হে দেশবাসী! সতর্ক হোন যে, কাফির-সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র কিংবা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মত পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানের দেয়া ঋণ হচ্ছে নব্য-উপনিবেশবাদীদের হাতিয়ার এবং ধর্মনিরপেক্ষ-শাসকেরা এই অপরাধে তাদের সহযোগী
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
হে দেশবাসী! সতর্ক হোন যে, কাফির-সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র কিংবা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মত পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানের দেয়া ঋণ হচ্ছে নব্য-উপনিবেশবাদীদের হাতিয়ার এবং ধর্মনিরপেক্ষ-শাসকেরা এই অপরাধে তাদের সহযোগী
হাসিনা সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি এবং মেগা-প্রকল্পের নামে ব্যাপক লুটপাট দেশের অর্থনীতিকে ভয়ানক গতিতে দুর্বল করে দিয়েছে। তথাকথিত ‘উন্নয়ন’ ও পুঁজিবাদী সুদ-ভিত্তিক বৈদেশিক ঋণের (৪২.৮৬ বিলিয়ন ডলার) উপর নির্ভরশীল মেগা-প্রকল্পসমূহ দেশের মুদ্রার মান ও জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে, এবং এর বিপরীতে ক্ষমতাবান অভিজাত শ্রেণীর স্বার্থের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। গৃহীত ঋণের চেয়ে বহুগুণ বেশি অর্থ পরিশোধের পরও সুদ-ভিত্তিক এসকল বৈদেশিক ঋণ বাংলাদেশকে দশকের পর দশক ধরে ঋণের সাগরে নিমজ্জিত রাখবে। আর এই ঋণের বোঝা থেকে পরিত্রাণ পেতে হাসিনা সরকার আমাদেরকে এখন এমন এক দুষ্ট-চক্রে টেনে এনেছে যার ফলে পূর্বের ঋণের দায় মেটাতে আমাদেরকে ক্রমাগত আরও ঋণ নিতে হবে! মার্কিনপন্থী থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক এবং তথাকথিত সুশীল সমাজের সদস্যগণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের কারণে আসন্ন বৈদেশিক ঋণ সংকট মোকাবিলার অজুহাতে তহবিল ধার করে ‘ব্যালেন্স অফ পেমেন্টস’ ঘাটতির সমতাবিধান করার জন্য কুখ্যাত নব্য-উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আই.এম.এফ-এর সাথে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছে (“বাংলাদেশের জরুরী ভিত্তিতে আই.এম.এফ ঋণের প্রয়োজন: ড. দেবপ্রিয়”, দ্য বিজনেস পোস্ট, ২৩শে জুলাই, ২০২২), এবং সরকার ইতিমধ্যে আই.এম.এফ-এর কাছে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার “ঋণ সহায়তা” চেয়েছে।
বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় পালাক্রমে আসীন হওয়া প্রতিটি ধর্মনিরপেক্ষ দালাল সরকারের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে বিশ্বব্যাংক/আই.এম.এফ ইতিমধ্যেই আমাদের অর্থনীতির এবং বিশেষ করে আমাদের সমৃদ্ধ জ্বালানি খাতের অপরিমেয় ক্ষতি সাধন করেছে। বর্তমান ও পূর্ববর্তী কোন সরকারই জনগণের মৌলিক চাহিদাসমূহ সহজে পূরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানির সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনিয়োগ করেনি। বরং তারা জ্বালানি সম্পদকে আমদানি নির্ভর করে তুলেছে এবং পুঁজিপতি ক্ষুদ্র অভিজাত শ্রেণীর স্বার্থে আই.এম.এফ-এর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বেসরকারিকরণ করেছে, যা জ্বালানিকে ঘাটতি-প্রবণ ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল পণ্যে পরিণত করেছে। তাদের প্রেসক্রিপশনের মূল কথা হচ্ছে, ক্ষমতাবান ক্ষুদ্র অভিজাত শ্রেণীর সংকট মেটাতে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে যতটা সম্ভব অর্থ নিংড়ে বের করতে হবে। আই.এম.এফ কর্তৃক নির্দেশিত ব্যাপক বেসরকারীকরণ কর্মসূচি সরকারকে কেবল কর আরোপ ও বিদেশী ঋণের উপর নির্ভরশীল করে রেখেছে। আমাদের জ্বালানি খাত এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে, এবং ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট সংকটের ধাক্কা আমাদেরকেই বহন করতে হবে। কপট-বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে আমাদেরকে এখন বলা হচ্ছে যে, শ্রীলঙ্কার মতো সংকট এড়াতে আমাদের অবশ্যই আই.এম.এফ-এর কাছ থেকে ঋণ নিতে হবে; আমেরিকান নিউজ চ্যানেলগুলো ওয়াশিংটন-সমর্থিত আই.এম.এফ ঋণ নেয়ার জন্য শ্রীলঙ্কাকে একই যুক্তি প্রদান করেছে (“আই.এম.এফ-এর সহায়তা গ্রহণে শ্রীলঙ্কার অনীহা দেশটিকে অর্থনৈতিক অতল গহ্বরে ঠেলে দিয়েছে”, CNBC News, ১৮ই এপ্রিল, ২০২২)।
