working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 74

 

Weekly

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা

 

৭৪ তম সংখ্যা ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

  • রেইনবো নেশনের কী ব্যাখ্যা দিচ্ছে বিএনপি?”
  • “রাষ্ট্র মেরামতে’ বিএনপির ২৭ দফার রূপরেখা”
  • সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার নির্বাচনমুখী বাজেট
  • “পুলিশের উদ্যোগ: কেন্দ্রীয় সফটওয়্যার ক্রাইম ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, এক ক্লিকেই মামলার সব তথ্য”
  • উপহার দিয়ে বিএসএফকে দিবসের শুভেচ্ছা জানালো বিজিবি

 

 

 

রেইনবো নেশনের কী ব্যাখ্যা দিচ্ছে বিএনপি?

খবরঃ

আগামীতে ক্ষমতায়  গেলে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত করবে বলে বিএনপির আনুষ্ঠানিক রূপরেখা ঘোষণার পর এনিয়ে চলছে আলোচনা। ২৭ দফার রূপোরেখায় রয়েছে বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে রেইনবো নেশন প্রতিষ্ঠার কথা। (www.bbc.com/bengali/articles/cj590v37e9yo)

মন্তব্যঃ

গত ১৯ ডিসেম্বর বিএনপি একটি আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখানামে ২৭ দফা প্রস্তাবণা প্রদান করে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সরকারবিরোধী বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এতে অংশগ্রহণ করে অথবা যারা আসেনি তার প্রায় সকলেই এই ব্লুপ্রিন্টকে স্বাগত জানিয়েছেরুপরেখাটির মূল আদর্শিক প্রকাশঘটে এর দ্বিতীয় দফায় দফাটিতে মূলত একটি ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে। ‘রেইনবো নেশন’ শব্দটি একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে প্রথম ১৯৯৪ সালে দক্ষিন আফ্রিকার ডেসমন্ড টুটু ব্যবহার করেছিলেন। অবশ্য তার বহু আগেই ১৯৭৮ সালে ‘রেইনবো ফ্লাগ’ আন্দোলনের সূচনা হয় স্যান ফ্রান্সিসকোতে যা বিশ্বজুড়ে সমকামীতাকে জনপ্রিয় ও বৈধ করার জন্য কাজ করছে। রেইনবো শব্দটি বিভিন্ন মতের প্রতি সহনশীলতা প্রকাশে ব্যবহৃত হলেও এটি মূলত সমকামী আন্দোলনের রুপক অর্থে অধিক জনপ্রিয়। ১৯৯৪ সাল পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকায় মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাগ্যের বিশেষ পরিবর্তন না হলেও এই রেইনবো উদারনীতির উপর ভর করে এর সামাজিক ব্যবস্থার আবহমান মূল্যবোধগুলো এর মধ্যেই ধংস হয়েছে। আর বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ অথচ বিএনপি এখানে সমকামীতার মত উদারনীতি বাস্তবায়ন করার জন্য দেশকে খুলে দিতে চায়! তা কেন এবং এর প্রভাব কি হতে পারে?

 স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিদ্বন্দীতারত রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে দেশের জনগণকে মোবিলাইজ করে বিভিন্ন মুখরোচক কথা বলে কিন্তু তাদের মূল লক্ষ্য থাকে সরকার গঠনের জন্য বিদেশি শক্তিগুলোর সাথে একধরনের সমঝোতা করা। আর সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এসব বিদেশী শক্তির প্রভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়ে গেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে হাসিনা সরকার নির্বাচনে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় অথচ সরকার গঠন করে বলে তাদের সরকার হচ্ছে সমঝোতার সরকার! পরবর্তীতে এটা স্পস্ট হয় যে সেই সমঝোতা হচ্ছে আসলে আমেরিকা ও ভারতের সমঝোতা। বর্তমান সময়ে  সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী গোষ্ঠীর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও কর্মকান্ডের সাথে সাথে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দূতাবাস ও বিদেশি মিশনের দৌড়াদৌড়িতে এটি আবার স্পষ্ট হয় যে এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল দুটি গোষ্ঠী বিদেশি শক্তির সাথে সমঝোতায় একে অন্যকে পিছনে ফেলতে চাচ্ছে।

