working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 56

 

Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৫৬ তম সংখ্যা । ১৪ জুন, ২০২২

এই সংখ্যায় থাকছে:

 

“ইসলামের নবীকে নিয়ে বিতর্কে ভারতের সঙ্গে আরব বিশ্বের সম্পর্ক সংকটে”
“সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯”
“পরিবেশ অশান্ত করলে ‘আম-ছালা’ দুটোই যাবেঃ প্রধানমন্ত্রী”
“এক মাসেই ৬ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা!”
“শেখ হাসিনার সরকার ইসলামের জন্য যা করেছে, কোনও সরকার তা করেনি”
“বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করায় জাবি শিক্ষার্থীর ৭ বছর কারাদণ্ড”
“পাচার করা টাকা বৈধ করার ঘোষণা”
“ঢাকায় গণপরিবহনে ৬৩.৪ শতাংশ নারী হয়রানির শিকার”

 

 

 

“ইসলামের নবীকে নিয়ে বিতর্কে ভারতের সঙ্গে আরব বিশ্বের সম্পর্ক সংকটে”

খবরঃ
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দু’জন নেতা ইসলামের নবী মোহাম্মদ সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এর বিরুদ্ধে যেভাবে ক্ষোভ বাড়ছে, তার কারণে ভারত সরকার পরিস্থিতি শান্ত করতে কিছু ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।… ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা গত মাসে এক টেলিভিশন বিতর্কে এই মন্তব্য করেছিলেন। আর দলের দিল্লি শাখার মিডিয়া ইউনিটের প্রধান নভিন জিন্দাল এ বিষয়ে টুইটারে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন।… কুয়েত, কাতার এবং ইরান এরই মধ্যে রবিবার ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের ডেকে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। সৌদি আরবও সোমবার এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছে। … সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন কোন হ্যাশট্যাগে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হচ্ছে। কাতার এবং কুয়েতে কিছু কিছু দোকানপাট ভারতীয় পণ্য তাদের তাক থেকে সরিয়ে নিচ্ছে এমন খবরও আসছে। (https://www.bbc.com/bengali/news-61704054)

মন্তব্যঃ

খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের পর বিশ্ব নেতৃত্বের আসন থেকে ইসলাম ছিটকে যায়। অভিভাবকহীন দিশেহারা মুসলিম জাতির অধিকার, বিশ্বাস ও আবেগ নিয়ে প্রায়ই কাফির-মুশরিকরা নানারকম বিরূপ মন্তব্য করে। বিশেষতঃ প্রিয় নবীজী (সাঃ)-এর সন্মানের উপর আঘাত আসলে আমরা মুসলিমরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ি। ভারতীয় জনতা পার্টির নূপুর শর্মার মন্তব্য নিয়েও প্রতিবাদ হচ্ছে, কিন্তু এবারের প্রতিবাদের কয়েকটি দিক বিশেষভাবে লক্ষণীয়। প্রথমতঃ প্রতিবাদ কেবলমাত্র সাধারণ জনগণ থেকে হচ্ছে না। আরব রাষ্ট্রগুলোর শাসকগোষ্ঠীও জনরোষকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারত সরকারকে প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ যে অনেকবেশি কার্যকরী হয় সেটা আমরা লক্ষ্য করেছি, এমনকি পশ্চিমা মদদপুষ্ট দালাল শাসকেরাও যদি তা করে। ভেবে দেখুন যদি মুসলিমরা যদি একটি ইসলামী শাসন বা খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে তার প্রতিবাদ কতটা জোরালো, কতটা বলিষ্ঠ হবে। নূপুর শর্মার ক্ষেত্রে আরেকটি অদ্ভুত দিক হল এই যে, বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো এ বিষয়ে একেবারে নীরব। যেখানে ভারতের একটি তুচ্ছ বিষয়ও এদেশে সংবাদের প্রধান শিরোনাম হয়ে যায় সেখানে ‘নূপুর শর্মাকে নিয়ে ভারত বেকায়দায়’ সংবাদটা দেশীয় মিডিয়া হাউজগুলো কি ইচ্ছে করে নাকি চাপে পড়ে এড়িয়ে যাচ্ছে ভেবে দেখতে হবে। আর এদেশের সেক্যুলার শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিবাদ আশা করাইতো বোকামী। কারণ নবীজীর সাথে তাদের সম্পর্ক (অ-)বিশ্বাসের আর ভারতের সাথে তাদের রক্তের সম্পর্ক (দেখুনঃ “ভারতের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক – পররাষ্ট্রমন্ত্রী” দৈনিক জনকণ্ঠ, ৬ ডিসেম্বর ২০২১)। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে, ভারতের আশীর্বাদে, ভারতের স্বার্থে তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে, তারা কিভাবে ভারতের বিরাগভাজন হবে? (দেখুনঃ “চলছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ মহড়া ‘সম্প্রীতি’”, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৬ জুন ২০২২) নবীজীকে কটুক্তি করাতে তাদের কিছু যায় আসে না, তাদের নেত্রীকে কটুক্তি করার প্রতিবাদ কিন্তু তারা ঠিকই করেছে, (দেখুনঃ “বিক্ষোভ মিছিলে রাজধানীতে তীব্র যানজট – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামীলীগ” the Daily Star বাংলা, ৯ জুন ২০২২)।

