working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 111

Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১১১ তম সংখ্যা । ১৮ জানুয়ারী, ২০২৪

এই সংখ্যায় থাকছে :

 

“পাঁচ ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি, প্রধান ঝুঁকি জ্বালানিসংকট: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম”

“বাংলাদেশে পরাজিত হতে যাচ্ছে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল”

“নতুন সরকারের শপথ, পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা”

“ভারতের জন্য শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হওয়ার অর্থ কী?”

“রাজউকের ১০ কাঠা প্লট পাচ্ছেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ”

“৯ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার ৬৪০১ জন”

“একটি গাণিতিক সমস্যা ও ভোট প্রদানের সংখ্যা”

 

“পাঁচ ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি, প্রধান ঝুঁকি জ্বালানিসংকট: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম”

খবরঃ

বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ জ্বালানিস্বল্পতা। এ কারণে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সেই সঙ্গে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিও অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। অর্থনীতিতে ঝুঁকির অন্যান্য ক্ষেত্র হচ্ছে প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া, সম্পদ ও আয়বৈষম্য এবং সরকারি ঋণ বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অংশীদার হিসেবে কাজ করেছে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। (https://www.prothomalo.com/business/economics/48x0fqwhoe)

মন্তব্যঃ 

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান বা সবচেয়ে বড় ঝুঁকির নাম হল ‘পুঁজিবাদ’। আল্লাহ্‌দ্রোহী ও নীতিনৈতিকতা বিবর্জিত এই শকুনে (draconian) অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতির আজ এই বেহাল দশা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম যে ঝুঁকিগুলোর কথা বলেছে সেগুলো হলো এই শকুনে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উপসর্গ (symptom) মাত্র। ডলার সঙ্কটের কারণে দেশে জ্বালানীস্বল্পতা তৈরী হয়নি, বরং এর মূল কারণ হলো গণমালিকানাধীন সম্পদের বেসরকারীকরণ যা পুঁজিবাদের মূলনীতিগুলোর একটি। দেশের তেল-গ্যাস-কয়লার মত গণমালিকানাধীন সম্পদকে বিভিন্ন লিমিটেড কর্পোরেশনের নিরবচ্ছিন্ন অতিমুনাফা করার ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলার কারণে পৃথিবীর অন্যমত খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চল হওয়া সত্যেও বাংলাদেশকে জ্বালানী আমদানি করতে হয়। আরেকটি দু:খজনক ব্যাপার হলো কাতার, বাহরাইন, আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ইন্দোনেশিয়ার খনিজ তেল ও গ্যাসে আমাদের হক্ব বা আল্লাহ্‌প্রদত্ত মালিকানা থাকার পরও শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বিভক্ত হওয়ার কারণে নিজেদের জ্বালানী সম্পদ ব্যবহারের জন্য আমাদেরকে প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হচ্ছে!

দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণ হলো সরকার কর্তৃক অবাধে টাকা ছাপানো ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উপর কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণকে স্থায়ী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, যেগুলোও পুঁজিবাদী চিন্তার ফসল। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে নির্বোধ পুঁজিবাদী বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিবিদরা অনেক মাতামাতি করলেও এটি একটি কৃত্রিম বা মেকি প্রবৃদ্ধি যা extreme-outliers দ্বারা প্রভাবিত। ফলে এই extreme-outliers গুলো যখন বিষফোঁড়া হয়ে বের হয় তখন তথাকথিত অর্থনৈতিক চক্রের (economic cycle) তত্ত্বকথা হিসেবে প্রবৃদ্ধির গতি কমবে এটাই স্বাভাবিক। এই কৃত্রিম প্রবৃদ্ধি জনজীবনে নূন্যতম অর্থনৈতিক মুক্তি বা স্বস্তি আনা দূরে থাক, তা দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সম্পদ ও আয়বৈষম্য তৈরী করেছে এবং জনগণকে পাহাড়সম বৈদেশিক ঋণের শিকলে আবদ্ধ করে ফেলেছে। আর সরকারী ঋণ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণও হলো পুঁজিবাদী চিন্তাপ্রসূত ‘চিরস্থায়ী’ ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়ন করা; এর পাশাপাশি দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারী আইন তৈরী করে দায়মুক্তি-তো রয়েছেই। সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশের অর্থনীতির দৃশ্যমান সকল ঝুঁকিগুলো হলো ‘পুঁজিবাদের’ বাচ্চাকাচ্চা।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামসহ পৃথিবীর সকল পুঁজিবাদী বিশেষজ্ঞরা অর্থনীতির যেসকল নীতিবাক্য ও সমাধান দেয় সেগুলো হলো জোড়াতালির সমাধান যার উদ্দেশ্য হলো এই ‘বাচ্চাকাচ্চা’ ঝুঁকিগুলো যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়। জ্বালানীস্বল্পতা নিরসনে ভর্তুকি কমানোর নামে আরো অধিক বেসরকারীকরণ, মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সুদের হার বাড়িয়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সংকুচিত করা,  অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে সুশাসনের উপর জোর দেওয়া, সম্পদ ও আয়বৈষম্যের প্রেক্ষিতে সামাজিক সুরক্ষাবলয় (social safety-net) তৈরীতে মনযোগ দেওয়া, সরকারি ঋণ কমানোর জন্য সরকারী মালিকানাধীন সেবা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারি মালিকানায় লিমিটেড কোম্পানীর হাতে ছেড়ে দেওয়া এগুলোর মাধ্যমে এই ঝুঁকিগুলো কখনোই নিরসন করা সম্ভব নয়। পুঁজিবাদী বিশেষজ্ঞদের এই জোড়াতালির সমাধানের মূল উদ্দেশ্যই হলো শকুনে পুঁজিবাদকে তার বাচ্চাকাচ্চা সহ আরো ক’টা দিন টিকিয়ে রাখা। কিন্তু তারা জানে না যে পুঁজিবাদকে বিদায় নিতেই হবে। মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন: (হে রাসূল!) আপনি বলুন, সত্য সমাগত ও মিথ্যা বিলুপ্ত (হবার পথে)। নিশ্চয়ই মিথ্যার নিয়তিই হলো বিলুপ্ত হওয়া (সূরা: বনী ইসরাঈল: ৮১)

    –    রিসাত আহমেদ

“বাংলাদেশে পরাজিত হতে যাচ্ছে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল”

খবরঃ

আসন্ন ভোটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশে পরাজিত হতে যাচ্ছে বলে এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই সংবাদ মাধ্যমটি নিবন্ধের শিরোনাম দিয়েছে, ‘বাইডেনের গণতন্ত্র প্রমোশনের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরলো বাংলাদেশ’। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের মাত্র তিনদিন আগে বুধবার নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এতে লেখা হয়েছে, ১৭ কোটি মানুষের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের আসন্ন নির্বাচনে টানা চারবারের মতো বিজয়ী হতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে পরাজিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের চাপ প্রয়োগমূলক পররাষ্ট্রনীতি। (https://www.jugantor.com/national/759480/শেখ-হাসিনার-বিজয়-বাইডেনের-পরাজয়)

মন্তব্যঃ

আগামী পাঁচ বছরের জন্য শেখ হাসিনার ক্ষমতা পাকাপোক্ত হতে দেখে অনেকে বলতে শুরু করেছে, হাসিনার কূটকৌশলের কাছে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র প্রোমোশনের মার্কিন নীতি ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে মার্কিনীদের তথাকথিত গণতন্ত্র প্রোমোশন ব্যর্থ হলেও তাদের উপনিবেশিক এজেন্ডা ব্যর্থ হয়নি। মূলত, উপনিবেশবাদী শক্তি হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার উপনিবেশিক স্বার্থ হাসিল করার জন্য গণতন্ত্র, মানবাধিকারকে ব্যবহার করে। কিন্তু, উপনিবেশিক স্বার্থ হাসিলে প্রয়োজনে এটি তার আদর্শ, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের মত বিষয়গুলোকে ছাড় দিতে কার্পণ্য করে না। ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্পৃক্ততার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রমাণ থাকার পরেও যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয় নাই। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ খাসোগি হত্যা: মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই যুবরাজের!, দৈনিক যুগান্তর, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১)। এটি আফ্রিকায় তার আধিপত্য তৈরির স্বার্থে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন হওয়া বিভিন্ন শাসকদের সমর্থন দিয়ে আসছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজতান্ত্রিক শাসনকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, আবার এশিয়ায় গণতন্ত্রের বুলি নিয়ে হাজির হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈতনীতির এরকম উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ধুয়া তুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অতিগুরুত্বপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের আলোকে হাসিনা সরকারের নিকট হতে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক ঘোষণা করায়, মার্কিন উপনিবেশবাদী কোম্পানী ExxonMobil কে গভীর সমুদ্র বন্দরে ১২টি হাইড্রো-কার্বন ব্লক বরাদ্দ দিতে নীতিগতভাবে সম্মত করায় এবং নিরাপত্তা ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়চুক্তি ACSA, GSOMIA এগিয়ে রাখে যাতে করে নির্বাচনের পরে সই করতে পারে। আমেরিকাসহ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহের কাছে তাদের উপনিবেশিক স্বার্থই শেষকথা, গণতন্ত্র-মানবাধিকার শুধুমাত্র তা আদায়ের হাতিয়ার মাত্র।

পুঁজিবাদের মূল লক্ষ্য সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করা, এর ঠিক বিপরীতে, খিলাফত রাষ্ট্রের সম্প্রসারণের মূল লক্ষ্য ইসলামী আদর্শের ছায়াতলে এনে মানবজাতিকে মানবরচিত শাসনের যুলুম থেকে মুক্ত করা। খিলাফত রাষ্ট্র দাওয়াহ্‌ ও জিহাদের মাধ্যমে নতুন-নতুন ভূখণ্ডে ইসলামের বাণীকে পৌঁছে দিয়েছে, এক্ষেত্রে কোন ছাড় বা আপোস করেনি। ইসলামী শাসনের ছায়াতলে আসা প্রতিটি ভূখণ্ডের জনগণের সাথে তাদের অধিকার প্রদান এবং তাদের উপর ইসলাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমান আচরণ করা হয়েছে। একেক অঞ্চলের ক্ষেত্রে একেক নীতি গ্রহণ করেনি।

    –    মোঃ সিরাজুল ইসলাম 

 

“নতুন সরকারের শপথ, পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা”

খবরঃ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর শেখ হাসিনা তার নতুন সরকার সাজিয়েছেন ২৫জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার সারাহ কুক, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মন্টিটাস্কি, ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, বিচারপতি, দেশের তিন বাহিনী প্রধান, আইনজীবী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন বঙ্গভবনের দরবার হলে। (https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/yq18cefuba )

মন্তব্যঃ

আরেকটি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে হাসিনা সরকার তার ক্ষমতাকে নবায়ন করে নিয়েছে এবং দেশী-বিদেশী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে সেই আনন্দ ভাগাভাগি করছে [শেখ হাসিনাকে মার্কিন দূতের অভিনন্দন, যুগান্তর, ১৪ জানুয়ারী]। অন্যদিকে, বিএনপি গোষ্ঠীর মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। তারা নির্বাচনে জনগণের অনাগ্রহকে তাদের নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনের ফল বলছে। যদিও এখানে প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন, জনগণ চায় তারা বর্তমান সরকারের যুলুমের শাসন হতে মুক্তি পাক যা অর্জিত হয়নি, আর বিএনপি গোষ্ঠীর হতাশার মূল কারণ হচ্ছে তারা তাদের মার্কিন প্রভু ও তার আঞ্চলিক চৌকিদার ভারতের আশির্বাদপুষ্ট হতে পারেনি। স্পষ্টত আওয়ামী-বিএনপি গোষ্ঠীর সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার সাথে দেশের জনগণের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার কোন সম্পর্ক নাই। তথাকথিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণকে যুলুমের শাসন থেকে মুক্তির যে আশা দেয়া হয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষে প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়, কারণ এর মাধ্যমে শাসকের চেহারার পরিবর্তন হয় কিন্তু যুলুমের পেছনে দায়ী বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। এই ব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তনের জন্য জনগণকে ৫ বছর পর আরেকটি নির্বাচনের অপেক্ষা করতে হয়, তাই নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর যখন বিদ্যমান অজনপ্রিয় সরকার ক্ষমতায় ফিরে আসে কিংবা সরকার পরিবর্তন হলেও জনগণ যখন তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কোন পরিবর্তন দেখে না তখন আবারও ৫ বছরের জন্য তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়, যা তাদের মধ্যে হতাশার সঞ্চার করে।

তাই এই ব্যবস্থার মধ্যে নির্বাচন ডামি হোক আর রিয়েল হোক এটি একই ফল নিয়ে আসবে। আওয়ামীগোষ্ঠী কিংবা বিএনপিগোষ্ঠী যেই ক্ষমতায় আসুক তারা নিজেদের, তাদের সহযোগীগোষ্ঠী ও উপনিবেশবাদীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য জনগণের স্বার্থ হরণ করতে থাকবে। অতঃপর হতাশ না হয়ে জনগণের উচিত, দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকসহ বর্তমান পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অপসারণ করে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত রহমতপূর্ণ খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যা সম্পন্ন হতে আমাদের ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে না। কারণ যুলুমের শাসন চলাকালীন সময়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয় ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি তথা সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে নুসরাহ্‌ বা ক্ষমতা প্রাপ্তির মাধ্যমে। এটি কোন দিন তারিখের উপর নির্ভর করেনা। তাই প্রতিদিনই আমাদের উদ্যমের সহিত ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিদের তথা সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের নিকট খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য নুসরাহ্‌ প্রদানের আহ্বান জানিয়ে যেতে হবে। এবং এই আশু পরিবর্তন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) প্রদত্ত সুসংবাদও বটে, “……যুলুমের শাসনের অবসান হবে। তারপর আবার ফিরে আসবে খিলাফত- নব্যুয়তের আদলে” (মুসনাদে আহমদ)।

    –    মোহাম্মদ তালহা হোসেন

“ভারতের জন্য শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হওয়ার অর্থ কী?”

খবরঃ

ভারতীয় গণমাধ্যম মিন্ট ‘বাংলাদেশের নির্বাচন: ভারতের জন্য শেখ হাসিনা পুনঃনির্বাচিত হওয়ার অর্থ কী?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মিন্ট বলছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চার হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। নদী, পুকুর, কৃষিক্ষেত্র, এমনকি ঘরবাড়ির মধ্য দিয়ে সীমান্ত রয়েছে। যার ফলে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য সীমান্ত পাহারা দেওয়া কিছুটা কঠিন। গণমাধ্যমটি আরো বলছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা তাঁর মেয়াদে বিদ্রোহী, সন্ত্রাসবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতির মাধ্যমে ভারতকে নিরাপত্তার বোঝা কমাতে সাহায্য করেছেন। (https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/01/07/1352819)

মন্তব্যঃ

শেখ হাসিনা আরও একবার বাংলাদেশের শাসক নির্বাচিত হওয়া ভারতের জন্য সুখকর হলেও, ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অধীনে বিএনপিগোষ্ঠী হতে কিংবা অন্য যে শাসকই ক্ষমতায় আসুক না কেন সেটি দেশের সার্বভৌমত্ব বা জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ। কেননা তারা প্রত্যেকেই কাজ করবে উপনিবেশবাদীগোষ্ঠী ও তাদের আঞ্চলিক চৌকিদারদের স্বার্থ রক্ষায়। উপনিবেশবাদী আমেরিকা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার আঞ্চলিক চৌকিদার হিসেবে ভারতের হাতকে শক্তিশালী করছে যাতে  চীনকে মোকাবেলা এবং আসন্ন ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রের উত্থান ঠেকাতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের অবস্থান ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভারতের অবস্থান সুসংহত করতে বাংলাদেশের ভূমিকা তাদের উভয়ের নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য তারা চায় বাংলাদেশের ক্ষমতায় তাদের তাঁবেদার শাসক বসাতে যে ভারতের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে অনুগত দাসের মতো কাজ করবে।

২০০৮ সালে মার্কিন-বৃটেন-ভারতের সমঝোতার সরকার হিসেবে যাত্রা শুরুর পর হাসিনা সরকার ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পিলখানার নির্মম হত্যাকাণ্ডে ভারতকে পূর্ণ সহযোগীতা করে। পিলখানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একদিকে ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী আমাদের মেধাবী সেনাঅফিসার এবং অকুতোভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর-কে নিশ্চিহ্ন করা হয়। এরপর বন্দর, ট্রানজিট, সামরিক সরঞ্জামক্রয়সহ ভারতের স্বার্থে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি করা হয়, যা নিয়ে স্বয়ং শেখ হাসিনা বলতে বাধ্য হয়েছে যে, আমি ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা কখনো ভুলতে পারবে না। বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধীগোষ্ঠীও এই দাসত্বের বাইরে নয়। তাদের দুই-একজন নেতা মুখে ভারত বিরোধীতার বুলি আওরালেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনুষ্ঠিতব্যের আগে ভারতীয় হাইকমিশনে শীর্ষ নেতাদের সাথে নৈশভোজের আয়োজন করে এবং এ বৈঠকে ভারতের চাওয়া অনুযায়ী মৌলবাদ (ইসলামের উত্থান) মোকাবিলায় সোচ্চার হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় (https://www.jagonews24.com/m/politics/news/842730). অর্থাৎ দুই অনুগত দাসের মধ্যে যে অধিক ফায়দা প্রদানের পরিচয় দেয় তাকেই ক্ষমতায় বসানো হয়।

তাই ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অধীনে তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম নয়। কারণ এই দালাল শাসকদের কোন আদর্শিক ভিত্তি না থাকায় তারা দেশ-জনগণের শত্রুকে নিজেদের স্বার্থে মিত্র হিসেবে চিহ্নিত করে। হাসিনা-খালেদার মতো দালাল শাসকেরা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ক্ষমতায় আরোহণের জন্য তাদের কাফির-মুশরিক প্রভুদের খুশি করতে ব্যস্ত থাকে, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না” (সুরা মুমতাহিনা-১)।

সুতরাং মুসলিম জনগণের ভূমি এবং তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দরকার মানবজাতির সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন প্রদত্ত পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতি। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠা খিলাফত রাষ্ট্র কখনোই নিজের দেশের সার্বভৌমত্বে অন্যের আধিপত্য মেনে নিবেনা। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকল প্রকার বিদেশী শক্তির হস্তক্ষেপ কঠোর হাতে প্রতিহত করবে। সাহসী সীমান্তরক্ষীর মাধ্যমে সীমান্তে আগ্রাসন শক্তভাবে মোকাবেলা করবে। “এবং কিছুতেই আল্লাহ্‌ মু‘মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বের পথকে মেনে নিবেন না” (সূরা আন-নিসা: ১৪১)।

    –    উম্মে আব্দুল্লাহ্‌

“রাজউকের ১০ কাঠা প্লট পাচ্ছেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ”

খবরঃ

বছরের শেষ দিকে ‘মুজিব’ সিনেমায় অভিনয় দিয়ে আলোচনায় ছিলেন চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ। এ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময় শুভর ১ টাকা পারিশ্রমিক নেওয়ার বিষয়টাও বেশ আলোচিত ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিকে অভিনয় শুভকে আলাদা একটা জায়গা করে দিয়েছে। এই ঢালিউড তারকাও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, তার আর সিনেমা না করলেও আফসোস থাকবে না। দীর্ঘ সময় ধরে ছবিটির সঙ্গে লেগে থেকে শুভ তার কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণও করেছেন। এই অভিনেতা হঠাৎ আবার খবরের শিরোনামে এলেন। তবে নতুন কোনো ছবিতে অভিনয় দিয়ে নয়, এবার তিনি খবরের শিরোনাম হলেন সরকারের সংরক্ষিত জায়গায় ১০ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ পেয়ে। রাজউক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সংরক্ষিত কোটায় রাজউকের ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন আরিফিন শুভ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদিকে একই সময়ে চলচ্চিত্র প্রযোজক লিটন হায়দারের নামে ৩ কাঠা জমি বরাদ্দ দিয়েছে রাজউক। এই প্রযোজক ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ ছবিটি প্রযোজনা করেছেন। (www.prothomalo.com/entertainment/dhallywood/22iaoe8iqq)

মন্তব্যঃ

সরকারের পদলেহনের পুরষ্কারস্বরূপ কিংবা সরকারের অংশ হিসেবে সুবিধাভোগীর তালিকায় এই দুইজনের নাম সাম্প্রতিক সংযোজন হলেও এই তালিকা খুবই সুদীর্ঘ। যেমন, গত বছরের আগষ্টে নির্বাচনের পূর্বে সরকারী কর্মকর্তাদের মন রক্ষার্থে (সরকারী ঘুষ) গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য সরকার ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার গাড়ি কেনার অনুমোদন দেয়। উপরন্তু এসকল গাড়ীর রক্ষণাবেক্ষণ, তেল খরচ ও চালকের বেতন বাবদ মাসে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। তাছাড়া, “সাঁওতালদের ৮৬.৩১ একর জমি দখলের অভিযোগ এমপি শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে”, “প্রয়াত সংসদ সদস্যের স্ত্রীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ”, “সংখ্যালঘুদের জমি দখলে এমপি-মন্ত্রী”, “আওয়ামী এমপির বিরুদ্ধে হিন্দুদের জমি দখলের অভিযোগ”, “খাস জমি দখল করে ক্লাব নির্মাণের অভিযোগ এমপির বিরুদ্ধে” – ইত্যাদি ধরণের শিরোনাম অহরহই আমাদের সামনে আসছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ১৪ তারিখ প্রথম আলোর এক রিপোর্টমতে, “রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংরক্ষিত কোটায় গত তিন বছরে বিভিন্ন আকারের প্লট পেয়েছেন অন্তত ২৮৫ জন। তাদের মধ্যে ১৪৯ জনই সাবেক ও বর্তমান সাংসদ। বাকিদের মধ্যে আছেন উচ্চপর্যায়ের আমলা থেকে শুরু করে অফিস সহকারী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীও আছেন।” সুতরাং সরকারী দল ও এর অনুসারী কিংবা সরকারের অংশ হিসেবে সবাই মোটামুটি বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধায় আবৃত বিশেষ করে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে।

উপরোক্ত উদাহরণগুলো থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, সরকার কিংবা সরকারী দলের অংশ হওয়ার উদ্দেশ্যই থাকে অবৈধ সম্পদ আহরণের মহোৎসবে মেতে উঠা। বর্তমান ব্যবস্থায় শাসকেরা জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থাকে। তারা তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে পাঁচ বছরের জন্য আইনপ্রণেতা হিসেবে জনগণের উপর চেপে বসে এবং তাদের যেকোন অপরাধ কিংবা স্বার্থকে আইনসিদ্ধ করে নেয়। তারা একদিকে তাদের বলয়ের মধ্যে থাকা সুবিধাভোগীদেরকে জনগণের সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়ার সুযোগ করে দেয়, অপরদিকে নিজেরাও সম্পদ লুটপাট করে।

কিন্তু ইসলামে গণমালিকানাধীন সম্পত্তি ব্যবহারের অধিকার শুধুমাত্র সাধারণ জনগণের, ফলে এগুলোকে ব্যক্তি মালিকানায় প্রদানের কোন সুযোগ শাসকের নেই। যেমন, একবার এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর কাছ থেকে একটি লবনের খনি চেয়ে নিলে অন্য একজন যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-কে বলেন যে, এটা হচ্ছে লবনের বিশাল খনি তখন তিনি এটি তার কাছ থেকে ফিরিয়ে নেন। একইভাবে খলীফা উমার ইবনে আবদুল আজিজ যখন ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি তার সকল সম্পত্তি ৩২ হাজার দিনারে বিক্রয় করে তা বায়তুল মালে জমা রাখেন। এবং উমাইয়া বংশের যারা সম্পদের মালিক হয়েছিলেন তাদের কাছ থেকেও তা কেড়ে নিয়ে বাইতুল মালে জমা দেন কারণ তিনি মনে করতেন উমাইয়ারা তাদের শাসন ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এসকল সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। অপরদিকে শুধুমাত্র ভূ-সম্পত্তিই নয় অন্যান্য অর্থকড়ি যারা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন তাদের কাছ থেকেও তা কেড়ে নিয়ে বায়তুল মালে জমা দিতে হবে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “যে কেউ কিছু আত্মসাৎ করবে, সে তার আত্মসাৎ করা বস্তু নিয়ে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে” [আল ইমরান-১৬১]। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহ্‌’র নিকট বড় গলুল তথা খেয়ানত হল এক বিঘত যমীন নেয়া। যদি কেউ এভাবে যমীন কেটে নেয় সে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সাত যমীন গলায় পেচিয়ে থাকবে” [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৩৪১]।

    –    মো. হাফিজুর রহমান

“৯ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার ৬৪০১ জন”

খবরঃ

চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ হাজার ৪০১ জন রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭০ জন নিহত এবং ৬ হাজার ৩৩১ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন ৭ জন। বাকি ৬৩ জন ক্ষমতাসীন দলের কোন্দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। এছাড়া চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে পুলিশি হেফাজতে ৯৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মাস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল রিসার্চ আয়োজিত ‘মানবাধিকারের ধারণা ও বাস্তবতা: বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনারে এ জরিপ প্রকাশ করা হয়। জরিপ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট একেএম বদরুদ্দোজা।( https://www.banglatribune.com/others/828464/‘৯-মাসে-রাজনৈতিক-সহিংসতার-শিকার-৬৪০১-জন’)

মন্তব্যঃ

বিভাজনই বর্তমান মুনাফাকেন্দ্রীক রাজনীতির লাভ-ক্ষতি হিসাবের একটি অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। ফলে, আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কিংস পার্টিসহ ছোট-বড় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি, যারা দেশের মানুষদেরকে নানা দলে বিভক্ত করে ফেলে। ফলে সমাজ বা রাষ্ট্রে অন্তর্কোন্দল হয়ে পড়ে দৈনন্দিন চর্চার বিষয়। ফলে আওয়ামীলীগার কর্তৃক আরেক আওয়ামীলীগারকে, কিংবা বিরোধী পক্ষকে আক্রমন হয়ে পড়ে স্বাভাবিক ব্যাপার, ক্ষমতায় টিকে থাকা কিংবা ক্ষমতায় আরোহনের লড়াইয়ে তখন বিভাজন আর সহিংসতা হয়ে উঠে প্রধান নিয়ামক। এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা কিংবা নমিনেশন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে দলীয় কোন্দল প্রতিটি দলেই এখন বিরাজমান। তাই, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তৃণমূল বিএনপির মত দল এই বিভাজনকে আরো স্পষ্ট করে তুলেছে। আর এই বিভাজনের স্বাভাবিক ফলাফল হচ্ছে এধরণের রাজনৈতিক সহিংসতা। ইসলাম-পূর্ব আরবে আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময় যেমন গোত্রবাদ বিদ্যমান ছিল ঠিক তেমনি একইভাবে বর্তমান ব্যবস্থাও আমাদেরকে একই দিকে ঠেলে দিয়েছে। আওয়ামী-বিএনপির মত এই গোত্রবাদ শুধুমাত্র এদেশেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে যেমন রয়েছে রিপাবলিকান আর ডেমোক্রেট গোত্র, যুক্তরাজ্যেও তেমনিভাবে রয়েছে কনজারভেটিভ আর লেবার গোত্র।

একমাত্র ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে সকলকে একত্রিত করে এই নব্য গোত্রবাদ থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব। ইসলাম যেমন এর আদর্শ দিয়ে ইয়াসরিবের (বর্তমান মদীনা) যুদ্ধরত দুই গোত্র আউস ও খাজরাজকে মদিনার ঐক্যবদ্ধ মুসলিম জাতিতে পরিণত করে নতুন সভ্যতা নির্মান করে ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছিল, ঠিক একইভাবে সম্ভব বাংলাদেশের মানুষকে আওয়ামী-বিএনপি গোত্রবাদের হাত থেকে রক্ষা করে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একত্রিত করে দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীর নতুন ইতিহাস রচনা করা। আমাদেরকে অবশ্যই এই গোত্রবাদী চিন্তা পরিবর্তন করে ইসলামের আদর্শের ভিত্তিতে আমাদের পরিচয়কে নির্ধারণ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি লোকদেরকে গোত্রবাদের দিকে আহ্বান করে, অথবা এর জন্য যুদ্ধ করে, অথবা এর জন্য মৃত্যুবরণ করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়” (আবু দাউদ)। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-কে গোত্রবাদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “এটা ত্যাগ কর, কারণ এটি দুর্গন্ধময়” (বুখারী ও মুসলিম)।

    –    মো. হাফিজুর রহমান

     

“একটি গাণিতিক সমস্যা ও ভোট প্রদানের সংখ্যা”

খবরঃ

ঘড়ির কাঁটা তখন বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা। ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়ার দেড় ঘণ্টা পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৮% ভোট পড়েছে। ভোট শেষ হওয়ার একঘণ্টা আগে বেলা ৩টায় ইসি সচিব জানান যে, ভোট পড়েছে ২৭.১৫%। এটা যুক্তিসঙ্গত যে, ভোটদানের শেষ একঘণ্টায় ১% ভোট বৃদ্ধি পেতেই পারে । সে হিসাবে  ২৮%-এ বৃদ্ধি যুক্তিসংগত। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন চলাকালে একজন কর্মকর্তা জানালেন, স্যার সংখ্যাটা ৪০% হবে । সঙ্গে সঙ্গে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বললেন, সংখ্যাটা ৪০-ও হতে পারে এর কমবেশি হতে পারে।  এর মানে গত এক ঘণ্টায় এক-তৃতীয়াংশ ভোট পড়েছে। কী অবিশ্বাস্য! … সেখানে ভোটের এই সংখ্যা নিয়ে অনেকেই বিস্মিত। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের ধারণা-প্রকৃত ভোটের সংখ্যা ১২%-এর বেশি হবে না।… (https://mzamin.com/news.php?news=92130)

মন্তব্যঃ

নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যার সাথে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত এদেশের মানুষের চাওয়া হল, দুনিয়াতে একটু স্বচ্ছলতা ও সম্মানের সাথে জীবন যাপন করা এবং আখিরাতে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নিকট থেকে ক্ষমা প্রাপ্তি। এবং শাসকের কাছেও তাদের চাওয়া মূলত এটাই। এদেশের মানুষ এটাও জানে যে, উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রসমূহ এবং তাদের দাস এদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী কখনোই তাদেরকে এই সুযোগ করে দিবেনা। তাই প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কিংবা নির্বাচন ঘিরে এদেশের জনগণের বিশেষ করে তরুণ সমাজের কোন আগ্রহ নেই। সম্প্রতি বিভিন্ন জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। তাই নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কে জনগণকে লিপ্ত রাখা পশ্চিমা উপনিবেশবাদী শক্তি এবং আওয়ামী-বিএনপি গোষ্ঠীর প্রতারণার ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই নয়। আওয়ামী গোষ্ঠী ৪০% ভোটারের উপস্থিতির কথা বলে তাদের উপনিবেশবাদী প্রভুদেরকে এটা দেখাতে চায় যে, একটা বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের সাথে আছে। তাই তাদের প্রভুরা যেন তাদেরকে ক্ষমতায় রাখে। অন্যদিকে সর্বোচ্চ ১২% ভোটারের উপস্থিতির কথা বলে বিএনপি গোষ্ঠী তাদের প্রভুদেরকে এটা দেখাতে চায় যে, আওয়ামী লীগের আয়োজিত নির্বাচনের জনগণের কোন আগ্রহ নেই, তাই তারা যেন বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে সহযোগিতা করে। এই উভয় গোষ্ঠীই তাদের সকল কর্মকাণ্ড তাদের প্রভুদেরকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে পরিচালিত করে। আর উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রগুলো নির্বাচনে বেশি ভোটার এ কারণে চায় যে, তারা যেন এটা দেখাতে পারে যে, তাদের সম্পদ-লুণ্ঠনের চুক্তিসমূহ তারা উপযুক্ত প্রতিনিধির সাথেই করেছে। যেন আমরাই স্ব-ইচ্ছায় আমাদের খনিজ, বন্দর, অর্থনীতি-সবকিছুই আমাদের তথাকথিত জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের হাতে তুলে দিয়েছি! এবং তাদের দালালরা যখন এগুলো তাদেরকে দিয়ে দিবে, তখন আমরা যেন এর প্রতিবাদের ন্যায্যতা হারিয়ে ফেলি।

তাই এই সিস্টেমেটিক ভোটার সংখ্যার ফালতু বিতর্কের ফাঁদ সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। বরং আমাদের আলোচনা হওয়া উচিত, কিভাবে আমরা আমাদের কাঁধে চেপে বসা এই অনাকাঙ্খিত পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারি, যা আমাদের বর্তমান সকল সংকটের মূল কারণ। এই ব্যবস্থাই জনগণকে বলি দেওয়ার মাধ্যমে উপনিবেশবাদী রাষ্ট্র, এদেশে তাদের দালাল শাসক ও পুঁজিপতিদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। আমাদেরকে আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীসহ বর্তমান ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রদত্ত শাসনব্যবস্থা তথা খিলাফত শাসন ব্যবস্থায় ফেরত যেতে হবে। এই শাসনব্যবস্থা আমাদেরকে শুধু তাঁর (সুবহানাল্লাহু ওয়া তা’আলা) সন্তুষ্টিই অর্জনে সহায়তা করবে না, বরং আমাদের জন্য আসমান ও জমীনের যাবতীয় নিয়ামত ও বরকতসমূহ উন্মুক্ত করবে। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেছেন, “জনপদের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনতো ও তাকওয়ার পথ অবলম্বন করতো, তাহলে আমি আসমান এবং জমিনের সমস্ত বরকত তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতাম…”। (সূরা: আল-আরাফ ৯৬)

    –    মোঃ জহিরুল ইসলাম