working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 112

 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১১২ তম সংখ্যা । ২৮ জানুয়ারী, ২০২৪

এই সংখ্যায় থাকছে :

 

“পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডার গল্পের প্রতিবাদ করায় আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়”

“ধর্মকে ব্যবহার করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার প্রবণতা আছে একটি গোষ্ঠীর: শিক্ষামন্ত্রী”

“ভেঙ্গে ফেলা বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির উদ্বোধন মোদীর”

“বিদেশি পর্যটক বাড়াতে দ্রুতই ব্যবস্থা: পর্যটনমন্ত্রী”

“এভাবে চললে আমরা হয়তো ‘সভ্য নয়’ বলে পরিচিত হবো: হাইকোর্ট”

“নতুন সংসদ সদস্যদের ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী, ৯০ শতাংশ কোটিপতি: সুজন”

“এআইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৪০ শতাংশ চাকরি, নিম্ন আয়ের দেশে ২৬”

“এই নির্বাচনেও কেন সংখ্যালঘুরা মার খেলেন”

 

“পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডার গল্পের প্রতিবাদ করায় আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়”

খবরঃ

সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডার গল্পে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির খন্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। পাঠ্যপুস্তকে এমন বিষয় থাকার প্রতিবাদ করায় তাকে চাকরিচ্যুত করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। পাঠ্যপুস্তকে এমন বিষয় অন্তর্ভূক্ত করায় এর প্রতিবাদে সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার গল্পের পাতা ছিঁড়ে প্রতিবাদ করেছেন এই শিক্ষক। এ ঘটনার পর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

(dailyinqilab.com/motropolis/news/633396)

মন্তব্যঃ

সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারিজম (ইচ্ছেমাফিক লিঙ্গ নির্ধারণের স্বাধীনতা) আলোচনা অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে গতবছর থেকেই ব্যাপক জনমত থাকলেও সরকার এখনো এটিকে জারি রেখে সবাইকে জানান দিচ্ছে যে, তারা এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাহসী প্রতিবাদের পর, পশ্চিমা মদদপুষ্ট এনজিও এই ব্র্যাক কর্তৃক রাতারাতি তাকে চাকুরীচ্যুত করা এবং ধর্মান্ধগোষ্ঠী গালি দিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়টিকে তৃতীয় লিঙ্গের বিষয় বলে পাশ কাটিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর অবস্থান বিষয়টিকে আরও সুস্পষ্ট করে। প্রশ্ন হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, কর্মসংস্থানের অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি জরুরী বিষয় বাদ দিয়ে হাসিনা সরকার কেন ট্রান্সজেন্ডারিজম নিয়ে এত মেতে উঠলো? মূল কারণ হচ্ছে তাদের প্রভু অ্যামেরিকার চাওয়া। ফ্লোরিডার গভর্নর DeSantis অভিযোগ করেছেন যে, আমেরিকা বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুকে প্রমোট করার জন্য তিন বছরে US Agency for International Development (USAID) এর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে আট লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে এবং DeSantis এর কাছে মনে হয়েছে আমেরিকান ট্যাক্সপেয়ারদের টাকার অপচয় এটি; (www.tbsnews.net/worldbiz/usa/us-president-biden-criticised-florida-governor-desantis-promoting-transgenderism)। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারিজম প্রচারের পেছনে কাদের হাত রয়েছে।

ট্রান্সজেন্ডারিজমের এই চিন্তা আমাদের দেশে বাস্তবায়িত হলে সমাজ ও পরিবারের সদস্য হিসেবে নারী ও পুরুষের যে স্বাভাবিক দায়িত্ব তা বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে পরিবার নামক প্রথা হুমকির মুখে পড়বে এবং সন্তান উৎপাদনের হার ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে, যার ভয়াবহতা এখন আমরা পশ্চিমা সমাজে প্রত্যক্ষ করছি। কারণ কোন নারী যদি মনে করে সে পুরুষ তাহলে সে আর তখন সন্তান নিবে না, আর পুরুষ যদি নিজেকে নারী মনে করে তাহলে তার মাধ্যমে যৌক্তিকভাবেই সন্তান নেয়া সম্ভব না। এর পাশাপাশি সমকামিতারও ব্যাপক বিস্তার ঘটবে যেহেতু এই আন্দোলন একই গোত্রভুক্ত (LGBTQ+)। ফলে, পরিবার ও সমাজ স্বাভাবিকভাবে ভেংগে পড়বে। হোক তা মূল্যবোধের দিক থেকে কিংবা পরিবার প্রথা ভাংগনের মাধ্যমে। মোটকথা, এধরণের নোংরা চিন্তা মানুষকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে তোলে যা শাসকের জন্য জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ করে তোলে। পরিবারে বড় হওয়া একজন মানুষ বাইডেন বা হাসিনার মত সেক্যুলার শাসকদের জন্য হুমকি কারণ তারা সমাজের দুরবস্থা নিয়ে চিন্তা করে এবং পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালায়। সুতরাং সেক্যুলার শাসকেরা নিজের দেশে এবং অন্যদেশেও নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য এধরনের চিন্তার প্রচার চালায়।

