Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৭২ তম সংখ্যা । ৯ ডিসেম্বর, ২০২২
এই সংখ্যায় থাকছে:
“ভুয়া কোম্পানী খুলে ইসলামী ব্যাংকের ৯৫০০ কোটি টাকা লুট”
“বেসরকারিভাবে জ্বালানি তেল আনলে কী সুবিধা-অসুবিধা হবে?”
“বিদেশি হস্তক্ষেপে কল্যাণ হয় না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী”
“খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা”
“২৫-৩০ হাজার টাকা ঋণের মামলায় পাবনায় ১২ কৃষক কারাগারে”
“ঢাবি এলাকায় গাড়ির নিচে আটকে পড়া নারীকে নিয়েই ছুটল গাড়িটি”
“ভুয়া কোম্পানী খুলে ইসলামী ব্যাংকের ৯৫০০ কোটি টাকা লুট”
খবরঃ
ইসলামী ব্যাংক থেকে নভেম্বরে তুলে নেওয়া হয়েছে ২,৪৬০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে তিন ব্যাংকে সন্দেহজনক ঋণ ৯,৫০০ কোটি টাকা। ব্যাংকের নথিপত্রে নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেডের অফিসের ঠিকানা বনানীর বি ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ভবন। ঋণ পাওয়া মার্টস বিজনেস লিমিটেডের ঠিকানা বনানীর ডি ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে মিলল রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের অফিস। তবে মার্টস বিজনেস লাইন নামে তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এভাবেই ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে দুই কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে দুই হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র। সব মিলিয়ে নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। একইভাবে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে এ কোম্পানিগুলো। ফলে এ তিন ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদসহ দেনা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। (www.prothomalo.com/business/bank/oaenrytlsd)
মন্তব্যঃ
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জনগণের কষ্টর্জিত অর্থের পাইকারী ও নিয়মতান্ত্রিক লুণ্ঠনের আরেকটি ঢেউ দেশবাসীকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে এই ‘স্বতঃস্ফূর্ত লুটপাটের’ পেছনে রয়েছে স্বার্থান্বেষী একটি শক্তিশালী মহল যারা দুর্নীতিবাজ শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা ব্যাপক আশীর্বাদপুষ্ট ও পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত। এদেশে ব্যাংক লুটের সংস্কৃতি ও লুটেরাদের দায়মুক্তি দেয়ার রীতি বহু পুরোনো, এমনকি ১৯৭৪ সালের মহাদুর্ভিক্ষের চরম সংকটের সময়েও তারা ব্যাংক লুটের মাধ্যমে জনগণের অর্থ আত্মসাতের স্বাদ নেয়া হতে বিরত থাকেনি। এদেশের ক্ষমতাসীন ধারাবাহিক সরকারগুলো ব্যাংকিং সেক্টরে অর্থ লুটপাটকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে তাদের সহযোগীদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করে। বেসিক ব্যাংক লুটের মূল কুশীলব ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি, কে হালদার, যারা সরকারের খুবই ঘনিষ্টজন। দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে, বেসিক ব্যাংকের ৪৫০০ কোটি টাকা, হলমার্ক গ্রুপ কর্তৃক রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ৪,৩৫৭ কোটি টাকা, অ্যাননটেক্স গ্রুপ কর্তৃক জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং চারটি ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ্ গ্রুপ কর্তৃক ১,২০০ কোটি টাকা লুটের ঘটনা। এতো কিছুর পরও সরকার নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে উল্টো ব্যাংকের মালিকানা বদল করে এগুলোকে গুটিকয়েক পরিবার ও তাদের শিল্প গ্রুপের হাতে তুলে দিয়েছে। বর্তমানে ৪০-৫০টি পরিবারের হাতে দেশের ব্যাংকখাত কুক্ষিগত, যার মধ্যে এক পরিবারের হাতেই আছে সাতটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান (সুত্রঃ প্রথম আলো, ২৮ নভেম্বর ২০২২)। যারা ব্যাংকের মালিকানা দখলের পর আত্মীয়-পরিজনের নামে কিংবা কাগুজে কোম্পানী খুলে পারস্পরিক যোগসাজশে ও সমঝোতার মাধ্যমে একে অন্যের ব্যাংক থেকে ঋণের নামে লুণ্ঠন করা শুরু করেছে। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা গ্রহণের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ নানা উপায়ে বিভিন্ন কোম্পানির নামে মোট ৩০ হাজার কোটি ঋণ হিসেবে বের করে নিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা দখল করে বিপুল ঋণ আত্মসাতের ঘটনা স্বয়ং হাসিনা সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদেই স্বীকার করেছে, দেশের ৫৫টি ব্যাংকের পরিচালকেরা একে অন্যের ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬১৬ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছেন (সুত্রঃ প্রথম আলো, ০২ ডিসেম্বর ২০২২)।
