working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 55

 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৫৫ তম সংখ্যা । ৫ জুন, ২০২২

এই সংখ্যায় থাকছে:

“ভরা মৌসুমেও অস্থির চালের বাজার”

“ক্রাশ অভিযানে ৮৮২ অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ”

“পছন্দমতো পোশাক’ পরে তরুণী হেনস্থার প্রতিবাদ”

“ঢাবিতে ফের ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষ”

“হজের খরচ আরো ৫৯ হাজার টাকা বাড়লো”

“পুলিশ হয়ে গুমের শিকার বাবাকে খুঁজতে চায় সন্তান”

“৩ বেলার বদলে এখন দুবেলা খাচ্ছি’

“বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ”

“বিদেশ সফর বন্ধে হঠাৎ কেন হার্ডলাইনে সরকার”

”ডলারের দাম বেড়ে ১০২”

“চিরকুমারী: যে নারীরা কোন দিন বিয়ে করেননি, কেমন তাদের জীবন” 

 

“ভরা মৌসুমেও অস্থির চালের বাজার”

খবরঃ

    চলতি মাসের শুরুতে একজন ক্রেতা যে দামে চাল কিনেছেন, মাসের শেষে এসে চাল কিনতে গেলে তাকে বড় ধাক্কাই খেতে হবে। কারণ প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সরু চালের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দাম ৩ দশমিক ৯২ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।… (https://www.jagonews24.com/economy/news/765967

মন্তব্যঃ

    অদ্ভুত এক দেশে বাস করছি আমরা। এখানে রাতারাতি চালের বাজার, তেলের বাজার, ডলারের বাজার সব অস্থির হয়ে যায়। কেউ এর দায়-দায়িত্ব নিচ্ছে না। শাসকগোষ্ঠী চালকল মালিকদের দোষারোপ করছে, তারা বলছে কৃষকের দোষ কৃষক ধানের দাম বাড়িয়েছে, কৃষক বলছে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। (দেখুনঃ “দাম কম হওয়ার ধানক্ষেতে কৃষকের আগুন!” দৈনিক যুগান্তর, ১৩ মে ২০১৯) এই চক্রের মধ্যে পড়ে বেচারা জনগণের বেহাল দশা। তাদের ক্ষুধার পেট। ‘ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র খাব’ বলে শাসাচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী তাতে ভীষণ বিরক্ত, আবার ভয় পায় ক্ষুধার্তরা আবার রাজপথে নেমে পড়বে না তো! উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসব ছেলে ভুলানো রাজনৈতিক বয়ানে কতই আর মানানো যায়। ক্ষুধার্তরা খ্যাপাটে হয় তাই মজুতদার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানের তামাশা দেখিয়ে তাদেরকে শান্ত রাখার চেষ্টা। নইলে, মজুতদারীতো পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় হরহামেশাই হচ্ছে। পুঁজিবাদী অর্থনীতির মূলভিত্তি ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা ও মুনাফার সর্বাধিকরণ। আড়তদার তো চালের মজুত আজ নতুন করছে না। সরকারের ছায়াতলে তারা দীর্ঘদিন যাবত মজুতদারি ব্যবসা করে আসছে। আজ অভিযান পরিচালনার প্রয়োজন পড়ল কেন? যদি কোন গণরোষ দানাবাধে! আগেভাগে একটা দায়মুক্তি নিয়ে রাখছে সরকার। ভাবটা এমন যে, ‘দোষতো আমাদের না সবদোষ ঐ ব্যবসায়ীদের’। এটা দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল, কারণ দায়িত্বশীল শাসকের আচরণ এমন হয় না। আর যদি বিষয়টি এমন হয় যে তারা তাদের ভারতীয় বন্ধুদের তুষ্ট রাখতে ভরা মৌসুমে চাল আমদানির পায়তারা করছে, তাহলেতো কৃষকদের সাথে সাথে ব্যবসায়ীদেরও মাথায় হাত। (দেখুনঃ “ভারতীয় চালে সর্বনাশ সিন্ডিকেটের পকেটে লাভের টাকা”, দৈনিক ইনকিলাব, ২৯ জানুয়ারি ২০২১ )। অদ্ভুত শোনালেও প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী শাসকদের কাছে কৃষক কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কেউ কোন গুরুত্বই রাখে না। তারা ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক নয়, ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক হল কতিপয় বৃহৎ পুঁজিপতি এবং শাসকগোষ্ঠীর বিদেশী প্রভুরা।

    খাদ্যশস্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা প্রদান করতে হবে কৃষকদের। আমাদের উর্বর জমি আছে, আমাদের কৃষকরা পরিশ্রমী তাহলে আমাদের জনগণকে কেন দুবেলা ভাতের জন্য এত বেগ পেতে হয়? কারণ আমাদের সেই দায়িত্বশীল শাসক নেই, যিনি সমস্যার মূলে গিয়ে এর সমাধান খুঁজে বের করবেন। আমাদের কৃষকদের বাঁচাতে হবে, ব্যবসায়ীদেরও বাঁচাতে হবে আবার খাদ্যশস্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। একমাত্র খিলাফত ব্যবস্থাই এরকম দায়িত্বশীল শাসক তৈরি করতে পারে। কুর‘আন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৫ অনুযায়ী “রাষ্ট্রের অবশ্যই প্রতিটি ব্যক্তির সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের সামগ্রিক নিশ্চয়তা দিতে হবে…”। অর্থাৎ খলিফা রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণে সংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ। জনগণের প্রতি জবাবদিহিতার পাশাপাশি আল্লাহ্‌র কাছে জবাবদিহিতার ভয় খলিফাকে একজন দায়িত্বশীল শাসক হতে বাধ্য করবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা যাকে জনগণের দায়িত্ব দিয়েছেন কিন্তু খিয়ানাতকারীরূপে যদি তার মৃত্যু হয় তবে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন”। 

    –    কামাল আবু যায়িদ 

 

 “ক্রাশ অভিযানে ৮৮২ অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ”

খবরঃ

    সারাদেশের অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয়ার পর প্রথম দুদিনের অভিযানে ৮৮২টি অনিবন্ধিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মনিরুজ্জামান বলেন যেসব স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠান একেবারেই কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যসেবার মান আরও ভালো হবে। (www.dhakatimes24.com/2022/05/29/263901/ক্রাশ-অভিযানে-৮৮২-অবৈধ-স্বাস্থ্যসেবা-প্রতিষ্ঠান-বন্ধ)

মন্তব্যঃ

    স্বাস্থ্যসেবা জনগণের একটি মৌলিক চাহিদা। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জন্য এই সেবা নিশ্চিত করা। পুঁজিবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত বর্তমান রাষ্ট্র সরকারীভাবে এটি দিতে ব্যর্থ। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই জনগণকে নিজের টাকায় চিকিৎসা নিতে হয়। এদেশে চিকিৎসা খরচ মিটাতে গিয়ে প্রতিবছর ৮৬ লক্ষ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়। এরপরও অনেকেই সঠিক চিকিৎসা পায় না। ৭৫ শতাংশ মানুষই চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর যারা সেবা পাচ্ছেন তার ৭০% কে যেতে হয় বেসরকারী হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ইত্যাদিতে। এই যখন স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা তখন সরকারের ৭২ ঘন্টার মধ্যে সকল অনিবন্ধিত স্বাস্থ্যসেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করার ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। ১. একটি সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কিভাবে ১১০০০ এর বেশি অনিবন্ধিত অবৈধ প্রতিষ্ঠান জন্ম নিল? কিভাবে তারা এতদিন কাজ করলো? ২. এই ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানোর ফলে কিভাবে দেশে স্বাস্থ্যসেবার মান ঠিক হয়ে যাবে? ৩. এই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হলে যে মানুষগুলো এই প্রতিষ্ঠানের সেবার উপর নির্ভরশীল তারা কোথা থেকে সেবা নিবে? যাদের জীবিকা এসব প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল তাদেরই বা কি হবে?

    একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে উপরের প্রশ্ন ও বাস্তবতার কোনটিই গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী মহলে সীমাবদ্ধ। এখানে বেশীরভাগ জনগণ তাদের মৌলিক চাহিদাপূরণ করতে না পারলে এবং সেবা নিতে গেলে প্রতারিত হলে তাদের প্রতিকার প্রাপ্তির কোন জায়গা নেই। জনগণের মৌলিক চাহিদাপুরণের তোয়াক্কা না করে সরকারের এই চলমান ক্রাশ প্রোগ্রাম সমস্যার সমাধানতো করবেইনা বরং নিন্মোক্ত ফলাফল নিয়ে আসবে বলে প্রতীয়মান হয়। ১. জনগণের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া আরও দুস্প্রাপ্য, দুর্ভোগপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হবে। ২. ক্ষুদ্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে সুবিধা পাবে দেশীয় করপোরেট বড় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, ফলে স্বাস্থ্যসেবা তাদের হাতে জিম্মি হবে। ৩. চিকিৎসার জন্য বিদেশ (ভারত) নির্ভরশীলতা ব্যাপকভাবে বাড়বে।

    রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “খলিফা তার জনগণের উপর দায়িত্বশীল। তিনি তাদের (অধিকার) সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন”। কুর‘আন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ধারা ১২৫ এ উল্লেখ আছে, “রাষ্ট্রে অবশ্যই প্রতিটি ব্যক্তির সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের সামগ্রিক নিশ্চয়তা দিতে হবে…”। অর্থাৎ খলিফা প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করতে বাধ্য। এটি নিশ্চিত করার জন্য খলিফা অবশ্যই জনগণের স্বাস্থ্যসেবাকে দেশী-বিদেশী কোন প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হাতে জিন্মি হতে দিবেন না। উল্লেখিত খসড়া সংবিধানের ধারা ১৬৩ তে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র সকলের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সুবিধা দিবে। তবে রাষ্ট্র ব্যক্তিগত চিকিৎসা অনুশীলন, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ কিংবা ঔষধ বিক্রয়কে বাঁধা দিবে না”। ইসলাম কর্তৃক নির্ধারিত এই সাংবিধানিক অধিকার থেকে যদি কোন নাগরিক বঞ্চিত হয় সে নাগরিক ইসলামের একটি বিশেষ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে যার নাম ‘মাজালিম আদালত’, যে আদালতে যেকোন সময় যেকোন নাগরিক খলিফা ও অন্যান্য সরকারী দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারবেন। এছাড়াও ইসলামে আছে একটি বিশেষ ভ্রাম্যমান আদালত, যার নাম ‘আল-হিসবাহ’ যেটি সারাদেশে সার্বক্ষনিকভাবে কাজ করবে যাতে জনগণ কোন পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় করতে গিয়ে কারও দ্বারা প্রতারিত না হয়। এভাবেই ইসলাম রাষ্ট্রপ্রধান খলিফাকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়স্থানে জবাবদিহিতায় আবদ্ধ করে।

        মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 “পছন্দমতো পোশাক’ পরে তরুণী হেনস্থার প্রতিবাদ”

খবর:

    নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে তরুণীকে হেনস্থার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ২০ তরুণ-তরুণী। তারা এ প্রতিবাদের নাম দিয়েছেন ‘অহিংস অগ্নিযাত্রা’। ‘পছন্দমতো পোশাক’ পরে স্টেশনটিতে গিয়েছেন তারা। দলটিতে অন্তত ১৫ জন তরুণীর পরনে ছিল টাইট জিন্স প্যান্ট ও টিশার্ট। অংশগ্রহণকারীরা অগ্নি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের নারীবাদী গ্রাসরুটস অরগানাইজিং প্ল্যাটফর্মে যুক্ত। একটি স্টোরিটেলিং প্রকল্প হিসেবে তারা পিতৃতন্ত্রে নারীর আগুনে মোড়ানো পথের গল্পগুলো তুলে আনেন। অগ্নি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সভাপতি তৃষিয়া নাশতারান বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, শান্তিপূর্ণভাবে শরীর ও পোশাকের স্বাধীনতার জায়গা রিক্লেইম করা।’ (https://www.ittefaq.com.bd/598866)

মন্তব্য:

    সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ইসলামী মূল্যবোধকে কটাক্ষ করে ইসলামী অনুশাসনের প্রতি অনুগতশীলদের মৌলবাদী, পশ্চাদপদ ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষায়িত করে সেক্যুলার ব্লক থেকে ইসলামকে হেয় করার যে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে তারই আরেকটি নতুন সংযোজন হচ্ছে এই তথাকথিত ‘অহিংস অগ্নিযাত্রা’ যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘শরীর ও পোশাকের স্বাধীনতা’র নামে আমাদের সমাজের রুট লেভেল পর্যন্ত পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটানো। কিন্তু সম্প্রতি নরসিংদী স্টেশনে ‘পশ্চিমা পোশাক’ পরিহিতা নারীর প্রতি মুসলিমদের তীব্র ক্ষোভ এটিই আরেকবার প্রমাণ করেছে যে, এদেশের মুসলিমরা ইসলাম বহির্ভূত যেকোন চিন্তা ও সংস্কৃতি এদেশে অনুপ্রবেশ করতে দিবে না। এদেশের মুসলিমরা যখন তাদের ইসলামী মূল্যবোধের সামান্যতম বিচ্যুতির ব্যাপারেও স্পর্শকাতর তখন এই সেকুলার রাষ্ট্রব্যবস্থা, পশ্চিমা চিন্তা দ্বারা মোহাবিষ্ট বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিবিদ এবং পথভ্রস্ট বিভিন্ন সেকুলার সংগঠন যতই ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করুক না কেন তাতে খুববেশী একটা সফল তারা হতে পারবে না। তাই আমরা দেখি কয়েকদিন পরপর সেকুলারদের বিভিন্ন প্রজেক্ট ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছে, হোক সেটা ‘টিপকান্ড’, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ কিংবা আলেমদের বিরুদ্ধে রচিত ‘শ্বেতপত্র’।

    নরসিংদীর এই ঘটনা ঘটার পর দ্রুততম সময়ে একজন মহিলাকে এই ‘পশ্চিমা পোশাক’ পরিহিতা নারীর বেলেল্লাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া এই সেকুলার রাষ্ট্রের আরেকটি দ্বৈত চরিত্রকে প্রকাশ করেছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে হিজাব ও বোরকা পরার কারণে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করা হচ্ছে নিয়মিতভাবেই কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোন ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে কখনো দেখিনি। কিন্তু উম্মাহকে প্রতারিত করার জন্য গত ২জুন ২০২২ ইং তারিখে ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হিজাব পরতে বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ’- এই বিষয়কে উপলক্ষ্য করে করা এক রিটের বিপরীতে হাইকোর্ট মন্তব্য করেছে যে, ‘ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশে হিজাব-বোরকা পরা সাংবিধানিক অধিকার।’ কিন্তু হাইকোর্টের এই মন্তব্যে এদেশের মুসলিমদের আপ্লুত হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ হিজাবের পক্ষে হাইকোর্টের এই মন্তব্যের ভিত্তি হচ্ছে ব্যক্তিস্বাধীনতা আর ধর্মনিরপেক্ষতা। তার মানে হচ্ছে এই সংবিধানের আলোকে হিজাব পরা যেমন অধিকার তেমনি টপস আর জিন্স পরাও সাংবিধানিক অধিকার। আর এমনটি হবেই বা না কেন যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ মুসলিম নারীদের পর্দাকে কটাক্ষ করে বলেন, “হাত মোজা, পা মোজা, নাক-চোখ ঢেকে, একেবারে, এটা কী? জীবন্ত ট্যান্ট (তাবু) হয়ে ঘুরে বেড়ানো; এর তো কোনো মানে হয় না।”

    প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে তথাকথিত ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে এত আলোচনা, এর উৎস কোথায়? ইসলাম কি আদৌ ব্যক্তিস্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়? মূলত এই স্বাধীনতার ধারনাটি একটি পশ্চিমা ধারনা যার গোড়া হচ্ছে পশ্চিমা গণতন্ত্র এবং এর চারটি ভিত্তির একটি ভিত্তি হচ্ছে এই ব্যক্তিস্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার বলে একজন ব্যক্তিকে যা ইচ্ছা তা করার অধিকার প্রদান করা হয়। অর্থাৎ সে কি পোশাক পরিধান করবে এবং সে কি করবে তা সে নিজেই ঠিক করবে। অর্থাৎ এই স্বাধীনতা চর্চা করতে গিয়ে কেউ যদি অর্ধনগ্ন কিংবা নগ্নও হয়ে যায় তাহলেও তাকে বাধা দেয়া যাবে না কারণ তাহলে এটি ঐ নগ্ন ব্যক্তির ব্যক্তিস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে। তাই আমরা যদি সেকুলার-গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে চিন্তা করি তাহলে এই অগ্নিযাত্রাকারীদের অগ্নিযাত্রায় কোন সমস্যা নেই কিন্তু যদি আমরা ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চিন্তা করি তাহলে অবশ্যই এই স্বাধীনতার ধারণা মুসলিমদের চিন্তা-বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। 

    ইসলাম মানুষকে তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামী হুকুম দ্বারা পরিচালিত হতে বাধ্য করেছে। তাই এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছা তা করার এবং যা ইচ্ছা তা পরিধানের কোন অধিকার মুসলিমদেরকে দেয়া হয়নি। এমনকি নারী ও পুরুষ কিভাবে পোশাক পড়বে এ ব্যাপারেও রয়েছে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা। নারীদের পোশাকের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর ঈমানদার নারীদেরকে বলে দাও তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, আর তাদের শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ না করতে যা এমনিতেই প্রকাশিত হয় তা ব্যতীত। তাদের ঘাড় ও বুক যেন মাথার কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়।” [সূরা নূর: ৩১] এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যদি কোন মেয়ে বয়ঃসন্ধিতে পৌছায়, তাহলে এটা অনুচিত যে তার মুখমন্ডল ও দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ব্যতিত শরীরের অন্য কোন অংশ দেখা যাবে।” উপরন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, আমরা যদি এই বিদ্যমান সেকুলার ব্যবস্থার মধ্যেই আমাদের জীবন অতিবাহিত করতে চাই তাহলে ভবিষ্যতে এরকম আরো অনেক অনৈসলামী কার্যক্রম রাষ্ট্র ও এর সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে আমরা দেখতে পাব এবং কুফরের সাথে ইসলামের এই সংঘর্ষ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। অতএব আমরা যদি চাই যে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে সকল প্রকার অনৈসলামী কার্যক্রম এবং পশ্চিমা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন দূর হয়ে যাক তাহলে বিদ্যমান এই সেকুলার-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে থেকে শুধুমাত্র ব্যক্তিপর্যায়ে এর প্রতিবাদ করেই মুক্তি পাওয়া যাবে না বরং এর জন্য এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে যা ইসলাম বাস্তবায়ন করবে এবং এর বাস্তবায়নে ব্যত্যয় ঘটলে অপরাধীকে সংগে সংগে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। 

    –    মো. হাফিজুর রহমান

“ঢাবিতে ফের ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষ”

খবরঃ

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় ফের সংঘাতে জড়িয়েছে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ছাত্রদল মিছিল বের করলে এই সংঘাত হয় বলে অভিযোগ করে ছাত্রদল। এ সময় উভয় পক্ষের হাতেই লাঠিসোঁটা দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলের শুরুতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘ছাত্রদলের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’। তাদের সেই মিছিল কিছু দূর এগোতেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ধাওয়া দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে ছাত্রদলের আরেকটি মিছিল হাইকোর্টের মাজার গেট পেরিয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে অগ্রসর হতে গেলে বাধার মুখে পড়ে। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। আতঙ্কিত একজন সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার থেকেই ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। (https://www.banglatribune.com/my-campus/745057/ঢাবিতে-ফের-ছাত্রদল-ছাত্রলীগ-সংঘর্ষ)  

 মন্তব্যঃ

    ইতিপূর্বে উপনিবেশিক বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে দেশের ছাত্র রাজনীতির অনেক গৌরবোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখা গেলেও ছাত্র রাজনীতির চরিত্র (১৯৭১-২০২০) এখন ক্ষমতাসীন দলের লেজুরবৃত্তি ও আদর্শহীন ভোগ দখলের রাজনীতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এদেশে ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির যাত্রা ১৯৭১ সাল থেকে শুরু। আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন “ছাত্রলীগ” ১৯৭১ সাল থেকে এদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। পরবর্তীতে জিয়ার শাসনামলে বিএ্রনপির ছাত্রসংগঠন ’ছাত্রদল’ দলীয় ফায়দা ও সন্ত্রাস সৃষ্টিতে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির অন্যতম মূল স্পিরিট হচ্ছে পেশীশক্তি প্রদর্শন এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ যা শাসকগোষ্ঠী তাদের মদদপুস্ট ছাত্র সংগঠনকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সুবিধা ও ফায়দা হাসিলের (দখলদারিত্ব, চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি) সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে অর্জন করে থাকে। অন্যদিকে এই রাজনীতির উচ্ছিষ্ট ভোগ করতেই এক শ্রেণীর ছাত্ররা এই নোংরা রাজনীতিতে আকৃষ্ট হয়ে শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতায় আরোহণের সিড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং নিজেদের শক্তিমত্তার মহড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে তাদের অনুগত লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকা পালন করছে। সামগ্রিক জীবনব্যবস্থার সমাধান হিসেবে একটি সঠিক রাজনৈতিক আদর্শ গ্রহণ না করায় ছাত্রদল-ছাত্রলীগ উভয়ই ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ও দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক দলের লেজূরবৃত্তিক রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়েছে যা ছাত্রসমাজকে শুধুমাত্র ভোগ দখল ও সুবিধাবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ঢাবিসহ দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব ছাত্র সংগঠন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দলাদলির পাশাপাশি নিজেদের পেশীশক্তি প্রদর্শন ও অস্ত্রের ঝনঝনাতিতে শিক্ষাঙ্গণকে করে তুলছে প্রকম্পিত। ফলশ্রুতিতে ছাত্র সমাজ ও সাধারণ  সমাজের মধ্যে রাজনীতি ও ছাত্র রাজনীতি বিমুখ একটি সংখ্যা বেড়েই চলছে এবং অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে।  

