working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 71

Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৭১ তম সংখ্যা । ১ ডিসেম্বর, ২০২২

 

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

“রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে বড় দুর্নীতি হয়”
“পুলিশের চোখে স্প্রে করে ব্লগার ও প্রকাশক দীপন হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ আসামি ছিনতাই”
“কাগজের সংকটে ছাপাখানা, নতুন বই আর পড়াশোনা নিয়ে আশঙ্কা”
“অর্ধশত শিল্প ও অবকাঠামো উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী”
“পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়লো প্রায় ২০ শতাংশ”
“অভিনব পদ্ধতিতে জার্মানির প্রতিবাদ”
“মেয়েদের প্রতি কেন এত বিদ্বেষ!”

 

 

“রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে বড় দুর্নীতি হয়”

খবরঃ
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। আর যোগসাজশ ও গোষ্ঠীতন্ত্রের মাধ্যমে বড় দুর্নীতি হয়। রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ যোগসাজশ হয়। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বঙ্গোপসাগর সংলাপ-২০২২ (বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন )’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে সুশাসন বিষয়ক অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। …সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যোগসাজশের মাধ্যমে দুর্নীতি, বিশেষ করে বড় দুর্নীতি হয়। এই যোগসাজশ হয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের একটি অংশের মধ্যে। আরেকটি হলো গোষ্ঠীতন্ত্র। এ ছাড়া দুর্নীতির ব্যাপকতা অব্যাহত থাকার পেছনে গণতন্ত্রের ঘাটতিও দায়ী। …বাংলাদেশে রাজনীতি ব্যবসায়ীকরণ হয়েছে এবং ব্যবসাকে রাজনৈতিকীকরণ করা হয়েছে। এতে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। এজন্য তিনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। (www.prothomalo.com/bangladesh/c2gzu3rvw0)

মন্তব্যঃ
রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠীর যোগসাজশে দুর্নীতি হয় এটা সত্য, কিন্তু কিভাবে এই তিনগোষ্ঠীর বলয় গড়ে উঠে, যার সুযোগে তারা দুর্নীতি করে সেটা আলোচনা করা জরুরী। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে সংসদে আইনপ্রণেতাদের ১৫% ছিল ব্যবসায়ী, ১৯৭৯ সালে ৩৫%, ১৯৯৬ সালে ৪৮%, ২০০১ সালে ৫১%, ২০০৮ সালে ৬১% এবং ২০১৮ সালের একাদশ সংসদে ৬১.৭%। এই তথ্য-উপাত্ত থেকে অনুধাবন করা যায় সংসদ সদস্যের পদ দিন দিন ব্যবসায়ীদের জন্য লোভনীয় হয়ে উঠছে। কিন্তু, কেন? এর উত্তর বুঝতে আমরা যদি খেয়াল করি, জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ মানবরচিত ব্যবস্থা দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। কখনো গণতন্ত্র, কিংবা কখনো সামরিক শাসন। আর যেকোন মানবরচিত ব্যবস্থা মানুষের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা তুলে দেয়। অথচ, যা শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তার জন্য সংরক্ষিত, “সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান তাঁর জন্যই (সংরক্ষিত)” [সূরা আ’রাফঃ ৫৪]। এটাই দুর্নীতির মূল কারণ। কেননা, যখন মানুষের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা চলে যায় তখন সে নিজেকে রবের আসনে বসিয়ে আইনের উর্ধ্বে রেখে যা খুশি তা করতে পারে। এই আইন সে নিজের সুবিধার্থে বানাতে পারে আবার আইন বানিয়ে অন্যের কাছে বিক্রিও করতে পারে, যা অতিলোভী কতিপয় ব্যবসায়ীদের জন্য লোভনীয়। এবং বিষয়টা রাজনীতিবিদদের জন্যও লোভনীয়, কেননা তারা “আইন” ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারে চড়ামূল্যে। তাছাড়া এই ব্যবস্থায় আমরা দেখতে পাই রাজনৈতিক বিবেচনায় আমলারা নিয়োগ পান, যাতে তারা এই বলয়ের অংশ হয়ে এই গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করে তাদের আশীর্বাদপুষ্ট হতে পারে। তাইতো আমরা দেখি, যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তা করা হয়, সেখানে মাত্র ৩০-৪০ হাজার টাকার ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় কৃষকদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। আমরা দেখেছি ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী করতে তাদের মদদপুষ্ট আমলাদের ভূমিকা।

মূলত, “গণতন্ত্র” হচ্ছে “পূঁজিবাদী জীবনব্যবস্থার” রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। পূঁজিবাদী জীবনব্যবস্থায় সার্বভৌমত্ব হচ্ছে “অর্থের”। কেননা, এখানে “অর্থ” দিয়ে আইন তৈরি কিংবা কেনাবেচা করা যায়। আর, এই অর্থ (পূঁজি) যার কাছে থাকে তারাই এই ব্যবস্থায় আইন নিয়ন্ত্রণ করে। যা বাংলাদেশের মত সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই হয়ে থাকে কম-বেশি। যেমন, সাম্প্রতিক মার্কিন কংগ্রেসনাল নির্বাচনে অঙ্গরাজ্যগুলোকে পছন্দের আইনপ্রণেতাদের জেতাতে ১৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে। তেল কোম্পানীগুলো রিপাবলিকানদের সমর্থন দিয়ে থাকে। এবং এই দল টেক্সাসের মত তাদের অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে তেল কোম্পানীর অনুকূলে আইন প্রণয়ন করেছে, যেমন: “গ্রীন কোম্পানীগুলোকে ব্ল্যাকলিস্ট করা। ২০০১-২০০৯ সালে বুশ প্রশাসনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডিক চেইনি, কনডোলিজা রাইস উভয়ে ছিলো যথাক্রমে তেল পরিষেবা কোম্পানি হেলিবার্টন(Halliburton) এর প্রাক্তন সিইও এবং তেল কোম্পানী শেভরন (chevron) এর প্রাক্তন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। যার ফলে, পুরো বুশ আমলেই আইনপ্রণয়ন করে মুসলিম বিশ্বের তেল লুটপাট করার জন্য ইরাক-আফগানিস্তানের মত দেশগুলোতে আক্রমণ চালানো হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার মত ডেমোক্রেট অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আমাজন, ফেসবুক, টুইটারের মত জায়ান্ট টেক কোম্পানীগুলো ডেমোক্রেটদের সমর্থন দেয়।