অথচ আমরা লক্ষ্য করেছি, পশ্চিমা কাফিরদের নব্য উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফ এদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার শর্ত হিসেবে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনার শর্ত দিচ্ছে, অথচ সরকার মদদপুষ্ট ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধের কোন শর্ত দিচ্ছে না। কারণ, আইএমএফ খুব ভাল করেই জানে এদেশের শাসকগোষ্ঠী ব্যাপক দুর্নীতিগ্রস্ত; আর দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে তারা যতবেশী দেশের অর্থনীতিকে বিধ্বস্ত করবে, ততদ্রুতই তারা আইএমএফের ঋণের দ্বারস্থ হবে।
প্রকৃতপক্ষে আমরা ইসলামী জীবনব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থতার ফলস্বরূপ বিশ্বাসঘাতক রক্তচোষা শাসকদের অধীনে এই ধরনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতেই থাকবো যতক্ষণ না নব্যুওয়াতের আদলে খিলাফত রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামকে সামগ্রিকভাবে বাস্তবায়ন করি। খিলাফত রাষ্ট্রে রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তাকওয়া (খোদাভীতি) যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুর্নীতি ও লুটপাটের স্পিরিট গোড়া থেকেই নির্মূল হবে। ইসলামী রাষ্ট্র এমন একটি খোদাভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে যেখানে মানুষ অবৈধ লেনদেন এবং দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ আহরণের আকর্ষন হারিয়ে ফেলবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “যে ব্যক্তি অবৈধভাবে (সম্পত্তি) উপার্জন করেছে, বিচারের দিন সে যা অর্জন করেছে তা বহন করবে” (আল ইমরান: ১৬১)। খিলাফত রাষ্ট্র সুদভিত্তিক লেনদেন বিলোপসাধনের মাধ্যমে Fractional Reserve Banking ব্যবস্থা দূর করবে, যার ফলে রাজস্ব সংগ্রহ ও ব্যয়ে শৃঙ্খলা নিশ্চিত হবে। ইসলামী কোম্পানী কাঠামো একজন ব্যক্তির পুঁজি সংগ্রহের সীমারেখা নিয়ন্ত্রণ করে এবং অর্থনীতির বৃহৎ রাজস্ব-উৎপাদনকারী ও পুঁজির নিবিড় খাতগুলোতে রাষ্ট্র কর্তৃক আধিপত্যের অনুমতি দেয়। এছাড়া খিলাফত রাষ্ট্র উম্মাহ্’র সম্পদ ও ভাগ্য লুণ্ঠনকারী অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে যাতে চুরি বা জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধিতে প্রলুব্ধ হওয়া থেকে জনগণকে রক্ষা করা যায়।
– মোহাম্মদ সিফাত
“বেসরকারিভাবে জ্বালানি তেল আনলে কী সুবিধা-অসুবিধা হবে?”
খবরঃ
বাংলাদেশের সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের আমদানি ও বিক্রির বিষয়টি তারা বেসরকারি খাতের জন্য খুলে দেয়ার পরিকল্পনা করছেন।… বিশেষ করে বাংলাদেশকে সাড়ে চারশো কোটি ডলার ঋণ দেবার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, তার একটি হচ্ছে জ্বালানি তেলের ওপর থেকে ভর্তুকি কমিয়ে আনা। সেখানে জ্বালানির মূল্য-নির্ধারণ পদ্ধতি বাজারের ওপরেও ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমদানি করা ডিজেলের বড় অংশ পরিবহন খাত এবং কৃষিকাজে সেচের কাজে ব্যবহার হয়।… জ্বালানি তেল আমদানি ও বিক্রিতে বেসরকারি খাত যুক্ত করা হলেও দাম নির্ধারণে এ ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। (www.bbc.com/bengali/articles/cd1d3k4gex9o)
মন্তব্যঃ
জ্বালানি তেলের উপর থেকে ভর্তুকি কমিয়ে আনা, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে জ্বালানি তেল আমদানির অনুমতি প্রদান এসবগুলোই যে আইএমএফের ঋণের শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে হচ্ছে তা সকলেই পরিষ্কার বুঝতে পারছে। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে এই সংস্কারগুলো দেশের অর্থনীতি বা সাধারণ মানুষের উপর কী বিরূপ প্রভাব ফেলবে সেটা নিয়ে সচেতন মানুষ মাত্রই শঙ্কিত। কিন্তু কিছু কপোট অর্থনীতিবিদ, স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী যারা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন বিশ্বকাঠামোর বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারে না তারা আইএমএফের ঋণ ও সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলোকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, আইএমএফ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অর্থনীতিকে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের জন্য উন্মুক্ত করে পশ্চিমা বহুজাতিক কোম্পানীর অনুপ্রবেশ নিশ্চিত করে। আমরা ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষ করেছি, সরকারি ভর্তুকি তুলে নেবার ফলে জনগণকে জ্বালানি তেলের জন্য উচ্চমূল্য গুনতে হচ্ছে। তার উপর জ্বালানি তেলের আমদানি ও তার বাজারজাতকরণ যখন বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হবে তখন প্রাইভেট কোম্পানিগুলো ইচ্ছামত যে মুনাফা নির্ধারণ করবে সেই চড়ামূল্যও বেচারা জনগণকেই পরিশোধ করতে হবে। আইএমএফের ঋণের শর্ত হিসেবে জ্বালানির মূল্য-নির্ধারণ পদ্ধতি বাজারের উপর ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অথচ আমরা জানি পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বৃহৎ প্রাইভেট কোম্পানিগুলো ইচ্ছে মাফিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে অতিমুনাফা ভোগ করে; যেমন, কিছুদিন পূর্বে আমরা দেখেছি কিভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট থেকে হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। এসবক্ষেত্রে সরকার জনগণের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে, বরং পুঁজিপতিদের পক্ষ নেয় কারণ পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পুঁজিপতিরাই সরকারের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক আর জনগণ ঠুঁটো জগন্নাথ। আর দ্বিতীয় আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, পশ্চিমা বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সরকার থেকে লাইসেন্স নিয়ে তেল আমদানি শুরু করবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারের দেশী কোম্পানিগুলোর যেটুকু সক্ষমতা আছে তা হারিয়ে যাবে এবং এভাবে এক পর্যায়ে দেখা যাবে জ্বালানি তেলের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের জন্য আমাদেরকে শুধু আমদানি নির্ভরতাই নয় বরং সম্পূর্ণভাবে বহুজাতিক কোম্পানির কৃপার উপর নির্ভর করতে হবে। যা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকির বিষয়।
ইসলাম জ্বালানি খাতকে বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেয়াকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে, যা সুস্পষ্ট শারী‘আহ্ দলিল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। এমনকি এই খাতকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাতেও দেয়া হয়নি, বরং এই খাত গণমালিকানাধীন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: “তিনটি জিনিসে সকল মুসলিম অংশীদার: পানি, চারণভূমি ও আগুণ”। কুর‘আন-সুন্নাহ্’র আলোকে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ১২৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, “গণমালিকানাধীন সম্পদ হচ্ছে জনগোষ্ঠী কর্তৃক অধিকৃত বস্তুর সুফল ভোগ ও ব্যবহারের শারী’আহ প্রদত্ত অনুমতি”। খিলাফত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরের খনি থেকে হোক কিংবা আমদানীকৃত হোক জ্বালানী তেলের মালিক সর্বাবস্থায় জনগণ, এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কাজ হবে তার ব্যবস্থাপনাকে তত্ত্বাবধান করে জনগণের দোরগোড়ায় তার সুবিধাকে পৌঁছে দেয়া। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র জ্বালানী তেলের উৎপাদন ও অনুসন্ধানকে বহুজাতিক কোম্পানীগুলো হতে মুক্ত করে গণমালিকানায় হস্তান্তর করবে এবং নতুন নতুন কুপ অনুসন্ধানে তাগিদ দিবে। তাছাড়া, মুসলিম ভুখণ্ডগুলো এক খিলাফতের ছায়াতলে থাকবে বিধায় অন্যান্য ভূখণ্ডের খনিজ সম্পদের সকল মুসলিমের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তারা এগুলোকে বিনামূল্যে বা নামমাত্র সার্ভিস চার্যের বিনিময়ে ভোগ করতে পারবে। আমরা খুব দ্রুত আমদানি নির্ভরতা হতে মুক্ত হতে পারবো এবং পশ্চিমা কাফিরদের আধিপত্যকে চিরতরে বিদায় করতে পারবো।
– আবু যায়েদ
“বিদেশি হস্তক্ষেপে কল্যাণ হয় না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী”
খবরঃ
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বিদেশিদের হস্তক্ষেপে কোনো রাষ্ট্রের কল্যাণ হয় না। তিনি বলেন, “কিছু কিছু লোক বিদেশিদের কাছে গিয়ে চান, তারা একটা চাপ দিক। এটা খুবই দুঃখজনক। তারা হস্তক্ষেপ করলে কোথাও ভালো ফল আসে না। বিদেশিরা কখনোই মঙ্গলের কাজে আসে না। (bangla.bdnews24.com/bangladesh/nvyzhv0onl)
মন্তব্যঃ
আওয়ামী-বিএনপি রাজনীতিকগোষ্ঠী মুখে যাই বলুক আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের বিদেশী দুতাবাসমুখী দৌড়াদৌড়ী বেড়ে গেছে। তারা দিনের বেলায় প্রতারণামূলক রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদানে ব্যস্ত থাকলেও প্রায় রাতেই ব্যস্ত থাকছেন মার্কিন কিংবা বৃটিশ রাষ্ট্রদূতদের সাথে ডিনার মিটিংয়ে (আওয়ামী লীগ নেত্রীর বাসায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার, ৬ডিসেম্বর, ২০২২ বাংলা ট্রিবিউন)। এই পররাষ্ট্র মন্ত্রীই ভারতে গিয়ে তার সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য ‘যা যা করা দরকার’, তা-ই করার অনুরোধ করেছেন। সরকার একদিকে তার বিপক্ষে যায় বিদেশীদের এমন মন্তব্যগুলোকে দেশের জন্য ক্ষতিকর আখ্যা দিচ্ছে, আবার আইএমএফের বিভিন্ন শর্ত বাস্তবায়ন, টিকফা, আকসা, জিসোমিয়া, ইত্যাদি বাণিজ্য ও সামরিকসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে দরকষাকষী করছে, এমনকি বিদেশীদের হাতে রাখতে জনগণের টাকা ব্যয় করে বিদেশে লবিষ্ট নিয়োগও দিচ্ছে। আবার বিএনপিগোষ্ঠী সরকার পরিবর্তনে প্রকাশ্যে বিদেশীদের হস্তক্ষেপের আহ্বান করছে এবং বলছে এটি তথাকথিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শত্রু কিংবা মিত্র নির্বাচনে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদরা মুলতঃ কনফিউসড। ‘স্বার্থকেন্দ্রীক বন্ধুত্ব’ সবসময়ই আপেক্ষিক ও পরিবর্তনশীল হয়, স্থির কোন বিষয় হয় না এবং এটি দিনশেষে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে যায়। আমেরিকা, বৃটেন কিংবা ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের মত পশ্চিমা শক্তিগুলোর আশ্রয়ে থেকে রাজনীতি করে তাদের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করা তাদের মুখে মানায় না। আমেরিকা ইসলামের উত্থান ও চীনকে ঠেকাতে এই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক পুণঃনির্ণয় করছে এবং সে অনুযায়ী তার স্বার্থকে সংক্ষরণে অঙ্গীকারবদ্ধ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দিচ্ছে আর প্রতিবন্ধক মনে করা সরকারগুলোকে সমালোচনা করছে, এমনকি পরিবর্তনেরও চেষ্টা করছে। তাই যেই আমেরিকা ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী ২০০৮-এর আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন দিয়েছে, তারাই এখন তার কঠোর সমালোচনা করছে। আল্লাহ্ই একমাত্র নির্ধারণ করেন আমাদের জন্য ভালো কী আর মন্দ কী, তিনিই ঠিক করে দিবেন কার সাথে বন্ধুত্ব হবে আর কার সাথে শত্রুতা। খিলাফত রাষ্ট্র এর ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়।
অন্যদিকে, যারা ইসলামের ভিত্তিতে রাজনীতি করেন তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামিন নির্ণয় করে দিয়েছেন কে বন্ধু আর কে শত্রু। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করনা, তারা পরস্পর বন্ধু; আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে নিশ্চয়ই সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেননা” (সূরা মা‘য়িদা: ৫১)। ইসলাম দেশগুলোকে দুইভাগে ভাগ করেছে: মুসলিম অধ্যুষিত ভূখণ্ডসমূহ এবং কাফির অধ্যুষিত ভূখণ্ড। মুসলিম অধ্যুষিত ভূখণ্ড সবসময়েই আমাদের বন্ধু। তাদের ক্ষেত্রে নীতি হবে ইসলামী তথা খিলাফত রাষ্ট্রের মূল ভূখন্ডের সাথে একত্রিত করা। কাফির অঞ্চলগুলোকে ইসলাম দুইভাগে বিভক্ত করেছে, আমেরিকা, ইসরাইল, ভারতের মত শত্রুরাষ্ট্র যারা মুসলিমদের সাথে এই মুহুর্তে যুদ্ধরত এবং চীন, রাশিয়ার মত সম্ভাব্য শত্রুরাষ্ট্র যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। শত্রুরাষ্ট্রের সাথে কোন অবস্থাতেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হবেনা। আর যারা সম্ভাব্য শত্রুরাষ্ট্র তাদের সাথে চুক্তির শর্তানুযায়ী সম্পর্ক হবে, যেখানে ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থকে সর্বাবস্থায় সমুন্নত রাখতে হবে।
কুর‘আন-সুন্নাহ্’র আলোকে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ১৮৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী: চারটি বিষয় বিবেচনার ভিত্তিতে বর্তমান বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে ইসলামীর রাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। এগুলো হচ্ছে: ১. ইসলামী বিশ্বের বর্তমান রাষ্ট্রগুলোকে এমনভাবে দেখা হবে যেন তারা একটি অভিন্ন রাষ্ট্র, তাই তারা পররাষ্ট্র নীতির অধীনে পড়বে না। তাদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র নীতির বাস্তবতা বিবেচনা করা হবে না। বরং, এ রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি একক রাষ্ট্রে পরিণত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ২. যে সকল রাষ্ট্র অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক অথবা বন্ধুত্বের চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ, তাদের সাথে চুক্তির শর্তানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চুক্তিতে উল্লেখিত থাকলে ঐ সকল রাষ্ট্রের নাগরিকরা শুধুমাত্র পরিচয়পত্র দেখিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রে প্রবেশের অধিকার পাবে, এক্ষেত্রে তাদের পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে না। তবে চুক্তিতে এটি উল্লেখিত থাকতে হবে যে, ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিকগণও ঐ রাষ্ট্রে অনুরূপ প্রবেশের অধিকার রাখবে। ঐ রাষ্ট্রগুলোর সাথে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট পণ্য সামগ্রীর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে; এই শর্তে যে, ঐ পণ্য সামগ্রী আমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় এবং এ (অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক) সম্পর্ক ঐ সকল রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করবে না। ৩. যে সকল রাষ্ট্রের সাথে আমাদের কোন চুক্তি