পতিতাবৃত্তিকে ‘যৌনশ্রম’ হিসেবে উপস্থাপন করা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের আরেকটি নোংরা চেহারা; নারীদেরকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা নারীদের প্রতি চরম অবমাননা এবং নারী নিপীড়নের মূল কারণ
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
পতিতাবৃত্তিকে ‘যৌনশ্রম’ হিসেবে উপস্থাপন করা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের আরেকটি নোংরা চেহারা; নারীদেরকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা নারীদের প্রতি চরম অবমাননা এবং নারী নিপীড়নের মূল কারণ
দেশের প্রচলিত শ্রম আইনে যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের সুপারিশ করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন মুসলিম অধ্যুষিত এদেশে পশ্চিমাদের শালীনতা বিবর্জিত নোংরা ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতিকে চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। যেখানে পতিতাবৃত্তি হচ্ছে সমাজে নারীদের প্রতি চরম অবমাননাকর এবং নারীর করুণ অবস্থার একটি অন্যতম চিত্র, সেখানে নারী স্বাধীনতার ফেরিওয়ালা এসব সেকুলার বুদ্ধিজীবীরা নারীর সৌন্দর্য ও নারীত্বের (femininity) অপব্যবহার তথা পতিতাবৃত্তিকে নির্মূলের মাধ্যমে নারীর সম্মানজনকভাবে জীবনধারণের ব্যবস্থা না করে ‘যৌনশ্রমিক’ হিসেবে আইনী স্বীকৃতির মাধ্যমে সমস্যাটিকে জিইয়ে রাখতে চাচ্ছে। নারী স্বাধীনতার নামে যারা সমাজে পতিতাবৃত্তিকে টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে, এসব প্রতারক নারীবাদীরা কি নিজেদের জন্য এই পেশাকে পছন্দ করবে? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, “ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ মু‘মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করবে, অপর ভাইয়ের জন্যও তাই পছন্দ করবে” (বুখারী ও মুসলিম)।
নারীত্ব ও সম্ভ্রমের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ হলো পশ্চিমা সভ্যতার সবচেয়ে নোংরা ও অসভ্য মূল্যবোধ। আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন, গণতান্ত্রিক ক্রুসেডার পতিত হাসিনার শাসন আমলে, সেকুলার রাজনীতির অন্দরমহলের পাপিয়ারা রাজনীতিবিদদের মনোরঞ্জনের জন্য কীভাবে নারীদেরকে ব্যবহার করেছে, যেখানে ইডেন কলেজে তাদের নেত্রীদের পতিতাবৃত্তি নিয়ে নানা বিব্রতকর আলোচনা বারবার জনসম্মুখে এসেছে। তাছাড়া, হাল আমলের মেঘনা আলমরা রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরকে হানি-ট্র্যাপে ফেলতে টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এর বাইরেও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীদের কেউ কেউ পেটের দায়ে কিংবা সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে নিরুপায় হয়ে কাজের খোঁজে গিয়ে পাচার হয়েছে, যাদেরকে এই নিকৃষ্ট যৌনকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে। এদেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ, নারীর প্রতি পশ্চিমাদের পচনশীল ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গীকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যন করেছে। নারীবাদী- এসব পশ্চিমাদের আদর্শিক গোলামরা নিপীড়িত নারীদের পুনর্বাসনের সুপারিশ না করে, ইসলামী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে সমাজে দূর্বল ও কোনঠাঁসা করার জন্য এই ইস্যুটাকে ব্যবহার করে আসছে, যেন সমাজের সকল স্তরে এই নোংরা কাজটি স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য হয় এবং ইসলামী মূল্যবোধ সমাজ থেকে হারিয়ে যায়। তারা নিশ্চয়ই জানে, পশ্চিমা রাষ্ট্রে পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, নারীরা ঘরে-বাইরে সহিংসতার শিকার হচ্ছে এবং সমাজে চরম আধ্যাত্মিকতার সংকট তৈরী হয়েছে। তারা কী আমাদের দেশকেও পশ্চিমাদের মত ‘জারজ জনগোষ্ঠীর’ দেশে পরিণত করতে চায়?
অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ইসলামী আবেগ ও মূল্যবোধকে সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা প্রদান করা। নারীর প্রতি সকল অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গীকে প্রতিহত করে মা হিসেবে, বোন হিসেবে ও সন্তান হিসেবে নারীর উচ্চ মর্যাদাকে সুরক্ষা দেয়া সরকারের কর্তব্য। রাষ্ট্রের সকল নাগরিক বিশেষত অসহায় নারীদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে যেন কোন নারী শুধুমাত্র পেটের দায়ে এই নোংরা পশ্চিমা মূল্যবোধ ধারণ করে পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ না করে। পতিতাবৃত্তি নিশ্চিতভাবেই একটি জাহিলী যুগের নোংরা বেহায়াপনা যা ইসলামের আবির্ভাবের মাধ্যমে সমাজ থেকে নির্মূল হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের অধীনস্থ নারীদের হাতের কায়িক শ্রমের বাইরে অন্য উপার্জনের (তার সৌন্দর্য ও নারীত্বের অপব্যবহার বা পতিতাবৃত্তির) সুবিধা গ্রহণ করো না ” (হাদিস: মুসনাদে আহমাদ ও আল-হাকিম আল-মুসতাদরাক)। ইসলামী ব্যবস্থা নারীকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শক, বিচারক, ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানী, শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ স্থান দিয়েছে। এমনকি পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একজন মুসলিম নারী। মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহীয়সী নারী মারিয়াম আল-আস্তুরলাবি কে ছাড়া আধুনিক মহাকাশ গবেষণার আলোচনা অপূর্ণই থেকে যায়। আরবের জাহিলী যুগে যখন কন্যা সন্তানকে জীবন্ত মাটিতে পুতে ফেলা হলো, সেই অবস্থা হতে তুলে এনে ইসলাম নারীকে এক অনন্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। পশ্চিমা মূল্যবোধ তথাকথিত সমঅধিকারের বিপরীতে, ইসলাম নারীকে পুরুষের সাথে অসম প্রতিযোগীতা ও দ্বন্দ্ব হতে বের এনেছে এবং নারী ও পুরুষকে পরস্পরের সহযোগী ও পরিপূরক হয়ে সভ্য-সমৃদ্ধশালী সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করেছে।
﴿يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَوْلاَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। আর কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তানতো অশ্লীল ও মন্দ কাজেরই নির্দেশ করবে। আল্লাহ্’র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই কখনো পবিত্র হতে পারতে না, তবে আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে পবিত্র করেন এবং আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা আন-নুরঃ ২১]
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস