working to establish khilafah

দুর্ভিক্ষ এবং লোডশেডিং সম্পর্কে হাসিনা এবং তার জ্বালানী উপদেষ্টার সতর্কবাণী নির্দেশ করে যে, তার সরকারও বিশ্বব্যাংক-আই.এম.এফের নীতির মত দেউলিয়া হতে চলেছে

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

দুর্ভিক্ষ এবং লোডশেডিং সম্পর্কে হাসিনা এবং তার জ্বালানী উপদেষ্টার সতর্কবাণী নির্দেশ করে যে, তার সরকারও বিশ্বব্যাংক-আই.এম.এফের নীতির মত দেউলিয়া হতে চলেছে

কুপি-হারিকেন ব্যবহারে দেশবাসীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে দেয়া শেখ হাসিনার বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার তার জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী জনগণকে এই শপথ নেয়ার পরামর্শ দিলেন যাতে তারা দিনের বেলা বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে! ‘লোডশেডিং’ চাপিয়ে দিয়ে জনজীবনে চরম ভোগান্তিসহ শিল্প এবং কৃষি উৎপাদনকে ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে দেয়ার পর, এখন তার জোকার উপদেষ্টা ও মন্ত্রীবর্গ এসব খাতকে রক্ষায় জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছে। বিদ্যুৎখাতের ধ্বস তরান্বিত হয়েছে হাসিনা সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনকে তাদের সহযোগী ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়ার পুঁজিবাদী ভ্রান্তনীতির কারণে, যা এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট। অথচ ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদরা জ্বালানী সংকট যে বিশ্বব্যাংক ও আই.এম.এফ-এর নব্য-উপনিবেশবাদী নীতির ফলাফল, এই সংযোগটি দেখতে না পাওয়ার মত যথেষ্ট নির্বোধ। আশির দশক থেকে, বিশ্বব্যাংক (WB) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বাংলাদেশে জোরপূর্বক কুখ্যাত “ওয়াশিংটন কনসেনসাস” চাপিয়ে দেয়, এবং ব্যাপক বেসরকারীকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের জ্বালানী খাতকে অতি-ধনী পুঁজিপতিশ্রেণীর লুটপাটের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। বিশ্বব্যাংকের কুখ্যাত ‘প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (PSC)’ এটা নিশ্চিত করেছে যাতে আমাদের জ্বালানী সম্পদের একটি বড় অংশ শত্রু রাষ্ট্রগুলোর নিয়ন্ত্রনে থাকে, যেমন: যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন কর্পোরেশন, ভারতের অয়েল এন্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশন (ONGC Videsh), ইত্যাদি। ফলশ্রুতিতে, আমাদের জ্বালানী সার্বভৌমত্ব সর্বদা ঝুঁকির মধ্যে এবং কাফির-পশ্চিমাদের করুণার উপর নির্ভরশীল থাকে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ডে জ্বালানী অনুসন্ধানের জন্য নিজস্ব সক্ষমতা তৈরির চেষ্টার পরিবর্তে ১৯৮৭ সাল থেকে উপনিবেশবাদী শক্তির কাছে আমাদের তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রগুলোকে একের পর এক সমর্পণ করা হয়েছে। ফলে আমরা আমাদের নিজস্ব জ্বালানী বিদেশী কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে আন্তর্জাতিক দরে মার্কিন ডলারে কিনতে বাধ্য হচ্ছি। এসব নীতিসমূহ আমাদের জ্বালানী খাতকে পঙ্গু করে দিয়েছে, যদিও আমরা অঢেল প্রাকৃতিক জ্বালানী সম্পদের প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ। নব্য-উপনিবেশবাদী হস্তক্ষেপ আমাদের অর্থনৈতিক ও জ্বালানী সংকটকে তীব্রতর করেছে এবং জনগণের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। একদিকে, বাংলাদেশ খুব কম পরিমানে কার্বন-নির্গমনকারী দেশ হওয়া সত্ত্বেও দালাল সরকার গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর ঔপনিবেশিক পরামর্শ ও চাপের মুখে বশ্যতা স্বীকার করেছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমাদের দেশীয় কয়লার মজুদ ও পরিচ্ছন্ন কয়লা প্রযুক্তি ব্যবহারকে অবহেলা করছে (“জন কেরি জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ও প্রশমনে ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন, ঢাকা ট্রিবিউন, ২৩শে অক্টোবর, ২০২২), আর অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ হাসিলে প্রতিবছর ব্যয়বহুল দরে কয়লা আমদানী করছে। অধিকন্তু, সরকার যখন ব্যয়বহুল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের জন্য ভারতের আদানি গ্রুপকে চারগুণ অর্থ প্রদান করতেও প্রস্তুত, অথচ এই তারাই আবার বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যয়বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য ভর্তুকির পরিমান প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।

হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য ‘সাফল্য’ হচ্ছে, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন এবং দেশের অর্থ পাচারে বিশ্বব্যাংক-আই.এম.এফের বিদেশী বিনিয়োগ ও বাণিজ্য উন্মুক্তকরণ নীতির ফায়দা হাসিল করা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসমূহের বিধি-নিষেধ তুলে দেয়া, এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহকে বেসরকারীকরণ করা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকা আমাদের অর্থনীতিকে স্থায়ীভাবে খাদ্য আমদানীকারকে পরিণত করার নীতি আমাদের কৃষিখাতকে ধ্বংস করেছে। বিশ্বব্যাংক-আই.এম.এফের এসব আত্মঘাতী নীতি অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে শেখ হাসিনা এখন দেশবাসীকে আসন্ন দুর্ভিক্ষের সতর্ক বার্তা দিচ্ছে! এছাড়াও, ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী এই সরকার শুধুমাত্র ক্ষুদ্র পুঁজিপতিশ্রেণীর স্বার্থ হাসিলে সমগ্র দেশকে বৈদেশিক ঋণের সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে, আর এখন জনগণকে আসন্ন রিজার্ভ সংকট ও দেউলিয়াত্বের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলছে, কারণ এটি আগামী মাসসমূহে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আমদানী ব্যয় পরিশোধ করতে পারবে না। তারা এই সত্যটি আড়ালের চেষ্টা করছে যে, গতবছর যখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হ্রাস পায় (৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে আসে) তখন সরকার দেশীয় পুঁজিবাদী অভিজাত শ্রেণীকে ব্যাপক বৈদেশিক ঋণের সুবিধা প্রদান করেছে, যা ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে (“বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে চাপে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ!”, sharebiz.net, ২৫শে অক্টোবর, ২০২২)। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও সরকারী ঋণ নিয়ে ক্রমবর্ধমান আতঙ্কের মধ্যেই আই.এম.এফ–এর প্রতিনিধিদল এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে এবং ৯ই নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় থাকবে। তারা ভর্তুকি এবং প্রণোদনা কমাতে সরকারের সাথে আলোচনা শুরু করেছে, যা কেবল জনসাধারণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। তারা কেবল রাজস্ব ব্যায় সংকোচন নীতি তথা কুখ্যাত “কঠোরতা প্রোগ্রাম”-এর মাধ্যমে জনগণকে শাস্তি দেয়ার, আর বাজারকে উন্মুক্ত করার নীতির মাধ্যমে পুঁজিপতিদের আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে পরোয়া করে। অচিরেই আমরা দেখবো যে, তাদের “বেইলআউট প্যাকেজ”-এর কারণে প্রকৃত আয় হ্রাস ও বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়ে জনগণ আরেকটি কঠিন ধাক্কার সম্মুখীন হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: “আপনি কি তাদের দেখেননি যারা আল্লাহ্’র অনুগ্রহকে অকৃতজ্ঞতার সাথে বিনিময় করেছে এবং তাদের সম্প্রদায়কে ধ্বংসের আবাসস্থলে নিক্ষেপ করেছে?” [সূরা ইব্রাহিম, আয়াত: ২৮]।

হে মুসলিমগণ, এরপরও কি আপনারা বিশ্বাসঘাতক এই শাসকদের পানে তাকিয়ে থাকবেন, তাদের কাছে বিদ্যুতের জন্য মিনতি জানাবেন, এবং আশায় থাকবেন যে, তারা আপনাদের জীবনযাত্রায় স্বস্তি আনবে? এরপরও কি আপনারা তাদের কাছ থেকে একটি সমাধানের আশা করেন, যদিওবা আপনাদের কোন সন্দেহ নেই যে এই দাসসুলভ শাসকগোষ্ঠী প্রকৃতপক্ষে কাফির-উপনিবেশবাদীদের হাতিয়ার মাত্র, যাদের ধ্বংসাত্মক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা অবিরামভাবে আমাদের সমৃদ্ধিকে দুর্দশায় পরিণত করেছে? বরং আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে অনতিবিলম্বে সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের প্রতি দাবী জানানো, যাতে তারা এসব দালাল শাসকদের উপর থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে। তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন যে তাদের শক্তি-সামর্থের উপর ভর করেই এসব শাসকেরা জনগণের জীবন-জীবিকা ধ্বংসের এমন অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করছে। তাদের নিকট দাবী জানান যেন তারা নিষ্ঠাবান ও সাহসী দল হিযবুত তাহ্‌রীর-কে ‘নুসরাহ্’ (ক্ষমতা) প্রদান করে। কারণ শুধুমাত্র এই দলটিই স্পষ্ট রূপরেখা দিয়েছে যে কিভাবে নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় খিলাফত রাশিদাহ্’র ব্যবস্থার অধীনে সামগ্রিকভাবে আহকাম শারী‘আহ্ বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র জনগণের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। ইসলামে ‘অভিজাত’ গোষ্ঠী বলতে কোন কিছুর স্থান নেই, এবং খিলাফতের অধীনে গণমালিকানাধীন প্রাকৃতিক সম্পদ কোন দেশী-বিদেশী কোম্পানীর কাছে হস্তান্তর করার সুযোগ থাকবে না। খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে নাগরিকগণ জাতি-ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের প্রধান সুবিধাভোগী হবেন। এবং ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিপরীতে, আসন্ন খিলাফত তার নাগরিকদের পক্ষ হয়ে এই জ্বালানীখাতের ব্যবস্থাপনার তত্ত্বাবধান করবে এবং এসব সম্পদে সমঅধিকার প্রদান করবে। খিলাফত রাষ্ট্র কোনো গোষ্ঠীকে বেসরকারীকরণের নামে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র এই নিয়ামতকে দুর্দশায় পরিণত করতে দেবে না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুর‘আনে বলেন:

* وَلَوۡ اَنَّ اَهۡلَ الۡقُرٰٓى اٰمَنُوۡا وَاتَّقَوۡا لَـفَتَحۡنَا عَلَيۡهِمۡ بَرَكٰتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالۡاَرۡضِ*

“যদি ঐ জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করতো, তবে আমি অবশ্যই তাদের জন্য আসমান ও জমীনের নিয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম” [সূরা ‘আরাফ, আয়াত: ৯৬]

 

হিযবুত তাহ্‌রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়