working to establish khilafah

রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে হাসিনা সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা, ব্রিটিশদের প্রতি তার প্রকৃত আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির সংগ্রামকারীদের রক্ত ও আত্মত্যাগের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে হাসিনা সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা, ব্রিটিশদের প্রতি তার প্রকৃত আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির সংগ্রামকারীদের রক্ত ও আত্মত্যাগের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা

ব্রিটিশ রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে হাসিনা সরকার তিনদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সকল সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী ভবন, এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এছাড়াও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাণীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাতের জন্য বিশেষ প্রার্থনার ব্যবস্থা করা হবে। এমনকি রাণীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে শেখ হাসিনা। যখন আমরা মুসলিম ভূ-খণ্ডসমূহের জনগণ বাস্তবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের নৃশংস ঘটনাসমূহের স্মৃতিচারণ করছি, তখন হাসিনা সরকার জনগণের আবেগ-অনুভূতির বিরুদ্ধে গিয়ে উপনিবেশবাদী ব্রিটেন ও তার রক্তপিপাসু রাণীর প্রতি তার সত্যিকারের আনুগত্য প্রদর্শনে এমন ঘোষণা দিতে বিন্দুমাত্রও দ্বিধাবোধ করেনি। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের সেসকল আত্মত্যাগকারীদের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা যারা অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তির সংগ্রাম করেছিল এবং তাদের রক্ত উৎসর্গ করেছিল।

হে দেশবাসী, আপনারা জানেন, এই ব্রিটিশরা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বিশ্বাসঘাতক মোস্তফা কামাল পাশার সহযোগিতায় ১৯২৪ সালে মুসলিম উম্মাহ্’র ঢাল ‘মহিমান্বিত খিলাফতব্যবস্থার’ বিলুপ্তি ঘটায়, যার অধীনে আমরা শত্রুদের কবল থেকে সুরক্ষিত ছিলাম। আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য রেখে যাওয়া ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে তারা অপসারণ করে এবং আমাদের উপর জোরপূর্বক তাদের ঘৃণিত জীবনধারা ও কুফর শাসনব্যবস্থাকে চাপিয়ে দেয়। তখন তারা আমাদের উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞা চালায়, আমাদের সম্পদ লুট করে, এবং বর্বরতা চালিয়ে আমাদের উপর চরম দুর্দশা ডেকে আনে। খিলাফতব্যবস্থা ধ্বংস করার পর তারা আমাদের ভূমিকে কৃত্রিম জাতীয়তাবাদী সীমানার ভিত্তিতে বিভক্ত করে, যাতে এই উম্মাহ্ আর কখনো একটি শক্তিশালী একক রাষ্ট্র হিসাবে পুনরায় একত্রিত হতে না পারে এবং তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারে। অতঃপর তারা কৌশলে মুসলিম ভূ-খণ্ডসমূহে সাম্প্রদায়িকতার ইন্ধন উস্কে দেয় এবং টেনে-হিঁচড়ে আমাদেরকে সাম্প্রদায়িকতার যুদ্ধে অবতীর্ণ করে, যাতে পারস্পরিক রক্তপাতের মাধ্যমে আমরা নিঃশেষ হয়ে যাই। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী শেখ হাসিনার ভূমিকাও ব্রিটিশ কুকুর মোস্তফা কামালের মতোই, যে এদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা বজায় রাখতে এবং খিলাফতের উত্থান ঠেকাতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে এবং ঔপনিবেশিকতার প্রতীক রাণীর জন্য ‘বিশেষ প্রার্থনার’ আয়োজন করে হাসিনা সরকার আমাদেরকে এই উপমহাদেশে তার ব্রিটিশ প্রভুর ২০০ বছরের দুর্বৃত্তায়ন ও ডাকাতির ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চায়, যা ১৭৫৭ সালে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণাপূর্ণ পলাশীর যুদ্ধে (Battle of Plassey) তাদের বিজয়ের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।