  তাই দেশের চিন্তাশীল ও নিষ্ঠাবান ছাত্রসমাজকে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির ঘৃণ্য শিকারে পরিণত হয়ে নিজেদের অদম্য শক্তিকে নিঃশেষ করলে চলবে না কিংবা ছাত্র রাজনীতিবিমুখ হওয়াও কোন ফলাফল বয়ে আনবে না। ছাত্রসমাজকে সঠিক বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার মাধ্যমে ইসলামের রাজনৈতিক আদর্শকে ধারণ করতে হবে যা তাদেরকে সত্যিকারের রাজনৈতিক দর্শন ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম। ইসলাম রাজনীতিকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে এবং রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে রাজনীতি করতে দায়িত্বশীল করেছে, কারণ “…সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ…” [সূরা আলি-ইমরান: ১১০] প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। ইসলামের রাজনীতি কোন ব্যক্তিবিশেষ/জাতীয় নেতৃবৃন্দকে মহিমান্বিত করার রাজনীতি নয়। ইসলামে রাজনীতির স্পিরিট হচ্ছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সকল নাগরিকের তত্ত্বাবধান করা, বৈদেশিক শক্তির আগ্রাসন থেকে জনগণকে রক্ষা করা এবং দুর্নীতি ও যুলুম দূর করে পৃথিবীতে ইসলামের ন্যায়পরায়ণ শাসন প্রতিষ্ঠা করা। এর ফলে আমাদের তরুণরা সস্তা দলান্ধতার সংগ্রামে নয় বরং পাশের ভূখন্ডে ইসলামের জয় জয়কার নিশ্চিত করতে সত্যিকারের উত্তেজনা ও চ্যালেঞ্জ খুজে পাবে। তাই ছাত্রসমাজকে বর্তমান যালিম শাসকদের ফুট সোলজার হিসেবে নয় বরং এই অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর যুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করতে হবে এবং জনগণকে সার্বিক যুলুম থেকে মুক্ত করতে তাদের মূল্যবান শক্তি ও সময়কে ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথা খিলাফতে রাশিদাহ্‌ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে ধাবিত করতে হবে। এর মাধ্যমেই জনগণ ও ছাত্র সমাজের প্রকৃত রাজনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ্‌। 

    –    মোহাম্মদ সিফাত

“হজের খরচ আরো ৫৯ হাজার টাকা বাড়লো”

খবরঃ

    হজযাত্রা শুরুর ১০ দিন আগে সরকারি ও বেসরকারি দুই ব্যবস্থাপনাতেই খরচ আরো ৫৯ হাজার টাকা বাড়ানো হলো। সৌদি আরবের অংশের ‘খরচ বেড়ে যাওয়ার’ কারণেই বাংলাদেশের হজযাত্রীদের এই বাড়তি টাকা দিতে বলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান জানিয়েছেন। ৫৯ হাজার টাকা খরচ বাড়ার ফলে সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ-১ এর খরচ বেড়ে হচ্ছে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা। প্যাকেজ-২ এ খরচ পড়বে জনপ্রতি ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আগের ঘোষণায় সৌদি আরব অংশের মূল্য অনুমান করে ধরা হয়েছিল। এখন সৌদি সরকার তাদের অংশ জানিয়েছে। এ কারণে হজের মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে”। (dw.com/bn/হজের-খরচ-আরো-৫৯-হাজার-টাকা-বাড়লো/a-61941520)

মন্তব্যঃ

    হজ্বের ব্যয় বৃদ্ধির এই আকস্মিক ঘোষণা অনেককেই বিপদে ফেলবে। হজ্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত, অনেক মুসলিম সারা জীবনের তিলে তিলে জমানো সঞ্চয় দিয়ে হজ্বের নিয়ত করেন। শাসকদের দায়িত্ব হচ্ছে মুসলিমদের ইবাদতকে সহজতর করে তোলা, অথচ তারা দিনকে দিন তা কঠিন করে তুলছেন। অন্যদিকে, আল-সাউদ পরিবারের অর্থলিপ্সু দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে হজ্ব যাত্রীদের খরচ ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আল সাউদ পরিবার প্রতিবছর হজ্ব ও ওমরাহ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী অর্থ আয় করছে। তারা ২০৩০ সালের শুধুমাত্র হজ্ব থেকে ১৩.৩২ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য স্থির করেছে। আয় বৃদ্ধির কৌশল হিসাবে সৌদি সরকার তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্পের নামে হজ্ব সংশ্লিষ্ট সকল খাতকে (যেমনঃ আবাসন, পরিবহন) ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিকিকরণ করছে। বিশেষ করে মসজিদুল হারাম (মক্কা-মদিনা) সংলগ্ন এলাকাকে রাজ পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ দিয়েছে এবং দিচ্ছে। রাজ পরিবারের সদস্যরা এই এলাকাগুলোতে বিলাসবহুল স্থাপনা তৈরি করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চেইন হোটেলগুলোকে (যেমনঃ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল) ফ্রেন্সাইস প্রদান করছে যাদের মূল উদ্দেশ্য যেকোন মূল্যে মুনাফা বৃদ্ধি করা। ফলে মক্কা এবং মদিনার আবাসন ব্যয় অতি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। হজ্ব যাত্রার খরচ বৃদ্ধির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ স্বল্পমূল্যের যাতায়ত ব্যবস্থা যেমনঃ নৌ-পথ, স্থলপথ ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করে শুধুমাত্র আকাশ পথে হাজীদের চলাচলের অনুমতি প্রদান করা এবং গুটি কয়েক এয়ারলাইন্সকে হজ্ব ফ্লাইট পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান করা। যার ফলে এয়ারলাইন্সগুলো জ্বালানী সরবরাহ সংকটের অজুহাতে অস্বাভাবিক বেশী বিমান ভাড়া আদায় করছে। আল্লাহ্‌বিবর্জিত এসব ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের নিকট হাজীদের স্বার্থ মূল্যহীন হবে এটাই স্বাভাবিক, কারণ দিনশেষে এই অতি অস্বাভাবিক খরচের মূল সুবিধাভোগীতো তারাই।

    অপরদিকে, ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফতের অধীনে খলিফার উপর অর্পিত ফরজ দায়িত্ব হচ্ছে, অন্যান্য ইবাদতের ন্যায় হজ্বের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতকেও সঠিক ব্যবস্থাপনা করা। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “ইমাম (খলিফা) হলেন অভিভাবক এবং তিনি তার নাগরিকদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল” (বুখারী/মুসলিম)। এই দায়িত্ববোধ থেকে খলিফা উম্মাহ্‌’র হজ্ব যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। যার অসংখ্য উদাহরণ খিলাফতের ইতিহাসে দেখা যায়। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সুলতান আব্দুল হামিদ হিজাজ রেলওয়ে প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন, ‍যার উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের দীর্ঘ হজ্ব যাত্রাকে কমিয়ে নিয়ে আসা। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র হজ্ব ব্যবস্থাপনাকে মুনাফার দৃষ্টিকোন থেকে নয়, বরং দায়িত্বের দৃষ্টিকোন থেকে দেখবে এবং হজ্বের অস্বাভাবিক খরচ বৃদ্ধির উপাদনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ (যেমন: ন্যায্যমূল্যে বা সরকারী ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, যাতায়াতের সকল পথকে উন্মুক্ত করা, ভিসা ফি প্রত্যাহার করা) গ্রহণ করবে যাতে সকল সামর্থ্যবান মুসলিম এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি সঠিকভাবে পালন করতে পারে।

    –    মোঃ সিরাজুল ইসলাম

পুলিশ হয়ে গুমের শিকার বাবাকে খুঁজতে চায় সন্তান”

