working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 99

Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৯৯ তম সংখ্যা । ২২ আগস্ট, ২০২৩

এই সংখ্যায় থাকছে:

 

“আমার প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অব্যাহত রাখুন: সার্বজনীন পেনশন উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর”

“ডিমের বাজারে কর্পোরেট হানা”

“মিয়ানমারে ফিরতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইলেন রোহিঙ্গারা”

“নারী কিসে আটকায়?”

“বার্বি: নারীবাদ, পুরুষতন্ত্র আর অস্তিত্বের সংকটের গল্প”

“স্ত্রী-সন্তান আছে, তবু ওরা ট্রান্সজেন্ডার”

“ছাত্রলীগ করতে এসে আমি পঙ্গু হতে চলেছি, প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছি”

“সিন্ডিকেট বন্ধ করলে তারা বাজারে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করবে: বাণিজ্যমন্ত্রী“

“টিনএজার শিক্ষার্থীরা কেন আত্মহত্যা করেন?”

 

“আমার প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অব্যাহত রাখুন:সার্বজনীন পেনশন উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর”

খবরঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমরা পেনশন স্কিম চালু করেছি যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ একটি উন্নত জীবনযাপন করতে পারে। জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসাই দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার চালিকাশক্তি। আগামী দিনেও আমার প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অব্যাহত রাখার জন্য আমি বাংলাদেশের জনগণকে অনুরোধ করছি। https://www.amadershomoy.com/index.php/national/article/69195/সার্বজনীন-পেনশন-স্কীমে-ন

মন্তব্যঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্য ও উদ্যোগ মূলত একটি গণপ্রতারণা। যে সরকার জনগণের বর্তমান বুকচাপা কষ্ট ও আর্থিক দুর্দশাকে লাঘব করার কোন কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না বরং প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ জনগণের কাধে চাপিয়ে তাদের আর্থিক ভবিষ্যৎকে গাঢ় অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে, সেই সরকার জনগণের ভবিষ্যৎকে আর্থিকভাবে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় করার জন্য সার্বজনীন পেনশন চালু করেছে তা বিশ্বাস করার কোন কারণই থাকতে পারে না। মূলত: সরকার বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের নামে গিগা দুর্নীতি করে এখন বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ‘ডলার’ সংকটে ও দেশ পরিচালনায় ‘টাকার’ সংকটে রয়েছে। ‘টাকার’ সংকট সামাল দেওয়ার জন্য সরকার একদিকে অবৈধভাবে দেদারছে টাকা ছাপাচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন উপায়ে (অন্যায়ভাবে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়ে, বেসরকারী ব্যাংক থেকে ঋণ, সঞ্চয়পত্র, সুকুক বন্ড, সার্বজনীন পেনশন, বাধ্যতামূলক বীমা ইত্যাদির মাধ্যমে) জনগণের পকেটের টাকা হস্তগত করার পরিকল্পনা করেছে। তবে এটি যে শুধুমাত্র হাসিনা সরকারের কাজ তা নয়, বরং এটিই মূলত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা, যেখানে জনগণের পকেটের টাকা নানান উপায়ে হস্তগত করে সরকার তার দুর্নীতি ও লুটপাটের অর্থসংস্থান করে এবং ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে।

সরকারী ও বেসরকারী সকল ব্যাংকের টাকার দখল নেওয়ার পর ‘অতিলোভ’-এর দাস পুঁজিপতিরা (রাজনৈতিক দলসংশ্লিষ্ট বড় ব্যবসায়ী) দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাংকিংখাতের বাইরের বিশাল জনগোষ্ঠীর হাতের টাকাকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে তা আয়ত্বে নেওয়া ও প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্সকে ব্যক্তি উদ্যোগ ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে বের করে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে এনে তা তাদের সুবিধামত ব্যবহার করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারা এই হীন উদ্যোগের গালভরা নাম দিয়েছে ‘ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন’ এবং এর অংশ হিসেবেই স্কুলের নাবালক ছাত্র-ছাত্রী ও কৃষকের ১০ (দশ) টাকার ব্যাংক হিসাব এবং প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যান ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও রেমিটেন্স ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে তার জন্য প্রনোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন একই ধারাবাহিকতায় তারা তথাকথিত সার্বজনীন পেনশন চালু করেছে যা মূলত বীমা ব্যবস্থার মত কাজ করবে যেখানে নিয়মিত দীর্ঘদিন প্রিমিয়াম পরিশোধ করে ৬০ বছর বয়স হলে নির্দিষ্ট হারে ভাতা পাওয়ার আশ্বাস রয়েছে। আবার পুঁজিবাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার ভাষায় এটি এমন ধরণের বিনিয়োগ যা ‘পারপিচুইটি’ নামে পরিচিত ও দীর্ঘমেয়াদী মূলধন (Tier-1 capital) সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু সরকার কারসাজি ও প্রতারণামূলকভাবে এর নাম দিয়েছে ‘পেনশন’ এবং ‘এখন ৫ হাজার টাকার মাসিক কিস্তি পরিশোধ শুরু করলে ১৮ বছরের একজন নাগরিক ৪২ বছর পর (৬০ বছর বয়স থেকে) প্রতি মাসে পেনশন পাবেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে’ এমন চটকদার হিসাব উপস্থাপন করে সরকার মূলত: পুঁজিপতিদের ভাষায় ‘ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি’র ব্যাপারে অজ্ঞ এই টার্গেটেড জনগোষ্ঠীকে বোকা বানাতে চায়। তাছাড়া, সরকার নতুন একটি বীমা কোম্পানী খোলার উদ্যোগ নিয়েছে যার মাধ্যমে সরকারী কর্মচারীদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভূক্ত করে তাদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা তুলে তহবিল গঠন করা হবে। এসবই হল পুঁজিপতিদের অনিবারনীয় অর্থক্ষুধা মিটাতে প্রয়োজনীয় যোগান তৈরির প্রক্রিয়া। মূলত: তথাকথিক সার্বজনীন পেনশনের সাথে জনগণের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তার কোন দূরতম সম্পর্কও নেই, বরং এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের টাকা একত্রিত করে তা ব্যাংকলুটের মত করে লুটপাট করা হবে।

এই তহবিলের টাকা দিয়ে ‘নিরাপদ’ বিনিয়োগের নামে সরকারী বন্ড ক্রয় করা হবে যার মাধ্যমে নতুন নতুন বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে টাকা জোগাড় করে সরকার তার ঘাটতি মিটাবে। যেহেতু স্কিম গ্রহীতার বয়স ৬০ না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে কোন টাকা পরিশোধে যেতে হবে না, ফলে ‘প্যাকেজ’ যত চটকদারই হোক সরকারের এই টাকা পরিশোধের কোন দায়বদ্ধতা থাকবে না। এটাই হল সার্বজনীন পেনশনের মূল আকর্ষণ! পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এমন গণপ্রতারণা যেখানে বর্তমান সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আইন দ্বারা সীদ্ধ; এর বিপরীতে ইসলামী ব্যবস্থা খিলাফতের মধ্যে জনগণের আর্থিক নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা আল্লাহ্‌’র আইন দ্বারা সুরক্ষিত। হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক কুর‘আন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১২৫ অনুযায়ী রাষ্ট্রের ধর্ম-বর্ণ ও বয়স নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদাসমূহ পূর্ণ করা সরকারের জন্য ফরজ। অনুচ্ছেদ-১৫৬ অনুযায়ী খিলাফত রাষ্ট্রে যার কোন সহায় নেই খলিফা হল তার সহায় এবং আর্থিক নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তাদানকারী। তাছাড়া, সম্পদ যেন শুধুমাত্র বিত্তশালীদের মধ্যে আবর্তন না করে ও নিম্নবিত্তরাও যেন বিলাসসামগ্রী উপভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য অনুচ্ছেদ-১৫৭ ও ১৫৮ অনুসরণ করে খলিফা রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট সম্পদকে শুধুমাত্র নিম্নবিত্তদের মধ্যে বিতরণ করবেন। এটি হল সেই খিলাফত ব্যবস্থা যার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, (আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা.) থেকে বর্ণীত) “শেষ জমানায় তোমাদের খলিফাদের মধ্যে এমন একজন খলিফা আসবে যে জনগণের মধ্যে সম্পদ বিতরণ করবে, কোন হিসাব বা গণনা ছাড়াই” (সহীস মুসলিম-২৯১৩); অপর এক বর্ণনায় এসেছে খলিফা বলবেন, “তোমাদের যার যা সম্পদ প্রয়োজন নিয়ে যাও, যার জন্য ইতিপূর্বে তোমরা এক অপরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে, কলহ ও রক্তপাত করতে”।