সুতরাং, সত্য হচ্ছে- “দুর্নীতির” গোড়া খোদ গণতন্ত্র নিজেই। যা মানুষকে দুর্নীতি করার সুযোগ নয় বরং ক্ষমতা দেয়। স্বাভাবিকভাবেই দুর্নীতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিষফল। আর এই বিষফল থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে ইসলামের মধ্যে সমাধান খুঁজতে হবে। কেননা, ইসলাম মানুষের দুর্নীতি করার মূল কারণ “আইন/বিধান” তৈরির ক্ষমতা মানুষকে দেয় না। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “…বিধান দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ্‌” [সূরা-ইউসুফঃ ৪০]। আবার, ইসলামে কেউ যদি শাসন/প্রশাসনের ক্ষমতা পেয়ে তার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক বা অন্যকোন সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করে; তখন সেক্ষেত্রে তাকে রহিত করারও বিধান আছে। আবু হুমায়িদ আল সা’ঈদী থেকে আল বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে, “রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ইবন-উল-উতবিয়াকে বানু সালিম গোত্রের সাদাকা আদায়ের আমীল নিযুক্ত করেন। যখন তিনি নবী (সাঃ) এর কাছে ফেরত এলেন, তিনি বললেন, “এটি আপনার জন্য এবং এই (উপহার) আমার জন্য”, তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “তুমি কেন তোমার পিতামাতার গৃহেই থেকে গেলে না যাতে সেখানেই তোমার কাছে উপহার আসে যদি তুমি সত্য বলে থাক” (বুখারী-৬৯৭৯)।

– আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

 

 

 

“পুলিশের চোখে স্প্রে করে ব্লগার ও প্রকাশক দীপন হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ আসামি ছিনতাই”

খবরঃ
প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ আনসার আল ইসলাম সদস্যকে ঢাকার একটি আদালত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ডিবি পুলিশের উপকমিশনার ফারুক হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি যতটুকু শুনেছি এই ২ আসামি আদালতে হাজিরা দিয়েছে। আদালত থেকে বের হওয়ায় সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের চোখে জঙ্গিরা এক ধরনের স্প্রে করে। পুলিশ সদস্যরা চোখ কচলে যখন তাকায় তখন দেখতে পায় আসামিরা মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাচ্ছে’। পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যে জঙ্গি সংগঠনের সদস্য সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়’। (bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/crime-justice/news-418681)

মন্তব্যঃ
পুলিশ হেফাজত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ আসামি ছিনতায়ের ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়া কিংবা এই আসামিদের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া যদি ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির প্রকৃত কারণ হত তাহলে কিছুদিন পরপরই আমরা এই অ্যালার্ট জারি প্রত্যক্ষ করতাম। কেননা গত এক বছরে পুলিশী হেফাজত থেকে হ্যান্ডকাপসহ ১৬ জন আসামি পালিয়েছে যারা গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত, মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও চাঁদাবাজি ও অপহরণ মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। এর বেশিরভাগই ঘটেছে আদালতে আনা নেয়ার সময়। গত ২৮শে এপ্রিল ঢাকার আদালত থেকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি (বিবিসি বাংলা, ২১ নভেম্বর ২০২২, https://www.bbc.com/bengali/articles/c72edxzylzgo)। পালিয়ে যাওয়া এই ২ আসামির যদি আবারও হত্যাকান্ড ঘটানোর সম্ভাবনার কারণে জননিরাপত্তা হুমকির মুখে থাকে তাহলে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ জন কুখ্যাত খুনিকে শাস্তি মওকুফ করে ছেড়ে দিয়ে সরকার নিজেই জননিরাপত্তাকে আরো বেশি হুমকির মুখে ফেলেছে (২৬ জনের ফাঁসির দণ্ড মওকুফ রাষ্ট্রপতির, প্রথম আলো, ৬ মার্চ, ২০১৪)। এর মধ্যে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি জঙ্গি আসলাম ফকির রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ফাঁসির দন্ড থেকে মুক্ত হয়ে আবারো মানুষ খুন করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। আরেক হত্যা মামলায় দুই সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফ ও হারিছ আহমেদের বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ড হয়েছিল ২০০৪ সালে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পেয়ে যেভাবে তারা রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ব্যবহার করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তা সকলেরই জানা। এমন নজির বিএনপি শাসনামলেও ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুহসীন হলের সেভেন মার্ডারের মূল হোতা তৎকালীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধানকে তদানিন্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার সকল দায় থেকে অব্যহতি দিয়ে মুক্তি প্রদান করেছিলেন, যে কিনা আমৃত্যু বিএনপি জোটের অন্যতম সহযোগী হিসেবে রাজনীতি করেছে। মানবরচিত গণতন্ত্রের এমন এক মগের মুল্লুকে আমরা বসবাস করি যেখানে রাষ্ট্রপতি ছোটখাটো কোন দন্ড মওকুফ করেন না! খুনের সর্বোচ্চ শান্তি ফাঁসি আর তিনি ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত খুনিদেরকে মাফ করে ‘রাষ্ট্রপতি’ পদবির ইজ্জত রক্ষা করেন! যেখানে রাষ্ট্রপতি ২৬ জন প্রমাণিত খুনির ফাঁসি মাফ করে দেন সেখানে মাত্র দুইজন ফাঁসির আসামী পালিয়ে যাওয়ার অজুহাতে দেশের অভ্যন্তরে ও সীমান্তে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির মাধ্যমে এই চাণক্য হাসিনা সরকার মুলতঃ নিয়মতান্ত্রিক ইসলামী রাজনীতি তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠার রাজনীতি এবং দেশব্যাপী জনগণের মধ্যে ইসলামভীতি তৈরির দূরভীসন্ধি করছে।

জঙ্গিবাদ নামক শব্দকে ব্যবহার করে ইসলামের উত্থান ঠেকানো ও রাজনৈতিক ইসলামকে দমনে হাসিনা সরকার তার বিদেশী প্রভুদের কাছ থেকে কন্ট্রাক্ট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। পশ্চিমা কাফিরদের ভাড়াটে মাস্তান এই সরকার এরপর থেকেই মুসলিমদেরকে ভীতসন্তস্ত্র করার জন্য একের পর এক জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করে আসছে। এক পর্যায়ে হাসিনা সরকার ও আমেরিকার পাল্টাপাল্টি জঙ্গি নাটকে দেশে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন হিসাবনিকাশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকার তার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আবারো তার ইসলাম বিদ্বেষকে (জঙ্গিবাদকে) ঢাল হিসেবে বেছে নিয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে আর একবার সেই পুরান কৌশলের অবতারনা করছে। আর শেখ হাসিনার পরীক্ষীত ইসলাম বিদ্বেষের সাথে টেক্কা দেওয়ার জন্য বিএনপি শাসকগোষ্ঠীও তাদের ইসলাম বিদ্বেষে শাণ দিয়ে নিচ্ছে, কেননা আওয়ামী-বিএনপি উভয়ের প্রভু পশ্চিমা কাফিরগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যান্য ‍স্বার্থের ভিন্নতা থাকলেও ইসলাম দমনে তারা একমত। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে বিএনপিকে মৌন কিংবা প্রকাশ্য সমর্থন দেওয়া এদেশের মুসলিমদের জন্য নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারার সমতূল্য। কেননা যারা প্রকাশ্যে কাফির শক্তি আমেরিকার সাহায্য ও হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা কখনোই মুসলিমদের ও ইসলামের পক্ষের শক্তি হতে পারে না। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রীস্টানদেরকে তোমাদের আওলিয়া (অভিভাবক, বন্ধু, সাহায্যকারী) হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। যদি তোমাদের (মুসলিমদের) মধ্যে কেউ তাদেরকে (ইহুদি ও খ্রীস্টানদেরকে) অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তবে সে তাদেরই একজন (আল মায়ীদা: ৫১)।

– রিসাত আহমদে

 

 

 

“কাগজের সংকটে ছাপাখানা, নতুন বই আর পড়াশোনা নিয়ে আশঙ্কা”

খবরঃ
বাংলাদেশে ডলার সংকটের কারণে অন্য অনেক খাতের মতো প্রভাব পড়েছে দেশের মুদ্রণ শিল্পের ওপরেও। ফলে নতুন বই প্রকাশ আর পড়াশোনায় দরকারি সাদা কাগজের সংকট তৈরির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রকাশক ও মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, একদিনে বাজারে কাগজের দাম গত এক মাসের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। আবার আমদানি কম হওয়ায় ভালো মানের পর্যাপ্ত কাগজও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তারা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে একদিকে যেমন বছরের শুরুতে স্কুলগুলোর পাঠ্যপুস্তক হাতে পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে, আরেকদিকে বই মেলার অনেক বইয়ের প্রকাশ আটকে যেতে পারে। (www.bbc.com/bengali/articles/cg3j1gn1ydzo)

মন্তব্যঃ
কাগজ শিল্পের এই দূরবস্থা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। এই দুরবস্থা মূলত আমাদের সামগ্রিক শিল্পখাতেরই একটি ক্ষুদ্র রূপ। বরং এটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদে সামগ্রিকভাবে দেশের শিল্পখাতকে অবহেলা করার একটি উপসর্গ মাত্র। কাগজ শিল্পের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পেরও একই অবস্থা। এখানে টেকসই কোন শিল্পভিত্তি গড়ে উঠেনি যার উপর ভিত্তি করে দেশে একটি শক্তিশালী সমৃদ্ধশালী শিল্পখাত তৈরী হবে। এখানে একদিকে শিল্পের কাচামাল যেমন বিদেশ থেকে আসে, অন্যদিকে গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদনও ক্রমহ্রাসমান। দেশীয় কাচামালের উপর নির্ভর করে যেসকল শিল্প গড়ে উঠেছিল যেমন চিনি ও বস্ত্র শিল্প সেগুলোকেও আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রেস্ক্রিপশন অনুসারে প্রাইভেটাইজেশনের মাধ্যমে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এবং এর ফলে দেশকে ব্যাপকভাবে আমদানিনির্ভর করে ফেলা হয়েছে। দেশে ভারী শিল্পের অভাবে সুই এর মত ক্ষুদ্র জিনিস থেকে শুরু করে এরোপ্লেনের মত বৃহৎ পণ্যও বিদেশ থেকে আমদানি করে চলতে হয়। অপরদিকে আমরা এমনসব শিল্পের উন্নয়ন করেছি যার কাচামালের উৎপাদন আমাদের হাতে না, এমনকি এসকল পণ্যের চাহিদাও আমাদের হাতে না। ফলে, পোশাক শিল্পের মত এক ধরনের পরগাছা শিল্প গড়ে উঠেছে। ফলে পোশাক শিল্পের ভোক্তারা যখন এসকল পণ্য নেয়া বন্ধ করে দিবে তখনই এসকল রপ্তানীমুখী শিল্প বিপদের সম্মুখীন হবে এবং বর্তমানে তা হচ্ছেও। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রাষ্ট্রের কোন ভিশন বা দূরদৃষ্টি নাই। আদর্শিক রাষ্ট্র না হওয়ার কারণে এখানকার শাসকদের কাছে শিল্পায়নের মত বিষয় কখনোই গুরুত্ব পায় না।