এই সমঝোতার প্রতিযোগিতার মধ্যেই বিএনপির এই ‘রেইনবো নেশন’ গঠনের প্রস্তাবনা। বিএনপি নতুন একটি সামাজিক আন্দোলনের সূচনা করতে চায় যা রাজনৈতিক ডাইভারসিটির নাম করে মূলত আমেরিকা, বৃটেন, ভারতসহ বিদেশিদের ডাইভারসিফাইড ভু-রাজনৈতিক চাহিদা পূরণের একটি চমকপ্রদ প্রস্তাবনা। এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে বিএনপি এবার গোলামীর চাকরির খাজনা-নজরানা প্রদানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগকে পেছনে ফেলতে চায়!

২০০৮ এর হাসিনা সরকারের জন্ম হয়েছিল যে সমঝোতার ভিত্তিতে তার মূলে ছিল আমেরিকার ‘War on Terror’ বা ‘ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ পলিসি। এই জন্যই হাসিনা সরকার ২০০৮ সাল থেকে জঙ্গী দমনের নামে একে একে ইসলামের রাজনীতিবীদ ও দাওয়াকারীদের দমনপীড়ন করেছে। একই প্রচেষ্টায় এখনও হাসিনা সরকার এমনকি হিযবুত তাহরীর-এর মত নিয়মতান্ত্রিক বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনৈতিক দল যারা জনমত পরিবর্তনের মাধ্যমে নব্যুয়তের আদলে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধেও দমনপীড়ন চালাচ্ছে। আর বিএনপির এই প্রস্তাব আমেরিকার নেতৃত্বের বিশ্বশক্তিগুলোকে আওয়ামী লীগের থেকেও বেশি সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে। এই জন্যই বিএনপি ‘রেইনবো’ শব্দটির উপর জোর দিয়ে পশ্চিমাদের চেতনা বিশ্বাস লিবারালিজম বা উদারনীতির জন্য দেশকে খুলে দিতে চায়। এসবের ফল শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে মানবরচিত ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে আদর্শিকভাবে ধারণ ও বাস্তবায়নেই সীমাবদ্ধ থাকবেনা, এটি সমাজে সমকামীতার মত ভয়ংকর অপরাধকে ছড়িয়ে দিতে পৃষ্ঠপোষকতা দিবে।

এই আওয়ামী-বিএনপি গোষ্ঠী আল্লাহ’র পরিবর্তে ইসলামের শত্রু আমেরিকা-বৃটেন-ভারতের মত এই বিদেশিদের খুশি করার প্রতিযোগিতায় নিজেদের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই বিষয়ে বলেন, “তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেদের রীতি-নীতির অনুসরণ করবে। যেমন এক পালক অন্য পালকের সমান হয়। এমনকি তারা যদি দব্ব (গুইসাঁপ সদৃশ প্রাণী) গর্তে ঢুকে, তাহলে তোমরাও প্রবেশ করবে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কি ইয়াহূদী ও নাসারা? তিনি বললেন, তারা ব্যতীত আর কারা?” (বুখারী ও মুসলিম)। অতঃপর রাসুলুল্লাহ(সাঃ)-এর ভবিষ্যৎ বানী থেকে সতর্ক হয়ে আমাদের ইহকাল ও পরকালের সুরক্ষায় কাফেরদের এই অন্ধ অনুসরণকারীদের শুধু পরিত্যাগ করলেই চলবে না, এদের এসব ধ্বংসাত্মক রুপরেখার পরিবর্তে সত্যিকার মুক্তির রুপরেখা খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে হিযবুত তাহরীরের মত নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, আর তোমাদের মধ্য এমন একটি দল থাকতে হবে, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম (সুরা আলি-ইমরান ১০৪)।

মোহাম্মদ তালহা হোসে

 

 

 

“রাষ্ট্র মেরামতে’ বিএনপির ২৭ দফার রূপরেখা”

