Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
১৩০ তম সংখ্যা । ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
এই সংখ্যায় থাকছে :
“ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমের খবর মানুষের কাছে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে ফেসবুক”
“জাতিসংঘ দূতের প্রতি সিরিয়ান নারীর জুতা নিক্ষেপ”a
“তাবলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত শতাধিক”
“বাংলাদেশের কক্সবাজার সীমান্তে জন্ম হচ্ছে নতুন স্বাধীন দেশ!”
“আমার রুমে এসে তিনজন হিন্দিতে কথা বলে: মেজর নূরের স্ত্রী”
“পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধের রায়ে সংবিধানে যা ফিরলো, যা ফিরলো না”
“কেন মোদির টুইটের প্রতিক্রিয়া জানাবে না বাংলাদেশ”
“ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমের খবর মানুষের কাছে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে ফেসবুক”
খবরঃ
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ চলার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন দর্শক, শ্রোতা ও পাঠকদের কাছে ঠিকমতো পৌঁছাতে দেওয়া হচ্ছে না। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানে এমনটা দেখা গেছে। …যুদ্ধকালে অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট বা শ্রোতা-পাঠক সম্পৃক্ততা বাড়বে বলে ধারণা করা হয়। অথচ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমের পাঠক সম্পৃক্ততা ৭৭ শতাংশ কমেছে। (https://www.prothomalo.com/world/middle-east/c74tjvijz1)
মন্তব্যঃ
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির পর্যালোচনা অনুযায়ী ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমের খবর মানুষের কাছে পৌঁছাতে ফেসবুকের মত সামাজিক মাধ্যমগুলোর বাধা দেওয়ার খবর উঠে আসলেও এই বিষয়টা অবিশ্বাস্য কিংবা নতুন কিছু নয়। এর আগেও এমন অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। ২০১৮ সালে “ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরায়েলের পাশে ফেসবুক-ইউটিউব” এবং ২০২১ সালে “ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের পোস্ট নিয়ে ফেসবুক-এর ‘পক্ষপাতিত্ব’ পর্যালোচনা করার সুপারিশ করেছে পর্যবেক্ষণকারী বোর্ড” এমন খবরগুলো এর প্রমাণ।
প্রকৃতপক্ষে, মুসলিম উম্মাহ্’র বিপরীতে কাফিরদের যেকোন দ্বন্দ্বে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম কিংবা সামাজিক মাধ্যমগুলো গণমাধ্যমের “সত্য প্রকাশ করার” মূলনীতিকে ছুঁড়ে ফেলে ঐতিহাসিকভাবে সবসময় মুসলিমদের বিপরীতেই অবস্থান নিয়েছে। এমনকি যে বিবিসি এই খবর প্রকাশ করেছে তার বিরুদ্ধেও গাজা গণহত্যার বিপরীতে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষপাত করার প্রমাণ রয়েছে। ডিক্লাসিফাইড ইউকে এর “U.K. media is on Israel’s side” এবং মিডেলিস্ট আই’য়ের “War on Gaza: How British media favours the Israeli narrative” এই দুটো রিপোর্টেই যার তত্ত্ব-উপাত্ত রয়েছে। এমন দ্বিমুখী চরিত্র বর্তমান পশ্চিমা উপনিবেশবাদী নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোর এখন অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মত উপনিবেশবাদী এবং তাদের দোসরদের স্বার্থ রক্ষা করাই যাদের মূল উদ্দেশ্য। কিছুদিন আগেও যেখানে সিরিয়ান বিদ্রোহী নেতা আবু মোহাম্মাদ আল-জোলানির উপর আমেরিকার ১০ মিলিয়ন ডলার বাউন্টি ছিলো। অথচ, আসাদ সরকারের পতনের পর আল-জোলানি যখন ইসলামী শারীয়াহ্ প্রত্যাখ্যান করে পশ্চিমাদের তুষ্ট করা মডারেট শাসনপদ্ধতি গ্রহণ এবং অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বক্তব্য দেয়, তার পরপর আমেরিকা তার ঘোষণাকৃত বাউন্টি প্রত্যাখ্যান করে, আর পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো আল-জোলানিকে প্রশংসায় ভাসাতে