working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 49

Weekly

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা

৪৯ তম সংখ্যা । ২২ মার্চ, ২০২২

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

“আ.লীগ-বিজেপির বৈঠকে সম্পর্ক জোরদার নিয়ে আলোচনা”

“এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড: প্রধানমন্ত্রী

ইউক্রেনের যুদ্ধে গাজীপুরের হাবিবের ছেলে তাইয়েব”

“হিজাব ইসলামে অপরিহার্য নয়- ভারতের আদালতে রায়”

“একটি পার্কদুটি সুইমিং পুলএক দশকের চক্কর”

“কীভাবে নদীর মালিকানা পেল হবিগঞ্জের একটি পরিবার?”

“শরীরজুড়ে ক্ষত নিয়ে খালি বাসার ‘বাথরুমে’ আটকা শিশু; ৩ দিন পর উদ্ধার”

 

 

“আ.লীগ-বিজেপির বৈঠকে সম্পর্ক জোরদার নিয়ে আলোচনা”

খবরঃ

ঢাকায় সফররত ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিভাগের প্রধান বিজয় মুরলিধর চৌথাইওয়ালে’র সঙ্গে বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলীয় জোটের প্রতিনিধি দল। সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আলাদাভাবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নিজেদের মধ্যেকার বিদ্যমান সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক সুসম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো জোরদার হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।… এর আগে সকালে বিজয় চৌথাইওয়াল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একই দিন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটি এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।(https://www.jugantor.com/politics/530775/আ.লীগবিজেপির-বৈঠকে-সম্পর্ক-জোরদার-নিয়ে-আলোচনা)

মন্তব্যঃ

আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবী করে। তাদের রাজনৈতিক আদর্শে এমনি দৈন্যতা দেখা দিয়েছে যে বিজেপির মত একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক বিদেশি দলের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে বৈঠক করতে হচ্ছে। নাকি সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোর দালালি করে ক্ষমতায় টিকে থাকাই তাদের প্রধান আদর্শ আর বাকি সব রাজনৈতিক তন্ত্র-মন্ত্র কেবলই ভণিতা মাত্র? তাই যদি না হয় তবে এই জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলটি জনগণের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন না করে ভারতীয় উগ্র মুসলিমবিদ্বেষী একটি সন্ত্রাসী দলের সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে কার নির্দেশে? গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি বিশ্বব্যাপী এক চরম দুঃসময় পার করছে। আদর্শিক দুর্বলতা ও ভণ্ডামী ক্রমশ উন্মোচিত হয়ে পরায় তারা বাধ্য হচ্ছে তাদের নীতির সাথে আপোষ করতে। এটাই একটা রাজনৈতিক আদর্শ পতনের সুস্পষ্ট নিদর্শন।

আওয়ামীলীগ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ধকরণের কথা বলে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে দমন করতে মরিয়া। অথচ তারাই উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক বিজিপির সাথে বুক মেলাতে ব্যাকুল। কতটা নির্লজ্জ হলে বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম দেশের ক্ষমতাসীন দল ভারতের সেই দলের সাথে বৈঠক করে যারা প্রকাশ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়, মুসলিমদের রক্তে যাদের হাত রঞ্জিত, মুসলিমদের যারা বাস্তুচ্যুত করতে চায় (“হরিদ্বারে হিন্দু সাধুদের মুসলিম হত্যার ডাকে বিব্রত ভারত”- https://www.bbc.com/bengali/news-59820659)।

দুর্ভাগ্য এদেশের মুসলিমদের! আজ তারা এমন একটি শোষণমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থার শিকার যেখানে আওয়ামী-বিএনপির মত নীতিহীন বেহায়া দল রাজনীতি করার সুযোগ পায়। তাদের কাছে দেশের স্বার্থ, মুসলিমদের অধিকার কোন কিছুই সুরক্ষিত নয়। অথচ এই ব্যবস্থাকে অপসারণ করে যদি খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে যায় তাহলে কোন রাজনৈতিক দল অন্যকোন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রাখতে পারবে না। কুরআন-সুন্নাহ্‌’র ভিত্তিতে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮২ অনুযায়ী: “কোন ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী অথবা সংগঠনের বিদেশী কোন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক থাকা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি কেবলমাত্র রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ, কারণ উম্মাহ্‌’র বিষয়াদির তত্ত্বাবধানের অধিকার শুধুমাত্র রাষ্ট্রের রয়েছে। উম্মাহ্ পররাষ্ট্রীয় সম্পর্কের বিষয়ে রাষ্ট্রকে জবাবদিহি করবে”। অবশ্যই তার প্রয়োজনও পড়বে না, কারণ রাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষার যাবতীয় দায়িত্ব জনগণের অভিভাবক হিসেবে খলিফা পালন করবেন।

–      করিম আবু যায়েদ

“এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড: প্রধানমন্ত্রী

খবরঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা এক কোটি মানুষকে স্পেশাল কার্ড দিয়ে দেবো। সেই কার্ড দিয়ে ন্যায্যমূল্যে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি জিনিস কিনতে পারবে।’ মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বেড়ে যায় তখন খুববেশীতো আমাদের কিছু করার থাকে না। এক্ষেত্রে কিছুতো কম্প্রোমাইজ করতে হবে। তবে রোজার সময় দ্রব্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যে ৩৮ লাখ লোককে আমরা টাকা দিচ্ছি, সেটাতো থাকবেই। সেটা ধরে আমরা আরও এক কোটি লোককে বিশেষ কার্ড করে দেবো।  ( www.banglatribune.com/national/733489/এক-কোটি-মানুষকে-বিশেষ-কার্ড-প্রধানমন্ত্রী)