খবরঃ

সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ তুলে ধরল বিএনপি। আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ রূপরেখা তুলে ধরা হয়।… বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়া এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়িয়া তুলিয়াছিল, সেই রাষ্ট্রের মালিকানা আজ তাহাদের হাতে নাই। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকাঠামোকে ভাঙ্গিয়া চুরমার করিয়া ফেলিয়াছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করিতে হইবে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরাইয়া দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হইবে…। (https://www.prothomalo.com/politics/h8h4ukye6b)

মন্তব্যঃ

যখন রাষ্ট্রকাঠামোই (অর্থাৎ গণতান্ত্রীক ব্যবস্থা) সমস্যার মূল তখন এটি মেরামত ও পুনর্গঠন করার দাবী বা আন্দোলন সমস্যাকে জিইয়ে রাখার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। বিএনপি সরকার পরিবর্তন চাইলেও কখনোই বর্তমান ‘রাষ্ট্রকাঠামোর’ সমূলে পরিবর্তন চাইবে না, কারণ প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র হচ্ছে ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী দ্বারা, ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর জন্য এবং ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর শাসন। বর্তমান আওয়ামী সরকারের সংসদের ৭০ ভাগেরও বেশী হচ্ছে ব্যবসায়ী, যেটা বিএনপি সরকারের সময়েও ছিল এবং ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতায় আসলেও তা হবে। এখানে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সাংসদদের হাতে থাকায়, স্বার্থান্বেষী পুঁজিপতিগোষ্ঠী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ফলে সরকারে তাদের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদ ও পুঁজিপতিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই শাসকগোষ্ঠী দেশ ও জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে নিজেদের স্বার্থে সমস্ত আইন প্রণয়ন করে। জনগণ যখন এসব শোষনমূলক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামে তখন তাদের মুখ বন্ধ করতে দমনপীড়নসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসদমন আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত বিভিন্ন দমনমূলক আইন প্রণয়ন করে, আইন ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা, গুম-খুনের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী সরকার হিসেবে আবির্ভূত হয়। যেমন বিদ্যুৎখাতের কুইক রেন্টাল প্রকল্প এবং ব্যাংকিংখাতের লুটপাট যা প্রকৃষ্ট উদাহরণ। উভয়ক্ষেত্রেই কতিপয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষায় ও তাদেরকে দায়মুক্তি প্রদানে সংসদকে ব্যবহার করা হয়েছে। মুলতঃ কর্তৃত্ববাদ ও শোষনমূলক নীতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটিকে বহাল রেখে কখনোই কর্তৃত্ববাদ ও শোষন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

যেসব দেশ নিজেদেরকে গণতন্ত্রের ‘রোল মডেল’ হিসেবে উপস্থাপন করে, তাদের দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোও মূলত সেখানকার রাজনীতিবিদ ও পুঁজিপতিদের হাতের মুঠোয় এবং অর্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক নেতৃত্বস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রাক্তন ফার্স্ট লেডী মিশেল ওবামা একবার বলেছিলেন যে, “আপনি যদি আমেরিকান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে চান, আপনাকে একটাই কাজ করতে হবে, একটা মোটা অংকের চেক লিখতে হবে…। যত বড় ও মোটা চেক আপনি লিখতে পারেন…”। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে মার্কিন নির্বাচনী তহবিলের ৪০% টাকা প্রদান করে মাত্র ০.০১% লোক। এবং স্বাভাবিকভাবে এই ক্ষুদ্রগোষ্ঠী আমেরিকার সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিসমূহ প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার করে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোটারদের কোন ভূমিকা থাকে না। এভাবেই আমেরিকার ধনিক শ্রেণী ও রাজনীতিবিদরা আমেরিকার জনগণের মতের বিরুদ্ধে ইরাকে ও আফগানিস্তানে অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল যেন তাদের সমরাস্ত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ হাসিল হয় এবং দশকের পর দশক ধরে জনগণকে এই যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করতে হয়েছিল।

