working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 68

Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৬৮ তম সংখ্যা । ২৪ অক্টোবর, ২০২২

এই সংখ্যায় থাকছে:

“ভয়ংকর হচ্ছে ডেঙ্গু, বাড়ছে মৃত্যু”
“পতিত জমি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ আসবে নাঃ প্রধানমন্ত্রী”
“ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং বিদ্যুৎ সঙ্কটের সমাধান নেই”
“চিনির বাজারে অস্থিরতা ও চিনিশিল্পের সংকট”
“ক্ষুধার যন্ত্রণা ভুলতে’ নেশা করে ছিন্নমূল শিশুরা”

 

 

 

“ভয়ংকর হচ্ছে ডেঙ্গু, বাড়ছে মৃত্যু”
খবরঃ

শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আক্রান্তদের তালিকায় রয়েছে একেবারে শিশু থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরাও। আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু। … চিকিৎসকরা বলছেন, চলতি বছর ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে তিনটি ধরণ (স্টেইন-১, ৩, ৪) রোগের প্রকোপ বাড়িয়েছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেওয়ায় আক্রান্তদের শক সিন্ড্রোম অর্থাৎ হঠাৎ শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, হেমোরেজিক ফিবার বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে বাড়ছে মৃত্যু। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিনের মধ্যে ৬৪ শতাংশ ডেঙ্গুরোগী মারা যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, … এবছর ২১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ২৯ হাজার ১০৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ২০ হাজার ৯০৪ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট আট হাজার ২০৩ জন। এবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। (https://www.banglanews24.com/health/news/bd/974362.details)

মন্তব্যঃ
রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে শারীরিক সুস্থতা, নিরাপত্তা এবং ঐদিনের খাবারের নিশ্চয়তা নিয়ে ঘুম থেকে উঠল, যেন সে সমস্ত দুনিয়াকে তার হাতের মুঠোয় পেল” (ইবনে মাজাহ্)। ইসলাম স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল এই অধিকারকে নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার দুটোই এ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থা অনুসরণকারী বর্তমান রাষ্ট্র ও এর শাসকগোষ্ঠীর চরিত্র হল তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যায় এবং যতটা সম্ভব অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সাধু সাজার চেষ্টা করে। যেমন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে দেশের মানুষকে বলা হচ্ছে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার রাখতে যাতে এডিস মশার বংশবিস্তার করতে না পারে। মানুষ বড়জোর তার নিজের বাড়িকে পরিষ্কার রাখতে পারে কিন্তু বাড়ির আশেপাশে নর্দমা, ডোবা, নালা, ময়লার ভাগার এসব পরিষ্কার রাখা, সেখানকার মশা নিধন করার দায়িত্ব কার? অবশ্যই রাষ্ট্রের। শাসকগোষ্ঠী তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন না করে জনগণের দিকে আঙ্গুল তোলে। ভাবটা এমন যেন এসব ডেঙ্গু জ্বরের জন্য তোমরা নিজেরাই দায়ী তাই সরকারকে কোন প্রশ্ন করতে পারবে না, আমরা তো আগেই বলেছি বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার, মশামুক্ত রাখুন। তাদের আরেকটি চরিত্র হচ্ছে, সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগকে দোষারোপ করে, ঐ বিভাগ তখন আরেক বিভাগকে দোষারোপ করে, যেমন স্বাস্থ্য বিভাগ বলে মশা মারার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের, সিটি কর্পোরেশন খানা-খন্দ, ডোবা-নর্দমার পরিষ্কারের দায় চাপায় ওয়াসার ঘাড়ে, এভাবেই চলতে থাকে; জনগণ তখন দ্বিধাদ্বন্ধে পড়ে যায় আসলে দোষটা কার। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর (“মশা মারার কাজ স্বাস্থ্যখাতের না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী”, বাংলা ট্রিবিউন, ২০ অক্টোবর ২০২২)।