    –    রিসাত আহমেদ

“ডিমের বাজারে কর্পোরেট হানা”

খবরঃ

দুই সপ্তাহ আগে মুরগির একটি ডিমের দাম ছিল ১০ টাকা ৫০ পয়সা। এখন তা ১৫ টাকা। দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা ব্যবসায়ীদের কাছে নেই। তারপরও দাম বাড়ছে। ১৫ দিন আগের দামের সঙ্গে তুলনা করলে প্রতিদিন সারা দেশের ক্রেতাদের কাছ থেকে সব মিলিয়ে বাড়তি নেয়া হচ্ছে ১৭ থেকে ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার জানান, বাংলাদেশে প্রতিদিন সব ধরনের ডিমের মোট চাহিদা চার কোটি ৫০ লাখ পিস। আর উৎপাদন আছে পাঁচ কোটির মতো। তিনি বলেন, ‘‘দেশে ডিমের উৎপাদন হঠাৎ করে কমে যায়নি। তবে পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। তারপরও খুচরা পর্যায়ে একটি ডিম এখন কোনোভাবেই ১৩ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আসলে ডিমের বাজার খামারিদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এটা নিয়ন্ত্রণ করে কিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। তারাই ঠিক করে দেয় ডিমের দাম। প্রতিদিন সকালে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকজন ডিমের দাম ঠিক করে দেয়। আর সেই দামেই সারাদেশে ডিম বিক্রি হয়। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারা তাদের নির্দিষ্ট এজেন্টদের মাধ্যমে সকাল ১০টার মধ্যে মোবাইল ফোনের এসএমএস, ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারাদেশে ডিমের দাম জানিয়ে দেয়। সেই দামেই বিক্রি হয়। এর সঙ্গে উৎপাদন বা চাহিদার তেমন সম্পর্ক থাকে না।” (https://www.ittefaq.com.bd/655342)

মন্তব্যঃ

প্রতিদিন সকাল ১০টার মধ্যে মোবাইল ফোনের এসএমএস আর ফেসবুক পেজের মাধ্যমে কতিপয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ডিমের দাম নির্ধারণ এটাই প্রমাণ করে যে অন্যান্য সকল কিছুর মতই ডিমের বাজারও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে গেছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের বাজারে ‘অস্থিরতার’ অভিযোগে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা, এস আলম, স্কয়ার, প্রাণ, এসিআই, সিটি, আকিজ, মেঘনাসহ ৩৬ কোম্পানী ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন; যা ছিল লোকদেখানো প্রতারণা কারণ জনগণ ভালো করেই জানে, এসকল কোম্পানী সরকারের মদদপুষ্ট কিংবা সরকার এদের মদদপুষ্ট। আমরা যদি সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের ডিমের বাজারের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব যে, এখানে উৎপাদন ও বণ্টনের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবেই কতিপয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে ন্যাস্ত। যেমন, বাংলাদেশে এখন পোল্ট্রি খামারি আছে ৬০ হাজার। তাদের মধ্যে ২০ হাজার খামারি ডিম উৎপাদন করেন। আর ৪০ হাজার খামারি মুরগি উৎপাদন করেন। এই ৬০ হাজার খামারের মধ্যে ১৯ হাজার খামারিকে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং-এর আওতায় নিয়ে গেছে কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। এটা দাদন ব্যবসার মতো। তাদের আগাম টাকা দিয়ে ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেয়া হয়। সারা বছর সেই একই দামে ডিম ও মুরগি কেনে কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। দেশে মোট খামারের তিন ভাগের একভাগ তারা এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। বাকিরা বিচ্ছিন্ন। তাই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাদের আবার নিজস্ব ফার্মও আছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার এর মতে, “কাজী ফার্মস ও প্যারাগন গ্রুপ এখন ডিমের বাজারে মূল খেলোয়াড়। দেশে  পোল্ট্রি শিল্প নিয়ে তিনটি সমিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে। তারাই এগুলো গঠন করেছেন বাজার তাদের দখলে রাখার জন্য।” এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান মামলা করলেও সান্ত্বনা পুরষ্কার ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ মূল কথা হচ্ছে সরকার তার পলিসি দিয়ে এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিদ্যমান সেট-আপ দিয়ে জনগণের টাকা লুটপাট করছে। হোক তা ব্রয়লার মুরগি, ডিম, সয়াবিন তেল কিংবা পেয়াজ।

খিলাফত ব্যবস্থায় একচেটিয়া বাজার এবং মজুতদারীকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। ফলে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের হানা থেকে বাজার ব্যবস্থা মুক্ত থাকবে। ইসলামে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মজুতকৃত পণ্যের মাধ্যমে একচেটিয়া ব্যবসা করা যাবেনা। যেমন এগুলোকে বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া যাবেনা যাতে বাজারে দাম বেড়ে যায়। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণকারী একজন অন্যায়কারী”। এবং “যে ব্যক্তি মুসলিমদের (বাজার ব্যবস্থাপনা বিষয়াদি) কোন মূল্য নির্ধারণের সাথে এমনভাবে জড়িত ছিল, যাতে তাদের জন্য তা বৃদ্ধি করা যায়, কিয়ামতের দিবসে জাহান্নামের ভয়াবহ আগুনে তাকে স্থাপন করা আল্লাহ্‌’র উপর কর্তব্য হয়ে যায়”। পাশাপাশি বাজার তদারকির জন্য খলীফা মুহতাসিব নিয়োগ করবেন যিনি বাজারে একচেটিয়াকরনের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা দেখতে পেলেই সংগে সংগে তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসবেন। উপরন্তু বাজারে পণ্যের সংকট সৃষ্টি হলে খলীফা নিজস্ব উদ্যোগে ন্যায্যমূল্যে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন, ‘যখন বাগদাদে মূল্য বৃদ্ধি পেত তখন খলীফা তার ভান্ডার খুলে দেয়ার এবং মানুষের বিক্রয়কৃত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রির নির্দেশ দিতেন। যতক্ষণ না মানুষ প্রকৃত মূল্যের দিকে ফিরে আসে’। এমনকি মূল্যবৃদ্ধির সাথে জড়িতদেরকে খলীফা শাস্তির সম্মুখীন করবেন। খলীফা ওমর (রা.) সর্বপ্রথম খাদ্য মজুতকারীদের নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। উমাইয়া বিন ইয়াযীদ আল-আসাদী ও মুযায়না গোত্রের জনৈক আযাদকৃত দাস মদীনায় খাদ্যদ্রব্য মজুত করত। ওমর (রা.) তাদেরকে মদীনা থেকে বের করে দিয়েছিলেন।

    –    মো. হাফিজুর রহমান 

“মিয়ানমারে ফিরতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইলেন রোহিঙ্গারা”

খবরঃ 

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। …আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ছয় বছর আগে তাদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন-নিপীড়নের কথা প্রতিনিধিদলকে তুলে ধরেন। এ সময় নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন রোহিঙ্গারা। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মার্কিন কংগ্রেসের দুজন সদস্য। … মার্কিন প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়, ছয় বছরেও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পরিবেশও নেই। এখন চীনের মধ্যস্থতায় প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা চললেও রোহিঙ্গারা চায় নিরাপদ, টেকসই, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন। সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায়। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/ymdxpy59r6)