থাকে। অথচ, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ্’র কাছে সমাদৃত গাজাবাসীর মুক্তিকামী নেতা শহীদ ইহাইয়া সিনওয়ারকে এই গণমাধ্যমগুলো নেতিবাচকভাবেই তুলে ধরেছিলো। যেমন, ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি আল-জোলানিকে “Rebel Politician” হিসেবে আখ্যায়িত করলেও ইহাইয়া সিনোয়ারকে “Hardliner” হিসেবে তুলে ধরেছিলো। আবার, স্কাই নিউজ আল-জোলানিকে “Rebel Leader” বললেও ইহাইয়া সিনোয়ারকে “Terrorist Mastermind” হিসেবে আখ্যায়িত করে শুধুমাত্র তাদের স্বার্থ পরিপন্থী অবস্থানের জন্য।
বাস্তবতা হচ্ছে, পক্ষপাতিত্ব এবং অন্যায়কে আড়াল করার এমন দ্বি-মুখী চরিত্র পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর পাশাপাশি দেশের দালাল গণমাধ্যমগুলোও পশ্চিমা আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সমানতালে দেখিয়ে যাচ্ছে। যেমন, কিছুদিন আগে নিষিদ্ধ হওয়া সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ শুধুমাত্র পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ ভিত্তিক দল হওয়ার কারণে গণমাধ্যমগুলো নমনীয়ভাবে তাদেরকে “নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন” বলে; আর সত্যনিষ্ঠ রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহ্রীর-কে “নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন” টাইটেল দিয়ে খবর ছাপে শুধুমাত্র ইসলামী আদর্শ ভিত্তিক খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করার জন্য। কেননা, খিলাফত রাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা-ব্রিটেনের স্বার্থের পরিপন্থী। অর্থ্যাৎ, পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের পা চাটলে সঙ্গী, না চাটলে জঙ্গী।
এমন নগ্ন প্রমাণগুলো প্রমাণ করে যে, পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ও তাদের দালাল শাসকেরা সামাজিক মাধ্যম কিংবা গণমাধ্যমগুলোকে তাদের স্বার্থরক্ষা ও জুলুমের মোক্ষম হাতিয়ারে পরিণত করেছে। আফ্রো-আমেরিকান মুসলিম নেতা মালিক আল-শাহবাজ (ম্যালকোম এক্স) বলেছিলেন, “…তাদের (মিডিয়ার) ক্ষমতা আছে নিরাপরাধকে অপরাধী বানানো এবং অপরাধীকে নিরাপরাধ বানানো”।
– আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“জাতিসংঘ দূতের প্রতি সিরিয়ান নারীর জুতা নিক্ষেপ”
খবরঃ
সিরিয়ার সিদনায়া কারাগার পরিদর্শনের সময় জাতিসংঘ দূত গিয়ের পেডারসেনকে লক্ষ্য করে ক্ষুব্ধ এক সিরিয়ান নারী জুতা ছুঁড়ে মারেন। তিনি জাতিসংঘের সিরিয়ায় চলমান দুর্ভোগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে ব্যর্থতার প্রতিবাদে এমনটি করেন।… (https://web.facebook.com/groups/874604596733480/posts/1733653810828550/?_rdc=1&_rdr)
মন্তব্যঃ
সিরিয়ার এই বোনটি ‘জাতিসংঘ’ নামক পশ্চিমা স্বার্থন্বেষী সত্ত্বার সাথে যথার্থই আচরণ করেছেন। বাশার আল-আসাদের লোমহর্ষক নির্যাতনের কথা পশ্চিমারা ও তাদের এই সংঘ বহু আগে থেকেই জানতো, কিন্তু তারা তাকে অব্যাহতভাবে রক্ষা করে গেছে। ২০১৪ সালে সিজার (ছদ্দনাম) নামক এক সিরিয়ান সামরিক ফটোগ্রাফার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কুখ্যাত ‘সিদনায়া’ কারাগারের ভয়াবহ নির্যাতনের ৫৫ হাজার ছবি পশ্চিমা দেশে পাচার করেছিল (পড়ুন: https://www.voanews.com/a/syrian-defector-leaks-shocking-photos-of-torture-victims/2485428.html)। কিন্তু তখন জাতিসংঘ পশ্চিমাদের দালাল বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে তাদের তথাকথিত তদন্ত-তদন্ত খেলার কোন প্রয়োজন অনুভব করেনি। এখন জনগণ কর্তৃক বাশার ক্ষমতাচ্যুত ও বিতাড়িত হওয়ার পর তারা মানবাধিকার রক্ষার নামে পশ্চিমাদের নোংরা স্বার্থ চরিতার্থ করতে কুমিরের কান্না দেখাতে সিদনায়া কারাগার পরিদর্শনে এসেছে।
