working to establish khilafah

 Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 52

 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৫২ তম সংখ্যা । ১৬ এপ্রিল, ২০২২

 

 

এই সংখ্যায় থাকছে: 

“ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংলাপ শুরু”

“বিদেশী ঋণ গ্রহণ: ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৪৯১০ কোটি টাকা এখন প্রায় ১ লাখ কোটি”

“দেশে বছরে ৬৪ লাখ মানুষ চিকিৎসা করাতে গিয়ে দরিদ্র হচ্ছে”

“বেগুনের দাম বাড়লে মিষ্টি কুমড়ার ‘বেগুনি’ খেলেই হয়: প্রধানমন্ত্রী”

“বাংলাদেশ কখনো ঋণখেলাপি হয়নি, হবেও না: সংসদে প্রধানমন্ত্রী”

“ঢাকা যেন নিশ্চল মহানগর”

“বাঁধ ভাঙ্গার পানিতে ডুবছে ফসল, হাওরে হাহাকার”

 

“ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংলাপ শুরু”

খবরঃ

    যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদারে ওয়াশিংটনে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সংলাপ শুরু হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৭ টায় স্টেট ডিপার্ট্মেন্টে এ সংলাপ শুরু হয়। …পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রতিনিধিত্বের এই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে করা হয়েছে’। …ওয়াশিংটন বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতার ওপর অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে।‘ যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়ন করতে চাইছে এবং বাংলাদেশকে এই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান দেশ হিসেবে বিবেচনা করছে …যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে জেনারেল সিকিউরিটি অফ মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট এবং অ্যাকুজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট, এই দুটি প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।… কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ‘ক্লাসিফায়েড সামরিক তথ্য বুঝতে এবং গোপনীয়তা রক্ষা করতে এই চুক্তি সরকারকে আইনগতভাবে বাধ্য করে।’ (https://www.thedailystar.net/bangla/সংবাদ/বাংলাদেশ/ওয়াশিংটনে-যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ-নিরাপত্তা-সংলাপ-শুরু-334346)

মন্তব্যঃ

সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোন রাষ্ট্রের নিরাপত্তা জোরদার সংক্রান্ত চুক্তি করার অর্থ হচ্ছে উক্ত রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে আরো বেশি ভঙ্গুর ও দূর্বল করা। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি কিংবা নিরাপত্তা সংলাপ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মূলত কোন অঞ্চলের সার্বভৌমত্বকে এর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি উক্ত অঞ্চলকে তার স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের আইনত(!) সুযোগ পায়। গ্লোবালসিকিউরিটি ডট ওরগ  (globalsecurity.org/military/facility/acsa.html) এর মতে, ইউ. এস.  ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স- অ্যাকুজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (ACSA) অথবা অ্যাকুজিশন অনলি অথরিটি(AOA) ব্যবহার করে একটা অঞ্চল (ন্যাটো বহির্ভূত) থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট, সাপ্লাইস, এবং সার্ভিস নেয় যদি উক্ত অঞ্চল এই ৪টা বিষয়ের যেকোন একটা কিংবা সবগুলো পূরণ করে- (1) Has a defense alliance with the United States. (2) Permits the stationing of members of the US Armed Forces or the home porting of US naval vessels in such a country. (3) Has agreed to pre-position US materiel in such a country. (4) Serves as host country for US Armed Forces during exercises or permits other US military operations in such a country। যা থেকে খুব স্পষ্টভাবে এইধরণের নিরাপত্তা চুক্তির উদ্দেশ্য ফুটে উঠে। আমেরিকার অফিস অব দ্যা এক্সিকিউটিব ডিরেক্টর ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের ভাষ্যমতে, “IC (International co-operation) ensures that any ACSA or AOA submitted to it for approval is- In the (U.S. Department of Defense) DoD’s best interests, is allowed by U.S. law and adheres to USG policies and procedures.” বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও বিষয়টা ব্যতিক্রম নয়। অর্থ্যাৎ, এই ধরণের চুক্তি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সুরক্ষার জন্যই করা হবে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার প্রসঙ্গে খোদ পররাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়ের বিবৃতিতে যা আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাহলে, প্রশ্ন হচ্ছে উম্মাহ্‌’র স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে কেন হাসিনা সরকার এই চুক্তি করতে যাচ্ছে?

    এর উত্তর হচ্ছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়ানীতি অনুসারে সরকার উৎখাতের ভয়ে হাসিনা সরকার ভীত, যা Rapid Action Battalion (RAB) এবং এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আয়োজিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ফুটে উঠেছে। তাই ক্ষমতায় দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার জন্য সরকার তার মার্কিন প্রভুকে সন্তুষ্ট রাখতে বিভিন্ন হটকারী সিন্ধান্ত হাতে নিয়েছে। এসব মেরুদন্ডহীন শাসকদের কারণেই পশ্চিমা দখলদারেরা মুসলিম উম্মাহ্‌’কে বিবিধ ধ্বংসাত্মক অর্থনৈতিক ও সামরিক চুক্তির বেড়াজালে আবদ্ধ করে ফেলে তাদের ভু-রাজনৈতিক স্বার্থ নিশ্চিত করে। এসব শাসকেরা উম্মাহ্‌’র সার্বভৌমত্বকে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার বিনিময়ে সওদা করে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এমন কোনও সংলাপ এবং চুক্তি নিষিদ্ধ করেছেন যা নিশ্চিতভাবে আমাদের উপর কাফিরদের আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন: “যদি তারা তোমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে তবে তারা তোমাদের শত্রু হয়ে যাবে, এবং অনিষ্ট সাধনের উদ্দেশ্যে তাদের হস্ত ও রসনাসমূহ তোমাদের উপর প্রসারিত করবে, এবং চাইবে যে তোমরাও কোনরূপে কাফির হয়ে যাও” [আল-মুমতাহিনা: ২]। বর্তমান সার্বিক অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য মুসলিমদের সামনে এখন একটিই পথ খোলা আছে, আর তা হচ্ছে বর্তমান মেরুদন্ডহীন ও দালাল শাসকদের অপসারণ করে খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা। 