মন্তব্যঃ

রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে মিয়ানমারে ফেরানোর প্রচেষ্টার পেছনে আমেরিকার কোন মানবিক অভিপ্রায় নেই কিংবা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উপর তাদের নিষেধাজ্ঞাসমূহ কখনোই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি তাদের সহানুভূতি থেকে আরোপ করা হয়নি। বরং তাদের প্রত্যাবাসনে উপনিবেশবাদী আমেরিকার এই মেকি আগ্রহ তার আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ ঘিরেই আবর্তিত। এজন্য বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদেরকে আজ অবধি প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার মার্কিন সহায়তা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকা এই রোহিঙ্গা শরনার্থী ইস্যুকে জিইয়ে রেখেছে এবং সাম্প্রতিককালে মার্কিন কুটনীতিকদের ধারাবাহিক বাংলাদেশ সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। চীনকে নিয়ন্ত্রণের নীতির অংশ হিসেবে রাখাইন রাজ্যের আঞ্চলিক গুরুত্বের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রোহিঙ্গা ইস্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। রাখাইন রাজ্যটি মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। এটি মিয়ানমারের প্রধান অফশোর প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রের আবাসস্থল। রাখাইন রাজ্যটি চীনের বিআরআই (BRI) প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা চীনের ইউয়ান প্রদেশে একটি বড় পাইপলাইনের সূচনা বিন্দু এবং চীন কর্তৃক নির্মিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিশাল অবস্থান এই রাখাইন রাজ্যে। চীন মিয়ানমার সীমান্তকে তার দূরবর্তী ইউয়ান প্রদেশের জন্য একটি কৌশলগত বাফার জোন এবং ভারত মহাসাগরে একটি বিকল্প সরবরাহ রুট হিসাবে ব্যবহার করতে চায় যাতে সে নৌ রুট হিসেবে মালাক্কা প্রণালীর উপর নির্ভরতা কমাতে পারে। তাই এই কৌশলগত অঞ্চলে আমেরিকা তার আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ অর্জনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই লক্ষ্য অর্জনে আমেরিকা রোহিঙ্গাদেরকে রাখাইনে প্রত্যাবাসনের নামে তাদেরকে তার ভূ-রাজনৈতিক গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। আমেরিকা মূলত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদেরকে রাখাইনে প্রত্যাবাসন করতে চায়। এজন্য আমেরিকা সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘে প্রস্তাবও পাস করেছে (দেখুনঃ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস, https://www.somoynews.tv/news/2023-07-15/xy1HPtGF)। আমেরিকা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদেরকে রাখাইনে প্রত্যাবাসন করতে চায় কারণ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রত্যাবাসন করলে নিরাপত্তা ইস্যুর অজুহাত তুলে আমেরিকা UN Security Council-এ রাখাইনে আমেরিকান সেনা মোতায়েন করার ব্যাপারে রেজুলুশন পাস করাতে পারবে যাতে সে রাখাইন অঞ্চলকে সামরিকীকরণ করতে পারে এবং মিয়ানমারের উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। মুসলিম উম্মাহ্‌’র জীবন, সম্পদ ও সম্মানকে সুরক্ষিত করতে কাফির উপনিনেশবাদী শক্তি কিংবা তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের কোন প্রকার আস্থা বা আশা পোষণের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে সতর্ক করে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না, তোমরা কষ্টে থাক তাতেই তাদের আনন্দ”। (সুরা আলি ইমরানঃ ১১৮)

তাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্দশার চক্র ভাঙতে ঔপনিবেশিক মার্কিনীদের হস্তক্ষেপ, জাতিসংঘের কোনো প্রস্তাব, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কোনো প্রত্যাবাসন চুক্তি বা নির্লজ্জ মুসলিম শাসকদের কুমীরের কান্না সবই প্রতারণা, যা বাস্তবে তাদের সমস্যার সমাধান করবে না। আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন যে খলীফা হারুন আল-রশিদের সময়ে ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে বার্মায় অর্থাৎ মিয়ানমারে ইসলাম প্রবেশ করে, যখন ইসলামী খিলাফত বহু শতাব্দী ধরে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রাষ্ট্র ছিল এবং ইসলামের মহিমা, সত্য ও ন্যায়বিচারের কারণে এটি বার্মা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আরাকান প্রদেশটি ৩৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুসলিমেদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল (1430 CE থেকে 1784 CE এর মধ্যে)। এরপর উপনিবেশবাদী ব্রিটেন এই কৌশলগত এবং সম্পদশালী ভূমিতে উপনিবেশ স্থাপন করে এবং মুসলিমরা বৃটিশ সমর্থিত নৃশংস বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হাতে গণহত্যার সম্মুখীন হয়। এই উপমহাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার আগে ব্রিটেন রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে দৈন্যপীড়িত অবস্থায় পতিত করে এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর করুণার উপর ছেড়ে দিয়ে যায় যা আজ অবধি চলমান। তাই এই আরাকান হচ্ছে মুসলিম ভূমি এবং এর প্রতিটি ইঞ্চি মুক্ত করা মুসলিমদের উপর ফরজ। কোন উপনিবেশবাদী রাষ্ট্র কিংবা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন কুখ্যাত কোন সংস্থার করুণা ভিক্ষা করে নয় বরং উপযুক্ত সামরিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে। এমতাবস্থায় নবুওয়্যাতের আদলে প্রতিশ্রুত দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্‌ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে মুসলিম সেনাবাহিনীকে জিহাদের প্রেরণ করার মাধ্যমে আরাকানকে পুনরায় খিলাফতের ভূমিতে যুক্ত করাই সেখানকার মুসলিমদেরকে কাফির উপনিবেশবাদীদের কবল থেকে মুক্ত করার একমাত্র উপায়। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয়ই ইমাম (খলীফা) হচ্ছে ঢালস্বরুপ যার পেছনে দাঁড়িয়ে মুসলিমরা যুদ্ধ করে এবং নিজেদের আত্মরক্ষা করে” (মুসলিম)।

    –    সিফাত নেওয়াজ

“নারী কিসে আটকায়?”

খবরঃ

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ডিং বা আলোচনায় আছে যে বিষয়টি তা হলো, নারী কিসে আটকায়। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টইন ট্রুডো ও তাঁর স্ত্রী সোভি গ্রেগয়ের ট্রুডোর আলাদা থাকার ঘোষণার পরই আলোচনাটির সূত্রপাত। এর জের হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইতে শুরু করে মিম, ট্রল আর পোস্ট–পাল্টা পোস্টের ঝড়। এর মধ্যে একটি পোস্টের বক্তব্য ছিল এমন, ‘জাস্টিন ট্রুডোর ক্ষমতা, বিল গেটসের টাকা, হাকিমির জনপ্রিয়তা হুমায়ুন ফরিদীর ভালোবাসা, তাহসানের কণ্ঠ কিংবা হৃত্বিক রোশানের স্মার্টনেস। কোনো কিছুই নারীকে আটকাতে পারে নাই, বলতে পারবেন নারী কিসে আটকায়?’ (https://www.prothomalo.com/onnoalo/treatise/f8o1qkyren)

মন্তব্যঃ

“বিবাহবন্ধন” শব্দটি আমাদের বর্তমান সেক্যুলার সমাজে সত্যিকার অর্থেই ‘বন্ধন’ বা ‘handcuff’ এর চেয়ে অতিরিক্ত কোন তাৎপর্য বহন করছেনা। বিয়ে বর্তমানে নারী-পুরুষ উভয়ের কাছে শৃংখলার নামান্তর। ‘নারী কিসে আটকায়’ ট্রেন্ডিং এর বিপরীতে প্রথম আলোর ‘পুরুষ যেখানে আটকায়’ শীর্ষক প্রতিবেদনও আছে যেখানে বলা হচ্ছে, “আফসোস! কেউ বলছে না, পুরুষ কিসে আটকায়? কিন্তু যে কথাটা সবাই জানে এবং মানে, কিন্তু বলে না; সেটি হলো সম্পর্কের ফাটকে দীর্ঘমেয়াদে সে আটকা থাকে বটে; কিন্তু সেই থাকায় তার সায় থাকে না” অর্থাৎ, নারী ও পুরুষ উভয়েই হতাশ যে বিয়ের পর তারা পারিবারিক দ্বায়িত্ববোধের কাছে আটকা পড়ে যাচ্ছে, বৈবাহিক সম্পর্ক প্রশান্তির বদলে হয়ে যাচ্ছে এক শৃংখলাবৃত কয়েদখানা।

একটি স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা যদি দেখি, মানুষ হিসেবে আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে আমরা সঙ্গী খুঁজি, বংশবৃদ্ধি করতে চাই; স্বামী/স্ত্রী-সন্তানসন্ততি নিয়ে পরিবার গঠন করতে চাই। এই পরিবার গঠনের মাধ্যমে একদিকে আমাদের যেমন প্রজনন প্রবৃত্তি পূরণ হয়, তেমনি একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, নির্ভরশীলতা ও দায়দায়িত্বও তৈরি হয়। একসাথে থাকতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই অনেক সময় সুবিধা-অসুবিধা, পছন্দ-অপছন্দ কিংবা মতের অমিল হয়, যার যার নিজের জায়গা থেকে কিছু বিষয় ছাড় দিতে হয়। এটা যেকোনো পরিবারের মধ্যকার স্বাভাবিক একটা বিষয়। কিন্তু বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’ মানুষকে শেখায়, ‘প্রত্যেক ব্যক্তিই নাকি চায় তার নিজের মত করে জীবন কাটাতে, সমস্ত সিদ্ধান্ত নিজের মত করে, নিজের ইচ্ছায় নিতে’। নারী-পুরুষের সম্পর্কের উদ্দেশ্যকে এখানে শুধুমাত্র যৌন চাহিদা পূরণকে কেন্দ্র করে আবর্তিত করা হয়েছে। যার ফলস্বরূপ, বিবাহ-পরবর্তী পারিবারিক প্রত্যাশা বা দায়িত্ব নারী-পুরুষ উভয়ের কাছে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ মনে হতে থাকে। ব্যক্তিস্বাধীনতার এই চিন্তা থেকে সংসারের, সঙ্গীর কিংবা সন্তানের প্রয়োজনে নিজের পছন্দ-অপছন্দ, চাকরি, বেড়ানো এমনকি শপিং এর মত ছোটখাট বিষয়ে ছাড় দেওয়া, একে অপরকে প্রাধান্য দেওয়া, দোষত্রুটি ক্ষমা করা, পরিবারের কল্যানে শ্রম দেওয়া ইত্যাদি স্বাভাবিক বিষয়গুলোও কঠিন হয়ে যায়। সর্বক্ষণ কি পেলাম, কি দিলাম এর হিসাব নিকাশ চলতে থাকে। নিজের মত করে জীবন কাটানোর ব্যক্তি-স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং পারিবারিক দায়িত্ববোধ – এই দুই বিষয়ে তখন দ্বৈরথ তৈরি হয়। তাছাড়া, সৃষ্টিকর্তা বিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষবাদ যখন সমাজের ভিত্তি অর্থাৎ আখিরাতের সাথে জীবনের কোন সম্পর্ক নাই, তখন ছোটবড় এই স্যাক্রিফাইসগুলো মানুষের জীবনে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কেননা, এর বিনিময়ে আল্লাহ্‌’র কাছ থেকে উত্তম কোন প্রতিদান পাওয়ার ব্যাপারে সে ভরসা খুঁজে পায় না। কোনকিছু নিজের পছন্দমত না হলে নিজেকে সে সবসময় বঞ্চিত মনে করে। এভাবে অনেক ‘না পাওয়া’ বা ‘করতে না পারা’র বাধা যখন পুঞ্জিভূত হয়ে বড় আকার ধারণ করে, ব্যক্তি তখন সম্পর্কের ব্যাপারে শ্বাসরুদ্ধ বা শৃঙ্খলিত বোধ করে, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায় এবং একপর্যায়ে সে সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে চায়। যার কারণে আমরা দেখি, ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণার কর্ণধার ফ্রান্সে বিবাহবিচ্ছেদের হার ৫৫ শতাংশ। মার্কিন ডিভোর্স‌ এটর্নি স্কট স্ট্যাডলারের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে প্রথম বিবাহে ডিভোর্সের হার ৫০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বিয়েতে ৬৭ শতাংশ এবং তৃতীয় বিয়েতে সেটা ৭৩ শতাংশে গিয়ে ঠেকছে। আমাদের দেশেও গত এক বছরে ডিভোর্সের হার বেড়ে গেছে দ্বিগুন। ঢাকা শহরে প্রতি ৪০ মিনিটে একটা করে ডিভোর্স হচ্ছে। তাদের এই দূষিত চিন্তা গ্রহণ করার ফলে তাদের মতই আমাদের পরিবারব্যবস্থা এবং গোটা সমাজব্যবস্থায় ভাঙ্গন ধরতে শুরু করেছে।

অথচ, একটি তাক্বওয়াভিত্তিক সমাজে ব্যক্তিস্বাধীনতা বা মানুষের নিজেদের খেয়ালখুশি দিয়ে পরিচালিত হবার সুযোগ নেই। কারণ, মুসলিম মাত্রই সে আল্লাহ্‌’র দাস এবং আল্লাহ্‌’র আদেশ-নিষেধের কাছে আত্মসমর্পনকারী। মহান আল্লাহ্‌’র আদেশ মেনে নারী ও পুরুষ বিয়ে করে, যার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র যৌন চাহিদা পূরণ নয়, বরং দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে পরিবার গঠন ও এর যত্ন করা। আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তারা তখন একে-অপরের যত্ন নেয়, ছাড় দেয়, ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে, কিছু অপ্রাপ্তি থাকলেও আখিরাতের কথা ভেবে বিচলিত হয়না এবং এভাবেই স্বেচ্ছাচারিতার বদলে একটি সুস্থ সুন্দর দায়িত্বশীল পরিবার তথা সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, “তোমরা তোমাদের সঙ্গীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর, যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যেখানে আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রেখেছেন” (সুরা আন-নিসা, আয়াত ১৯)। সুতরাং, বিশ্বব্যাপী ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের ভিত্তিতে গড়ে উঠা সমাজগুলোতে পরিবার ভাংগনের যে সামাজিক মহামারী চলছে, তার প্রতিষেধক রয়েছে কেবলমাত্র আল্লাহ্‌’র দেয়া জীবনব্যবস্থায়। সচেতন মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত নিজেদের আক্বীদার প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখা এবং ইসলাম প্রদত্ত ভারসাম্যপূর্ণ সামাজিক ব্যবস্থার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের ডাক সমাজের সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া। পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা গঠনে ইসলামের নেতৃত্ব আজ শুধু মুসলিমদেরই প্রয়োজন নয়, বরং পুরো মানবজাতির একমাত্র বিকল্প।

    –    যায়নাব মায়সূরা 

“বার্বি: নারীবাদ, পুরুষতন্ত্র আর অস্তিত্বের সংকটের গল্প”

খবরঃ

সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বক্স অফিস হিট ‘বার্বি’, যেখানে মিলে গেছে অস্তিত্বের সংকট, পিতৃতন্ত্র, লিঙ্গবৈষম্য আর জনপ্রিয় সংস্কৃতির সেই আইকনিক বার্বি।‘ডল’ বার্বি। নারীর জীবনের জটিলতাগুলোকে অ্যাবসারডিস্ট দর্শনের থিমে এভাবে আর কোনো বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুসন্ধান করা হয়েছে বলে মনে হয় না। ‘হ্যাটস অব টু দ্য ডিরেক্টর গ্রেটা গারউইগ’, যিনি… অত্যন্ত সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জটিলতর অবধারণগত অসংগতিগুলোকে বিনোদনধর্মী হালকা হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে এনেছেন; দর্শককে উপহার দিয়েছেন অনবদ্য এক শৈল্পিক সৃষ্টি   সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বক্স অফিস হিট ‘বার্বি’, যেখানে মিলে গেছে অস্তিত্বের সংকট, পিতৃতন্ত্র, লিঙ্গবৈষম্য আর জনপ্রিয় সংস্কৃতির সেই আইকনিক ‘ডল’ বার্বি। নারীর জীবনের জটিলতাগুলোকে অ্যাবসারডিস্ট দর্শনের থিমে এভাবে আর কোনো বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুসন্ধান করা হয়েছে বলে মনে হয় না। ‘হ্যাটস অব টু দ্য ডিরেক্টর গ্রেটা গারউইগ’, যিনি … অত্যন্ত সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জটিলতর অবধারণগত অসংগতিগুলোকে বিনোদনধর্মী হালকা হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে এনেছেন; দর্শককে উপহার দিয়েছেন অনবদ্য এক শৈল্পিক সৃষ্টি! (https://nagorik.prothomalo.com/reader/d4d024e08t)

মন্তব্যঃ

আমেরিকান খেলনা কোম্পানী মেটেল-এর খেলনা বার্বি ডলের ক্যারেক্টারকে ফোকাস করে মেটেল ফিল্মস-এর সিনেমা “বার্বি” ২১ শে জুলাই ২০২৩ সালে রিলিজ পাওয়ার পর পরই বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তৈরি করে। এর কারণ, মিরর ইফেক্টের (অভিন্ন কিন্তু উল্টো চিত্র) উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সিনেমায় বাস্তব দুনিয়ার পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অভিন্ন কিন্তু বিপরীত নারীতান্ত্রিক সমাজকে তুলে ধরা হয়েছে এক কাল্পনিক পুতুলদের দুনিয়া “বার্বি ল্যান্ডে”। যেখানে নারীরা অর্থ্যাৎ বার্বিরা সব করতে পারে, নারীদের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু থাকে, নারীর আইন দেশের আইন, নারীর রঙ দেশের রঙ (pink goes with everything), নারীর পরিচয়ে দেশের পরিচয়। নারীর নিজস্ব ক্যারিয়ার আছে, বাড়ি আছে, গাড়ি আছে, টাকা আছে এক কথায় “women can do anything and everything” “women (barbie) has a great day everyday”। আর পুরুষরা (কেন) শুধু নারীর(বার্বির) মনোযোগ আকর্ষণের মধ্যেই নিজের অস্তিত্বের সার্থকতা খুঁজে পায়। সে যাই করুক না কেন দেশে সে সবসময় সেকেন্ড সিটিজেন। মুভির ভাষায় “Doesn’t seem to matter what I do, I’m always number two”। যা দিয়ে সিনেমার পরিচালক গ্রেটা গারউগ বর্তমান সমাজে নারীর অবস্থানকে তুলে ধরে নারী পুরুষের সহমমর্মিতার একটা ছাপ এনে সমাজে নারী-পুরুষের জীবনের উদ্দেশ্য এবং কর্তব্য নিয়ে আলোচনা তুলে অমীমাংসিতভাবে শেষ করে দেয়। বার্বি মুভির প্রডিউসার এবং অভিনেত্রী মার্গট রবি এক ইন্টারভিউতে বলে, “আমাদের কাছে কিছু বড় বড় প্রশ্ন ছিল, যেমন জীবনের মানে কি? প্রকৃত সুখ কি? জীবনে বেঁচে থাকার মূল্য কি? আপনি যদি নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রিত একটা বার্বি ল্যান্ড পান, তাহলে কি আপনাকে অন্যকিছু বেছে নিতে বাধ্য করবে? এই প্রশ্নগুলি কিছু চমৎকার গভীর উত্তর এবং কথোপকথনের দিকে পরিচালিত করে, যদিও কোন উত্তর দেয় না কারণ সত্যিই এসবের কোন উত্তর নেই।”

এখন, আমাদের যে বিষয়টা বুঝা জরুরী তা হচ্ছে, এই পুরো চিত্রটা আসলে পশ্চিমা সমাজব্যবস্থার, যেটাকে তারা সার্বজনীন আখ্যা দিয়ে সমস্ত মানবজাতির চিত্র হিসেবে তুলে ধরার অপচেষ্টা চালায়। পশ্চিমা সমাজের বড় দুর্বলতা হলো, তারা সমাজ পরিচালনায় সৃষ্টিকর্তার দিকনির্দেশনাকে প্রত্যাখ্যান করে, সীমাবদ্ধ-দুর্বল-নির্ভরশীল মানবমস্তিষ্ককে সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ায় তারা আজও নারী-পুরুষের জীবনের উদ্দেশ্য ও কর্তব্যকে নির্ধারণ করতে পারেনি। তারা সুস্পষ্টভাবে জানে না নারীরা সমাজে কি রোল প্লে করবে আর পুরুষরা কি রোল প্লে করবে। সমাজে তারা কিভাবে সহাবস্থান করবে কিংবা তাদের অস্তিত্বের মূল্যই বা কিসে নির্ধারিত হবে। তাই পশ্চিমা পুঁজিবাদী সমাজে এবং তাদেরকে অনুসরণ করা আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের সম্পর্ক টানাপোড়নে রয়েছে, সেটা পরিপূরক না হয়ে বরং আক্রমণাত্মক হয়েছে, যা সমাজের সোশ্যাল ফ্যাব্রিককে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। আর এই ফাঁকটাকে কাজে লাগিয়ে বড় বড় পুঁজিবাদী ব্যবসায়িক শ্রেণী তাদের প্রয়োজনে এক এক সময় নারীদের এক এক ভাবে উপস্থাপন করে তাদের জীবনের সফলতা এবং স্বার্থকতাকে নির্ধারণ করে দেয়, যাতে তাদের ব্যবসায়িক মুনাফা বাড়ে। তাদের সমাজে ‘নারী’ এখন ভোগ আর মুনাফার পন্য। যতদিন নারীর শরীর এবং শক্তির ব্যবসায়িক মূল্য আছে ততদিন সমাজে নারীর মূল্য আছে। সে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কর্পোরেট যাই হোক না কেন। যেমন বিউটি প্রোডাক্ট এন্ড সার্ভিস ও ফ্যাশনওয়্যার কোম্পানীগুলো নারীর সৌন্দর্য্যেরও একটা মিথ্যে স্ট্যান্ডার্ড সেট করেছে এবং বার বার প্রচার করছে এই স্ট্যান্ডার্ডের মধ্যে থাকলে কেউ সুন্দর না থাকলে নয়। বার্বি মুভিতে যা স্টেরিওটাইপিকাল বার্বি হিসেবে বার বার আলোচনায় নিয়ে আসা হয়েছে। তারা এখানে একটা মিথ্যেকে বার বার বলে (অর্থ্যাৎ লিন হ্যাশারের “ইল্যুশন অব ট্রুথ ইফেক্ট”কে কাজে লাগিয়ে) সেটাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে। আর নারীদের বুঝানো হচ্ছে এই স্ট্যান্ডার্ড অর্জন করতে না পারলে সে ব্যার্থ, তাই নারীর উচিত তার পণ্য ও সেবা নিয়ে এটি অর্জন করা। তাই দেখা যায় বৃদ্ধ বয়সেও পশ্চিমা সমাজে নারীরা টেনশনে থাকে কোনভাবে তার শারীরিক যৌন আবেদন বাড়িয়ে হলেও সমাজে কিছুটা মূল্য ধরে রাখা যায়’ কিনা। কিন্তু, ইসলামে এই ধরণের ফটকাবাজির কোন সুযোগ নাই কারণ, ইসলামে নারী-পুরুষের জীবনের উদ্দেশ্য এবং আলাদা আলাদা কর্তব্য আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত। ইসলামে ব্যবসায়িক মুনাফা অর্জন কিংবা শারীরিক গড়নের ভিত্তিতে নয় বরং একজন নারীর মূল্য নির্ধারিত হয় তার তাকওয়া, ইসলামী ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা-দীক্ষা অর্জন করে মানবজাতির কল্যাণে তিনি কি ভূমিকা রেখেছেন, জাতি গঠন অর্থ্যাৎ মাতৃরূপ শিক্ষক হিসেবে শিশুদেরকে শিক্ষা দিয়ে কিভাবে পুরো মানবজাতির কান্ডারি হিসেবে গড়ে তুলছেন এসব প্রোডাক্টিভ এবং প্র্যাক্টিকাল বাস্তবতার ভিত্তিতে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে” (সুরা আত-তাওবা, আয়াত ৭১)।

    –    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

“স্ত্রী-সন্তান আছে, তবু ওরা ট্রান্সজেন্ডার”

খবরঃ

শারীরিক বৈশিষ্ট্যে ওরা আর দশটা মানুষের মতোই। আছে স্ত্রী-সন্তান। তারপরও নিজেদেরকে ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় দিয়ে ওরা চাঁদাবাজি করে আসছিল। অবশেষে ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও হিজড়া সেজে চাঁদাবাজির ঘটনায় ৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাপ্পু হিজড়া নামের একজন ওদেরকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এনে এই চাঁদাবাজিতে নিযুক্ত করেছিল। (https://www.newsbangla24.com/news/229974/)

