working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 125

Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১২৫ তম সংখ্যা । ০৭ অক্টোবর, ২০২৪

এই সংখ্যায় থাকছে :

 

“লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় উদ্বাস্তু হয়েছে ১০ লাখ মুসলিম”

“ঢাকার জায়গায় জায়গায় কালেমা খচিত কালো পতাকা মিছিল দেখা গেছে”

“হঠাৎ কেন এতটা অশান্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য অঞ্চল?”

“বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হবে না: রিজভী”

“নিবর্তনমূলক সব কালো আইন বাতিলের দাবি” 

“হিযবুত তাহরীরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি”

“চাঁদাবাজি: আগের নেতারা যা করেছেন, নতুনরাও তাই করছেন”

“ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তে বাহবা পেয়েছি: সালেহউদ্দিন আহমেদ”

“লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় উদ্বাস্তু হয়েছে ১০ লাখ মুসলিম”

খবরঃ

গত সোমবার থেকে লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় প্রায় ১০ লাখ মুসলিম উদ্বাস্তু ও প্রায় ৮০০ মুসলিম নিহত হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবানন থেকে ৫০ হাজারের বেশি মুসলিম ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। লেবাননের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়ও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় অন্তত ৪১ হাজার ৫৩৪ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৯৬ হাজারের বেশি। (https://www.prothomalo.com/world/middle-east/hjr748avq0)

মন্তব্যঃ

‘আমি লেবাননে আমাদের ভাইদের বলতে চাই, আপনারাই বিজয়ী হবেন। ইসরায়েলি শত্রুদের বিরুদ্ধে এটাই আমাদের প্রথম বা শেষ যুদ্ধ নয়!’, লেবানন ও গাজায় ইসরায়েলী গণহত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গত শুক্রবার ইয়েমেনের রাজধানী সা’নায় হাজার হাজার মুসলিমের সাথে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বিক্ষুব্ধ মুরতাজা আল-মুতাওয়াক্কিল। যাদের নিজেদেরই ব্যাপক আর্থিক ও মানবিক সহায়তা দরকার সেই দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্রপীড়িত ইয়েমেনের এই মুসলিম ভাইয়ের কথাগুলো মূলত বিশ্বের ১৯০ কোটি মুসলিমের অন্তরের কথা। এই মুহূর্তে পুরো মুসলিম উম্মাহ্‌ একজন ন্যায়পরায়ন খলিফার নেতৃত্বে মুসলিমদের সম্মিলিত ও অপরাজেয় সেনাবাহিনীর কাছে অবৈধ দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের পরাজয় ও পতন এবং ইহুদিদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ভবিষ্যতবাণীর বাস্তবায়ন দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন: রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “কিয়ামত ততক্ষন পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যতক্ষন পর্যন্ত না মুসলিমরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে ও তাদেরকে হত্যা করবে; এসময় প্রতিটা গাছ ও পাথর মুসলিমদেরকে আহ্বান করে বলবে, ‘হে মুসলিম, হে আল্লাহ্‌’র বান্দা! আমার পিছনে একটি ইহুদী পালিয়ে আছে, আসো এবং তাকে হত্যা কর’ (সহীহ মুসলিম: ২৯২২)।

পশ্চিমাদের কর্তৃক অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠার সময়ের আল-ক্বুদস বা ফিলিস্তিনের ১৯৪৮ পূর্ব ও পরবর্তী হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলোকে সেখানকার মুসলিমরা ‘নাক্ববা’ বা মহাবিপর্যয় বলে অভিহিত করে থাকেন। কিন্তু আমাদের প্রজন্মের মুসলিমদের কাছে সেই নাক্ববা বা মহাবিপর্যয় একটি অপরিচিত ইতিহাস এবং চাক্ষুষ প্রমাণের অভাবে সেই ‘মহাবিপর্যয়ের’ হৃদয়বিদারক বর্ণনাগুলো আমাদের হৃদয়কে নাড়া দেয় না। ফলে, ‘নাক্ববা’য় এবং আমাদের পুর্ববর্তী প্রজন্মের উপর ইহুদিদের কর্তৃক সংঘটিত জঘন্য অপরাধসমূহের জন্য ইহুদিদেরকে পাকড়াও করার মাসনিকতা আমাদের প্রজন্মের মুসলিম বীরদের মধ্যে না থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু গাজায় ইহুদিবাদীদের গণহত্যার ও ধ্বংসযজ্ঞের হাজার হাজার ঘটনার চাক্ষুষ প্রমাণের ভিডিও ক্লিপ ও ছবি বর্তমান প্রজন্মের হৃদয়কে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে। ফিলিস্তিনের নারী-শিশু ও অসহায় যুবক-বৃদ্ধদের বুকফাটা অর্তনাদ ও আকাশপাণে আরশের অধিপতির নিকট তাদের নির্বাক অভিযোগের নিস্তব্ধ শূণ্য-দৃষ্টি উম্মাহ্‌’র ত্বেজদীপ্ত সন্তানদের পৌরুষে ও ঈমানে আঘাত লেগেছে। এতে তাদের অন্তরে প্রতিশোধের যে আগুন প্রজ্জলিত হয়েছে তা অপরাধীদেরকে তাদের আনুপাতিক শাস্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত নিভবে না। ফলে, আল-ক্বুদসের মুক্তি ও রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ভবিষ্যতবাণীর বাস্তবায়ন এই প্রজন্মের মুসলিম বীরদের দ্বারাই সংঘটিত হবে, ইনশাআল্লাহ। এই আশু মুক্তি ও বিজয়ের আবদ্ধ দরজার একমাত্র চাবি হল খিলাফত শাসনব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন, যা অচিরেই আত্মপ্রকাশ করে মুসলিম উম্মাহ্‌’র মধ্যে আবারও প্রাণের সঞ্চার করবে। “শপথ ঊর্ধশ্বাসে ধাবমান অশ্বসমূহের, যাদের ছুটন্ত ক্ষুরের আঘাতে বিচ্ছুরিত হয় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। যারা প্রভাতে (শত্রুশিবিরে) ধ্বংসলীলা ছড়ায় ধুলার ঝড় উড়িয়ে এবং আক্রমন করে ঢুকে পরে শত্রুসেনার মাঝ বরাবর! (সূরাহ্ আল-আদিয়াত: ১-৫)

    –    রিসাত আহমেদ

“ঢাকার জায়গায় জায়গায় কালেমা খচিত কালো পতাকা মিছিল দেখা গেছে”

খবরঃ

ঢাকার জায়গায় জায়গায় কালেমা খচিত কালো পতাকা মিছিল দেখা গেছে। স্কুল-কলেজের বাচ্চারা পতাকা হাতে মিছিল করছে, প্ল্যাকার্ড বহন করছে, খেলাফতের দাবি জানাচ্ছেন। কালেমা প্রতিটা মুসলিমের কাছে পবিত্র, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে পতাকা বহন করা হচ্ছে সেগুলো আপামর মুসলিমের নয় বরং আইএস এবং আলকায়েদার মতো সংগঠনের যারা দেশে দেশে সন্ত্রাসবাদ কায়েম করেছে। এসব সন্ত্রাস একদিকে যেমন মুসলিম প্রধান দেশগুলোকে অশান্তি ডেকে এনেছে তেমনি পশ্চিমা বিশ্বের জন্য ‘ওয়ার অন টেরর’ বয়ানের রাস্তা সহজ করে দিয়েছে। এই যুদ্ধের নামে পশ্চিমারা দেশে দেশে নিজেদের আগ্রাসন চালিয়েছে। (https://banglaoutlook.org/opinion/237808)

মন্তব্যঃ

আলহামদুলিল্লাহ্, এ কারণে যে এই লেখক এটা অনুধাবন কিংবা মেনে নিয়েছেন, পশ্চিমাদের ‘ওয়ার অন টেরর’ ছিল মুলত ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী একটি আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ। কিন্তু তিনি যা উল্লেখ করেননি তা হল, প্রথমে মুসলিম ভূমিগুলোতে পশ্চিমারা উপনিবেশিক কায়দায় সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছিল এবং এই আগ্রাসনের প্রতিহত করতে অনেক ভূখন্ডের মুসলিমরা স্বশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছিলেন। ঠিক যেভাবে ফিলিস্তিনের মুসলিমদের বসতভিটা দখল করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর সেখানকার কিছু মুসলিম স্বশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। অর্থাৎ, মুসলিম ভূখন্ডে পশ্চিমা আগ্রাসন আগে হয়েছে এবং তার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ আগ্রাসন প্রতিহত করতে স্বশস্ত্র আন্দোলন বা প্রতিরোধ উদ্ভব হয়। তাই সবার আগে উচিত পশ্চিমাদেরকে তাদের আগ্রাসনের জন্য কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন করা, তারপর অন্য আলোচনা!

আরব বসন্তের ঢেউ যখন সিরিয়ায় এসে লাগে, তখন মুসলিম উম্মাহ্‌ কসাই বাশার আল আসাদের পতন এবং সেখানে খিলাফতে রাশিদাহ্‌ পুন:প্রতিষ্ঠার প্রহর গুনছিল। ঠিক তখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা, মুসলিম উম্মাহ্‌’র আকাঙ্খার মধ্যে কলঙ্ক লেপন করতে decoy operation হিসেবে সিরিয়ায় তথাকথিত আই.এস.আই.এস এবং ‘নকল খিলাফত’ এর নাটক মঞ্চস্থ করে। তথাকথিত আই.এস-এর নামে সংঘটিত সকল অপকর্ম ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য যে আমেরিকা, তার কুখ্যাত সিআইএ ও অন্যান্য ভাড়াটে খুনি বাহিনী দায়বদ্ধ, তা এখন ওপেন সিক্রেট।

কালো পতাকার অজুহাতে আমেরিকা-ভারত আমাদের দেশে সামরিক আগ্রাসন চালাবে, এই ভয়ে মুসলিমরা ভীত নয়; কারণ এই ভয় মুসলিম আত্মপরিচয়ের বিপরীত। আমেরিকা-ভারত উভয় দেশই আমাদের ভূমিতে দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক আগ্রাসন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, রাজনৈতিক আগ্রাসন চালিয়ে আসছে যার কারনেই মূলত আমাদের এই দুর্দশা। কালো পতাকার অজুহাতে আমেরিকা-ভারতের সামরিক আগ্রাসনের জুজু যারা দেখাচ্ছেন তারা কী এর বিরুদ্ধে কোন কথা বলছেন? এটা কী স্ববিরোধীতা নয়? তারা কী জানেন না, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আয়াত নাযিল করেছেন যে, যারা ইহুদি, খ্রীস্টান ও মুশরিকদেরকে বন্ধু ও রক্ষক হিসেবে গ্রহণ করে তারা তাদেরই অন্তর্ভূক্ত? আর, যারা কালো পতাকাকে পতিত আওয়ামী লীগের সাথে জড়িয়ে কথা বলছেন তারা কী সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন থেকে আওয়ামী প্রেতাত্মাদের অপসারণের ব্যাপারে কোন জোড়ালো উদ্যোগ নিয়েছেন?

কালিমা খচিত কালো পতাকা প্রকৃতপক্ষে আপামর মুসলিমের হৃদয়ের পতাকা যাকে কলঙ্কময় ও ঘৃণ্য হিসেবে উপস্থাপন করার জন্যই আমেরিকা বিশ্বব্যাপী আইএস-ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু দেশের ইসলাম ও রাসূলপ্রেমী জনগণ এই কালো পতাকাকে হাতে তুলে নিয়ে আমেরিকা-ভারতকে চপেটাঘাত করেছে ও তাদের অন্তরে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাই কালো পতাকার বিরোধীতাকারীরা প্রকৃতপক্ষে আমেরিকা-ভারতের এই ভয় দূর করার ভূরাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। কালিমা খচিত কালো পতাকা হল রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর পতাকা। তিনি (সাঃ) নিজ হাতে মুসলিম সেনাবাহিনীর রেজিমেন্ট (ব্যাটালিয়ন) ও ব্রিগেড কমান্ডারদেরকে কালো পতাকা (রাইয়া) প্রদান করেছিলেন (খায়বার সেনা-অভিযানের সময় কমান্ডার আলী (রা.)-কে এবং রোমানদের বিরুদ্ধে সেনা-অভিযানের সময় কমান্ডার উসামা বিন যায়িদ (রা.)-কে)। এখন যারা স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীদের হাতে কালো পতাকা দেখেই ভয়ে আবোল-তাবোল বলছে তাদের ভয়কে বাস্তবে রূপ দিতে অচিরেই আল্লাহ্‌’র ইচ্ছায় কালো পতাকা তার যথাযথ স্থান দেশের সামরিক বাহিনীর প্রতিটি রেজিমেন্ট (ব্যাটালিয়ন) ও ব্রিগেডের প্রতীকে পরিণত হবে, ইনশা’আল্লাহ্‌।