শাসকগোষ্ঠী জনগণের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে মোটেই আন্তরিক না। কেনইবা আন্তরিক হবে তারা? তারা শাসনকার্যকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌’র নিকট জবাবদিহিতার সাথে সংযুক্ত করে না – ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের অনুসারী এসব শাসকেরো ইসলামী বিধান ও পরকালের জবাবদিহিতাকে রাষ্ট্র ও রাজনীতি থেকে সর্বদা দূরে রাখে। তাই সত্যিকার অর্থে কোনপ্রকার জবাবদিহিতার মধ্যে এসব শাসকগোষ্ঠী নেই। যেটুকু সেবা তারা জনগণকে দেয় তারা মনে করে সেটাই তাদের দয়া ও মহানুভবতা। যেমন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনা করলে আমরা তো সুখে আছি, বেহেশতে আছি বলতে হবে’।

অন্যদিকে, খিলাফত রাষ্ট্র জনগণের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ে কতটা আন্তরিক ছিল তার দুটি উদাহরণ তুলে ধরা আবশ্যক। এক: ওযীর আলী ইবনে ঈসা বাগদাদের প্রধান চিকিৎসক সিনান ইবনে সাবেতকে লিখেছিলেন- আমি বন্দীদের ব্যাপারে ভেবে দেখেছি। সংখ্যাধিক্য এবং প্রতিকূল আবহাওয়া ও অবস্থানের কারণে অনেক সময় তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই তাদের জন্য আলাদা চিকিৎসক নির্ধারণ করা আমাদের দায়িত্ব। চিকিৎসক প্রতিদিন কারাগারে যাবে। পুরো কারাগার ঘুরে অসুস্থদের চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবারহ করবে। (সূত্রঃ তারীখুল হুকামা, পৃষ্ঠা ১৪৮)। দুই: ৬৮৩ হিজরীতে আল-মালিকুল মানসূর সাইফুদ্দীন নির্মাণ করেন ‘আল-মুসতাশফাল মানসূরী আল-কাবীর’ শৃংখলা ও পরিপাটির দিক থেকে এটি ছিল তৎকালীন যুগের পৃথিবীর সুন্দরতম একটি হাসপাতাল। এর চিকিৎসা সেবাও ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত ও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। প্রত্যেক রোগীর সেবায় দুজন ব্যক্তি নিযুক্ত থাকত। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল, কেবলমাত্র হাসপাতালে অবস্থানরত ব্যক্তিদেরই চিকিৎসা সেবা প্রদান করত না; বরং যেসকল রোগী হাসপাতালে আসতে অক্ষম তাদের বাড়ী গিয়ে সেবা প্রদান করা হত এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ ও খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হত। প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হত এ হাসপাতাল থেকে। যারা সেবা পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠত, যাওয়ার সময় পরিধান করার জন্য তাদের একটি করে নতুন কাপড় দেয়া হত এবং ঘরে ফিরে অতিরিক্ত পরিশ্রমসাধ্য কাজ করে স্বাস্থ্যের যেন অবনতি না ঘটে এজন্য প্রয়োজন পরিমাণ অর্থও দিয়ে দেয়া হত। (মিন রাওয়াইয়ি হাযারাতিনা, পৃষ্ঠা ২১২)। আমাদের স্বাস্থ্যসেবার অধিকার কেবলমাত্র আগামীর খিলাফত রাষ্ট্রই নিশ্চিত করতে পারবে, কারণ প্রথমতঃ ইসলাম এটাকে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে: “রাষ্ট্র সকলের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সুবিধা দেবে। তবে রাষ্ট্র ব্যক্তিগত চিকিৎসা অনুশীলন, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ কিংবা ঔষধ বিক্রয় করাকে বাধা দিবে না” (১৬৪ নং অনুচ্ছেদ: কুর‘আন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধান)। দ্বিতীয়তঃ খলিফা জানেন যে তার দায়িত্বের বিষয়ে তিনি দুনিয়াতে জনগণ ও আখিরাতে আল্লাহ্‌’র কাছে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হবেন। শারীয়াহ্‌’র বিধি-বিধান ও আল্লাহ্‌ভীতি হবে খলিফার জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশিকা।

আবু যায়েদ

 

 

 