খবরঃ

    ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বিএনপি নেতা মো. কাওসার হোসেন যখন গুম হন, তখন তার একমাত্র মেয়ের বয়স ছিল তিন বছর। মেয়েটি এখন ১২ বছর বয়সের কিশোরী। আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশের ফাঁকে কাওসারের স্ত্রী মিনু আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়ে এখন পুলিশ হয়ে বাবাকে খুঁজে বের করতে চায়। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষে ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক প্রতিবাদ সমাবেশটি আয়োজন করে ‘মায়ের ডাক’, যেটি গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন। সমাবেশে গুম হওয়া মানুষদের মা, বোন, স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনেরা হাজির হয়েছিলেন। (www.prothomalo.com/bangladesh/পুলিশ-হয়ে-গুমের-শিকার-বাবাকে-খুঁজতে-চায়-সন্তান)

মন্তব্যঃ

    পুলিশের সদস্য হয়ে পিতাকে খুঁজতে চাওয়ার এই আবেগঘন বক্তব্যটি শিশুতোষ শোনালেও, প্রকৃতপক্ষে এতে বর্তমান শাসক ও শাসনব্যবস্থার প্রতি হাজারো পরিবারের হতাশা ও ক্ষোভ ফুটে উঠেছে। ঠিক যেমনটি এইবছর ২৪ মার্চ ঢাকার শাহজাহানপুরে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত কলেজ ছাত্রী সাদিয়া আফরান প্রীতির বাবা বলেছিলেন, “বিচার কার কাছে চাইবো?” একইভাবে বিচার না চেয়ে আক্ষেপ ব্যক্ত করতে আমরা দেখেছি ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের দোকানকর্মীদের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে নিহত নাহিদের পরিবারকে। যাইহোক, যুলুম বন্ধে জনগণের হতাশা যেমন ক্ষতিকর, ঠিক তেমনি এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সঠিক পদ্ধতির অনুসরণ করাও জরুরী। তাই গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনতে যে ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের নির্দেশে গুম করা হয়েছে, কিংবা যে তথাকথিত আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনে এই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে তাদের কাছে গুমকৃত ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়ার দাবী কোনভাবেই তাদেরকে ফিরে পাওয়ার পদ্ধতি নয়।

    ধর্মনিরেপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী বাস্তবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, কারণ তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় শুধুমাত্র নিজেদের, কতিপয় পুঁজিপতি ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। তাই এই শাসকগোষ্ঠী ভয়ের পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখে। পুলিশ-র‌্যাব হচ্ছে সরকারের ভয়ের পরিবেশ তৈরির অন্যতম হাতিয়ার। যারা শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে অপহরণ, গুম, ও হত্যার মত জঘন্য অপরাধগুলো সংগঠিত করে। “ডিবির তদন্তে বেরিয়ে এল, ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়েছিল র‌্যাব” (প্রথমআলো, ২ জানুয়ারি ২০২১)।

    তাই সমস্যার কাছে সমস্যার সমাধান চাওয়া যুক্তিযুক্ত নয়, বরং এই সমস্যার মূল দায়ী ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের ব্যবস্থাকে সমূলে উৎপাটনের দাবী জানাতে হবে। এবং পাশাপাশি এমন এক ন্যায়নিষ্ট শাসনের দাবী জানাতে হবে, যার শাসকগণ আল্লাহ্‌ এবং জনগণের নিকট দায়বদ্ধ, আর সেই শাসনব্যবস্থাই হচ্ছে নব্যুয়তের আদলে খিলাফত ব্যবস্থা। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে যারা জীবিত রয়েছে তাদের খুঁজে বের করে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে দিবে, এবং যারা গুমের নির্দেশদাতা এবং বাস্তবায়নকারী তাদের শারীয়াহ আদলতের মাধ্যমে বিচারের সম্মুখীন করবে, কারণ ইসলামী আদর্শের অনুসারী খিলাফত রাষ্ট্রের নিকট প্রতিটি নাগরিকের জীবন মূল্যবান। অন্যায়ভাবে যেকোন ব্যাক্তিকে হত্যা বা গুম করা অলঙ্গনীয় “রেড লাইন”। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করল” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৩২)। সুতরাং, খিলাফত শুধু গুমকৃত ব্যাক্তিদের খুঁজে বের করবে না, বরং প্রতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গুমকে যাদুঘরে প্রেরণ করবে, ইনশা’আল্লাহ্‌।

    –    ইরফান আবিদ  

“৩ বেলার বদলে এখন দুবেলা খাচ্ছি’

খবরঃ

    মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে ফুটপাতের একটি হোটেলে বসে ভাত খাচ্ছিলেন জীবন মিয়া (৪০)। তার প্লেটে ভাত, আলুভর্তা আর একটি কাঁচামরিচ। … ভাতের সঙ্গে আর কিছু নেবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আর কী লমু কন? আগে দুই প্লেট ভাত, ডাল আর ভর্তার প্যাকেজ খাইতাম ৩০ টাকা দিয়া। ঈদের পর থাইকা ৪০ টাকা লয়। রিকশার জমার টাকাও ২০ টাকা বাড়াইছে। সবকিছু বাড়ছে, কিন্তু ইনকাম তো বাড়ে নাই। আগে ৩ বেলা খাইতাম এখন ২ বেলা খাই।’… (www.thedailystar.net/bangla/সংবাদ/বাংলাদেশ/৩-বেলার-বদলে-এখন-দুবেলা-খাচ্ছি-352036)

মন্তব্যঃ

    তিনবেলার বদলে দুবেলা খাওয়া, নিম্নমানের খাবার খাওয়া, কম খাওয়া কিংবা না খেয়ে থাকা- এগুলো কোনভাবেই ‘খাদ্য পাওয়ার ন্যায্য অধিকার’ আদায় করে নেওয়ার বিকল্প হতে পারে না। সাধারণ জনগণ ন্যূনতম জীবন উপকরণগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়ে এটাই তাদের নিয়তি বা কপালের লিখন বলে বিবেচনা করে। এর ফলে লুটেরা শাসকদের গদি এবং এসব শাসকদের উপনিবেশবাদী প্রভুদের স্বার্থ, উভয়ই সুরক্ষিত থাকে। তাই শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক জনগণের অধিকারহরণের ব্যাপারে কিংবা জনগণের নিত্যপ্রয়োজন পূরণে অবহেলার মত অন্যায়ের সামনে নিশ্চুপ থাকা কখনোই আমাদের অধিকারগুলোকে নিশ্চিত করবে না, বরং ক্রমাগত ভোগান্তি বৃদ্ধি করতে থাকবে। মানুষের খাদ্যের মত অতিপ্রয়োজনীয় জীবন উপকরণের ক্রমাগত ঘাটতির আজকে এই পরিস্থিতি এর চাক্ষুষ প্রমাণ। নয়া উপনিবেশবাদের প্রভাব দ্বারা প্রণীত বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা কখনোই অত্যাচারী শাসক কর্তৃক জনগণের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শেখায় না। বরং শেখানো হয়, নাগরিকের একমাত্র অধিকার হলো ভোট দেওয়া।

    তাছাড়া, শাসকের অধিকারহরণের মত অন্যায়ের সামনে নিশ্চুপ থেকে সহ্য করে নেয়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “মানুষ যখন কোন অত্যাচারীকে দেখেও অন্যায় করা থেকে তার হাতকে প্রতিরোধ করে না, শিগগিরই আল্লাহ্‌ তাদের সবার উপর গজব নাযিল করবেন” (তিরমিজি ও আবু দাউদ)। ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই, খিলাফতের শাসনামলে এই উম্মত সর্বদা শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। নিষ্ঠাবান খলিফাগণও উম্মতের এই মানসিকতাকে সম্মান করতেন। ওমর (রা.)-এর শাসন আমলে একবার সমবেত জনতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি যখন বললেন, “আমি যদি ভুল পথে পরিচালিত হই, তখন তোমরা কি করবে?” তাৎক্ষণিকভাবে একজন উত্তর দিলেন, “এই তরবারি দিয়ে সোজা পথে নিয়ে আসবো”। তাই আমাদের খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ শাসকগোষ্ঠীর অন্য যেকোন অন্যায় কিংবা অবহেলা ও ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে এবং এমন এক শাসনব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে হবে যেটা মানুষের প্রয়োজন পূরণে নিষ্ঠাবান থাকে। ইসলাম ব্যতীত আর কোন শাসনব্যবস্থার পক্ষে তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

