোষ থেকে বাঁচতে কিংবা দায়মুক্তি পেতে মাঝে মাঝে কাউকে আটক করে, যেমন: হলমার্কের তানভীর; কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, যেমন: বেসিক ব্যাংকের বাচ্চু, জনতা ব্যাংক কেলেঙ্কারির অধ্যাপক আবুল বারকাত কিংবা শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির দরবেশ বাবা খ্যাত সালমান এফ রহমান। এরমধ্যে জনতা ব্যাংকের এমডি থাকা অবস্থায় এননটেক্স নামক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ০৮ (আট) হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎকারী অধ্যাপক আবুল বারকাত ‘বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ’ হিসেবে বহাল তবিয়তে আছে এবং তার এই অপরাধের বিষয়ে অনেকের কোন ধারনাই নেই। আর শেয়ার বাজার থেকে লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী ব্যক্তিতো চৌর্যবৃত্তিতে তার দুর্দান্ত প্রতিভার পুরস্কার স্বরূপ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাতে পরিণত হয়েছে। সুতরাং আদালত কর্তৃক ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ না করা বর্তমান শাসন ব্যবস্থার মধ্যে একটি অতীব সাধারণ ও অনুমেয় ঘটনা। এবং মুষ্টিমেয় এলিটদের এরুপ দায়মুক্তি শুধুমাত্র বাংলাদেশের বাস্তবতা না, বরং পুঁজিবাদের বৈশ্বিক রুপ। ২০০৮ সালের মার্কিন ওয়াল স্ট্রিট স্টক মার্কেট ক্র্যাশের জন্য দায়ী মুল বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের একটিরও কোন প্রধান নির্বাহীকে জেল খাটতে হয়নি। পুঁজিবাদ এভাবেই সর্বদা এলিটদের দায়মুক্তি দেয় এবং তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে।

ইসলামে মালিকানার স্বাধীনতা বলে কোন ধারণা নেই এবং এই ধারণাকে কেন্দ্র করে কোন মুষ্টিমেয় এলিট গ্রুপের উৎপত্তিও ইসলামে নেই। বরং অবাধ স্বাধীনতার বিপরীতে মালিকানা অর্জনের উপায়গুলো আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কর্তৃক সুনির্দিষ্ট। ইসলামে যেকোনো ধরনের, পরিমাণের বা উপায়ের অর্থ-আত্মসাৎ একটি অপরাধ। খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে এই ধরনের অর্থ আত্মসাৎকারী ব্যক্তিকে আত্মসাৎকৃত সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দিতে হবে এবং তার অপরাধের শাস্তি হিসেবে প্রকাশ্য জনসম্মুখে বেত্রাঘাত ও সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। বেত্রাঘাত ও কারাদণ্ডের পরিমাণ খিলাফত ব্যবস্থার কাযী (বিচারক) এমনভাবে নির্ধারণ করবেন যেন তা দৃষ্টান্তমূলক বা ডিটারেন্ট হিসেবে কাজ করে যা দেখে অন্যরা এই অপরাধ সংগঠিত করার চিন্তাও না করে। আর যদি অপরাধকারী আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত দিতে অপারগ হয় তাহলে তার সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হবে এবং অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তার প্রাপ্য বেত্রাঘাত ও সশ্রম কারাদণ্ডের পরিমাণ আনুপাতিক হারে ও যুক্তিসঙ্গতভাবে বৃদ্ধি করা হবে। যুগে যুগে ইসলামী খিলাফতের খলিফারা এবং তাদের গভর্নররা এভাবেই দুর্নীতিকে উৎস থেকে দমন করার চেষ্টা করে এসেছেন কারণ আল্লাহ্‌’র রাসূল (সাঃ) বলেছেন “এমন কোন গভর্ণর (ওয়ালি) নেই যে মুসলিমদের শাসনের দায়িত্ব নেয়, এবং তারপর মারা যায় এমন অবস্থায় যে সে তাদের সাথে প্রতারণা করেছে, তবে আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাত থেকে নিষিদ্ধ করবেন” (বুখারি)।

রিসাত আহমেদ

 

 

 

 

“ফেরির টোল বাড়ছে”

খবরঃ

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে ফেরির টোলও বাড়াতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। দেশে বর্তমানে ফেরির যে টোল হার রয়েছে, সেটার ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রণালয়। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান আহমদ শামীম আল রাজী বলেন, একটি ভালো সময় দেখে আমরা নতুন টোল হার কার্যকরের ঘোষণা দেবো।  (www.bd-pratidin.com/country/2022/06/26/783106)