মূলত বর্তমান জাতিসংঘ হচ্ছে, খ্রিস্টান ক্রুসেডার ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর সেই জোটের ধারাবাহিকতা, যাদের ষড়যন্ত্রে ওসমানী খিলাফত ধ্বংস হয়েছিল এবং যার বর্তমান উদ্দেশ্য হল, জাতিরাষ্ট্রের সীমানা অখন্ড রক্ষার নামে ৫৭টি ভাগে বিভক্ত হওয়া মুসলিম ভূমিগুলোর পুনরায় (একক খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে) ঐক্যবদ্ধ হওয়াকে যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করা। তাছাড়া, তথাকথিত ‘গ্লোবাল গভর্নেন্স’-এর আবরণে অসংখ্য নীতি, কনভেনশন ও সংস্থার মাধ্যমে রাজনীতি, অর্থনীতি (ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ), সামাজিক ও শিক্ষা ব্যবস্থা (ইউনিসেফ), স্বাস্থ্য ব্যবস্থা (ডব্লিউ.এইচ.ও), খাদ্য নিরাপত্তা (ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম)-সহ সর্বক্ষেত্রে ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ নামক পশ্চিমা ধর্মবিশ্বাস থেকে উদ্ভূত নীতিসমূহ চাপিয়ে দেয়া, যেগুলো ইসলামী আক্বীদার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। যেমন, সামাজিক ক্ষেত্রে এটি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ থেকে উৎসারিত ‘নারী-পুরুষের সমান অধিকার’ কিংবা ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নামে ‘সমকামিতার অধিকার’-এর পক্ষে বিশ্বব্যাপী জোড়ালো অবস্থান গ্রহণ করেছে। এদের সম্পর্কে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “এবং ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা – তুমি তাদের জীবনব্যবস্থা অনুসরণ না করা পর্যন্ত তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না” (সূরা আল-বাকারা: ১২০)।
এক কথায়, পশ্চিমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী ও কার্যকরী মাধ্যম হলো এই জাতিসংঘ। বর্তমানে তার সমস্ত কর্মকাণ্ডের পঙ্কিলতা মুসলিমবিশ্বসহ সমগ্র বিশ্ববাসীর নিকট স্পষ্ট। তাই এটির সাথে পবিত্রভূমি আল-শামের এই নাগরিকের আচরণ (জুতা নিক্ষেপ) পশ্চিমা স্বার্থন্বেষী এই সংঘের প্রতি বিশ্ববাসীর তীব্র ঘৃণা ও পশ্চিমে ওয়ার্ল্ড অর্ডার এর বিকল্প ব্যবস্থার প্রতি বিশ্ববাসীর তীব্র আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে। এই বিকল্প হচ্ছে ‘খিলাফত’ নামক মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ ও একক রাষ্ট্রের অধীনে ন্যায়-বিচারের সেই ব্যবস্থাটি, যা ইতিপূর্বে মদিনা নামক একটি ছোট্ট রাষ্ট্র থেকে শুরু করে প্রায় ১৪০০ বছর ধরে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করেছিল।
– মোঃ জহিরুল ইসলাম
“তাবলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত শতাধিক”
খবরঃ
গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের (সাদপন্থী ও জুবায়েরপন্থী) সংঘর্ষে চারজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই তাবলিগ জামাতের জুবায়ের অনুসারীদের সাথি বলে দাবি করেছেন গ্রুপটির মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান। বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। (https://www.bonikbarta.com/bangladesh/jhF0d1O8mbnaOnuN)
মন্তব্যঃ
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ পবিত্র কুরআন-এ বলেন: “মুহাম্মাদ আল্লাহ্’র রাসূল। তিনি (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীরা (মুসলিমরা) কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের পরষ্পরের প্রতি দয়ার্দ্র ও সহানুভূতিশীল” (সূরা আল-ফাতহ: ২৯)। সুতরাং, মুসলিমদের সকল কঠোরতাকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কাফিরদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। যদি এই মুসলিমরা ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষায় নিহত বা আহত হতেন, কিংবা এক গ্রুপ অপর গ্রুপের প্রতি যে কঠোরতা প্রদর্শন করছেন সেই কঠোরতা যদি তারা কাফির-মুশরিক