“পতিত জমি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ আসবে নাঃ প্রধানমন্ত্রী”
খবরঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ বা খাদ্য সংকট থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার পাশাপাশি প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আবারো অনুরোধ করছি, কোন খাদ্যের অপচয় নয়, যার যেখানে যতটুকু জমি আছে তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ান, সারা বিশ্বে যে দুর্যোগের আভাস আমরা পাচ্ছি, তা থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করুন। আমি বিশ্বাস করি সকলের প্রচেষ্টায় এটা করা সম্ভব।’ ……খাদ্যের চাহিদা কোন দিন কমে না, বরং বাড়ে। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজেই আমি যত উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি আর যত বেশি খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারি ততই আমাদের মঙ্গল হবে বলে আমি বিশ্বাস করি এবং যেটা আমাদের অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখতে পারে।’ (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-405371)

মন্তব্যঃ
২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা প্রধানমন্ত্রী ২০২২ সালে এসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে যখন দুর্ভিক্ষের গল্প শুনাচ্ছেন তখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ অন্যদেশের যুদ্ধের কারণে কেন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে? যেখানে আমরা খাদ্যের জন্য রাশিয়া বা ইউক্রেন কিংবা এই দুইদেশের সাথে জড়িত গ্লোভাল ফুড-সাপ্লাই সেইনের উপরও নির্ভরশীল না। তার মানে হচ্ছে, মিথ্যা বলে তিনি ২০১৬ সালে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছেন। যা তিনি এখনো করে আসছেন; একদিকে জনগণকে সাশ্রয়ী হতে, খাদ্যের অপচয় না করতে বলছেন, আর অন্যদিকে নিজ কার্যালয়ে দৈনিক ১০ কোটি টাকার উপরে জনগণের কষ্টের টাকা খরচ করছেন (২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট অনুসারে), আবার ৪৩ কোটি টাকা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব-মুখ্য সচিবদের বাড়ি দিচ্ছেন। বিষয়টি এমন যেন জনগণ সাশ্রয় করবে যাতে শাসকগোষ্ঠীর ভোগবিলাস ব্যাহত না হয়।

এমন প্রতারণা যখন পূঁজিবাদী ব্যবস্থারই সাধারণ বৈশিষ্ট্য, তখন এই ব্যবস্থার অনুসারীরা যে ভিন্ন কিছু হবেন না এটাই স্বাভাবিক। তাই শাসকগোষ্ঠী সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের মত পরিস্থিতিতেও জনগণকে তেমনই দিকনির্দেশনা দেয় যাতে উৎপাদন না কমে তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে। যেমন পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতারণাপূর্ণ বক্তব্য হচ্ছে, মানুষের চাহিদা অপরিসীম কিন্তু সেই তুলনায় সম্পদ সীমিত। তাই এই চাহিদা মিটাতে যত বেশি সম্ভব সম্পদের উৎপাদন বাড়ালে সমস্যার সমাধান করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী সেই পূঁজিবাদী দৃষ্টিকোণ থেকেই জনগণকে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে আহ্বান জানাচ্ছেন, যেন উৎপাদনই খাদ্য সংকটের সমস্যা এবং সমাধান। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষের চাহিদা দুই ধরণের। (১) মৌলিক চাহিদা (২) বিলাসী চাহিদা। মৌলিক চাহিদা পূরণ যেকোন জাতিগোষ্ঠীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, কারণ এর অভাবে সমাজে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা হতে পারে, কিন্তু বিলাসী পণ্যের অভাবে তা হয় না। মৌলিক চাহিদা অর্থ্যাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো বিষয়াদি পূরণের জন্য সম্পদ যথেষ্ট। অপ্রতুল হচ্ছে বিলাসী চাহিদা পূরণের উপকরণসমূহ। পুঁজিবাদী অর্থনীতি এবিষয় দুটিকে আলাদা না করে প্রতারণাপূর্ণভাবে সব চাহিদাকে এক করে উপস্থাপন করে, এবং ভোগ যেহেতু পুঁজিবাদের কেন্দ্রবিন্দু তাই যেকোন চাহিদাকেই এখানে মূল্য দেয়া হয় হোক সেটা মদের মত সমাজের ক্ষতিকারক পণ্য। মুলতঃ বিশ্বে প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয় তা মানুষের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট। কিন্তু, মানুষের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা না থাকায় খাদ্য সংকট দৃশ্যমান হচ্ছে। খাদ্য মানুষের কাছে দুইভাবে পৌঁছায়। এক, উৎপাদিত শস্য মজুত কিংবা অপচয় না করে বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করে; দুই, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিশ্চিত করে। “জাতিসংঘ বলছে বিশ্ব খাদ্য সংকট খাদ্যের অপ্রতুলতা নয়, বরং ক্রয়ক্ষমতার বিষয়” (সিএনবিসি, ৩০আগস্ট, ২০২২)। অথচ, পূঁজিবাদী ব্যবস্থা এই দুইটা বিষয় কখনোই নিশ্চিত করবেনা। প্রতিবছর আমেরিকা পূঁজিবাদী চিন্তার ফলে তার উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় অর্ধেক নষ্ট করে (দেখুনঃ The US Throws Away as Much as Half Its Food Produce | WIRED)।

প্রকৃতপক্ষে, এই সংকট থেকে আমরা কখনোই বের হতে পারবো না যতক্ষন না আমরা আল্লাহ্‌’র দেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনে আসি। যে রাষ্ট্র খাদ্য সংকটের পেছনে মূল সমস্যা নিয়ে কাজ করে জনগণকে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা করবে। মূলত, ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সাজানো হয়েছে রাষ্ট্র খাদ্য সংকটের মূল কারণসমূহ, তথা সম্পদের বন্টন এবং মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মত বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে। তাই এই ব্যবস্থায় সবস্তরের মানুষ তার মৌলিক চাহিদা যথাযথভাবে পূর্ণ করে বিলাসী চাহিদাগুলো পূরণ করার সক্ষমতা অর্জন করে। আর তা নিশ্চিত করা ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক খলিফার জন্য ফরজ দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেন, “এমন আমির যে জনগণের দায়িত্ব নিলো, কিন্তু, তাদের কল্যাণ সাধনের চেষ্টা করেনা এবং মঙ্গল কামনা করেনা। তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না” (মুসলিমঃ ৪৫০২)।

আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

 

 

 

“ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং বিদ্যুৎ সঙ্কটের সমাধান নেই”
খবরঃ
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজেই গত ১৮ তারিখে বলেছেন, মধ্যরাতেও লোডশেডিং নিয়ে আপাতত কিছু করার নাই। সবাইকে আরো একটু কষ্ট করতে হবে। জ্বালানী তেল ও গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানো যাচ্ছে না। দেশের ১৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টি কেন্দ্র এখন জ্বালানীর অভাবে বন্ধ হয়ে বসে আছে। টাকার অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এখন অনেকটা প্রকৃতির ওপরই পরিস্থিতি ছেড়ে দিয়েছেন। তার কথা, শীত এলে বিদ্যুতের চাহিদা কমবে। তখন হয়তো কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে। (m.dailyinqilab.com/article/527400/ঘণ্টায়-ঘণ্টায়-লোডশেডিং-বিদ্যুৎ-সঙ্কটের-সমাধান-নেই)

মন্তব্যঃ
দেশের ভয়াবহ লোডশেডিং পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে প্রয়োজনীয় জ্বালানী সরবরাহে সরকারের ব্যর্থতার কারণে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যখন সামনে, তখন সরকার দেশকে তথাকথিত শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার সফলতার গল্পকে লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে তলিয়ে দিতে চাইবে না। তাই বুঝা যায় সরকারের এই ব্যর্থতার স্বীকারোক্তিটি অনেকটাই বাস্তব। একইরকম স্বীকারোক্তি বিশ্বের বিভিন্ন সরকারগুলোও প্রকাশ করছে। বৃটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস জ্বালানী ও অন্যন্য জরুরী পণ্যের দামবৃদ্ধি কেন্দ্রীক বাজার অর্থনীতির প্রভাবে মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। জার্মানি, ফ্রান্স সহ অন্যান্য দেশের সরকারদের এই ব্যর্থতার জন্য ব্যাপক বিক্ষোভের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