আরব রাষ্ট্রগুলোর প্রতিবাদ, ভারতের সাথে কূটনৈতিক ও ব্যবসায়ীক সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি, সেখানকার মুসলিমদের কর্তৃক ভারতীয় পণ্য বর্জন, এসবই ঠিক আছে, আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) সম্মান রক্ষার্থে প্রয়োজন আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার। একইসাথে আমাদের মনে রাখতে হবে প্রিয় নবীর প্রিয় উম্মতের সাথে যারা অন্যায় করে, জুলুম করে, ইসলাম অনুযায়ী জীবনযাপনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তারাও নবীজীর দুশমন। তাদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক রাখা যাবে না। যারা নিরীহ মুসলিম নারী-পুরুষ-শিশুদের হত্যা করে, মুসলিমদের অধিকার কেড়ে নেয়, মুসলিমদের নিজভূমি থেকে বিতাড়িত করতে ষড়যন্ত্র করে তাদের সাথে বন্ধুত্ব, তাদেরকে জাতীয় সন্মাননায় ভূষিত করা নবীজীর সাথে বেঈমানি ছাড়া আর কিছু না (দেখুনঃ “আমিরাতের সর্বোচ্চ বেসমরিক সন্মাননা পেলেন মোদি”, প্রথম আলো, ২৫ আগস্ট ২০১৯)। নবী (সাঃ)-এর উপর আঘাত আসলে আমরা যেভাবে জেগে উঠি, উম্মাহ্‌’র উপর আঘাত আসলেও আমাদেরকে তা প্রতিহত করতে হবে। মু‘মিন মুসলিমের মর্যাদা প্রসঙ্গে পবিত্র কাবা শরীফকে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন “আল্লাহ্‌’র কাছে একজন মু‘মিন ব্যক্তি তোমার চেয়েও অধিক মর্যাদাবান, তাদের সম্পদ ও রক্ত অধিক সন্মানিত” (ইবনে মাজাহঃ২/১৮৩০)।প্রিয় নবী (সাঃ) ও তার উম্মতের উপর আজ আঘাত আসছে প্রতিনিয়ত। কে সাহসী বলিষ্ঠ ভূমিকায় নবীজীর ইজ্জত ও উম্মতের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসবে? এসব পশ্চিমা দালাল শাসকদের দিয়ে তা সম্ভব না, জনগণের উত্তেজনাকে প্রশমিত করতে তারা নামকাওয়াস্তে কিছু ভূমিকা রাখতে পারে কিন্তু ইসলাম ও উম্মাহ্‌’র স্বার্থকে রক্ষা করাকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কখনোই তাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব মনে করে না। তাই নবী (সাঃ)-এর অপমান ও উম্মাহ্‌’র প্রতি কাফের মুশরিকদের জুলুমের অবসান করতে প্রতিবাদের পাশাপাশি আমাদেরকে অবশ্যই রাষ্ট্র ব্যবস্থার সামগ্রিক পরিবর্তনের ডাক তথা খিলাফতে রাশিদাহ্‌ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাতে হবে।

-কামাল আবু যায়িদ

 

 

 

“সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯”

খবরঃ
সীতাকুণ্ডের বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, পার্কভিউ হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তি আছেন মোট ১৮২ জন। এছাড়া চমেক হাসপাতাল ও পার্কভিউ হাসপাতাল থেকে ১২ জন রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর আহত ১০০ জনের বেশি চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে ৫০ হাজার ও আহতদের ২৫ হাজার করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে দুই লাখ করে টাকা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। (www.banglatribune.com/country/chitagong/746861)

মন্তব্যঃ
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্যমতে ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে যাতে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৫৯০ জন। পুরান ঢাকার নিমতলীতে ১২৪ জন, আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে ১১১ জন, টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলসে ৪১ জন, চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ৭১ জন, নারায়নগঞ্জে সেজান জুসের কারখানায় ৫২ জন আর এখন বিএম কনটেইনার ডিপোতে ৪৯ জনের মৃত্যু দেশের মানুষদেরকে শোকাহত করলেও শাসকশ্রেণী তাদের কার্যক্রম সীমিত রেখেছে কিছু অফিসিয়াল ওয়ার্কের মধ্যে। যেমন, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি আর মন্ত্রীসভার শোক প্রকাশ কিংবা আগুনে স্বজনহারা রুনা, রত্না ও আসমাদের প্রধানমন্ত্রীর নিজের মেয়ে বানিয়ে গণভবনে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিবাহ দেয়া, নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দিয়ে মৃতদের আত্নীয় কিংবা ক্ষতিগ্রস্তদের বিদায় করা, নানান সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা যাদের তদন্ত রিপোর্ট কদাচিৎ জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয়, দায়ী ব্যক্তি ক্ষমতাধর কিংবা সরকারী মুদদপুষ্ট হলে কিংবা সরকার যদি তার আজ্ঞাবহ হয় তাহলে তাকে বাদ দিয়ে অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা ইত্যাদি। ফলে অগ্নিকান্ডে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও শাসকশ্রেণীর এই গৎবাঁধা কার্যক্রমে কোন পরিবর্তন আসেনি।উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিক দ্রব্য থেকে সূত্রপাত হওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন মানুষ মারা গেলেও এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি এবং পুরান ঢাকা থেকে এখনও রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরানো হয়নি যদিও অগ্নিকান্ডের পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, “পুরান ঢাকা থেকে যত দ্রুত সম্ভব সব রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে ফেলা হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নিমতলী অগ্নিকান্ডের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরান ঢাকাকে ঝুঁকিমুক্ত করতে ১৭ দফা সুপারিশ করেছিল, যার মধ্যে ছিল রাসায়নিক কারখানা সরিয়ে নেওয়া, অনুমোদনহীন কারখানার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাসায়নিক দ্রব্যের মজুত, কেনাবেচা এবং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাই–বাছাই, বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করা। কিন্তু গত এক যুগেও রাসায়নিক ও প্লাস্টিক কারখানামুক্ত হয়নি পুরান ঢাকা। মাঝেমধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন লোক দেখানোর জন্য অভিযান পরিচালনা করলেও মূল সমস্যার কোন সমাধান আসেনি। এই একটিমাত্র ঘটনাই প্রমাণ করে আমাদের দেশের শাসকশ্রেনী জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার ব্যাপারে কতটা উদাসীন আর তাদের সুবিধাভোগীদের সুবিধা বর্ধনে কতটা আন্তরিক।

আমরা যদি বিএম কনটেইনারের দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখব যে, এর মালিক হচ্ছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান যিনি গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলে। এই কারণেই আমরা দেখি অগ্নিকান্ডের ঘটনার পাঁচদিন পর দায়ের করা মামলায় মালিকপক্ষের কাউকে আসামি করা হয়নি, বরং তাদেরকে বাদ দিয়ে আটজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ, এর মধ্যে ১ নম্বর আসামী হচ্ছেন আগুনে হাত হারানো ডিপোর উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) নুরুল আক্তার৷ উপরন্তু ডিপোটিতে রাসায়নিক বা দাহ্য পদার্থ রাখার অনুমতি না থাকার পাশাপাশি যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অগ্নি নির্বাপক প্রশিক্ষণ এবং সঠিক তথ্যও ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও, প্রাইভেট কনটেইনার ডিপোর অনুমোদন দেয়ার জন্য দায়িত্বশীল নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তারই দলের নেতা ডিপোর মালিকের পক্ষাবলম্বন করে বলেছেন, ‘‘বিভিন্ন দপ্তর থেকে বিভিন্ন অভিযোগ করা হলেও তা এখনো প্রমাণিত নয়৷ কিছুদিন আগে আইএসপিস কোডের (ইন্টারন্যাশনাল শিপ এন্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি কোড) অডিট হয়েছে৷ তাদের যদি কোন ত্রুটি থাকত তাহলেতো ধরা পড়ত৷ আমার প্রশ্ন তাহলে অডিটে তারা পাস করল কীভাবে?’’ বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই অডিটের দায়িত্ব শিপিং বিভাগের৷ ওই বিভাগটি নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে৷