মন্তব্যঃ

পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থেকে জনগণের দুর্দশা লাঘবের জন্য তথাকথিত স্পেশাল কার্ড প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা জনগণের সাথে তামাশা এবং রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ সাম্রাজ্যবাদী আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শে (যেমন, স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম) বিভিন্ন পুঁজিবাদী নীতি বাস্তবায়ন। যার মধ্যে রয়েছে প্রথমত, দেশের জনগণের প্রয়োজন মিটানোর জন্য কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে আমদানিমুখী করার মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক বাজারের উপর র্নিভরশীল করা, যার ফলে আর্ন্তজাতিক বাজারে সামান্য পরিবর্তনের অজুহাতে দেশের বাজারে পণ্যদ্রব্যের মূল্য ব্যাপকভাবে উঠানামা করে। দ্বিতীয়ত,  দেশের জনগণের প্রয়োজন মিটানোর জন্য উপযোগী শিল্প কারখানাকে প্রণোদনা না দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের প্রয়োজন মিটানোর জন্য ১০০% রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রণোদনা প্রদান করা। তৃতীয়ত, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনকারী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া। চতুর্থত, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর আমদানী শুল্ক, ভ্যাটসহ বিভিন্ন প্রকার ছদ্মবেশী কর আরোপ করে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করা। মূল্যবৃদ্ধির এই কারণগুলো সমাধান না করে স্পেশাল  কার্ড, টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় বা অন্যকোন পদক্ষেপের মাধ্যমে জনগণকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির উত্তাপ থেকে মুক্তি দেয়া যাবে না। বরং, প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের মত শাসকগোষ্ঠীর স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অতীতের এধরণের স্কিমগুলোর মত এই সুবিধা লুটপাট করে খাবে। যেমনঃ হতদরিদ্রদের উপহারের তালিকায় চেয়ারম্যানের পরিবার! (tbsnews.net, June 1, 2020)।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের জন্য ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো নিশ্চিত করা খিলাফত রাষ্ট্রের শারীয়াহ্‌ দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “ইমাম (খলিফা) হলেন অভিভাবক এবং তিনি তার নাগরিকদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল” (বুখারী)। খলিফা আমদানি নির্ভর পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিপরীতে ইসলামী অর্থনীতির আলোকে স্বনির্ভর অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। ইসলামের ভূমিনীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সকল অনাবাদী ভূমিকে চাষের আওতায় নিয়ে আসবেন। ইসলামে ভূমির মালিকানা চাষের সাথে যুক্ত। কেউ যদি  টানা ৩ বছর কৃষি জমি চাষাবাদ না করে ফেলে রাখে রাষ্ট্র তার কাছ থেকে জমি নিয়ে এমন ব্যক্তিকে প্রদান করবেন যিনি জমিটিকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “নিজে জমিটি চাষ কর অথবা এটা তোমার ভাইকে প্রদান কর।” এছাড়াও, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য খলিফা প্রয়োজনে কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ, সার, প্রযুক্তি, এবং বায়তুল মাল থেকে আর্থিক অনুদান ও সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করবেন। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজতকরণ শিল্প স্থাপন করার জন্য নাগরিকদের উৎসাহিত করবেন এবং প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং প্রয়োজনীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনের জন্য বৃহৎ কারখানা স্থাপন করবেন। যার ফলে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকরা ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য ক্রয় করার সুযোগ পাবে। তারপরও, যদি কোন নাগরিক ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে তার মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয় খলিফা বায়তুল মাল থেকে তার জন্য পর্যাপ্ত ভাতার ব্যবস্থা করবেন যাতে তিনি তার সকল প্রয়োজন পূরণ করে পারেন।

–      মো. সিরাজুল ইসলাম

 

“ইউক্রেনের যুদ্ধে গাজীপুরের হাবিবের ছেলে তাইয়েব”

খবরঃ

সৈনিক না হয়েও ইউক্রেনের হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের গাজীপুরের ছেলে মোহাম্মেদ তাইয়েব। পরিবারের সাথে তাইয়েব ইউক্রেনেই বসবাস করেন। মা-বাবার নিষেধ অমান্য করেই তায়েব যুদ্ধের মাঠে নামায় খুবই উদ্বিগ্ন ইউক্রেনে বসবাসরত তাইয়েবের মা-বাবা ও ভাই।  (https://bartabazar.com/archives/374286)