        —আসাদুল্লাহ নাঈম 

“বিদেশী ঋণ গ্রহণ: ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৪৯১০ কোটি টাকা এখন প্রায় ১ লাখ কোটি”

খবরঃ 

  গত এক দশকে দেশে অনেক বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ বিদেশী ঋণ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বেড়েছে এ ঋণ পরিশোধে ব্যয়কৃত অর্থের পরিমাণও। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বার্ষিক নিট বিদেশী ঋণ গ্রহণের (গৃহীত ঋণ থেকে পরিশোধ বাদ দিয়ে) পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেটে বার্ষিক নিট বিদেশী ঋণ গ্রহণের প্রাক্কলন রয়েছে ৯৭ হাজার ৭৪০ কোটি টাকার। বিদেশী ঋণ ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয় মেগা প্রকল্পগুলোয়। নিট বিদেশী ঋণের এতবড় উল্লম্ফনকে দেশের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টির উদাহরণ টানতে গিয়ে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শ্রীলংকায় চলমান ইতিহাসের ভয়াবহতম অর্থনৈতিক সংকটের মূলেও রয়েছে বিপুল পরিমাণ বিদেশী ঋণ। (https://bonikbarta.net/home/news_description/295812/২০১৪-১৫-অর্থবছরে-ছিল-৪৯১০-কোটি-টাকা-এখন-প্রায়-১-লাখ-কোটি-)

মন্তব্যঃ

    অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং দেশের সার্বভৌমত্বের হুমকিকে বিবেচনায় না এনে একের পর এক বৈদেশিক ঋণনির্ভর বিভিন্ন উচ্চবিলাসী মেগাপ্রজেক্ট গ্রহণের সর্বনাশা পরিণতি হচ্ছে লাগামহীন বৈদেশিক ঋণের এই স্ফীতি (Jump)। ১৯৩০ সালের মহামন্দার পর থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে মেগাপ্রজেক্টে বিনিয়োগ করা এটি একটি জনপ্রিয় নীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়। বর্তমান সরকারও প্রতি বছর ৪% জিডিপি প্রবৃদ্ধির মিথ্যা আশ্বাস দেখিয়ে বৈদেশিক ঋণনির্ভর বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প হাতে নিয়ে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করে যাচ্ছে। প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে মেগাপ্রকল্পগুলো উৎপাদন ও রাজস্ব তৈরি কিংবা শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হাতে নেয়া হয়নি। যেমন, এসব মেগাপ্রকল্পগুলোতে ঋণ নেয়ার শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করার বাধ্যবাধকতা থাকায় দেশীয় কোম্পানীগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না এবং ঋণ প্রদানকারী দেশ সরাসরি এই প্রকল্পগুলো পরিচালনার সুযোগ পায়। এসব প্রকল্পে যে ঋণ দেয়া হয় তার একটি অংশ যায় কমিশন ও ঘুষ হিসেবে শাসকগোষ্ঠীর পকেটে, সিংহভাগ চলে যায় বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে কাঁচামাল আমদানি এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনার খরচ হিসেবে।

    এছাড়া এসব মেগাপ্রকল্পসমূহ হাতে নেয়া হয় সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ও তাদের আঞ্চলিক দোসরদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থে কিংবা তাদের জন্য ট্রানজিট নির্মাণের স্বার্থে। Dhaka-Khulna (N-8) Road Improvement Project এবং পদ্মাসেতু ভারতের কলকাতার সাথে, SUSEC রোড প্রজেক্ট ভারতের শিলিগুড়ির সাথে এবং আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের সাথে ট্রানজিট কানেক্টিভিটি তৈরির স্বার্থে। একইভাবে জাপানী ঋণে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে দখলদার মার্কিনীদের ভূরাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থে। বৈদেশিক ঋণ নির্ভর এই প্রকল্পগুলো থেকে জনগণ ন্যুনতম সুবিধা পায় কি পায় না কিন্তু ঋণের সম্পূর্ণ দায়ভার চলে আসে জনগণের ঘাড়ে। এই ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করতে জনগণের উপর ক্রমবর্ধমান হারে ট্যাক্সের বোঝা চাপানো হয়, বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি দেখা দেয়, মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয় এবং ঋণের ফাদে পড়ে দেশের সার্বভৌমত্ব বিলীন হয়। এই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে দেশের কৌশলগত ও প্রকৃত সম্পদ বিক্রি করে দিতে হয়। ইতিপূর্বে শ্রীলংকা বৈদেশিক ঋণে পরিশোধের জন্য তাদের হামবানটটা সমুদ্র বন্দর বিক্রি করতে বাধ্য হয়। শ্রীলংকা বৈদেশিক ঋণ ফাদের সাম্প্রতিক উদাহরণ, শ্রীলংকার মুদ্রার মান ইতিমধ্যে ৩৬% অবমূল্যায়ন হয়েছে এবং বর্তমানে শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসায় দেশটি এখন দেউলিয়া। আরেকটি বাস্তবতা হচ্ছে, বৈদেশিক ঋণনির্ভর এসব মেগাপ্রকল্পের মাধ্যমে দখলদার পশ্চিমাগোষ্ঠী কোন দেশকে ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ করে এবং এই ঋণকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তাদের ঘৃণ্য ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ আদায় করে।

