working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 60

 

 

Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৬০ তম সংখ্যা । ২৬ জুলাই, ২০২২

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

 

“নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় বিদেশি কূটনীতিকরা”
“সারা দেশে চলছে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং”
“রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামল”
“সামনের পাঁচ বছর গেম-চেঞ্জার”
“বাংলাদেশের সঙ্গে রুপিতেই বাণিজ্য করতে চায় ভারত”
“কোন এলাকায় কত সময় লোডশেডিং হবে, রুটিন করুন: প্রধানমন্ত্রী”

 

 

“নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় বিদেশি কূটনীতিকরা”

খবরঃ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা তৎপরতা শুরু করেছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। সরকারের মন্ত্রী, নির্বাচন কমিশনসহ (ইসি) রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ করছে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন মিশনের রাষ্ট্রদূতরা। তাদের আলোচনায় উঠে আসছে নির্বাচন প্রসঙ্গ। এদিকে বিদেশি কূটনীতিকদের নড়াচড়ায় বক্তব্য রাখছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও। দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ‘বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়া রাজনৈতিক দৈন্যতার বহিঃপ্রকাশ’ বলে তারা অভিযোগ করেছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে ‘কোনও ক্ষমতাধর দেশেরও কিছু করার নেই’ বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মন্তব্য করেছেন। (www.banglatribune.com/national/753440)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশের মত রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব বরণ করা দেশসমূহে পশ্চিমা দেশসমূহের কূটনৈতিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সেসকল দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে নাক গলিয়ে তাদের নিজ নিজ দেশসমূহের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে সুরক্ষিত করা। আর নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তে এদের গতিবিধি অধিকতর হারে বেড়ে যায়। তখন পছন্দের দালাল নিয়োগের মাধ্যমে নিজেদের ভু-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের মোক্ষম সময় উপস্থিত হয়। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও বাস্তবতা হচ্ছে এদেশের নির্বাচনে বিদেশী কুটনীতিকদের হস্তক্ষেপ নতুন কিছু নয়। পূর্বেও তা হয়েছে এখনও হচ্ছে। তাছাড়া শুধুমাত্র নির্বাচনকালীন সময়েই নয়, অন্যান্য সময়েও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ভারত ইত্যাদি দেশসমুহের কুটনীতিকদের দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে সরব উপস্থিতি ও মতামত প্রদানের মত ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজ করতেও দেখা যায়। যেমন, ২৫ জুলাই,  ২০২২ তারিখে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তর ও শাহমখদুম থানা কম্পাউন্ডে অবস্থিত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, সাইবার ক্রাইম ইউনিট, অপারেশন কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার ও সিআরটির কার্যক্রম পরিদর্শন করে। সেখানে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও শুভেচ্ছা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট অ্যান্টি টেররিজম অ্যাসিস্ট্যান্স (এটিএ), ইউএস অ্যাম্বাসি, ঢাকার তত্ত্বাবধানে রাজশাহী মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও আরএমপির সিআরটি সদস্যদের দক্ষ করতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। মূলত বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহ তাদের কূটনীতিকদের মাধ্যমে আমাদের দেশে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আর এমনটা কেনই বা হবে না? কারণ এসকল শাসকবৃন্দ ক্ষমতায় আরোহন করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। জনগণের উন্নয়ন ও সেবার দিকে তাদের দৃষ্টি সর্বদাই উদাসীনতার। বিদেশি প্রভুদের খুশি করে নিজেদের ক্ষমতার আসনকে টেকসই করার তীব্র প্রতিযোগিতায় নামে বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো। যেমন প্রায় ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার স্বাদ না পাওয়া বিএনপি বিদেশী কুটনীতিকদের কাছে ক্ষমতায় যাওয়ার ফর্মূলা বাতলানোর চেষ্টা করছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ বিএনপির এই প্রচেষ্টাকে রাজনৈতিক দৈন্যতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ঘোষণা করলেও তারাও কূটনৈতিক পাড়ায় দৌড়ঝাপের একই প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। যেমন, গত ১৫ এপ্রিল ২০২২ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটি বিদেশী কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করেছে যেখানে অংশগ্রহন করে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মান, ভারত, চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, মিশন প্রধানরা।