এমতাবস্থায় যে বিষয়টি সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক তা হচ্ছে বিপদগ্রস্ত মানুষদের পাশে শাসকশ্রেণী না দাঁড়ালেও সাধারণ জনগণের নিঃস্বার্থভাবে পাশে দাঁড়ানো। তারা নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে ঘটনাস্থল থেকে লোকজনকে উদ্ধার করা এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। তবে, বিপদগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আমাদের চিন্তা করতে হবে কিভাবে বর্তমান এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করা যায় যেখানে সাধারণ মানুষদের জীবনের কোন মূল্য নেই বরং যেখানে শুধু রয়েছে সাধারণ জনগণের জীবনের বিনিময়ে পুঁজিপতি আর ক্ষমতাসীনদের মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ-সুবিধা। আমাদেরকে অবশ্যই বর্তমান এই ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করে নবুয়তের আদলে খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাতে হবে যেখানে খলীফা জনগণের সকল প্রকার নিরাপত্তা বিধানের জন্য দায়িত্বশীল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “খলিফা তার জনগণের উপর দায়িত্বশীল। তিনি তাদের (অধিকার) সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন।” খিলাফত ব্যবস্থায় খলীফা তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন যাতে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এধরনের অগ্নিকান্ড যাতে না ঘটে সেজন্যে অবশ্যই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র কর্তৃক জারিকৃত অগ্নি-নিরাপত্তার বিধানসমূহ মানতে বাধ্য করা হবে। পাশাপাশি প্রশাসন সবসময় খেয়াল রাখবে যাতে এর ব্যত্যয় না ঘটে। উপরন্তু অবহেলার কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে দোষীদের সাথে সাথে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এবং খিলাফত রাষ্ট্রে এগুলো খুব সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কারণ খলীফা কারও ডোনেশনের বিনিময়ে ক্ষমতায় টিকে থাকবে না, বরং জনগণই তাকে নিয়োগ দিবে ইসলাম দ্বারা তাদেরকে পরিচালিত করার জন্য।

-মো. হাফিজুর রহমান

 

 

“পরিবেশ অশান্ত করলে ‘আম-ছালা’ দুটোই যাবেঃ প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ
মঙ্গলবার (০৭ জুন ) ঐতিহাসিক ‘৬-দফা দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। …প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বেতন বাড়ানোর আন্দোলন যদি করতে যায়, এই রপ্তানি যদি বন্ধ হয়- গার্মেন্টসসহ সব কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমও যাবে, ছালাও যাবে। বেতন আর বাড়বে না। চাকরিই চলে যাবে। যখন ঘরে ফিরে যেতে হবে, তখন কী করবেন?’ …সরকার প্রধান বলেন, ‘বেসরকারি খাতে আমরা কত দেবো! আমরাতো ভুর্তকি দিয়েই যাচ্ছি। সব ধরনের প্রণোদনা দিয়েছি। এর বেশি দেওয়া সম্ভব নয়। সেটা মাথায় রেখে চলতে হবে…”। (www.banglanews24.com/national/news/bd/935525.details)

মন্তব্যঃ
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে বাধ্য হয়ে যখন শ্রমিকরা রাস্তায় নামছে, তখন শেখ হাসিনা সরকার স্পষ্টভাবেই তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। যেন, যথেষ্ট দয়া-দাক্ষিণ্য পাওয়ার পরেও অকৃতজ্ঞের মত রাস্তায় নেমে তারা অন্যায় করেছে। কিন্তু, আসলেই কি বাস্তবতা তাই? ২০১৩ সালের শেষ থেকে একজন পোশাক শ্রমিকের নূন্যতম বেতন মাত্র ৫ হাজার ৩০০ টাকা। যা স্বাভাবিক জীবন-যাপনের জন্য অতি নগণ্য। এমতাবস্তায় হিমশিম খেয়ে ২০১৩ সালেই শ্রমিকরা যখন নূন্যতম বেতন ১৬ হাজার টাকার দাবী জানায় তখন ২০১৮ সালে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা ৮ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত দেন (সূত্রঃ যুগান্তর)। ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে ঘুরেফিরে যা আগের মতই। এবং, প্রতিটি শ্রমিকের শ্রমের বিনিময়ে কোম্পানীগুলো যে মুনাফা অর্জন করে তার তুলনায় এটি একেবারেই নগণ্য। ফলে, বর্তমানে যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, বেঁচে থাকার মৌলিক উপকরণসমূহ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বাড়ীভাড়া, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সমস্ত কিছুর দাম পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি তখনতো যেকোন মানুষই নিজের অস্তিত্ব সংকটে বেতন বাড়াতে রাস্তায় নেমে উন্মাদের মত আন্দোলন করবেই। অন্যদিকে, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ব্যতিরেকে নিজের বেতন নির্ধারণ করেন ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা বেসিক, ১ লক্ষ টাকা বাড়িভাড়া আর দৈনিক এ্যালাউন্স ৩০০০ টাকা বাবদ মাসিক প্রায় ৩ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। যেখানে তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা মাত্র একজন। নিজেকে জনদরদী(!) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করা কেউ কিভাবে নিজের জন্য আয়েশী বিলাসবহুল জীবন-যাপন করার আর জনগণের জন্য নামেমাত্র বেতন নির্ধারণ করে?