    অন্যদিকে অর্থনীতির ভিত্তিকে শক্তিশালী করা এবং উম্মাহ্‌’র সার্বভৌমত্বের স্বার্থেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হাতে নিবে ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফত সরকার। খিলাফত সরকারের পাবলিক ফাইন্যান্সের নীতি অনুসারে, অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণের ঘাড়ে ট্যাক্স ও ঋণের বোঝা চাপিয়ে জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলা হবে না কিংবা ইঙ্গ-মার্কিন-ভারতের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় আনার প্রশ্নই আসবে না। সড়ক-মহাসড়ক, সেতু-কালভার্ট, রেলপথ,  বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর ইত্যাদির মত অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ফান্ডের ব্যবস্থা শারীআহ্‌ নির্ধারিত খাত থেকেই করা হবে। গণীমত ও খারাজ থেকে প্রাপ্ত আয়  (কৃষিভূমির খারাজ, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, বিনা যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ (ফাই), সক্ষম অমুসলিম পুরুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত জিজিয়া কর), গণমালিকানাধীন সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয় (তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, খনিজ সম্পদ, তৃণভূমি, খাল-বিল, ঝর্না, সংরক্ষিত ভূমি বা হিমা), সাদাকাহ থেকে প্রাপ্ত আয় (কৃষি-ফসল-ফলমূল থেকে প্রাপ্ত উশর, নগদ টাকা, ব্যবসায়িক পণ্য, গবাদিপশুর যাকাত) ইত্যাদি উৎস থেকে অবকাঠামো খাতে প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান করা হবে। খিলাফত রাষ্ট্র গণমালিকানাধীন ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন সম্পদের সাথে যুক্ত বিভিন্ন শিল্প ও কল-কারাখানা যেমনঃ উন্নতমানের ইলেক্ট্রনিক্স ও গাড়ী প্রস্তুতকারী শিল্প থেকেও প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায় করে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ফান্ড বরাদ্দ দিবে। খিলাফত রাষ্ট্র পাবলিক ফাইন্যান্সের এই স্বতন্ত্র মডেল অনুসরণ করার মাধ্যমে জনগণের উপর ট্যাক্স ও ঋণের বোঝা না চাপিয়ে এবং অর্থনৈতিক জীবনশক্তির শ্বাসরোধ না করেই প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায় করবে এবং সকল প্রকার ব্যয়ভার মেটাতে সক্ষম হবে। 

        মোহাম্মদ সিফাত 

“দেশে বছরে ৬৪ লাখ মানুষ চিকিৎসা করাতে গিয়ে দরিদ্র হচ্ছে”

খবরঃ

    গত ৭ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের বর্তমান জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারে ‘ডক্টরস প্ল্যাটফরম ফর পিপলস হেলথ’র সদস্য সচিব ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, “প্রতিবছর দেশে ৬৪ লাখ মানুষ শুধুমাত্র ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ-রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। রোগ প্রতিরোধ, দীর্ঘায়িত জীবন এবং স্বাস্থ্য— এই তিনটিই জনস্বাস্থ্যের মৌলিক উপাদান, যা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হয়।” (https://www.banglatribune.com/737451 )

মন্তব্যঃ

    আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) কর্তৃক মানুষকে প্রদত্ত নিয়ামতসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সুস্থতা। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) যেমন বিভিন্ন রোগ দিয়েছেন তেমনি দিয়েছেন এর থেকে আরোগ্য লাভের ঔষুধ। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ তায়ালা এমন কোনো রোগ অবতীর্ণ করেননি যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি” (বোখারি: ৫২৭৬)। মানুষকে শুধুমাত্র রোগ থেকে মুক্তির জন্য ঔষুধ খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এবং ব্যাপক ভিত্তিতে একটি দেশের মানুষের সুস্থতা নিশ্চিত করা হচ্ছে রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহ অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় বিষয় যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদির মত স্বাস্থ্যখাতকেও রাষ্ট্রের দায় থেকে মুক্তি দিয়ে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিয়েছে। ফলে পুঁজিপতিরা এসকল মৌলিক চাহিদাসমূহকে পণ্যে পরিণত করে জনগণের টাকা নিজেদের পকেটস্থ করে প্রতিনিয়তই পূঁজির পাহাড় গড়ে তুলছে। ফলে আমরা একদিকে দেখতে পাই সরকারী হাসপাতালগুলোকে পরিকল্পনামাফিক মানহীন করে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্যসেবা বিক্রির মাধ্যমে কসাইখানায় পরিণত হচ্ছে। ফলে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি, বিভিন্ন ট্যাক্সের বোঝা, বেকারত্ব, আয় কমে যাওয়া, ব্যবসায় লস – ইত্যাদিতে মানুষ যখন দিশেহারা তখন চক্রবৃদ্ধি হারে বর্ধিত চিকিৎসা খরচ যেন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। ফলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যখন বলে, ‘চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ কোটি ১৪ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে’, তখন তা আর খুববেশি অস্বাভাবিক মনে হয় না।

    বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়েই লোভী ও ভোগবাদী পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মানবতা ও মানুষের সেবার বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়েছে, মূখ্য হয়ে পড়েছে মুনাফা অর্জন। ফলে আমরা দেখতে পাই চিকিৎসার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শুধুমাত্র তাদের জন্যই বরাদ্দ যারা একে অর্থ দিয়ে ক্রয় করতে সক্ষম। ফলে একদিকে আমরা দেখি ঔষুধের প্যাটেন্ট নিয়ে বিশ্বের বড় বড় ঔষুধ কোম্পানীসমূহ একচেটিয়া মুনাফা করে যাচ্ছে আর অন্যদিকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে হাসপাতাল আর ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের বিস্তার ঘটছে। উপরন্তু সাম্প্রতিক করোনাকালীন সময়ে সারাবিশ্বের স্বাস্থ্যসেবার দুরবস্থা আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। আইসিইউ’র অভাব, হাসপাতালে সিটের অভাব, টেস্টিং কীটের অভাব, ডাক্তার-নার্সদের পিপিই’র অভাব, ভ্যাক্সিনের মনোপলি ও পশ্চিমা দেশসমূহের ব্যবসা ইত্যাদি আমাদের সামনে একটি বিষয়ই পরিষ্কার করেছে যে, এই পূঁজিবাদী ব্যবস্থার হাতে আমাদের জীবন এখন আর নিরাপদ না।

পক্ষান্তরে, খিলাফত ব্যবস্থায় নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও ঔষুধের সহজলভ্যতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে কারণ, ইমাম বা খলীফা হচ্ছেন সকল নাগরিকের অভিভাবক এবং তিনি সবার দেখভালের জন্য দায়িত্বশীল। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “তোমাদের আমির (শাসক) হচ্ছে রাখাল এবং তার অধীনস্থদের ব্যাপারে সে দায়িত্বশীল” (বুখারি, মুসলিম)। তাই খিলাফত রাষ্ট্র সকল নাগরিককে বিনাখরচে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবে, ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডাক্তার, ঔষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবাসমূহও সরবরাহ করবে। আর এ কারণে আমরা দেখি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুরু করে সর্বশেষ উসমানী খলীফা পর্যন্ত সবাই নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে ছিলেন সদা সতর্ক। লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, ধনী-দরিদ্র ভেদে সকলের জন্যই চিকিৎসা সেবা ছিল ফ্রি। প্রতিটি হাসপাতালই ছিল নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত। উপরন্তু এসকল হাসপাতালে দামী ফার্নিচার, কম্বল, পোশাক, খাবার, সেবা, পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করা হতো। এসকল হাসপাতালে কর্মরত থাকত সেসময়কার সেরা সব ডাক্তারগণ। এমনকি হাসপাতালের অত্যাধিক বিলাসী জীবনযাপনে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই অসুস্থতার ভান করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করত। হাসপাতালের চিকিৎসা শেষে আরোগ্য লাভের পর রোগীদেরকে পরিমানমত টাকা দেওয়া হত যাতে সে সম্পূর্ন আরোগ্য লাভ করার আগ-পর্যন্ত যাতে তাকে আর কাজ করতে না হয়। আর এসবই সম্ভব হয়েছিল কারণ সেই শাসকরা নিজেদেরকে ইসলাম দ্বারা গড়ে তুলেছিলেন এবং ত্বাকওয়ার কারণে তারা ছিলেন জনগণের প্রতি সচেতন; বর্তমান ব্যবস্থার মত কতিপয় পুঁজিপতিদের হাতে এরকম গুরুত্বপূর্ণ খাতকে ছেড়ে দিতেন না।  

        মো. হাফিজুর রহমান

“বেগুনের দাম বাড়লে মিষ্টি কুমড়ার ‘বেগুনি’ খেলেই হয়: প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ

    রোজায় বেগুনের দাম বাড়লে অন্য সবজি দিয়ে ‘বেগুনি’ বানিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানিয়েছেন, তিনি নিজেও কুমড়া দিয়ে ‘বেগুনি’ বানিয়ে খান এবং সেটি খেতে ভীষণ মজার। রোজায় পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের পাশাপাশি জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধিকে একটি কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, দাম বাড়লেও দেশে পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই, কিন্তু অনেক উন্নত দেশে পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে না। (https://www.newsbangla24.com/news/186747/If-the-price-of-brinjal-goes-up-eat-pumpkin-brinjal-PM