অন্যদিকে, ইসলামী আদর্শে রাজনীতির অর্থ হল শুধুমাত্র জনগণের দেখাশোনা করা নয়, বরং তা হলো আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একটি মহান ‘ইবাদত’। এখানে আইন-কানুন আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত, শাসকদের হাতে আইন প্রণয়নের কোন ক্ষমতা নাই। এখানে রাজনীতিবিদরা নবীদের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হন এবং তাদের কাজ নবীদের মহান কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। আবু হাজিমের বরাত দিয়ে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, বনী ইসরাইলের রাজনীতি করতেন নবীগণ যখনই এক নবী মৃত্যুবরণ করতেন তখন তার স্থলে অন্য নবী স্থলাভিষিক্ত হতেন, কিন্তু আমার পরে আর কোন নবী নেই। শীঘ্রই অনেক সংখ্যক খলীফা আসবেন…”। তাইতো এই দায়িত্ব পালনে নিয়োগ পেয়ে খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজ (রহ.) মূর্ছা গিয়েছিলেন এবং ওমর (রা.) রাতে ঘুমানোর বদলে জনপদসমূহে টহল দিয়ে বেড়াতেন। অধিকন্তু, এই ব্যবস্থায় খলিফা (ইসলামী ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান) কেবল বিচার দিনের প্রভুর কাছে দায়বদ্ধ নয়, বরং তাকে জনগণের নিকট দায়বদ্ধ রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে খলিফাকে জবাবদিহিতা করার জন্য ‘মজলিস আল উম্মাহ্‌’ নামক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ‘মাযালিম আদালত’ রয়েছে, যা খলিফাকেও পর্যন্ত বিচারের আওতায় আনতে এক মুহূর্ত দ্বিধা করে না। তাই রাষ্ট্র মেরামতে এই কলুষিত ‘গণতন্ত্র’কে সংস্কারের ভুল পথে না হেঁটে বরং এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অপসারণ করে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা প্রদত্ত খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জরুরী।

মো: জহিরুল ইসলাম

 

 

 

সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার নির্বাচনমুখী বাজেট

খবরঃ

বৈশ্বিক সংকট, অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করেছে অর্থ বিভাগ। এটি চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। নির্বাচন সামনে রেখে নতুন বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ থাকছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থনৈতিক নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বাজেটের ঘাটতি হবে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। (www.jugantor.com/todays-paper/first-page/627001/সাড়েলাখকোটিটাকারনির্বাচনমুখীবাজেট)

মন্তব্যঃ

১৯২৪ সালে মুসলিম উম্মাহ্‌’র সম্মান-প্রতিপত্তি, শৌর্য-বীর্য ও আশা-ভরসার প্রতীক খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসকারী বৃটিশরা উম্মাহকে আরো বিভক্ত ও দুর্বল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে। এরপর থেকে বৃটেন-আমেরিকার যতগুলো দালাল বাংলাদেশ নামক এই ভূখন্ডটির শাসক হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই রাষ্ট্র পরিচালনার নামে জনগণের আয় ও সম্পদ লুটেপুটে খেয়েছে। জনগণের রক্ত পানি করা পরিশ্রমের অর্থ লুটেপুটে খাওয়ার আয়োজনের পোশাকী ও ছদ্মনাম নাম হল ‘জাতীয় বাজেট’, যার মাধ্যমে সরকার কর্তৃক আগামী এক বছরের শোষনমূলক ও অবৈধ ‘বখরা’ (আয়কর, ভ্যাট, আমদান/রফতানি শুল্ক ও অন্যান্য সকল প্রকার কর) আদায়কে সরকারপ্রধান কলমের এক খোঁচায় বৈধতা প্রদান করেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে আরো বলেন, “তোমাদের জীবন, সম্পদ ও সম্মান একে অপরের নিকট তেমন পবিত্র ও অলঙ্ঘনীয় যেমন পবিত্র ও অলঙ্ঘনীয় আজকের এই দিন (আরাফাহ) আজকের এই মাস (বুখারী ও মুসলিম)। অর্থাৎ, কোন শাসকই তার নির্বাহী আদেশ বলে কোন কর বা শুল্ককে বৈধ ঘোষণা করে জনগণকে তাদের সম্পদের কোন অংশ প্রদানে বাধ্য করতে পারবে না। জনগণ শুধুমাত্র ততটুকু সম্পদ শাসককে দিতে বাধ্য যতটুকু আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছ থেকে আয়কর, ভ্যাট, আমদানি/রফতানি শুল্ক ও অন্যান্য সকল প্রকার কর আদায় করা ষ্পষ্ট হারাম হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। উবাদা বিন আমির বলেন, আমি নিজে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, “মাকস্ (কর/শুল্ক) আদায়কারী কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না (আদ-দরীমী, আহমাদ ও আবু উবায়েদ থেকে বর্ণীত)। যারা রাষ্ট্রের তহবিল নিয়ে চিন্তিত তাদের উচিত রাষ্ট্রের আয় ও ব্যয় নির্বাহ করার জন্য আল্লাহ্‌ প্রদত্ত দিকনির্দেশনাগুলো অনুসন্ধান করা তাহলে তাদের অনিশ্চয়তা ও মনোকষ্ট উভয়ই দূর হবে।