মূলত, বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ-পূঁজিবাদী ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকে শুধুমাত্র তাদের আর পূঁজিপতি দানবদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। যা আমরা ধারাবাহিকভাবে প্রত্যক্ষ করে আসছি। সরকারের শ্রমিকদের নাম করে করোনাকালীন প্রণোদনার টাকা কিভাবে কতিপয় পূঁজিপতিদের পকেট ভারি করেছে তার চিত্রতো দেশীয় পত্র-পত্রিকায় উঠে এসেছে। আবার যখন, শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করার বিষয় আসে তখন তারা এমনভাবে বেতন নির্ধারণ করে যাতে কতিপয় পূঁজিপতি কোম্পানীর মালিকরা শ্রমিকদের নগণ্য বেতন দিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করে বিলাসবহুল জীবন অতিবাহিত করতে পারে আর শ্রমিকরা কোন রকম টিকে থাকে সমাজে। মনিব যেমন দাসের জীবনমান ঠিক করে দেয় কিভাবে সে বেঁচে থাকবে। ঠিক একইভাবে এই শাসকগোষ্ঠী ঠিক করে দেয় একজন শ্রমিক কিভাবে বাঁচবে, কোথায় সে থাকবে, কি খাবে, কি পরিধান করবে, কোথায় তার সন্তানকে পড়াবে, কোথায় চিকিৎসা নিবে আর মরার পর কোথায় গিয়ে তার ঠাই হবে। সরকার কর্তৃক শ্রমিকদের দিনবর শ্রমের বিপরীতে এই নগণ্য বেতন নির্ধারণ করে দেওয়াই যার প্রমাণ। দাসের যেমন মনিবের ইচ্ছের বাহিরে চাওয়া থাকতে পারেনা, তেমনিভাবে এই শাসকগোষ্ঠীও শ্রমিকদের হুমকি দিচ্ছে যা সে নির্ধারণ করেছে এর বেশি চাইলে ‘আমও যাবে ছালাও যাবে’। তাদের দায় বেসরকারী খাতের কিন্তু তারপরেও সরকার বহু দয়া দাক্ষিণ্য দেখিয়েছে এবং এতেই যাতে সন্তুষ্ট থাকে। অথচ, ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব নেয় শাসক এবং তাদের প্রত্যেকের শ্রমের প্রকৃত মূল্যও আলাদাভাবে নির্ধারণ করার ব্যবস্থা করে দেয় যাতে কেউ সর্বনিম্ন-সর্বোচ্চ বেতন কাঠামোর বেড়াজালে মানুষকে অধিক শ্রম করিয়ে শোষণ করতে না পারে। এক্ষেত্রে মানুষ নিজেকে বঞ্চনার শিকার মনে করলে আদালতের মাধ্যমে তা সমাধান করারও সুযোগ থাকে। এবং যেখানে শাসকও সদা তৎপর থাকে জনগণ যাতে তার জীবন পরিচালনায় হিমশিম না খায়। তাই খিলাফত রাষ্ট্রের প্রায় ১৪শ বছরের ইতিহাসে এমন কোন শ্রমিক আন্দোলনের নজির পাওয়া যায়নি।

-আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

 

 

 

“এক মাসেই ৬ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা!”

খবরঃ
‘চোরাবালির মতো ডিপ্রেশন, বেড়েই যাচ্ছে, মুক্তির পথ নেই, গ্রাস করে নিচ্ছে জীবন, মেনে নিতে পারছি না….। মৃত্যুর আগে এভাবেই নিজের হতাশার কথা লিখে যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া তাবাসসুম। ১৩ মে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। গত বুধবার (১ জুন) চিরকুট লিখে আত্মহননের পথ বেছে নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাইনা হাবিব প্রাপ্তি। একই পথে হেঁটেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অমিত কুমার বিশ্বাসও। সম্পর্কের টানাপোড়েন, আর্থিক অনটন, পারিবারিক ও মানসিক সমস্যা থেকে আত্মহননের পথে পা বাড়াচ্ছেন তারা। গবেষণা থেকে আরও জানা গেছে, সম্পর্কের অবনতি, পারিবারিক সমস্যা, মানসিক যন্ত্রণা, আর্থিক সংকট; মোটাদাগে এগুলোই আত্মহত্যার প্রধান কারণ। সমাধানে পারিবারিক সম্পর্ক দৃঢ় করার পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ‘ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার’ তৈরির পরামর্শ মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের। (https://www.jamuna.tv/news/352614)

মন্তব্যঃ
যতই দিন গড়াচ্ছে ততই আত্মহত্যার সংখ্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। গত এক মাসে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে ৬ মেধাবী শিক্ষার্থীর সিরিজ আত্মহত্যার ঘটনা দেশের সচেতন নাগরিক, অভিভাবকমহলসহ সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। যখনই আত্মহত্যার কোন ঘটনা ভাইরাল হয়, তখনই কিছু বুদ্ধিজীবী ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আমরা সম্পর্কের অবনতি, পারিবারিক সমস্যা, প্রেমে ছ্যাকা, মানসিক যন্ত্রণা, আর্থিক সংকট ইত্যাদিকে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করতে দেখি। এবং সমাধান হিসেবে তারা সাইক্রিয়াটিক কাউন্সিলিং ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপর জোর দেন। ফলে দেশে মোটিভেশনাল স্পিকারদের সংখ্যা বেড়ে গেছে এবং বেড়ে গেছে সাইক্রিয়াটিস্টদের সংখ্যাও। কিন্তু, এরপরেও কেন থামানো যাচ্ছে না এই আত্মহত্যার মিছিল? মুলতঃ এর কারণ হচ্ছে, আত্মহত্যা সম্পর্কে তাদের সংকীর্ণ পর্যবেক্ষণ। আত্মহত্যার যে কারণগুলো তারা উল্লেখ করেন সেগুলো সমস্যা ঠিক আছে কিন্তু এই সমস্যাগুলো কোন মূল থেকে আসছে সেগুলো তারা বের করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

