ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের সাথে নারীদের প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যুক্ত করে নারী অধিকার সংগঠনসমূহ যে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজে বাস্তবায়িত ন্যূনতম ইসলামী বিধি-বিধানও বাতিল করা
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের সাথে নারীদের প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যুক্ত করে নারী অধিকার সংগঠনসমূহ যে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজে বাস্তবায়িত ন্যূনতম ইসলামী বিধি–বিধানও বাতিল করা
১০ই মার্চ ২০২২, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বি.এন.পি.এস) নামক একটি স্থানীয় নারী অধিকার সংগঠন বিদ্যমান পারিবারিক আইন সংশোধন এবং উত্তরাধিকার ও পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশে একটি নতুন আইন প্রণয়নের দাবী জানায়। ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলে, উত্তরাধিকার আইন ছাড়া দেশের অন্যকোন দেওয়ানী বা ফৌজদারী আইন ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। তথাকথিত এসব সমাজকর্মী ও ধর্মনিরপেক্ষ নাস্তিকরা প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার অবসান ঘটাতে হলে উত্তরাধিকারসহ সকল সম্পদ ও সম্পত্তিতে সমান অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রতারক ও পশ্চিমাপন্থী দালাল এসব সমাজকর্মীরা মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে কখনোই চিন্তিত নয়, অথচ তারা নারীদের প্রতি চলমান বৈষম্য ও সহিংসতাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসলামী আইনের সাথে যুক্ত করে ইসলামের নিন্দা করার কোন প্রচেষ্টাই বাদ দেয় না। তারা বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ধর্মহীন করার লক্ষ্যে আমাদের জীবনে ইসলামের বিধি-বিধানের যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তা পশ্চিমা কুফর আইন দ্বারা প্রতিস্থাপন করার মিশনে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই তারা ইসলামকে নারীর শত্রু হিসেবে আখ্যা দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে এধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। তারা ভালোভাবেই অবগত যে, বিদ্যমান উত্তরাধিকার আইন নারীর প্রতি বৈষম্য ও নিপীড়নের প্রকৃত কারণ নয়। বরং, ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থাই নারীদের জীবনে দুঃখ-দুর্দশা ডেকে এনেছে। বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রসমূহে মাতৃত্বজনিত ছাটাই ও অন্যান্য লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্যের কারণ কি ইসলামী উত্তরাধিকার আইন? এসব অকর্মণ্য সমাজকর্মীদের কখনো কি আমরা দেখেছি, টি.সি.বি-এর পণ্য কিনতে নারীদের অসহনীয় দুর্ভোগ ও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও শূণ্য হাতে ফিরে আসা নারীদের জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে? কিংবা লোভী পুঁজিপতিদের অতি মুনাফার স্বার্থে পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকদের যে শোষণ করা হয় তা নিয়ে আদৌ মাথা ঘামাতে?
বাস্তবতা হচ্ছে, ‘সমতা’ ও ‘ক্ষমতায়নের’ নামে পশ্চিমা সভ্যতা নারীদেরকে অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিয়ে যাচ্ছে। আর, পশ্চিমা সভ্যতা তাদের সমাজে তথাকথিত এই ‘সমতা’ ধারণা বাস্তবায়িত করে আদৌ কি কোনো সাফল্য পেয়েছে? তারা তাদের নারীদের এধরণের দুষিত চিন্তা দ্বারা বিপথগামী করেছে যে, পরিবার, মাতৃত্ব ও প্রথাগত বিয়ে হচ্ছে নারী নির্যাতনের মূল কারণ, যা থেকে তাদের ‘মুক্ত’ হওয়া প্রয়োজন। এটি তাদের বৈবাহিক জীবনে এবং পিতা-মাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন নিয়ে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে, যা পশ্চিমাদেশসমূহে ব্যাপক হারে পারিবারিক ভাঙ্গন ডেকে এনেছে এবং ক্রমান্বয়ে তাদের পরিবার ও সামাজিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। পরিশেষে, পশ্চিমা ‘সমতার’ ধারণা নারীর ঘাড়ে পুরুষের দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে তাদের বোঝা বাড়িয়েছে এবং তাদেরকে কষ্ট ও যন্ত্রণার অন্তহীন চক্রের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তাদের নারীরা এখন স্বাভাবিক পরিবার ও মাতৃত্বের মহিমান্বিত মর্যাদার অবমূল্যায়ন করে, তাই পশ্চিমা সভ্যতাকে জনসংখ্যার নেতিবাচক বৃদ্ধিজনিত সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমা সভ্যতা নারীদেরকে কেবল ভোগের বস্তু হিসেবে যৌনতার প্রতীক বানিয়ে ‘মুক্ত’(!) করেছে, এবং তাদের রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এবং এখন তথাকথিত এসকল নারী অধিকার সংগঠন আমাদের নারী ও শিশুদের জীবনে এবং পারিবারিক কাঠামোতে বিপর্যয় ডেকে আনার উদ্দেশ্যে এধরনের নষ্ট পশ্চিমা পুঁজিবাদী ধারণা ও মূল্যবোধসমূহ আমাদের সমাজে প্রোথিত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। এধরনের ফিৎনা সৃষ্টিকারী সংগঠনসমূহ তাদের বিকৃত ও ভ্রান্ত উদারপন্থী চিন্তা দ্বারা মুসলিমদের হৃদয় ও মনকে কলুষিত করতে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন তারা আইনি লড়াইয়ের চেষ্টা করছে।
হে দেশবাসী, কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে বর্তমান সময়ে নারীরা যন্ত্রণাদায়ক কষ্ট সহ্য করছে। এটা ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের জন্য নয়, বরং খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থার মাধ্যমে ইসলামের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই ঘটছে, যা নারীদের জন্য ক্ষতি ও দুর্দশা ডেকে এনেছে। উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে, ইসলামী আইনে আত্মীয়দের মধ্যে উত্তরাধিকারের ৩৪টি সম্ভাব্য পরিস্থিতি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে এগারোটি ক্ষেত্রেই একজন নারী পুরুষের সমপরিমান অংশ পেয়ে থাকেন, এবং মাত্র চারটি ক্ষেত্রে নারী পুরুষের অর্ধেক অংশ পান। অন্য চৌদ্দটি ক্ষেত্রে, পুরুষের চেয়ে নারী উত্তরাধিকার সূত্রে বেশি অংশ পায়। এভাবেই ইসলাম নারীদের জন্য রহমত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং উত্তরাধিকারে তাদের অধিকার নিশ্চিত করেছে। উমর ইবনে আল-খাত্তাব (রা.) বলেছেন: “আল্লাহ্’র কসম, জাহিলিয়্যার যুগে আমরা নারীদের কোন মর্যাদা দিতাম না, যে পর্যন্ত না আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদের সম্পর্কে যা নাযিল করার নাযিল করলেন, এবং তাদের জন্য যা বন্টন করার তা বন্টন করলেন”।
ইসলাম নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী প্রদান করে, কারণ তারা পরিবার ও গৃহে সম্প্রীতি আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারী ও পুরুষ তাদের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যে সমান নয়- এই সত্যটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে ইসলাম তাদের ভূমিকা, অধিকার ও কর্তব্যসমূহ এমনভাবে সংগঠিত করেছে যে তারা সামাজিক সম্প্রীতি নিশ্চিতে একে-অপরের পরিপূরক হবে। ইসলামী শাসনের অধীনে নারীদের শিক্ষা গ্রহণ, ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ, এবং তারা যেসব বিষয়ে দক্ষ সেসব ক্ষেত্রে তাদের নিজেদেরকে বিকশিত করার সুযোগ ও অনুমতি দেয়া হবে। তারা শাসনকার্যের সাথে সম্পৃক্ত পদসমূহ ছাড়া রাষ্ট্রের যেকোনো পদ গ্রহণ করতে পারবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকারসমূহের মধ্যে যেটি মুসলিম নারীগণ উপভোগ করবেন তা হলো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত হওয়ার অধিকার, এবং উম্মাহ্’র কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে উম্মাহ্’র বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করার অধিকার। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর বিন আল-খাত্তাব (রা.) আল-শিফা বিনতে আবদুল্লাহ্ নামক একজন মহিলার সাথে তার বুদ্ধিমত্তা ও অন্তর্দৃষ্টির কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে পরামর্শ করতেন, এবং প্রায়শঃই অন্যদের চেয়ে তার মতামতকে অগ্রাধিকার দিতেন। সুতরাং, নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় খিলাফত রাশিদাহ্’র শাসনব্যবস্থার অধীনে ইসলামী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও বিচার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই নারীর সত্যিকারের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ইসলামী ব্যবস্থার সামগ্রিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে খিলাফত রাষ্ট্র নারীদের প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান ফিরিয়ে দেবে। কারণ, আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র কেবল গুটিকয়েক ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করবে না, বরং নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই জীবনের একটি দৃষ্টিভঙ্গী প্রদান করবে, যা ইসলামী সভ্যতাকে একটি অনন্য ও আলোকিত অবস্থানে পৌঁছে দিবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
*وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنْ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ*
“মু’মিন পুরুষ ও নারী একে অপরের সহায়ক; তারা মারুফ (আল্লাহ্ যা আদেশ করেন)-এর শিক্ষা দেয় এবং মানুষকে মুনকার (আল্লাহ্ যা নিষেধ করেন) থেকে বিরত রাখে; তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ্ দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়” [সূরা আত-তাওবাহ্: ৭১]
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া কার্যালয়