    –    মো: জহিরুল ইসলাম

“বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ”

খবরঃ

    বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য (বাল্ক) প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ১৬ পয়সা করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। সে হিসেবে কমিটির পক্ষ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে কিলোওয়াটপ্রতি ২ টাকা ৯৯ পয়সা। বৃদ্ধির হার প্রায় ৫৮ শতাংশ। এর আগে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। (bonikbarta.net/home/news_description/300094/বিদ্যুতের-দাম-৫৮-শতাংশ-বাড়ানোর-সুপারিশ

মন্তব্যঃ

    বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যেন সরকারের রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। গত ১২ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। ফলে একদিকে যেমন ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে অপরদিকে কল-কারখানায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পণ্যমূল্যের পরিমানও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে পিডিবির যুক্তি হচ্ছেঃ প্রথমত, উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করায় চলতি অর্থবছরে লোকসান হতে পারে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং দ্বিতীয়ত, জ্বালানী তেল, ফার্নেস অয়েল, কয়লা এবং গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যদিও এ বছর পিডিবি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি পেয়েছে ১০ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। পক্ষান্তরে, এগুলোকে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হলেও আমরা যদি একটু বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থার দিকে তাকাই তাহলে মূল বিষয়গুলো বুঝতে সক্ষম হব।

    প্রথমত, বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তার প্রায় ৮% উৎপাদিত হয় কয়লা থেকে, প্রায় ৮৪% উৎপাদিত হয় তেল ও গ্যাস থেকে, জলবিদ্যুৎ ১%, সৌরবিদ্যুৎ ১% এবং আমদানিকৃত প্রায় ৬% (ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা থেকে)। কিন্তু দেশের তেল-গ্যাসের মত গুরুত্বপূর্ন জ্বালানীকে বিদেশী কোম্পানীর হাতে তুলে দেওয়ার কারণে আমরা নিজেরা এগুলোকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে পারছিনা। ফলে অধিক মূল্যে এসকল সাম্রাজ্যবাদী কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে তেল-গ্যাস ক্রয় করে আমাদেরকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে এবং স্বাভাবিক পরিনতি হিসেবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরন্তু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে খরচ কম হলেও দেশে শুধুমাত্র একটি মাত্র কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে যার উৎপাদনও খুবই নগণ্য। দেশে বিদ্যমান কয়লাক্ষেত্রগুলো থেকে কয়লা উৎপাদন না করে ভারত থেকে কয়লা আমদানি করে কোনমতে কাজ চালানো হচ্ছে। অপরদিকে দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি যে ভারতের স্বার্থেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

    দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি ধরা হয়েছে এবং দরকারের চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ ২০২১ সালের জুন মাসে একটি প্রতিবেদনে বলে যে, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৬০ শতাংশ বসিয়ে রেখে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশী টাকার অংকে সেটি বছরে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সরকার এই বিপুল অর্থ তুলতে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগনের বোঝাকে বাড়িয়ে তুলবে।

    প্রশ্ন হচ্ছে এই বসিয়ে রাখা রেন্টাল আর কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে কাদের স্বার্থে? বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি গবেষণা বিভাগ পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বি ডি রহমতউল্লাহর মতে, “উৎপাদনের বিষয়গুলো বেশ লোভনীয়, লাভজনক, তাই সবাই এগুলো বানাতে চায়। রাজনৈতিকভাবে যারা শক্তিশালী, তারাই এগুলোর কন্ট্রাক্ট নেয়। উৎপাদনে একটা সংকটকে সামনে এনে সরকার উচ্চ কমিশনে উৎপাদনের চুক্তি করেছে। সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে এখানে। পয়সা বেশি, সুবিধা বেশি- এসব কারণে।” অর্থাৎ সরকার বিদ্যুতের চাহিদাকে পূরণের লক্ষ্যে নিজে উৎপাদনের দিকে না গিয়ে ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর হাতে বিদ্যুতের উৎপাদনকে ছেড়ে দিয়েছে। এর ফলে জনগন ক্ষতির সম্মুখীন হলেও রাজনীতিবিদ আর ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী ফুলে-ফেপে উঠছেন।

    তৃতীয়ত, উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরকার নিজে জনগণের মাঝে বণ্টন করে না। বরং তা বেশী দামে বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানীর কাছে বিক্রয় করে। পরবর্তীতে এসকল বিতরণ কোম্পানি অধিকতর বেশী মূল্যে জনগনের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রয় করে। ফলে আরেক দফা মূল্য বৃদ্ধি পায়।

    মূলত যতদিন এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আমাদের উপর সওয়ার হয়ে থাকবে ততদিন তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের মত প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহকে সরকার পণ্য হিসেবে মনে করবে এবং জনগণের কাছে তা চড়া মূল্যে বিক্রয়ের ধান্দা করবে। এই জুলুম থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে এই শোষণের পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে ইসলাম তথা খিলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা যেখানে রয়েছে জ্বালানী বিষয়ক জনবান্ধব নীতিসমূহ যা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) কর্তৃক সুনির্ধারিত। খিলাফত ব্যবস্থায় তেল-গ্যাস-কয়লার মত জ্বালানীসমূহ গণসম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। ফলে তা কোন বিদেশী কোম্পানী কিংবা প্রাইভেট সেক্টরের হাতে তুলে দেয়া যাবে না। খলীফা এগুলোকে জনগণের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করবেন। উপরন্তু বিতরনও খলীফার দায়িত্ব। পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ, সৌরবিদ্যুৎ, স্রোতশক্তি (Tidal Energy), বায়ু বিদ্যুৎ ইত্যাদির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে গবেষনা বৃদ্ধি করা হবে। খলীফা জনগণের কাছে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে না, বরং জনগণের প্রাপ্য গণসম্পত্তিকে ব্যবহার করেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা জনগণের দোরগোড়ায় পৌছে দিবে।

    –    মো. হাফিজুর রহমান

“বিদেশ সফর বন্ধে হঠাৎ কেন হার্ডলাইনে সরকার”

খবরঃ

    বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও একই আদেশ জারি হয়েছে। নির্দেশনায় কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটের কথা বলা হলেও এর পেছনে ভিন্ন কারণ দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদেশ সফর বন্ধের পেছনে ডলার সাশ্রয়কেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনে কড়াকড়ি আরোপ করছে সরকার।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কিন্তু এটা কোনো সমাধান নয়। অনেকটা মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার মতো ঘটনা। (https://mzamin.com/news.php?news=3431)