রাষ্ট্রসমূহের আধিপত্য ও ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে প্রদর্শন করতেন তবে তা হতো কতইনা গৌরবের! তাছাড়া, আমাদের পথপ্রদর্শক ও সর্বোত্তম নেতা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন: “যখন দুইজন মুসলিম পরষ্পরের সাথে সংঘাতে জড়ায় এবং একজন নিহত হয় তাহলে হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামী”। প্রশ্ন করা হল: হে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)! হত্যাকারী জাহান্নামে যাবে এটা বোধগম্য; কিন্তু নিহত ব্যক্তি কেন জাহান্নামী হবে? তিনি (সাঃ) বললেন, ‘সুযোগ পেলে সেও অপরজনকে হত্যা করত’ (বুখারী ও মুসলিম)। সুতরাং, মুসলিমদের পরষ্পরের মধ্যে বিভেদ ও সংঘাতের পরিণাম সর্বাবস্থায় অত্যন্ত বিপদজনক এবং এই বিষয়ে অজ্ঞতা বা অবাধ্যতা কোনটিই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ওজর বা কৈফিয়ত হিসেবে গ্রহণ করবেন না।
তুচ্ছ জাতীয়তাবাদী যুক্তি ও মনোমালিন্য থেকে সৃষ্ট ও চলে আসা তাবলীগের এই বিভেদ থেকে সৃষ্ট সংঘাতে মুসলিমদের এই হতাহতের ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে বা খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। ইসলামকে রাষ্ট্র পরিচালনাসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের আকাঙ্খাকে প্রতিহত করতে কাফির-মুশরিক রাষ্ট্রসমূহ যে যুক্তি দিয়ে মুসলিম উম্মাহ্’র আত্মবিশ্বাসের মধ্যে ফাটল ধরাতে চায় তার মধ্যে অন্যতম হল: “ইসলামী দলগুলোর মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনা করার মত যোগ্য লোক নেই” এবং “ইসলামী দলগুলোর নিজেদের মধ্যেই কোন ঐক্য নেই”। এই যুক্তিকে প্রতিষ্ঠা করতে, বিশেষ করে আমেরিকা এখন ‘ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বের ব্যাপারে অজ্ঞ’ এবং কাফিরদের ভূরাজনৈতিক কৌশলের ব্যাপারে অসচেতন কিংবা পরাজিত মানসিকতা সম্পন্ন ব্যাক্তিত্বদেরকে মুসলিম ভূখন্ডগুলোতে নেতৃত্বের আসনে বসানোর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে বিশেষ দল ও ব্যক্তিত্বদেরকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান, বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের প্রচার-প্রসারের সুযোগ প্রদান এবং তাদেরকে মডারেট মুসলিম হিসেবে সমাদৃত করে পশ্চিমা বিশ্বে জনমত তৈরীর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা প্রত্যক্ষ করলাম তাবলীগের এই বিভেদ, আর সেই বিভেদ নিরসনে ইসলামী জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ আনাড়ি ছাত্র-প্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ, যা ইসলামী আদর্শকে নিতান্তই হেয় ও খাটো হিসেবে উপস্থাপন করা অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়।
বর্তমান বিশ্বে ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বের একমাত্র কান্ডারী এবং ইসলাম-পুঁজিবাদের সভ্যতার সংঘাত ও কাফিরদের ভূরাজনৈতিক কৌশলকে অর্ধশতাব্দির অধিক সময় ধরে সফলভাবে প্রভাবিত করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহ্রীর হলো এই উম্মাহ্’র আশা-ভরসার স্থল। কুফরের সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে এই উম্মতকে পুনরায় নেতৃত্ব ও সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করার সকল যোগ্যতা ও প্রস্তুতি একমাত্র এই দলটিরই রয়েছে। নবুয়্যতের আদলে খিলাফত পুন:প্রতিষ্ঠা করে এই দলটি উম্মাহ্’র মধ্যে বিদ্যমান সকল হানাহানির চির আবসান ঘটাবে এবং উম্মাহ্’র সকল সামর্থ্য ও কঠোরতাকে একীভূত করে কাফিরদের মোকাবেলায় নিয়োজিত করবে। তাই, উম্মাহ্’র অভ্যন্তরীণ হানাহানি নিরসনে ও কাফিরদের ষড়যন্ত্র মোকবেলায় হিযবুত তাহ্রীর-এর হাতকে শক্তিশালী করতে দল-মত-পক্ষ নির্বিশেষে সকলের এগিয়ে আসা কর্তব্য।
– রিসাত আহমেদ
“বাংলাদেশের কক্সবাজার সীমান্তে জন্ম হচ্ছে নতুন স্বাধীন দেশ!”