মূলত এসকল সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের লোলুপ দৃষ্টি থেকে এদেশকে বাচাতে হলে দরকার এমন শাসক যিনি এসকল সাম্রাজ্যবাদী দেশকে ঝেটিয়ে বিদায় করবেন। যে শাসকের থাকবে তাকওয়া, যার ফলে তিনি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লাকে ভয় করবেন এবং শাসনকার্যকে অর্থনৈতিক মুনাফা অর্জনের পথ হিসেবে না দেখে বরং তার উপর শারীয়াহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত ইবাদত হিসেবে দেখবেন। পক্ষান্তরে সাম্রাজ্যবাদীদের সকল প্রকার নিয়ন্ত্রণ থেকে দেশকে মুক্ত করবেন। আর এসব একমাত্র অর্জন সম্ভব একমাত্র খিলাফত ব্যবস্থার শাসনের অধীনে। কারণ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বলেন, “আর কিছুতেই আল্লাহ্‌ মু’মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বকে মেনে নিবেন না” (সুরা নিসা-১৪১)। উপরন্তু, খিলাফত রাষ্ট্রে কোন শত্রুরাষ্ট্রের এম্বাসী খুলতে দেয়া হবে না, কারণ তা করতে দিলে স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের এই অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে খিলাফত রাষ্ট্রের উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। উপরন্তু শত্রুরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদেরকে আতিথেয়তাতো দূরের কথা, সবসময় গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে।

মো. হাফিজুর রহমান

 

 

“সারা দেশে চলছে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং”

খবরঃ

বিদ্যুৎ–সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের ও রাত ৮টার পর সকল দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খরচ সাশ্রয়ের জন্য ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক–ই–এলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘খরচ কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডিজেলের বিদ্যুৎ উৎপাদন আপাতত স্থগিত করলাম, তাতে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। মনে রাখতে হবে, ডিজেলের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। বিশ্ব পরিস্থিতির উত্তরণ হলে আগের অবস্থানে ফিরে আসা হবে’। (www.prothomalo.com/bangladesh/33aqdu9alb)

মন্তব্যঃ

ডিজেলের দাম বৃদ্ধিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর কারণ হিসেবে বলা হলেও দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৭.৮২% ডিজেল চালিত (এনার্জিপিডিয়া, ২০১৭)। অর্থাৎ ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেও দেশে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি হওয়ার কথা নয়, কেননা সরকারী ভাষ্যমতে গ্যাস, কয়লা ও ফারনেস অয়েল দিয়ে চলা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। তাহলে কেন এই অজুহাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হল? এর কারণও হল দেশী-বিদেশী কিছু পুঁজিপতি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের নিরবচ্ছিন্ন মুনাফার ব্যবস্থা করা। ক্যাপাসিটি চার্জের নাম করে গত তিন বছরে জনগণের ৫৪ হাজার কোটি টাকা এসব পুঁজিপতিদের পকেটস্থ করেছে সরকার। এই ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে ২১,৩৯৬ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিপরীতে। ২০২৪ সালের মধ্যে জাতীয় ব্রিগেডে যুক্ত হবে ১৬,৮৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন আরো ৪৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আমাদের সময়, ২৩ জুলাই, ২০২০), যখন ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়ে বর্তমান অংকের প্রায় দ্বিগুন হবে। তাছাড়া সম্প্রতি ভারত থেকে ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হয়েছে সেখানে আগামী ২৫ বছরে ভারতের আদানি গ্রুপকে শুধুমাত্র ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে পরিশোধ করতে হবে এক লক্ষ কোটি টাকা! এটি এমন এক চুক্তি যার মাধ্যমে আদানি গ্রুপ সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে (মাত্র ৪ বছর ৬ মাস) তার বিনিয়োগের পুরো অর্থ তুলে নিতে পারবে এবং পরবর্তী ২০ বছর শুধু মুনাফা করবে (ডেইলি স্টার, ৮ জুন, ২০২২)। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধের দায়ভার হাসিনা সরকার ক্রমাগত বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে বা অন্যান্য খাতের ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়ে জনগণের ঘাড়ে সরাসরি চাপিয়ে দিচ্ছে কিংবা বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের গলায় চিরস্থায়ী গোলামীর শিকল পরিয়ে দিচ্ছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে কয়েকবার বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সরকার এখন আবারও দাম বাড়ানোর ফন্দি থেকেই লোডশেডিংয়ের খেলায় মেতেছে।

এই সরকার ক্রমাগত বলে আসছে দেশ বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, মুজিববর্ষের উপহার ‘শতভাগ বিদ্যুতায়ীত বাংলাদেশ’, আমাদের চাহিদা ১২-১৩ হাজার মেগাওয়াট কিন্তু উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আদৌ কি দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়ীত? বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর তথ্য মতে বর্তমানে বাংলাদেশে কৃষির সেচযন্ত্র বা পাম্প রয়েছে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩০টি। এর মধ্যে বিদ্যুৎ দিয়ে চলে মাত্র ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪০০টি (অগভীর নলকূপ ১ লাখ ৫০ হাজার ও গভীর নলকূপ ২৬ হাজার)। বাকি ১১ লাখ ৯২ হাজার ৬৩০টি চালিত হয় বিভিন্ন জ্বালানি তেল দিয়ে (অগভীর নলকূপ ১০ লাখ ৭০ হাজার ও গভীর নলকূপ ১২ হাজার) (যায়যায়দিন, ০৭ নভেম্বর, ২০২১)। অর্থাৎ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে মাত্র ১৩.৫% সেচযন্ত্র। শুধু সেচের জন্য ২০২১ সালে বিদ্যুৎ লেগেছে ২ হাজার ৩১৫ মেগাওয়াট (সমকাল, ৩১ জানুয়ারি ২০২২) । ১৩.৫% সেচযন্ত্রের জন্য যদি বিদ্যুৎ-এর চাহিদা হয় ২ হাজার ৩১৫ মেগাওয়াট হয় তাহলে শুধুমাত্র দেশের কৃষিকাজের সেচের জন্যই বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার মেগাওয়াট! কিন্তু ৮৬.৫% সেচযন্ত্র বিদ্যুতের লাইনই পায়নি।

এবার আসা যাক শিল্প কারখানায়। গ্যাস এবং বিদ্যুতের অভাবে দেশীয় শিল্প কারখানাগুলো ধুঁকছে। শিল্প মালিকরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হবার পাশাপাশি কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারখানায় নেই গ্যাসের চাপ, বিদ্যুৎ যাচ্ছে ১০-১২ বার (ইত্তেফাক, ৭ এপ্রিল ২০২২)। লো-ভোল্টেজে কল কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত, লোকসানে ব্যবসায়ীরা (বাংলা ট্রিবিউন, ২৩ আগস্ট ২০১৮)। লো-ভোল্টেজের কারণে উত্তরাঞ্চলে কল-কারখানায় উৎপাদন বন্ধ (বাংলানিউজ২৪.কম, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮)। বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ দিতে না পারায় দেশের শিল্প কারখানাগুলোর মালিকরা কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে (ক্যাপটিভ পাওয়ার), যদিও গ্রিড বিদ্যুতের চেয়ে ক্যাপটিভ বিদ্যুতের খরচ বেশি (সমকাল, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০)। এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম বলেন, ‘এখনও মানসম্মত বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। চাইলেই গ্রিডের বিদ্যুতের ওপর পুরো নির্ভর করা সম্ভব নয়’। একজন টেক্সটাইল কারখানার মালিক জানিয়েছেন, ক্যাপটিভ প্লান্ট চালাতে তেল খরচসহ বছরে তার বাড়তি ১০ কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু উৎপাদন যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য এই অতিরিক্ত খরচ মেনে নিতে হচ্ছে (সমকাল, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০)। অর্থাৎ দেশের শিল্পখাতে বিদ্যুতের অবস্থা আরো ভয়াবহ। মূল কথা হল, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, মোট চাহিদা ও উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে সরকার যে পরিসংখ্যান দেয় তা বাগাড়ম্বর ছাড়া কিছুই নয়। সরকার জনগণের সাথে মিথ্যাচার করে প্রকৃত সত্য গোপন করেছে। রাজধানী ঢাকা ও প্রধান-প্রধান শহরগুলো বাদ দিয়ে সারাদেশে সবসময়েই লোডশেডিং একটি অতি সাধারণ ঘটনা।

ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণকারী বর্তমান এই শাসনব্যবস্থার নিষ্পেশনের বিপরীতে ইসলামী শাসনব্যবস্থা খিলাফতের মধ্যে বিদ্যুৎ নিয়ে ব্যবসা করার কোন সুযোগ নেই। বিদ্যুৎ একটি গণমালিকানাধীন সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত যা কোন অবস্থায়ই ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়া হবে না। প্রথমত: বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তেল, গ্যাস, কয়লা, বাতাস, পানি, ইউরেনিয়াম প্রভৃতি গণমালিকানাধীন জ্বালানি/শক্তি সম্পদ ব্যবহার করে; দ্বিতীয়ত: বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয় গণমালিকাধীন রাস্তা বা ভূমির উপর দিয়ে স্থায়ী অবকাঠামো বা সঞ্চালন লাইন নির্মাণের মধ্য দিয়ে এবং তৃতীয়তঃ বিদ্যুৎ একটি নিত্য ব্যবহার্য ইউটিলিটি যা ছাড়া জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পরে। খিলাফত ব্যবস্থায় এই খাতের সাথে জড়িত সকল উপাদানকে দেশী ও আন্তর্জাতিক পুঁজিপতিগোষ্ঠীর প্রভাব ও হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত করে রাষ্ট্রের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে। আবু দাউদে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “মুসলিমগণ তিনটি বিষয়ে পরস্পরের সহযোগী: আগুন, পানি ও সবুজ চারণভূমি।” ইবনে আব্বাস থেকে আনাস আরও যোগ করেন যে, “এর মুল্য নির্ধারণ করা হারাম।”

রিসাত আহমেদ

 

 

 

 

“রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামল”

খবরঃ

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। প্রায় দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ নেমে এলো ৩৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশ গত সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সঙ্গে ১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমদানি পেমেন্ট নিষ্পত্তি করেছে। আমদানির অর্থ পরিশোধের অনুমোদন দেওয়ার পর রিজার্ভ কমে গেছে। রিজার্ভ এভাবে কমতে শুরু করার কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, রপ্তানি আয় বাড়লেও অস্বাভাবিকভাবে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। একইসঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে প্রবাসী আয়ও (রেমিটেন্স) কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাসের মধ্যে আমদানি ব্যয় ৩৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। সেই তুলনায় রপ্তানি আয় ৩৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। (https://www.jugantor.com/economics/bank/571823/)

মন্তব্যঃ

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমা বা বাড়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে আমাদের দেশ কেন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখবে যার মূল্যমান সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর উপর নির্ভরশীল? যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৩৪ সালে ডলারের বিপরীতে স্বর্ণমানকে রহিত করলে পরবর্তী ৬৭ বছরে মুদ্রার মান কমেছে ৬২৫%; অথচ, ১৯৩৪ সালের আগের ৬৭ বছরে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে মাত্র ১০% (www.khilafah.com)। ১৯৪৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের ব্রেটন উডস শহরে একটি সম্মেলনে আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রাসমূহকে সোনা অথবা মার্কিন ডলারের সাথে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু ১৯৭১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন মার্কিন ডলার থেকে সোনায় সম্পদ রূপান্তরের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। ফলশ্রুতিতে, স্বর্ণভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং কোন রিজার্ভ ছাড়াই মুদ্রা ছাপানোর একচ্ছত্র ক্ষমতার ফলে বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সাম্রাজ্যবাদী এই রাষ্ট্রটি তার নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রয়োজনের যোগান দিতে বাজারে অতিরিক্ত ডলার সরবরাহের ফলে মুদ্রার মান কমছে এবং দ্রব্যপণ্য ও জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে যার খেসারত বিশ্বের জনগণকেই দিতে হচ্ছে।

ধর্মনিরপেক্ষ অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদরা এতটুকু বুঝতে অক্ষম যে, প্রবাসি আয় কিংবা রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে তথাকথিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেলেও আমেরিকা অব্যহতভাবে ডলার ছাপানোর ফলে এই রিজার্ভের মান ক্রমাগত কমছে। সর্বশেষ ১৩ জুলাই, ২০২২ পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে এখন প্রতি ডলারের দাম ৯৩.৯৫ টাকা হয়েছে (যুগান্তর, ১৩ জুলাই, ২০২২)। অধিকন্তু, অতিরিক্ত ডলার ছাপিয়ে তা ঋণ আকারে চটকদার মোড়কে অমানবিক শর্তে আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে, আর বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী তাদের মসনদ রক্ষার্থে আমাদেরকে আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একের পর এক ঋণের ফাঁদে ফেলছে। নতুন করে ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব নিয়ে আইএমএফের প্রতিনিধি দল এসেছে বাংলাদেশে (ডেইলি স্টার, ১৩ জুলাই, ২০২২)। আইএমএফের ঋণের শর্তগুলো সরকার প্রকাশ না করলেও এটা সর্বজনবিদিত যে, দেশের শিল্পব্যবস্থাকে ধ্বংস করে অনুৎপাদনশীল মেগাপ্রকল্প গ্রহণে বাধ্য করাই সাম্রাজ্যবাদী এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম মূলনীতি। ফলশ্রুতিতে, একদিকে কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে জনগণের ঘাড়ে ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে। সূত্র মতে, দেশে এখন মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৯৫ হাজার ৬শ টাকা (যুগান্তর, ১১ জুন, ২০২২)। তাছাড়া, দেশের উৎপাদনখাতগুলো বন্ধ থাকায় বাংলাদেশ বর্তমানে আমদানিনির্ভর দেশে পরিণত হয়েছে। বিদেশ থেকে চড়া দামে জ্বালানী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যপণ্য আমদানি করায় মুদ্রাস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছে। একদিকে জনগণের আয় বাড়ছে না, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি জনগণকে চরম দারিদ্র্যতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ সমস্যার মূল বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যা সাম্রাজ্যবাদীদের মুদ্রানীতি ও সুদভিত্তিক ঋণনীতির মাধ্যমে দেশকে অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বের ধারপ্রান্তে দাড় করিয়েছে।

ইসলাম সাম্রাজ্যবাদীদের ডলারভিত্তিক মুদ্রানীতি ও ঋণনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “…আল্লাহ্‌ যা অবতীর্ণ করেছে তা দিয়ে তুমি তাদের শাসন করো, তোমার কাছে যে সত্য এসেছে তা বাদ দিয়ে তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করো না….” (সূরা মায়িদাঃ ৪৮)। ইসলামের অর্থনীতি ব্যাপক উৎপাদন ও সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের কর্মসংস্থান ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে দায়িত্বশীল; রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই প্রত্যেক আদম সন্তানের থাকার জন্য একটি ঘর, পরিধানের জন্য এক টুকরো কাপড়, খাওয়ার জন্য এক টুকরো রুটি, এর চেয়ে বেশি জরুরী আর কিছুই থাকতে পারে না” (সুনানে আত তিরমিযিঃ ২৩৪১)। তাই, খিলাফত রাষ্ট্রের স্বনির্ভর কৃষিনীতি, শিল্প ও জ্বালানী নীতি ব্যাপকভিত্তিক উৎপাদন নিশ্চিত করবে যা রাষ্ট্রকে আমদানীমুখী থেকে বের করে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও রপ্তানিমুখী রাষ্ট্রে পরিণত করবে। খিলাফত রাষ্ট্রের মুদ্রানীতি স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক যা সকল পরিস্থিতিতে মুদ্রার মানকে স্থিতিশীল রাখে, যেমন, স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থায় ১৮৮০-১৯১৩ এর মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ছিলো ০.৯%। খিলাফত রাষ্ট্রের স্থিতিশীল মুদ্রাব্যবস্থায় ব্যাপক উৎপাদনের ফলে মুদ্রার মান ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতা উভয় বৃদ্ধি পাবে। খিলাফত রাষ্ট্রের স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থার ফলে মুসলিম দেশসমূহের মুদ্রাব্যবস্থা মার্কিন ডলারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে। খিলাফতের মুদ্রাব্যবস্থা রাষ্ট্রকে শুধু অভ্যন্তরীণভাবে শক্তিশালীই করবে না, বরং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ও রাজনীতিতে আমেরিকাসহ অন্যান্য পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর আধিপত্য খর্ব করে খিলাফতের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে।

আবি আব্দুল্লাহ

 

 

 

“সামনের পাঁচ বছর গেম-চেঞ্জার”

খবরঃ

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার বিবেচনায়, আগামী সাত বছরে বাংলাদেশের রফতানি ১০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে।’ তিনি বলেন, কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সুযোগও তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের সুযোগ অনেক বেশি। প্রচুর বিদেশি কোম্পানি বিকল্প উৎস খুঁজছে। বিকল্প উৎসের মধ্যে ভারত বেশি সুযোগ পাবে, এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, …‘শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশও ব্যবসার একটি ভাগ পাবে। আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশের জন্য সত্যিকার গেম-চেঞ্জার হবে।’..প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর তা আকৃষ্ট করাই বড় চ্যালেঞ্জ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এক্ষেত্রে তিনটি বিষয় জরুরি। প্রথমত, জমির ব্যবস্থা করা। সেটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে হতে পারে। অথবা অন্য জায়গায় হতে পারে। দ্বিতীয়ত, গ্যাস ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা এবং তৃতীয়ত, মুনাফার অর্থ স্বল্প সময়ে ফেরত নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা।’ (www.banglatribune.com/national/753728/সামনের-পাঁচ-বছর-গেম-চেঞ্জার’)

মন্তব্যঃ

পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক মডেল ব্যবহার করে বিশ্বের অনেক দেশ এখন দেউলিয়ার পথে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সঙ্কটে পড়ে জনগণ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে, অথচ বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী এখনও আমাদেরকে খোকা ভুলানো, ঘুম পারানি গান শোনাচ্ছে। অসহনীয় মুদ্রাস্ফীতিতে জনগণের নাভিশ্বাস অবস্থা আর তারা বলছেন বিদেশি বিনিয়োগ এসে আমাদের গেম-চেঞ্জ করে দিবে, আমাদেরকে স্বপ্নের উন্নত দেশ বানিয়ে দিবে! বিদেশি বিনিয়োগতো এযাবৎকালে অনেক এসেছে, জিডিপি আর মাথাপিছু আয় অনেক বেড়েছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের গেম কিন্তু চেঞ্জ হয়নি। কিছু পুঁজিপতি আর শাসকগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তন হলেও সাধারণ মানুষ মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে আজও হিমশিম খাচ্ছে। বরং অপরিকল্পিত ও দুর্নীতিগ্রস্থ বিদেশি বিনিয়োগের ফাঁদে পড়ে আগামী দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও সঙ্কটের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন (“অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য”, যুগান্তর, ২১ জুলাই ২০২২)।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টকে তৃতীয় বিশ্বের অর্থনৈতিক সমস্যার একটি সমাধান হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু মূলত এর মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ও তাদের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর সস্তা শ্রম, জ্বালানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে, তাদের বাজারকে দখল করে অস্বাভাবিক মুনাফা লুট করে নিয়ে যায় তাদের দেশে। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এই প্রলোভন দেখিয়ে তারা আসে এবং দেশীয় উদ্যোক্তাদের চেয়ে সবদিক থেকে অতিমাত্রায় সুবিধা ভোগ করে। ফলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। দিনশেষে সাম্রাজ্যবাদীরা আমাদের ভূমি, সম্পদ ও বাজার তাদের দখলে নেয় ফলে তাদের উপর আমাদের নির্ভরতা আরও বৃদ্ধি পায়। এটাই নব্য উপনিবেশবাদের থিওরি। আসলে এভাবে কখনোই আত্মমর্যাদাশীল, স্বনির্ভর, উন্নত রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব না। যেহেতু সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের অলস পুঁজিকে কাজে লাগাতে চায় তাই তারা অর্থনৈতিকভাবে unexplored রাষ্ট্রগুলোকে বেছে নেয় যাতে তারা সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করতে পারে। এসব বিনিয়োগ আমাদের দেশে আসাতে সরকারের যেমন কোন কৃতিত্ব নেই তেমনি খুশি হবার কিছু নেই, বরং পশ্চিমা ও সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল হিসেবে পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ব হল এসব বিনিয়োগের ব্যবস্থা ও পরিবেশ নিশ্চিত করা। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে সে আলোকেই দেখতে হবে। তারা কখনো গেম চেঞ্জের প্রলোভন দেখিয়ে আবার কখনো অর্থনৈতিক সঙ্কটের ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে এসব বিদেশি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক ঋণের ফাঁদে ফেলে।