মন্তব্যঃ

    শুধুমাত্র বেগুন, লেবু, তরমুজের পণ্যবাহী ট্রাক থেকে মাসে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হয় (dw.com, 7.4.2022)। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই চাঁদা বন্ধের নির্দেশ না দিয়ে কুমড়া দিয়ে বেগুনি, তেল এবং পিয়াজ ছাড়া রান্না করার পরামর্শ দিচ্ছেন। সরকার কখনও পরিবহণ খাতের অবৈধ চাঁদাবাজী বন্ধের নির্দেশ দিবে না কারণ সরকার দলীয় সন্ত্রাসী ও প্রশাসনের সমন্বয়ে যে দানবীয় সত্ত্বা গড়ে উঠেছে তা বাঁচিয়ে রাখার রসদ হচ্ছে এই চাঁদাবাজি। তাদের ক্ষমতায় যাওয়া বা টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন একদল পেটুয়া বাহিনী  ও হেলমেট বাহিনীর যারা জনগণকে অত্যাচার ও নির্যাতন করে ভয় দেখিয়ে তাদের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে সহায়তা করবে। জনবিরোধী এসব শাসকগোষ্ঠী তাদের রাজনৈতিক কর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতভাগ আনুগত্য লাভ করার জন্য তাদের চাঁদাবাজির সুযোগ দেয়। এইভাবে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী এবং দুর্নীতিবাজ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ষ্টেকহোল্ডার হয়ে উঠে। তাই এই ব্যবস্থায় ক্ষমতার পালাবদল হলেও চাঁদাবাজির কোন পরিবর্তন হয় না। শুধুমাত্র চাঁদাবাজ চক্রেরও চেহারা পরিবর্তন হয়। বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর সহায়তায় এই লুটেরা শ্রেণী চাঁদাবজিকে এতটাই প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে যে তারা এখন রশিদের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করছে।

    সড়ক পরিবহণসহ সকল খাতের চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজন যেখানে রাজনীতির উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত স্বার্থস্বিদ্ধি করা নয়, রাজনীতি মুনাফা নিশ্চিতের ক্যারিয়ার না কিংবা পেটুয়া বাহিনীর উপর ভর করে টিকে থাকাও নয়, বরং জনগণের কল্যাণ সাধনে সর্বোচ্চ চেষ্টা ও ত্যাগ স্বীকার করা। শুধুমাত্র ইসলামী আদর্শের উপর ভিত্তি করে গঠিত রাজনৈতিক দলগুলো হতে এমন রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক পাওয়া সম্ভব, যারা উপরোক্ত মানদন্ডে উত্তীর্ণ হবে। কারণ ইসলামে রাজনীতি একটি ইবাদত। ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতির উর্ধ্বে গিয়ে এই দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং ব্যর্থতার জন্য পরকালে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট জবাবদিহি করতে হয়। আসন্ন খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে অচিরেই উম্মাহ্‌ এমন রাষ্ট্রনায়কদের সান্নিধ্য পাবে। ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান খলিফা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যগুলোর দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য শারীআহ্‌’র আলোকে বাজারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবেন যাতে কৃষক যেমন তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যা দাম পায় একইভাবে ভোক্তারা যেন ন্যায্য মূ্ল্যে পণ্যক্রয় করার সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করবেন, ইনশাআল্লাহ্‌। 

        —মোঃ সিরাজুল ইসলাম 

“বাংলাদেশ কখনো ঋণখেলাপি হয়নি, হবেও না: সংসদে প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ

    বাংলাদেশের পরিণতিও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে—এমন আশঙ্কার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কখনো খেলাপি (ডিফল্টার) হয়নি, হবেও না। দেশের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক মজবুত, সরকার অত্যন্ত সতর্ক। আজ বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। এর আগে বাংলাদেশের পরিণতি শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে—এমন আশঙ্কা করে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছিলেন, বিদেশি ঋণের বোঝা বাংলাদেশ বইতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/বাংলাদেশ-কখনো-ঋণখেলাপি-হয়নি-হবেও-না-সংসদে-প্রধানমন্ত্রী ) 