    –    রায়হান আহমেদ 

“হঠাৎ কেন এতটা অশান্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য অঞ্চল?”

খবরঃ 

খাগড়াছড়িতে চোর সন্দেহে পিটুনিতে এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার পর পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে হঠাৎ কেন তিন পার্বত্য জেলা এমন অশান্ত হয়ে উঠলো সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।…এই পরিস্থিতিরি জন্য একে অপরকে দায়ী করছে পাহাড়ি ও বাঙালি সংগঠনগুলো। …পাহাড়ি সংগঠনগুলোর দাবি, পার্বত্য শান্তিচুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ের এই সংকট সহজে কাটবে না। যদিও পার্বত্য অঞ্চলের একটি বাঙালি সংগঠন হঠাৎই পাহাড় অশান্ত হওয়ার পেছনে অন্য রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে দাবি করেছে।  (https://www.bbc.com/bengali/articles/c20mzml7v81o)

মন্তব্যঃ 

সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা হঠাৎ করে হলেও এর পিছনে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে ব্রিটিশ আমল ধরে চলে আসা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তার সঠিক সমাধানের অভাবই মূল কারণ। পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বে ভারতের মিজোরাম, উওরে ত্রিপুরা, দক্ষিণে মায়ানমার এবং পশ্চিমে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড অবস্থিত হওয়ায় ভৌগলিকভাবে এই অঞ্চলের গুরুত্ব অত্যাধিক। তাই স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে পার্বত্য চট্রগ্রামকে আলাদা করতে এই অঞ্চলে বিদেশী মদদ বিশেষ করে ভারতের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং সহিংসতা চলমান। বর্তমানে পার্বত্য চট্রগ্রামে বাঙালি জনগোষ্ঠীর পাশপাশি মূল ৫ টি উপজাতি সহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আরও ১০ টি উপজাতির বসবাস রয়েছে। এর মধ্যে বাঙালি জনগোষ্ঠী ৫০.০৬%, চাকমা ২৪.৬৮%, মারমা ১১.৩৮%, ত্রিপুরী ৭.২৩%, মুরং ২.৮%, তঞ্চঙ্গ্যা ২.৩৩% এবং অন্যান্য ১.৫২%। অর্থ্যাৎ, পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতিদের সংখ্যা এখন মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪৯.৯৪ শতাংশ। ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ১১ টি উপজাতি গোষ্ঠীকে নিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) গঠনের মধ্যে দিয়ে নিজেদেরকে পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী দাবি করে আলাদা স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল গঠনের দাবি শুরু করে উপজাতি গোষ্ঠীগুলো। এই লক্ষ্যে পরবর্তিতে জেএসএস এর সামরিক শাখা  শান্তিবাহিনী গঠিত হয় এম এন লারমা ভাই সন্তু লারমার নেতৃত্বে। শান্তিবাহিনী গঠনের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনী এবং বাঙালিদের উপর তাদের দাবি আদায়ে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে এসেছে। পরবর্তিতে ১৯৯৭ সালে বাংলদেশ সরকার এবং শান্তিবাহিনীর সাথে “পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি চুক্তি” স্বাক্ষরিত হয়। কোন সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সাথে এমন শান্তিচুক্তি পৃথিবীতেই নজিরবিহীন। এই শান্তিচুক্তির প্রতিক্রিয়ার পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে ইউপিডিএফ, জেএসএস(সংস্কারপন্থী), ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে বিভিন্ন সশস্ত্র এবং বিছিন্নতাবাদী সংগঠন তৈরি হয়। যার সর্বশেষ সংযোজন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি নামের আরেকটি সন্ত্রাসী সংগঠন। নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল, স্বার্থের লড়াই থাকলেও এই সবগুলো সন্ত্রাসী সংগঠন চায় বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে পার্বত্য চট্রগ্রামকে আলাদা করে নিজেদের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল, স্বাধীন জুমল্যান্ড কিংবা কুকিচিন রাষ্ট্র গঠন করা। আর তাদের এই অন্যায় ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করছে বাংলাদেশের অন্যতম শত্রু রাষ্ট্র ভারত। কিন্তু, ভারতের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণেই বাংলাদেশের পূর্বের কোন সরকার এই ধরণের দেশ-বিরোধী ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করতে পারেনি।

মূলত, পার্বত্য চট্রগ্রামের এই অস্থিরতা কখনোই স্থায়ীভাবে সমাধান হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা ইসলামি রাষ্ট্রের মূলনীতির আলোকে এই বিয়টাকে সমাধান করি। যে ধরণের বঞ্চনা, লাঞ্ছনা কিংবা অবহেলার ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এই ধরণের বিচ্ছিন্নতাবাধী আন্দোলনগুলো গড়ে উঠে ইসলামি রাষ্ট্রে এই ধরণের কোন বঞ্চনার সুযোগ নেই। কুরআন-সুন্নাহ্‌’র ভিত্তিতে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফাহ্‌ রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ধারা-৫ এবং ৬ অনুযায়ী – “রাষ্ট্রের সকল নাগরিক শারী’আহ্‌ প্রদত্ত অধিকার ভোগ করবে এবং নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে। রাষ্ট্রের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ তার নাগরিকদের মাঝে শাসন, বিচার-ফয়সালা এবং বিভিন্ন বিষয়াদির ব্যবস্থাপনায় কিংবা এ ধরনের অন্যান্য বিষয়ে কোন প্রকার বৈষম্য করা। বরং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের প্রতি সমান আচরণ করতে হবে।” পাশাপাশি, এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক জায়গায় ইসলামি রাষ্ট্র তার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে সকল ধরণের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ও তার নেতৃত্বের সাথে বিদেশী রাষ্ট্রের যোগযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। কারণ, রাষ্ট্রের সংবিধানের ধারা-১৮২ অনুযায়ী, “যে কোন ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী অথবা সংগঠনের বিদেশী কোন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক থাকা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ…”। আর সর্বোপরী, মুসলিম ভূ-খন্ড এক ইঞ্চি পরিমানও বিচ্ছিন্ন হওয়া ইসলামী শারী‘আহ্‌ বৈধতা দেয়না। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে, তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সেটা নিশ্চিত করা। নিশ্চয়ই পুলিশ দিয়ে সেটা সম্ভব না।

    –    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

“বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হবে না: রিজভী”

খবরঃ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিশ্বের কোথাও কখনোই ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হয়নি। বাংলাদেশেও আর কখনোই ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হবে না। ইতালি জার্মানিসহ পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্রকামী মানুষ ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হতে দেয়নি। (https://www.ittefaq.com.bd/702305/বাংলাদেশে-আর-কখনোই-ফ্যাসিস্টদের-পুনরুত্থান-হবে-না)

মন্তব্যঃ

ফ্যাসিবাদ (fascism) শব্দটি ল্যাটিন ফ্যাসেস (fasces) থেকে এসেছে যার অর্থ হচ্ছে লাঠি বা কাঠের আটি, যেটি একত্রে বেঁধে রাখা হয়। এক বান্ডেল কাঠ যখন একসাথে বেঁধে রাখা হয় তখন সেটিকে ভাঙ্গা যায়না, কিন্তু একটি লাঠি বা কাঠকে সহজে ভেঙ্গে ফেলা যায়, এই ধারণা থেকে মুসোলিনি ইতালির জনগণকে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করার রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে ফ্যাসিবাদকে নিয়ে আসে এবং এই ধারণার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে শাসনক্ষমতায় আরোহন করে। জাতীয়তাবাদ ও জাত্যাভিমানের এই মডেল হিটলারও গ্রহণ করে এবং সফলতা পায়। শোষণমূলক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বাস্তবায়নের ফলে ইউরোপে প্রকট হয়ে উঠা অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতি, গণআন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে ইতালি ও জার্মানীর জনগণ জাতীয়তাবাদী ও জাত্যাভিমানের আবেগ থেকে ফ্যাসিবাদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তত্কালীন পুঁজিবাদের মোড়ল বৃটেন ও ফ্রান্সের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, যার ফলাফল হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অমানবিক ধ্বংসলীলা। ফলে, স্বভাবতই যুদ্ধের বিজয়ী শক্তি হিসেবে পুঁজিবাদী দুষ্টচক্র ইউরোপে ফ্যাসিবাদী চিন্তাকে প্রবলভাবে আক্রমণ করে এবং ইউরোপের মধ্যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলে। ইউরোপ-আমেরিকার ফ্যাসিবাদ-বিরোধী এই নেতিবাচক জনমতকে কাজে লাগিয়ে হাসিনার প্রতি পশ্চিমাদের সমর্থনকে নিষ্কৃয় করার প্রচষ্টার অংশ হিসেবে মূলত হাসিনাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ ও হাসিনার শাসনকে ‘ফ্যাসিবাদ’ বলে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছিল, এবং হাসিনার পতনের পর এই শব্দগুলোকে জনগনের মুখে মুখে ছড়িয়ে পরে।

মূলত: গোষ্ঠীবাদ, জাতীয়তাবাদ ও ফ্যাসিবাদ হল একই বৃক্ষের তিনটি ফল। সেই বৃক্ষের নাম হল ‘কর্তৃত্ব স্থাপন করার চরম মোহ’। গোষ্ঠীবাদ ও জাতীয়তাবাদ যখন পরিপক্ক হয় ও পূর্ণ সফলতা পায় তখন তা ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়। কর্তৃত্বপরায়ন হওয়ার বাসনা রয়েছে এমন সম-স্বার্থের ব্যক্তিরা দলবদ্ধ বা গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে নানান দেশাত্মবোধক ও জাতীয়তাবাদী গান, শ্লোগান কিংবা প্রতীক ক্রমাগত ব্যবহারের দ্বারা জাতিকে প্রভাবিত করে তাদের শাসন ক্ষমতার ভিত্তি রচনা করে এবং শাসনক্ষমতা বা কর্তৃত্ব প্রাপ্ত হলে তা নিরঙ্কুশ করার জন্য স্বেচ্ছাচারীতার পথ বেছে নেয় এবং তা টিকিয়ে রাখতে যেকোন সমালোচনার জবাবে শক্তি প্রয়োগ, অত্যাচার, দমন-পীড়ন ইত্যাদির পথ বেঁছে নেয়। অর্থাৎ, কর্তৃত্বময় নিরঙ্কুশ শাসন ক্ষমতা উপভোগ করাই হল ‘ফ্যাসিবাদ’ এর মূলমন্ত্র। এই ‘কর্তৃত্ব স্থাপন করার চরম মোহ’ অবধারিতভাবে জাতিকে সম-স্বার্থের নানান গোষ্ঠীতে বিভক্ত করে ফেলে এবং এই গোষ্ঠীগুলো চিরস্থায়ী সংঘাতে জড়িয়ে জাতিকে ক্ষতবিক্ষত ও দুর্বল করে ফেলে। তাই, ফ্যাসিবাদকে ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, কিংবা মুসলিম জাতীয়তাবাদ (তথাকথিত), অথবা বঙ্গেয় উপদ্বীপের (bengal basin) জাতীয়তাবাদকে মহান হিসেবে উপস্থাপন করা প্রকৃতপক্ষে স্ববিরোধীতা ছাড়া আর কিছুই নয়; বরং যদি স্বজ্ঞানে কেউ তা করে তাহলে সে নিশ্চিতভাবেই দুর্বৃত্ত।

কর্তৃত্ব স্থাপন করার আকাঙ্খা মানুষের মধ্যে সহজাত। এটা তার ফিতরাতের অংশ এবং মানুষের অস্তিত্ব থেকে এই আকাঙ্খাকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। ফলে, এই আকাঙ্খাকে অস্বীকার বা অবদমন করে রাখা কোন সুফল বয়ে আনে না, বরং ‘ঐশী বিধিনিষেধের’ মাধ্যমে একে সুশৃঙ্খল করার প্রয়োজন হয়। ইসলাম মানুষের এই আকাঙ্থাকে ‘ব্যক্তিগত ও স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্ব স্থাপন’ এর পরিবর্তে ‘ইসলামী আদর্শের কর্তৃত্ব স্থাপন’ দ্বারা প্রতিস্থাপন করেছে। ইসলামী আদর্শ যেহেতু বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ্‌’র কাছ থেকে এসেছে, এর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন সুনিশ্চিতভাবেই সমাজে, দেশে এবং সারাবিশ্বে প্রশান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে। ইসলামী ব্যবস্থার মধ্যে ‘ইসলামী আদর্শের কর্তৃত্বকে’ সর্বোত্তমভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠার জন্য যে প্রতিযোগীতা বিরাজ করে তা কখনোই গোষ্ঠীগত বা সামন্তবাদী সংঘাতে রূপ নেয় না। বরং আমরা জানি, আরবের জাহিলি যুগের স্বেচ্ছাচারীতা ও যুলুমের জাল ছিন্ন করেই ইসলামী জীবনব্যবস্থার উত্থান হয়েছিল এবং এর ফলস্বরূপ প্রায় ১৪’শ বছর পুরো বিশ্ব নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি, প্রশান্তি ও সঠিক পথের দিশা পেয়েছিল। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “বরং, আমি সত্য দ্বারা চরমভাবে আঘাত হানি মিথ্যার উপর; ফলে, মিথ্যা চূর্ণ-বিচূর্ণ ও নিশ্চিন্ন হয়ে যায়! (সূরা আল-আম্বিয়া: ১৮)

    –    রিসাত আহমেদ

“নিবর্তনমূলক সব কালো আইন বাতিলের দাবি” 

খবরঃ

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণয়ন করা সব নিবর্তনমূলক কালো আইন বাতিল এবং এসব আইন ব্যবহার করে গুম, হত্যা ও নির্যাতনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। শনিবার বাংলাদেশ পলিসি ডিসকোর্স (বিপিডি) আয়োজিত ‘জুলুম মুক্ত নতুন বাংলাদেশ: কালো আইনের ধারাবাহিকতা নাকি বাতিল’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব দাবি তোলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভা হয়। …মতবিনিময় সভায় বক্তারা, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন’, বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো কালো আইনগুলোর সংস্কারই যথেষ্ট নয়, বরং বৈষম্য ও জুলুম মুক্ত নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এগুলোর সম্পূর্ণ বাতিল জরুরি। (https://www.ajkerpatrika.com/356806)

মন্তব্যঃ

নিবর্তনমূলক কালো আইনগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি শাসকগোষ্ঠীর অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সমাজের সামষ্টিক প্রতিবাদকে দমনের টার্গেটে প্রণয়ন করা হয়। যেমন ভারতবর্ষে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনকে দমন করার জন্য বৃটিশবিরোধীদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারাকে ব্যবহার করে যখন তখন কোনরকম পরোয়ানা ব্যতিরেকেই আটক করার ক্ষমতা পুলিশকে প্রদান করা হয়েছিল। সেই একই আইনের ধারা এখনও আমাদের ফৌজদারী কার্যবিধিতে বিদ্যমান এবং এর রাজনৈতিক অপব্যবহারও বিদ্যমান। এর পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইন (১৯৭৪), যা ছিল মূলত মুজিবের সমালোচনাকারীদের মাসের পর মাস বিনা বিচারে আটক করে রাখার হাতিয়ার, ২০০৯ সালের প্রণীত সন্ত্রাস বিরোধী আইন কিংবা পরবর্তীতে সাইবার নিরাপত্তা আইন ছিল মূলত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের যুলুমের শাসনকে দীর্ঘায়িত করা ও একই সাথে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে দমন নিপীড়ন করার হাতিয়ার। যেমন, পিলখানা হত্যাকান্ডে হাসিনা ও ভারতের ষড়যন্ত্র উন্মোচন করায় হিযবুত তাহ্‌রীর-কে নিষিদ্ধ করে এর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এবং পিলখানা ষড়যন্ত্রের কারণে হাসিনা ও ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া সেনাঅফিসারদের বিরুদ্ধে তথাকথিত এই সন্ত্রানদমন আইন ব্যবহার করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামীসহ ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদ ও আলেম সমাজের বিরুদ্ধে এই কালো আইনগুলো ব্যবহার করা হয়েছে যাতে তারা হাসিনা সরকারের সমালোচনা না করে। অন্যদিকে সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রধান টার্গেট ছিল সাংবাদিক সমাজ। তারা যাতে তাদের মত প্রকাশ করতে না পারে এবং সরকারের দুর্নীতি ও জুলুম নির্যাতন নিয়ে যাতে সমাজে আলোচনা না হয় সেজন্যেই এই আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে, আমরা দেখতে পাই হাসিনার আমলে তৈরী হয়েছিল একগুচ্ছ চাটুকার সাংবাদিক যাদের কাজ ছিল হাসিনা ও মুজিব বন্দনা!

মূলত স্রস্টাবিবর্জিত সেক্যুলার ব্যবস্থায় রাজনীতি হচ্ছে অর্থ উপার্জন আর ভোগ বিলাস নিশ্চিত করার সিড়ি। ফলে, এই ব্যবস্থায় ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য শাসক শ্রেণী এসকল দমনমূলক কালো আইন প্রণয়ন করে। যেহেতু, সেক্যুলার ব্যবস্থায় মানুষের হাতে থাকে আইন প্রনয়নের সর্বময় ক্ষমতা সেহেতু সে তার ইচ্ছেমত এমনসব আইন প্রনয়ন করে যা তার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করে ও তার বিরোধীদের জীবনকে সংকুচিত করে ফেলে। অন্যদিকে ইসলাম শাসককে এধরনের কালো আইন তৈরীর কোনরকম সুযোগ দেয় না যেহেতু ইসলামে শাসকের আইন তৈরির কোনরকমের সুযোগ নেই। সে শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র দেয়া হুকুম থেকে নির্দিষ্ট আইন গ্রহণ করতে পারে। কালো আইনের ব্যাপারে ইসলামের রয়েছে সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গী। মূলত, এসকল কালো আইন ইসলামী শারীআহ্‌ মোতাবেক নিষিদ্ধ। কারণ শাসকদের জবাবদিহি করা প্রতিটি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ বলেন, “অত্যাচারী শাসকদের সামনে সত্য কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ” (আহমদ, তিরমিজি)। এছাড়া সন্দেহমুলক গ্রেফতার ও আটক রাখা শারীআহ্‌ পরিপন্থী, এক্ষেত্রে ইসলামী নীতি হচ্ছে, “একজন ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ”

সুতরাং বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এবং ইসলামী নীতির দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে এধরনের দমনমুলক কালো আইনসমূহকে অতিস্বত্ত্বর বাতিল করা উচিত। অন্যথায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি হাসিনার কালো আইনগুলোকে চলমান রাখে তাহলে তাদের অবস্থা হবে কুরআনে বর্ণিত এই জাতির মত যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা যমীনে ফাসাদ করো না’, তারা বলে, ‘আমরা তো কেবল সংশোধনকারী।” (আল-বাকারাঃ ১১)

    –    মো. হাফিজুর রহমান

“হিযবুত তাহরীরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি”

খবরঃ

হিযবুত তাহরীরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। সোমবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইনজীবী নূর মোহাম্মদ। এতে বলা হয়, পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় ভারতের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশের জের ধরে হাসিনা সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করেছিল। তখন সেনাবাহিনীর কল্যাণের কথা চিন্তা করে হিযবুত তাহরীর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সাহসীভাবে রুখে দাঁড়ায়। তাদের ষড়যন্ত্র প্রকাশ করতে ব্যাপকভাবে প্রচারপত্র বিতরণ, আলোচনা সভা, সমাবেশ ও মিছিলসহ ধারাবাহিক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। তখন হিযবুত তাহরীরের প্রচারপত্রের শিরোনাম ছিল ‘সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে (বর্তমান বিজিবি) ধ্বংস করার ভারতীয় ষড়যন্ত্র এবং সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ করুন।’ লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ওই সময় হিযবুত তাহরীরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার সংগঠনটির কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। পরে একটি ‘প্রেস নোট’ জারি করে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে—যার কোনো আইনগত ও সাংবিধানিক ভিত্তি নেই।

মন্তব্যঃ

যৌক্তিক কারণেই সত্যনিষ্ঠ নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহরীর-এর উপর আরোপিত যালিম হাসিনার নিষেধাজ্ঞাকে তুলে নেয়া উচিত। কারণসমূহের মধ্যে রয়েছেঃ-

প্রথমত, হাসিনা সরকার যে সন্ত্রাসী ট্যাগ প্রদানের মাধ্যমে হিযবুত তাহরীরকে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে তার সাথে এই দলের কোন রকমের সম্পর্কই নেই। বরং এই দলের কর্মপন্থাই হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক। ১৯৫৩ সালে ফিলিস্তিনে প্রতিষ্ঠিত এই দল একটি রাজনৈতিক দল যার আদর্শ হচ্ছে ইসলাম। এটিই পৃথিবীর একমাত্র আদর্শিক ইসলামী দল যারা বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কোনরকম সহিংসতা ছাড়াই। দীর্ঘ ৭০ বছরের রাজনৈতিক পরিক্রমায় এই দলের সাথে কখনোই কোনরকম সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক ছিল না। সুতরাং সন্ত্রাসবাদের ধোয়া তুলে এই দলকে নিষিদ্ধ রাখা কিংবা ট্যাগ দেয়া মূলত হাসিনার ইসলামী বিদ্বেষী নীতিরই আরেকটি বাস্তবায়ন।

দ্বিতীয়ত, যালিম হাসিনার বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যেকোন রকম ভাবেই হোক তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করা। সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়া, আয়নাঘরে বছরের পর বছর গুম করে রাখা, রিমান্ডে নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করা, বছরের পর বছর বিনা বিচারে জেলখানায় আটকে রাখা, ভিন্নমত দমনে সাইবার সিকিউরিটির মত কালো আইনকে ব্যবহার করা ইত্যাদি। শীর্ষস্থানীয় ৬ ছাত্রসমন্বয়কও ডিবির হারুনের অফিসে বন্দী ছিল। এমনকি শুধুমাত্র হাসিনার সমালোচনা করার কারণে রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার মত ঘৃণ্য কাজ করতেও সে পিছপা হয়নি। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে স্বৈরাচারী হাসিনা পতনের কয়েকদিন আগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় যদিও এই আইনের প্রথম ভিকটিম ছিল হিযবুত তাহরীর। মূলত বিশ্বাসঘাতক হাসিনার সহযোগীতায় ভারতীয় ষড়যন্ত্রের কারণে ২০০৯ সালে পিলখানায় আমাদের সেনাঅফিসারদেরকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশের কারণেই হিযবুত তাহ্‌রীরকে হাসিনা সরকার দলটিকে নিষিদ্ধ করে। যেহেতু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে তুলে নেয়া হয়েছে সেহেতু হিযবুত তাহরীরের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেয়াটা যৌক্তিক।