মন্তব্যঃ

প্রায় প্রত্যেকটা সেক্যুলার মিডিয়াই হাবিবের ছেলে তাইয়েবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এখন আর তারা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের তোয়াক্কা করছে না অথবা জঙ্গি, চরমপন্থি বা কথিত আইএসের মতাদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে বলেও প্রচার করছে না কিংবা তাইয়েবের অস্ত্র হাতে ছবি দেখে সেক্যুলার মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মীরা এখন আর মূর্ছা যাচ্ছে না। কিন্তু এই তাইয়্যেবই যদি ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসন, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর আগ্রাসন কিংবা কাশ্মিরে মুশরিক রাষ্ট্র ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতো, কিংবা এসব আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন পোস্ট শেয়ার করত তাহলে এসব সেক্যুলারদের প্রতিক্রিয়া হতো ঠিক উল্টো। যেমনটি দেখা যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তাদের নাগরিকদের রাশিয়ার বিরুদ্ধে “No War in Ukraine”, “Make Love-Not War”, “Stop War” প্লেকার্ডে সম্বলিত প্রতিবাদ সমাবেশে নামিয়েছে, এমনকি ইউক্রেনের হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করতেও উৎসাহ যোগাচ্ছে! আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটগুলো যখন জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়ায় সামরিক অভিযামের মাধ্যমে বর্বরতা চালায় তখন বাকি মুসলিম বিশ্বের যেকোন প্রতিবাদকে তারা “Islamic Terrorism” আখ্যা দিয়ে মুসলিম বিশ্বে তাদের দালাল শাসকদের দিয়ে তা কঠোর হস্তে দমন করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প কাশ্মীর দখলকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং জো বাইডেন ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইলী বর্বরতাকে ইসরাইলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার আছে’ বলে বৈধতা দিয়েছিলো। কিন্তু একই নিরাপত্তার অজুহাতে রাশিয়ার ইউক্রেনে সামরিক অভিযানকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র দখল বলে ইউরোপ এবং আমেরিকা যে “Double Standard” দেখিয়েছে তা বিশ্বের সকল সচেতন ব্যক্তিই প্রত্যক্ষ করছে। অথচ এই রাশিয়াই যখন সিরিয়ায় আগ্রাসন চালিয়ে হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করে, তখন পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে আমেরিকা তা আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে পুতিনকে Welcome জানিয়েছিলো। “We would welcome constructive contributions from the Russians to the anti-ISIL coalition,” White House spokesman Josh Earnest said, using an acronym for ISIS. (https://english.alarabiya.net/News/middle-east/2015/09/18/U-S-open-to-possible-military-talks-with-Russia-on-Syria)

পশ্চিমা পুঁজিবাদের জাতীয়তাবাদী চিন্তা একটি Double Standard and Destructive thinking যা তারা নিজের স্বার্থে কখনো পরিত্যাগ করে যেমন কাতালুনিয়া, আয়ারল্যান্ডের জাতীয়তা আবার নিজের স্বার্থে তা ব্যবহার করে যেমন ইউক্রেন এবং অন্যান্য মুসলিম ভূমিতে তাদের চাপিয়ে দেওয়া জাতীয়তা। জাতীয়তাবাদ সবসময় স্বার্থান্বেষী রাষ্ট্রসমূহকে নিজেদের জাতীয় গৌরবের স্বার্থে অন্যের ভূমি দখল করে সেখানে আধিপত্য লাভের সুযোগ দেয়। পশ্চিমারা ১৯২১ সালে জাতীয়তাদের বিষাক্ত চিন্তা দিয়েই ইসলামের মহান খিলাফতকে ৫৭টি জাতিরাষ্ট্রে বিভক্ত করে সেগুলোর উপর পূর্ণ দখলদারিত্ব কায়েম করে, যার চরম মূল মুসলিমরা আজ তাদের রক্ত, সম্পদ এবং নারীদের ইজ্জতের বিনিময়ে পরিশোধ করছে। একমাত্র নবুয়্যতের আদলে দ্বিতীয় খিলাফতই রাশিয়া এবং পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন আমেরিকা ও ইউরোপের কবল থেকে মুসলিম ভূমিগুলোকে মুক্ত করে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই ইমাম বা খলিফা হচ্ছে ঢালস্বরুপ যার পিছনে মুসলিমরা যুদ্ধ করে এবং নিজেদের রক্ষা করে।” (মুসলিম)

–      আবি আব্দুল্লাহ্‌

“হিজাব ইসলামে অপরিহার্য নয়- ভারতের আদালতে রায়”

খবরঃ

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের হাইকোর্ট সাম্প্রতিক এক রায়ে বলেছে – ‘মেয়েদের হিজাব পরা কখনোই ইসলাম ধর্মের অপরিহার্য অংশ নয়’। তাঁর আগে কর্ণাটক সরকার মেয়েদের স্কুলে-কলেজে হিজাব পরাকে নিষিদ্ধ করে। প্রতিবাদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অধিকার চেয়ে কর্নাটকের মুসলিম ছাত্রীরা আদালতে আবেদন করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি আর আর অবস্থীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ ওই আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, সরকারি স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীরা কী পোশাক পরে আসবে, সেই ইউনিফর্ম কোড বেঁধে দেওয়ার পূর্ণ অধিকার কর্তৃপক্ষের আছে। (https://www.bbc.com/bengali/news-60746339)

মন্তব্যঃ

ভারতের একটি রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের উপরোক্ত রায় দ্বারা এটা প্রতীয়মান হয় যে ভারত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হিজাব নিষিদ্ধের ক্যাম্পেইন দ্বারা মুসলিম নারী যারা ধর্মীয় আহকাম অনুযায়ী চলতে চায় এবং নিজেদের মর্যাদাবান ও নিরাপদ রাখতে চায় সমস্ত ভারতজুড়ে তাদের উপর নির্যাতনের বৈধতা দিল। এটা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের ইসলামী পরিচয়কে ‍মুছে ফেলার ধারাবাহিক ক্যাম্পেইনেরই অংশ, যেমনটি আমরা ফ্রান্সসহ ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা বিশ্বে প্রত্যক্ষ করছি। অথচ এসব দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সরকার-আদালত মুখে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলে। তারা নারীদেরকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার, স্বাধীনভাবে ভোগ করতে পারাকেই সুরক্ষা দিতে চায়, অথচ নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকারকে নয়। যখন ভারতের মুসলিম-অমুসলিম সকলে বিশেষত নারীদের মধ্যে ইসলাম ও ইসলামের আহকামগুলোর প্রতি আগ্রহ ও প্রবণতা বাড়ছে তখন তারা এতদিন যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ধর্ম-পালনের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিত সেই ধর্মনিরপেক্ষতাকে ব্যবহার করেই ইসলামবিরোধী ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। এর প্রমাণ হলো যখন ভারতীয় নারীদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের প্রবণতা বাড়তে থাকলো তখন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের আদালতই নওমুসলিম নারীদের বিবাহ নিষিদ্ধ করলো। ধর্ষণ ও নারীদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ভারতের জনগণের মধ্যে ধর্ষকের শাস্তি যাতে মৃত্যুদন্ড করা হয় তার দাবী যেমন জোরালো হচ্ছে, তেমনি হিজাব ও পর্দা নারীদের নিরাপত্তা বাড়ায় এর পক্ষেও জনমত ক্রমবর্ধমান।

ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে নানাজন নানাভাবে বিভিন্ন ধর্মালম্বিদের ধর্মপালনের স্বাধীনতা অথবা নারীর অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যম বলে তুলে ধরে। অথচ এটা এখন স্পষ্ট যে ধর্মনিরপেক্ষতা হলো প্রভাবশালীদের স্বার্থে বাকি সবকিছুকে বিসর্জন দেয়া। তাদের দৃষ্টিতে পুঁজিপতি ও প্রভাবশালীদের ব্যবসায়িক স্বার্থে নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার ও খোলামেলা ভোগের বস্তু বানানোর পথে হিজাব বড় বাধা। তাই তারা এখন সরকার ও আইন-আদালত ব্যবহার করে নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকারকে ভুলুন্ঠিত করছে। তাই শুধু ভারতে নয় এই ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে যে রাষ্ট্রই পরিচালিত হোক সেটিই নারীর জীবনে নিয়ে আসবে ব্যাপক বিপর্যয়। যেমনটা আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে। এখানে আইনগতভাবে বাল্য-বিবাহরোধের নামে নারীকে ধীরে ধীরে অভিভাবকহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে যাতে তাদেরকে শ্রমবাজারে সস্তায় ব্যবহার করা যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কর্মস্থলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ধর্মনিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষ নারীদের হিজাব পরিধানে বাধা দিচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী নিজে হিজাব পরা মহিলাকে ‘চলমান তাঁবু’ বলে অসন্মান করে পর্দানশীলদেরকে সমাজের মূলধারা থেকে বাইরে কোনঠাসা করে দিতে চাচ্ছেন। এখানেও শিক্ষা ব্যবস্থা, মিডিয়া, আইন-আদালত ইত্যাদি ব্যবহার করে মদ-সুদকে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, পতিতালয়-লিভটুগেদার ইত্যাদিকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, জঙ্গিবাদের নাম করে ইসলাম পালনকে ভয়ের বিষয় হিসেবে তুলে ধরছে। অর্থাৎ এখানেও এটা স্পষ্ট যে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মীয়-স্বাধীনতা দেয়া নয় বরং এটি হচ্ছে ধর্ম-বিদ্বেষ বিশেষত ইসলাম-বিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ার।

ইসলামভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা খিলাফত ছাড়া অন্যান্য ধর্মসহ ইসলাম এবং ইসলামের বুনিয়াদী হুকুম আহকামগুলোর সুরক্ষা সম্ভব না। তাই ধর্মনিরপেক্ষতার মিথ্যা প্রতারণামূলক প্রতিশ্রুতি ধর্মপালনের স্বাধীনতার দিকে তাকিয়ে না থেকে সবার উচিত অতিসত্ত্বর দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্‌ ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য কাজ করা। কারণ খিলাফত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থে কোন ধর্মীয় আহকামকে যেমন ভুলভাবে ব্যাখ্যা করবেনা, তেমনি ধর্মীয় আহকাম অনুযায়ী কেউ যদি চলতে চায় তাকে বাধাও দিবেনা। বরং কেউ যদি তার ধর্মীয় কোন বুনিয়াদী আহকাম পালন না করে তাকে খিলাফত সরকার ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ হারিয়েছে বলে চিহ্নিত করবে। যেমন খিলাফতের আদালতে একজন অমুসলিমের সাক্ষী গ্রহণযোগ্য কিন্তু তখন নয় যখন এটা প্রমাণিত হয় সে তার ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী কোন একটি বা একাধিক বুনিয়াদী ধর্ম-কর্ম ঠিকমত পালন করে না। কারণ এই অবস্থায় সে ব্যক্তি ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ হারিয়েছে বলে প্রতীয়মান হবে। এভাবে খিলাফত ধর্মীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

–            –     মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 

“একটি পার্কদুটি সুইমিং পুলএক দশকের চক্কর”

খবরঃ

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কেন্দ্রে একটি উদ্যানে এক দশক আগে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সুইমিং পুল ও জিমনেশিয়াম নির্মাণ শুরু হয়; তারপর হয় ইজারা দেওয়ার চেষ্টা। এ নিয়ে বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়ালে এক সময় উদ্যানটিই পরিত্যক্ত হয়ে যায়। পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ভেতরে সেই জাতিসংঘ পার্ক এখন ১২ কোটি টাকায় নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। আর সেজন্য আগের চারকোটি টাকা খরচ করে বানানো সুইমিং পুল ও জিমনেসিয়াম ভেঙে ফেলা হবে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ওই পার্কের ভিতর এক একর জমিতে দুটি সুইমিং পুল ও একটি জিমনেসিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন তৎকালীন মেয়র এম মনজুর আলম। ২০১৫ সালের জুনে তা শেষ হয়। গত এক দশকে এই উদ্যান ঘিরে বারবার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। তাতে সুরাহা হয়নি, বরং নাগরিকরা পার্ক ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকেছে। মনজুর আলমের পর আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র থাকাকালে ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ বছরের জন্য পার্কটি ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। (https://bangla.bdnews24.com/ctg/article2028550.bdnews)