হে দেশবাসী, নব্য-উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে নেয়া কঠোর শর্তের এসব ঋণসমূহকে কেবলমাত্র অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা চরম ভুল, বরং এগুলোর মধ্যে মারাত্মক ভূ-রাজনৈতিক বিপদও বিদ্যমান। এই উপমহাদেশের জনগণকে তাদের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দেয়ার মতো চরম মূল্য প্রদান করতে হয়েছিল, কারণ তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করেছিল। সেই ব্রিটিশ কোম্পানি অনেক আগেই চলে গেছে, কিন্তু তারা মুজিব-জিয়া এবং হাসিনা-খালেদার মতো পশ্চিমা দালাল শাসকদের পালাক্রমে ক্ষমতায় বসিয়েছে, যারা নব্য-উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান – বিশ্বব্যাংক ও আই.এম.এফ-এর সাথে আঁতাত করে যাচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস এবং আমাদের দেশ ও জনগণকে পরাধীন করার হীন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে আই.এম.এফ কখনোই কোন ‘দরিদ্র’ বা ‘উন্নয়নশীল’ দেশকে সংকটের সময়ে তাদের অর্থনৈতিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেনি। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি ঔপনিবেশিক হাতিয়ার, যেটি বিশ্ব অর্থনীতিতে পশ্চিমা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহের আধিপত্য বজায় রাখতে এবং বিশেষত সম্পদশালী মুসলিম দেশসমূহের অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে ব্যবহৃত হয়, যাতে মুসলিমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে না পারে এবং পশ্চিমা আধিপত্যের সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হতে না পারে। তাই, আমরা কখনোই বিশ্বব্যাংক/আই.এম.এফ কর্তৃক বাংলাদেশের কোন সরকারকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে প্রচুর বিনিয়োগে বাধ্য করতে দেখিনি, যাতে আমরা জ্বালানি খাতে স্বনির্ভর হতে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতা অর্জন করতে পারি। অথচ তারা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই জ্বালানি খাতকে বেসরকারিকরণ ও আমদানি নির্ভরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে, যাতে ক্ষমতাবান দেশি-বিদেশি ক্ষুদ্র পুঁজিপতিশ্রেণী ও ঔপনিবেশিকদের দিকে অর্থের একমুখী প্রবাহ নিশ্চিত হয়। অধিকন্তু, তাদের ঋণের ক্ষতিকর শর্তসমূহ, যেমন: কঠোরতা ব্যবস্থা, সেবাসমূহের (ইউটিলিটি) উপর কর বৃদ্ধি, এবং জ্বালানি ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যে প্রদত্ত ভর্তুকি প্রত্যাহার, ইত্যাদি আমাদের অর্থনৈতিক দুর্দশা বৃদ্ধি করেছে এবং আমাদের প্রকৃত উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
হে মুসলিমগণ! শুধুমাত্র নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফত রাশিদাহ্’র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই কাফির-সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের দালাল শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সৃষ্ট আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা ও বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারে। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের একটি স্বাধীন ইসলামী অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী থাকবে যা আমাদেরকে প্রকৃত অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে। খিলাফত রাষ্ট্র বিশ্বব্যাংক, আই.এম.এফ এবং অন্যান্য কুফর প্রতিষ্ঠান ও তাদের নীতি ও কর্মসূচির সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করবে, কারণ এগুলো উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতি ডেকে আনে। সবধরনের সুদ (রিবা) হারাম করার সাথে সাথে খিলাফত তাদের সুদভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থার অবসান ঘটাবে। খিলাফত রাষ্ট্র সামরিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে ভারী শিল্প স্থাপনে এবং বড় মাপের উত্পাদন ও নির্মাণের মতো উত্পাদনশীল খাতসমূহে বিনিয়োগ শুরু করবে, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিপুল রাজস্ব নিশ্চিত করবে, ফলে যথাযথভাবে জনগণের বিষয়াদি দেখাশোনা করা সম্ভব হবে। এটি জাতীয় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান সংস্থা বাপেক্সকে একটি স্বনির্ভর সত্তায় পরিণত করার উদ্দেশ্যে দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করবে, যাতে আমরা এই অঞ্চলে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পথে জ্বালানি স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি। আমরা ইতিমধ্যেই পশ্চিমা-সমর্থিত ব্যর্থ ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থার বহু চিত্র প্রত্যক্ষ করেছি। খিলাফতে রাশিদাহ্’র নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের অধীনে ফিরে আসার মাধ্যমে এই পৃথিবীতে আমাদের ন্যায্য অধিকার সন্ধান করার এখনই আদর্শ সময়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
* وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الآخِرَةَ وَلاَ تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلاَ تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الأَرْضِ*
“আল্লাহ্ তোমাকে যা দান করেছেন তা দ্বারা পরকালের গৃহ অনুসন্ধান কর, এবং ইহকাল থেকে তোমার অংশ ভূলে যেয়ো না, এবং আল্লাহ্ যেভাবে তোমার প্রতি সদয় হয়েছেন তেমনিভাবে তুমি সদয় হও, এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না।
(সূরা আল-কাসাস: ৭৭)
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়