নির্বাচনী হলফনামায় শাসকগোষ্ঠীর সম্পদ বৃদ্ধি প্রমাণ করে, ধর্মনিরপেক্ষ-পুজিবাদী ব্যবস্থায় রাজনীতি হচ্ছে একটি ব্যবসা; অপরদিকে খিলাফত ব্যবস্থায় রাজনীতি হচ্ছে জনগণকে তত্ত্বাবধান করার পবিত্র দায়িত্ব এবং আমানত
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
নির্বাচনী হলফনামায় শাসকগোষ্ঠীর সম্পদ বৃদ্ধি প্রমাণ করে, ধর্মনিরপেক্ষ-পুজিবাদী ব্যবস্থায় রাজনীতি হচ্ছে একটি ব্যবসা; অপরদিকে খিলাফত ব্যবস্থায় রাজনীতি হচ্ছে জনগণকে তত্ত্বাবধান করার পবিত্র দায়িত্ব এবং আমানত
আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন প্রার্থীদের জমা দেয়া হলফনামায় উল্লেখিত বিপুল সম্পদের হিসাব তাদের অতি-লাভজনক রাজনৈতিক ব্যবসার একটা ছোট্ট প্রমাণ মাত্র। জনগণ এই রাজনৈতিক ব্যবসার (!) প্রকৃত ভয়াবহ চিত্র সম্পর্কে সম্যক অবগত, কারণ তারা প্রত্যক্ষ করেছে কিভাবে শাসকগোষ্ঠী ও তাদেরকে ঘিরে থাকা কতিপয় পুঁজিপতি এর মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে, বিদেশে অর্থ পাচার করেছে, এবং ব্যাংক থেকে জনগণের আমানতের অর্থ লুট করেছে। বিগত তিন মেয়াদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে সংবাদ মাধ্যমসমূহ প্রকাশ করেছে যে, ক্ষমতাসীন সাংসদদের কারো কারো সম্পদ ১২’শ গুণ থেকে ৮ হাজার গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে (বিবিসি বাংলা), এবং সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে ‘রাজনীতি’ (DW)। আরও জানা গেছে, সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৬১ শতাংশ ব্যবসায়ী এবং ৫ শতাংশ রাজনীতিবিদ (টিআইবির পার্লামেন্ট ওয়াচ প্রতিবেদন), এবং আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে নেমেছে ব্যবসায়ীরা (দৈনিক জনকণ্ঠ)। এর মূল কারণ, পশ্চিমা-কাফিরগোষ্ঠী মার্কিন-বৃটেনের দালাল দেশের আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠী, যারা ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী আদর্শের অনুসারী। ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী আদর্শের অনুকরণ করে তারা রাজনীতি থেকে ইসলামকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং বস্তগত সুখকে জীবনে সফলতার মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাছাড়া এই রাজনীতিতে জাহান্নামের ভয় কিংবা জান্নাতের আকাঙ্খার মত আধ্যাত্মিকতার কোন স্থান নেই, তাই এটি হচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্থ ও স্বার্থপর রাজনীতিবিদ উৎপাদনের কারখানা। ফলে দশকের পর দশক ধরে জনগণ প্রত্যক্ষ করছে যে, আওয়ামী–বিএনপি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের স্বার্থ, কতিপয় পুঁজিপতিদের স্বার্থ এবং মার্কিন–বৃটেন–ভারতসহ কাফির-উপনিবেশবাদীদের স্বার্থ রক্ষা করে আসছে, এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে শোষণ করছে, এমনকি এতিম কিংবা হতদরিদ্রদের হক মেরে দিতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। এসব ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: “নিশ্চয়ই যারা এতিমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, তারা আসলে নিজেদের পেটে আগুন ভক্ষণ করে। আর অচিরেই তারা (জাহান্নামের) জ্বলন্ত আগুণে প্রবেশ করবে” [সূরা নিসা: ১০)।