মূলতঃ স্রষ্টাবিহীন এই ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী জীবনাদর্শ ইহজাগতিক সুখ লাভকে জীবনের মূল লক্ষ্য (Pursuit of Life) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাই বস্তুবাদী এই জীবনাদর্শে ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তি ও সম্পদ অর্জনকে জীবনের সুখ এবং সন্তুষ্টির একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সীমাবদ্ধ মস্তিষ্কজাত এই জীবনাদর্শ ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তি ও সম্পদ অর্জনকে সুখের মানদন্ড হিসেবে সংজ্ঞায়িত করলেও এটি সুখলাভের কোন সীমারেখা নির্দিষ্ট করতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে (E.g. Career, Affair, Money, Girlfriend, Job, Power, Latest Phones/Car/bike, Youtuber, BCs Cadre, Gang Leader) ইত্যদি অর্জনে তরুণরা এক প্রকার ইঁদুর দৌড় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। একজন তরুণ কিছু সম্পদ ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি অর্জনে সুখ অনুভব করতে পারে, কিন্তু যখন সম্পদ ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি অর্জনের নতুন কোন ট্রেন্ড (Trend) আসে অথবা তার সমকক্ষ কাউকে সে তার চেয়ে উন্নতমানের সম্পদ ও ইন্দ্রিয় সুখভোগ করতে দেখে তখন সেটা তার মধ্যে এক ধরণের Peer Pressure তৈরি করে। এই চাপ তার সুখানূভূতিকে মূহুর্তেই পরিবর্তন করে ফেলে যা তাকে নতুন সুখানূভুতি অর্জনে নতুন সম্পদ ও ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তি অর্জনের দিকে তাড়িত করে। এভাবে পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থায় সুখ অর্জনের এই অন্তহীন প্রতিযোগিতা একটা চক্রের (Cycle) মত চলতেই থাকে যা স্পষ্টতই সুখকে সুরক্ষিত করে না এবং কেবলমাত্র মানুষকে সম্পদ ও ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নিমজ্জিত রাখে। এর ফলে কেউ এগুলো অর্জন করতে না পেরে হতাশ কেউবা আবার এগুলো অর্জন করেও হতাশ যার উপসর্গ শুরু হয় Depression, Bipolar Disorder এবং অন্যান্য Mood Disorders এর মধ্য দিয়ে এবং শেষ হয় আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে। তাই আমরা চাকরি না পাওয়া হতাশ তরুণ থেকে শুরু করে জনপ্রিয় গায়ক, পর্দা কাপানো মুভি স্টার, স্পোর্টস স্টার, অস্কার জয়ী হলিউড-বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রী এমনকি ধনকুবের ও বিলিয়নিয়ারদের আত্মহত্যার ঘটনা দেখে অবাক হই না। WHO’র Preventing suicide: a global imperative” শীর্ষক রিপোর্ট মোতাবেক প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ বিশ্বের কোথাও না কোথাও আত্মহত্যা করে মারা যায়। আমেরিকাতে ২০২০ সালে ৪৬০০০ জন মানুষ আত্মহত্যা করে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমেরিকা ২০২১ সালে ২২৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। রেকর্ড আত্মহত্যাপ্রবণ দেশ জাপানে ১০ লক্ষাধিক মানুষ হতাশা ও বিষণ্ণতায় ভুগে সামাজিক বিচ্ছিন্নতাকে (Social Isolation) বেছে নিয়েছে যাকে তারা বলছে “Hikikomori”। বিশ্বের সুখী দেশ হিসেবে শীর্ষে থাকা ফিনল্যান্ডের জনসংখ্যার ১৬% প্রতিবছর আত্মহত্যা করে। তাই মানবীয় সমস্যার সমাধানে পুঁজিবাদী জীবনদর্শন দিন দিন যতই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে ততই বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার মহামারী বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আত্মহত্যার এই মহামারী থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র ইসলামী জীবনব্যবস্থা। বস্তুবাদী অর্জনকে ইসলাম সুখ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে না, বরং ইসলামে মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য এবং সুখের প্রকৃত মানদণ্ড হচ্ছে আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টি অর্জন। ফলশ্রুতিতে মানুষ উচ্চতর জীবনদর্শন ও জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পায় এবং প্রতিটি কাজের সাথে আখিরাতকে সংযোগ করে। আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমেই একজন মুসলিম প্রকৃত সুখী হয়। ইসলাম বস্তুগত অর্জনকে জীবনের অংশ (Part of Life) হিসেবে বিবেচনা করে, জীবনের উদ্দেশ্য (Purpose of Life) হিসেবে নয়। ইসলাম পার্থিব জীবনের দুঃখ-কষ্টকেও স্বীকৃতি দেয় এবং এগুলোকে থেকে মুক্তির উপায়ও বাতলে দিয়েছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর আমি অবশ্যই তাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়ভীতি – ক্ষুধা এবং (কখনও) জান-মাল ও ফল- ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। তবে ধৈর্যশীলদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ” (সুরা আল-বাকারাঃ ২৫৫)। তাই পার্থিব জীবনের সামান্য দুঃখ-কষ্টের মূহুর্তেগুলোও একজন মুমিন সহ্য করতে পারে এবং এই দুঃখ-কষ্টের বিনিময়ে পরকালে জান্নাত অর্জনের আশায় সবর করে থাকে যা একজন ব্যক্তির অন্তরকে প্রশান্ত করে। তাই ইসলামী জীবনব্যবস্থায় হতাশা, Mood Swings এবং আত্মহত্যার পেছনের কারণগুলোকে একদম গোড়া থেকে নির্মূল করা হয়েছে। সুতরাং, আত্মহত্যার মহামারী ঠেকাতে বর্তমান ভোগবাদী পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থাকে ছুড়ে ফেলে ইসলামী জীবনব্যবস্থা রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়ন ছাড়া অন্যকোন গত্যন্তর নাই। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে অবশ্যই হেদায়েত আসবে, অতঃপর যে আমার হেদায়েতের অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং অসুখী হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় নিশ্চয়ই তার জন্য রয়েছে কষ্টের জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব” (সুরা তা-হা: ১২৩-১২৪)

-মোহাম্মদ সিফাত

 

 

 

“শেখ হাসিনার সরকার ইসলামের জন্য যা করেছে, কোনও সরকার তা করেনি”

খবরঃ
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ইসলাম ও আলেম-ওলামাদের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনও সরকার তা করেনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শুধু কওমী সনদের স্বীকৃতিই দেননি, তাদের চাকরিও দিয়েছেন। তারা এখন সরকারি বেতন পাচ্ছেন। এটি কল্পনারও বাইরে ছিল।’ ড. মাহমুদ আরও বলেন, ‘আজকে সারা দেশে এক লাখ মসজিদভিত্তিক মক্তব করা হয়েছে। প্রতিটি মক্তবের আলেম ৫২’শ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। এটি আলেম সমাজ কখনও ভাবেনি। দারুল আরকাম এবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রতিটিতে দু’জন করে শিক্ষক ১২ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন”। (www.banglatribune.com/national/746637/‘শেখ-হাসিনার-সরকার-ইসলামের-জন্য-যা-করেছে-কোনও)