দেশের অর্থনীতি নিয়ে নানান শঙ্কা ও ভূরাজনৈতিক সমীকরণে সম্ভাব্য নতুন দর-কষাকষির আবহে সরকার আগেভাগেই তার নির্বাচনী বুলি (স্মার্ট বাংলাদেশ) ও আগামী বাজেট নিয়ে বাজারে আলোচনা ছেড়েছে। সরকারি দল জনগণকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নামক মিথ্যা প্রতারণাপূর্ণ আশা দেখিয়ে তা বাস্তবায়নে সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতি বাজেটেই উন্নয়ন ব্যয়ে বরাদ্দ করা সমুদয় অর্থ সরকারী দলের সুবিধাভোগী ও লাঠিয়ালরা নয়-ছয় করে এবং প্রশাসন পরিচালনার জন্য বরাদ্ধ করা অর্থের একটি বড় অংশ সরকারী কর্মকর্তারা পর্দা ও বিছানার চাদর ক্রয়ে, অফিসের শোভা বর্ধনে এবং পুকুর কাটা ও সবজি চাষ শিখতে বিদেশ ভ্রমনের মত বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করে। যদিও জনগণ এর সবকিছুই জানে তারপরও নির্লজ্জ রাজনীতিবীদরা জনগণকে বোকা ভেবে বারবার একই কৌশল অবলম্বন করে জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছে। অপরদিকে বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের যে রূপরেখা সামনে এনেছে তাদের ভাষ্যমতে তা হল ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ প্রতিষ্ঠার জন্যে, অর্থাৎ তারা ক্ষমতার ভাগ চায় যেন তারাও জনগণের কষ্টার্জিত আয় লুটপাটের সুবিধাভোগী হতে পারে। সুতরাং এই আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীর হাতে এদেশের মুসলিমদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না, বরং এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীরাই জনগণের দুর্ভোগের মূল কারণ।

নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বাণিজ্যের চলতি হিসাবের ঘাটতি, ব্যাংক লুট, বিদেশে অর্থ পাচার ও সামনের দিনগুলোতে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের ধাক্কা সবমিলিয়ে জনগণের সামনে যে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে তা বর্তমান শাসকগোষ্ঠীকে বহাল রেখে কোন জাদুমন্ত্রের ‘বাজেট’ দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন নিষ্ঠাবান ও জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং স্বনির্ভরতা অর্জন কেন্দ্রীক দূরদর্শী ও সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। এই দুই এর সমন্বয় কেবলমাত্র ন্যায়নিষ্ঠ দল হিযবুত তাহ্রীর-এর মধ্যেই রয়েছে।

রিসাত আহমেদ

 

 

 

“পুলিশের উদ্যোগ: কেন্দ্রীয় সফটওয়্যার ক্রাইম ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, এক ক্লিকেই মামলার সব তথ্য”

খবরঃ

কোনো আসামির বিরুদ্ধে দেশের আর কোথাও কোনো মামলা আছে কি না, কোনো মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি বা সাজার রায় হয়েছে কি না—এসব তথ্য এখন এক ক্লিকেই জানতে পারছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা। ফৌজদারি মামলাসংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাপনায় পুলিশের কেন্দ্রীয় সফটওয়্যার ক্রাইম ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিডিএমএস) সবকিছু সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সারা দেশে পুলিশের সব ইউনিট এই সিস্টেমে মামলাসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে। এই তথ্যভান্ডারকে আরও কার্যকর করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ঢাকা মহানগরে খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, চুরি, প্রতারণা, জালিয়াতিসহ সব ধরনের মামলার তথ্য এতে সংরক্ষিত হচ্ছে। সেখানে ঢুকে যেকোনো অপরাধীর বিষয়ে যেকোনো তথ্য জানা সহজ হচ্ছে। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/6nixz16vtr)
 মন্তব্যঃ

দেশে বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা আর বিচারাধীন মামলার জট যখন মহাজটে পরিণত হয়েছে তখন এসব বিচারাধীন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও বিচার কার্যকর করায় সরকারের কোন মাথাব্যাথা না থাকলেও মামলা সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণে ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরিতে সরকার ব্যাপক আগ্রগামী! দেশের সুপ্রিম কোর্ট ও বিভিন্ন বিচারিক আদালতে বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন যার মধ্যে কোন কোন মামলা ৩৩ বছরেরও বেশি সময় অতিক্রম করেছে। দেশে বিচারাধীন মামলার বেশিরভাগের বাদী হচ্ছে সরকার ও পুলিশ যেগুলোর মধ্যে ৫৫% এর বেশি মামলায় আসামীরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়। উদাহরণস্বরুপঃ দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৭% মামলার বাদীই হচ্ছে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা এবং এই আইনে হওয়া মামলাগুলোর ৯৭% ক্ষেত্রে আসামীরা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে (https://www.prothomalo.com/bangladesh/crime/৯৭-ভাগ-মামলাই-টেকেনি)। তার মানে এটা পরিস্কার যে, বেশিরভাগ মামলাগুলোই ভূয়া এবং অভিযুক্ত আসামীদের বেশিরভাগই নির্দোষ ও যুলুমের শিকার। একদিকে সরকারের মদদপুষ্ট মাফিয়ারা মৃত্যুদন্ডের মত সর্বোচ্চ শাস্তি থেকে রেহাই পায় অন্যদিকে সমাজের দুর্বল ও নিরপরাধ ব্যক্তিরা মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে বিনা দোষে বছরের পর বছর সাজা খাটে। সেই সাথে বিচারপ্রার্থীদের শারীরীক, মানসিক, রাজনৈতিক ও আর্থিক হয়রানি তো আছেই। অথচ সরকার দেশে বিচারাধীন মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে নিরপরাধ মানুষকে যুলুম থেকে স্বস্তি দেয়ার পরিবর্তে তাদের যাবতীয় তথ্যাদি ডিজিটাল ডাটাবেজে সংযুক্ত করে হয়রানি ও যুলুমের নতুন উপায় খুঁজে বের করেছে।

কার্যত, সরকারের এই নতুন উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের উপর নজরদারি ও গুপ্তচরবৃত্তি চালু রেখে তার যুলুমের শাসনকে দীর্ঘায়িত করা যাকে সরকারের নিপীড়ন নীতি থেকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। সরকার ইতিপূর্বে ভাড়াটিয়া তথ্য নিবন্ধন, সিম কার্ডের বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশন ও জনগণের মোবাইল ফোনের উপর নজরদারি বাড়ানোর লক্ষ্যে ভ্যাহিকেল মাউন্টেড মোবাইল ইন্টারসেপ্টর (Vehicle Mounted Mobile Interceptor) এমনকি OIVS( On-Site Identification & Verification System) এর মত কুখ্যাত প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে জনগণের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করেছে। বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড, গুম, খুন এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মত কালো আইন প্রয়োগ করে ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে। এতদসত্ত্বেও সরকারের যুলুমের শাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ যতই তীব্র হচ্ছে সরকার জনরোষকে দমনের লক্ষ্যে ততই নিত্য নতুন দমন নিপীড়নের উপায় উপকরণ ব্যবহার করে অগ্রসর হচ্ছে। ডিএমপি কর্তৃক ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট ডাটাবেজ তৈরি ও তার ব্যবহার সরকারের দমন নিপীড়নের নতুন সংযোজন যার মাধ্যমে সরকার জনগণের উপর তার জুলুমের লৌহ কব্জা আরও শক্তিশালী করবে যাতে সরকারের দুঃশাসন ও যুলুমের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ না তুলতে পারে।