পক্ষান্তরে, ইসলাম আমাদেরকে এই ধরণের নোংরা চিন্তা থেকে দূরে রেখেছে। ইসলামে নারী ও পুরুষের অবস্থান ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট। পরিবার ও সমাজ গঠনে কার কি দায়িত্ব তা ইসলাম স্পষ্ট করেছে। পশ্চিমাদের মত নারীদেরকে দুর্বল কিংবা পুরুষের থেকে ইনফেরিয়র হিসেবে ইসলাম গণ্য করে না। ফলে, ইসলামে নারীর অধিকার বাস্তবায়নে নারী আন্দোলন কিংবা তা থেকে উৎসারিত ট্রান্স আন্দোলনের কোন প্রয়োজন পড়ে না। ফলে, ইসলামে স্বাভাবিক পরিবার প্রথার পূর্ণ বিকাশ ঘটে এবং ইতিহাসের বাক পরিবর্তনকারী নারী-পুরুষের জন্ম হয়। সুতরাং বর্তমানে যে ট্রান্স-ফিতনার মধ্যে আমরা পতিত হয়েছি তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র বইয়ের পাতা ছেড়াই যথেষ্ট নয় বরং আমাদেরকে অবশ্যই এসকল ফিতনার উৎস অর্থাৎ বর্তমান দুর্নীতিগ্রস্ত সেক্যুলার ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে তা ইসলাম তথা খিলাফত ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করতে হবে। কেবলমাত্র তখনই পশ্চিমাদের এই আগ্রাসন থেকে আমরা মুক্তি পাব এবং আমাদের পরিবারকেও রক্ষা করতে পারব। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম-হৃদয়, কঠোর-স্বভাব ফিরিশতাগণ, যারা আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে” [আত-তাহরীম: ০৬]।

    –    মো. হাফিজুর রহমান

“ধর্মকে ব্যবহার করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার প্রবণতা আছে একটি গোষ্ঠীর: শিক্ষামন্ত্রী”

খবরঃ

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি গোষ্ঠী নানা বিষয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে হোক বা ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে হোক, নানা সময়ে অরাজকতা করার বা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার প্রবণতা তাদের মধ্যে আছে। গত বছরও ছিল। একটি সংগঠন কিছু সুপারিশ করেছিল। তারা দাবি করেছে, এখানে (বইয়ে) ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। সেই বিষয়টি তারা নজরে এনেছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে যখন আমরা আলোচনা করেছি, তখন দেখেছি, শব্দটি ট্রান্সজেন্ডার নয়, থার্ড জেন্ডার। …মূল বিষয় তৃতীয় লিঙ্গ, যেটি রাষ্ট্রীয়ভাবেও স্বীকৃত এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারেরও অংশ। তবে উপস্থাপনায় যদি কোনো বিতর্ক বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে, যদি বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজন মনে করেন। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/23kftvyln8)

মন্তব্যঃ 

পশ্চিমারা মুসলিম বিশ্বে সামরিক আগ্রাসনের পর এখন সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, যার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মুসলিমদের ঈমান ও শক্তিশালী ইসলামী মূল্যবোধগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া, যেন চিন্তা, মনন ও আচরণে আমরা তাদের মত হয়ে যাই। “তোমাদেরকে করতলগত করতে পারলে তারা তোমাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং মন্দ উদ্দেশ্যে তোমাদের প্রতি বাহু ও রসনা প্রসারিত করবে এবং চাইবে যে, কোনরূপে তোমরাও কাফের হয়ে যাও” (সূরা আল-মুমতাহিনা: ২)। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের পরিচালিত ক্রুসেডের স্বঘোষিত ক্রুসেডার এবং তারা পশ্চিমা কাফিরদের ঘৃণ্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, যা তাদের এসব ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড দ্বারা প্রকাশ পাচ্ছে। সরকার জনরোষের ভয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়টাকে “তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার সংরক্ষণ” এর ছদ্মাবরণে করতে চাচ্ছে। পাঠ্যবইয়ের “শরীফ থেকে শরীফা” হওয়ার গল্পটি ট্রান্সজেন্ডারিজম (ইচ্ছামাফিক লিঙ্গ নির্ধারণের স্বাধীনতা) প্রচারণা হওয়া সত্ত্বেও এটিকে তৃতীয় লিঙ্গের নামে সংযোজন যার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। তারা সরকারী চাকুরি, অফিস আদালত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রেই তথাকথিত তৃতীয় লিঙ্গ নামক বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেন সমাজের মানুষ এটাকে স্বাভাবিক হিসাবে মেনে নেয়। সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত মানুষের লিঙ্গের দুইপ্রকার (পুরুষ এবং নারী)-এর বাইরে যে তৃতীয় আরেকটি প্রকার আছে তা সমাজে এবং রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে, যাতে এর আড়ালে বাকি বিষয়গুলোও ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা করা যায় (দেখুন-প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি এসেছে: তথ্যমন্ত্রী)। এক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্ব ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন চাপ ও প্রলোভনের মাধ্যমে সেক্যুলার মিডিয়া ও সরকারকে এসব বিষয়ে সরব হতে উৎসাহিত করছে। ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে অন্যদেশে সমকামীদের অধিকার রক্ষায় তারা বৈদেশিক উন্নয়ন সাহায্য এবং কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাবে”। ২০২১ সালের ২৩ জুন প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব এন্টনি ব্লিকেন বলে, “And we’re advancing LGBTQI rights worldwide as part of our foreign policy”।