নেই, সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র যেমন বৃটেন, আমেরিকা ও ফ্রান্স, এবং ঐ সকল রাষ্ট্র যাদের আমাদের রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা আছে, যেমন রাশিয়া, ঐ সকল রাষ্ট্রগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক সম্ভাব্য যুদ্ধাবস্থা হিসাবে বিবেচিত হবে। তাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সকল সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের সাথে আমাদের কোনরূপ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি নেই। যতক্ষণ না তাদের সাথে প্রকৃতপক্ষেই যুদ্ধের সূচনা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের নাগরিকগণ আমাদের রাষ্ট্রে পাসপোর্ট ও ভিসার মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারবে যা প্রতিটি ব্যক্তির প্রতিটি ভ্রমণের জন্য সীমাবদ্ধ থাকবে। ৪. যে সকল রাষ্ট্র ইতিমধ্যেই আমাদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় আছে, যেমন ইসরাইল, তাদের সাথে যুদ্ধাবস্থার ভিত্তিতেই সকল সম্পর্ক গড়তে হবে। তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যেন তারা আমাদের সাথে প্রকৃতপক্ষেই যুদ্ধরত অবস্থায় আছে, সেটি যুদ্ধবিরতিই হোক কিংবা অন্যকোন অবস্থাই হোক না কেন। ঐ সকল রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের আমাদের রাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
– মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা”
খবরঃ
বিশেষ ছাড়ের মধ্যেও ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকের ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল নাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত খেলাপি ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ কমাতে ঢালাও সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনার কারণে গেল বছরও ঋণ পরিশোধে ছাড় ছিল। এছাড়া ঋণ পুনঃতফশিল, পুনর্গঠনসহ নানা ছাড়ে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। (www.jugantor.com/todays-paper/first-page/621203/খেলাপি-ঋণ-দেড়-লাখ-কোটি-টাকা)
মন্তব্যঃ
আর্থিক প্রতিষ্ঠান (ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান) পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই অঙ্গটি ব্যবহারের মাধ্যমে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের সঞ্চয়গুলো পুঁজিপতিদের পকেটে যায়। পুঁজিবাদী অর্থনীতির দৃষ্টিকোণে সম্পদের উৎপাদন হচ্ছে মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে তারা সমাজের মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজিগুলোকে একত্রিত করে পুঁজিপতিদের নিকট সরবরাহ করে। কারণ পুঁজিবাদী আদর্শের ধারক-বাহকরা মনে করে এই সম্পদ ব্যবহার করে পুঁজিপতিরা অধিকতর উৎপাদনে সক্ষম, ট্রিকল ডাউন তত্ত্ব অনুসারে তারা মনে করে এরাই অর্থনীতির প্রাণসঞ্চারকারী এবং তারা টিকে থাকলে অর্থনীতি টিকে থাকবে। এই লক্ষ্যে সরকারগুলো ব্যাংকিং চ্যানেলে পুঁজির প্রবাহ বৃদ্ধি করতে নগদ লেনদেনের সীমা সীমিত করাসহ বিভিন্ন রকম নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করে যাতে জনগণের পুঁজিগুলো এক জায়গায় জড়ো করে পুঁজিপতিদেরকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে হৃষ্টপুষ্ট করা যায়। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে এই ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী ঋণ পরিশোধ না করে পার পাওয়ায় তারা ঋণ পরিশোধ না করে এই অর্থগুলো আত্মসাৎ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১৫০,০০০ কোটি টাকারও বেশী যা দিয়ে পদ্মা সেতুর মত ৫টি ব্যায়বহুল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যদিও প্রকৃত খেলাপী ঋণের পরিমাণ এই সংখ্যার থেকে অনেক গুণ বেশী। সরকার এই ঘাটতি পুরণের জন্য প্রচুর অর্থ ছাপায় এবং তা অর্থনীতিতে প্রবেশ করায়, ফলে জিনিস পত্রের দাম দফায় দফায় বেড়ে গিয়ে সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদন কর্মকাণ্ডে মন্থরতা চলে আসে। সুতরাং, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ব্যাংকিং খাত হচ্ছে সেই মাধ্যমে যার মাধ্যমে পুঁজিপতিগোষ্ঠী সাধারণ জনগণের ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র সঞ্চয়গুলো খেলাপী ঋণের নামে হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এভাবে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা জনগণের সমস্যা সমাধান করতে শুধু ব্যর্থই হচ্ছে না বরং জনগণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়গুলো লুট করার সুযোগ দিয়ে তাদেরকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।
পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যাঁতাকল থেকে মুক্তি পেতে আমাদের প্রয়োজন এমন একটি ব্যবস্থা যা কোন মানুষের মস্তিষ্ক প্রসূত ভ্রান্ত চিন্তার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়, বরং মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট থেকে আগত। ইসলাম মানুষের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা হিসাবে সম্পদের উৎপাদনকে নয়, বরং ন্যায্য বন্টনের অনুপস্থিতিকে চিহ্নিত করেছে। আর বন্টন নিশ্চিত করতে ইসলাম কর্মক্ষম সাধারণ জনগণকে চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা স্থাপন কিংবা কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের মত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে, আর পঙ্গু বা সহায়হীনদের মত অক্ষম নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় ভাতা (নাফাকা) ব্যবস্থার অধীনে আনে। ব্যবসা কিংবা শিল্প কারখানা স্থাপন কিংবা কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে সাধারণ জনগণকে বায়তুল মাল হতে বিনাসুদে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, যেমন: আমরা জানি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এক ভিক্ষুককে ভিক্ষা না দিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে পুঁজি প্রদান করেন, যা দিয়ে ঐ ভিক্ষুক কুড়াল কিনে উৎপাদন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। এক্ষেত্রে, ইসলামী রাষ্ট্রে কারও সাথে কোন বৈষম্যমূলক আচরণের সুযোগ নাই। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে, সাধারণ জনগণের মধ্যকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অর্থনীতির মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করে, কারণ এতে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে উৎপাদক পণ্য উৎপাদনের উৎসাহিত হয় এবং অর্থনীতিতে প্রাণের সঞ্চার হয়। তাই আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র কোনভাবেই সম্পদ কুক্ষিগত করার প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া বর্তমান ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে কোনভাবে অনুমোদন দিবে না। কুর‘আন-সুন্নাহ্’র আলোকে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ১৬৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী: রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ব্যতিত অন্যকোন ব্যাংক খোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, যেখানে সুদভিত্তিক সকল লেনদেন নিষিদ্ধ, এবং এটি বাইতুল মালের অধীনস্ত কোন একটি বিভাগের আওতাধীন থাকবে। ব্যাংক শারী’আহ্ হুকুম অনুযায়ী ঋণ দিবে; এবং এটি আর্থিক ও মুদ্রা সংক্রান্ত লেনদেন সহজ করবে।
– মোঃ সিরাজুল ইসলাম
“২৫-৩০ হাজার টাকা ঋণের মামলায় পাবনায় ১২ কৃষক কারাগারে”
খবরঃ
পাবনার ঈশ্বরদীতে ২৫-৩০ হাজার টাকা ঋণ খেলাপির মামলায় ৩৭ জন প্রান্তিক কৃষকের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এর মধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তারা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়েছিলেন। এই ঋণ পরিশোধ না করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে আদালত ৩৭ জন ঋণ গ্রহিতা কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ওসি অরবিন্দ সরকার জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের অধিকাংশই প্রান্তিক কৃষক। ২০২১ সালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এর ভিত্তিতেই ১২ জনতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের অনেকেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তাদের ঋণের টাকা পরিশোধ আছে। মামলার বিষয়টি তারা জানতেন না। কেন মামলা হলো সেটাও জানেন না। (bangla.dhakatribune.com/bangladesh/2022/11/26/16694749422381)
মন্তব্যঃ
সাম্প্রতিক সময়ে আইএমএফের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের খেলাফি ঋণের বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে। এর ঠিক পরই আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, মাত্র ২৫-৩০ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার কারণে আদালত ঋণখেলাপি এই কৃষকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী ও পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করা হয়। এ দৃশ্য দেখে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে বাহবা দেয়ার কিছু নেই, কারণ বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ উল্টো। “২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকের কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ যারা বড় বড় ঋণখেলাপি, যাদের কাছে লক্ষ-কোটি টাকা পাওনা, তাদের ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না” (মন্তব্য: আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম)। আওয়ামী লীগ সরকার যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে তখন খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। তবে, বর্তমানে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি যদিও আইএমএফের মতে প্রকৃত খেলাপি ঋণ তিন লাখ কোটি টাকার বেশি। এবং এই বিশাল অংকের টাকার ঋণখেলাপিদের কেউই কৃষক নন। হলমার্ক বা বেসিক ব্যাংকের কেউ কেউ অর্থ আত্মসাতের দায়ে জেলে আছেন বটে, কিন্তু হলমার্ক ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের যেসব পর্ষদ সদস্য বা একজন সাবেক উপদেষ্টার নাম এসেছিল, কিংবা বেসিক ব্যাংকের ডাকাতির মূল হোতা শেখ আবদুল হাইয়ের মতো সবাই আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
মূলত বর্তমান পুঁজিবাদী রাষ্ট্র বড় ঋণখেলাপিদের একধরনের দায়মুক্তি দিয়ে রেখেছে। যেমন, ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল এক প্রাক্–বাজেট আলোচনায় বর্তমান অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, “ঋণখেলাপি হলেই যদি সব ব্যবসায়ীকে জেলে পাঠানো হয়, তাহলে দেশ চলবে না”। সরকার ঋণখেলাপিদের জন্য নতুন নতুন সুবিধা দিয়েছে। সুদহার কমানো ও ঋণ পুণঃতফসিল করে নতুন করে ঋণ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আর একশ্রেণির ব্যবসায়ী সহজে ঋণখেলাপিও হচ্ছেন। সেকুলার-পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শুধুমাত্র যে আর্থিক খাতেই এই প্রভাবশালীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান এই তা কিন্তু নয়, বরং অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই তারা মূল সুবিধাভোগী। এসকল ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা বিচারব্যবস্থারও বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন। ঋণ খেলাপি কিংবা খুনের আসামী হলেও বেকসুর খালাস হয়ে নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করেন, সিকদার গ্রুপের এমডি কিংবা বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি যার জলন্ত উদাহরণ। মূলত পূঁজিবাদী ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, সম্পদের বেশিরভাগ অংশ একটি সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে কুক্ষিগত থাকায় অন্যান্য সকল কিছুই স্বাভাবিকভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
পক্ষান্তরে, ইসলাম যেমন একদিকে সম্পদের সঠিক বণ্টনের দিকে জোর দিয়েছে তেমনিভাবে বিচার ব্যবস্থাও যাতে ধনী-গরীব নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের জন্য সমভাবে কার্যকর হয় সেদিকে খেয়াল রেখেছে। আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, মাখযুমী গোত্রের একজন মহিলা চুরি করলে তার (প্রতি হদ প্রয়োগের ব্যাপারে) কুরাইশগণ বিভক্ত হয়ে পড়লেন। তাঁরা বললেন, কে এই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কাছে কথা বলতে (সুপারিশ করতে) পারে। তখন তারা বললেন, এ ব্যাপারে উসামা (রা.) ব্যতীত আর কারো হিম্মত নেই। তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর প্রিয় ব্যক্তি। তিনি (রা.) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাথে এব্যাপারে কথোপকথন করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত হুদুদের ব্যাপারে সুপারিশ করতে চাও? অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি (সাঃ) বললেনঃ হে লোক সকল! তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণ ধ্বংস হয়েছে এই কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করতো, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যদি কোন দুর্বল লোক চুরি করত, তবে তারা তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহ্’র কসম! যদি ফাতিমা বিনত মুহাম্মদও যদি চুরি করতো, তবে নিশ্চয়ই আমি তার হাত কেটে দিতাম।”
– মো. হাফিজুর রহমান
“ঢাবি এলাকায় গাড়ির নিচে আটকে পড়া নারীকে নিয়েই ছুটল গাড়িটি”
খবরঃ
ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। চারুকলা অনুষদের উল্টো পাশের টিএসসি অভিমুখী সড়কে এক নারী তার গাড়ির নিচে পড়ে আটকে যান। তবে চালক গাড়ি না থামিয়ে বেপরোয়া গতিতে চালাতে থাকেন। পথচারীরা তাকে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। গাড়ির নিচে আটকে থাকা নারীকে নিয়েই টিএসসি থেকে বেপরোয়া গতিতে নীলক্ষেতের দিকে যান চালক। পেছনে পথচারীরা তাকে তাড়া করেন। পরে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ থেকে পলাশী অভিমুখী সড়কের মুখে চালককে আটকে ওই নারীকে জীবিত উদ্ধার করেন পথচারীরা চালককে দেওয়া হয় গণপিটুনি।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/capital/bangladesh/capital/iuym8fb9b1)
মন্তব্যঃ