মন্তব্যঃ

    সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কড়াকড়ি আরোপ করার ঘটনা প্রমাণ করে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে গভীরভাবে শঙ্কিত। বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিশেষ করে শ্রীলংকা, পাকিস্তান, মিশর ও তুরস্কের নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট এবং দেশে দেশে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মান পতন হওয়ার চলমান প্রেক্ষাপটে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী দেশের ধ্বংসপ্রায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রচেস্টা হিসেবে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করল। শুধু তাই নয়, সরকার দেশে আমদানি সীমিতকরণ এবং রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরো অবমূল্যায়নের (Devaluation) মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু সরকারের এই পদক্ষেপ বর্তমান সংকট মোকাবেলায় কোন কার্যকরী ফলাফল বয়ে আনবে না, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারতো দূরের বিষয়। কারণ সামাজ্যবাদী IMF এবং WB’র ধ্বংসাত্বক অর্থনৈতিক প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী পুরোপুরি একটি আমদানি নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলায় দেশের অর্থনীতির এই ভয়াবহ পরিণতি। বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আসা সকল শাসকগোষ্ঠীই আমাদের অর্থনীতিতে IMF এবং WB’র ধ্বংসাত্বক পলিসি বাস্তবায়ন করেছে। IMF এবং WB’র পরামর্শে এসব শাসকগোষ্ঠী দেশে ভারী শিল্পায়নের পরিবর্তে সরকারি খাত ও শিল্পগুলোকে বেসরকারীকরণ করেছে এবং দেশের উৎপাদনমুখী শিল্পগুলো একের পর এক বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে সুই থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ পর্যন্ত সকল পণ্য আমাদেরকে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের আরোপিত স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট পলিসির(Structural Adjustment Policy) মাধ্যমে আমাদের দেশের কৃষি ও ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পসমূহ ধ্বংস করার মাধ্যমে এসব শাসকগোষ্ঠী আমাদেরকে চাল, ডাল, পিয়াজ, তেল, নুন ও চিনির মত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য আমদানিনির্ভর করে রেখেছে। মাত্রাতিরিক্ত আমদানি নির্ভরশীলতার ফলে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, মুদ্রার অবমূল্যায়ন হচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতি দীর্ঘ মেয়াদী সঙ্কটের মুখে পড়ছে। এমতাবস্থায়, অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে IMF এবং WB বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর কাছে আমদানি কমানো, রপ্তানি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরো অবমূল্যায়ন(Devaluation) করা এবং অপ্রয়োজনীয় বৈদেশিক ব্যয়ে সাশ্রয়ী হওয়ার চকটদার পরামর্শ নিয়ে হাজির হয়েছে। অথচ,  এটা দিবালোকের মত পরিস্কার যে, বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য কোন রপ্তানিমুখী পণ্যের দেশ না হওয়ায়  IMF এবং WB’’র এই পুঁজিবাদী প্রেস্ক্রিপশন অচিরেই ব্যর্থ হবে এবং ডলারের বিপরীতে টাকার চলমান দর পতন আরো ব্যয়বহুল আমদানির কারণ হয়ে ঊঠবে এবং জনগণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপে পিষ্ঠ হবে। অতঃপর এই দালাল শাসকগোষ্ঠী পুনরায় IMF এবং WB’’র কাছে ঋণের জন্য দ্বারস্থ হবে যা জনগণের ঘাড়ে ট্যাক্সের বোঝা বাড়িয়েই যাবে। IMF এবং WB’’র পলিসি বাস্তবায়ন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি হওয়ার পরিবর্তে মাত্রাতিরিক্ত আমদানি নির্ভর দেশ হিসেবে শ্রীলংকার মত আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ দেউলিয়া হওয়ার ঘটনা সবারই জানা। পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু তারা এখনো IMF এবং WB’’র আধিপত্য থেকে মুক্ত হতে পারেনি বিধায় বর্তমানে পাকিস্তানও দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। তাই IMF এবং WB’’র প্রেসক্রিপশন ও আমদানি নির্ভর অর্থনৈতিক পলিসি বাস্তবায়িত রেখে বিদেশ সফর বাতিল ও লোকদেখানো ব্যয় সীমিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান খোজা গাছের শিকড় বাচিয়ে রেখে ডালা-পালা ছাটার মতই নিরর্থক। 

  এমতাবস্থায় বর্তমান সংকট উত্তরণে খিলাফতের অধীনে পুরোপুরি একটি ভিন্ন অর্থনৈতিক মডেল বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রেসক্রিপশন হল আমদানিনির্ভর অর্থনৈতিক নীতিমালাগুলোকে প্রতিস্থাপন করে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য শিল্পায়নের স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী নীতি গ্রহণ করা এবং IMF এবং WB’’র ডলারভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসা। শিল্পভিত্তি মজবুত করা এবং শিল্পায়নে বিপ্লব ঘটানো ব্যতীত একটা রাষ্ট্র কখনোই বিদেশী রাষ্ট্রের নির্ভরতা থেকে  মুক্ত হতে পারে না। তাই আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র শরীয়াহ নির্দেশিত কৃষি ও শিল্প নীতি অনুসরণ করে খাদ্য ও শিল্প নিরাপত্তা (Food & Industrial Security) অর্জনের মাধ্যমে একটি স্বয়সম্পূর্ণ অর্থনীতি গড়ে তুলবে। খিলাফত রাষ্ট্র উম্মাহর অভ্যন্তরীন খাদ্য চাহিদা মেটাতে সকল প্রকার আবাদী ভূমিগুলোকে উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত করে আত্মনির্ভরশীল হবে যাতে করে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের জন্য বিদেশী রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হতে না হয়। এছাড়া ইসলামে প্রতিরক্ষাকেন্দ্রিক ভারী শিল্পনীতির মূল দর্শন হচ্ছে বেসামরিক, যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরি এবং তাদের সহায়ক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং খুচরা যন্ত্রাংশের উত্পাদন। ফলে কৃষি, শিল্প এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের জন্য কুফর রাষ্ট্রগুলোর উপর নির্ভর করতে হবে না। সর্বোপরি, আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক স্থিতিশীল মুদ্রা ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে ডলারের আধিপত্য (Dollar Hegemony),  মুদ্রার অবমূল্যায়ন(Curency Devaluation) ও বিনিময় হারের উঠানামার অবসান ঘটাবে যা বৈদেশিক বাণিজ্যকে গতিশীল করবে। খিলাফত রাষ্ট্রের এই স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক মডেল পৃথিবীবাসীকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়(Economic Shock) থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য নিপীড়িত রাষ্ট্রগুলোকে খিলাফতের কাছাকাছি এনে খিলাফতের বলয়ভুক্ত নতুন একটি বিশ্বব্যবস্থার (World Order) গোড়াপত্তন করবে; ফলে ইসলাম অতিশীঘ্রই সার্বজনীন জীবনব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ্‌। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পৃথিবীকে আমার সামনে সংকুচিত করলেন; ফলে আমি এর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত দেখতে পেলাম; এবং যতদুর দেখেছি আমার উম্মতের কর্তৃত্ব ঐ পর্যন্ত পৌছে যাবে” (মুসনাদে আহমাদ)।

    –    মোহাম্মদ সিফাত

“ডলারের দাম বেড়ে ১০২”

খবরঃ

    দেশে ডলারের দাম এবার ১০০ টাকা ছাড়ালো। মঙ্গলবার খোলাবাজারে ডলার প্রতি বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১০২ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য ১২ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় চাপ পড়েছে ডলারের ওপর। সেই অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে ডলারের বাজার। ক্রমেই বেড়ে চলেছে দাম। বিপরীতে কমছে টাকার মান। (mzamin.com/news.php?news=3424)