মূলত, মানুষের লিঙ্গের প্রকারবেদ নির্ধারণের কোন এখতিয়ারই মানুষের নেই। কেননা, মানুষ নিজেকে নিজে সৃষ্টি করেনি। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর তিনিই যুগল সৃষ্টি করেন- পুরুষ ও নারী” (সূরা নাজমঃ ৪৫)। তাই ইসলামে নারী ও পুরুষের মাঝখানে আলাদা কোন জেন্ডারের অবস্থান নেই। এটা জন্মগতভাবেই প্রত্যেকটা মানুষের জন্য নির্ধারিত। তারপরও যাদের মধ্যে জন্মগত কারণে কিংবা অন্যকোন কারণে লিঙ্গ নির্ধারণের বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে অস্পষ্টতা রয়েছে ইসলামী ব্যবস্থায় তাদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা লিঙ্গ, বৈশিষ্ট্য, আকর্ষণ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে লিঙ্গ নির্ধারণ করা হবে। তারপর হয় তারা পুরুষ কিংবা নারী হিসেবে বিবেচিত হবে। এবং নারী ও পুরুষের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য শারীয়াহ্‌ অনুযায়ী আরোপিত হবে। তখন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তাদের জীবিকা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে কোনরকম বৈষম্য ছাড়াই। এখানে হিজড়া সম্প্রদায় বা তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায় নামক কোন সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব থাকবে না। সেক্সুয়ালি অসুস্থ কিংবা জন্মগতভাবে ত্রুটিযুক্ত কোন মানুষ অবহেলিত থাকবে না। তাদেরকে তাদের অধিকারের জন্য কোন আন্দোলনও করতে হবে না। আর কোন বিদেশী শক্তিও তাদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় কোন মিথ্যা অপসংস্কৃতি প্রচারের সুযোগ পাবে না।

    –    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

“ভেঙ্গে ফেলা বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির উদ্বোধন মোদীর”

খবরঃ

বহু বিতর্কের পর অবশেষে ভারতের অযোধ্যায় রামমন্দিরে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ করেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশ এবং ভারেতের বিরোধী দলগুলোর নেতাদের প্রায় সবাই এই অনুষ্ঠান বয়কট করেছে। ষোড়শ শতাব্দীতে মোঘল আমলে তৈরি বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে এই মন্দির তৈরী করা হয়েছে। কোন একসময় এখানে রামমন্দির ছিল, এই দাবি তুলে হিন্দুরা ১৯৯২ সালে মসজিদটি ভেঙ্গে দিয়েছিল। তারপরে ভারতজুড়ে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হয়েছিল প্রায় দুই হাজার মানুষ, যাদের সিংহভাগই ছিল মুসলিম। (https://www.bbc.com/bengali/articles/cd1l30xplyqo)

মন্তব্যঃ

সাম্রাজ্যবাদী ধূর্ত বৃটিশদের ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ নীতির ফলাফল হল এই বাবরি মসজিদ বিতর্ক। বৃটিশ-বিরোধী সিপাহী বিপ্লবের মাত্র কয়েক বছর পূর্বে, প্রধানত মুসলিমদের আন্দোলন-সংগ্রামে দখলদার বৃটিশরা যখন টালমাটাল, তখন হঠাৎ করেই ১৮৫০ সালে বাবরি মসজিদে আক্রমণ করে বসে বৃটিশ মদদপুষ্ট একদল হিন্দু। ১২২৬ সালে অযোধ্যায় মুসলিম শাসনের সূত্রপাত হওয়ার পর থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত ৬২৪ বছর পাশাপাশি শান্তিতে বসবাস করা মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে হঠাৎ করে শুরু হয় এক রক্তক্ষয়ী বিরোধ। এই বিরোধ মিমাংসার দায়িত্ব নেয় নাটের গুরু সেই বৃটিশরা! ১৮৫৬ সালে মসজিদের স্থানটি হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে এই অপ্রাসঙ্গিক বিরোধকে চিরস্থায়ী রূপ দেয় মুসলিম উম্মাহ্‌’র হৃদস্পন্দনরূপী খিলাফতকে ধ্বংসকারী এবং ইসলামের ঘোষিত ও পরমশত্রু (sworn enemy of Islam) বৃটেন।

মুসলিম ভূমিগুলোকে একের পর এক বেদখল করা ও পরবর্তীতে খিলাফতকে ধ্বংস করা বৃটিশরা ভূ-রাজনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একে একে স্বাধীনতার নাটক মঞ্চস্থ করতে বাধ্য হয়, এবং তার নিয়োগ করা দালালদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পর্দার অন্তরালে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে নতুন জন্ম নেওয়া মুসলিম দেশগুলোকে। কোন কোন মুসলিম দেশে আমেরিকার কাছে মাথানত করা দালালরা ক্ষমতা দখল করলে মুসলিমদের ভূমি ও সম্পদ নিয়ে বৃটেন ও আমেরিকার মধ্যে টানাটানি শুরু হয়। এবং এভাবেই চলছে এখন পর্যন্ত। খিলাফত ব্যবস্থার অবর্তমানে এই দালাল শাসকদের হাতে মুসলিম উম্মাহ্‌’র শাসন ও নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে মুসলিম উম্মাহ্‌’র জীবন, রক্ত, ঈমান ও আক্বীদার সম্মান বারবার ভূলুন্ঠীত হয়েছে এবং এই শাসকরা তা রক্ষা করার পরিবর্তে কাফির-সাম্রাজ্যবাদিদের লাঠিয়াল হিসেবে মুসলিমদেকেই বরং দমন-পীড়ন করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে।