হে দেশবাসী, ইসলামে রাজনীতি হচ্ছে জনগণকে তত্ত্বাবধান করার একটি পবিত্র দায়িত্ব, যে দায়িত্ব নিয়ে নবী-রাসূলগণ প্রেরিত হয়েছেন। “বনী ইসরাইলকে শাসন করতেন নবীগণ, যখন এক নবী মৃত্যুবরণ করতেন তখন তাঁর স্থলে অন্য নবী আসতেন, কিন্তু আমার পর আর কোন নবী নেই। শীঘ্রই অনেক সংখ্যক খলীফা আসবেন। তাঁরা (রা.) (সাহাবীরা) জিজ্ঞেস করলেন, তখন আপনি আমাদের কী করতে আদেশ দেন? তিনি ﷺ বললেন, তোমরা (তাদের) একজনের পর একজনের বায়’আত পূর্ণ করবে, তাদের হক আদায় করবে” (সহীহ্ বুখারী/মুসলিম)। যার প্রতিফলন আমরা ধারাবাহিকভাবে খলিফা আবু বকর, ওমর, উসমান, আলি (রা.) সহ অন্যান্য খলিফাদের মধ্যে দেখতে পাই। উমাইয়্যাহ্ খলিফা উমর বিন আব্দুল আযিয, যিনি দ্বিতীয় উমর নামেও পরিচিত, যখন খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন খিলাফত রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে উমাইয়্যাহ্ বংশের জন্য ইতিপূর্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে বরাদ্দকৃত সকল জমি ও অন্যান্য অস্থাবর সম্পদকে বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। এবং তিনি এর বাস্তবায়ন শুরু করেন তার নিজের সকল সম্পদ, যেমন: জমি, ঘোড়া, উট ও অন্যান্য গবাদিপশু, ব্যক্তিগত সুগন্ধি, ইত্যাদি বাইতুল মালে (রাষ্ট্রীয় কোষাগারে) জমা দেয়ার মাধ্যমে, যেগুলোর তৎকালীন বাজার মূল্য ছিল ৩২,০০০ দিনার বা ৭৫৩ কেজি স্বর্ণমুদ্রা। এরপর তিনি তার স্ত্রী (যিনি ছিলেন পূর্ববর্তী খলিফার কন্যা) এবং উমাইয়্যাহ্ বংশের বাকিদের সম্পদ বাইতুল মালে জমা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এসকল সম্পদ বন্টনে শাসনক্ষমতার বিন্দুমাত্র অপব্যবহার হতে পারে এই আশঙ্কায় তিনি উমাইয়্যাহ্ বংশের নাগরিকদের জন্য বরাদ্দকৃত সকল সম্পদ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, যা তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে অন্যান্য নাগরিকদের মতো বরাদ্দ হিসেবে পেয়েছিলেন। এটা এমনকি খোলাফায়ে রাশেদীনের কোন ঘটনাও নয়, বরং পরবর্তী যুগের একজন উমাইয়্যাহ্ খলিফার উদাহরণ! খিলাফত ব্যবস্থায় রাজনীতিবিদগণ তাদের লোভ চরিতার্থ করার জন্য রাজনীতি করেন না, বরং তারা তাদের জান-মাল সর্বস্ব নিয়ে মুসলিম উম্মাহ্ এবং ইসলামের খেদমতে হাজির হন।
হে দেশবাসী, গণতান্ত্রিক সার্কাস কিংবা তথাকথিত ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচনের মাধ্যমে কেবল দুর্নীতিগ্রস্থ শাসকশ্রেণীর চেহারা পরিবর্তন হয়, কিন্তু আপনাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। কারণ, এর মাধ্যমে যুলুম ও যালিম তৈরির কারখানা ধর্মনিরপেক্ষ–পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকে। তাছাড়া এই ব্যবস্থার অপসারণ করে খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা শুধু জরুরীই নয়, বরং প্রতিটি মুসলিমের উপর অর্পিত ফরয দায়িত্ব; রাসূলুলাহ্ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে যে তার কাঁধে (কোন খলিফার) বায়‘আত (আনুগত্যের শপথ) নেই, তবে তার মৃত্যু যেন জাহেলী যুগের মৃত্যু” (সহীহ্ মুসলিম)। তাই আপনাদেরকে খিলাফত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সত্যনিষ্ঠ দল হিযবুত তাহ্রীর-এর সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সামরিক বাহিনীতে কর্মরত আপনাদের সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত অফিসারদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যেন তারা নির্বাচনের মাঠে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করে এই জালিম সরকারকে বৈধতা না দেয়, বরং তাদেরকে অপসারণে উদ্যোগী হয় এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহ্রীর-কে নুসরাহ্ (ক্ষমতা) প্রদান করে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
“অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে যে পথনির্দেশ আসবে, তখন যে আমার পথনির্দেশ অনুসরণ করবে সে দুনিয়াতে বিপথগামী হবে না এবং পরকালেও কষ্ট পাবে না। কিন্তু যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে দুর্বিষহ, অতঃপর আমি তাদের বিচারের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠাব” [সূরা ত্বহা: ১২৩-১২৪]।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস