working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 95

 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৯৫ তম সংখ্যা । ১৭ জুলাই, ২০২৩

এই সংখ্যায় থাকছে: 

 

“জনগণ সচেতন হলেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব: মেয়র তাপস”

“রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকল ইজারা নিয়ে টেক্সটাইল শিল্প স্থাপন করতে পারবেন উদ্যোক্তারা”  

“দেশে খনিজ সম্পদের অর্থমূল্য ২.২৬ ট্রিলিয়ন ডলার”

“লাখো কোটি ডলারের ‘উইন্ডফল’ মুনাফা করছে বড় কোম্পানিগুলো”

“সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসে কী ধরণের ঝুঁকিতে পড়বেন আপনি?”

“দেশের উন্নয়ন জোরদারে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করুন: প্রধানমন্ত্রী”

“জনগণ সচেতন হলেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব: মেয়র তাপস”

খবরঃ

জনগণ সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। বুধবার (১২ জুলাই) সকালে পশ্চিম ধানমণ্ডির মধুবাজার জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে মেয়র তাপস সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। মেয়র তাপস বলেন, ‘একটি উৎসই কিন্তু পুরো এলাকার সবার জন্য জনস্বাস্থ্যের হুমকি তৈরি করতে পারে। একটি পাত্রে জমে থাকা পানির ভেতর প্রচুর পরিমাণে লার্ভা এবং মশা হওয়া সম্ভব। সুতরাং, প্রথমত আমাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। পানি জমে লার্ভা বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়, এরকম কোথাও কোনো পরিত্যক্ত পাত্র বা সামগ্রী রাখা যাবে না। নিজেদের আঙিনা, নিজেদের স্থান, নিজেদের স্থাপনা আমরা যদি পরিষ্কার রাখতে পারি, তাহলে আমরা অবশ্যই এই এডিস মশা এবং ডেঙ্গুকে প্রতিরোধ করতে পারব। ১০০ ভাগ নির্মূল করতে পারব এটা আমরা বলি না, কিন্তু জনগণ সচেতন হলে আমরা এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব।’ (bonikbarta.net/home/news_description/347089)

 

মন্তব্যঃ

সেক্যুলারিজমে (জীবন থেকে দ্বীনকে আলাদা করা) বিশ্বাসী শাসকদের জন্য নিজেদের দায়িত্বকে এড়িয়ে জনগণের উপর দায় চাপানো নতুন কোন বিষয় নয়। সেক্যুলার বিশ্বাস অনুযায়ী স্রষ্টার উপর বিশ্বাস এবং পরকালের জবাবদিহিতার সাথে বর্তমান জীবনের কোন সম্পর্ক নেই। এগুলো যার যার ব্যক্তিগত বিষয় একজন চাইলে তা বিশ্বাস করতে পারে আবার নাও করতে পারে। ফলে এখানে পরকালে নিজেদের কর্মের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা-এর নিকট দায়ী থাকার চিন্তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। ফলে মানুষ তার প্রতিটি কর্মের পিছনে বস্তুগত লাভকে একমাত্র অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখে। ফলে, একজন রাজনীতিবিদ যখন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয় তখন এটিকে সে ব্যবহার করে নিজের সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের সিড়ি হিসেবে। ফলে তখন তার মনোযোগের সবটাই থাকে নিজের বস্তুগত উন্নয়নের দিকে। জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলতা তখন তাদের কাছে বোঝা হিসেবে মনে হয়। ফলে এরা স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের দায় এড়িয়ে জনগণকে দোষী সাব্যস্ত করে। ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ সরকার এখন জনগণের উপর দোষ চাপাবে এটিই কি স্বাভাবিক নয়!

ডেঙ্গু মূলত একটি মশাবাহিত রোগ। এডিস মশা হচ্ছে এ রোগের বাহক। প্রতি গ্রীষ্মেই এ রোগের প্রাদূর্ভাব বাংলাদেশে ঘটে থাকে। কিন্তু তারপরও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনরকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখি না। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রধান কাজ হচ্ছে মশা নিধন করা। কিন্তু কিছু দায়সারা মশার ঔষুধ ছিটানো ছাড়া আমরা আর কোন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা চোখে দেখি না। ফলে, মশার বিস্তার প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ার ফলেই এ রোগটি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ তৈরী হয়। দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা ১০ টাকার টিকিট কেটে চক্ষু পরীক্ষা করার নাটক করলেও দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার কি অবস্থা তা সকলেরই জানা। দেশে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আর যদি বেসরকারী হাসপাতালে কেউ চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পায়-ও তাহলেও তা এতটাই ব্যয়বহুল যে দেশের বেশিরভাগ পরিবারের পক্ষেই তা নেয়া সম্ভব নয়। কিংবা নিলেও তা করতে হয় ধার-দেনা করে। একদিকে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ অপ্রতুল আর অন্যদিকে বেসরকারী হাসপাতালের ব্যবসা- এই দুই চক্রের মধ্যে পড়ে সাধারণ জনগণের এখন নাভিশ্বাস। তৃতীয়ত, চিকিৎসা খরচ শেষে ও চিকিৎসাকালীন সময়ে বেকার থাকার কারণে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষেরই আরোগ্য-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক বিপাকে পড়তে হয়। এক্ষেত্রেও আমরা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখি না। মূলত রোগ প্রতিরোধ, বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান ও চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান – এ কাজগুলোর কোনটিই এই সেক্যুলার শাসকেরা করবে না।

সুতরাং আমরা যদি এই দুনিয়ামুখী শাসকদেরকে আমাদের শাসনের দায়িত্ব দিয়ে রাখি তাহলে আমাদের এই দুরবস্থার কোনরকম উন্নতি হবে না। বরং ক্রমাগত অবস্থার অবনতি হতে থাকবে। আমাদের প্রয়োজন এমন শাসক নিয়োগ করা যারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা-কে ভয় করবে এবং নিজেদের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। আর তা সম্ভব হবে একমাত্র ইসলামি ব্যবস্থায় অর্থাৎ খিলাফত রাষ্ট্রে। তাক্বওয়াবান খলীফা রাষ্ট্র পরিচালনাকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করবেন এবং জনগণের দেখভালের সকল বিষয়কেই তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে গ্রহন করবেন। ফলে, জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার স্বার্থে সকল প্রকার রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে পর্যাপ্ত গবেষণা ও করনীয় তিনি বাস্তবায়ন করবেন। পাশাপাশি সাধারণ জনগনও রাষ্ট্র কর্তৃক মৌলিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলোতে শিক্ষা লাভ করবেন শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে। ফলে ডেঙ্গুর মত রোগ রাষ্ট্র ও জনগণ দুই দিক থেকেই প্রতিরোধের মুখে পড়বে। অপরদিকে খিলাফত রাষ্ট্রে জনগণের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা খলিফার অন্যতম দায়িত্ব। খিলাফতের ইতিহাসই এর জ্বলন্ত উদাহরণ। তাছাড়া খিলাফত রাষ্ট্র রোগীর আরোগ্য পরবর্তী সময়ে সে যাতে অর্থ কষ্টের মধ্যে পতিত না হয় সে জন্যে তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থাও করত। সুতরাং খিলাফত রাষ্ট্র রোগ প্রতিরোধ, উন্নত ও বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান ও চিকিৎসা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ডেঙ্গুর মত রোগকে মোকাবেলা করবে।

    –    মো. হাফিজুর রহমান

“রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকল ইজারা নিয়ে টেক্সটাইল শিল্প স্থাপন করতে পারবেন উদ্যোক্তারা”  

খবরঃ 

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকল ইজারা নিয়ে এখন থেকে টেক্সটাইল শিল্প স্থাপন করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ক নানা শর্তাবলী এবং রেফারেন্সে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। সম্প্রতি তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা নয়টি পাটকল বেসরকারি খাতে পাটকল ইজারা দেওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রণয়ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলের নিয়ন্ত্রক এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠানটি ইজারার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ বছর করেছে। বিজেএমসির চেয়ারম্যান আনিস মাহমুদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এখন উদ্যোক্তারা শুধু পাট ও পাটজাত পণ্যে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক নয়। তাছাড়া, টেক্সটাইল রপ্তানি সম্ভাবনার একটি প্রতিশ্রুতিশীল খাত,”। ২০২০ সালের ১ জুলাই বড় লোকসান এবং অত্যধিক উৎপাদন খরচের কারণে সমস্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকল একযোগে বন্ধ করে দেয় সরকার। সেসময় প্রায় ২৫০০০ কর্মী চাকরি হারান। এরপর সরকার বন্ধ পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৫টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলের মধ্যে ১৭টি ইজারা দেওয়ার জন্য ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রথম আন্তর্জাতিক দরপত্র দেওয়া হয়।বিজেএমসি জানায়, খুলনা ও চট্টগ্রাম জোনে তিনটি পাটকলের জন্য তিনজন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা বাছাই করা হয়েছে। এছাড়া ভারত ও যুক্তরাজ্যের কিছু উদ্যোক্তা পাটকলগুলোর ইজারা পেতে আগ্রহী ছিল। (https://www.tbsnews.net/bangla/অর্থনীতি/news-details-156574)

মন্তব্যঃ 

ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী আমল থেকে বহু বছর পর্যন্ত পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ পৃথিবীতে প্রথম অবস্থানে ছিল। দেশের অর্থনীতিতে বহু বছর ধরে স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিল পাটশিল্প। সোনালি আঁশ ও রুপালি কাঠি উভয়ই বেশ সম্ভাবনাময় দিক। আমাদের আদমজী পাটকল ছিল বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল হিসেবে স্বীকৃত। অথচ পশ্চিমা কাফির উপনিবেশবাদীদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে এদেশে ধারবাহিকভাবে ক্ষমতায় আসা পুঁজিবাদী সরকারগুলো কর্তৃক আমাদের সম্ভাবনাময় পাটশিল্পের পদ্ধতিগত ধ্বংস চলমান। প্রথমত, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো এখনো পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে স্থাপিত মেশিনারি দ্বারা উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সুদীর্ঘকাল অতিবাহিত হলেও পাটকলগুলোর যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণের জন্য নতুন বিনিয়োগ এবং এ পর্যন্ত কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়নি। ফলে পাটকলগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে লোকসান গুণতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) সময়মতো কৃষকের কাছ থেকে কাচা পাট কেনে না। পাট মন্ত্রণালয় থেকে সঠিক মৌসুমে পাট কেনার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় না। বেসরকারি পাটকল মালিকরা কম দামে পাট কিনে গুদামজাত করে, আর বিজেএমসি মৌসুম চলে গেলে ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি দামে নিম্নমানের পাট কেনে। সময়ের পাট অসময়ে কিনতে গিয়েই বিজেএমসি কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর ব্যবস্থাপনা খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানও বাড়ছে। বিজেএমসি লোকসানের কারণে শ্রমিকদের যেমন মজুরি দিতে পারছে না, তেমনি অর্থের অভাবে পাট ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না। ফলাফলস্বরুপ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো লোকসানের চক্র থেকে বের হতে পারছে না। তৃতীয়ত, এদেশের দুবৃত্ত পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠীরা আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মুক্ত বাণিজ্য নীতি অনুসরণে চালু কল-কারখানা বন্ধ ও বিক্রির নীতিমালা গ্রহণ করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে পুরোপুরি বন্ধ করে বেসরকারী খাতে ছড়ে দেয়ার নীলনক্সা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পাটশিল্প বেসরকারিকরণের প্রধানতম কুশীলব বিশ্বব্যাংক ১৯৯৪ সালে জুট সেক্টর এডজাস্টমেন্ট ক্রেডিট (জেএসএসি) চুক্তির অধীনে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ২৪৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ করে। পাটশিল্পকে শক্তিশালী করা নয়, বরং এই ঋণের উদ্দেশ্য ছিল পাটশিল্পকে ও রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া। বিশ্বব্যাংকের এই প্রেস্ক্রিপশনেই ২০০২ সালে এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিল বন্ধ করা হয় এবং উপনিবেশবাদীদের বহুজাতিক কোম্পানির বাজার সম্প্রসারনের জন্য নির্মিত হয় আদমজী ইপিজেড। এই ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে পুঁজিবাদী হাসিনা সরকার ২০২০ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সব পাটকল একযোগে বন্ধ করে এগুলোকে বেসরকারি খাতে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিগোষ্ঠীর কাছে ইজারা দেয়া শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্য এখানে অত্যন্ত পরিস্কার, অর্থাৎ আমাদের বুনিয়াদি উৎপাদন শিল্পটির মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া এবং আমাদের অর্থনীতিকে তৈরি পোশাক শিল্পের (যদিও এটা শিল্প নয় বরং সস্তা শ্রম, কারণ আমরা শুধু সেলাই করি) মতো খাতের উপর অধিক নির্ভরশীল করে তোলা। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে ইজারা দিয়ে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিগোষ্ঠীকে বস্ত্রশিল্প স্থাপনের অনুমতি প্রদান করেছে বিশ্বাসঘাতক এই সরকার।

পশ্চিমাদের ত্রুটিযুক্ত পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক মডেল বাস্তবায়িত রেখে পাটশিল্পের মত মত দেশীয় শিল্পখাতকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। পাটশিল্পের মত দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও টেকসই শিল্পায়নের সামর্থ্য অর্জনে খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করা জরুরী। খিলাফত রাষ্ট্রের ব্যাপক শিল্পায়ন নীতির অংশ হিসেবে পাট শিল্পের বিকাশ করা হবে। পাটশিল্পকে শক্তিশালী করতে খিলাফত রাষ্ট্র দেশের বিদ্যমান পাটকলগুলোকে ঢেলে সাজাবে, এগুলোর আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিবে এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিবে। খিলাফত রাষ্ট্র গণমালীকানাধীন কিংবা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প ও কল-কারখানাগুলোকে বেসরকারী মালিকানায় কিংবা বিদেশীদের মালিকানায় ছেড়ে দিবে না। ফলে আমাদের নিজস্ব শিল্প-কারখানাগুলো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। খিলাফত রাষ্ট্র পাটের মতো বুনিয়াদি উৎপাদন শিল্পকে কেবল সুরক্ষিত ও বিকশিতই করবেনা, বরং এর পাশাপাশি সমর-ভিত্তিক ভারী শিল্পের দ্রুত বিকাশ সাধনের আকাঙ্খা এবং প্রস্তুতিও থাকবে। কুরআন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রকাশিত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭৪ অনুযায়ী: “শিল্প বিভাগ শিল্প সংক্রান্ত সকল কার্যাবলীর দায়িত্বে থাকবে, তা ভারীশিল্প হোক, যেমন: ইঞ্জিন, মেশিন, পরিবহন, পণ্যাদি ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি তৈরি, কিংবা হালকা শিল্প নির্মাণ হোক। একইভাবে, কারখানাসমূহ হোক সেটা গণমালিকানাধীন সম্পদ কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পদের অংশ, সেগুলোর সাথে সমর শিল্পের সম্পর্ক থাকতে হবে”। এই প্রতিরক্ষা দৃষ্টিভঙ্গি কেবল অর্থনীতিতে সম্পদ ও কর্মসংস্থানই সৃষ্টি করবে না, বরং ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করবে।

    –    সিফাত নেওয়াজ

“দেশে খনিজ সম্পদের অর্থমূল্য ২.২৬ ট্রিলিয়ন ডলার”

খবরঃ

বাংলাদেশে মজুদ খনিজ সম্পদের বাজারমূল্য নিরূপণ করেছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রাকৃতিকভাবে মজুদ খনিজ সম্পদের মূল্য ২ দশমিক ২৬ ট্রিলিয়ন (২ লাখ ২৬ হাজার কোটি) ডলারের বেশি। তবে জিএসবির এ হিসাবে দেশে মজুদ প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যকে ধরা হয়নি। (https://bonikbarta.net/home/news_description/345607)

মন্তব্যঃ

যদি পূর্ণাংগ ও বিস্তারিত জরিপ করা হতো তাহলে এই পরিমাণ নিঃসন্দেহে আরও অনেক বেড়ে যেতো। প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ইত্যাদি এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। যদিও বলা হচ্ছিল বাংলাদেশের গ্যাসের রিজার্ভ দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু প্রকৃত অর্থে গ্যাসের জন্যেও এখনো দেশে পূর্ণাংগ অনুসন্ধান হয়নি। সমূদ্রের ব্লকগুলোতেও তেল-গ্যাস পাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রতিবেদনেই পেট্রোবাংলার সাবেক কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন,  “‌অন্য সম্পদের বিষয় বাদ দিলেও শুধু দেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলেই গ্যাস ও জ্বালানি তেল মজুদের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে”। এছাড়া কক্সবাজার, মহেশখালী, পটুয়াখালীসহ সাগর তীরের বালুতে আছে মূল্যবান সব খনিজ সম্পদ। এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৭ ধরনের খনিজ বালি। এমনকি এখানে পাওয়া তেজষ্ক্রিয় পদার্থ পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ও পারমাণবিক চুল্লিতে শক্তি উৎপাদক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। (দৈনিক আনন্দবাজার, ২৪ নভেম্বর ২০২১)। এদিকে জামালগঞ্জে কয়লার সম্ভাব্য মোট পরিমাণ ৫৫০ কোটি টন, যা বিশ্বের কয়লার সবচেয়ে বড় খনির (যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইয়োমিংয়ের) উত্তোলনযোগ্য কয়লা থেকে ৩ গুনেরও বেশি। (দৈনিক জনকন্ঠ, ২১ মে ২০২৩)। বলাবাহুল্য প্রতিবিদেনটিতে ভুস্তরের উপরিভাগে থাকা বিপুল সহজলভ্য ও সহজ ব্যবহারযোগ্য সম্পদ ধরা হয়নি।

এধরণের বিপুল পরিমাণ কৌশলগত প্রাকৃতিক সম্পদ যে দেশে আছে এবং আরও আছে বিপুল কর্মক্ষম জনসম্পদ, সেই দেশতো একটি নেতৃত্বশীল সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার কথা। অথচ আমরা গরীব ও পরনির্ভরশীল একটি দেশ হয়ে আছি! আমাদের নাকি প্রযুক্তি নাই অথচ আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়াররা উড়োজাহাজ ভরে ভরে আমেরিকা-বৃটেন তথা পশ্চিমে গিয়ে সেসব দেশের টেকনোলজী কোম্পানীগুলোকে সমৃদ্ধ করছে! বাপেক্সের মত প্রতিষ্ঠান যদি একটি খনিতে সফল হয় তাহলে তারা এরকম হাজারটিও সফলভাবে করতে পারবে এটাই স্বাভাবিক। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা ও পরিকল্পনা।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই স্বাভাবিক কাজটি না করে আল্লাহ্‌’র দেয়া সম্পদ দেশের সরকারগুলো বিদেশীদের হাতে তুলে দিচ্ছে এবং বিদেশীদের খুশি করার জন্য এলএনজি, তেল, বিদ্যুৎ, কয়লা সবই আমদানী করছে। কারণ এই সরকারগুলো আল্লাহ্‌’র রজ্জুকে শক্তভাবে আকড়ে না ধরে কাফির উপনিবেশবাদী পশ্চিমাদেরকে আকড়ে ধরেছে। এই অঞ্চলে বৃটিশ উপনিবেশবাদ শেষ হলেও আমরা আজও পশ্চিমাদের নব্য-উপনিবেশবাদী ব্যবস্থার জালে আষ্টেপৃষ্ঠে বন্দি। যার শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্র হচ্ছে এই জালের এমন এক শক্ত দড়ি যা সরকার কিংবা বিরোধী সব দলকেই পশ্চিমাদের সাথে বেঁধে রাখে। যা এখানকার রাজনৈতিক আলোচনায় একেবারে স্পষ্ট। যেমন শেখ হাসিনা বলছে ২০০১ সালে গ্যাস দিতে রাজি না হওয়ার সে ক্ষমতা পায়নি। আবার ২০০৮ সালে তিনি ক্ষমতায় এসে বলেন “তার সরকার সমঝোতার (আমেরিকা-বৃটেন-ভারত) সরকার”। নব্য উপনিবেশের এই ব্যবস্থায় মার্কিন ডলার আরেক শক্ত দড়ি, যা দিয়ে বিশ্বের সব প্রকৃত সম্পদ শুধু কাগজ দিয়েই এই পশ্চিমারা উপভোগ করছে। এই ব্যাপক ডাকাতিকে আইনি কাঠামো দেয় আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান। ডলার, যাকে পেট্রো ডলার বলা হয়, তার আগ্রাসনে সরকারের অবস্থা এখন এতই বেগতিক যে এধরনের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের খবর পেয়েও তাদের আনন্দিত হওয়ার সুযোগ নাই। আমাদেরকে গোলামীতে বেঁধে রেখে দরিদ্র করে রাখার আরেক দড়ি হচ্ছে জাতিসংঘ ও তার অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসমূহ। এই বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে যখন দেশে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে তখন বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব আমিনা যে মোহাম্মদ বলেন, “বাংলাদেশের উচিত কয়লার পরিবর্তে রুপান্তরিত শক্তি ব্যবহার করা”!

অর্থাৎ এই নব্য উপনিবেশবাদী ব্যবস্থার ম্যান্ডেটের সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থা যতদিন থাকবে ততদিন এসব সম্পদের সুবিধা আমরা পাবো না। একমাত্র আল্লাহ্‌’র রজ্জু (ইসলামী জীবনব্যবস্থা) দ্বারা আবদ্ধ খলিফা এসকল সম্পদকে সকল দেশী-বিদেশী লোভী লুটেরাগোষ্ঠীর হাত থেকে উদ্ধার করতে পারেন। তিনি গণতন্ত্রের ফাঁদ থেকে জনগণকে মুক্ত করবেন, ডলার ও ডলারভিত্তিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পরিত্যাগ করবেন এবং নব্য উপনিবেশবাদী ব্যবস্থার সকল আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করবেন। তিনি মুসলিম উম্মাহ্‌’র শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসব সম্পদের সর্বোত্তম উত্তোলন ও ব্যবহার নিশ্চিত করে এগুলো পরিপূর্ণভাবে সকল নাগরিকের কল্যানে ব্যয় করবেন।

    –    মোহাম্মদ তালহা হোসেন

“লাখো কোটি ডলারের ‘উইন্ডফল’ মুনাফা করছে বড় কোম্পানিগুলো”

খবরঃ

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের ৭২২টি বৃহত্তম কোম্পানি সম্মিলিতভাবে বছরে এক লাখ কোটি ডলারের বেশি মুনাফা করছে। অর্থ্যাৎ এই কোম্পানিগুলো অত্যধিক মুনাফা করেছে, যা ব্যবসার জগতে ‘উইন্ডফল প্রফিট’ হিসেবে পরিচিত। …২০২২ সালে তাদের মুনাফা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার কোটি ডলার।… জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত বছর জ্বালানি কোম্পানিগুলো উইন্ডফল মুনাফা করেছে। …কোভিড ও তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২২ সালে বিশ্বের ৫৮টি দেশের অন্তত ২৫ কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন। অথচ এ সময়ে বিশ্বের অনেক খাদ্য ও বেভারেজ কোম্পানি, ব্যাংক ও ওষুধ কোম্পানি বিপুল মুনাফা করেছে। (https://www.prothomalo.com/business/world-business/6y88atnflp)

মন্তব্যঃ

যখন বিশ্ব দিন দিন নানাবিধ অর্থনৈতিক সংকটে উপনীতি হচ্ছে, তখন একই সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানিগুলো দিন দিন মুনাফার পাহাড় গড়ছে। অক্সফামের অ্যাডভোকেসি বিভাগের প্রধান ক্যাটি চক্রবর্তীর মতে, ২০২১-২২ সালে বিশ্বে শুধু ১৮টি খাদ্য ও বেভারেজ যে মুনাফা করেছে তা পূর্ব আফ্রিকার ক্ষুধার্ত মানুষের জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় সহায়তার দ্বিগুণ। অথচ, বিশ্বব্যাংকের সূত্রমতে, ২০২৩ সালে শুধু দৈনিক ১.৯০ ডলার ইনকামের হিসেবে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৮ বিলিয়নের মধ্যে ১.২ বিলিয়ন লোকই মাল্টিডাইমেনশনাল দরিদ্র/হত দরিদ্র। ২-১২ ডলার হিসেবে এই সংখ্যা ৩ বিলিয়ন। এর সাথে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, হাই-ট্যাক্স, মানুষের দ্রব্য বা সেবার ক্রয়ক্ষমতাসহ আরও নানাবিধ ফ্যাক্টর আলোচনায় আনলে সংখ্যাটি আরও কয়েক বিলিয়ন। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ৩ বছরে আরও সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ দরিদ্র/হত দরিদ্র হয়েছে।

বিষয়টা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক, একদিকে দরিদ্রলোকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে আর অন্যদিকে এসব কোম্পানির মুনাফাও। কেন এমন হচ্ছে, তা বুঝতে হলে আমাদের বিশ্বব্যাপী চলমান বর্তমান পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গভীরে ডুব দিয়ে বুঝতে হবে কেন এই ব্যবস্থাকে পূঁজিবাদী অর্থনীতি বলা হয় এবং কিভাবে এই ব্যবস্থা পূঁজিপতিদের পূঁজিকে দিন দিন বাড়ায় আর সাধারণ জনগণেরটা কমায়। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা খবরে উল্লেখিত পূঁজিবাদী ব্যবস্থার নীতি সুদহার এবং জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব এসব কোম্পানির এবং সাধারণ জনগণের উপর কেস স্টাডি হিসেবে নিচ্ছি। নীতি সুদহার হচ্ছে, একটা অঞ্চলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইনফ্লেশন/মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যে সুদহারটা নির্ধারণ করে দেয় কিংবা যে সুদহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দেয়। সাধারণত ব্যাংক যদি সুদহার বাড়ায় তাহলে স্বল্পপূঁজির জনগণ ব্যাংকে টাকা জমা রাখা শুরু করে মুনাফার আশায়। আর ব্যাংক সুদহার কমালে জনগণের টাকা জমা রাখার প্রবণতা কমে। এখন, যেকোন বড় পূঁজিপতি কোম্পানির ব্যবসা বড় করার অর্থ জোগান আসার উৎস হচ্ছে এই ব্যাংক। অধিক সুদে অধিক মুনাফার আশায় জনগণ যখন ব্যাংকে টাকা রাখে, সেই সুবাধে ব্যাংক সেই টাকা এসব পূঁজিপতি বড় কোম্পানিকে দেয় যাতে তারা ব্যবসা বাড়িয়ে মুনাফা বাড়াতে পারে। আবার, জনগণ যদি ব্যাংকে টাকা রাখা কমিয়ে দেয় তখন লোকাল ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েও এসব বড় কোম্পানিকেই দেয়। অর্থ্যাৎ, টাকা যে উৎস থেকেই আসুক না কেন, এটি সবসময় এসব পূঁজিপতি বড় কোম্পানিগুলোর হাতেই যায়। তাই এদের মুনাফা বাড়ে কিন্তু, বাকিদের না। আবার, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতেও পূঁজিপতি বড় কোম্পানিগুলো প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে লাভবান হয়। এক, যেসব কোম্পানি সরাসরি জ্বালানি উত্তোলনের সাথে সম্পর্কিত তারা জ্বালানির দামবৃদ্ধিতে অধিক মুনাফা করে যদিও তাদের উৎপাদন খরচ আগের মতই থাকে। পূঁজিবাদী ব্যবস্থার মালিকানার স্বাধীনতা নীতির কারণে এই ব্যবস্থা গুটিকয়েক কোম্পানির কাছে জ্বালানির মত গুরুত্বপূর্ণ গণমালিকানাধীন সম্পদগুলোকে তুলে দেয়, তাই এরা যখন খুশি যেভাবে খুশি এর দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা মার্কেট থেকে তুলে নেয়। আবার, যেসব কোম্পানি জ্বালানির উত্তোলন করেনা কিন্তু তাদের ব্যবসা কোন না কোনভাবে জ্বালানির সাথে সম্পর্কিত তারাও জ্বালানির দামবৃদ্ধির দোহাই দিয়ে দ্রব্যের দাম অধিক বাড়িয়ে অতি মুনাফা তুলে নেয়। এক্ষেত্রেও লাভবান হয় এই বড় কোম্পানিগুলো। শুধুমাত্র এরাই বড় অংকের টাকা ব্যাংক থেকে পায় ব্যবসা করার জন্য আবার এদের হাতেই বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকে যেহেতু ক্ষুদ্রপূঁজির কেউ বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা রাখেনা। এইভাবেই, পূঁজিবাদের উত্থান থেকে গত শত বছরে এসব বড় কোম্পানি বিশ্বের ৬৩% সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। আমাদের দেশের চিত্রই ঠিক একই রকম। ক্যাব এর সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি পণ্যেই স্বাভাবিক মুনাফার চেয়ে গড়ে ৪০ ভাগ বেশি মুনাফা করে ব্যবসায়ীরা। আর কোন অজুহাত পেলে তো কথাই নেই।” এবং এই জন্যই এই ব্যবস্থার নাম পূঁজিবাদী ব্যবস্থা।

এমতাবস্থায় বিশ্বকে পূঁজিবাদের এমন আগ্রাসী ছোবল থেকে রক্ষা করতে পারে কেবল ইসলাম। ইসলামে সুদকে অত্যন্ত কঠোরভাবে হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন “হে মুমিনগণ! তোমরা সুদ খেও না ক্রমবর্ধিতভাবে, আল্লাহ্‌-কে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার” (সূরা আলি ইমরানঃ১৩০)। তাই, এখানে সুদহার নিয়ন্ত্রণ করে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকার প্রবাহ শুধু একদিকে যাওয়ার পূঁজিবাদী ব্যবস্থার কোন সুযোগই থাকবে না। আবার, ইসলাম কোন পাবলিক সম্পদকে কোন ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির হাতে তুলে দিবে না। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “তিনটি জিনিসের মালিক সবাই, আগুন (সব ধরণের জ্বালানি), পানি (সব ধরণের মিনারেল), এবং চারণভূমি”। তাই জ্বালানীর দাম নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে কেউ বাজার নিয়ন্ত্রণ কিংবা অতি মুনাফাও করতে পারবে না। সুতরাং, আমাদেরকে অবশ্যই বুঝতে হবে পূঁজিবাদ নামক সাপের দংশন থেকে মুক্তির ঔষুধ একমাত্র ইসলাম।

    –    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

“সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসে কী ধরণের ঝুঁকিতে পড়বেন আপনি?”

খবরঃ

বাংলাদেশের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে কয়েক লাখ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে, যেখানে তাদের নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর রয়েছে। এসব তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চে এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ঘটনাটি নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে এবং বিভিন্ন ধরণের সাইবার অপরাধ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। এশিয়া-প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (অ্যাপনিক)-এর নির্বাহী সদস্য ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, “এই তথ্য ফাঁসের কারণে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়েই ঝুঁকিতে পড়বে, তথ্য প্রযুক্তির ভাষায় যাকে বলে ‘আইডেন্টিডি থেফট’ বা পরিচয় চুরি হওয়া।” (https://www.bbc.com/bengali/articles/c51vdzx0l74o)

মন্তব্যঃ

সরকারি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকদের ব্যাক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়া নিঃসন্দেহে বড় ধরনের বিপর্যয়। জনপরিসরে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য চলে আসায় ভুক্তভোগী নাগরিকরা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পরে গেলেন। এসকল তথ্য ব্যবহার করে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ভুক্তভোগী নাগরিকদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ চুরি, পণ্য ক্রয় এবং “আইডেন্টি” ব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধ করার সুযোগ পেতে পারে। নাগরিকদের নিকট থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারাটা নিঃসন্দেহে বিশ্বাসঘাতকতা। সরকার একদিকে, যথাযথ প্রস্তুতি না নিয়ে “ডিজিটাল বাংলাদেশের” নামে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পরিসেবাকে অনলাইনে নিয়ে এসে জনগণকে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানে বাধ্য করেছে। অন্যদিকে, বায়োমেট্রিক তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, এমনকি বহুজাতিক মোবাইল কোম্পানীর ফোনের সিম কিনার জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে জনগণের অতি সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যমে অতি-বিপদজনক ডাটাবেস তৈরি করার সুযোগ দিয়ে জনগণের নিরাপত্তা ঝুঁকিকে বৃদ্ধি করে দিয়েছে।  সরকারের এই বহুমাত্রিক তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্য যে জনগণকে নজরদারির মাধ্যমে ক্ষমতা সুসংহত রাখা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্মনিরেপেক্ষ-পুঁজিবাদী শাসকেরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মাধ্যম ও অজুহাতে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যমে জনগণকে কঠোর নজরদারির জালে আটকে জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কারণ তারা জানে তারা জনগণের নিকট অত্যন্ত অজনপ্রিয়। পক্ষান্তরে, তারা জনগণের ব্যক্তিগত জীবন এবং তথ্যকে পবিত্র মনে করে না। তাই তারা জনগণের অতি-ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেস তৈরি করে জনগণের প্রত্যাহিক কর্মকান্ডকে নজরদারি করছে।

ইসলামে জনগণের ব্যক্তিগত জীবন এবং ব্যক্তিগত তথ্য অতি পবিত্র বিষয়। এই বিষয়গুলোর সুরক্ষা দেয়া শাসক তথা খলিফার জন্য ফরজ দায়িত্ব। এক্ষেত্রে কোনপ্রকার ব্যাত্যয় একটি গর্হিত অপরাধ, যার জন্য ঐ বিষয়ে দায়িত্বশীলরা কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হবেন। খলিফা ওমর (রা.)-এর শাসনামলে একটি ঘটনা থেকে ইসলামের নিকট জনগণের ব্যক্তিগত জীবন ও তথ্যের পবিত্রতার একটি উদাহরণ পাওয়া যায়। একবার রাতের বেলা টহল দেয়ার সময় তিনি এক ব্যক্তির কণ্ঠ শুনতে পেলেন। সে গান গাইতেছিল। তার সন্দেহ হলো। তিনি তার সঙ্গী আবদুর রহমান ইবন আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে প্রশ্ন করলেন, ঘরটি কার? …. অতঃপর আবদুর রহমান ইবন আওফ বললেন, আমার অভিমত হচ্ছে যে, আমরা আল্লাহ্‌ যা নিষেধ করেছেন তা-ই করে ফেলছি।  আল্লাহ্‌ আমাদের তা করতে নিষেধ করে বলেন, ‘তোমরা গোপন বিষয় অন্বেষণ কোরো না’ (সুরা হুজুরাত: ১২)।  তখন ওমর (রা.) ফিরে এলেন এবং তাকে ছেড়ে গেলেন। [মুস্তাদরাকে হাকিম:৮২৪৯, মাকারিমুল আখলাক: আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাফর আল খারায়েতি:৩৯৮, ৪২০, মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক :১০/২২১)। এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, খুঁজে খুঁজে মানুষের গোপন দোষ-ত্রুটি বের করা এবং তারপর তাদের পাকড়াও করা শুধু ব্যক্তির জন্যই নয়, ইসলামী সরকারের জন্যও অনুমোদিত নয়। আর একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “শাসকেরা যখন সন্দেহের বশে মানুষের (নাগরিকদের) দোষ অনুসন্ধান করতে শুরু করে, তখন তা তাদের (নাগরিকদের) চরিত্র নষ্ট করে দেয়’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৮৯)। অবশ্যই, নাগরিকদের সেবা প্রদান এবং প্রশাসনিক কাজে খিলাফত রাষ্ট্র তথ্য ভান্ডার তৈরি করতে পারে। এই তথ্য ভান্ডারে প্রয়োজনীয় তথ্য ব্যতীত অন্যকোন প্রকার তথ্য সংরক্ষণ করা হবে না এবং তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে কারণ নাগরিকদের ব্যাক্তিগত তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা খলিফার জন্য একটি শারীয়াহ্‌ দায়িত্ব।

    –    মোঃ সিরাজুল ইসলাম    

 “দেশের উন্নয়ন জোরদারে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করুন: প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশিপের (পিএমএফ) ফেলোসহ উচ্চ শিক্ষার্থীদের দেশের ব্যাপক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য দেশি ও বিদেশি শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের সঙ্গে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাভাবনা প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী শীর্ষ র্যাংকিংয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) আয়োজিত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১০ জনকে পিএইচডি ফেলোশিপ ও ৩৮ জনকে মাস্টার্স ফেলোশিপ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।… (https://www.jugantor.com/national/694016/দেশের-উন্নয়ন-জোরদারে-নিজস্ব-বুদ্ধিমত্তা-প্রয়োগ-করুন-প্রধানমন্ত্রী)

মন্তব্যঃ

বুদ্ধিমত্তা তৈরি হয় প্রয়োজনবোধ থেকে। যখন দেশের মানুষকে একটি নেতৃত্বশীল জাতি হওয়ার ভিশন দেয়া হয় এবং সেই লক্ষ্যে ব্যাপক শিল্পায়ন ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়, তখন সেই প্রয়োজনবোধ থেকে দেশের মানুষের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ হয়। লক্ষ্য ও ভিশন ঠিক থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এক একটা নতুন নতুন আবিষ্কারের গবেষণাগারে পরিণত হয়। মহামূল্যবান খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য, অবারিত উর্বর ভূমি, সম্পদে ভরপুর সমুদ্রের অংশ, কৌশলগত ভূরাজনৈতিক অবস্থান, সর্বোপরি ১৮ কোটি জনগণের এই বিশাল মহামূল্যবান সম্পদ থাকা সত্ত্বেও যখন একটি দেশের ২ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে তখন বুঝতে হবে সমস্যাটা ‘সম্পদের অভাব’ এর নয় বরং অযোগ্য পরিচালকদের এবং তাদের পরিচালনার পদ্ধতির। যখন উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না, দেশের অর্থনীতি আমদানি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে, দেশের প্রধান আয়ের খাত রেমিটেন্স হয়ে যাচ্ছে, তখন পিএমএফ ফেলোদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান “জনগণের অর্থে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশে ফিরে জনগণ ও দেশের কল্যাণে কী অবদান রাখছেন” অর্থহীন। এমনকি দেশের সবচেয়ে বেশি বাজেটের যে মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে সেগুলোতে পর্যন্ত দেশের প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ানদের কর্মসংস্থান নগণ্য। ফলত, শিক্ষার্থীরা সামান্য চাকরির নিশ্চয়তার জন্য কিংবা অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য বিসিএস দিয়ে সরকারের সেবাদাসে পরিণত হচ্ছে। এজন্য দায়ী পশ্চিমাদের দালাল শাসক ও তাদের উপনিবেশবাদী শাসন ব্যবস্থা, যাদের সর্বোচ্চ ভিশন হচ্ছে পশ্চিমাদের পদলেহন করে ক্ষমতায় টিকে থাকা কিংবা কুক্ষিগত করা। এজন্য তারা দেশের সম্পদসমূহ থেকে শুরু করে সার্বভৌমত্ব পর্যন্ত বিসর্জন দিতে পারে। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে ১৫ টি গ্যাস ব্লকের সবগুলোই শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিলকে ইজারা দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে সরকার। বিগত করোনার সময়ও আমরা দেখেছি গবেষণার মূল কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দিয়ে বিদেশ থেকে টিকা এনে এই খাতে ২৩ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে সরকার ও তদসংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীরা। তাই এদের নেতৃত্বে কখনো নেতৃত্বশীল জাতি তৈরি হবে না, জাতির মেধাবীদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশও হবে না। সুবিশাল জনসম্পদ ক্রমশই বোঝায় পরিণত হবে।

এ সকল অযোগ্য (রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ভাষায় ‘রুয়াইবিদা’) নেতৃত্ব অপসারণ জরুরী। আরো জরুরী একটি সঠিক ও নির্ভুল ব্যবস্থা ও এর পরিচালনার জন্য নিষ্ঠাবান শাসকগণ। সঠিক ও নির্ভুল ব্যবস্থা একমাত্র ‘আল-আদল’ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা-এর নিকট থেকেই আসা সম্ভব। এই ব্যবস্থাটি হলো খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার ভিশন হল মুসলিম জাতিকে মানবজাতির নেতৃত্বের আসনে বসানো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “তোমরাই হচ্ছো মানব জাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের পাঠানো হয়েছে…” (আল-ইমরানঃ ১১০)। এই লক্ষ্যে খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা অন্য জাতির কাছে ‘প্রকৃত কল্যাণ’ তথা ইসলাম পৌঁছানোর দায়িত্ব বহন করবে। আর নেতৃত্বশীল জাতি ব্যতীত কোন জাতি অন্য জাতির জন্য অনুসরণীয় হতে পারে না। এজন্য খিলাফত রাষ্ট্র জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিকিৎসা, শিল্প, সমৃদ্ধি সকল কল্যাণকর বিষয়ে নেতৃত্ব বহন করবে। ব্যাপক ভারী শিল্পায়নের মাধ্যমে সম্ভাব্য সকল সম্পদের শ্রেষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করে অবারিত গবেষণা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ১৯২৪ সালে ধ্বংসের আগ পর্যন্ত খিলাফতের চৌদ্দশত বছরের ইতিহাস থেকে এটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত।

    –    মোঃ জহিরুল ইসলাম