মন্তব্যঃ

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের (জুন ২৫, ২০২২) পরের দিনই পদ্মায় চালাচলকারী ফেরিও টোল আরেক দফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদিও মাত্র কয়েক দিন আগে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে সরকারিভাবে পরিচালিত সকল ফেরির টোল ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। (বিস্তারিত জানতে: সরকারি নৌযানে ২০ ভাগ বর্ধিত ভাড়া কার্যকর, newsbangla24.com/news/196121/Daulatdia-Paturia-ferry-service-fares-increased, জুন ১৯, ২০২২)। সরকারের এই পদক্ষেপ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে সরকার ক্রমান্বয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের ফেরি সেবাকে অস্বাভাবিকভাবে ব্যয়বহুল করতে চায় যাতে নিম্নবিত্তের জনগণ যারা সাশ্রয়ী খরচের কারণে ফেরির মাধ্যমে পারাপার হতে চাইত তারাও পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপারকে বেছে নেয়। এই ছল-চাতুরি পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠীর কাছে নতুন কিছু নয়। বরং, একই কৌশল ব্যবহার করে সরকার জনসাধারণদের যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার ব্যবহারে বাধ্য করে আসছে। ফ্লাইওভার তৈরি হওয়ার পর থেকে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে টোল প্রদানের মাধ্যমে যাতায়াত করাটাকে যত সহজ করা হয়েছে, ঠিক ততটাই কঠিন করা হয়েছে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাতায়াত করাটাকে। সেখানে প্রচন্ড যানজট, সড়কের বেহাল দশা, রাস্তায় বাজার বসানো, লেগুনা স্ট্যান্ড, বাস স্ট্যান্ড ইত্যাদি আয়োজন করে রাখা হয়েছে যাতে মানুষ অতিষ্ট হয়ে টোল দিয়ে হলেও ফ্লাইওভারে ব্যবহার করে। এইভাবে জনগণের জন্য সুযোগ সংকীর্ণ করার মাধ্যমে পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী ও তার সহযোগী ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীরা মিলে মিশে জনগণের অর্থ লুটপাট করে। কারণ এই ব্যবস্থার জন্মই হয়েছে রাষ্ট্রের সিংহভাগ মানুষকে বঞ্চিত রেখে শুধুমাত্র গুটিকয়েক মানুষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য।

যে ব্যবস্থা শুধুমাত্র গুটিকয়েক পুঁজিপতিদেরই কথা চিন্তা করে সেই ব্যবস্থা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এবং এর একমাত্র বিকল্প হচ্ছে ইসলামী ব্যবস্থা, যেটি সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো পূরণ নিশ্চিত করে। এখানে সকল জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় সেতু, রাস্তাঘাট, রেলপথ-এগুলো গনমালিকানাধীন সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। এগুলোকে ব্যক্তি মালিকানাধীন এমনকি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পত্তি হিসেবে হস্তান্তরও নিষিদ্ধ। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা খিলাফতে এগুলো থেকে টোল আদায়ের মাধ্যমে জনগণকে নিষ্পেষিত করে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী এমনকি সরকারেরও মুনাফা লাভ করার সুযোগ নাই। তিরমিজি থেকে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) এর কাছে আসলেন এবং তাঁর কাছে একটি জমির ব্যাপারে আবেদন করলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) তাকে জমিটি দিয়ে দিলেন। উপস্থিত এক ব্যক্তি রাসূল (সঃ) এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁকে বলেন, ‘আপনি জানেন আপনি তাকে কী দিয়েছেন? আপনি তাকে অফুরন্ত পানির উৎস দিয়ে দিয়েছেন’। রাসূল (সঃ) তখন লোকটির কাছ থেকে তা ফেরত নিয়ে নিলেন। এই হাদীসটি থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, যেকোনো প্রকার গণমালিকানাধীন সম্পত্তি থেকে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবিশেষের একচেটিয়া সুবিধা নেওয়া নেওয়া সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। তাই ইসলামে কোন গণমালিকানাধীন সম্পত্তি কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি গোষ্ঠীকে মুনাফা লাভের জন্য ইজারা দিয়ে এবং সেই সাথে জনগণের জন্য বিকল্প উপায়সমূহ কঠিন করে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

 

মোঃ জহিরুল ইসলাম