মন্তব্যঃ
‘শেখ হাসিনা ইসলামের জন্য কি কি করেছে’ এটা কি কোন বক্তব্যের বিষয়বস্তু হতে পরে? ইসলামের কি এত দুরাবস্থা যে শেখ হাসিনা বা অন্যকোন সরকারের মুখাপেক্ষী হতে হবে। আরে পাগল, প্রশ্নটা হবে শেখ হাসিনা কতটা ইসলাম অনুযায়ী তার সরকার পরিচালনা করতে পেরেছে? উত্তরটা হবে একবিন্দুও না। কারণ ইসলাম তার রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তিই না। তার রাষ্ট্র পরিচলনার ভিত্তিই হলো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। মসজিদ, মাদ্রাসা বা আলেম সমাজের জন্য সে যা কিছু করেছে তার সবই সে করেছে তার সেক্যুলার পলিটিক্যাল এজেন্ডাকে হাসিল করার জন্য, ইসলামের জন্য নয়। পশ্চিমা বিশ্বাস ও চিন্তা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ধারক-বাহক এই সরকার মুসলিম ও আলেমদের কাছে গিয়ে নিজেদের ইসলাম ও আলেমপ্রেমী প্রমাণে নানান প্রতারণামূলক মিষ্টি কথা বললেও প্রকৃত বাস্তবতায় তারা যে ইসলাম বিদ্বেষে কাফির-মুশরিকদেরই অনুসরণকারী এটা সবারই জানা। বৃটিশ পরবর্তী এখানকার শাসকেরা নিজেরা মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও সকলেই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলামকে জীবনের ও রাষ্ট্রের মূলধারা থেকে বাইরে রাখতে সবসময় তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। বৃটিশরা যেমন এখানে এসেই ইসলাম, আলেম ও মসজিদ-মাদ্রাসার উপর আক্রমণ করেছে, পরবর্তীতে তার দালাল সরকারগুলো একইধারা বজায় রাখে। তথ্যমন্ত্রী ইসলামপ্রেমে শেখ হাসিনাকে অন্য সকলের চেয়ে উপরে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেও বাস্তবে হাসিনা সরকার ইসলাম বিদ্বেষে অন্য সকলকে ছাড়িয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা তথাকথিত মুক্তচিন্তার ধারক বা ইসলামবিদ্বেষী চেতনাধারীদের উত্থানের সুযোগ করে দিয়ে একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করে। খিলাফত প্রতিষ্ঠার রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করাসহ এর রাজনৈতিক কর্মীদের নিষ্ঠুর দমন-নিপীড়ন চালায়। নাস্তিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাবিরোধী আন্দোলনরত জনতার উপর হামলে পড়ে অসংখ্য আলেম ও মুসলিমকে শাপলা চত্ত্বরে হত্যা করে। আলেম ও ইসলামী রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনে হাসিনা একদিনও বিশ্রাম নেয় বলে মনে হয় না। সে তার জেলখানাসমূহ অসংখ্য নিরপরাধ আলেম ও ইসলামী রাজনৈতিক কর্মীদের দিয়ে পুরে রেখেছে। সে ইসলাম বিদ্বেষে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোকে সরাসরি সহযোগিতা করছে। আমেরিকা, বৃটেন, ভারতের ‘War on Terror’ এ প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী হাসিনা তথাকথিত জঙ্গীবাদের তকমা দিয়ে সারাদেশে অসংখ্য মুসলিমকে বাড়ি ঘেরাওয়ের নাটক সাজিয়ে প্রকাশ্যে বিনাবিচারে হত্যা করেছে। ইসলামবিদ্বেষী কসাইখ্যাত মোদীর ঢাকা আগমনবিরোধী মিছিলে তার বাহিনী দিয়ে গুলি করলে ব্যাপক সংখ্যক মুসলিম শহীদ হয়। হাসিনা সরকার আলেম ও ইসলামের দাওয়াহ্‌কারীদের জান ও মালেরই শুধু ক্ষতি করেনি, তাদের ইজ্জতহানীর নির্লজ্জ প্রচেষ্টা থেকেও নিজেকে নিবৃত করেনি। সর্বশেষ তার দোসরদের ব্যবহার করে আলেমদেরকে ধর্মব্যবসায়ী অপবাদ দিয়ে সন্মানহানী করতে প্রতারণামূলকভাবে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। ইসলামবিদ্বেষী হাসিনা সরকার তাদের এসব কুকর্মকে ঢাকতে এবং আবারও মুসলিম ও আলেমদের প্রতারিত করতে তার প্রপাগাণ্ডা মেশিন তথ্যমন্ত্রীকে দিয়ে একটি ‘Counter Narrative’ প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে যে হাসিনা আসলে ইসলামপ্রেমী!
কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হল এই যে, আমাদের কিছু আলেম-ওলামারা স্যেকুলার পলিটিক্সের এজেন্ডাতে পরিণত হয়ে যায়। তাদের মনে রাখা উচিত তারা সমাজের নিগৃহীত কোন এক প্রতিবন্ধিগোষ্ঠী নয়। ইসলাম দাবী করে তারাই সমাজের এজেন্ডাগুলো ঠিক করবে, সমাজকে নেতৃত্ব দিবে, শাসককে পরামর্শ দিবে, জবাবদিহি করবে। মোটকথা ইসলামে আলেম-ওলামাদের মর্যদা অনেক উঁচুতে।
ইসলামকে জীবন ও রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে নিয়ে মুসলিমরা যখন খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করবে মসজিদ, মাদ্রাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আলেমরা থাকবেন সেই রাষ্ট্রের কেন্দ্রে। মসজিদের খতিব, খাদেম থেকে শুরু করে মাদ্রাসা শিক্ষক সবাইকে খিলাফত রাষ্ট্র তার রাষ্ট্রীয় বেতন কাঠামোতে নিয়ে আসবেন। বড় আলেম বা ইসলামী গবেষকদের রাষ্ট্র শুধু বেতন ভাতা সুযোগ সুবিধাই দিবেন না তাদেরকে গবেষণা করার জন্য ও দেশ পরিচালনায় অবদান রাখার জন্য সুযোগ করে দিবেন। খিলাফত রাষ্ট্রে আলেমদের ও ইসলামের দাওয়াহ্‌ বহনকারীদের থাকবে বিশেষ দায়িত্ব, তারা প্রতিনিয়ত খলিফাকে পরামর্শ দিবেন এবং জবাবদিহী করবেন।

-মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 

 

 

“বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করায় জাবি শিক্ষার্থীর ৭ বছর কারাদণ্ড”

