working to establish khilafah

দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান (Two-State Solution): শতাব্দীর এক নির্লজ্জ উপহাস

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান (Two-State Solution): শতাব্দীর এক নির্লজ্জ উপহাস;

“(বস্তুত) আল্লাহ্ তাদের সাথে উপহাস করেন, এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াবার অবকাশ দেন” [সূরা আল-বাকারাহ্: ১৫]

“শুধুমাত্র ১৯৬৭-পূর্ব সীমানার ভিত্তিতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব”– প্রফেসর ইউনুস কর্তৃক জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেয়া এই বক্তব্যের আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। গণহত্যাকারী ও দখলদার অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নিয়ে এবং এর সাথে সহঅবস্থানের মধ্যে তিনি কীভাবে ফিলিস্তিনীদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা দেখতে পান (!), যখন অভিশপ্ত এই ইহুদীগোষ্ঠী প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করছে এবং ফিলিস্তিনের ৭৮% ভূমি দখল করে নিয়েছে? অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অবস্থিত গুটিকয়েক ছিটমহলকে কেন আমরা রাষ্ট্র (ফিলিস্তিন) বলছি, যার এমনকি নিজস্ব কোন সেনাবাহিনীও নেই?

এটি আমাদেরকে ইয়াসির আরাফাত কর্তৃক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সেই উপহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা ১৯৮৮ সালের ১৫ই নভেম্বর আলজেরিয়ায় মঞ্চস্থ হয়। এটি ছিল কাগজে-কলমে সৃষ্ট নামেমাত্র এক রাষ্ট্র, এবং অসলো আলোচনার দুষিত ফলাফল ছিল ইহুদীদের বেয়নেটের অধীনে কিঞ্চিত কর্তৃত্ব অর্জন। এরপরও এই স্বীকৃতিকে রুওয়াইবিদাহ্ (তুচ্ছ ও অজ্ঞ) মুসলিম শাসকদের পাশাপাশি ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ও.আই.সি) এবং আরব লীগ স্বাগত জানায়। আশ্চর্যজনকভাবে, কতিপয় ফিলিস্তিনী সংগঠনও এই স্বীকৃতিকে স্বাগত জানায় এবং এটিকে তাদের প্রতিরোধের ফল হিসেবে বিবেচনা করে, যেন সমগ্র ফিলিস্তিন মুক্ত হয়ে গেছে এবং ইহুদি রাষ্ট্র নির্মূল হয়ে গেছে! “আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করুন! তারা কিভাবে সত্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছে?” [সূরা আত-তাওবাহ: ৩০]।

মার্কিন-পরিকল্পিত দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের (Two-State Solution) উদ্দেশ্য হলো অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্র এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। কারণ, পশ্চিমা বিশ্বের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা নয়, বরং মুসলিম দেশগুলোর বিশ্বাসঘাতক শাসকদের সমর্থন ছাড়া এই অবৈধ রাষ্ট্রটি একদিনও টিকতে পারবে না: “যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তাহলে তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে, অতঃপর তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না [সূরা আলি-ইমরান: ১১১]। এই দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান (Two-State Solution) প্রকল্পের বিষয়ে ১৯৯০-এর দশকে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব বিস্তার শুরু করে এবং তার দালাল ‘ইসরায়েল’-কে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এটিকে নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের কাজে ব্যবহার করতে থাকে। ‘ইসরায়েল’-কে সামরিকভাবে শক্তিশালী রেখে এবং এটিকে তার প্রতিবেশীদের সাথে সর্বদা বিরোধে জড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা নিশ্চিত করে যে, মুসলিম উম্মাহ্ যেন সবসময় বিভক্ত অবস্থায় থাকে। একই সাথে, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি ভারসাম্য বজায় রাখে যাতে ইসরায়েলের ক্ষমতা এমন কোনো সংঘাতের জন্ম না দেয় যা পুরো ব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে। এই চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স সিস্টেমটি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত একটি ধূম্রজাল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই ন্যায্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে না; বরং এই দুর্বৃত্ত দেশটি সেই ইকোসিস্টেমের ব্যবস্থাপক যেখানে ইসরায়েল আরবদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে, এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণ করে, কখনও কখনও পরোক্ষভাবে ইরানের মাধ্যমেও এটা করে থাকে, এবং প্রত্যেকেই এখনও ওয়াশিংটনের উপর নির্ভরশীল।