গত দুই যুগে ‘সন্ত্রাসবাদের’ ধোঁয়া তুলে সম্রাজ্যবাদীরা অন্তত ২৫ লক্ষ মুসলিমকে হত্যা ও কয়েক কোটি মুসলিমকে সহায়সম্বলহীন করলেও এই দালাল শাসকরা মুসলিমদেরকে এর প্রতিকার করা থেকে নিবৃত্ত রেখেছে। মুসলিম জনগণকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত ও দরিদ্র করে রেখে মুসলিমদের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের খনিজ ও অন্যান্য কৌশলগত সম্পদকে এই সাম্রাজ্যবাদীরা ভোগদখল করে চলেছে, এবং এই দালাল শাসকরা এক্ষেত্রেও মুসলিমদেরকে এর প্রতিকার করা থেকে নিবৃত্ত রেখেছে। মুসলিমদের ঈমান-আক্বীদা ও রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর সম্মানের উপর সাম্রাজ্যবাদীরা বারবার আক্রমণ করেছে, এবং এক্ষেত্রেও এই দালাল শাসকরা মুসলিমদেরকে এর চির-প্রতিকার করা থেকে নিবৃত্ত রেখেছে। আর এখন মুসলিমদের ইবাদতের পবিত্র স্থান ও আল্লাহ্‌’র ঘর মসজিদকে গুড়িয়ে দিয়ে এর ধ্বংসস্তুপের উপর মুশরিককরা তাদের মিথ্যা ও অপবিত্র দেবতার নামে মন্দির নির্মাণ করে মুসলিম উম্মাহ্‌‘কে চূড়ান্ত অপমান করার পরও মুসলিম উম্মাহ্‌’র শাসন ও নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে কুক্ষিগত রেখে এর প্রতিকার করার পথে বাঁধা হয়ে আছে এই দালাল শাসকরা। এখন সময় হয়েছে পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ার, সময় এসেছে উম্মাহ্‌’র শাসন ও নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ থেকে পরগাছা দালালগুলোকে সমূলে উপড়ে ফেলে উম্মাহ্‌’র ঈমান, জান ও মালের নিরাপত্তা এবং রক্ষার একমাত্র ঢাল খিলাফতকে পুন:প্রতিষ্ঠা করার। তখন খিলাফত ধ্বংসকারী এবং ইসলামের ঘোষিত ও পরমশত্রুরা বুঝতে পারবে they’ve messed-up with the wrong people! মহান আল্লাহ্‌ বলেন, “নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে, সত্কর্ম করে ও আল্লাহ্‌‘কে অতিমাত্রায় স্মরণ করে, তারা সেদিন তাদের উপর সংঘটিত সকল জুলুম/অন্যায়ের প্রতিশোধ নিবে। আর অন্যায়কারীরা সেদিন জানতে পারবে কত বড় বিপর্যয়মূলক ছিল তাদের শেষ পরিণতি!” (সূরা শুাআরা: ২২৭)।

    –    রিসাত আহমেদ

“বিদেশি পর্যটক বাড়াতে দ্রুতই ব্যবস্থা: পর্যটনমন্ত্রী”

খবরঃ 

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, দেশে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  তিনি বলেন, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভিসা সহজিকরণ, তাদের দ্রুততম সময়ে ভিসা দেওয়া, অন-অ্যারাইভাল ভিসার আওতা বাড়ানোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও তাদের জন্য এয়ারপোর্টে বিশেষ সার্ভিস চালুকরণ ও দক্ষ ট্যুর গাইড তৈরির বিষয়েও মন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন। পর্যটন কর্পোরেশনের সব স্থাপনা আরও বেশি লাভজনক করার জন্য সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন নতুন সেবা চালু করতে হবে।  (www.banglanews24.com/national/news/bd/1268524.details)

মন্তব্যঃ 

পর্যটন শিল্পকে বাড়ানোর জন্য পর্যটন সেবাকে বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। একটি মুসলিম ভুখন্ডে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লোভে পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভর করার প্রধান দুটি খারাপ দিক রয়েছে। প্রথমত, এটি কোন দেশের অর্থনীতির জন্য নির্ভরযোগ্য কোন আয়ের খাত নয়; অন্যভাবে বললে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে (যার আগা-গোড়া (forward & backward linkage) দেশটিতেই থাকতে হবে) পর্যটননির্ভর অর্থনীতি হওয়া সাজে না। কারণ একটি দেশ চাইলেই বিদেশী পর্যটকদের দেশটিতে আসতে বাধ্য করতে পারে না। অপরদিকে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা বা করোনা মহামারীর মত বিশ্ব পরিস্থিতিতে যে খাতগুলো সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার মধ্যে প্রথম সারির একটি খাত হচ্ছে পর্যটন শিল্প। এছাড়াও কুটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হলে এই খাত একদম মুখ থুবড়ে পড়ে। অর্থাৎ শক্ত পররাষ্ট্রনীতি ও পর্যটন শিল্প বিপরীত মেরুর ভাবনা। দ্বিতীয়ত, যে খারাপ দিক রয়েছে তা হচ্ছে নানান পর্যটন সেবা বাড়ানোর ভাবনা। যেহেতু বাংলাদেশ বিদেশি পর্যটকদের জন্য কোন ধর্মীয় তীর্থস্থান নয় কাজেই এখানে যারা পর্যটক হিসেবে আসবে তারা মূলত বিনোদন ও অবকাশ যাপনের জন্য আসবে। আর এধরনের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য যে ধরণের সেবা প্রদান আবশ্যক তার অধিকাংশই ইসলাম পরিপন্থী। এ ধরণের সেবাসমূহের মধ্যে রয়েছে, ক্যাসিনো, মদ, বডি মাসাজ, এস্কট সার্ভিস বা পতিতা সরবরাহ, এছাড়াও রয়েছে ছোট পোশাক পরে রোদ পোহানোর ব্যবস্থা করা, এবং বিবাহহীন জুটিদের হোটেলের ব্যবস্থা করা।

যদিও বলা হচ্ছে দেশের সংস্কৃতি ধরে রেখে পর্যটকদের সেবা প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, এরই মধ্যে বাংলাদেশে ক্যাসিনো, পতিতাবৃত্তি, মদবিক্রি এগুলোকে শর্ত সাপেক্ষে ‘বৈধতা’ দেয়া হয়েছে, হোটেলে থাকার জন্য শুধু বয়স সনাক্ত করার জন্য এনআইডি বা পাসপোর্টের কপি দিলেই চলে, আর বাকি রইল স্বল্প বসনা হয়ে রোদ পোহানোর বিষয় আর তাও ‘আইনত’ নিষিদ্ধ নয়, এক্ষেত্রে শুধু প্রয়োজন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অর্থাৎ কেউ ছোট কাপড় পরলে বা জনসম্মুখে যা ইচ্ছা তাই করলে যেন কেউ বাধা দিতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। আর ঈমানের বাকি এটুকু অংশও বিলীন করতে নির্লজ্জ এই শাসকেরা পিছপা হবে না। আবূ মাস’ঊদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেনঃ “পূর্ববর্তীদের (নবীদের) নসীহা থেকে মানুষ যা লাভ করেছে তার একটা হলো, যদি তুমি লজ্জাই না কর, তবে যা ইচ্ছে তাই কর” (বুখারী)। আব্দুল্লাহ্‌ বিন ওমর (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেনঃ“লজ্জা ও ঈমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যদি একটি অনুপস্থিত থাকে, তাহলে অপরটিও হারিয়ে যায়।” এখনো সময় আছে আমাদের ভেবে দেখার, আমরা কি এমন ব্যবস্থা (capitalistic system) বাস্তবায়িত রাখতে চাই যা খাবার কিনতে (economy চালাতে) কাপড় খুলতে (নির্লজ্জ হতে) বাধ্য করে? নাকি এমন ব্যবস্থা (খিলাফত) ফিরিয়ে নিয়ে আসব যা একজন দাসীর সম্মান বাঁচাতে (খলিফা মুতাসিম বিল্লার মত) সেনা প্রেরণ করে।

    –    আব্দুল্লাহ্‌ আল-শামস  

“এভাবে চললে আমরা হয়তো ‘সভ্য নয়’ বলে পরিচিত হবো: হাইকোর্ট”

খবরঃ

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রদল নেতা মো: নাজমুল মৃধাকে ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় তার বাবার জানাজায় অংশ নেয়ার ঘটনা হাইকোর্টের নজরে আনা হয়েছে। ডাণ্ডাবেড়ি পরানো বিষয়টি নজরে আনার পর হাইকোর্ট বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে আমরা হয়তো আনসিভিলাইজড (অসভ্য) হিসেবে পরিচিত হবো।… (https://www.dailynayadiganta.com/first-page/806731/এভাবে-চললে-আমরা-হয়তো-সভ্য-নয়-বলে-পরিচিত-হবো-হাইকোর্ট)

মন্তব্যঃ

পিতার জানাযায় ডান্ডাবেড়ি পড়তে বাধ্য করানোতে হাইকোর্ট যেমন অসভ্যতা দেখতে পেল, ঠিক তেমনি যদি সরকার সংশ্লিষ্ট হওয়ায় হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েও আনভীর সোবাহান গ্রেফতার না হওয়াতে কিংবা জোসেফের মত কুখ্যাত খুনিদের ছেড়ে দিয়ে বিদেশে অবস্থানের সুযোগ দানে অসভ্যতা দেখতে পেত! এই বিচারব্যবস্থা ইতিমধ্যে রিমান্ডের আদেশ দানের জন্য কুখ্যাত, যেখানে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেধড়ক পেটানো, মুখে কাপড় ঠুসে পানি ঢালা বা ওয়াটার থেরাপি, যৌনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেওয়া, হাত ও পায়ের আঙ্গুলে সুই ঢুকিয়ে নখ উপরে ফেলা, মলদ্বারে ডিম বা মরিচ ঢুকিয়ে মানুষকে নির্যাতন করা হয়। যার ফলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অনেকে নিহত হয় বা চিরজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করে। আফসোস, হাইকোর্ট এখানে অসভ্যতা দেখতে পায় না! আলেম-ওলামাগণসহ ইসলামী আন্দোলনের নিষ্ঠাবান কর্মীদের নিম্ন আদালত কর্তৃক জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ড মঞ্জুরে এবং সরকার কর্তৃক পশ্চিমা কাফেরদের দেখানো পথে আবুগারিব, গুয়ানতানামো বে-এর অনুকরণে নির্যাতনে তারা অসভ্যতা দেখতে পায় না! সর্বোপরী, জনগণের দুরাবস্থার মূল কারণ পশ্চিমা ব্যবস্থা যা দ্বারা আমাদের রাষ্ট্র ও বিচারব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে, সেটাতে অসভ্যতা দেখতে পায় না!

প্রকৃতপক্ষে, এধরনের বিচারব্যবস্থা কারো কাম্য নয়। মানুষের কাম্য হলো সেই ধরনের বিচার ব্যবস্থা, যা ধনী-গরীব, শাসক-শাসিত নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যে সঠিকভাবে বিচার-বিসম্বাদের নিরসন করে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখে। এ ধরনের সভ্য বিচারব্যবস্থা অবশ্যই আল্লাহ্‌ আল-হা’কাম-এর নিকট থেকে আসা সম্ভব, যেটা হলো ইসলামী বিচারব্যবস্থা। যেখানে প্রাথমিকভাবে প্রতিটি ব্যক্তি নির্দোষ বলে বিবেচিত হবে। আদালতের রায় ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে আটকে রাখা বা শাস্তি দেওয়া যাবে না। কাউকে নির্যাতন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং যে নির্যাতন করবে তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে। এখানে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারাগারে আটকে রাখার নিয়ম নেই। তাছাড়া, এই বিচারব্যবস্থায় শাসককে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো জন্য রয়েছে মাহকামাতুল মাযালিম নামে বিশেষ আদালত। সর্বোপরী, মুসলিম হিসেবে এই বিচারব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে আমরা বাধ্য, কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, “তবে না, আপনার রবের কসম! তারা মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনার উপর বিচারের ভার অর্পণ করে…” (নিসাঃ ৬৫)।

    –    মোঃ জহিরুল ইসলাম

“নতুন সংসদ সদস্যদের ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী, ৯০ শতাংশ কোটিপতি: সুজন”

খবরঃ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের প্রায় ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী। নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের প্রায় ৯০ শতাংশই কোটিপতি। একাদশ জাতীয় সংসদের তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী ও কোটিপতি সংসদ সদস্যের সংখ্যা বেড়েছে। সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/w9tanmeznc)

মন্তব্যঃ

পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা হচ্ছে ‘মধুর হাড়ি’, ফলে স্বাভাবিকভাবে এখানে কিটপতঙ্গরা রাজনীতিতে আকৃষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ এখানে ক্ষমতায় গিয়ে আইন তৈরি করে কিংবা ক্ষমতাবলে বিদ্যমান আইন লঙ্ঘন করে জনগণের অর্থ লুটপাট করার লাইসেন্স পাওয়া যায়। তাছাড়া আমরা আরও দেখতে পাই, আইনের ফাঁকফোকর গলে কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত লোক বৈধ-অবৈধ উপায়ে সম্পদের মালিক হয়, তারপর সেই সম্পদ সংরক্ষণে তার ক্ষমতা অর্জনের প্রয়োজন পড়ে। এজন্য দেখা যায় বসুন্ধরা, সামিট, বেক্সিমকো গ্রুপসহ অগণিত লুটেরাগোষ্ঠীকে ক্ষমতায় কিংবা তার আশেপাশে অবস্থান নিতে। তাই কোটি কোটি টাকা খরচ করে নমিনেশন কিনে হোক, তেলবাজী বা ক্ষমতাসীনদের লেজুরবৃত্তি করে হোক, যেকোনভাবে পার্লামেন্টের সদস্য হতেই হবে। এই ক্ষেত্রে ‘একবার না পারিলে দেখো শতবার’। এই কারণে, পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে একসময় আইনপেশার লোকজনকে দেখা গেলেও বর্তমানে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সেখানে আধিক্য। অন্যদিকে, যেহেতু এর মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ-প্রতিপত্তি অর্জন ও সেগুলো নিরাপদ করার অবারিত সুযোগ উন্মোচিত হয়, সেহেতু বর্তমান কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ীদের সাথে সাথে যাদের ভবিষ্যতে ক্ষমতাশালী ও অসৎ ব্যবসায়ী হওয়ার খায়েশ আছে, তারাও এই এমপি হওয়ার দৌড়ে লাইন দেয়। ‘কুরুচিকর’ টিকটকার হিরো আলম থেকে শুরু করে তথাকথিত ‘সুরুচিকর’ অভিনেতা ফেরদৌস, যাত্রাপালার নর্তকি, সিনেমার নায়িকা, খেলোয়াড়-কে নেই এই দৌড়ে! এখন প্রশ্ন হলো, এসব লুটেরাদের হাতে নিজেদের পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে কিভাবে আমরা স্বচ্ছন্দের সহিত আমাদের জীবন পরিচালনা করতে পারি?

বিপরীতক্রমে ইসলামী শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা হলো একটি গুরুদায়িত্ব এবং আল্লাহ্‌’র নৈকট্য লাভের মাধ্যম। আবু যার (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌’র রাসূল! আপনি আমাকে (কোন স্থানের সরকারী) কর্মচারী কেন নিযুক্ত করছেন না?’ তিনি (সাঃ) নিজ হাত আমার কাঁধের উপর মেরে বললেন, হে আবূ যার! তুমি দুর্বল এবং (এ পদ) আমানত ও এটা কিয়ামতের দিন অপমান ও অনুতাপের কারণ হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তা হকের সাথে (যোগ্যতার ভিত্তিতে) গ্রহণ করল এবং নিজ দায়িত্ব (যথাযথভাবে) পালন করল (তার জন্য এ পদ লজ্জা ও অনুতাপের কারণ নয়” (সহীহ্‌ মুসলিম)। ফলে এখানে আল্লাহ্‌ভীরু, এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তিরা রাজনীতিতে আকৃষ্ট হয়। এবং এটাকে দুনিয়া নয় বরং পরকালের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করে। আমরা দেখতে পাই, এই ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলামী শাসন আমলে সুলতান আলমগীরের মতো শাসক তৈরি হয়েছিলেন। যিনি ভারতবর্ষকে এক সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশে পরিণত করেছিলেন। তার আমলে এই বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খান-এর সময়ে টাকায় ৮ মন চাল পাওয়া যেত। তখন ভারতবর্ষের জিডিপি ছিল সমগ্র বিশ্বের চার ভাগের এক ভাগ। তিনি রাষ্ট্রীয় তহবিলকে আল্লাহ্‌’র হুকুম অনুযায়ী জনগণের আমানত মনে করতেন। তার মৃত্যুর পর তার সম্পদের পরিমাণ হিসাব করে পাওয়া যায় ৩১৪ রুপির সমপরিমাণ অর্থ আর নিজ হাতে বোনা কয়েকটি টুপি!