প্রক্ষান্তরে, খিলাফত রাষ্ট্র হবে একটি ভিশনারী রাষ্ট্র, কারণ এর রয়েছে একটি আদর্শ আর তা হচ্ছে ইসলাম। খিলাফত রাষ্ট্রের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সারাবিশ্বে ইসলামের দাওয়াহ বহন করা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “এই কিতাব আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানবজাতিকে বের করে আনতে পার অন্ধকার হতে আলোর দিকে” [সূরা ইবরাহীম-০১]। আর সারাবিশ্বে ইসলামের দাওয়াহ বহনের পদ্ধতি হচ্ছে জিহাদ। সুতরাং শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ও এর সাথে সংযুক্ত আর যা যা কিছু আছে তার সংস্থান করা খিলাফত রাষ্ট্রের প্রধানতম দায়িত্ব যাতে করে ইসলামের শত্রুদের ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখা যায়। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “তোমরা কাফিরদের মুকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও সদাসজ্জিত অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে যার দ্বারা আল্লাহ্‌’র শক্র ও তোমাদের শক্রদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করবে, এছাড়া অন্যান্যদেরকেও যাদেরকে তোমরা জাননা, কিন্তু আল্লাহ্‌ জানেন।” [সূরা আনফাল-৬০]। সুতরাং, একটি সমৃদ্ধ সামরিক বাহিনী এবং এর সাথে সংযুক্ত উৎপাদন খাত প্রস্তুত করা রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক। এটি শুধুমাত্র রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পকেই নিশ্চিত করবে না বরং এর সাথে সংযুক্ত অন্যান্য শিল্পকেও সমৃদ্ধ করে তুলবে। মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রি যেকোন প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের প্রাণকেন্দ্র কারণ যুদ্ধের সাথে আধুনিক প্রযুক্তি আবিষ্কারের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। কমন আইটেম যেমন, Internet, Teflon non-stick frying pan, plasma TV, Radio, personal computers and aeroplanes ইত্যাদি সবকিছুই সামরিক শিল্পের অবদান।

শিল্পায়নের জন্য যা দরকার তার মধ্যে রয়েছেঃ- প্রথমত, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাচামাল এবং খনিজ সম্পদ। কাচামালকে প্রসেস করে ফার্নিশ প্রডাক্টে রুপান্তর করা হবে। অন্যদিকে খনিজ সম্পদকে উত্তোলন ও পরিশোধনের জন্যও ভারী ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে। বাংলাদেশ একটি উর্বর দেশ হওয়ায় এবং তেল-গ্যাস-কয়লার খনি যথেষ্ট পরিমানে থাকার কারণে কাচামালের সমস্যা হবে না ইনশা’আল্লাহ। দ্বিতীয়ত, এসকল কাচামালকে সংগ্রহ করে প্রস্তুতকৃত পণ্যে রুপান্তরিত করতে হলেও বিভিন্ন রকমের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্লান্ট গড়ে উঠবে, তৃতীয়ত, এসকল উদ্দেশ্য পূরনে নিশ্চিতভাবেই প্রযুক্তিগত জ্ঞান এর প্রয়োজন পড়বে। ফলে রাষ্ট্র শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য গবেষণার ব্যবস্থা করবে। চতুর্থত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- আর তা হচ্ছে রাষ্ট্রের ইচ্ছাশক্তি। খিলাফত রাষ্ট্র যখন সারাবিশ্বে ইসলামের মহান দাওয়াত বহনের কাজ শুরু করবে তখন স্বাভাবিকভাবেই খলিফাকে জনগনকে সাথে নিয়ে ব্যাপক শিল্পায়নের দিকে ধাবিত হতে হবে।

– হাফিজুর রহমান

 

 

 

“অর্ধশত শিল্প ও অবকাঠামো উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ
কর্ণফুলী ড্রাইডক স্পেশাল ইকোনমিক জোনসহ ৫০টি শিল্প ও অবকাঠামোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।… প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এটি বার্ষিক ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ট্যাক্স হলিডে, এবং কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা পেতে পারেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো জাপান, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং নরওয়ে সহ বিভিন্ন দেশ থেকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেছে। (www.jagonews24.com/national/news/811370)

মন্তব্যঃ
বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরির চিন্তা শুধুমাত্র একটি জাতিকে পরনির্ভরশীলই করে না বরং এর মাধ্যমে একটি জাতির জনশক্তি থেকে শুরু করে ভূমি ও মূল্যবান সম্পদসমূহ পর্যন্ত বিদেশী শক্তির হস্তগত হয়ে যায়। পরিণামে একটি দেশে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক ক্ষতির হওয়ার সাথে সাথে এর সার্বভৌমত্বও হুমকির সম্মুখীন হয়। বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্পায়ন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার যুক্তিটিও যে অসাঢ় তা বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ ও বেকারত্বের পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝা যায়। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ ২০০১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ক্রমাগত বাড়ার সাথে সাথে বেকারের সংখ্যাও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশে তরুণদের বেকারত্বের হার ১০.৬ শতাংশ (প্রথম আলো, ১২ আগস্ট ২০২২)। বাংলাদেশের টেক্সটাইল, চামড়াজাত সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য, রাসায়নিক ও পেট্রোকেমিক্যাল, কৃষিভিত্তিক শিল্প কাঁচা পাট, কাগজ, রেশম শিল্প, হিমায়িত খাদ্য, পর্যটন, ক্ষুদ্র শিল্প, সফটওয়্যার ও ডাটা প্রসেসিং এর মত শিল্প সহ ভারী ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প প্রতিষ্ঠায় বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। এমনকি কৌশলগত খাত, যেমন, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, খনিজ অনুসন্ধান, টেলিযোগাযোগ, বন্দর, সড়ক ও জনপথ ইত্যাদি সকল খাতকে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে দেশীয় উল্লেখযোগ্য শিল্প বলতে গড়ে উঠেছে সস্তা গার্মেন্টস শিল্প, যার কাঁচামাল আবার আমদানী করতে হয় বিদেশ থেকে। এখানে অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগের সুযোগের অভাবে প্রতিবছর লাখো মেধাবী শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। তরুণদের মেধাশক্তির মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ শক্তিও পাচার হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশীরা কখনো এদেশে ভারী শিল্পে বিনিয়োগ করে না, তাই এর মাধ্যমে প্রযুক্তি হস্তান্তরেরও কোন সুযোগ নেই। এখানে শুধুমাত্র ‘ইউনিলিভার’ ও ‘নেসলে’র মতো প্রতিষ্ঠানগুলোই আসে সস্তায় প্রসাধনী এবং ভোগ্য পণ্য উৎপাদনের জন্য। তাই বিদেশী বিনিয়োগ কখনোই কোন দেশের মানুষদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে না এবং সে দেশের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানে তৈরি করে না। এটা শুধুমাত্র তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক পরাধীনতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং তাদেরকে সবসময় দরিদ্র করে রাখার একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক বিপুল পরিমানে টাকা বিদেশে পাচারের কারণে উদ্ভূত ডলার সংকটকে সামনে রেখে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্যই তাদের এই পায়তারা, যেন তারা আরও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ আরো বেশী করে পাচার করতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে, একটি জাতির জন্য প্রকৃত ও টেকসই কর্মসংস্থান কেবলমাত্র তখনই সম্ভব যখন তারা নিজস্ব অর্থায়নে ভারী শিল্পায়ন করে। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্বে জাপান এবং জার্মান করেছিল কিংবা বর্তমানে আমেরিকা এবং চীন করছে। তার আগেও ১৪শত বছর ধরে খিলাফত রাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পায়নের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল। অন্যদিকে বর্তমানে লক্ষ কোটি টাকা শেয়ার মার্কেটে কিংবা ব্যাংকগুলোতে আটকে থাকলেও এখানে কর্মসংস্থানের অজুহাতে বিভিন্ন বিদেশী কাফির শক্তিকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। অথচ দেশের অর্থনীতিতে কাফির শক্তির বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদেরকে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করে দেয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “এবং কিছুতেই আল্লাহ্‌ মুমিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বের কোন পথ রাখবেন না” (সূরা নিসা: ১৪১)। তাই ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মিলিটারি টেকনোলজি, বস্ত্র, আবাসন, স্বাস্থ্যসহ যেকোন শিল্পে কোনো বিদেশী শক্তির বিনিয়োগ কিংবা কোন ধরনের কর্তৃত্বের অনুমতি নেই।

– মো: জহিরুল ইসলাম

 

 

“পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়লো প্রায় ২০ শতাংশ”

খবরঃ
বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়লো ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। ইউনিট প্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। আগামী বিল মাস ডিসেম্বর থেকেই নতুন এই মূল্য কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, এই দাম পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ দাম বাড়ানোর পরও বিদ্যুতের উৎপাদন পর্যায়ে ভর্তুকি ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে সরকার। (www.banglatribune.com/business/773649/)

মন্তব্যঃ
পিডিবি গত ১২ জানুয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দাম পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব জমা দিয়েছিল, ১৮ মে তাদের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করা হয়েছে। এরপর ১৩ অক্টোবর মানুষের জন্য অসহনীয় হবে বলে দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কিন্তু মাত্র এক মাস পরই অবস্থার পরিবর্তন! এর মধ্যে নিত্যপণ্যের মূল্য আরও বেড়েছে, মানুষ নাকাল। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তেল-গ্যাসের মূল্য নিম্নমুখী, আবার নির্বাচনও ঘনিয়ে আসছে এরপরও এই একমাসে কি এমন ঘটলো যে সরকারকে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হলো? ঘটনাবলিতে এটি অনেকটা স্পস্ট যে নাটের গুরু আসলে আইএমএফ। এই একমাসের মধ্যেই আইএমএফ-এর প্রতিনিধি দল ঢাকায় ঘুরে গেছে এবং তারা পিডিবি, বিইএরসি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সবার সাথে বৈঠক করেছে। ২৭ নভেম্বর ভয়েস অব আমেরিকা বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, “বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি আইএমএফের অন্যতম শর্ত। তাই বিইআরসি সম্প্রতি বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়েছে। এটি বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ভোক্তা পর্যায়ে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করেছে”।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে দাম বাড়লে আইএমএফ এর কি লাভ, সরকার কেন আইএমএফের এই অমানবিক দাবি মেনে নিচ্ছে? আইএমএফ এর সৃষ্টি হয়েছিল বিশ্ব রিজার্ভ মূদ্রা হিসেবে ডলারের আবির্ভাবের প্রেক্ষাপটে। প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ হচ্ছে একদিকে বিশ্বজুড়ে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে ঋণ দেয়ার সুযোগ তৈরি করা এবং এই সুযোগে সেই দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতে বাধাহীনভাবে মার্কিনীদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি দেশের প্রতি আইএমএফের সার্টিফিকেটকে বৈশ্বিক অন্যান্য লগ্নিকারী বা বিনিয়োগকারী বহুজাতিক কোম্পানি ও বিশ্বব্যাংক, এডিবির মতো প্রতিষ্ঠানসমূহ গুরুত্বের সহিত বিবেচনা করে। সরকার যেহেতু তার সীমাহীন দুর্নীতি ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বাস্তবায়নের কারণে বর্তমানে একটি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েছে তাই সরকার মরিয়া হয়ে আইএমএফের জন্য সব দরজা খুলে দিয়েছে এবং তাদের খুশি করার জন্য একে একে তাদের শর্তগুলো মেনে নিচ্ছে। যার বাস্তবায়নের ফল হচ্ছে বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন মৌলিক পণ্য ও সেবার ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি।