খবরঃ
বাংলাদেশের পাশে জন্ম নিতে যাচ্ছে আরো একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। যেকোন সময় আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে দেশটির। গত ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি মংডু বিজয় করে। ইতোমধ্যে ভারত-চীনের মতো দেশগুলো যোগাযোগ শুরু করেছে আরাকান আর্মির সাথে। তৎপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পড়তে পারে ভৌগলিক সম্পর্কের নতুন সমীকরণে। (https://www.amadershomoy.com/strange/article/132070/বাংলাদেশের-কক্সবাজার-সীম)
মন্তব্যঃ
বার্মা তথা মিয়ানমারে ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে খলিফা হারুন আল-রশিদের সময়ে ইসলাম প্রবেশ করেছিল, যখন ইসলামী খিলাফত বহু শতাব্দী ধরে বিশ্বের নেতৃত্বশীল রাষ্ট্র ছিল। আরাকান প্রদেশটি ১৪৩০ সাল থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ৩৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুসলিমদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল। মুসলিমদের ঐক্য ও শক্তির মূল এই খিলাফতকে ভেঙ্গে উপনিবেশবাদীরা তাদের স্বার্থে এই মুসলিম ভুমিগুলোকে বিভিন্ন ছোট ছোট দেশে বিভক্ত করেছে। বৃটেন, আমেরিকার মত উপনিবেশবাদীদের ভুরাজনৈতিক স্বার্থেই পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ইত্যাদি জাতিরাষ্ট্রগুলো গঠন করা হয়। ‘আরাকান রাষ্ট্র’ এরকমই আরেকটি প্রকল্প যা উপনিবেশবাদী দেশগুলোর ভুরাজনৈতিক স্বার্থের দন্দ্বের একটি সাম্ভব্য ফল।
মুসলিম শাসকদের দায়িত্ব হচ্ছে মুসলিমদের ভুমিগুলোকে বিচ্ছিন্নতা থেকে রক্ষা করা, এবং গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুতির শিকার মুসলিমদের রক্ষা করা। অথচ এই শাসকেরা ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থে এসব কৃত্রিম বর্ডার অতিক্রম করতে না পারলেও উপনিবেশবাদীদের তৈরী নতুন রাষ্ট্রকে ঠিকই মেনে নেয় এবং তাদেরকে সাদরে বরণ করে। যেমনটি আমরা দেখলাম সম্প্রতি পূর্ব তীমুরের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক সংবর্ধনা দেয়া হলো, অথচ যে রাষ্ট্রটিকে তৈরিই করা হয়েছিল মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াকে ভেঙ্গে দুর্বল করার জন্য। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আরাকান আর্মি দ্বারা নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের দেশে ঢুকতে না দিলেও, ‘আরাকান রাষ্ট্র’-এর ধারণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। বরং আরাকান আর্মির মংডু বিজয়ের আগেই এক ধাপ এগিয়ে গত অক্টোবরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মো: ইউনুস মিয়ানমারের রাখাইনে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য জাতিসংঘের দ্বারা গ্যারান্টেড একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরি এবং তাদের সহায়তা করার উপায় খুঁজে বের করার জন্য বিশ্বশক্তির প্রতি আহ্বান জানান (দেখুনঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৫ অক্টোবর ২০২৪)। যা প্রকারান্তে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সাহায়তা করবে।
পশ্চিমাদের বন্ধু কিংবা তাদের স্বার্থরক্ষায় নিয়োজিত কারও হাতে মুসলিমদের ভুমি, জীবন কিংবা মর্যাদা কোন কিছুই নিরাপদ না। যেখানে মুসলিম শাসনের অধীন হতে দখল হয়ে যাওয়া ভূখন্ডগুলোকে পুনরায় ইসলামী শাসনের অধীনে নিয়ে আসাই হচ্ছে ইসলামী বিধান, সেখানে আমাদের শাসকেরা সেগুলোকে পশ্চিমাদের স্বার্থের ভূখণ্ডে পরিণত হওয়াকে নীরবে প্রত্যক্ষ করছে ও সমর্থন করছে। তাই মুসলিমদের উচিত অতিসত্ত্বর সেই গৌরবজনক খিলাফত ফিরিয়ে আনায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করা। যার শাসক খলিফা মুসলিমদের অভিভাবক হিসেবে এবং ইসলামের স্বার্থে কাজ করবেন। মুসলিম ও তাদের ভূখণ্ডের ঐক্য ও নিরাপত্তাকে যিনি জীবন-মরণ তথা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করবেন এবং এসবের সুরক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করবেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “প্রকৃতপক্ষে ইমাম (খলিফা) হলেন ঢালস্বরূপ, তার পিছন থেকে যুদ্ধ করা হয়, তার দ্বারা (শত্রুদের কবল থেকে) নিরাপত্তা পাওয়া যায়” (মুত্তাফিকুন আলাইহি)।
– মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“আমার রুমে এসে তিনজন হিন্দিতে কথা বলে: মেজর নূরের স্ত্রী”
খবর:
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ মেজর তানভীর হায়দার নূরের স্ত্রী তাসনুভা মাহা ন্যায়বিচারের দাবিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামীর লাশ এখনও পাওয়া যায়নি এবং এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বারবার চেষ্টা করেও গত চার মাসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।…২০০৯ সালের ৩ মার্চ আমি বলেছিলাম, পিলখানায় যারা আমাকে ধরে নিয়ে বন্দী করেছিল, তাদের মধ্যে তিন জন হিন্দি ভাষা বলছিল। এ জন্য এ পর্যন্ত আমি অনেক অপমানের শিকার হয়েছি, কোনো জায়গায় আমাকে চাকরি করতে দেওয়া হয়নি।’ তাসনুভা মাহা আরও বলেন, তার সন্তানদের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে তাদের পোশাক খুলে চেক করা হয় এবং বলা হয়, পাকিস্তানি বাচ্চা বাঁচিয়ে রাখা হবে না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিডিআর সদস্যরা কি কখনো এমন কথা বলতে পারে? নাকি তার স্বামী কিংবা তিনি পাকিস্তানি ছিলেন? (www.dailyjanakantha.com/national/news/754328)
মন্তব্য:
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলের একেবারে শুরুতে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের নির্মম হত্যাকাণ্ডে ভারতের সম্পৃক্ততা এখন আর গোপন কিছু নয়। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ মেজর তানভীর হায়দার নূরের স্ত্রী স্পষ্টভাবেই বলছেন, “পিলখানায় যারা আমাকে ধরে নিয়ে বন্দী করেছিল, তাদের মধ্যে তিন জন হিন্দি ভাষা বলছিল।”
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ঘোষিত তথাকথিত “ওয়ার অন টেরর”-এর নামে “ওয়ার অন ইসলাম”-এর বাস্তবায়নে এই অঞ্চলে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র ভারতকে নিয়োজিত করে। “ওয়ার অন টেরর”-এর অংশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশের সেনাবাহিনীগুলোকে দুর্বল ও অনুগত করার বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে শুদ্ধি অভিযানের নামে ইসলামপন্থী অফিসারদেরকে নির্মমভাবে হত্যা ও বরখাস্ত করা হয়। বাংলাদেশে মার্কিন-বৃটেন-ভারত প্রযোজিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের ডিজিটাল কারচুপির নির্বাচনে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় এসেই ভারতের পরিকল্পনা ও অংশগ্রহণে পিলখানায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইসলামপন্থী, চৌকস ও সাহসী অফিসারদেরকে হত্যা করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিতে ভারতের দ্বারা সংঘটিত এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি দুর্বল ও তাবেদার বাহিনীতে পরিণত করা।
যেহেতু এই হত্যাকাণ্ডে যালিম হাসিনা ছিল ভারতের সহযোগী, তাই তার শাসনামলে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হওয়াটা স্বাভাবিকভাবেই অসম্ভব ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও মার্কিন-ভারতের প্রতি নতজানু নীতি অবলম্বন করার কারণে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারে আন্তরিক নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১৫ ডিসেম্বর পিলখানা হত্যাকাণ্ড তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না এমন ঘোষণার পর সারাদেশে তীব্র প্রতিবাদের মুখে দুইদিন পর আবার ঘোষণা করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তবে এই কমিটির সদস্য সংখ্যা, কর্ম পরিধি ইত্যাদি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানানো হয়। অর্থাৎ সরকার জনমতের চাপে একটি লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সেটি একটি আমলাতান্ত্রিক, গতানুগতিক, শ্লথ ও নিষ্ফল কমিটি ছাড়া আর কিছুই হবে না।
দেশের সচেতন নাগরিক, পিলখানা শহীদ পরিবার ও নিষ্ঠাবান সেনা কর্মকর্তাদের এটা উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, একটি আদর্শভিত্তিক শক্তিশালী রাষ্ট্র ছাড়া পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু বিচার কখনোই সম্ভব নয়। কেননা এমন কোনো সরকারই পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সত্য উন্মোচন করবে না যারা মার্কিন-বৃটেন-ভারতের তাবেদার। আর পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত কোন সরকার তাদের তাবেদারীর বাইরে যেতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী সরকারই পারবে প্রকৃতপক্ষে মার্কিন-বৃটেন-ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে ও এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সত্য প্রকাশ ও প্রকৃত দোষীদের বিচার করতে। কেননা খিলাফত রাষ্ট্র কোনো সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তিকে পরোয়া করবে না, বরং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। এবং এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সত্য উন্মোচন ও দোষীদের বিচার করবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা’র নির্দেশ: “হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের সাক্ষ্যদাতা হিসেবে আল্লাহ্’র পথে দৃঢ়ভাবে দণ্ডায়মান থাকো এবং কোনো সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনো ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর, এটা তাক্বওয়ার নিকটবর্তী” [সূরা মায়িদাহ্: ৮]