তৃতীয়ত, ২০০৯ সালে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার এই দলকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর অধীনে শুধুমাত্র বিদ্বেষ ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে দলটির কার্যক্রমকে ‘জননিরাপত্তার জন্য হুমকি’ এবং ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা বিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করে বেআইনীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে যদিও হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার এই ধরনের দাবির স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করতে পারেনি। উপরন্তু, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার হিযবুত তাহ্‌রীর-কে নিষিদ্ধ করার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারার অধীনে কোনো গেজেট বিজ্ঞপ্তিও জারি করেনি। ফলে আইনগত দিক থেকেও এই নিষেধাজ্ঞা অবৈধ।

চতুর্থত, হিযবুত তাহরীরের নিষেধাজ্ঞাটি বাংলাদেশ সংবিধানের যে অন্যতম মূল স্পিরিট অর্থাৎ ‘রাজনৈতিক সাম্য’ তার সাথেও অসঙ্গতিপূর্ণ। এমনকি এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের সংবিধানের ‘সংগঠনের স্বাধীনতা’ (অনুচ্ছেদ ৩৮) ও ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্-স্বাধীনতা’ (অনুচ্ছেদ ৩৯) এর পরিপন্থী।

সুতরাং যেই বৈষম্যবিরোধী স্লোগান নিয়ে হাসিনা বিরোধী আন্দোলন সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমান এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে সেই স্পিরিটকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের উচিত অতিস্বত্ত্বর হিযবুত তাহরীর-এর উপর স্বৈরাচারী হাসিনার চাপিয়ে দেয়া অন্যায় নিষেধাজ্ঞাকে তুলে নেয়া। অন্যথায় বৈষম্যবিরোধী স্লোগান বর্তমান সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে।

    –     হাফিজুর রহমান 

“চাঁদাবাজি: আগের নেতারা যা করেছেন, নতুনরাও তাই করছেন”

খবরঃ

সরকার পতনের পর সবার আগে দখল হয়েছে দক্ষিণের সব বাস টার্মিনাল। টাকা বানানোর মেশিনখ্যাত এই টার্মিনালগুলো দখলে নিতে যেন মুখিয়ে ছিল সুযোগসন্ধানীরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টার্মিনালগুলো দখল হয়ে যায়। এখন চলছে দখলের বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা। নিয়ন্ত্রণ বদল হলেও টার্মিনালগুলোতে চাঁদাবাজি আর লুটপাট আগের মতোই চলছে। সাধারণ বাস মালিকদের বঞ্চিত করে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে টার্মিনালগুলোতে। নয়া দখলদাররা মানছেন না সেসব অভিযোগ।… (https://www.jugantor.com/country-news/855454)

মন্তব্যঃ

শাসক হিসেবে হাসিনা সরকার বিদায় নিলেও তারা এতদিন যেই ব্যবস্থা দিয়ে দেশ শাসন করেছে তা এখনো বহাল তবিয়তে আছে, যেখানে জনগণের কোন অভিভাবক নেই। এর কারণ হলো, বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা কাঠামোগতভাবেই জনগণের অধিকারগুলো পূরণে বাধ্য নয়। এটি শুধুমাত্র এটা নিশ্চিত করে যে, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কিছু সুযোগ সুবিধা থাকবে- যাতে জনগণ চাকরি বা ব্যবসা করে খেয়ে-পরে চলতে পারে। এক্ষেত্রে কেউ তার চলার ব্যবস্থা নিজে না করতে পারলে সেটার দায়িত্ব রাষ্ট্র নেয় না। তাই তখন বিভিন্ন ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীসমূহ নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য কিংবা অন্য কোন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য অথবা নিদেনপক্ষে সরকারি জুলুমটি থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য একটি ‘ডিফেন্স এন্টিটি’ হিসেবে বিভিন্ন সমিতি তৈরি করে। এসব সমিতিতে সকল ব্যবসায়ীদেরই যোগদানের মাধ্যমে নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে হয়। এই সমিতিগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবার পরিচালিত হয় সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী সদস্যদের থেকে প্রাপ্ত চাঁদার মাধ্যমে। তারপর ক্রমে ক্রমে এই সমিতিগুলো এক একটি সিন্ডিকেটে পরিণত হয়, যাদের হাতে পুরো দেশের জনগণ জিম্মি হয়ে যায়। তখন বাজার থেকে প্রতিযোগিতা নামক ব্যাপারটি হারিয়ে যায় এবং সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তই কার্যকর হয়। এই সিন্ডিকেট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে যখন তা ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট হয়ে যায়। ব্যাপারটি দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে, এদেশের প্রায় সমস্ত সমিতিগুলোই ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে জনগণকে নিষ্পেষণ করছে এবং বর্তমান ও অতীতের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোই এই দোষে দুষ্ট। যেমন, এই নিউজে আলোচিত পরিবহন মালিক সমিতি। তারা ক্ষমতায় থাকা লোকজনকে বিভিন্ন উপায়ে খুশি রেখে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যত খুশি তত পরিবহন ভাড়া নির্ধারণ করে। এতে জনগন চরম ভোগান্তির শিকার হয়।

তাই এটা বলা যায়, বিভিন্ন জুলুম থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার আশায় তৈরি হওয়া ‘ডিফেন্স এন্টিটি’ রূপী এই সমিতিগুলোই এধরনের চাঁদাবাজির মূল কারন এবং এর কারন হলো বর্তমান শাসন ব্যবস্থা, যা কাঠামোগতভাবেই অভিভাবকত্বের দায়িত্বহীন। সুতরাং এর থেকে পরিত্রান পেতে হলে আমাদেরকে এমন একটি শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে, যা জনগনের প্রকৃত অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহন করে। তখন এসব সমিতি গঠনের প্রয়োজন পড়বে না। এই চাঁদাবাজি সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেছেন, “খলিফা হচ্ছেন অভিভাবক এবং তিনি তার জনগণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল” (বুখারী/মুসলিম)। এই রাষ্ট্র জনগণের উপর জুলুম করে না, কাউকে জুলুমের শিকার হতে দেয় না এবং প্রত্যেকটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে। উপরন্তু এটি কোন ব্যবসায়ীর উপর আয়কর, ভ্যাট ইত্যাদি নিপীড়নমূলক করও আরোপ করে না। কেউ তাদের অধিকার হরণ করলেও সুষ্ঠু বিচার আওতায় নিয়ে আসে। এখানে যে কোন প্রকার সিন্ডিকেট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ফলে একদিকে যেমন পরিবহন ব্যবসায়ীদেরও পরিবহন মালিক সমিতি গঠনের প্রয়োজন পড়ে না, অন্যদিকে যাত্রীদেরও যাত্রী কল্যাণ সমিতি গঠনের প্রয়োজন পড়ে না। যাদের মাধ্যমে জনগনও জুলুমের শিকার হয় না।