    –    মোঃ জহিরুল ইসলাম

 “এআইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৪০ শতাংশ চাকরি, নিম্ন আয়ের দেশে ২৬”

খবরঃ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশ্বে চাকরির নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে—এমন কথা অনেক দিন ধরেই বিশ্লেষকেরা বলে আসছেন। এবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাও সে কথাই বললেন। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বার্ষিক ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে যাওয়ার আগে ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ওয়াশিংটনে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরে এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, এআই উন্নত অর্থনীতির ৬০ শতাংশ চাকরিকে প্রভাবিত করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের কারণে আগামীর বিশ্বে সব ধরনের চাকরির অন্তত ৪০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (www.prothomalo.com/chakri/chakri-news/8n46uy8zdd)

মন্তব্যঃ

এআই বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণীর বুদ্ধিমত্তার বিকল্প হিসেবে মেশিন বা সফটওয়্যারের বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার হিসেবে সজ্ঞায়িত করা হয়েছে। শিল্প কারখানা, সরকার পরিচালনা কিংবা বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে এআই ব্যবহার করা হয়। এআই মূলত বিজ্ঞানেরই একটি নব সংযোজিত ভার্সন মাত্র। সময় যত এগিয়ে যেতে থাকবে আরো নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হতে থাকবে। কিন্তু কৃষি, শিল্প, যোগাযোগ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোয়ায় পণ্য ও সেবার উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও, প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে পণ্য ও সেবার উৎপাদনে মানুষের প্রয়োজন কমে যাচ্ছে। তাই এআই ব্যবহারের ফলে কতিপয় টেক-জায়ান্টরা অগাধ সম্পদের মালিক হবে আর বেশিরভাগ লোকজন বেকার ভাতা কিংবা দুঃস্থ ভাতা নিয়ে চিরস্থায়ী দাসত্বে পতিত হবে, এটা ধরে নিয়েই আইএমএফ সমাধান হিসেবে বলছে যে, দেশগুলোর নতুন বেকারদের জন্য ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী স্থাপন করা প্রয়োজন।

মূলত, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি নয় বরং পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সম্পদ আহরণের অবাধ স্বাধীনতা থাকায় সম্পদের প্রবাহ একমুখী হয় এবং অল্পকিছু লোক বেশিরভাগ সম্পদের মালিক হলেও বেশিরভাগ লোক স্বল্প সম্পদ নিয়ে দারিদ্রতার মধ্যে জীবনযাপন করে। রাষ্ট্র যেহেতু কর্মসংস্থানের দায়িত্ব নেয় না এবং ট্রিকল ডাউন তত্ত্বের বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্পোরেশনগুলোর হাতে কর্মসংস্থানের দায়ভার ছেড়ে দেয় ফলে এখানে বেকারত্ব ও দারিদ্রতা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত হয়। অপরদিকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব প্রত্যেকের নিজের। রাষ্ট্র এর কোন দায়িত্ব নেয় না। ফলে, যখন কোন ব্যক্তি উৎপাদন ব্যবস্থায় কোন অবদান রাখতে পারে না তখন সে তার মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষমতাও হারায়। উপরন্তু, আয়কর, ভ্যাট, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি ইত্যাদি কারণেও মানুষের পক্ষে তার মৌলিক বিষয়সমূহ পূরণ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন কর, পূঁজির অভাব, বড় কর্পোরেশন কর্তৃক বাজার দখল, সুদভিত্তিক ঋণ ইত্যাদি কারণে বেকার লোকজনের পক্ষে এই ব্যবস্থায় ব্যবসা করে নিজেদের ভাত জুটাবে সেই অবস্থাও নেই। এর ফলশ্রুতিতে সূচিত হয় সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী নামক চিরস্থায়ী দাস বানানোর প্রজেক্ট।

পক্ষান্তরে ইসলামের অর্থনীতির সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কোন সংঘর্ষ নেই। কারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মূলত পণ্য ও সেবার উৎপাদনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অপরদিকে ইসলামের অর্থনীতি আলোচনা করে সম্পদ বণ্টনের ব্যাপারে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “ধন-সম্পদ যেন শুধু তোমাদের ধনীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়” (সুরা আল হাশর, আয়াত-৭)। খিলাফত রাষ্ট্রে ধনীদের কাছ থেকে যাকাত আদায় করে গরীবদেরকে দেয়ার পাশাপাশি দান, সাদাকা, খাবার খাওয়ানো ইত্যাদিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের থাকবে বিশাল গণমালিকানাধীন সম্পত্তি ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদ। এগুলোও সাধারণ লোকজন যারা অসচ্ছলতার মধ্যে আছে তাদেরকে দেয়া হবে। ফলে, কোন কারণে যদি মানুষ বেকার থাকে তাহলেও তারা অভাবের কারণে মৌলিক চাহিদা পূরন করা থেকে বঞ্চিত হবে না। তাছাড়া, খিলাফত রাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও বেশী হবে কারণ খিলাফত রাষ্ট্রের প্রধান ভিশন হচ্ছে সারা বিশ্বে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দেয়া। ফলে, সামরিক বাহিনী গঠন, সমরভিত্তিক ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠা, অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষির উন্নয়ন ইত্যাদি কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সুতরাং বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে পশ্চিম যে সমস্যার মুখোমুখী হচ্ছে তার কারণ মূলত তাদের কাছে সম্পদের সঠিক বণ্টনের কোন দিকে নির্দেশনা নেই। আর যেহেতু ইসলামের রয়েছে সম্পদের বণ্টনের সঠিক নির্দেশনা সেহেতু জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই উন্নতিকে শুধুমাত্র ইসলামই তার আদর্শের মধ্যে সঠিকভাবে সন্নিবেশ করতে পারে।