– রাশিদ হাসান মাহাদি
“পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধের রায়ে সংবিধানে যা ফিরলো, যা ফিরলো না”
খবরঃ
বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সরাসরি না ফেরানোসহ পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে তা পরবর্তী সংসদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে ওই রায়ের মাধ্যমে আনা সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদ ফিরলেও আপাতত কিছু বিষয় বাদ পড়েছে। [পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধের রায়ে সংবিধানে যা ফিরলো, যা ফিরলো না ]
মন্তব্যঃ
বর্তমানে রাজনীতির মাঠে ‘নির্বাচন’ নিয়ে প্রচুর আলোচনা চলছে। তারই প্রেক্ষিতে আওয়ামী আমলের পঞ্চদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল) বাতিলের রায় ঘোষিত হলো। এতে অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন যে যালিম হাসিনার এই আইন বাতিল করে একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলো, যেন জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। কিন্তু “গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন” কতটুকু সুষ্ঠু হতে পারে এবং এই পদ্ধতিতে আসা “নির্বাচিত শাসক” কি কোন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি হতে পারে- এই প্রশ্নগুলোর প্রকৃত উত্তর আমাদের জানা দরকার।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসক নির্বাচিত হওয়ার অন্যতম যোগ্যতা হলো প্রার্থীর টাকা খরচের সক্ষমতা কিংবা জনপ্রিয়তা। জনগণের তত্ত্বাবধানের জন্য তার জ্ঞান-মেধা, সততা-নিষ্ঠা এখানে মূখ্য বিষয় নয়। তাই এখানে সম্পদশালী ব্যবসায়ী, নায়ক-গায়ক-খেলোয়ার, যাত্রাপালা-কৌতুক অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা গ্যাং স্টাররা তাদের জনপ্রিয়তা কিংবা টাকার জোরে নির্বাচিত হয়ে আসে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এবং নির্বাচনী প্রচারণায় চলে অঢেল টাকার ছড়াছড়ি। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি, ২০২৪ এর মার্কিন নির্বাচনে মোট খরচ হয় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার। সাধারণত এই ধরনের নির্বাচনের ব্যয়ভার বহন করে সমাজের ধণী ব্যক্তি বা তাদের তৈরি করা প্রতিষ্ঠানসমূহ। যেমন ২০২৪-এ হয়ে যাওয়া মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প অথবা কমলাকে জেতানোর জন্য সিংহভাগ খরচ করে ইলন মাস্কের মত পুঁজিপতিরা। বাংলাদেশও এই নিয়মের বাইরে নয়। আওয়ামী কিংবা বিএনপি শাসনামলে আমরা দেখেছি, নির্বাচিত সাংসদেরা জনপ্রিয়তা ও টাকার জোরে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। যার ফলে আমরা দেখেছি, ইয়াবা বদি, বিচ্ছু শামছু, মমতাজ, ফালু, বাবর কিংবা ৩০০ আসনের মধ্যে অধিকাংশই কোটিপতি ও অর্ধেকেরওই ব্যবসায়ী। অর্থাৎ, এটা বলাই যায় যে, তথাকথিত গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতি মূলতঃ পুঁজিপতি, মাফিয়া ডন ও বিনোদন জগতের মিলনমেলার তৈরির পদ্ধতি; এখানে প্রকৃতপক্ষে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন হয় না। তাই, এখানে নির্বাচন পরিচালনায় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা থাকলো কি থাকলো না, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলো কি হলো না এটা আদৌ কোন মুখ্য বিষয় নয়! প্রকৃতপক্ষে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এবং এই পদ্ধতি থেকে নির্বাচিত শাসক উভয়ই বৈশিষ্ট্যগতভাবেই ত্রুটিপূর্ণ।