মন্তব্যঃ

    দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ মাথাপিছু (৩৮১৯ ডলার) আয়ধারী শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থা এতটাই নাজুক যে চিকিৎসাসেবা মিলছে না, ঔষধ পাওয়া যাচ্ছে না। পেট্রোল পাম্পে লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে, চালের কেজি ৪০০ টাকা ছাড়িয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা যেকোন জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখের ও বেদনার এবং এই দুর্দশা কোন জাতির উপর নেমে আসুক সেটাও কাম্য নয়। আমরা জনগণও চাই না আমাদের উপর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আসুক। কিন্তু আজকে শ্রীলঙ্কা যে পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছে তার মুল কারণ মানব সৃষ্ট পুঁজিবাদের অর্থনীতি গ্রহন করার কারণে, যেই ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক মডেল হচ্ছে সম্পূর্ণ ঋণ-নির্ভর এবং পশ্চিমাদেশ সমূহ, আইএমএফ (IMF) এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক (world bank)-এর পেশক্রিপ্শন অনুযায়ী এমনসব নীতি বাস্তবায়ন করা হয় যার ফলে একটা দেশ ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ে এবং অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভঙ্গুর অবস্থায় গিয়ে পৌঁছায়। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ইন্দোনোশিয়া, স্পেন, লেবানন, গ্রিস। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার কিংবা বিগত সরকারসমূহ কেউই পুঁজিবাদী পেশক্রিপশনের বাইরে ছিল না। তাই আমাদের শাসকেরা SAP (Structural Adjustment Program) ও PRSP (Poverty Reduction Strategy Paper) এর মত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে আসছে যার আওতাধীন হিসাবে কৃষিক্ষেত্রে সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করা বা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমিয়ে আনা হয়েছে, রাষ্ট্রায়াত্ত চিনিকল, পাটকলগুলো বন্ধ করে বেসরকারি মালিকানায় আনা হচ্ছে, টেলিকমিউনিকেশন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, Real Economy নয় এমন খাত যেমন শেয়ার মার্কেট, পর্যটনের মত খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, ইত্যাদি করছে। তাই বাংলাদেশ হোক আর যেকোন দেশ হোক না কেন, যারা পুঁজিবাদের পেশক্রিপশন মেনে চলবে সে দেশের অর্থনৈতিক পতন অবশ্যম্ভাবী। এখানে প্রধানমন্ত্রী যতই বলুক না কেন, আমাদের জনসংখ্যা বেশি, আমাদের ঋণ জিডিপির ১৬% এর মধ্যে আছে, শ্রীলঙ্কা মডেল এখানে খাটবে না। তাই আমাদের অবশ্যম্ভাবী পতনের হাত থেকে রক্ষার জন্য পুজিঁবাদী অর্থব্যবস্থা ও জীবনব্যবস্থাকে ত্যাগ করতে হবে। এবং এমন এক সত্তার কাছ থেকে সমাধান গ্রহণ করতে হবে যিনি অসীম, অনন্ত, এবং সকল অক্ষমতার উর্ধ্বে। তিনি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যিনি আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন “ইহা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই” (সুরা আল-বাকারাহঃ ০২)।

ইসলাম এমন এক জীবনব্যবস্থা যেটা শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির কল্যানের জন্য। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: “এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন” (সুরা ইব্রাহিমঃ ০১)। তাই বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা থেকেও মুক্তির একমাত্র পথ আল্লাহ্‌র বিধান তথা খিলাফত রাষ্ট্রের দিকে ফিরে আসা। খিলাফত রাষ্ট্রে সুদ এবং ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক মডেল পরিত্যাজ্য। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এর যে পলিসিগত আধিপত্য (পানি, তেল, গ্যাস এর মত গণমালিকানাধীন সম্পদের বেসরকারীকরণ, সস্তায় তেল-গ্যাস বিদেশী কোম্পানীদের হাতে তুলে দেয়া, ভর্তুকি তুলে নেয়া ইত্যাদি) আমরা দেখতে পাচ্ছি তা সমূলে উৎপাটন করা হবে। খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছাড়া আর অন্যকোন বিকল্প বাংলাদেশের সামনে নেই। মুষ্টিমেয় মানুষের স্বার্থে পরিচালিত আইন দ্বারা বর্তমান সমস্যার সমাধান সম্ভব না, অন্যথায় অতিশীঘ্রই আমাদেরও শ্রীলঙ্কার ভাগ্যবরণ করতে হবে। বর্তমান এই পুঁজিবাদী সরকার সেদিকেই আমাদের অর্থনীতিকে ধাবিত করছে।

        —ইরফান আবিদ

“ঢাকা যেন নিশ্চল মহানগর”

খবরঃ

    বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) হিসাব বলছে, ২০০৭ সালে ঢাকার সড়কে যানবাহনের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। বিষয়ে এআরআইয়ের পরিচালক অধ্যাপক হাদীউজ্জামান বলেন, ঢাকা এখন ক্যান্সারের রোগীতে পরিণত হয়েছে। এর হৃৎস্পন্দন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। অবস্থার পরিবর্তন না হলে এ শহরকে সচল রাখা যাবে না। এদিকে সরকার একে একে মেগাপ্রকল্প বাড়িয়েই যাচ্ছে। যানজট নিরসনে গত দুই দশকে বিভিন্ন প্রকল্পে ৫৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। বর্তমানে চলমান কিছু মেগাপ্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছে আরও এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের বিভিন্ন সড়ক ও উড়ালসড়ক প্রকল্প। পাঁচটি মেট্রোরেল ও সাবওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনাও সরকারের আছে। সড়ক মন্ত্রী বলছেন সাবওয়ে ছাড়া ঢাকা শহরের যানজট দূর করা সম্ভব না। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/capital/ঢাকা-যেন-নিশ্চল-মহানগর)

মন্তব্যঃ

    উনবিংশ শতকের শেষদিক থেকে শুরু করে বিংশ শতকের শেষদিকে এসে শহর ও মেগাশহরের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। জাতিসংঘ বলছে এই প্রবণতা আরও বাড়তে থাকবে। তাদের ভবিষ্যৎবাণী হচ্ছে বর্তমান ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ শহরে বসবাস করবে। শহরীকরণের বৈশ্বিক ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায় বড় শহরের এই উল্লম্ফন স্বাভাবিক নয়, এর গতিবৃদ্ধি পেয়েছে বিশ্বজুড়ে পশ্চিমা পুঁজিবাদী সভ্যতার বিস্তারের সমানুপাতিক হারে। পূর্বে শহর গঠিত হতো কৃষি উৎপাদন, বিপনন, ভৌগলিক সুবিধা, আদর্শিক ও রাজনৈতিক কারণে। কিন্তু বর্তমানে বড় শহর তৈরি হওয়ার পেছনে উৎপাদন ও ব্যবসার এককেন্দ্রীকরণের প্রবণতা দেখা যায়। এটির সত্যতা পাওয়া যায় জাতিসংঘের আরেক তথ্যে, ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ শহরের বস্তিতে বসবাস করবে। অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষের শহরে আসা মানেই উন্নত জীবন নয়, বরং এদের অনেকেই জীবনের মৌলিক প্রয়োজনে শহরে এসে আটকা পড়তে বাধ্য হয়।

    তাছাড়া অনেক মানুষ একস্থানে জড়ো করতে পারলে অল্প জায়গায় বড় বাজার তৈরি হয় যা বড় ব্যবসায়ী বা পুঁজিপতিদের জন্য আকর্ষনীয়। কিন্তু এই শহরীকরণ যেহেতু কৃত্রিম সেহেতু এটি নিয়ে আসে নানা নাগরিক দুর্যোগ এবং বিপর্যয়। এইসব জরুরি সমস্যা নিরসনের কথা বলে তখন নিয়ে আসা হয় মেগাপ্রকল্প। মৌলিক অবকাঠামোভিত্তিক এসব মেগাপ্রকল্প মুনাফালোভী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানেরও বেশ পছন্দ কারণ এগুলো তাদের জন্য নিরাপদ ব্যবসা আর সরকারের কাছেও পছন্দ কারণ মেগাপ্রকল্প মানে মেগাদুর্নীতির সুবর্ণ সুযোগ। তাই মানুষের জন্য সেবা ও সুযোগ সমূহকে শহরে সীমাবদ্ধ করে মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যক মানুষকে শহরে ঢুকিয়ে শহরকে অনেকটা নিশ্চল করা একটি পুঁজিবাদী প্রযোজনা, যাতে একের পর এক মেগাপ্রকল্পকে যুক্তিযুক্ত করা যায়।

    ইসলামে শহর গড়ে উঠে মানুষের প্রয়োজন পুরণ ও যোগাযোগ স্থাপনের প্রাকৃতিক ভৌগোলিক সুবিধার ভিত্তিতে। ফলে এসব শহরের মানুষের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টি অনেক গণমূখী হয়। ইসলাম মানেই যে মেগা প্রকল্প বা মেগা অবকাঠামো হবে না তা নয়। ইসলামী খিলাফতের ইতিহাসে পানির সেবা প্রদানে বা যাতায়াতের জন্য অনেক বড় বড় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলো নেয়া হয়েছে মানুষের প্রয়োজন পুরণের উদ্দেশ্যে। খিলাফতের ইতিহাসে মেগা প্রকল্পের উদাহরণ প্রচুর। যেমন উমাইয়া খিলাফতের সময় ৭০০ খ্রীস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ইরাকের আল-আনবার শহরবাসীর প্রয়োজনে সেখানকার ততকালীন ওয়ালী বা গভর্ণর সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস পর্বত শ্রেনীর পাদদেশ দিয়ে দীর্ঘ নদী খনন করেন। নদীটির নাম দেয়া হয় সাদ নদী। পরবর্তীতে আরেক গভর্ণর হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ নদীটিকে পর্বতশ্রেণী পার করে দেন। খলিফারা তাদের শহরগুলোর ভিতরে যোগাযোগের জন্য এবং আন্তঃশহর যোগাযোগের জন্যও অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। যেমন ‘দার্ব যুবাইদাহ’ বা ‘যুবাইদাহ মহাসড়ক’ যেটি একসময় স্পেনের ও উত্তর আফ্রিকার শহরগুলোকে সংযুক্ত করেছিল মক্কা-মদিনা থেকে বাগদাদ পর্যন্ত। এই মহাসড়কের নামকরণ করা হয়েছিল বিখ্যাত আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রীর নামে।

        —মোহাম্মদ তালহা হোসেন

“বাঁধ ভাঙ্গার পানিতে ডুবছে ফসল, হাওরে হাহাকার”

খবরঃ 

    ঢলের পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরে ফসলহানির পর একে একে তলিয়েছে অন্তত ১০টি হাওর। বাঁধে ফাটল ধরায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে আরও দশ হাওরের ফসল। বিপুল ফসলহানিতে হাওরাঞ্চলে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে হাহাকার। ২ এপ্রিল প্রথম নজরখালী বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় টাঙ্গুয়ার হাওরের ফসল। এরপর একের পর এক বাঁধে ভাঙন ও ফাটল দেখা দেয়। অনেক জায়গায় বাঁধ উপচেও হাওরে ঢুকছে পানি। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের হিসাবে, গত ৭ দিনে জেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ২০ হাজার টন উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।… স্থানীয় কৃষক রেজাউল হাসানের অভিযোগ, যথাসময়ে এই বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। শেষ সময়ে তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে গিয়ে নিম্নমানের কাজ হয়েছে। এখন ঢলে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সুনামগঞ্জে ১২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ৫৩২ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৪ কোটি টাকা। (https://www.abnews24.com/country-news/182189/