খবরঃ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী শামসুল আলম বাবুর ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (৬ জুন) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পেশকার শামীম আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আসামি শামসুল আলম বাবু রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণার পর আদালত সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রায়ের আদেশে বিচারক বলেন, আসামির বয়স মাত্র ২৩ বছর। স্বল্প বয়স বিবেচনায় তাকে তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬ (সংশোধিত/২০১৩) এর ৫৭ ধারায় ন্যূনতম ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। (https://www.dainikshiksha.com/ বঙ্গবন্ধুকে-নিয়ে-কটূক্তি-করায়-জাবি-শিক্ষার্থীর-৭-বছর-কারাদণ্ড/231397/)

মন্তব্যঃ
এই ঘটনা থেকে প্রমাণ হলো যে, একটি জাতি তার বিশ্বাসগুলোকে যেগুলোকে সে মহান বলে মনে করে, তখনই নিরাপত্তা দিতে পারে যখন সেগুলো বাস্তবায়ন ও সুরক্ষা দেয়ার জন্য তার একটি রাষ্ট্র থাকে। বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা তার আদর্শকে সমুন্নতকারী যেসব ব্যক্তিকে মহান হিসেবে মনে করে তাদের সম্মানকে বাস্তবায়ন করে এবং সুরক্ষা দেয়। তাই আমরা দেখতে পেয়েছে বর্তমান সরকার শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে কটুক্তির জন্য দশ বছর কারাদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাস করেছে। একই কারণে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তারা হয়তো জিয়াউর রহমানের ক্ষেত্রে একই কাজ করবে। আমরা আরও দেখতে পাচ্ছি, বর্তমান রাষ্ট্র ব্যক্তিস্বাধীনতা নামক কুফর ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাকে সুরক্ষা দিচ্ছে, যার কারণে কপালে ‘টিপ’ পরাকে কটুক্তিকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, নরসিংদী ট্রেন স্টেশনে একটি তরুণীর অশ্লীল পোশাক পরার স্বাধীনতা রক্ষায় কটুক্তিকারী ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় নিয়ে এসেছে।

আমরা মুসলিমরা যখন প্রত্যক্ষ করি, দেশের বিভিন্ন স্থানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)সহ ইসলামের আক্বীদা ও হিজাবের মত বিভিন্ন ইসলামী হুকুমকে আক্রমন করা হয়, তখন বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ সরকার কোন পদক্ষেপ নেয় না, তখন আমাদের আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই। কারণ তারাই তথাকথিত মুক্তচিন্তার চর্চার নামে মুসলিমদের আক্বীদাকে আক্রমণের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তাই, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা কর্তৃক আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-কে অবমাননার বিষয়ে বর্তমান সরকার নীরব থেকেছে। তাই, আমাদের বুঝতে হবে যে, এই সরকার এবং তাদের সেক্যুলার ব্যবস্থা আমাদের মুসলিমদের জন্য নয়। আমাদের মহান বিশ্বাসগুলো ও জীবনব্যবস্থাকে কেবলমাত্র তখনই আমরা বাস্তবায়ন ও সুরক্ষা দিতে পারবো যখন আমাদের একটি রাষ্ট্র থাকবে। আর এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার নামই খিলাফত শাসনব্যবস্থা। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন “নিশ্চয়ই ইমাম (খলীফা) হচ্ছেন ঢালস্বরুপ যার পেছনে মুসলিমরা যুদ্ধ করে এবং নিজেদের আত্নরক্ষা করে”(মুসলিম)। তাই খিলাফত রাষ্ট্রের খলিফাগণ রাসুলের সম্মান রক্ষার জন্য সাহসী সব পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন, ১৮৯০ সালে ফ্রান্স সরকারের তত্ত্বাবধানে নবীকে ব্যঙ্গ করে নাটক মঞ্চায়ন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করার চেষ্টা করলে, খলিফা আবদুল হামিদ (২) ফ্রান্সের কুটনীতিককে ডেকে জিহাদে আকবরের হুমকি দিলে তারা নাটক মঞ্চায়ন পণ্ড করে দেয়। তাই আমাদেরকে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে হবে। যে খিলাফত রাষ্ট্র রাসুলের সম্মান, মুসলিমদের সম্মানের জন্য খিলাফতের শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে প্রেরণ করে তাদের স্পর্ধাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে ইসলামকে বিজয়ী করবেন, ইনশাআল্লাহ্‌।

-ইরফান আবিদ

 

 

 

“পাচার করা টাকা বৈধ করার ঘোষণা”

খবরঃ
দেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ বাজেটে বৈধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কর দিয়ে এসব অর্থ বৈধ হয়ে গেলে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যেকোন কর্তৃপক্ষ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি এই প্রস্তাব দিয়েছেন। (www.prothomalo.com/business/পাচার-করা-টাকা-বৈধ-করার-ঘোষণা)

 

মন্তব্যঃ
পুঁজিপতিরা কেন কর ফাঁকি দিত চায় কিংবা টাকা পাচার করে বিষয়টিকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা যায় ধরুন, কোন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কেউ যদি জিততে থাকা প্রতিযোগীকে বলে ‘হেরে যাও’, স্বাভাবিকভাবেই এটা সেই প্রতিযোগী মেনে নিতে পারবে না। পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রতিযোগিতায় পুঁজিপতিদের করের আওতায় আনাও অনেকটা সেরকমই ব্যাপার। পুঁজিবাদের জনক এডাম স্মিথের মতে সম্পদ কুক্ষিগত করাই সফলতা। সেখানে আয়করের নামে কুক্ষিগত করা সম্পদ থেকে একটা অংশ রাষ্ট্রকে দিয়ে দেয়া কখনোই পুঁজিবাদের একজন সত্যিকারের ধারক মেনে নিতে পারবে না। তারা মেনে নেয়ও না। আমেরিকার একটি অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম প্রোপাব্লিকা-এর তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক কোনপ্রকার আয়কর দেননি। একই কাজ করেছেন জেফ বিজোস ২০০৭ এবং ২০১১ সালে। অবশ্যই ইলন মাস্ক, জেফ বিজোসরা কর না দেয়ার এ কাজটা করেন ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদীব্যবস্থার আইন-কানুন মেনেই। যারা আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করেন না, তারা সরাসরি অর্থ সুইজারল্যান্ড, কানাডা অথবা করস্বর্গ পানামা, কেমেন আইল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ড- এসব দেশে পাচার করে দেন। বাংলাদেশের পুঁজিপতিরাও এর ব্যতিক্রম নন। শেয়ার বাজার, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদি থেকে লুটপাট করে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে দিচ্ছে দেশের বাইরে। তাই পুঁজিবাদের অনুসারী সরকারগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে হয়। তারা যেমন অর্থপাচার রোধ করতে পারে না, আবার সেই অর্থ ফিরিয়ে আনতে লুটতরাজকে বৈধতা দেয়ার বিভিন্ন পদ্ধতিও বের করতে হয়।অনেকের কাছেই রাষ্ট্রের পুঁজিপতিদের সুবিধা দেয়ার এই প্রয়াস এবং প্রক্রিয়াকে খুবই অনৈতিক ও অবৈধ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থায় এটাই স্বাভাবিক। প্রথমত, এডাম স্মিথের তত্ত্ব অনুযায়ী সম্পদের কুক্ষিগতকরণই মানুষের জীবনের সফলতা। দ্বিতীয়ত, ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থার আরেক প্রবক্তা নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির মতে, উদ্দেশ্য সাধনে অনৈতিক উপায়ও শ্রেয়। অর্থাৎ, দুই তত্ত্বের সংমিশ্রণে আমরা বলতেই পারি যে সফলতা অর্জনের জন্য সম্পদ কুক্ষিগতকরণের লক্ষ্যে চুরি-ডাকাতি-লুট হতেই পারে এবং এটা অন্যতম বৈধ উপায়। সেজন্যই ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী যেকোন মূল্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পুঁজিপতিদের সম্পদ বৃদ্ধিকরণের সহায়তায় নিয়োজিত।