যতক্ষণ আমরা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে থাকবো, সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ও তাদের আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের অর্থনীতিকে পরিচালনা করবো আমাদের গেম চেঞ্জ হবে না। কারণ এটা তাদের গেম, তাদের রুলস-রেগুলেশন মেনে তাদেরকে টপকানো সম্ভব না। তারা সুযোগ নিতে আসে, সুযোগ করে দিতে নয়। অবিলম্বে শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করে খিলাফত রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামের ন্যায়ভিত্তিক অর্থনীতি প্রবর্তন করতে হবে, তাহলেই তা হবে সত্যিকার অর্থে গেম চেঞ্জার। ইনশাআল্লাহ্‌ সেটা অতি আসন্ন।

আবু যায়িদ

 

 

 

“বাংলাদেশের সঙ্গে রুপিতেই বাণিজ্য করতে চায় ভারত”

খবরঃ

বাংলাদেশের সঙ্গে পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে ভারতীয় মুদ্রা রুপিতে যাতে লেনদেন করা যায়, সেজন্য সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। ভারতে আমদানি বা ভারত থেকে রফতানির ক্ষেত্রে এ দেশের ব্যবসায়ীরা যাতে রুপিতেই পেমেন্ট করতে পারেন বা নিতে পারেন, তার জন্য যাবতীয় আইনি বাধাও দূর করে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। যদিও এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য হলো, রাশিয়া, ইরানের মতো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলোর সঙ্গে ডলারকে এড়িয়ে রুপিতে বাণিজ্য করা—একই পদক্ষেপ কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।…  (www.banglatribune.com/national/753213/বাংলাদেশের-সঙ্গে-রুপিতেই-বাণিজ্য-করতে-চায়-ভারত)

মন্তব্যঃ

ডলার এবং বর্তমান পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার সুযোগে রাশিয়া, চীন, ভারতের মত দেশগুলো একটি বিকল্প উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। অথচ এই দেশগুলোর কোনটিরই প্রয়োজনীয় শক্তি, স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। এরা নিজেরাই আমেরিকা ও তার মুদ্রার উপর নির্ভরশীল এবং নব্য-উপনিবেশবাদী বিশ্ব ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনগত বৈধতা দেয়। ফলে এদের এই প্রচেষ্টাগুলো একদিকে অপর্যাপ্ত এবং অন্যদিকে দুর্বলদের আরও দুর্বল করার নতুন প্রতারণামূলক উদ্যোগ। ভারত বাংলাদেশের মত তার আশপাশের কিছুদেশের জনবিচ্ছিন্ন শাসকদের দুর্বলতার সুযোগে ডলারের মতই আরেক কাগুজে মুদ্রা রুপি যেটি নিজেই অনেক দুর্বল তাকে শক্তিশালী করার রাস্তা খুঁজছে।