অন্যদিকে খিলাফত রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ চুরি, ছিনতাই, লুটপাট, ডাকাতি, আত্মসাৎ ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পদ হরণ কিংবা, রাতের বেলা টহলের মাধ্যমে চোর-ডাকাত, অপরাধী ও দুর্বৃত্ত দমন করা, জুলুম-নির্যাতন ও হতাহত করা কিংবা মিথ্যা অপবাদ, চরিত্র হনন বা ধর্ষণের মাধ্যমে সম্মানহানি করা ইত্যাদি অপরাধসমূহ নিয়মিত টহল রক্ষী বা পাহারাদার মোতায়েন করে নিয়ন্ত্রণ করবে। এক্ষেত্রে Mass Surveillance অথবা পুলিশি রাষ্ট্র কায়েমের কোন সুযোগ নেই। নিখুত তথ্য ব্যতীত কারো বিরুদ্ধে নজরদারি করা কিংবা সন্দেহমূলকভাবে হলেও কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান (গোয়েন্দাগিরি) করো না” (সুরা হুজুরাতঃ ১২)। কারো বিরুদ্ধে মামলার জন্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগ লাগবে। অপরাধ প্রমাণের পূর্বে কোন ব্যক্তিকে অনির্দিষ্ট অথবা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জেলে রাখা কিংবা শাস্তিও দেয়া যাবে না। কুর‘আন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ১৩ তে বলা হয়েছে, “প্রতিটি ব্যক্তি নিরাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অপরাধ প্রমাণিত হয়। আদালতের রায় ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া যাবে না। কাউকে নির্যাতন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ; এবং যে নির্যাতন করবে তাকে শাস্তি পেতে হবে।”  বিচারিক রায় কার্যকর করার প্রমাণস্বরুপ ইসলামী শারীয়াহ্‌ ৪ টি (স্বীকারোক্তি, শপথ, সাক্ষ্য, লিখিত বিল/নথি) বিষয়কে নির্ধারিত করেছে যার ফলে খিলাফত রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থায় বিচারের রায় হবে দ্রুত ও নির্ভুল যেখানে নিরপরাধ ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে শাস্তি প্রদানের সুযোগ নেই। বিচারের রায় প্রদান করার পর একটি নির্দিষ্ট বিচারের ক্ষেত্রে একের অধিক বিচারকের রায় প্রদানের ক্ষমতা নেই এবং আসামীর পক্ষেও আর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কোন সুযোগ নাই। এক আদালত থেকে আরেক আদলতে মামলা হস্তান্তর কিংবা রায়ের উপর স্থগিতার্দেশ ইত্যাদি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম প্রলম্বিতও করা যাবে না।

মোহাম্মদ সিফাত

 

 

 

উপহার দিয়ে বিএসএফকে দিবসের শুভেচ্ছা জানালো বিজিবি

খবরঃ

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি দিবস উপলক্ষে উপহার স্বরূপ মিষ্টি দিয়ে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স-বিএসএফকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বিজিবি। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দিনাজপুরে হিলি চেকপোস্টের জিরো পয়েন্টে এই দুই বাহিনীর মধ্যে এ শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। বিজিবির হিলি সিপি ক্যাম্পের সুবেদার মাহাবুবুর রহমান জানান, জয়পুরহাট ২০ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের পক্ষ থেকে ভারতের পতিরাম বিএসএফ ব্যাটালিয়ন অধিনায়কসহ কয়েকটি ক্যাম্পে ছয় প্যাকেট মিষ্টি পাঠানো হয়েছে। এদিকে, জয়পুরহাট ২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আজ বিজিবির ২২৭তম দিবস। এই উপলক্ষে বিএসএফ অধিনায়কসহ ক্যাম্প কমান্ডারদের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। সীমান্তে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রেখে বিজিবি ও বিএসএফ দায়িত্ব পালন করছে। আমরা দুই দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসবগুলোতে একে অপরকে মিষ্টি ও উপহারের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাই। (https://www.ittefaq.com.bd/625008)