হে মুসলিমগণ, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং পর্তুগাল তথাকথিত “ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের” স্বীকৃতি দিয়েছে, এরপর ২০২৫ সালের ২২-৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উচ্চ-পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আরও বেশ কয়েকটি দেশ একই পথ অনুসরণ করে, যেটির সহ-সভাপতিত্ব করে ফ্রান্স ও সৌদি আরব। তবে এটা পরিষ্কার, অবিশ্বাসীদের (কাফিরদের) সাবেক নেতা ব্রিটেন ও অন্যান্য কাফির রাষ্ট্রসমূহ বিশ্ববাসীর সামনে এবং বিশেষ করে নিজদেশের জনগণের কাছে তাদের কুৎসিত, প্রতারণাপূর্ণ চেহারা আড়াল করতেই তথাকথিত এই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এই ব্রিটেন ইসরায়েলকে অব্যাহতভাবে সামরিক সহায়তা প্রদান করে আসছে, উদাহরণস্বরূপ: বার্তা সংস্থা আনাদোলু’র বরাতে প্রকাশিত হয়েছে, “গাজায় গণহত্যার মধ্যেই ১ মাসে (গত আগস্টে) ইসরাইলকে লক্ষাধিক বুলেট পাঠিয়েছে বৃটেন আগস্টে অন্য চালানগুলোর মধ্যে ছিলো ট্যাংক, শর্টগান ও রাইফেল, এছাড়া নানা ধরণের বিস্ফোরকও এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ছিলো” (দৈনিক মানবজমিন, ১ অক্টোবর ২০২৫)। ১৯১৭ সালের প্রতারণামূলক বেলফোর ডিক্লারেশনের মাধ্যমে এই ধূর্ত উপনিবেশবাদী শক্তি ব্রিটেন প্রথমে উসমানী খিলাফতের (ফিলিস্তিন) কিছু অংশ জায়নবাদী ইহুদীদের হাতে ছেড়ে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন দেউলিয়া হয়ে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং প্রভাবশালী পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব এই প্রতারণাপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে কাজ করে আসছে এবং ‘ইসরায়েলকে’ দখলদারিত্ব ও লুণ্ঠনের স্থায়ী অধিকার দ্বারা পুরস্কৃত করেছে। আর এর অংশ হিসেবে তারা এখন “গাজা ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজিশনাল অথরিটি (GITA)” নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের পরিকল্পনা করেছে, যেটির পাঁচ বছরের জন্য গাজার ‘সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ও আইনি কর্তৃপক্ষ’ হওয়ার ম্যান্ডেট থাকবে, এবং এই সংস্থার প্রধান হিসেবে ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আক্রমণে সহযোগী ভূমিকা পালনকারী ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে নিযুক্ত করা হবে (“হোয়াইট হাউস এমন একটি পরিকল্পনাকে সমর্থন করছে যেখানে টনি ব্লেয়ারকে গাজা উপত্যকার একটি অস্থায়ী প্রশাসনের প্রধান হিসেবে দেখা যেতে পারে”, দি গার্ডিয়ান, ২৫ শে সেপ্টেম্বর ২০২৫)।

 হে মুসলিমগণ, গাজায় গণহত্যা কেবল একটি দূরবর্তী ট্র্যাজেডি নয়, বরং এটি পবিত্র ভূমিতে আমাদের উম্মাহ্’র কঠিন সংগ্রামের জ্বলন্ত ফ্রন্টলাইন। ফিলিস্তিনে আমাদের ভাই-বোনেরা ক্ষণস্থায়ী ক্ষমতা বা পার্থিব সম্পদের জন্য লড়াই করছেন না, বরং তারা রক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে দন্ডায়মান রয়েছেন, মুসলিমদের প্রতিটি ইঞ্চি ভূমির জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করছেন, এবং যুদ্ধবাজ কাফিরদের আক্রমণ থেকে এই উম্মাহ্’র পবিত্রতা রক্ষা করছেন। মূল বিষয়টি হলো, মুসলিমদের মনে রাখতে হবে, দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের মানে হচ্ছে পবিত্র ভূমির উপর অভিশপ্ত ইহুদীদের দাবীর স্বীকৃতি দেয়া। আর শারী‘আহ্‌ অনুযায়ী এটি হারাম বা নিষিদ্ধ। সম্মানিত সাহাবীগণ (রা.) এবং ন্যায়নিষ্ঠ মুজাহিদগণ সেখানে রক্ত ঝরিয়েছেন। এখানেই মুসলিমদের প্রথম কিবলা ও তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদের অবস্থান, যেখানে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন করা হয়। এখান থেকেই নবী ﷺ-এর মি‘রাজ (রাতের যাত্রা) শুরু হয়েছিল। অতএব, একটি ইসলামী ভূমি হিসাবে ফিলিস্তিনের এক ইঞ্চি জমিও মুসলিমরা ত্যাগ করতে পারে না।

উম্মাহ্’র সবচেয়ে বড় বিপদ হলো তার শাসকগোষ্ঠী, যারা আমাদের সামরিক বাহিনীর সাহসী সন্তানদেরকে ব্যারাকে বন্দি করে রেখেছে। এই শাসকগোষ্ঠী মুসলিমদেরকে গণহত্যা থেকে বাঁচাতে, প্রথম কিবলাকে রক্ষা করতে এবং আমাদের পবিত্র ভূমিকে মুক্ত করতে আমাদের সামরিক বাহিনীকে অভিযানে প্রেরণ করে না, বরং তাদের পশ্চিমা প্রভুদের স্বার্থ রক্ষায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে প্রেরণ করে! প্রায় একশত বছর আগে খিলাফত ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর থেকে মুসলিম উম্মাহ্‌ তার প্রকৃত অভিভাবক-খলিফা বিহীন হয়ে পড়ে, যার পিছনে মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং নিজেদেরকে রক্ষা করে। কারণ রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয়ই ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন কমান্ডার, যার অধীনে মুসলিমরা যুদ্ধ করে এবং নিজেদের আত্মরক্ষা করে [সহীহ্‌ মুসলিম]। অতএব, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হতে মুসলিমরা সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, যেন তারা হিযবুত তাহ্‌রীর-এর নেতৃত্বে নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়। আল্লাহ্‌ ﷻ বলেন:

﴿قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ

 “সুতরাং তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর এবং আল্লাহ্ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন, তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয়ী হতে সাহায্য করবেন, এবং প্রশান্ত করবেন মু’মিনদের অন্তর” [সূরা আত-তাওবাহ: ১৪]

 

 

হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশএর মিডিয়া অফিস