working to establish khilafah

সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট মানবজাতির জন্য অনুপযুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ এই শাসন ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বৈপরীত্যের আরও একটি উদাহরণ মাত্র

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট মানবজাতির জন্য অনুপযুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ এই শাসন ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বৈপরীত্যের আরও একটি উদাহরণ মাত্র

 

হাসিনা সরকার গত বুধবার সংসদে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট (CSA) বিল পাস করেছে। নতুন বোতলে পুরানো মদের মতোই নতুন এই আইন দ্বারা কুখ্যাত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে পুলিশকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার ও তল্লাশির ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। পূর্বের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (DSA)-এর ৪৩ নম্বর ধারাকে নতুন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট (CSA)-এর ৪২ নম্বর ধারার অধীনে অক্ষত রাখা হয়েছে। তাছাড়া সরকার বলেছে, DSA-এর অধীনে দায়ের করা মামলাগুলো চলমান থাকবে, এবং DSA প্রতিস্থাপিত হওয়া সত্ত্বেও এই আইনে কারাবন্দী ব্যক্তিরা শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক অধিকার কর্মীগণ মতামত দিয়েছেন যে, CSA জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার প্রবণতাকে রোধ করবে না।

হে দেশবাসী, এটা আশ্চর্যজনক বিষয় নয় যে, ধর্মনিরপেক্ষ হাসিনা সরকার সেসব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে দমন করতে থাকবে যারা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও অসন্তোষ উত্থাপনের দুঃসাহস দেখাবে। কারণ এটাই মানবসৃষ্ট ধর্মনিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থায় শাসকদের চরিত্র, যা কেবল তাদের এবং একটি নির্দিষ্ট শক্তিশালী গোষ্ঠীর স্বার্থ নিশ্চিত করে। কিন্তু, যে বিষয়টি বেশী আশ্চর্যের সেটি হচ্ছে দেশের সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীদের একগুঁয়েমি এবং সুস্পষ্ট কপটতা, যারা স্বীকার করে না যে তাদের দাবিকৃত ধর্মনিরপেক্ষ উদারতাবাদ জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার মহৌষধ নয়। তবুও তারা উদারনৈতিক মূল্যবোধসমূহের জন্য কান্নাকাটি করে, অথচ তাদের ধর্মনিরপেক্ষ উদার আদর্শ সমগ্র বিশ্বজুড়ে অত্যাচারী শাসক জন্ম দেয়ার প্রক্রিয়াকে বন্ধ করতে সক্ষম হয়নি। অতএব, যে মানবসৃষ্ট ব্যবস্থা অত্যাচারী শাসকদের জন্ম দেয় তা কিভাবে মানবজাতির মুক্তি ও সমস্যার সমাধান হতে পারে!

বাস্তবতা হচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষ উদারপন্থী ধারণাসমূহ অন্তর্নিহিতভাবে ত্রুটিযুক্ত, কারণ এগুলো সীমিত ও পক্ষপাতদুষ্ট মানবচিন্তার সাথে যুক্ত। উদারবাদী এই ব্যবস্থা কর্তৃক ষোষিত ‘স্বাধীনতা’ ও ‘মানবাধিকারের’ তথাকথিত ধারণাসমূহ স্রষ্টা প্রদত্ত বিধানের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়নি; বরং এগুলো সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ বিবর্জিত গ্রীক চিন্তা ‘যুক্তি এবং কারণ’-এর উপর প্রতিষ্ঠিত, যেখানে ভালো-মন্দ কিংবা নৈতিক-অনৈতিকতার বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট নয়, বরং অসজ্ঞায়িত ও পরিবর্তনশীল। সুতরাং, আমরা প্রত্যক্ষ করছি, পশ্চিমা সভ্যতা তাদের উদারপন্থী মতাদর্শের আলোকে স্রষ্টাবিবর্জিত ‘যুক্তিবাদী মন’ ব্যবহার করে আজও ‘ন্যায়বিচার’, ‘স্বাধীনতা’, ‘অধিকার’ শব্দগুলোকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারেনি। বরং তারা এসব শব্দের অপব্যবহার করেছে, এবং সময়ে সময়ে নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য তাদের ‘উদারপন্থী ধারণাসমূহকে’ বিসর্জন দিয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশের কথা তো দূরে থাক, এমনকি গণতন্ত্রের সূতিকাগার ফ্রান্স-আমেরিকার মতো দেশেও ‘স্বাধীনতা’ ও ‘মানবাধিকার’ প্রতিনিয়ত ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমেরিকা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ‘মানবাধিকার’ লঙ্ঘনে তারা চ্যাম্পিয়ন, যেমন: ইরাক, আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম, ইত্যাদি। ফ্রান্স, ‘ব্যক্তিগত স্বাধীনতা’ সমুন্নত রাখার দাবি করে গর্ববোধ করে, অথচ মুসলিম নারীদের হিজাব পরার স্বাধীনতাকে হরণ করে। এছাড়াও, “লিবার্টিজ রিপোর্ট অন মিডিয়া ফ্রিডম ২০২৩” অনুসারে ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, বুলগেরিয়া এবং হাঙ্গেরির মতো উন্নত ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে অবমাননাকর আইন ও পদ্ধতিগত নিপীড়নের কারণে গণমাধ্যমসমূহের স্বাধীনতা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।

হে দেশবাসী, মানবসৃষ্ট শাসন ব্যবস্থার অত্যাচার থেকে আপনাদের প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য আপনাদের উচিত অবিলম্বে ধর্মনিরপেক্ষ উদারনীতির ভ্রান্ত মতবাদসমূহকে প্রত্যাখ্যান করা। ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শের ধারক-বাহকেরা আপনাদেরকে আপনাদের সমস্যার প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করতে দিচ্ছে না। ইতিমধ্যে আপনাদের অবশ্যই উপলব্ধি করা উচিত, দুর্নীতিগ্রস্ত এই মতাদর্শই প্রধান সমস্যা, আর সীমাহীন যুলুম যা অত্যাচারী সরকাররূপে প্রকাশিত এবং এর বিভিন্ন কুখ্যাত পদক্ষেপ কেবল এর লক্ষণ মাত্র। সুতরাং, যতদিন না আপনারা দুর্নীতিগ্রস্ত এই মানবসৃষ্ট ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা উপড়ে ফেলে নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফত রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হবেন, ততদিন এই ধর্মনিরপেক্ষ অত্যাচারের অবসান ঘটবে না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:

*الر كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنْ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ*

“আলিফ, লাম, রা। এটি এমন এক কিতাব যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসতে পারেন। অর্থাৎ, সেই সত্তার পথে, যার ক্ষমতা সকলের উপর প্রবল এবং যিনি সমস্ত প্রশংসার উপযুক্ত [সূরা ইব্রাহীম: ১]

হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশএর মিডিয়া কার্যালয়