আইএমএফ ‘বেসরকারিকরণ নীতি’ চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ-জ্বালানি, পানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ফোন-ইন্টারনেট, মৌলিক খাদ্যপণ্য ইত্যাদি খাতে পুঁজিপতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানির ব্যাপক বিনিয়োগ ও লাভজনক ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে দেয়। এর সুফল পাওয়া একজন ব্যবসায়ীর নাম আজিজ খান যিনি আমেরিকা জাপানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাপক বিনিয়োগ এনে ১৮ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক হয়েছেন। বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা লাভ করছে তার সামিট গ্রুপ। এভাবেই তিনি সিংগাপুরের শীর্ষধনীতে পরিণত হয়েছেন। বর্তমানে দেশের প্রায় ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন বেসরকারিখাতে যার ৯ ভাগ করে সামিট। বিদ্যুতের ভর্তুকি প্রত্যাহার করে দামবৃদ্ধির এই পুরো সুবিধাটাই ভোগ করবে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতি কোম্পানীগুলো আর ভুক্তভোগী হবে দেশের জনগণ।

রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “আগুন, পানি এবং চারণভূমি এই তিনটি জিনিসের মালিকানা জনগণের”। অর্থাৎ জ্বালানি তেল, খনি, বিদ্যুৎ উৎপাদনের যেকোন জ্বালানী ও বিদ্যুৎ ইত্যাদি সবকিছুই গণমালিকানাধীন সম্পদ। খলিফা জনগণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হিসেবে এগুলোর রক্ষনাবেক্ষন, উৎপাদন ও বিপণন করবেন। এতে তিনি চাইলে প্রয়োজনে ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে পারবেন, কিন্তু কখনই এগুলোকে তাদের লাভের জন্য ছেড়ে দিতে পারবেন না। এমনকি খলিফা বা রাষ্ট্র নিজেও এসব থেকে কোন লাভ গ্রহণ করতে পারবে না। ইসলাম বেসরকারি খাতে ব্যবসার সুযোগ সহজ করতে জনগণের জন্য প্রয়োজনে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করে দিবে। ফলে সাধারণ মানুষের একদিকে আয় থাকবে এবং অন্যদিকে যেহেতু জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন, ইন্টারনেট নামমাত্র মূল্যে পাবে তাই তাদের খরচও অনেক কমে যাবে। অন্যদিকে, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে সতর্ক করেন, “এবং কিছুতেই আল্লাহ্‌ মুমিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বের কোন পথ রাখবেন না” (সূরা নিসা: ১৪১)। ফলে খলিফা আইএমএফের মত একটি অর্থনৈতিক আগ্রাসনকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে এবং ডলার বা তার মত অন্যকোন মূদ্রাকে কোনভাবেই দেশের উপর প্রভাব বিস্তার করতে দিবে না।

– মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 

 

 

“অভিনব পদ্ধতিতে জার্মানির প্রতিবাদ”

খবরঃ
সমকামিতার ব্যাপারে কাতারের অবস্থানের ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে কাতার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী কয়েকটি দল। ফিফার বাধার মুখে আগের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পেরে অভিনব পদ্ধতি বেছে নিল জার্মানি। জাপানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে দলগত ছবি তোলার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন জার্মান ফুটবলাররা। (bangla.bdnews24.com/sport/world-cup-2022/6iqds5npdc)

মন্তব্যঃ
কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের শুরু থেকেই একটার পর একটা বিতর্ক চলছেই। বিশ্বকাপ আয়োজক কাতারের কিছু নীতিমালাকে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী কিছু দলের অসহিষ্ণু মনে হয়েছে। কি সেই নীতিমালা? কাতারে সমকামিতা অবৈধ। তাই সমকামীরা বিশ্বকাপ দেখতে আসতে পারলেও স্টেডিয়ামে জনসমক্ষে নিজেদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে পারবে না। কাতারে স্টেডিয়ামে মদ্য পান ও বিক্রি নিষিদ্ধ। স্টেডিয়াম ছাড়া অন্যস্থানে মদপান করার ও নাচ-গান-ফূর্তি করার বাকি সব ব্যবস্থা কাতারে করা আছে। এতকিছুর পরেও কাতারকে বলা হচ্ছে অসহিষ্ণু। কারণ কাতার পুরো রাষ্ট্রকে পশ্চিমাদের আমোদ প্রমোদের বন্দোবস্ত করে দিলেও শুধুমাত্র স্টেডিয়ামকে ইসলামিক হিসেবে পরিবেশন করতে চাচ্ছে। পবিত্র কুর‘আন তেলাওয়াত দিয়ে বিশ্বকাপ উদ্বোধন, বিভিন্ন জায়গায় রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর বাণী প্রচার ইত্যাদি দিয়ে তারা ইসলামিক একটা আবহ তৈরি করেছে। যা রীতিমত পশ্চিমাদের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা নানাভাবে প্রতিবাদ জানাতে চাচ্ছে এবং জানাচ্ছে। কিসের বিরুদ্ধে তাদের এই প্রতিবাদ? সমকামিতা এবং মদ্যপানের অধিকারের লঙ্ঘনের প্রতিবাদ। উদারমনা বুদ্ধিজীবিরা আবার কাতার কর্তৃপক্ষের পক্ষ টেনে বলার চেষ্টা করছে যে এটা কাতারের সংস্কৃতি। আমাদেরকে সকলের সংস্কৃতির প্রতি উদার হওয়া উচিৎ। সমকামিতা এবং মদ্যপানের অগ্রহণযোগ্যতা কি শুধুই কাতারের সংস্কৃতি! হযরত লূত (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়কে সমকামিতার জন্য সাবধান করে বলছেন, “তোমরা যৌন তাড়নায় স্ত্রীদের বাদ দিয়ে পুরুষদের নিকট গমন করছ, তোমরা হচ্ছ এক সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়” [সূরা আরাফঃ৮১]। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এই প্রেক্ষিতেই স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন এই বলে, “তোমরা যদি কাউকে পাও যা লূতের সম্প্রদায় যা করত তা করছে, তবে হত্যা কর যে করছে তাকে আর যাকে করা হচ্ছে তাকেও” [তিরমিযিঃ ১৪৫৬]। মদ সম্পর্কেও আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর বান্দাদের বলেন, “শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহ্‌’র স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?” [সূরা মায়িদাহঃ৯১]। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে সমকামিতা এবং মদ্যপান ইসলামে নিষিদ্ধ। অর্থাৎ, সমকামিতা আর মদের অগ্রহণযোগ্যতা কাতারের সংস্কৃতি নয়, বরং মুসলিমদের প্রতি আল্লাহ্’র সরাসরি হুকুম। যে রাসূলের বাণী আজকে কাতার কর্তৃপক্ষ দেয়ালে ছেপে ইসলাম প্রচারের নাটক করছে, যুক্তরাজ্য, ওয়েলস, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড এর ফুটবল দল সেই রাসূলের নির্দেশনার প্রতিবাদ করছে কাতারের মত মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে এসে! কি ধৃষ্টতা তাদের! কি প্রকাশ্য অপমান আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের!