মন্তব্যঃ

বর্তমান শাসকগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত অপ্রয়োজনীয় ও বাস্তবায়নের অযোগ্য বিভিন্ন প্রকল্পে জনগণের বিপুল অর্থ অপচয় করছে এবং এগুলোতে বাড়তি অর্থসংস্থানের জন্য বিভিন্ন দেশী-বিদেশী ঋণ ও অনুদানের দ্বারস্থ হচ্ছে, যেগুলো শাসকগোষ্ঠী ও তাদের মদদপুষ্ট পুঁজিপতিগোষ্ঠীর লুটপাটের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। সবারই জানা আছে যে, পুঁজিপতিগোষ্ঠী ও শাসকশ্রেণীর স্বার্থসিদ্ধির বিনিময়ে “গরিবের হাতি পোষার” এসব প্রজেক্ট থেকে ঋণের বোঝায় জর্জরিত হওয়া ছাড়া জনগণের জীবনে তেমন কোন মূল্য সংযোজন হয় না। এতদস্বত্ত্বেও, ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীকে উত্তোরত্তর সন্তুষ্ট করার জন্য শাসকগোষ্ঠীর এবার নজর পড়েছে দেশের গণমালীকানাধীন সম্পত্তিগুলোর দিকে। গণমালিকানাধীন বিভিন্ন নাগরিক পার্ক, উদ্যান ও উন্মুক্ত স্থানের মত জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে ব্যক্তিমালিকানায় ইজারা দেয়ার ফলে এগুলো থেকে জনসাধারণের নাগরিক সুবিধা অর্জনের অধিকার আরও সংকুচিত হবে। কার্যত, পুঁজিবাদ প্রদত্ত মালিকানা অর্জনের অসীম স্বাধীনতাই শাসকগোষ্ঠীকে গণমালিকানাধীন সম্পত্তিসমূহকে ব্যক্তি মালিকানায় ইজারা দেয়ার অধিকার প্রদান করেছে। দেশের পার্ক, উন্মুক্ত স্থান, নদী, খাল, বিল, ঝর্ণাগুলো থেকে শুরু করে বন-জঙ্গল, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্টগুলোর মত গণমালিকানাধীন সম্পদগুলোকে একের পর এক ইজারা দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশের বিদ্যুকেন্দ্র, বিভিন্ন টার্মিনাল ও গভীর সমুদ্র বন্দরগুলোকেও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের কাছে ইজারা দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে ইসলামী শারীয়াহ্‌ সর্বসাধারণের প্রয়োজনীয় সেবা (Public Utilities) যেগুলো জনগণের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এবং এগুলো না থাকলে জনগণকে এগুলোর খোজে অন্যত্র চলে যেতে হয় যথা: শহরের উন্মুক্ত স্থান (স্কয়ার, পার্ক, উদ্যান), পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট ইত্যাদিকে গণমালিকানাধীন সম্পদ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। তাই খিলাফত রাষ্ট্রে কোন ব্যক্তি বিশেষকে ব্যক্তিগতভাবে এই সম্পদের দখল ও ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধান পরিপন্থী। কারণ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সামষ্টিকভাবে জনগণকে এগুলোর মালিক করেছেন এবং কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা কোম্পানীকে মালিকানা বা ইজারা প্রদানে নিষেধ করেছেন। আত-তিরমিজি আবইয়াদ বিন হাম্মাল হতে বর্ণনা করেন: “তার অনুরোধে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) তাকে লবণ পাওয়া যায় এমন একটি ভূমির বন্দোবস্ত প্রদান করেন। তার প্রস্থানের পরউপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-কে বলেনআপনি কি জানেন আপনি এমন একটি ভূমির বন্দোবস্ত দিচ্ছেন যেখানে পানির অফুরন্ত উৎস রয়েছে। ভূমির প্রকৃতির ব্যাপারে ওয়াকিবহাল হয়ে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) উক্ত ভূমির বন্দোবস্ত বাতিল করেন”। তাই আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র দেশীয় পুঁজিপতিগোষ্ঠীর কাছে ইজারাকৃত গণমালিকানাধীন সম্পদগুলোকে পুনরুদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় জনকল্যাণে ব্যবহার করবে। খিলাফত রাষ্ট্রে গণমালিকানাধীন সম্পদের প্রকৃতি ও ধরণ অনুযায়ী রাষ্ট্রের যেকোন নাগরিক আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে ব্যবহার করবে। নাগরিকদের এই সম্পদ ব্যবহার করার জন্য কোন মূল্য দিতে হবে না। কারণ জনগণ সামষ্টিকভাবে এই সম্পদের মালিক। আয়েশা (রা.) থেকে তিরমিজি বর্ণনা করেন: রাসু্লুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন: “মিনা একটি বিশ্রামের স্থানযে আগে আসবে ঐ স্থানটি তার”।

–          –    মোহাম্মদ সিফাত

“কীভাবে নদীর মালিকানা পেল হবিগঞ্জের একটি পরিবার?”