মন্তব্যঃ

যেখানে প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের লাশ পড়ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে সেখানে কিভাবে ‘সীমান্তে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি’ বজায় রাখার জন্য মিষ্টি বিতরণ সম্ভব! এর পাশাপাশি এই ভারতই পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার নীলনকশা তৈরী করেছিল। উপরন্তু মাঝে মাঝেই বিএসএফ-এর জোয়ানরা বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়ে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলছে। এমতাবস্থায় যাদের দায়িত্ব সীমান্তে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা তারা কিভাবে শত্রুরাষ্ট্রের সীমান্ত বাহিনীকে মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়! মূলত এর জন্যে দায়ী হাসিনা সরকারের মত পুতুল সরকারগুলো যারা নিজের গদি ঠিক রাখতে নিজেদের একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রকাশের নজির হিসেবে দেশের বাহিনীগুলোকে দিয়ে এমন ঘৃণ্য নতজানু কর্মকাণ্ডগুলো করিয়ে থাকে।

ভারত একদিকে যেমন সীমান্তে সাধারণ মানুষদেরকে হত্যা করছে অপরদিকে তারা কুর’আন পুড়িয়ে ফেলা ও রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-কে অপমান করার মত ধৃষ্টতাও দেখাচ্ছে। মূলত মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের শত্রুতা চিরন্তন। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, আপনি সব মানুষের মধ্যে ইহুদী মুশরিকদেরকে ঈমানদারদের অধিক শত্রু হিসেবে পাবেন (সূরা আল-মা‘য়িদা: ৮২)। ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে হাসিনা সরকার ভারতের হাতে বাংলাদেশের অনেক কৌশলগত সম্পদ তুলে দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করে এদেশের সার্বভৌমত্বকেও ভারতের কাছে বিকিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার জন্য মুশরিকদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার পাশাপাশি হাসিনা ইসলাম-প্রিয় মুসলিম অফিসারদেরকে বাধ্য করছে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এবং তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর স্পষ্ট নির্দেশনাকে অমান্য করতে, যেখানে আল্লাহ্‌ বলেন: “এবং কিছুতেই আল্লাহ্‌ মুসলিমদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বের পথ মেনে নিবেন না” (সুরা নিসা: ১৪১) এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, মুশরিকদের আগুন থেকে আলোর সন্ধান করো না সীমান্তে রাখি বন্ধন কিংবা দিবসে মিষ্টি বিনিময়ের মত অনুষ্ঠানগুলো এই উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে যাতে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী তার আসল পরিচয় ভূলে গিয়ে ভারতের অনুগত বাহিনীতে পরিণত হয় এবং আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র গঠন ও এর পরবর্তী নিরাপত্তা বাধাগ্রস্থ হয়।

হাসিনা সরকারের মত দালাল শাসকরাই মূলত কাফির-মুশরিক শত্রু রাষ্ট্রসমূহের দাস হিসেবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। ফলে বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনীসমূহ যাতে কাফিরদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ না করে সেজন্যে বিভিন্ন রকমের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এর একটিই মূলত এই মিষ্টি বিতরণ ও সম্প্রীতি বিনির্মানের প্রচেষ্টা। এই বাস্তবতায় সমাধান শুধুমাত্র ইসলামের ভিত্তিতে গড়ে উঠা খিলাফত ব্যবস্থাতে পাওয়া যাবে যেখানে এমন শাসক ও নেতা তৈরি হবে যারা ক্ষমতায় আসতে কখনোই কাফির-মুশরিকদের কাছে করুণা প্রার্থী হবেন না। খিলাফত রাষ্ট্র এমন এক সেনাবাহিনী তৈরী করবে যারা শত্রু রাষ্ট্রের সাথে মিষ্টি আর শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখবে না। বরং সেসময় তারা নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখবে কিভাবে শত্রু রাষ্ট্রের সীমান্ত ভেদ করে খিলাফতের সীমানা বর্ধিত করা যায় এবং নির্যাতিত মুসলিম-অমুসলিমদেরকে কুফর পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নির্যাতন থেকে রক্ষা করা যায়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: এবং তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা শেষ হয়ে যায় এবং [যতক্ষণ না] দ্বীন সামগ্রিকভাবে আল্লাহ্’র জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।” [আল-আনফাল: ৩৯]

মো. হাফিজুর রহমান