দুর্বল রাষ্ট্র ভারত নিজ দেশের মার্কিন ডলারের রিজার্ভ ধরে রাখতে তার চেয়ে দুর্বল কিছু দেশকে টার্গেট করে নিজের মুদ্রা রুপির চাহিদা বাড়ানোর এই উদ্যোগ কেন নিল তা বুঝতে একটু পিছনে ফিরে তাকাতে হবে। ১৯৪৭ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রেটন উড এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডলারের বিপরীতে ১০০% স্বর্ণ পরিশোধের অঙ্গীকার করে এবং ডলার আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে আইএমএফ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সিংহভাগ শেয়ার যুক্তরাষ্ট্রের (২৭.২%)। কিন্তু ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই এগ্রিমেন্ট থেকে সরে আসে এবং ইচ্ছামত ডলার ছাপানোর ক্ষমতা হাতে রাখে। এর ফলে বিশ্ব মুদ্রাবাজার এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত ডলার ছাপিয়ে লেনদেনের ভারসাম্য তার অনুকূলে আসে, যার ফলে ডলার রিজার্ভের অবমূল্যায়ন ঘটে। তাছাড়া, কোভিড পরবর্তী সময়সহ বিভিন্ন সময়ে আমেরিকা অতিরিক্ত ডলার ছাপানোর কারণে যে মুদ্রাস্ফীতি হয় তার দায়ভার আমাদের দেশের মত বিভিন্ন দেশের উপর পতিত হচ্ছে এবং দেশের সম্পদ দিন দিন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। আমাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। তাছাড়া, ডলারের চাহিদা ধরে রাখতে আমেরিকা বিভিন্ন সময় যুদ্ধ বাধাচ্ছে। আমেরিকা শুধুমাত্র অস্ত্র, প্রযুক্তি ইত্যাদি রফতানি করে ডলার এর দাম ধরে রাখে তা নয়, তেল, গ্যাস, খাদ্যশস্য ইত্যাদি অতিপ্রয়োজনীয় নিত্যপন্যের দাম বাড়িয়েও সে ডলারের দাম ধরে রাখতে মরিয়া। উদ্ভুত বাস্তবতায় বিশ্ব একটি বিকল্প বিশ্বাসযোগ্য ও স্থিতিশীল বিশ্বব্যস্থাপনা খুঁজছে। একটি সত্য ন্যায় শক্তিশালী ও স্থিতিশীল মুদ্রার প্রয়োজনীয়তাও দেশগুলো অনুধাবন করছে।

আমাদের উচিত অন্ধকার হতে গহিন অন্ধকারে দিকে না গিয়ে আলোর দিকে এগিয়ে আসা, এবং এই ধর্মনিরপেক্ষ উপনিবেশবাদী বিশ্বব্যবস্থাকে পরিত্যাগ করে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। কারণ একমাত্র খিলাফতই পারে ইসলামের ভিত্তিতে ন্যায়ভিত্তিক একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে, যা হবে শক্তিশালী, বিশ্বাসযোগ্য ও স্থিতিশীল। খিলাফত রাষ্ট্রের মূদ্রা হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক। এর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হবে হয় ‘পণ্যের বিনিময়ে পণ্য’, না হয় ‘পণ্যের বিনিময়ে সত্যিকারের সম্পদ যেমন খিলাফত সরকারের ‘স্বর্ণ-রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রার’ মাধ্যমে যা সহজে বিনিময়যোগ্য ও স্থিতিশীল। খিলাফত ফিয়াট মুদ্রা ডলারকেই শুধু প্রত্যাখ্যান করবে তা নয়, UN, WB, WTO, IMF সহ ইত্যাদি উপনিবেশবাদী সংস্থাগুলোকেও পরিত্যাগ করবে। খিলাফত নিজেকে একটি স্বনির্ভর শক্তিশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। এই শক্তিকে ব্যবহার করে নব্য-উপনিবেশের ফাঁদ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে মুক্ত করবে। খিলাফতের বিশ্বব্যবস্থায় অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য রিজার্ভ মুদ্রার নামে সম্পদগুলোকে জমিয়ে রাখতে হবে না। দেশগুলো নির্বিঘ্নে তার সম্পদ ব্যবহার করে তার জনগণের প্রয়োজন পুরণ করতে পারবে। অর্থাৎ খিলাফত শুধু তার নাগরিকদের জন্য রহমত হিসেবে আসবে তা নয় এর বিশ্বব্যবস্থা সারাবিশ্বের মানুষকে জুলুম থেকে মুক্ত করবে।

মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 

 

 

 

“কোন এলাকায় কত সময় লোডশেডিং হবে, রুটিন করুন: প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ

এখন থেকে কোন এলাকায় কত সময় লোডশেডিং দেওয়া হবে, তার একটি রুটিন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লোডশেডিংয়ের বিষয়ে সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু এখন আমাদের লোডশেডিং দিতে হবে। বিদ্যুতের উৎপাদন সীমিত করতে হবে। কারণ, বিদ্যুতের ভর্তুকির পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী তেল, এলএনজি, ডিজেলসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। রাশিয়ার ওপর আমেরিকা ও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। বিষয়টি উপলব্ধি করে দেশবাসী সরকারকে সহায়তা করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। (www.prothomalo.com/bangladesh/কোন-এলাকায়-কত-সময়-লোডশেডিং-হবে-রুটিন-করুন-প্রধানমন্ত্রী)