অনেকে বৈশ্বিক এই জ্বালানী সংকটের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেই দায়ী করছেন। কিন্তু খবর বলছে রাশিয়া এই যুদ্ধের আগে যে তেল-গ্যাস রফতানী করতো এখনও একই পরিমাণ করছে। তার মানে তৃতীয় দেশ হয়ে রাশিয়ার তেল-গ্যাস ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। অর্থাৎ যুদ্ধ এবং রাশিয়ার উপর পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এই সংকট তৈরিতে প্রভাব রাখলেও এর পিছনের একমাত্র কারণ নয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় স্বভাবতই পুঁজিপতিরা একটা বড় নিয়ামক। তেল-গ্যাস কোম্পানীগুলো এখন এতই বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছে যা দিয়ে তারা রাজনীতি, অর্থনীতি এমনকি বিশ্বের ভু-রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হচ্ছে। যেমন, আমেরিকার পেট্রোলিয়াম কোম্পানীগুলোর সাথে ঐতিহাসিকভাবে রিপাবলিকানদের লবি বা স্বার্থের যোগাযোগ ভালো তাই বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আমেরিকার নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের বিপদে ফেলে রিপাবলিকানদের সুবিধা দিতে তেল-গ্যাস কোম্পানীগুলো উৎপাদন বাড়িয়ে দাম কমানোর বিপক্ষে। খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার দেশে আগামী নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে তেল-গ্যাসের দাম কমাতে সৌদি আরব এবং ওপেকের উপর চাপ প্রয়োগ করেও তেল উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়নি। উল্টো ওপেক+ প্রতিদিন ২ মিলিয়ন বেরেল তেল কম উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আমরা দেখছি একদিকে সৌদি সরকার আর অন্যদিকে আমেরিকার সরকার কিন্তু মূলত আড়ালে খেলছে তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী দানবীয় কোম্পানীগুলো।

বাংলাদেশের সরকারও বিদেশী জ্বালানী কোম্পানী ও দেশীয় পুঁজিপতি জায়ান্টদের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এদেরকে খুশি রেখেই সরকারকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয়। তারা বেসরকারী বিদ্যুৎকোম্পানীগুলোর সাথে এমনভাবে চুক্তিবদ্ধ যে, জ্বালানীর অভাবে উৎপাদন না হলেও তাদেরকে কেপাসিটি চার্জ দিতে হবে। গত তিন বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ গুণতে হয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এবছর সরকার একদিকে টাকার অভাবে জ্বালানী কিনতে পারছে না কিন্তু এসব কোম্পানীগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে টাকা দিতে বাধ্য! এটাই হচ্ছে পুঁজিবাদের আসল চিত্র। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা-বৃটেন কোন দেশের জনগণই আজ পুঁজিপতিদের রাক্ষুসে ক্ষুধা হতে রেহাই পাচ্ছে না।

একমাত্র ইসলামী ব্যবস্থাই জনগণকে এই শৃংখল মুক্ত করতে পারে। ইসলাম খনি হতে প্রাপ্ত অগাধ সম্পদ এবং নদী, সমুদ্রবন্দর, অবকাঠামোর মতো সম্পদ যেগুলোতে সামষ্টিকভাবে জনগণের প্রয়োজন পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোকে গণমালিকানাধীন সম্পদ হিসেবে অভিহিত করে। এই সম্পদগুলোকে বেসরকারীকরণ কিংবা দেশি বা বিদেশি কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়া স্পষ্টতঃ নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “তিনটি জিনিসে প্রতিটি মুসলিমের অধিকার: পানি, সবুজ চারণভূমি এবং আগুন (জ্বালানী)” (মুসনাদে আহমদ)। এমনকি সরকার বা খলিফাও এই থেকে কোন লাভ বা সুবিধা নিতে পারবে না। খলিফা জনগণের অভিভাবক হিসেবে এই সম্পদগুলোর দেখভাল করবেন এবং এসবের সকল সুবিধা জনগণের জন্য ব্যয় করবেন। ফলে ইসলামী ব্যবস্থায় এই ধরণের জায়ান্ট কোম্পানি তৈরি হবে না, যারা নাগরিকদের জিম্মি করে রাখবে। আর সরকার বা খলিফাকে প্রভাবিত করার প্রশ্নই আসে না।

মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 

 

“চিনির বাজারে অস্থিরতা ও চিনিশিল্পের সংকট”
খবরঃ
আমদানিনির্ভর অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের মতো চিনির বাজারেও চলছে অস্থিরতা। ব্যবসায়ীদের চাপে ১২ দিনে দুই দফায় কেজিপ্রতি চিনির দাম ২০ টাকা বাড়ানো হলেও নির্ধারিত দামে বাজারে মিলছে না। এই অস্থিরতার পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য হ্রাস ইত্যাদির কথা বলা হলেও মূল কারণ বেসরকারি আমদানিকারকদের ওপর একক নির্ভরশীলতা। বর্তমানে দেশে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো এক সময় বছরে দেড়-দুই লাখ টন চিনি উৎপাদন করত। কিন্তু গত দুই বছরে ১৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের মধ্যে ৬টির উৎপাদন বন্ধ থাকায় দেশীয় উৎপাদন কমে ৩০ হাজার টনে নেমে এসেছে। এ কারণে দেশের চিনি খাত প্রায় শতভাগ আমদানিভিত্তিক বেসরকারি চিনিকলগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যার ফলে এই পণ্যের বাজারে সরকারের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। (https://samakal.com/editorialsubeditorial/article/2210137684/চিনির-বাজারে-অস্থিরতা-ও-চিনিশিল্পের-সংকট)

মন্তব্যঃ
চিনিশিল্পকে বেসরকারীকরণ করে আমদানি নির্ভর করে তোলার পুঁজিবাদী প্রেসক্রিপশন প্রতিনিয়ত চিনির বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। সরকার দেশীয় আখ থেকে চিনি উৎপাদনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোকে নিদারুণ অবহেলার মধ্যে ফেলে রেখেছে। ৭০ থেকে ৯০ বছর আগে স্থাপিত হওয়া চিনিকলগুলোর আয়ুস্কাল এখন প্রায় শেষ হয়ে আসছে। এদেশে ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আসা কোন সরকারই চিনিকলগুলোকে আধুনিকায়ন ও ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। প্রথমত, সরকার আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শে চিনি ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের উপর থেকে ক্রমাগতভাবে ভর্তুকী প্রত্যাহার করেছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও অব্যবস্থাপনায় জরাজীর্ণ রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোকে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। সরকার আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মত কুখ্যাত প্রতিষ্ঠানের মুক্ত বাণিজ্য নীতি অনুসরণে চিনি শিল্পকে বেসরকারীকরণ করার লক্ষ্যে তথাকথিত লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ টি চিনিকল বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো সম্পুর্ণভাবে বন্ধের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। দ্বিতীয়ত, সরকারি চিনিকলগুলো উৎপাদিত চিনি বিক্রির আগে কখনোই আখ সরবরাহকারী কৃষকদের পাওনা পরিশোধ করে না। তাই আখ চাষীরা বিক্রীত আখের দাম সময়মতো না পাওয়ায় আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে এবং সরকারি চিনিকলগুলোতে আখ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া সরকার আখ চাষীদেরকে সার, সেচ, কীটনাশকসহ সকল সহায়তা থেকে বঞ্চিত রেখেছে। ফলে সারাবছর মিল চালু রাখতে প্রয়োজনীয় আখ না পাওয়া চিনির উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তৃতীয়ত, সরকার নিজে চিনি আমদানি না করে কতিপয় রক্তচোষা পুঁজিপতিগোষ্ঠীকে দেশের চিনি বাজার ও চিনি শিল্পের নিয়ন্ত্রণ প্রদান করেছে। দেশে ৮৫ শতাংশেরও বেশি চিনি আমদানি করছে দেশের তিন বড় শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা, সিটি ও এস আলম গ্রুপ (বণিকবার্তা, জুন ১৯, ২০২২)। এভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব চিনিকলগুলোকে ধ্বংস করে সরকার ব্যাপকভাবে চিনি সংকট তৈরি করেছে যাতে বিপুল পরিমান আমদানির প্রয়োজন পড়ে এবং রক্তচোষা এই পুঁজিপতিরা ব্যাপকভাবে লাভবান হয় (“1 lakh tonnes of sugar to be imported soon: Bangladesh Bank”: dailystar, 23 oct 2022)।

এমতাবস্থায় চিনিশিল্পের মত দেশীয় শিল্পখাতকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা ও টেকসই শিল্পায়নের সামর্থ্য অর্জনে খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। খিলাফত রাষ্ট্র চিনিশিল্পকে কোন পুঁজিপতিগোষ্ঠীর হাতে তুলে দিবে না এবং বিদেশী রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হতে দেবে না। চিনিশিল্পে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে নতুন চিনিকল ও চিনিশিল্প স্থাপনের উদ্যোগ নিবে এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিবে। আখ উৎপাদনে চাষীদেরকে সার, সেচ, কীটনাশকসহ উন্নত প্রজাতির আখ উৎপাদনে সকল প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। আখ চাষীদেরকে ভর্তুকিসহ প্রয়োজনে বিনামূল্যে সরকারি জমি বরাদ্দ দিবে। সরকার ন্যায্য মূল্যে আখ চাষীদের থেকে আখ ক্রয় করবে ফলে কৃষকরাও আখ উৎপাদনে প্রেরণা খুজে পাবে। ফলশ্রুতিতে একদিকে রাষ্ট্র যেমন চিনি উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে তেমনি চিনির সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে জনগণও ন্যায্য মূল্যে চিনি পাবে। আখ ও চিনি সংশ্লিষ্ট শিল্পায়নের ফলে রাষ্ট্রে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।

মোহাম্মদ সিফাত

 

 

 

“ক্ষুধার যন্ত্রণা ভুলতে’ নেশা করে ছিন্নমূল শিশুরা”
খবরঃ
রাজধানীর পুরান ঢাকায় অন্তত ২ হাজার ছিন্নমূল শিশুর বসবাস। এদের বেশিরভাগই ‘ড্যান্ডি’ নামে একধরনের নেশায় আসক্ত। ‘ড্যান্ডি’ হচ্ছে এক ধরনের আঠা বা গাম; যা জুতা বা সাইকেলের টায়ারে ব্যবহার করা হয়। অল্প খরচে এই গাম কিনে নেশা করা যায় বলে ছিন্নমূল শিশুরা দিনদিন অনেক বেশি ঝুঁকে পড়ছে এতে। পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে ছিন্নমূল শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সহজলভ্য এই মাদক ক্ষুধামন্দা তৈরি করে। এজন্য খাবারের ‘যন্ত্রণা ভুলে থাকতে’ তারা মাদক গ্রহণ করে। মুক্তা (১৩) নামে এক নেশাগ্রস্ত কিশোরী বলে, ‘আমার কাছে টাকা থাকলে আমি এই গাম না খেয়ে ভাত খাইতাম। ৪০ থেকে ৫০ টাকার গাম কিনলে তিন দিন খাইতে পারুম। এই তিন দিন এক বেলা খাইলেও চলে। কিন্তু এই ৫০ টাকা দিয়া কি তিন বেলা ভাত খাওন যাইবো?’ (www.banglatribune.com/others/768234)