প্রায় ২ বিলিয়ন মুসলিমের এই পৃথিবীতে কেমন করে কয়েকটা ফুটবল দল মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে এসে আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলকে প্রকাশ্যে অপমান করে? কারণ একটাই– মুসলিমদের কোন অভিভাবক নাই, রাষ্ট্র নাই। মুসলিমদের অভিভাবকের মুখোশ পড়ে থাকা মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলের শাসকরা মূলতঃ এই কাতারি শাসকদের মতই ইসলামকে শুধু স্টেডিয়ামে তথা ব্যক্তিজীবনে আবদ্ধ করে রেখেছে, আর বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে রাষ্ট্রীয় ভূমিকা থেকে। তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে পশ্চিমাদের কাছ থেকে ধার করা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ দিয়ে যা মুসলিমদের প্রতিনিয়ত অপমান করে যাচ্ছে। অথচ খিলাফত শাসনামলে মুসলিম রাষ্ট্রে এসে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলকে অপমান করা তো দূরে থাক, ইসলাম বহির্ভূত কোন কর্মকান্ড নিজের রাষ্ট্রে করেও শান্তি পেত না কাফির রাষ্ট্ররা। খলিফা সুলাইমান আল কানুনি এর সময় পার্শ্ববর্তী দেশ ফ্রান্সে নারী পুরুষের সম্মিলিত এক নাচের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যা জানার সাথে সাথে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে উক্ত নাচ বন্ধের জন্য ফ্রান্সের রাজাকে চিঠি লিখেছিলেন তিনি। এমনই ছিল মুসলিমদের প্রতাপ। আবারো সেই প্রতাপ ফিরে আসবে। অনতিবিলম্বে ইসলামী সাম্রাজ্য তথা পরাক্রমশালী খিলাফত রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন ঘটবে, ইনশা‘আল্লাহ্‌। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “……আবারো ফিরে আসবে খিলাফত, নবুওয়াতের আদলে” (মুসনাদে আহ্‌মেদ)।

– জীবন চৌধুরী

 

 

 

“মেয়েদের প্রতি কেন এত বিদ্বেষ!”

খবরঃ
মা চাকরি করলে সন্তানের দুর্ভোগ হয়। দেশে ৮৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ এমনটা মনে করেন। ইউনেসকো তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনটির ফল নিয়ে গত ২২ জুলাই আমার একটা লেখা প্রকাশ করে প্রথম আলো। সেটি অনলাইনে প্রকাশের পর নিচে অনেকেই মন্তব্য করেন। তার থেকে কয়েকটা তুলে ধরতে চাই। লেখাটাকে একজন উসকানিমূলক উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যার চাকরি লাগবে সে করবে, যারা পাবে না সে করবে না, সে পুরুষ হোক বা নারী, তবে উসকানিমূলক বা খোঁচা মারামূলক কথাবার্তা বলার কী দরকার? পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে, যাদের কাছে টাকাই ভগবান, লেখিকা এর বাইরে নয়। আর এদের সন্তান নেওয়ার কী দরকার?’ আরেকজন লিখেছেন, ‘নিজেদের একবার সেইসব বাচ্চাদের জায়গায় রাখুন এবং ভাবুন যে, আপনার মা–বাবা আপনাকে বুয়ার কাছে রেখে ৮-১০ ঘণ্টার জন্য অফিসে গেছে। দেখুন কেমন লাগে। যদি ভালো লাগে তাহলে আপনিও আপনার সন্তানদের সঙ্গে এমনই করুন।’ আরেক মন্তব্যকারী পশ্চিমাদের ‘সবকিছু’ অনুসরণ না করার পরামর্শ দিয়ে লিখছেন, ‘…দুজন একসঙ্গে চাকরি করার ফলে বাচ্চাদের কী অবস্থা হচ্ছে সেটা আমাদের আশেপাশে চোখ বুলালেই দেখতে পাবেন। আমি সাংবাদিক, তাই হয়তো সংবাদবিষয়ক বিরূপ মন্তব্য দ্রুত হজম করার ক্ষমতা অর্জন করেছি। আমরা সহকর্মীরা মাঝেমধ্যে এ নিয়ে আলোচনা করি। অনেক সময় প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার আগে আগে আমরা বলি, ‘আজ কয়টা গালি খাব কে জানে!’ বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে যতবার প্রতিবেদন লিখি, ততবারই আগাম বুঝতে পারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাবে। মন্তব্য যা আসবে, তাতে যুক্তির চেয়ে খিস্তিখেউর থাকবে বেশি। (www.prothomalo.com/lifestyle/9ux15ipe82)