খবরঃ

হবিগঞ্জের সুটকি নদী। একটি পরিবার ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটির মালিক। আহমেদ জুলকার নাঈন এবং তার পরিবার শুধু নদীটি ভোগ-দখলই করছেন না, নদীটি তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ইয়াহিয়া ফিস ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে লিজও দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ অনুযায়ী নদীর একক এবং একমাত্র মালিক সরকার। (www.thedailystar.net/bangla/স্টার-মাল্টিমিডিয়া/কীভাবে-নদীর-মালিকানা-পেল-হবিগঞ্জের-একটি-পরিবার-325226)

মন্তব্যঃ

একটি আস্ত নদী একটি পরিবার দখল করে আছে বলে আমরা হয়তো অবাক হচ্ছি। কিন্তু নদীর মত অন্যান্য আরও গণমালিকানাধীন সম্পত্তি বর্তমান এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মালিকানায় চলে গেছে। যেমন, নদী দখল করে তা মাছ চাষের জন্য ইজারা দেয়া। উদাহরনস্বরুপ, যশোরের মুক্তেশ্বরী নদীতে স্থানীয় আওয়ামী নেতা ও জেলা প্রশাসকের যোগসাজশে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা মাছ চাষের জন্য লিজ দেয়া হয়েছে। এই লিজকৃত এলাকায় সাধারনের মাছ ধরার পাশাপাশি গোসল করার মত কার্যক্রমও নিষিদ্ধ। সারাদেশে নদী ইজারা দেয়ার এরকম ঘটনা এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সরকারী দলের ক্ষমতা দেখিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলনও আরেকটি উদাহরণ। যেমন, প্রায় আট বছর ধরে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু তুলছেন চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সেলিম খান যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এর ফলে বাধ ভেঙ্গে যাওয়া এবং ইলিশের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হলেও সরকার এ ব্যাপারে নিরব কারণ এর পেছনে রয়েছে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনির সরাসরি অনুমোদন। অপরদিকে বন দখলও মাত্রা ছাড়িয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তথ্য অনুযায়ী, বন বিভাগের ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর ভূমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। দখলকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার ৫৬৬। এই তালিকা প্রতি মুহুর্তেই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তাছাড়া সরকারী রাস্তা দখল করে মার্কেট কিংবা দোকান-পাট করা ইত্যাদি যেন মহামারী রুপ লাভ করেছে।

 জনগণের সম্পত্তি কতিপয় ব্যক্তি ও বিদেশী কোম্পানীর হস্তগত হওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে আওয়ামী-বিএনপির মত এই পুঁজিবাদী সরকারসমূহ। নদী দখলকে কাগজে কলমে ফৌজদারি অপরাধ ঘোষণা করলেও, পুঁজিপতিদের মদদপুষ্ট সরকার নিজের দলের লোকদের আর্থিক মুনাফা নিশ্চিতকরণে তাদের হাতে দেশের বিভিন্ন গণ সম্পত্তিসমূহকে তুলে দেয়। বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের একই চিত্র। পশ্চিমা বিশ্ব নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণমালিকানাধীন সম্পদের দখল মুষ্টিমেয় এলিটদের দেয় ‘বেসরকারিকরণ’ এর নামে, আর তথাকথিত ‘অনুন্নত’ বিশ্বে, যা আসলে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, পুঁজিপতি এলিটরা এসব সম্পদ অবৈধভাবে দখলে রাখে রাষ্ট্রীয় মদদে। ফলে এসকল গণসম্পত্তি থেকে যে রাজস্ব আয় করা যেত এবং তা দিয়ে জনগণের কল্যান করা যেত তা যেমন একদিকে ব্যাহত হচ্ছে তেমনিভাবে জনগণও পারছে না তাদের সুবিধার্থে এসকল সম্পদ ব্যবহার করতে। তাই যে সমাজ ও রাষ্ট্র পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে গ্রহণ করে, সে ব্যবস্থায় এরুপ দুর্নীতি হতে বাধ্য।

ইসলাম গণমালিকানাধীন সম্পত্তির বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “মুসলিমরা তিনটি বিষয়ে অংশীদার – পানি, চারণভূমি এবং আগুন” (ইবনে মাজাহ্‌); এখানে উল্লেখিত এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, লবন, সালফার, বিটুমিন, নদী, সমুদ্র, খাল, পাথর, বনের গাছপালা ও কাঠ, কয়লা, নদী ও সমুদ্রের মাছ, বন্য পাখি ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া মনুষ্যনির্মিত কিছু বিষয় যেমন, বাঁধ, ব্রীজ, টানেল, কৃত্রিম খাল, কৃত্রিম হ্রদ, রাস্তা আন্তর্জাতিক রাস্তা, পাবলিক স্কয়ার, পার্ক, স্টেডিয়াম, স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল, রেলওয়ে, সমুদ্র বন্দর, এয়ারপোর্ট ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত। তাই এক্ষেত্রে ইসলামের হুকুম হচ্ছে এধরনের সম্পদ কোন ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত করা যাবে না যা এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় স্বাভাবিক বিষয়। এর ফলে সবাই এই গণমালিকানাধীন সম্পত্তি ব্যবহারের সুযোগ পাবে। ‘শুধুমাত্র যাদের শক্তি আছে তারাই এই সম্পদ ব্যবহার করবে’ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এই নিয়মের চিরস্থায়ী পরিবর্তন হবে খিলাফত রাষ্ট্রের আসন্ন আগমনের ফলে। উপরন্তু সবাইকে গণমালিকানাধীন সম্পত্তি ব্যবহার করার সুযোগ প্রদান করা হলেও খিলাফত রাষ্ট্র সবসময় খেয়াল রাখবে যাতে কেউ তা অপরিসীম পরিমানে ব্যবহার না করে। এবং খলিফা বিনামূল্যে জ্বালানী সরবরাহ করা বাদেও এসকল সম্পদ থেকে আহরিত রাজস্ব দিয়ে জনকল্যাণমূলক নানা কাজ করবেন। যেমন, রাস্তা নির্মাণ, সেতু নির্মান, মেট্রোরেল নির্মাণ (যদি প্রয়োজন হয়) ইত্যাদি।