হে দেশবাসী, ব্রিটেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঔপনিবেশিকতাবাদকে বিদায় জানালেও বর্তমানে তারা তাদের দালাল শাসকগোষ্ঠীর মাধ্যমে আমাদের ভূ-খন্ডসমূহে নব্য-ঔপনিবেশিকতাকে বজায় রেখেছে; রাণীর জন্য হাসিনা সরকারের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা এই সত্যেরই প্রমাণ। এ কারণেই আমরা দেখতে পাই, এসব দাসসুলভ শাসকেরা তাদের কাফির ঔপনিবেশিক প্রভুদের প্রতি আনুগত্য দেখানোর কোন সুযোগই হাতছাড়া করে না, যদিওবা এজন্য তাদের নিজদেশের জনগণের চিন্তা ও আবেগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হয়। বাস্তবতা হচ্ছে, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হওয়ার অল্প সময় পরেই ১৯৫২ সালে রাণী এলিজাবেথ সিংহাসনে বসে। তখন থেকেই এলিজাবেথ তার সাম্রাজ্যের পক্ষে এই উপমহাদেশে তাদের পোষা দালাল, যেমন: পাকিস্তানের জিন্নাহ্, ভারতের নেহেরু এবং বাংলাদেশের শেখ মুজিবের দেখাশোনা শুরু করে। শেখ হাসিনা তার পূর্বসূরির ঐতিহ্যকে অক্ষুন্ন রেখে এদেশে এখনো ব্রিটিশদের স্বার্থরক্ষা করছে, যেভাবে একজন বিশ্বস্ত পোষা প্রাণী তার প্রভুর বাড়ি রক্ষা করে। কাজেই, শেখ হাসিনা পরোয়া করেনি যে তার ‘অভিভাবক’ (রাণী এলিজাবেথ)-এর জন্য শোক প্রকাশ করা হলে তা মুসলিম উম্মাহ্’র চূড়ান্ত অপমান হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ এই এলিজাবেথ কখনোই মুসলিমদের ক্ষতের মধ্যে পুনরায় আঘাত দিতে পিছপা হয়নি। সে ব্যক্তিগতভাবে প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের যুদ্ধাপরাধী টনি ব্লেয়ারকে নাইটহুডের সর্বোচ্চ সিনিয়র অর্ডার পুরস্কারে ভূষিত করে। এমনকি ২০০৭ সালে এই রাণী আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে অবমাননা করার মতো জঘন্য অপরাধের প্রতি সমর্থন জানিয়ে অভিশপ্ত সালমান রুশদিকে নাইটহুড উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছে। প্রকৃতপক্ষে, রাণী এলিজাবেথ এবং ব্রিটিশ রাজপরিবার ঔপনিবেশিকতার প্রতীক, যেটিকে ঔপনিবেশিকযুগ পরবর্তী ব্রিটিশ সরকার তাদের অহংকারের প্রতীক হিসেবে জিইয়ে রেখেছে। আর শেখ হাসিনা এই রাজপরিবার ও রানীকে তার ‘সত্যিকারের অভিভাবক’ হিসাবে চিহ্নিত করে (শোকবার্তা জানিয়ে লিখিত চিঠিতে) নির্লজ্জভাবে তার ব্রিটিশ প্রভুর অন্ধকার ইতিহাসকে সমর্থন করেছে।

হে মুসলিমগণ, প্রতিটি মৃত্যুই আমাদের জন্য শিক্ষা; রাণী এলিজাবেথের মৃত্যু থেকে আমরা অনুধাবন করেছি যে, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী এখনও ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে, এবং তথাকথিত স্বাধীনতা কেবল মরীচিকার মত বিভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়, বরং আমাদের সাথে প্রতারণার একটি হাতিয়ার। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আমাদের ভূমির উপর সরাসরি দখলদারিত্ব বজায় না রাখলেও এখনও তারা আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। ধর্মনিরপেক্ষগোষ্ঠীরা রাণীর মৃত্যুকে দেখছে তাদের ঐক্য ও আনুগত্যের পতিত প্রতীক হিসেবে; কিন্তু ইসলামের বিধি-বিধান ও চেতনার সাথে যুক্ত মুসলিমরা রাণীর মৃত্যু ও ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর এরূপ শোক পালনকে দেখছে, ঔপনিবেশিক অন্ধকার কালো মেঘের ছায়ায় এখনও আমরা বাস করছি। অন্ধকার এই ছায়া থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে এবং হিযবুত তাহ্‌রীর-এর নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের অধীনে দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করে ঔপনিবেশিক পশ্চিমের দালাল ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ও রাজনীতিবিদদের কবল থেকে মুক্ত হতে হবে। কেবল তখনই আমরা সত্যিকার অর্থে ঔপনিবেশিকতার প্রভাব হতে মুক্ত হতে পারব এবং এই পৃথিবীতে মুসলিম উম্মাহ্’র গৌরবময় ইতিহাস ফিরিয়ে আনতে পারব। এই উম্মাহ্ দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের রক্ষক ও আমাদের ঐক্যের প্রতীক খিলাফতের ছায়াতলে বসবাস করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন:

>السلطان ظل الله في الأرض<

সুলতান (খলিফা) হচ্ছেন পৃথিবীতে আল্লাহ্ ঢাল (বায়হাকি)

 

হিযবুত তাহ্‌রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়