মন্তব্যঃ
বিশ্বজুড়ে নারীর অবমাননা, সহিংসতা ও জুলুমের ইতিহাস অনেক পুরনো যার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমের নারীরা ১৯ শতকে “নারীবাদ” নামক ধারণার জন্ম দেয়, যা পুরুষকে সমস্যার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে। এবং সমাধান হিসেবে নিজেদের পুরুষের সমকক্ষ করে গড়ে তোলার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয় যা তাদের সমঅধিকার আদায় করে দিবে বলে তারা আশা করে। প্রাথমিকভাবে তা দমনের চেষ্টা করলেও পুঁজিবাদ তার স্বভাব মতো এ আন্দোলনে তাদের ফায়দা দেখতে পেয়ে কৌশলে গোড়ায় পানি ঢালে। সস্তা নারী শ্রমিকের অফুরান যোগানের সুযোগ নিতে যেয়ে তারা মিডিয়া, শিক্ষা, রাষ্ট্রীয় মদদে নারীদের প্রতারিত করেছে। আজকে যার পরিণতি পশ্চিমের নারীরা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছে। যারা ৫ মন বোঝা বইতে পারত, তাদের ঘাড়ে ৫০ মন চাপিয়ে দিয়ে পিঠ চাপড়ে বলা হচ্ছে, ‘এগিয়ে যাও নারী, তুমি পারবে’। যার ফলাফল স্বরূপ শুধু নারী নয় শিশু, বৃদ্ধ এবং পুরুষ সহ গোটা সমাজ আজ চরম বিশৃঙ্খলার ও অশান্তির মুখোমুখি।

সমাজে সম্মান-নিরাপত্তার-সহমমর্মিতার সাথে বাস করার আকুতি নিয়ে যে নারী আন্দোলনে নেমেছিল, কিন্তু সমস্যার মূল ধরতে না পেরে কিংবা সমাধান না জানায় পুরুষের সমকক্ষ হওয়াকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে। অতঃপর শতচেষ্টা করে তা আদায়েও ব্যর্থ হয়ে আজ এমনকি লিঙ্গ পরিবর্তনকেও বেছে নিতে চাইছে, এটাই এখন পশ্চিমা বিশ্বের বাস্তবতা। কারণ তাদের কাছে কোন পথের দিশা নেই, মানবরচিত জীবনব্যবস্থায় ঘুরপাক খেয়ে পুঁজিপতিদের দ্বারা নিস্পেসিত হওয়াই তাদের নিয়তি। অথচ নিজেদের সমস্যা সমাধানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হলেও ইসলাম ও নারীর মধ্যে শত্রুতা প্রবেশ করাতে ও ফায়দা লুটতে তারা ‘নারীবাদ’, ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ ইত্যাদি কুফরী ধারণা আমাদেরকে রপ্তানী করেছে। আর মুসলিম ভুখন্ডে নিযুক্ত তাদের দালাল শাসক ও অন্ধ পশ্চিমাপ্রেমীদের দ্বারা তা বাজারজাত ও সুরক্ষিত করছে। ইসলামী ব্যবস্থার অধীনে নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা আর গৌরবগাঁথার ইতিহাস মুছে দিয়ে এবং ইসলাম নারীর সাথে কতো অবিচার করেছে তা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলে এই উম্মাহ্‌কে পশ্চিমের বিষ খাওয়ানোই তাদের অন্যতম কাজ। শতবৎসর চেষ্টা করেও তারা উম্মাহকে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি বরং নিজেরাই উম্মাহ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা তাই উম্মাহ্‌কে ঘৃণা করে আর উম্মাহ্‌ও তাদের ঘৃণা করে।

তাই জনসাধারণের কাছ থেকে আসা এসব বাস্তব প্রশ্ন- “নিজেদের একবার এই বাচ্চাদের জায়গায় রাখুন এবং ভাবুন যে আপনার মা-বাবা আপনাকে বুয়ার কাছে রেখে ৮-১০ ঘন্টার জন্য অফিসে গেছে, দেখুন কেমন লাগে?” এর উত্তর দিতে তারা অপারগ। উত্তর না জানা থাকায় এগুলো খিস্তি-খেউড় বলে পাশ কাটিয়ে পুরনো রেকর্ড আবার বাজাতে শুরু করে। কারণ তারা যাদের দিকে তাকিয়ে আছে তারাইতো দিশেহারা। সেক্যুলার ধ্যান-ধারণাগুলো এতো হালকা যে এর ধারকেরা সমস্যার মূলে যাবার সক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছে, অথবা সমাধান করতে পারার অপারগতা থেকে গোড়ায় যাবার চেষ্টা ছেড়ে বাস্তবতায় হাবুডুবু খাচ্ছে।

কেবল ইসলামের কাছে দিশা আছে। বিশ্ব নারী সমাজসহ সমগ্র মানবজাতি আজ এই দিশার জন্য হাহাকার করছে। ইসলামী সমাজ নারী বা পুরুষতান্ত্রিক নয়। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদের যে শারীরিক আবয়বে সৃষ্টি করেছেন, সে হিসেবে কাজ ভাগ করে দিয়েছেন, পরস্পরকে মিলে মিশে সম্মানের সাথে থাকতে আদেশ দিয়েছেন। সন্তান লালন-পালন নারীর দায়িত্ব, আর উপার্জন পুরুষের। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে পরস্পরকে সাহায্য করতেই পারে, কিন্তু নিজে তার কাজ না করে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারে না। তারা তাকওয়া ও আখিরাতের পুরস্কারের আশায় এবং জবাবদিহিতার ভয়ে তা মেনে চলে। শুধু তাই নয়, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন যেন কেউ নির্ধারিত সীমা অতিক্রম না করে। সেই ব্যবস্থার অধীনে বিশ্ব পাবে এক সুশৃংখল ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ, যেখানে প্রত্যেকে সন্তুষ্ট থাকবে। এই ব্যবস্থা ছাড়া এই সমস্যার কোন সমাধান নেই। অন্ধ পশ্চিমাপ্রেমী মুসলিম নারীরা, যারা না বুঝে পশ্চিমের গীত গাইছে অথচ ব্যাক্তিজীবনে নিজেরাও চরম দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তারাও সেদিন মুক্তি পাবে, ইনশা‘আল্লাহ্‌; আর তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাও চাইবে আশা করা যায়।

– আয়েশা হান্নান