    –    মো. হাফিজুর রহমান

 “এই নির্বাচনেও কেন সংখ্যালঘুরা মার খেলেন”

খবরঃ

বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে, যেন কেউ ভোট দিতে না যান। কিন্তু সংখ্যালঘু এলাকায় তাদের তৎপরতা কেবল আহ্বানের মধ্যে সীমিত ছিল না। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের দাবি, নির্বাচনের আগের রাতে লালমনিরহাট উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের যুবদলের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে স্থানীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে জেলেদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই বলে হুমকি দেন যে ‘ভোটকেন্দ্রে গেলে জাল ও নৌকা দুই-ই যাবে। ভোটকেন্দ্রে গেলে এলাকা ছাড়তে হবে। এটা আমাদের নেতার নির্দেশ।’ এই হুমকি ২০০১ সালের নির্বাচনের পরের ও আগের কথা মনে করিয়ে দেয়। তখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা নির্বিচারে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা করেছেন, তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন।…এ তো গেল নির্বাচনবিরোধীদের অ্যাকশন। নির্বাচনপন্থীরা কী করেছেন, সেটাও একবার দেখা যাক। ৭ জানুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌর সদরের বেগম আমেনা সুলতান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঈগল প্রতীকের সমর্থকেরা পিপলু সাহা ও রঞ্জন সাহা নামের দুজনকে কুপিয়ে আহত করেন। অভিযোগ, তাঁরা নৌকা প্রতীকের সমর্থক। এই ঘটনার পর কেন্দ্রটি ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে। (prothomalo.com/opinion/column/e3kd0hw0qr)

মন্তব্যঃ

রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছাড়ানো বা হামলা বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের সেকুলার রাজনৈতিক দল এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা সাম্প্রদায়িকতার নামে মূলত ইসলামের বিষোদগার করে। যদিও সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই। এমনকি ভারত উপমহাদেশে ৬০০ বছরের সুদীর্ঘ ইসলামী শাসনকালীন সময় উল্লেখযোগ্য কোন সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ বা হামলার ঘটনা ঘটে নাই। বৃটিশ উপনিবেশবাদীদের হাত ধরে এই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বা হামলার আমদানি হয়। বৃটিশরা তাদের উপনিবেশিক স্বার্থে এই অঞ্চলের মানুষকে দ্বিধা-বিভক্ত করার জন্য “ডিভাইড এন্ড রুল” নীতি প্রয়োগ করে মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে বিভক্তির দেয়াল তৈরি করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে বৃটিশরা যখন এই অঞ্চল থেকে সরাসরি উপনিবেশ গুটাতে বাধ্য হয় তখন তারা তাদের তাবেদার রাজনৈতিক নেতা যেমনঃ গান্ধি-জিন্নাহকে ক্ষমতায় বসিয়ে শাসনব্যবস্থা হিসাবে সেকুলারিজমকে দিয়ে যায় যাতে তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে। তাই বৃটিশদের সরাসরি উপনিবেশ শেষ হলেও তাদের দালাল সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলো বৃটিশদের রেখে যাওয়া “ডিভাইড এন্ড রুল” নীতির আলোকে সাম্প্রদায়িক বিভক্তি জিইয়ে রাখে। তাই বৃটিশদের ছেড়ে যাওয়া উপনিবেশগুলোর রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা এখনও অন্যতম অনুষঙ্গ। একই সাম্প্রদায়িক আচরণ খোদ ইউরোপ-আমেরিকাতেও দেখা যাচ্ছে। তাদের রাজনীতির এজেন্ডা হলো অভিবাসী-মুসলিম বিদ্বেষ, বর্ণবাদের মত অতি সাম্প্রদায়িকতা, যার কারণে বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বে বর্ণবাদি হামলা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েই যাচ্ছে। সুতরাং, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি থাকবে আর সংখ্যলঘু নির্যাতন থাকবে না এটা হতে পারে না।

ইসলামে সংখ্যলঘু-সংখ্যাগুরু একটি ফরেন কনসেপ্ট (ইসলাম বহির্ভূত)। ইসলামি রাষ্ট্রে বসবাসরত সকল ব্যক্তি নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হয়। রাষ্ট্রের সকল নাগরিকরা ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করে। শারীয়াহ নির্ধারিত নাগরিকদের এই অধিকার লঙ্ঘন করা হারাম বা নিষিদ্ধ। আব্দুল্লাহ্‌ ইবন আমর (রা.) বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কোন চুক্তিবদ্ধ মানুষকে হত্যা করে সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না।”। রাষ্ট্রের শাসক খলিফা মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে মুসলিম এবং অমুসলিম সকল নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করার জন্য দায়িত্বশীল।

    –    মোঃ সিরাজুল ইসলাম