–      মো. হাফিজুর রহমান

“শরীরজুড়ে ক্ষত নিয়ে খালি বাসার ‘বাথরুমে’ আটকা শিশু; ৩ দিন পর উদ্ধার”

খবরঃ

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১২ বছরের এক গৃহকর্মীকে নির্যাতন করে খালি বাসায় একটি ‘বাথরুমে’ আটকে রাখার তিনদিন পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। …পুলিশ জানায়, তুচ্ছ সব কারণে তাকে নির্যাতন করা হতো। ঘুম থেকে দেরি করে উঠলে, কাজ না পারলে, পাশের বাসার বিড়াল শব্দ করলেও গৃহকর্ত্রীর ছেলের অভিযোগে তাকে মারধর করা হতো। রান্না করার গরম খুন্তি দিয়ে তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। এছাড়া রড দিয়েও পেটানো হয়েছে তাকে। পুলিশ জানায়, শিশুটির বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়, তার বয়স ১২ বছর। এক ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। তার বাবা রতন তাদের রেখে চলে গেছেন। মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়েছে। ময়মনসিংহের রহমতপুরে নানি হালিমার কাছে থেকে বড় হচ্ছিল শিশুটি। দুই মাস আগে কমলা নামে এক নারী তাকে ঢাকার বাসায় সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতনে কাজে দিয়ে যায়। (https://m.bdnews24.com/bn/detail/bangladesh/2025454)

 

মন্তব্যঃ

নিয়মিত বিরতিতে পত্রিকায় এজাতীয় খবরে আঁতকে উঠতে হয় যার প্রায় প্রতিটি নৃশংসতায় আগেরটিকে অতিক্রম করে। নির্যাতিত অভুক্ত ছোট্ট শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন আমাদের মধ্যে যে চাঞ্চল্য তৈরী করে তা পরবর্তীতে আমাদের মধ্যে এই ভাবনা থেকে আত্মতৃপ্তিতে রূপ নেয় যে তা জনৈক অমানুষের কাজ, আমি আমার গৃহকমীর্র সাথে ভালো আচরণ করি। কেউ হয়তো ভাবে এদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা দরকার। সে চাহিদা থেকে ২০১৫ সালে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা আইন অনুমোদন দেয় মন্ত্রীসভা। কিন্তু আইন আছে, নীতি-নৈতিকতার তথাকথিত আহ্বানও থেমে নেই। তবুও অপরাধের মাত্রা বা পরিমাণ দিন দিন কেবল বাড়ছেই। বিলসের গবেষণায় বলা হয় ৫০% গৃহরিচারিকা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার, তাদের ৬০% শিশু। গত ১২ বছরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ৬০০ জনের। কেন? এ দায় কার? সত্যিই কী আমাদের কিছু করার নেই?

২০১৩ সালের হিসেবে দেশে ১৫ থেকে ২০ লাখ গৃহকর্মী রয়েছে যাদের অধিকাংশ মেয়ে শিশু। চরম দারিদ্র্যতা তাদের গ্রামের খোলা আকাশ, মায়ের মমতা থেকে ছিনিয়ে এনে ছুড়ে ফেলে শহরের সেই কংক্রিটের জংগলে, যা মানুষকে পশুর স্তরে নামিয়ে আনার উপাদানে পরিপূর্ণ। ব্যক্তিকেন্দ্রিক শহুরে সমাজের উপর্যুপরি চাহিদা আর গ্রামের মানুষের কর্মহীনতা ও অজ্ঞতা জন্ম দেয় দালাল শ্রেণীর যারা উভয় পক্ষ থেকে হাতিয়ে নেয় মোটা টাকা। তাকওয়া (আল্লাহ্‌ভীতি) বিচ্ছিন্ন গৃহমালিক টাকা উসুলের ধান্দায় একটা ১০—১২ বছরের বাচ্চার ঘাড়ে এমনসব কাজ চাপিয়ে দেয়, যা ঐ অসহায় ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিশু কেন একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্যেও করা কষ্টকর। তারপর পান থেকে চুন খসলে নেমে আসে অত্যাচারের খড়গ। কারণ গরীব অসহায়কে মারলেতো সমস্যা নেই, মরলে বিশেষ করে নিউজ হলে কিছু সমস্যা, সামাল দিতে কিছুটা বেগ পেতে হয়, কয়েক দফা টাকা খরচ করে দফারফা করতে হয় এই যা। রাষ্ট্র ব্যস্ত লুটপাটে, আলোচিত ঘটনারই যেখানে বিচার নাই সেখানে সামান্য কাজের মেয়ের মৃত্যু খুবই তুচ্ছ বিষয়। অন্যদিকে বিদেশে নারী গৃহকর্মী সরবরাহে সরকার খুবই তৎপর। বিনা খরচায় সন্তান ফেলে বিদেশ যেতে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। একবার পার করতে পারলে সরকারের আর কোন দায় নেই। নিজদেশে যেখানে তারা নিরাপদ নয়, বিদেশে তাদের অবস্থা ভাবতে ভয় হয়। ২০১৬ থেকে ১৯ এ শুধু সৌদি আরবে সাড়ে তিন লাখ নারী পাঠানো হয়েছে এরমধ্যে লাশ হয়ে ফিরেছে ৩৫০ জন। জীবিতদের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত ভয়াবহ। ৮৬% ৩ থেকে ৫৩ মাসে যাবার পরও বেতন পায়নি, ৬৬% শাররীক নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরেছে আর ১৪% যৌন নিগ্রহের শিকার। এরপরও সরকার আনন্দের সাথে জানায় ২০২২ এ সৌদি আরবে আরো নারী গৃহকর্মী পাঠানো যাবে। এই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনে আমরা আজ এই নির্যাতিত শিশুটির মতোই অভিভাবকহীন, যাদের ফিরে যাবার কোন জায়গা নেই। ঘরে থাকা যায়না পেটের দায়ে, বনে যাওয়া যায়না বাঘের ডরে। ঘুরে ফিরে একই যাঁতাকলে পিষ্ট।

পৃথিবীতে কেউ সম্পদের মালিক হবে এবং কেউ শ্রমের বিনিময়ে সম্পদ অর্জন করবে এটাই বাস্তবতা। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা প্রত্যেককে শারীয়াহ্‌ বিধান অনুযায়ী কাজ করতে বলেছেন এবং সে অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির হিসাব ও ফয়সালা হবে। “সেই সবচেয়ে সম্মানিত যার তাকওয়া সবচেয়ে বেশী অর্থাৎ যার প্রতিটি কাজের মাপকাঠি হচ্ছে আল্লাহ্‌ভীতি” — ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফত প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে এই চিন্তার প্রসার ঘটাবে। কাজে নিয়োগদাতাকে বলা হয়েছে ঘাম শুকানোর আগে মজুরী শোধ করতে, আর শ্রমিককে বলা হয়েছে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে। বর্তমান তাকওয়া বিবর্জিত সমাজ – লাভ-লোকসানই যার প্রতিটি কাজের মাপকাঠি – এর মতো পরস্পরকে দুশমন মনে করে ঘাড় মটকানোর মানসিকতা থাকবে না। সমস্যা তৈরি হলে মালিক-শ্রমিক চুক্তি অনুযায়ী সমাধান করবে অথবা রাষ্ট্রের শরণাপন্ন হবে; কিন্তু সকল  প্রকার শারীরিক লাঞ্চনা নিষিদ্ধ। আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণিত, “জনৈক ইহুদী তার ক্রীতদাসীকে মাথায় পাথর দিয়ে গুরুতর আঘাত করে হত্যার উদ্দেশ্যে এই সন্দেহে যে সে তার রূপার অলংকার চুরি করেছে। মূমূর্ষ অবস্থায় তাকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর নিকট আনা হলে মৃত্যুর পূর্বে ইঙ্গিতে তিনবার সে তার হত্যাকারীকে দেখিয়ে দেয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ঐ হত্যাকারীর মাথা দুই পাথরের মাঝে রেখে চূর্ণ করে হত্যার আদেশ দেন” (সুনান আবু দাউদ ১৬, হাদিস ৪১৩৮)। জনৈক ব্যক্তি তার শ্রমিকদের বিরুদ্ধে খাদ্য চুরির নালিশ নিয়ে উমর (রা.)-এর দরবারে হাজির হলে খলিফা উল্টো তাকে শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করে দেন পর্যাপ্ত বেতন না দিয়ে তাদের অপরাধপ্রবণ করে তোলায় কারণে। খিলাফতের সুরক্ষা ছাড়া এই অনাচার বন্ধের অন্যকোন উপায় আল্লাহ্‌ আমাদের সামনে খোলা রাখেননি। বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা দারিদ্র্যতা জিইয়ে রাখে যেন জনগণকে দমিয়ে রেখে যথেচ্ছা লুটপাট করা যায়, অথচ খিলাফত দারিদ্রতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। ৪র্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) বলেছেন, “দারিদ্রতা যদি কোন ব্যক্তি হতো তবে আমি তাকে হত্যা করতাম”। পরবতীর্তে মাত্র ১০০ বছরের মাথায় উমর বিন আব্দুল আযিযের শাসনামলে উম্মাহ্‌ দারিদ্রতাকে গায়েব হতে দেখেছে। এই খলিফার শাসনামলে বিরাট ভুখন্ডে যাকাত দেয়ার মতো ব্যক্তি খুঁজে না পাবার মতো মধুর সমস্যা তৈরী হয়েছিল। ভবিষ্যৎ খিলাফতের অধীনে এই অতীত আবার ফিরে আসবে, যেখানে কর্মসংস্থানের অভাব হবে না ব্যক্তিকে কাজের জন্য পরিবারহারা হতে হবে না। যার কেউ নাই, কিছু করার সামর্থ্য নেই, খলিফা তার দায়িত্ব নিবেন; তাদের জন্য রাষ্ট্রের রয়েছে নাফাকাহ্‌ নামক বিশেষ ফান্ড। কারণ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “খলিফা হচ্ছেন অভিভাবক এবং তার জনগণের উপর দায়িত্বশীল” (বুখারী/মুসলিম)। এরকম ব্যবস্থা নাযিল হবার পরেও বর্তমান না থাকার দায় কী আমরা এড়াতে পারি? বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা যতদিন টিকে থাকবে ততদিন আত্মতৃপ্তির কোন সুযোগ নেই। শুধু নিজের ঈমান-আক্বিদা ও নৈতিকতা মজবুত করে আমরা কেউই এর দায় এড়াতে পারব না। আমাদের নিরবতা, নিষ্ক্রিয়তা বর্তমান মানবরচিত শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করছে। ঐ শিশু কেয়ামতের ময়দানে আমাদের নামে নালিশ করবে যদি আমরা আল্লাহ্‌ প্রদত্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা খিলাফতকে ফিরিয়ে আনতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন না করি।

–      আয়েশা হান্নান