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বিশ্বাস অনুযায়ী যখন দ্বীন (ইসলাম)-কে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করে অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারীর আসন থেকে সরিয়ে মুষ্টিমেয় কিছু আচার অনুষ্ঠান ও ইবাদতখানার ভেতর সীমাবদ্ধ করা হয়, তখন মানুষ সামাজিক জীবনে আল্লাহ্’র হুকুম উপেক্ষা করে নিজের খেয়ালখুশি অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার স্বাধীনতা পায়। তখন প্রত্যেকেই পশুর ন্যায় শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং দৈনন্দিন কাজগুলোতে আল্লাহ্’র হুকুমকে পরোয়া না করে নিজের খেয়ালখুশির গোলামে পরিণত হয়। তারা তখন ভুলে যায় আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র সতর্কবাণী: “অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও সে দেখতে পাবে” (সূরা যিলযালঃ ৭-৮)। আলোচ্য ঘটনাটি উপরোক্ত আলোচনার নির্মম সাক্ষ্য বহন করে। বাংলাদেশের পরিবহন চালকরা তাদের দ্বারা কোন দুর্ঘটনা ঘটার পর গাড়ি ভাঙচুর কিংবা গণপিটুনির হাত থেকে বাঁচার জন্য দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। আবার সাধারণ জনগণ যে গণপিটুনি দেয়, তার কারণ হলো বিচারব্যবস্থার উপর তাদের ন্যূনতম কোন আস্থা নেই। তাদের মনে প্রতিষ্ঠিত ধারণা রয়েছে যে, এখানে অপরাধীরা ঠিকই আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে আসবে। আবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কিংবা বিচার ব্যবস্থাও এখানে সম্পূর্ণ অর্থ ও ক্ষমতার নিকট জিম্মি। এখানে কোন অপরাধের বিচার হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ইশারা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। ধর্ম থেকে সমাজকে বিচ্ছিন্নকরণ অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের কারণে যেহেতু অপরাধী, জনগণ, শাসক, বিচারক কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নির্বিশেষে সবার কাজই স্রষ্টার হুকুম থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে, সেহেতু উপরোক্ত কোন পক্ষই এসব সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে স্রষ্টার হুকুমকে তোয়াক্কা করে না। তখন যানচালক এক্সিডেন্ট ঘটানোর পর ভিকটিমকে উদ্ধার না করে দ্রুত পালিয়ে যায়, এমনকি ঝামেলা কমানোর জন্য ভিক্টিমকে হত্যা পর্যন্ত করে পালিয়ে যায়, জনগণ বিচার ব্যবস্থার কাছে সোপর্দ না করে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, বিচারক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অর্থ ও ক্ষমতার নিকট পরাস্ত হয়ে পড়ে। সর্বোপরি শাসকরা আল্লাহ্’র হুকুম বাদ দিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে। এভাবে সর্বক্ষেত্রে অনাচার ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে।
এসব থেকে উত্তরণে তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রত্যেক ক্ষেত্রে আল্লাহ্ সুবহানাল্লাহ ওয়া তাআলা’র হুকুমের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। তখন মানুষ দৈনন্দিন কাজে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র হুকুমকে বিবেচনায় আনতে অভ্যস্ত হবে। সমাজে সবসময় আল্লাহ্’র ভয়ে প্রকম্পিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এভাবে সমাজের সংঘটিত অপরাধসমূহ ন্যূনতম সংখ্যায় চলে আসবে। এমনকি অপরাধ করে ফেললেও কোন ব্যক্তি পরকালে কঠোর শাস্তির বিপরীতে এই দুনিয়ায় শাস্তি নেয়াকেই শ্রেয় মনে করবে। ইতিপূর্বে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রে এমনটাই ঘটেছিল। “একদা এক মহিলা সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট বলেন, আমি জিনা (ব্যভিচার) করেছি। জিনার কারণে গর্ভবর্তী হয়েছি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বললেন, তুমি চলে যাও। সন্তান হলে এবং তার দুধ পান করানোর সময় শেষ হলে এসো। যখন তার সন্তানের দুধ পানের মেয়াদ শেষ হলো, তখন সে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট এসে উপস্থিত হলেন। তিনি (সাঃ) বললেন, তোমার এ সন্তানকে কারো দায়িত্বে দিয়ে দাও। যখন সে তার সন্তানকে অন্য একজনের দায়িত্বে রেখে আসলেন, তখন তাকে (অপরাধের শাস্তি হিসেবে) পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ দেয়া হলো। তার জন্য বুক সমান গভীর একটি গর্ত করা হলো এবং তাকে সেখানে দাঁড় করিয়ে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হলো। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তার জানাজার নামাজ পড়ালেন। হযরত ওমর (রা.) তখন বললেন, হে আল্লাহ্’র রাসূল (সাঃ)! আপনি তার জানাজা নামাজ পড়ালেন? এতো ব্যভিচারিনী। (এ কথা শুনে) তিনি (সাঃ) বললেন, (হে ওমর!) এ নারী এমন তাওবাহ করেছে; তা যদি দুনিয়াবাসীর মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়; তবে তা সবার জন্য যথেষ্ট হবে। এর চেয়ে বড় আর কি হতে পারে যে, সে (আল্লাহ্’র ভয়ে) নিজের জীবন দিয়ে দিল”। (মুয়াত্তা মালেক)
– জহিরুল ইসলাম