মন্তব্যঃ

পশ্চিমা লিবারাল চিন্তাগুলো বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভের পূর্বে হিজড়াদের লিঙ্গ পরিচয়ে কোন বিভ্রান্তি ছিলনা। এটা খুব স্বাভাবিক যে মানুষদের মধ্যে কারো কারো অঙ্গের অক্ষমতা থাকতে পারে, হরমনগত সমস্যার কারণেও নানাভাবে মানুষ প্রতিবন্ধী হতে পারে। বোবা, বধির, খোঁড়া এমন অনেক মানুষ যেমন যুগ যুগ ধরে ছিল, হিজড়া বা লিঙ্গ প্রতিবন্ধী মানুষও ছিল। লিঙ্গ সন্মন্ধীয় অক্ষমতা বা প্রতিবন্ধিতা থাকলেও তাদের কেউ নারী কিংবা কেউ পুরুষের মতই সমাজের মধ্যে বসবাস করতো। অথচ পশ্চিমা দুনিয়া তাদের স্বার্থে এই স্পষ্ট দিবালোকের মত সত্য ও নিস্পত্তিকৃত বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। যার ফলস্বরূপ এখন হিজড়া পরিচয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, হত্যা, রেপ, জোর করে বিকলাঙ্গ করে ফেলার মত ঘৃণ্য অপরাধও প্রতিনিয়ত আমাদের দেখতে হচ্ছে।

এমনকি পশ্চিমারা এখন বলছে লিঙ্গ কোন স্থির নির্ধারিত বা সৃষ্টিগত বিষয় নয়। মানুষের মধ্যে কেউ নাকি আছে তৃতীয় লিঙ্গের, কারো কারো নাকি লিঙ্গ পরিবর্তিত হয়ে যায়, কেউ নারী হলেও তার নাকি নারীর প্রতি আকর্ষন থাকতে পারে কিংবা কেউ পুরুষ হলেও নাকি তার অন্য পুরুষের প্রতি আকর্ষন থাকতে পারে অথবা এইধরনের প্রবণতাগুলোতে নাকি সময়ে সময়ে পরিবর্তন আসতে পারে। এই বিষয়টিকে Genderism বা লিংগবাদ বলে। পশ্চিমা কাফিররা লিবারালিজমের ভিত্তিতে এই কাল্পনিক চিন্তা তৈরি করেছে। আর এটা প্রমাণ করার জন্য তারা সমাজে হিজড়া আছে এই বাস্তবতা দেখিয়ে বলতে চায় যেহেতু হিজড়া আছে তাই LGBTQ তথা Lesbian, Gay, Bisexual, Transgender, Queer ইত্যাদিও আছে। পুঁজিবাদীরা পশ্চিমা কাফেরদের এইধরণের মিথ্যা, রুগ্ন ও ধ্বংসাত্মক চিন্তাকে পুঁজি হিসেবে গ্রহণ করে এখন বিশ্বজুড়ে ব্যবসার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। উপরোক্ত খবরে যেমন হিজড়া শব্দের স্থলে transgender ব্যবহার করেছে এবং দুটোকে একই দেখানো হয়েছে। অথচ transgender শব্দটি ১৯৭১ সালের আগে কখনও ব্যবহৃত হয়নি। এমনকি trans শব্দটি ১৯৯৬ সালের আগে সেভাবে ব্যবহৃত হয়নি। অথচ এখন Genderism, LGBTQ এর মত আন্দোলন তৈরি করে গঠন করা হয়েছে বিশাল trans industry। লিঙ্গ পরিবর্তন, LGBTQ Life Style ইত্যাদি হয়ে গেছে বিশাল ব্যবসার খাত। আর এতে যে সমাজ পরিবার সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাদে তাতে কিছু যায় আসে না। বরং তারা দেখে যে পরিবার প্রথা ভেঙ্গে গেলে মানুষ আরও এককেন্দ্রীক হয়ে গেলে সস্তায় শ্রম পাওয়া যায় এবং consumerism এর জন্য এটি ভালো।

প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টিগতভাবে নারী অথবা পুরুষ ব্যতিরেকে ভিন্ন কোন লিঙ্গ নেই, এবং এই লিঙ্গ পরিচয় স্থির ও অপরিবর্তনীয়। একজন ব্যক্তি নারী নাকি পুরুষ এটি একটি আইনগত সিদ্ধান্ত, এটিতে স্পষ্টতা বাধ্যতামূলক, তা না হলে সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে, সামাজিক সম্পর্কের ব্যবস্থাপনা করা যাবে না, বিবাদ নিস্পত্তি করা যাবে না। ইসলামও এই বিষয়ে স্পষ্ট সমাধান দিয়েছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “……আর (তিনি) বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী” (সুরা নিসা ১)। অর্থাৎ পুরুষ ও নারী ছাড়া আর কোন লিঙ্গের অস্তিত্ব নাই, আর কোন পরিচয় নাই। হিজড়ারা অন্যান্য প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের মত শুধুমাত্র একটি প্রতিবন্ধি বা অসুস্থ ব্যক্তি হিসেবে থাকবে। তাদের সুস্থ হওয়ার সুযোগ থাকলে চিকিৎসা করতে পারবে। কিন্তু লিঙ্গ পরিবর্তনের কোন সুযোগ ইসলামে নেই, তাই trans বা trans সংশ্লিষ্ট ব্যবসা বাণিজ্যের কোন সুযোগ থাকবে না। ইসলামে নারীর পুরুষ সাজা বা পুরুষের মত আচরণ করা বা বিপরীতটা করা নিষিদ্ধ। আবূ হুরায়রাহ্‌ (রা.) বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী, “রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) অভিসম্পাত করেছেন ঐসব পুরুষকে যারা নারীর অনুরূপ পোশাক পরে এবং ঐসব নারীকে যে পুরুষের অনুরূপ পোশাক পরিধান করে (আবু দাউদ)। ইসলামে সকল সামাজিক সম্পর্ক ও শৃংখলা সংশ্লিষ্ট সকল আইন কানুন এই নারী ও পুরুষকেন্দ্রীক। নারী ও পুরুষ হিসেবে তাদের উত্তরাধিকারসহ অন্যান্য অধিকার, দায়িত্ব ও বিচার এবং এমনকি আখিরাতের পুরস্কার ও শাস্তি নির্ধারিত হবে। এভাবে ইসলামে কেউই আইনের উর্ধ্বে থাকেনা, বিচ্ছিন্ন থাকেনা। একবার আলী (রা.) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর কাছে প্রসূত বাচ্চা পুরুষ-নারী নির্ধারণ করতে না পারলে তার বিধান কি- জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) জবাব দিলেন, “সে মিরাস পাবে যেভাবে প্রস্রাব করে” (সুনানে বায়হাকি কুবরা ১২৯৪)। অর্থাৎ অন্যকোনভাবে বুঝা না গেলেও টেকনিকালি অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রকৃতি অনুযায়ী তার লিঙ্গ নির্ধারণ করে দিবেন।

    –    মোহাম্মদ তালহা হোসেন

“ছাত্রলীগ করতে এসে আমি পঙ্গু হতে চলেছি, প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছি”

খবরঃ

বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। হুইলচেয়ারে হাসপাতালের বারান্দায় বসেছিলেন আয়াত উল্লাহ। তার চোখেমুখে হতাশা-ক্লান্তির ছাপ। এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। একদিকে সুস্থ হয়ে ওঠা, অন্যদিকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া; এ নিয়ে অনিশ্চয়তা তাকে ঘিরে ধরেছে। আয়াতের বাঁ পায়ের একটি রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। তিনি হেঁটে ক্যাম্পাসে ফিরে পড়াশোনাটা চালিয়ে নিতে পারবেন কি না, সেই দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমাতেও পারছেন না।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/xjvgkr18iu)

মন্তব্যঃ

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু মানুষের অবৈধ উপায়ে অগাধ সম্পদ ও ক্ষমতা অর্জনের প্ল্যাটফর্ম হল বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি। সেই কাজের ফুট সোলজার হলো বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্ররা। এর বিনিময়ে এরা পায় হলে সিট বাণিজ্য, ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, অপহরণ ইত্যাদি অন্যায় করার স্বাধীনতা, হলের ডাইনিংয়ে ফাও খাওয়াসহ পড়াশোনা পরবর্তী জীবনে সরকারী চাকুরীতে তদবিরে অগ্রাধিকার, ঠিকাদারিতে অনৈতিক সুবিধা ইত্যাদি। এই সামান্য সুবিধার জন্য তারা একে অপরের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এদের রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কিংবা জাহিদ ফারুক এর মত স্বার্থন্বেষী ব্যক্তিরা পায় ক্ষমতা, দলে এদের পদ সুসংহত হয়, মেলে দলীয় প্রধানের সুনজর! এভাবে স্বার্থের মন্দিরের সোপান তলে শত শত প্রাণ বলিদান হচ্ছে, শত অঙ্গহানী হচ্ছে, শিক্ষাজীবন ধ্বংস হচ্ছে। গত ১০ বছরে এসব সহিংসতায় খুন হয়েছে ২ ডজনেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। এঘটনাগুলোর সৈনিকদের যে আসলে ক্ষতি ছাড়া খুব বেশি বস্তুগত লাভ হয় না সেটাতো এই হতাশাগ্রস্থ পঙ্গু হতে চলার শিক্ষার্থী ‘আয়াত’ এর কথাতেই বোঝা যাচ্ছে। এমনকি এদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থাটুকু করে না এদের তথাকথিত ‘ভাই’ জাহিদ ফারুক এর মত নেতা(?) রা।

সহিংসতার এই যে রাজনীতি শুধু আফসোস, দীর্ঘশ্বাস ও হতাশা কিংবা অপরাধ-সহিংসতার পথ দেখায় সে রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার মতো মূর্খতা এসব তরুণ-যুবাদের কোনভাবেই মানায় না। সামান্য সুবিধার আশায় নিজের শ্রম-ঘাম-অঙ্গ এমন কি জীবনের বিনিময়ে কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির সমৃদ্ধি-উন্নতি এনে দেওয়া কেবলই বোকামি। রাজনীতি হতে হবে গণমানুষের অধিকার আদায়ের কিংবা শাসকের অন্যায়ের ও জুলুমের প্রতিবাদ তথা ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’-এর মাধ্যমে জনগণের দেখাশোনা করার। আল্লাহ্‌ সুবহানাল্লাহু ওয়া তা‘আলা এটাকে আমাদের জন্য ফরজ করেছেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “আমার পর এমন শাসক আসবে যারা অন্যায় ও অসত্য হুকুম প্রদান করার পরও কেউ তাদের বিরোধিতা করবে না। ফলে শাসক-শাসিত উভয়েই বানরের মতো ঘৃণ্য ও অপদস্ত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (তাবারানী)। এই রাজনীতির মাধ্যমে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র সন্তুষ্টি যেমন অর্জিত হবে তেমনি অন্যায়, জুলুম ও অসত্য দূরীভূত হয়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এভাবেই তারুণ্যের প্রকৃত সাফল্য নিশ্চিত হবে। হাশরের দিন যে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ব্যতীত কাউকে এক পাও এগোতে দেওয়া হবে না তার মধ্যে একটি হলো, ‘যৌবনকাল কিভাবে কাটিয়েছো?’

    –    মোঃ জহিরুল ইসলাম

“সিন্ডিকেট বন্ধ করলে তারা বাজারে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করবে: বাণিজ্যমন্ত্রী“

খবরঃ

ডিমের দাম আমরা ঠিক করতে পারি না। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখে না। আমাদের জানার দরকার- ডিমের সঠিক দামটা কত? সেটা জানতে মন্ত্রণালয় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে মাঠে নামতে পারে। তবে আমরা সিন্ডিকেট বন্ধ করে দিলাম, তারা (সিন্ডিকেট চক্র) বাজারে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিল; তখন ভোক্তারা পণ্য পেল না। এজন্য আমাদের সবদিকে খেয়াল রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক ছায়া সংসদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  (jugantor.com/national/705868/সিন্ডিকেট-বন্ধ-করলে-তারা-বাজারে-পণ্য-সরবরাহ-বন্ধ-করবে-বাণিজ্যমন্ত্রী)

মন্তব্যঃ

বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর (ওলিগার্ক) কাছে রাষ্ট্রের অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। এই ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী রাজনৈতিক দলগুলোর পৃষ্টপোষক হিসাবে কাজ করে এবং তাদের প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক ক্ষমতায় বসায়। ক্ষমতায় বসে এই সকল তথাকথিত গণপ্রতিনিধিরা আইন প্রণয়নের সার্বভৌম ক্ষমতা পেয়ে যায় কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইন প্রণয়নের ক্ষমতা জণগণের যা তথাকথিত গণপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাস্তব রূপ পায়। ক্ষমতায় গিয়ে তারা তাদের পৃষ্ঠপোষক ক্ষুদ্র পুঁজিপতিদের চাহিদা মত আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জনগণের সম্পদ লুটপাট করার অবারিত সুযোগ তৈরি করে দেয়। আবার কখনও এই পুঁজিপতিগোষ্ঠী নিজেরাই জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। বর্তমানে বাংলাদেশে পুঁজিপতিরা নিজেরা রাজনৈতিক নেতা হিসাবে নির্বাচিত হয়ে প্রত্যক্ষ ওলিগার্কি মডেল চর্চা করছে। রাজনৈতিক দলের বেশীর ভাগ নেতাই পেশায় ব্যবসায়ী। রাজনীতি তাদের ব্যবসায়িক পোর্টফোলিও আর একটি ভেঞ্চার (প্রকল্প) ছাড়া আর কিছুই নয়। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ একাদশ সংসদে ৬১ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী, জানুয়ারি ৫, ২০১৯, banglanews24.com)। পুঁজিপতি এই সকল তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের প্রধান কাজ হচ্ছে যেকোন মূল্যে তাদের ব্যক্তিগত এবং গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিল করা। বিদ্যুৎখাতে কুইক রেন্টাল এবং এলএনজি ব্যবসার খাতগুলো তাদের লুটপাটের প্রমাণ বহন করে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ একটি ‘লুটেরা মডেল’, জুলাই ০৯, ২০২৩, প্রথম আলো)। এই লুটেরা ক্ষুদ্র-পুঁজিপতি রাজনৈতিক গোষ্ঠী সরকারের মধ্যে এতটাই প্রভাবশালী যে এই প্রতিবেদনটি তৈরির সাথে জড়িত সরকারী আমলাদের বুলেটের গতিতে বরখাস্ত করা হয়। অতি-প্রভাবশালী ক্ষুদ্র পুঁজিপতি এই রাজনৈতিকগোষ্ঠীর মধ্যে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, উপদেষ্টাসহ এমন অনেকে রয়েছে। এরা শুধু রাষ্ট্রের সম্পদ চুরি করে ক্ষান্ত হচ্ছে না বরং তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য যেমনঃ চাল, তেল, লবণ, ডিমের সিন্ডিকেট তৈরি করে বাজারকে অস্থির করে জনগণের পকেট কাটছে। শিল্প প্রতিমন্ত্রীর বয়ান এই ভয়াবহ দুষ্ট চক্রের কিছু দুর্বৃত্তের নাম এবং ভয়াবহতা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে মাত্র, প্রকৃত্র চিত্র আরও ভয়ঙ্কর।  (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ মন্ত্রীদের ভেতর একটা সিন্ডিকেট আছে, মে ১৬, ২০২৩, দৈনিক যুগান্তর)। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যখন সিন্ডিকেটের অংশ ও সুবিধাভোগী তখন সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি পওয়া কি আদ্য সম্ভব? এই রকম সিন্ডিকেট শুধু বাংলাদেশের বাস্তবতা নয় বরং পশ্চিমা গণতন্ত্রের অনুসারি সবগুলো দেশেই একই চিত্র বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ, ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর পরিবার বা মেক্সিকোর কার্লোস, তার পরিবার এবং তার ঘনিষ্ঠ শ্রেনীর অতি ধনী হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াও একই রকম। সুতরাং, পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে জনগণ কখনও সিন্ডিকেট নামধারী এই দুর্বৃত্ত ক্ষুদ্র পুঁজিপতি-রাজনৈতিক নেতাদের কবল থেকে মুক্তি পাবে না।