মন্তব্যঃ
কিভাবে ব্যবস্থা মানুষকে অপরাধী বানায়; হযরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে একদা নিকট একজন ব্যবসায়ী তার একজন শ্রমিকের বিরুদ্ধে উৎপাদিত পণ্য চুরির অভিযোগ নিয়ে আসে। ওমর শ্রমিকটিকে ডেকে আনেন এবং তদন্ত করে পান যে অভিযোগ সত্য। কিন্তু চুরির কারণ খতিয়ে দেখেন যে, ব্যবসায়ীটি শ্রমিককে যে বেতন দেন তা এতটাই অপ্রতুল যা দিয়ে সে তার খাবার যোগাড়ে ব্যর্থ হয়। তাই সে নিরুপায় হয়ে চুরি করে। সুতরাং, ওমর (রা.) মালিকটিকে ডেকে পাঠান এবং বলেন এরপরে আর যদি এই শ্রমিকটি চুরি করে তবে সে (ব্যবসায়ী) যেন তার (রা.) সাথে অবশ্যই দেখা করেন যাতে তিনি (রা.) চুরির দায়ে অভিযুক্ত শ্রমিকটির বদলে মালিকটির হাত কাটার রায় দিতে পারেন। এভাবে ইসলাম ব্যবস্থাকে ঠিক করে, যাতে ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যক্তির দারিদ্রতা দূর হয়।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অনুসারী বর্তমান রাষ্ট্র দারিদ্রতার জন্ম দেয়। এই অর্থনীতির তত্ত্বমতে, যেহেতু মানুষের অভাব অসীম এবং সম্পদের পরিমাণ সীমিত সেহেতু উৎপাদনই হচ্ছে মূল অর্থনৈতিক সমস্যা। ফলে, উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও বণ্টনের সঠিক প্রক্রিয়া না থাকার কারণে যাদের এই উৎপাদিত পণ্য ক্রয় করার ক্ষমতা তৈরী হয় কেবলমাত্র তারাই এই পণ্য ভোগ করতে সক্ষম হয়। যাদের ক্রয়ক্ষমতা নেই তারা অভুক্তই রয়ে যাবে। ফলে, রেস্টুরেন্টে খাবার সজ্জিত থাকলেও এবং এগুলো বিক্রি না হয়ে নষ্ট হলেও রেস্টুরেন্টের বাইরে যে ছিন্নমূল কিশোরী শিশু মুক্তা অভুক্ত অবস্থায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তার মুখে এই খাবার জুটবে না। একইভাবে ইউরোপ অ্যামেরিকাতে খাদ্য অপচয় হলেও আফ্রিকার দেশসমূহের মানুষজন অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি তাহলে দেখব যে, পৃথিবীতে খাদ্য উৎপাদনের কোন ঘাটতি নেই বরং খাদ্য বণ্টনের সঠিক ব্যবস্থা না থাকাই মূলত এই বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের মূল কারণ। Action Against Hunger এর মতে, “Around the world, more than enough food is produced to feed the global population—but as many as 828 million people still go hungry.” পুঁজিবাদী দেশসমূহের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক কৃষির উপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ (সারের উৎপাদন, মনোক্রপিং, ডলার আয়ের জন্য আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশসমূহকে পশ্চিমা নির্ভর উৎপাদনে বাধ্য করা ইত্যাদি) এবং তাদের লোভের কারণে মূলত পৃথিবীতে খাদ্য সংকট হচ্ছে। ফলে এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যতদিন টিকে থাকবে এবং পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে ততদিন ক্ষুধার জ্বালা মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াবে। ইসলাম ব্যবস্থার মাধ্যমে দারিদ্রতা দূর করে। এলক্ষ্যে ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উৎপাদনকে মূল সমস্যা হিসেবে দেখে না, বরং বন্টন ব্যবস্থার উপর তাগিদ দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন” [সূরা ফুসসিলাতঃ ১০]। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “যে ধন-সম্পদ আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে নিয়ে তাঁর রাসূলকে দিলেন তা আল্লাহর জন্য তাঁর রসূলের জন্য আর রসূলের আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন ও পথিকদের জন্য যাতে তা তোমাদের মধ্যকার সম্পদশালীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।” [সূরাঃ আল-হাশরঃ ০৭]। খিলাফত রাষ্ট্রের এই বণ্টন নির্ভর নীতির কারণে আমরা ঐতিহাসিকভাবে দেখেছি খিলাফত রাষ্ট্রে দারিদ্রতা ও ক্ষুধা ছিল একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার। বরং নিজেদের ভূখন্ডের লোকদের খাবারের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলেও খিলাফত রাষ্ট্রের খাদ্য সহায়তা পাঠানো ছিল সর্বজনবিদিত। সুতরাং একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্র পারবে মুক্তার মত পথশিশুদের খাদ্যাভাব দূর করে তাদেরকে একটি সুস্থ সুন্দর জীবন উপহার দিতে এবং পাশাপাশি বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের মোকাবেলা করতে।

মো. হাফিজুর রহমান