মন্তব্যঃ

    টাকার বিপরীতে ডলারের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি বর্তমান সময় একটি অন্যতম আলোচিত বিষয়। পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদ এবং সাম্রাজ্যবাদীদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ডলারের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসাবে কোভিড, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আর্ন্তজাতিক বাজারে তেল-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিকে দায়ী করতে চাইছে। কিন্তু, প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কিছু মৌলিক নীতি যেমনঃ বিশ্বায়ন (Globalization) এবং সাম্রাজ্যবাদীদের চাপিয়ে দেয়া কাগুজে মুদ্রা (Fiat Currancy) ডলার বর্তমান সংকটের অন্যতম কারণ। পশ্চিমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববাংক এবং আইএমএফ বিশ্বায়নের নামে প্রত্যেকটি দেশকে আভ্যন্তরীণ প্রয়োজন বিবেচনা না করে আর্ন্তজাতিক বাজারে চাহিদা আছে এমন সকল পণ্য উৎপাদনে বিশেষ দক্ষতা অর্জনে পরামর্শ প্রদান করে। বাংলাদেশের পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী সাম্রাজ্যবাদীদের পরামর্শে দেশের অর্থনীতকে এমনভাবে সাজায় যে, একদিকে আমরা এসকল স্বল্পমূল্যের পোষাক তৈরি করি যা আমরা ব্যবহার করি না। অন্যদিকে, আমাদের অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনীয় পণ্য যেমনঃ চাল, তেল, পিয়াজ, চিনি, শিশু খাদ্য এমনকি পোষাক শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামালের যোগানের জন্য আমাদের অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য সামান্য বৃদ্ধি পেলেই দেশে ডলারের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৪ সালে ব্রেটন উডস চুক্তির মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে স্বর্ণ বা রূপার বদলে কাগুজে মুদ্রা ডলারকে গ্রহণ করতে বাধ্য করে এবং এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অর্থনৈতিকে তাদের উপর নির্ভরশীল করে ফেলে। যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে সামান্য পরিবর্তন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাকী দেশগুলোর অর্থনীতিকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। যেহেতু, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার প্রভাবে বাংলাদেশের মত অতি আমদানি নির্ভর দেশসমূহের স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে।

    পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে অক্ষুন্ন রেখে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয় কারণ এই ব্যবস্থার মৌলিক নীতিসমূহ এই সংকটের মূল কারণ। খিলাফত রাষ্ট্র মূলত দুইটি নীতির মাধ্যমে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার এই সংকটগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করবে। প্রথমত, বৈদেশিক বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতির বিপরীতে দেশের অর্থনীতিকে গণমানুষের মৌলিক প্রয়োজন (যেমনঃ খাদ্য, বস্ত্র,ঔষধ) পূরণের উপযোগী করে ঢেলে সাজাবে যা উম্মাহ্‌’র অভিভাবক হিসাবে খিলাফত রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দ্বিতীয়ত, খিলাফত ডলারভিত্তিক কাগুজে মুদ্রার বিপরীতে স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক হেজোমনিকে চ্যালেঞ্জ করবে। 

    –    মোঃ সিরাজুল ইসলাম

“চিরকুমারী: যে নারীরা কোন দিন বিয়ে করেননি, কেমন তাদের জীবন”

খবরঃ

    ঢাকার ধানমন্ডিতে এমন এক বাড়িতে গিয়েছিলাম যে ধাঁচের পুরনো ভবন ইদানীং এই শহরে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দরজার বেল বাজাতেই ধীর গতিতে বের হয়ে এলেন সত্তরের কাছাকাছি বয়সী ফাতেমা যোহরা। মনে হল সাথে করে যেন নিয়ে এলেন এক ধরনের নির্ঝঞ্ঝাট আবহ।… বিয়ে না করার সবচেয়ে বড় এক্সাইটিং পার্ট হল আমার কোনা বাইন্ডিংস নাই।… তখনই আমার মধ্যে একটা জিনিস ঢুকে গেল যে আমার স্বাধীনতা থাকবে না।… (https://www.bbc.com/bengali/news-61284831)

মন্তব্যঃ

    দুর্বল মানব মস্তিষ্ক প্রসূত চিন্তা থেকে যখন মানব পরিচালনার জন্য ব্যবস্থা আসে এবং এর দ্বারা পরিচালিত হলে মানুষ যে কত অসহায় হয়ে পড়ে তা এই প্রতিবেদনের সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সকল মানুষকে একসাথে দুনিয়াতে পাঠাননি। তিনি এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে মানুষকে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেছেন। আর মানুষের কাজ হল পরিবার গঠনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা। এর মাধ্যমে সে তার অতি প্রয়োজনীয় প্রবৃত্তি যেমন সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা, যৌন চাহিদা, অসুস্থ অবস্থায়, বৃদ্ধ অবস্থায়, শিশু অবস্থায় কিংবা বিপদে সাহায্য পাওয়া, পিতৃত্ব-মাতৃত্বের স্বাদ নেওয়া ইত্যাদি পূরণ করে থাকে। যেগুলোর অভাবে যেকোন মানুষ মারাত্মকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে বহুল আলোচিত চিত্রনায়ক রিয়াজের শশুরের আত্মহত্যার ঘটনার মাধ্যমে আমরা পরিবারহীন, একাকী, অসহায়, নিঃসঙ্গ, হতাশাগ্রস্থ জীবনের ভয়াবহতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। লিবারেল সেক্সচুয়াল কালচার (স্বাধীন যৌনাচারের সংস্কৃতি), চাইল্ড ফ্রি লাইফ স্টাইল (সন্তানবিহীন জীবন যাপন), সারোগেসি (গর্ভ ভাড়া দেওয়া), লিবারেলিজম, উত্তরাধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিসমূহের চর্চার কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষের পরিবার গঠনের প্রয়োজনীয়তা লোপ পাচ্ছে। ফলে মানুষগুলো একাকী ও অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছে। একদিকে হতাশা কাটাতে পরিবারকে সময় দেওয়ার মতো প্রেস্ক্রিপশন দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে উত্তরাধুনিক মতবাদের চর্চার মাধ্যমে সিস্টেম্যাটিকভাবে মানুষকে পরিবারহীন করে ফেলা হচ্ছে। তারপর যখন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ অথবা লিবারেলিজমের দিকে আংগুল উঠছে, তখন পশ্চিমা আদর্শের মিডিয়াগুলো কোটি মানুষের মধ্যে থেকে দু’একজন জনবিচ্ছিন্ন উদ্ভট চরিত্রের মানুষকে সামনে নিয়ে আসছে। পরিবারহীন জীবনের হাজারো অসুবিধাকে আড়াল করে মাছ ধরা, ক্ষেত-খামার করার স্বাধীনতার তুচ্ছ আনন্দ নেওয়ার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসছে। সহমর্মিতার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে মানুষের একে অন্যের দেখাশোনা করা, খোঁজখবর নেওয়া কিংবা সদুপদেশ দানের সংস্কৃতিকে ‘ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলানো’ বলে কটাক্ষ করা হচ্ছে। পরিবারহীন, অসহায়, একাকী, কষ্টকর জীবনকে ‘নির্ঝঞ্ঝাট’ জীবনের প্রতারণামূলক আবরণ দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপরও মানুষের জন্য ‘কষ্টদায়ক ও অভিশপ্ত’ এই লিবারেলিজমের মতবাদের চর্চাকে পরিত্যাগ করতে তারা নারাজ।

    মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য একমাত্র গ্রহণীয় আক্বিদা ও মতবাদগুলি কেবলমাত্র এমন এক স্বত্তা থেকেই আসতে পারে, যিনি মানুষ, জীবন ও মহাবিশ্বের পরিচালনাকারী ও সৃষ্টিকর্তা। যিনি মানুষকে পরিবার গঠনের মাধ্যমে সঙ্গীলাভ, সন্তানলাভ ও তাদের লালন পালনের সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন, “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন…” (সূরা রূমঃ ২১)।

    –    মো: জহিরুল ইসলাম