খিলাফত ব্যবস্থায় পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মত আইন বা রাষ্ট্রীয় নীতিকে ইচ্ছামত পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই খলিফাকে (শাসককে) কেন্দ্র করে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মত ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী (ওলিগার্কি) সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ নাই। এছাড়াও, সিন্ডিকেটের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে মজুতদারী। ইসলামে মজুতদারী একটি গর্হিত অপরাধ। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুত করে রাখে সে ব্যক্তি আল্লাহ্‌’র দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং তার প্রতি আল্লাহ্‌ অসন্তুষ্ট হন” (মিশকাত, হাদিস নং-১৩১৬)। কৃত্রিম সংকট মোকাবেলা করার অজুহাতে পুঁজিবাদী সরকারগুলো পণ্য-দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করে জুলুমকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। ইসলামের দৃষ্টিতে কৃত্রিমভাবে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা গ্রহণযোগ্য নয়; বরং বাজারকে তার স্বাভাবিক গতিতেই চলতে দিতে হবে। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় একবার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেল। লোকেরা বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনি আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। তিনি (সাঃ) বললেন, “মূলত আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা‘ই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকারী, রিজিক সঙ্কীর্ণকর্তা, প্রশস্তকর্তা ও রিজিকদাতা। আমি আমার রবের সঙ্গে এভাবে সাক্ষাতের আশা রাখি যে, তোমাদের কারো যেন আমার বিরুদ্ধে রক্ত বা সম্পদ, কোনো বিষয়ে কোনোরূপ দাবি না থাকে” (তিরমিযি, হাদিস নং- ২৪৫)। খিলাফত রাষ্ট্রের কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনা এবং রাষ্ট্রের থেকে কোন প্রকার অবৈধ সুবিধা পাওয়ার সুযোগ না থাকায় আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রে পুঁজিবাদি রাষ্ট্রের বিদ্যমান সিন্ডিকেটের ধারণা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হবে, ইনশা’আল্লাহ।

    –    মোঃ সিরাজুল ইসলাম    

“টিনএজার শিক্ষার্থীরা কেন আত্মহত্যা করেন?”

খবরঃ

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে স্কুল–কলেজ পর্যায়ে আত্মহত্যা করেছেন ৪৪৬ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে স্কুল ও সমমানের পর্যায়ে ৩৮০ জন, কলেজ ও সমমানের পর্যায়ে ১০৬ জন এবং শুধু মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫৪ জন। … তাদের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি হেঁটেছেন জীবনাবসানের পথে। .. আত্মহত্যার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মান–অভিমানই তাদের আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। এদের মধ্যে বড় অংশের অভিমান ছিল পরিবারের প্রতি। বিশ্বজুড়েই ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে বিষণ্নতা মহামারীর আকার ধারণ করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোয় বিষণ্নতার জন্য কাউন্সেলিং বা ওষুধ গ্রহণ এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। (https://www.prothomalo.com/onnoalo/treatise/pfhqcs7h75)

মন্তব্যঃ

প্রতিটি জীবনাদর্শে সুখের একটি নিজস্ব সংজ্ঞা আছে এবং এটি কীভাবে অর্জন করা যায় তার একটি রূপরেখা রয়েছে। সমাজ এই ভিত্তিতেই ব্যক্তিদের তৈরি করতে চায় এবং তাদের এই সুখ অনুসরণের পথ দেখায়। পশ্চিমা সমাজ ও এর অনুসরণকারী অন্যান্য সমাজগুলো পুঁজিবাদী মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যা বস্তুগত আনন্দের সাধনাকে জীবনের মূল লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করেছে। এটি মনে করে সম্পদ ও বিলাসিতা অর্জনের মাধ্যমে ইন্দ্রিয় পরিতুষ্টিই জীবনের সুখ এবং সন্তুষ্টির একমাত্র মৌলিক উত্স। এটি অল্প বয়স থেকেই তরুণদের শেখায় এই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল যতটা সম্ভব আনন্দ অর্জন করা এবং এর উপর ভিত্তি করে জীবনের সকল কাজ নির্ধারিত করা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সম্পদ ও বস্তুগত অর্জনের দৌড়ে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তিই এগিয়ে থাকে, আর বাকিরা নাগালের বাইরে থাকায় প্রচন্ড মানসিক চাপে পড়ে হতাশায় ভুগতে থাকে। আর এই ইদুর দৌড়ে অগ্রগামীরা তাদের আত্মাকে তৃপ্ত করতে পারে না, কারণ জীবনের লক্ষ্য হিসাবে ঈন্দ্রিয়গত সুখের অন্বেষণ সমগ্র সমাজকে এমন একটি লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করে যা মানুষকে কখনোই সন্তুষ্ট করে না। Stuart Adamson, John McAfee এর মত সাফল্য অর্জনকারীরাও হতাশায় পতিত হয়ে আত্মহত্যা করে। একটি ইঁদুর-বিড়াল দৌড় যেখানে বিজয়ীও মনে করে যে সে ইঁদুর হয়ে আছে। চাওয়া-পাওয়ার পার্থক্যের কারণে নিজের জীবনকে তারা অপ্রয়োজনীয়, অর্থহীন মনে করেন; বিষণ্নতায় ডুবে যায় এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে জীবন আর বেঁচে থাকার যোগ্য নয়। বাস্তবতা গভীর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে উদারনৈতিক স্বাধীনতার ধারণা; ঈন্দ্রিয়গত সুখ, স্বার্থ এবং সুবিধার পুঁজিবাদী মাপকাঠিতে জীবনের সফলতা পরিমাপ করাই হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মূল কারণ। এটি মানুষের জীবনে একটি আধ্যাত্মিক শূন্যতা তৈরি করেছে; মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য, সফলতা এবং সুখকে ভুলভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। ফলে ব্যক্তিবাদী এবং বস্তুবাদী জীবনধারাকে লালন করে মানুষ অবশেষে পুঁজিবাদী জীবনাদর্শের সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছে, যার চুড়ান্ত পরিণতি হল আত্মহত্যা!

বিপরীতে, ইসলাম, একমাত্র প্রকৃত জীবন ব্যবস্থা, যা মানুষের সুখ অন্বেষণের জন্য অন্তঃসারশূন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করে না। ইসলাম একজন মানুষের সবচেয়ে বড়/মৌলিক প্রশ্নটির উত্তর দেয় এবং এটিকে জীবনের পরে এবং এই পৃথিবীর পূর্বের জীবনের সাথে সংযুক্ত করে এই জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য প্রদান করে। ইসলামী আকীদাহ্‌, যা ঘোষণা করে মানুষ, জীবন এবং মহাবিশ্বের পিছনে একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন যিনি সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ এ জীবনে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র আদেশ-নিষেধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত, এ জীবন শুধুমাত্র আল্লাহ্‌’র দেয়া জীবনব্যবস্থা অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে, মানুষ আল্লাহ্‌’র আদেশ নিষেধ মেনে চলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার দিবসে হিসাবের সম্মুখীন হবে। এই জবাবদিহিতা মানুষের এ জীবন ও তার পরবর্তী জীবনের সাথে একটি সম্পর্ক তৈরী করে। জীবনে আল্লাহ্‌’র আদেশ নিষেধ অনুযায়ী কাজগুলোকে পরিচালিত করার চূড়ান্ত লক্ষ্যই হয় আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টি অর্জন। এই উত্তর মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্যের (ফিতরাহ্‌) সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, তার বুদ্ধিবৃত্তিক মনকে আশ্বস্ত করে এবং তার হৃদয়কে প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ করে। ফলে মানুষের উচ্চতর আকাংখা মানবরচিত মূল্যবোধ (নিজের চাহিদা পূরণ, ঈন্দ্রিয়গত পরিতুষ্টি বা উপভোগ) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না বরং সুবহানাহু ওয়া তা’আলার আদেশ ও নিষেধ দ্বারা নির্ধারিত হয়, যা কখনও পরিবর্তিত হয় না কিংবা বিবর্তিতও হয় না। সুতরাং, আল্লাহ্‌’র আদেশ ও নিষেধ অনুযায়ী কাজ করাই হচ্ছে একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে মানুষের প্রকৃত প্রশান্তি অর্জিত হয়। “যারাই বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহ্‌’র স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে; জেনে রেখ, আল্লাহ্‌’র স্মরণের মাধ্যমেই (অন্তরের) সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করা যায়” (সূরা আর-রা’দঃ ২৮)।

    –    সুজন হোসেন