    –    মোঃ জহিরুল ইসলাম

“ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তে বাহবা পেয়েছি: সালেহউদ্দিন আহমেদ”

খবরঃ 

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বৃহত্তর স্বার্থে এবং সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্তে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে। ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তে বাহবা পেয়েছি। অনেক জায়গা থেকে বলা হয়েছে ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ (ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তে বাহবা পেয়েছি: সালেহউদ্দিন আহমেদ | প্রথম আলো (https://www.prothomalo.com/business/klgse317k9)

মন্তব্যঃ 

২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন হাসিনা সরকারের ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির সিদ্ধান্তকে তীব্রভাবে প্রশ্ন করেছিলেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন “বিপুল পরিমাণ ইলিশ ভারতে রপ্তানি করে তাদের কেন খুশি করা হচ্ছে? সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষকে মেরে ফেলার জন্য? অভিন্ন নদীর পানি থেকে আমাদের বঞ্চিত করার জন্য? বাণিজ্য ভারসাম্য না রাখার জন্য? কথায় কথায় বাংলাদেশ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য?” অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য হিসেবে আসিফ নজরুল নিজেই এখন ক্ষমতায় আছেন। উপদেষ্টা পরিষদকে তার মত করেই কিছু প্রশ্ন আমরা ছুড়ে দিতেই পারি। “৩০০০ টনের ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়ে ভারতকে কেন খুশি করা হচ্ছে: হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য? তুম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ার জন্য? বাংলাদেশে মৌলবাদের মাথাচাড়া-বলে প্রোপাগান্ডা চালানোর জন্য? পাহাড়কে অস্থির করার জন্য? নাকি পিলখানা ষড়যন্ত্রের জন্য?” আমরা মৎস উপদেষ্টাকে বলতে শুনি “ক্ষমা চাচ্ছি!!! ভারতে ইলিশ পাঠাতে পারবো না”। কিন্তু দিন দশেক পেরোতে না পেরোতেই দেখতে পাই ভারতে ৩০০০ টন ইলিশ পাঠানোর রাষ্ট্রীয় অনুমোদন। বেশীদিন পার হয়নি, আপনারা বলেছেন ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে ন্যয্যতার ভিত্তিতে, এখানে কোথায় সেই তথাকথিত ন্যয্যতা?। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর থেকে ভারত যেখানে ক্রমাগত শত্রুতা দেখাচ্ছে, খুনী হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা করছে, বাঁধ খুলে দিয়েছে, ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ও হিযবুত তাহ্‌রীর বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে, পাহাড়কে অশান্ত করছে, তখন ইলিশ পাঠানো কি ন্যয্যতার সম্পর্কের মধ্যে পড়ে? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মনে রাখা উচিৎ, বিগত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের ভারত তোষণনীতি ছিল নজিরবিহীন, কিন্তু তাতে কি সীমান্তে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশী হত্যা, তিস্তার পানি না দেয়া, অবমাননাকর মন্তব্যের ফুলঝুড়ি, অসম বাণিজ্যিক চুক্তিসমূহ ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়েছিল? বাংলাদেশের বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠলেও, ভারত বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে তার শত্রু গণ্য করে গেছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদের সম্পর্কে আমাদেরকে সাবধান করে বলেন, আপনি অবশ্যই ঈমানদারদের জন্য মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবেন ইহুদী ও মুশরিকদেরকে” (পবিত্র সূরা মায়িদা-৮২)

তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিৎ শত্রুরাষ্ট্র ভারতকে জনগণের আবেগের বিপক্ষে গিয়ে বন্ধুরাষ্ট্র বানানোর পলিসি থেকে অবিলম্বে বের হয়ে আসা এবং ভারতের সাথে থাকা সকল ধরনের কৌশলগত চুক্তি (যেমন ট্রানজিট, সামরিক ও বাণিজ্য চুক্তি ইত্যাদি) বাতিল করা। একটা রাষ্ট্র যদি তার জনমানুষের বিশ্বাসের ও আবেগের আদর্শিক ভিত্তির উপর শক্তভাবে অবস্থান না করে শুধু সংখ্যা ও আকার আকৃতির ভয়ে ভীত হয়ে থাকে, তাহলে কখনোই ওই রাষ্ট্রের পক্ষে সম্মানজনক অবস্থানে পৌছানো সম্ভব না। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন মদিনায় রাষ্ট্র গঠন করেন, তখন তা ছিল খুবই ছোট একটা রাষ্ট্র। আল্লাহ্‌’র দেয়া বিধি বিধানের উপর ভিত্তি করে মদিনা রাষ্ট্র গঠনের মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে রোম ও পারস্যের মত সুপার পাওয়ারকে পরাভূত করার সক্ষমতা মুসলিমরা অর্জন করেছিল। রোম ও পারস্যের বিশালতা, সৈন্যসংখ্যা, সুপার পাওয়ার হিসেবে তাদের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি কোন বাস্তবতাই মুসলিমদের নেতৃত্বশীল রাষ্ট্র পরিণত হতে বাঁধা দিতে পারেনি। কারণ তারা বিশ্বাস করত আল্লাহর প্রতিশ্রুতিতে- “আর তোমরা নিরাশ হয়োনা ও বিষন্ন হয়োনা এবং যদি তোমরা বিশ্বাসী হও তাহলে তোমরাই বিজয়ী হবে”। [সূরা আল-ইমরানঃ ১৩৯]

    –    জোহান জাবির