একমাত্র খিলাফত শাসনব্যবস্থা পারে বৈধ-অবৈধ এর এই লুকোচুরি দূর করে ন্যায্যতা বাস্তবায়ন করতে। কারণ এই শাসনব্যবস্থায় আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টি অর্জনই সর্বোচ্চ সফলতা, সম্পদ কুক্ষিগতকরণ নয়। সম্পদ অর্জন মানুষের বেঁচে থাকার প্রবৃত্তি পূরণে সহায়তা করবে, কিন্তু এটি কখনোই জীবনের লক্ষ্য বা সফলতা হিসেবে বিবেচিত হবে না। রাষ্ট্রযন্ত্রও সেই ভিত্তিতেই কোন ধনীকে ব্যতিক্রমী উপায়ে আরো ধনী করার লক্ষ্যে নিয়োজিত থাকবে না। এবিষয়ে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা স্পষ্ট বলেন, “ধন-সম্পদ যেন শুধু তোমাদের ধনীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়” (সুরা আল হাশর, আয়াত-৭)।

-জীবন চৌধুরী

 

 

 

“ঢাকায় গণপরিবহনে ৬৩.৪ শতাংশ নারী হয়রানির শিকার”

খবরঃ
রাজধানীতে গণপরিবহনে গত ৬ মাসে ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। … (https://bangla.thedailystar.net//সংবাদ/বাংলাদেশ/ঢাকায়-গণপরিবহনে-৬৩৪-শতাংশ-নারী-হয়রানির-শিকার-355306)

মন্তব্যঃ
নারী হয়রানি বর্তমান সময়ের একটি অন্যতম আলোচিত সমস্যা। বাসস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে গণপরিবহনসহ কোন স্থানেই নারী আজ নিরাপাদ নয়। কিন্তু তথাকথিত নারীবাদিরা সমস্যার মূল কারণ হিসাবে সমাজের পুরুষতন্ত্রিক মানসিকতাকে দায়ী করার চেষ্টা করছে তা শুধু অসত্য নয় বরং বিভ্রান্তিমূলক। যদি তাই না হতো, তুলনামূলকভাবে কম পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে পরিচিত পশ্চিমা দেশগুলো নারী নির্যাতনের ঘটনা তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিক দেশগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য হারে কম সংগঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতি পাঁচজন নারীর একজনই জীবনে কোনো না কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হন (দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারি ২৪, ২০১৪ )। যুক্তরাজ্যে প্রতি দুইজনে একজন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার। অর্থাৎ শতকরা ৫০ শতাংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হন বলে বিবিসির এক জরিপে বলা হয়েছে। সুতরাং, নারী নির্যাতনের কারণ হিসাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে দায়ী করা সমস্যার মূল কারণকে লুকিয়ে রাখার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। সমাজে ব্যাপকভিত্তিক নারী হয়রানির ছড়িয়ে পরার মূল কারণ হচ্ছে পুঁজিবাদী সমাজের নারীর প্রতি বিদ্যমান ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও নারীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অনুপস্থিতি। পুঁজিবাদী সমাজ একদিকে, নারীর সৌন্দর্য্য ও রূপ-লাবণ্যকে ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত সুরসুরিমূলক বিজ্ঞাপন ও বিনোদন শিল্প গড়ে তুলেছে। অন্যদিকে, নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ, সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না। তাই গণপরিবহন থেকে শুরু করে কোন স্থানেই নারীরা আজ আর নিরাপদ নয়।

নারী হয়রানির প্রতিকারের জন্য সমাজে নারীদের প্রতি বিদ্যমান ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার পাশাপাশি নারীদের জন্য পৃথক পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চত কার জরুরী। নারীদেরকে শোভাবর্ধন কিংবা পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। যেকোন নারীর অভিভাবকত্বের জন্য সমাজকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং রাষ্ট্রের মাধ্যমে তা সমাজে নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জন্য সম্মানিত জায়গা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বক্ষেত্রে আলাদা সুরক্ষিত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি নারীর সম্মান রক্ষার বিষয়টি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা’র হুকুম অনুযায়ী যেকোন পুরুষের জন্য জীবন-মরণ ইস্যু হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। ইসলামী শাসন খিলাফতের স্বর্ণযুগে আব্বাসীয় খলিফা মু’তাসিম বিল্লাহ একজন নারী যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কারণে রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ঘোষণা করে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। আর আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে ইসলাম কোন নারীকে কখনোই তার মেধার চর্চা করে সমাজের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখা কিংবা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়াকে বাধা দেয় না, বরং উৎসাহিত করে। শুধুমাত্র তাদেরকে বর্তমান সমাজের মত তাদেরকে জীবিকা উপার্জনের কাজে বাধ্য করে না। ইসলামের স্বর্ণযুগে খিলাফতের সময় হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে শুরু করে মরক্কোর কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফাতিমা আল ফিরহিসহ অগণিত মুসলিম নারীগণ তৎকালীন সমাজে বিজ্ঞান, গণিত, চিকিৎসা, ফিকহ, স্থাপত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

-মো: জহিরুল ইসলাম