মন্তব্যঃ

    বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে পানি ঢুকে কৃষকের ফসল নষ্ট এটা নতুন কিছু না। প্রায় প্রতিবছরই আমরা এরকম খবর পাই। ভেবে নেই এটা হয়তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কারো কিছু করার নাই। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায় এই দুর্যোগ আসলে দায়িত্বজ্ঞানহীন শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দুর্নীতিগ্রস্থ শাসনব্যবস্থার একটা স্বাভাবিক পরিণতি। স্থানীয় অভিজ্ঞ কৃষকরা ঠিকই জানে পানির প্রথম ঢল আসে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। তাহলে বাঁধ মেরামতের কাজ মার্চের মধ্যে কেন শেষ করা যায় না? কিংবা বাঁধগুলো কেন টেকসই করে তৈরি করা যায় না? এসব প্রশ্নের উত্তর একটাই কৃষকের ক্ষতিতে শাসকগোষ্ঠীর কিছু আসে যায় না। বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির থামানো যায় না কারণ তাতে হিস্যা আছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও রক্তচোষা কিছু পুঁজিপতির। 

    ভাবতে অবাক লাগে জনগণের দায়িত্ব নেয়ার অঙ্গীকার করে এসব শাসকগোষ্ঠী জনগণের বিষয়ে এতটা উদাসীন থাকে কি করে! আসলে, মূল কথাটা হল দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহিতা। মানবরচিত বর্তমান শাসনব্যবস্থায় শাসকগণ শাসন করাটাকে তাদের রাজনীতির বিজয় বা পুরষ্কার হিসেবে দেখে। অনেক ক্ষেত্রে তারা এটা তাদের বংশীয় অধিকার মনে করে। এটাকে দায়িত্ব হিসেবে তারা দেখেই না। দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করলে তার জন্য দুনিয়াতে বা আখিরাতে লাঞ্ছিত হতে হবে, শাস্তি পেতে হবে-শাসনকার্যকে তারা এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেই না। ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিদেশী শক্তি ও দেশীয় পুঁজিপতিদের সন্তুষ্ট  করার ক্ষেত্রে তারা ঠিকই যত্নবান। অথচ গরিব কৃষকদের বিষয়ে যত গাফিলতি। হাওরের বাঁধ ভাঙলে ভাঙ্গুক, কৃষকের কান্না তো তাদের ক্ষমতার বাঁধ ভাঙ্গতে পারবে না। হাওরের সমস্যা সমাধানে নয়, বরং সমস্যাকে পুঁজি করে কিভাবে ফায়দা নেয়া যায় সে বিষয়ে তারা পারদর্শী, তাই হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের পরিকল্পনাও ইতিমধ্যে হয়ে গেছে (https://www.banglatribune.com/national/714229/হাওরে-সড়ক-উড়াল-সেতু-একনেকে-উঠছে-৩৫০০-কোটি-টাকার)। তাতে বিদেশী ঋণ, বিদেশী কনট্রাক্টর, বিদেশী কনসালটেন্সির মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদীদের তুষ্ট রাখা যাবে আর কমিশন ও মারিংকাটিংয়ের মাধ্যমে দেশীয় কিছু পুঁজিপতিও লাভবান হবে। যদিও ঋণের বোঝা রয়ে যাবে জনগণের ঘাড়ের উপর। যে শাসকগোষ্ঠী মাত্র ১২৪ কোটি টাকার বাঁধ মেরামতের কাজে দুর্নীতি সামাল দিতে পারে না (দেখুনঃ https://www.thedailystar.net/bangla/সংবাদ/বাংলাদেশ/হাওরে-বাঁধ-নির্মাণে-অনিয়মকারীদের-বিরুদ্ধে-ব্যবস্থা-নেওয়া-হবে-পরিকল্পনামন্ত্রী-335281) তারা ৩৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পে কি পরিমাণ হরিলুট করবে তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?

    এই দুর্নীতিগ্রস্থ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন শাসকদের দিয়ে হাওর অঞ্চলের কৃষকদের সমস্যা সমাধান হবে না। তার জন্য দরকার দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা ও দায়িত্বশীল শাসক যিনি জনগণের অভিভাবক হিসেবে জনগণের সমস্যা সমাধানে কাজ করবে। একমাত্র খিলাফত ব্যবস্থাই পারে সে রকম দায়িত্বশীল শাসক তৈরি করতে কারণ শারীআহ্‌ বিধান অনুযায়ী খলিফা তার নিজের কাজের জন্য আল্লাহ্‌’র কাছে এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন: “যাকে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রজাদের উপর শাসক বানিয়েছেন সে যদি তাদের পূর্ণাঙ্গভাবে কল্যাণ কামনা না করে, তবে জান্নাতের ঘ্রাণও তার নসীব হবে না।“ খিলাফতের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই খলিফারা কৃষকের অধিকারের বিষয়ে সচেতন ছিলেন। হযরত ওমর (রা.) বলতেন, তোমরা কৃষকদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌‘কে ভয় করো। (অর্থাৎ তাদের প্রতি জুলুম করো না। খলিফা জিয়াদ বিন আবিহ কর্মচারীদের বলেন, তোমরা কৃষকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। কেননা তারা যতদিন মোটা-তাজা থাকবে, তোমরাও ততদিন মোটা-তাজা থাকতে পারবে (অর্থাৎ সুখে থাকবে)। (তাসহিলুন নজর, পৃ. ১৫৯)। 

        —আবু যায়েদ