অন্যদিকে, ইসলামী শাসনব্যবস্থায়, খলিফা বা শাসক নির্বাচনে জনপ্রিয়তা কিংবা সম্পদ কোন শর্তই নয়। ইসলামী শারী‘আহ্ অনুযায়ী মাহকামাতুল মাযালিম আদালত (ক্ষমতাসীনদের বিচার করার আদালত) শাসক হওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে প্রার্থীর ৭টি গুণাবলী নিশ্চিত করবে। তা হল- ১। মুসলিম ২। পুরুষ ৩। স্বাধীন ৪। বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) ৫। সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী, ৬। ন্যায়পরায়ণ ৭। দায়িত্ব পালনে যোগ্য ও সক্ষম। এই ৭টি শর্তপূরণ করতে পারা প্রার্থীরাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। কোন প্রকার অর্থ বিনিয়োগ করার কোন সুযোগ দেয়া হবে না। এতে করে সহজেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে আসা অযোগ্য আর লোভী ব্যক্তির শাসক হওয়ার ধারাবাহিকতা দূর হয়ে যাবে। উম্মাহও পাবে তার প্রকৃত অভিভাবক।
– জাবির জোহান
“কেন মোদির টুইটের প্রতিক্রিয়া জানাবে না বাংলাদেশ”
খবরঃ
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ অর্জন তথা বিজয়কে ম্লান করে ১৬ই ডিসেম্বর কেবলমাত্র ‘ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়’ বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে টুইট বার্তা দিয়েছেন তার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখাবে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ নিয়ে দেশটির ঢাকাস্থ দূতকে তলব বা কোনো প্রটেস্ট নোট পাঠানোর আপাতত চিন্তা নেই বলে জানিয়েছেন সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা। এটাকে ‘মোদির রাজনৈতিক বক্তব্য’ ধরে নিয়ে ইগনর বা এড়িয়ে যাওয়ার নীতি নিয়েছে সেগুনবাগিচা। (https://mzamin.com/news.php?news=140348#gsc.tab=0)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের নতজানু সরকারগুলো (হোক সেটা আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন) ভারতের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে কথা বলবে সেটা আমরা কখনোই আশা করিনা। এবং সেই ধারনারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই ‘গুজরাটের কসাই’ নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী বক্তব্যের বিপরীতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সর্বংসহা আচরণে। যদিও আমরা হাস্যকর বৈপরীত্য দেখতে পাই তসলিমা নাসরিন কর্তৃক বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানের উদ্বেগ নিয়ে করা বক্তব্যের প্রতিবাদে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর জবাবে। অর্থাৎ, এই সরকার নিজেকে ‘খিলাফত’ ও ‘ইসলাম’ বিরোধী পশ্চিমামনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে যতটা তৎপর ঠিক ততটাই উদাসীন ভারতের মত শত্রুরাষ্ট্রের আগ্রাসী কথা ও আচরনের ব্যাপারে।
ভারত আমাদেরকে শত্রুরাষ্ট্র হিসেবে দেখে। এটিই তার ফরেন পলিসি। সীমান্তে প্রতিদিন বাংলাদেশী হত্যা, হাসিনার মত খুনীকে আশ্রয় দেয়া, ইসকন দিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি, পানি সন্ত্রাস, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, পিলখানায় সামরিক অফিসার হত্যা ইত্যাদি যার অসংখ্য উদাহরণের কিছু অংশ। তাই, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাই নেইম কি লিখেছে সেটি কোন গুরুত্ব বহন করে না। উপরন্তু আমরা দেখেছি বাংলাদেশের একজন উপদেষ্টা যখন ভারতের কিছু রাজ্য নিয়ে অবিভক্ত বাংলার কথা বলে তখন ভারত কিন্তু ঠিকই প্রতিবাদ লিপি পাঠায়।
বর্তমান নতজানু ফরেন পলিসি দিয়ে ভারতের মত শত্রুরাষ্ট্রকে মোকাবেলা করা যাবে না। এর জন্যে প্রয়োজন শক্তিশালী ফরেন পলিসির অনুসরণ ও বাস্তবায়ন। ইসলামী বিধান অনুযায়ী ভারত একটি শত্রুরাষ্ট্র এবং ভারতের অধিকৃত ভূমি মুসলিমদেরই ভূমি যেহেতু মুসলিমরাই ভারতবর্ষ একসময় বিজয় করেছিল। মুসলিমরা যেসকল ভূমি বিজয় এবং শাসন করেছে সেসকল ভূমি কিয়ামতের আগপর্যন্তই মুসলিমদের ভূমি এবং প্রতি ইঞ্চি ভূমিই মুসলিমদের অধীনে ফিরিয়ে আনতে হবে। ফলে, খিলাফত রাষ্ট্র প্রথম দিন থেকেই ভারতকে শত্রুরাষ্ট্র ঘোষণা করবে এবং ভারতের সাথে সবরকমের সম্পর্ক ছিন্ন করবে। এবং ভারতের প্রতি ইঞ্চি ভূমি খিলাফতের সাথে সংযুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনী প্রেরন করবে। আর সেই সেনাবাহিনী হবে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র নিকট অত্যাধিক প্রিয়। কারণ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “অবশ্যই তোমাদের একটি দল হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ্ তাদের বিজয় দান করবেন। তারা হিন্দুস্তানের রাজাদের শিকল দিয়ে বেঁধে টেনে আনবে। আল্লাহ্ সেই মুজাহিদদের সকলকে ক্ষমা করে দেবেন।” আশা করা যায় নবুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত বাংলাদেশেই সূচিত হবে এবং সেই হিন্দুস্তানের রাজা হবে নরেন্দ্র মোদি যাকে শিকল দিয়ে বেধে মুহাম্মদ বিন কাশিমের উত্তরসূরীরা টেনে নিয়ে আসবে।
– মো. হাফিজুর রহমান