মন্তব্যঃ

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা যেখানে ২৫,৫৬৬ মেগাওয়াট সেখানে সরকার চাহিদার মাত্র ১৪,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়ে জনগণকে এখন লোডশেডিং মেনে নিতে নির্দেশ দিচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতির কারণ হিসেবে সরকারপন্থী রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানীর দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করছে। অথচ, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসেই সরকার মডেল পিএসসি-২০০৮ এর আওতায় কনোকোফিলিপস এর হাতে সাগরের দুটি গ্যাস ব্লক এবং মডেল পিএসসি-২০১২ অনুযায়ী, ভারতের ওয়েল অ্যান্ড ন্যাচরাল গ্যাস কর্পোরেশন-বিদেশ (ওএনজিসি) এবং অয়েল ইন্ডিয়ার কাছে অগভীর সমুদ্রের দু’টি ব্লক তুলে দেয়। সংশোধিত মডেল পিএসসি ২০১২ অনুসারে প্রতিবছর মোট উৎপাদিত গ্যাসের সর্বোচ্চ ৭০% কস্ট রিকভারি হিসেবে বিদেশী কোম্পানি পাবে যা এর আগের পিএসসিগুলোতে ছিল ৫৫% । বাকি ৩০% নির্দিষ্ট চুক্তি অনুসারে লাভের গ্যাস হিসেবে পেট্রোবাংলা ও বিদেশী কোম্পানিগুলো ভাগাভাগি করে নিবে। বাস্তবে, বিদেশী কোম্পানিগুলো নানানভাবে বাড়তি খরচ দেখিয়ে কস্ট রিকভারি পর্যায়কে দীর্ঘায়িত করে, ফলে হয় আদৌ প্রফিট পর্যায়ে পৌছানো যায় না বা পৌছালেও ততদিনে সিংহভাগ গ্যাস উত্তোলন শেষ হয়ে যায়। ফলে, বাংলাদেশের ভাগে কার্যত মোট উত্তোলিত গ্যাসের ২০-৩০ শতাংশের বেশী গ্যাস জুটে না। নিজেদের গ্যাসক্ষেত্রগুলো এভাবে বিদেশী কোম্পানীগুলোর হাতে তুলে দিয়ে গ্যাস সঙ্কট দেখানো মানে হচ্ছে নিজের পুকুর দান করে অন্যের পুকুর থেকে পানি নেয়ার চেষ্টা। তাছাড়া, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে পুরোপুরি সক্ষমতা অর্জন করলেও সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি পেট্রোবাংলা এবং এর অধীনস্ত কোম্পানিগুলোকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না। এর অর্থ হচ্ছে, বর্তমানে জ্বালানীর যে সঙ্কট দেখানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ কৃত্রিম এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যেহেতু ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী ও সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থে জনগণকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তাই শাসকগোষ্ঠী দেশে বিদ্যুতের এই অপার সম্ভাবনা ও সক্ষমতাকে কাজে না লাগিয়ে আমদানির পথে হেটেছে, যার পরিণতি হচ্ছে নতুন করে বিদ্যুতের এই সঙ্কট সৃষ্টি। তাছাড়া, এই ব্যবস্থা যেহেতু জনগণের দায়িত্ব নেয় না, তাই শাসকগোষ্ঠী চলমান লোডশেডিংকে মেনে নিতে বৈশ্বিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহের লোডশেডিংকে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করছে!

ইসলামের দায়িত্বশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা খিলাফত বিদ্যুতের মত গুরুত্বপূর্ণ গণমালিকানাধীন খাতের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও তদারকি নিশ্চিত করবে। ইসলামে বিদ্যুৎ এবং এটি উৎপাদনের উপকরণসমূহ যেমন; তেল, গ্যাস, কয়লা, পানি ইত্যাদি ব্যক্তি ও বিদেশী মালিকানায় ছেড়ে দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেছেন, “আদম সন্তান তিনটি বিষয়ে সমান অংশীদারঃ আগুন, পানি ও চারণভূমি” (বুখারী)। তাই খিলাফত রাষ্ট্র আমাদের জ্বালানী খাতের উপর সকল ধরণের ব্যক্তি ও বিদেশী মালিকানা বাতিল করবে; রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎখাতের উপর ব্যক্তিমালিকানা বাতিল করে এই খাতকে জনগণের হয়ে রাষ্ট্র সরাসরি তত্ত্বাবধান করবে, যাতে সকল নাগরিক এটি হতে পরিপূর্ণ সুবিধা পায়। তাছাড়া, খিলাফত রাষ্ট্র জনগণের বিষয়াদি দেখাশোনার ব্যাপারে দায়িত্বশীল। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই ইমাম বা খলিফা হচ্ছে অভিভাবক, তিনি জনগণের তত্ত্বাবধানের ব্যাপারে দায়িত্বশীল” (বুখারী/মুসলিম)। তাই খলিফা বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী শাসকদের মত উম্মাহ্‌’র কোন সঙ্কট তথাকথিত উন্নত রাষ্ট্রেও হচ্ছে বা চলছে বলে উম্মাহ্‌’কে তা মেনে নিতে প্রতারণামূলক নির্দেশ দিবে না। খলিফা জনগণের চাহিদা মেটাতে অনবায়নযোগ্য জ্বালানীর পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানী যেমন; বায়োগ্যাস, সৌরবিদ্যুত, হাইড্রোইলেক্টিসিটি, বায়ু বিদ্যুৎ ইত্যাদির উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবে। তাই আমাদেরকে প্রতারণামূলক ও শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মূলোৎপাটন করে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী হওয়া উচিৎ।

জীবন চৌধুরী