working to establish khilafah

বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ কেবলমাত্র কতিপয় রাজনীতিক ও পুঁজিপতি অভিজাতদের স্বার্থ নিশ্চিতে পরিকল্পিত হয়েছে

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ কেবলমাত্র কতিপয় রাজনীতিক ও পুঁজিপতি অভিজাতদের স্বার্থ নিশ্চিতে পরিকল্পিত হয়েছে

 

পুঁজিবাদের প্লেগ বাংলাদেশে ক্যাপাসিটি চার্জ নামে এমন এক ব্যবস্থার প্রচলন ঘটিয়েছে যা কতিপয় রাজনীতিক ও পুঁজিপতি অভিজাতদের স্বার্থ নিশ্চিতে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি একটি নিশ্চিত মূল্যপরিশোধ বা গ্যারান্টিযুক্ত পেমেন্ট যা বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদেরকে প্রদান করা হয় (তাদের জন্য নির্ধারিত ফি-এর অতিরিক্ত অর্থ), তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করুক বা না করুক এক্ষেত্রে তা বিবেচ্য বিষয় নয়। এই অর্থপ্রদান ব্যবস্থা প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আর পুঁজিবাদী সরকার এই বিপুল ঋণের বোঝা শেষ পর্যন্ত জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয় এবং এর ফলে জনগণকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ বেসরকারি বিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্রগুলোকে প্রদান করা হয়েছে (প্রথম আলো, ৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩), এবং চলতি বছরের ক্যাপাসিটি পেমেন্টের পরিমাণ গত দুই বছরের তুলনায় ৮০-৯০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে, অথচ বেশিরভাগ বাংলাদেশী নাগরিককে উচ্চমূল্যে নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় ইউটিলিটি পরিষেবা ক্রয়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

রক্তচোষা সরকার জনগণের অর্থ বেসরকারী বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছে, যে বিদ্যুৎ তারা কখনও উত্পাদন করেনি। তারা যুক্তি দেখায় যে, সরকার তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ব্যর্থ হলে কোনো বেসরকারি উৎপাদক নিষ্ক্রিয় বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাজনিত লোকসানের ক্ষতি বহন করবে না। অথচ এরপরও ক্ষমতাসীন পুঁজিবাদী সরকার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে না, বরং অত্যাবশ্যকীয় এই খাতটিকে পুঁজিপতি অভিজাত গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিয়ে তাদেরকে সম্পদের পাহাড় গড়ার সুযোগ দিবে! এই ১ লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে সরকার কয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে পারতো, কি পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তা জনগণকে সরবরাহ করতে পারতো? দক্ষতা ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করা হলে এগুলো থেকে উদ্ভূত এমন কোন ন্যায়সঙ্গত যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না যা এধরনের সিদ্ধান্তকে বৈধতা দিতে পারে। এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, এই ‘কর্পোরেট ওয়েলফেয়ার’ নিশ্চিতের মাধ্যমে সমগ্র দেশের করদাতাদের অর্থ সরাসরি সেসব ব্যক্তির পকেটে চলে যায় যাদের রাজনীতি ও ব্যবসায়িক পরিমন্ডলে শক্তিশালী অবস্থান ও সংযোগ রয়েছে। একটি মনিটরিং বডির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন এটিকে সঠিকভাবেই ‘লুটপাটের মডেল’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছে। এটা বেশ স্পষ্ট যে, বর্তমান শাসন ব্যবস্থা বাংলাদেশকে এমন একটি দিকে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হয়েছে যেখানে সকল নাগরিকের কেবল মৌলিক চাহিদাসমূহই নয়, বরং অর্থবহ উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতেও সমান অংশ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।

বিপরীত দিকে, ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পেট্রোলিয়াম তেল, গ্যাস, কয়লা ও বিদ্যুতের মতো সম্পদসমূহকে গণ্য করা হয় সকল জনগণের কল্যানের জন্য। এগুলো অবশ্যই গণমালিকানাধীন সম্পদ হিসাবে বিবেচিত এবং এগুলোকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করা যাবে না। ইসলামে, খিলাফত রাষ্ট্র জনগণের পক্ষ হয়ে এধরনের সম্পদসমূহের দেখাশোনা করে। এটা এজন্য করা হয় যাতে কোনো ব্যক্তি বা কর্পোরেশন কর্তৃক নিজস্ব হীন স্বার্থে এগুলোর উপর একচেটিয়া দখলদারিত্ব তৈরি না হয়ে, রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমানভাবে এসব সম্পদ হতে উপকৃত হতে পারে। ইসলামে গণমালিকানা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বাধ্যতামূলক বিষয় যে, কোন একজন ব্যক্তি বা কোম্পানী কখনোই এমন কিছুর মালিক হতে পারবে না যার ফলে পাবলিক রোডের কোন অংশ, যেমন: বৈদ্যুতিক খুঁটি, পানির পাইপ, টেলিফোন লাইন, ইন্টারনেটের তার, টেলিভিশন ক্যাবল, ইত্যাদি স্থায়ীভাবে তার দখলে চলে যেতে পারে, সমগ্র রাস্তার মালিকানা দিয়ে দেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না! ইসলামে সমাজের সকল মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা হয় এবং কেউ জনগণের অধিকার লঙ্ঘন করার সাহস করে না, গণমালিকানাধীন সম্পদ নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগে সমগ্র সমাজকে জিম্মি করা তো দূরের বিষয়। গণমালিকানাধীন সম্পদের মালিকানা ও ব্যবহার সংক্রান্ত সুস্পষ্ট শারী‘আহ্ বিধি-বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে আসন্ন খিলাফতে রাশিদাহ্ রাষ্ট্র, যা নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত হবে, সমগ্র সমাজে ন্যায়ের শাসন ও সুবিচার নিশ্চিত করবে। কেবলমাত্র এই শাসনব্যবস্থার মাধ্যমেই বাংলাদেশের জনগণ পুঁজিবাদের ডাকাতির কারণে বর্তমানে যে অন্যায় ও দুর্দশার মধ্যে দিনাতিপাত করছে তা থেকে মুক্তি পাবে। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন:

“মুসলিমগণ তিনটি জিনিসে অংশীদার: পানি, চারণভূমি এবং আগুন (আহমাদ, ইবনে মাজাহ্)।

হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশএর মিডিয়া কার্যালয়