ব্যাংকিং ব্যবস্থা হচ্ছে পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠীর লুটপাটের হাতিয়ার; একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রের বায়তুল মাল (কোষাগার) পারে জনগণের কষ্টার্জিত আমানত রক্ষা করতে
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
ব্যাংকিং ব্যবস্থা হচ্ছে পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠীর লুটপাটের হাতিয়ার; একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রের বায়তুল মাল (কোষাগার) পারে জনগণের কষ্টার্জিত আমানত রক্ষা করতে
ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে কোম্পানী খোলার মাধ্যমে তিন ব্যাংক থেকে ৯৫০০ কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা প্রকাশিত হতে না হতেই জনতা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের নতুন আরেক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে এলো। ১৮ই ডিসেম্বর ২০২২, ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে দেশের বড়মাপের চারজন ব্যবসায়ী জনতা ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক থেকে ২১,৬৩৫.৮ কোটি টাকা ঋণ নেয় এবং এবিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্যক অবগত (“২টি ব্যাংক থেকে বড় ব্যবসায়ীদের অবাধে ঋণ নেয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি করেনি”, দ্য ডেইলি স্টার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২২)। আর এই চারজন ঋণগ্রহীতা হলেন: এস. আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের চার সদস্য, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী, আই.এফ.আই.সি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ. রহমান এবং এস.বি.এ.সি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল কাদির মোল্লা। ব্যাংকিং খাতে লাগামহীন খেলাপি ঋণ এবং তারল্য সংকটের ক্রমবর্ধমান আতঙ্কের মধ্যে গুটিকয়েক বড়মাপের ব্যবসায়ী কর্তৃক ধারাবাহিক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের পাইকারি ও পদ্ধতিগত লুটপাটের ভয়াবহতাকে আবারও সামনে নিয়ে এলো। অথচ, ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান লুটপাটের আতঙ্কে জনগণ যখন ব্যাংক থেকে তাদের সঞ্চয় উত্তোলন করা শুরু করে তখন শেখ হাসিনা ব্যঙ্গ করে বলেছিল: “বাড়িতে টাকা রাখা মানে চোরদেরকে সুযোগ দেয়া। টাকা চোরের হাতে তুলে দেবেন নাকি ব্যাংকে রাখবেন সেটা মালিকের ইচ্ছা”। কিন্তু সে এই ব্যাংক ডাকাতদের চোর মনে করে না, তাই তাদের অপরাধের ব্যাপারে নির্লজ্জের মত উদাসীন থাকে! নিঃসন্দেহে, মোটা অঙ্কের ঋণগ্রহীতা পুঁজিবাদী এই ক্ষুদ্র অভিজাতশ্রেণী কেবল সরকার-সমর্থিতই নয়, বরং ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী এই শাসনব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ, যারা একের পর এক গুরুতর ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। অন্যথায় কিভাবে এস. আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা ৭টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়? সরকারের আশীর্বাদ না থাকলে কিভাবে দেশের সবচেয়ে বড় ঋণ-খেলাপিদের একজন সালমান এফ. রহমান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতের শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা নির্বাচিত হয় এবং মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রীর পদ দখল করে? তাদের মতো সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা দখল করেছে এবং শীর্ষ নির্বাহী পদে অধিষ্ঠিত হয়ে একের পর এক বিশাল ব্যাংক কেলেঙ্কারি করে চলেছে। এধরনের পদ্ধতিগত ডাকাতির বিষয়ে চোখ বন্ধ রেখে এই পুঁজিবাদী সরকার পাবনা জেলার ১২ জন কৃষককে মাত্র ২৫-৩০ হাজার টাকার ঋণ মামলায় সম্প্রতি কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। এছাড়াও, সরকার ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদকাল ৬ থেকে বাড়িয়ে ৯ বছর করেছে, এবং গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে আর্থিক ক্ষমতা সুসংহত করার উদ্দেশ্যে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবার হতে অনুমোদিত পরিচালকের সংখ্যা ২ থেকে ৪-এ উন্নীত করেছে। বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাত ৪০-৫০টি পরিবারের হাতে জিম্মি। এভাবেই, চলমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অধীনে ঋণ সৃষ্টি ও লুণ্ঠনের প্রতারণামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে গুটিকয়েক পুঁজিপতির হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত করার কুখ্যাত লুটপাটের যন্ত্র হিসেবে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মদদে বড় বড় ব্যবসায়ীদেরকে এরূপ নজিরবিহীন লুটপাটের সুযোগ দেয়ার কারণে আজ ব্যাংকগুলোতে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
হে দেশবাসী! দুর্নীতিগ্রস্থ পুঁজিপতিগোষ্ঠী কর্তৃক সমর্থিত বর্তমান শাসনব্যবস্থা বারংবার আপনাদের অর্থ ও সম্পদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন ব্যবস্থা যেটি আপনাদের কষ্টার্জিত অর্থ ও সম্পদকে লুটপাটের জন্য দুর্নীতিগ্রস্থ পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেয়, সেটিকে আর বরদাস্ত করবেন না। এটাই উপযুক্ত সময়; কারণ আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি, এধরনের লুটপাটসহ অন্যান্য বিপর্যয়কর পরিণতির কবল থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে ইসলামী শাসনব্যবস্থা তথা খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র কোনভাবেই লুটপাট ও সম্পদ পুঞ্জিভূত করার প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে মেনে নেবে না। কুর‘আন ও সুন্নাহ্’র ভিত্তিতে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ১৬৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: “ব্যাংক খোলা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ, এবং কেবলমাত্র একটি অনুমোদিত রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থাকবে, এবং সেখানে সুদ ভিত্তিক কোন লেনদেন করা হবে না। এটি বায়তুল মালের একটি বিশেষ বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হবে। শারী‘আহ্ হুকুম অনুযায়ী আর্থিক ঋণ প্রদান/গ্রহণ করা হবে, এবং অর্থ ও মুদ্রা লেনদেনের সেবা–সুবিধাদি প্রদান করা হবে”। তাই জনগণের বিষয়াদি দেখাশোনা ও তত্ত্বাবধানের অংশ হিসেবে আমানত গ্রহণ, ঋণ প্রদান, অর্থ প্রেরণ ও মুদ্রা বিনিময়ের মতো সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বায়তুল মাল বা ট্রেজারি বিভাগের একটি শাখা হিসেবে রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা খিলাফত রাষ্ট্রের জন্য অনুমোদিত। রাষ্ট্র এই ধরনের লেনদেনে সুদকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করবে। সুদমুক্ত আর্থিক লেনদেনের নীতি অনুসরণ করে খিলাফত রাষ্ট্রের বায়তুল মাল আমানত গ্রহণ এবং ঋণ প্রদান করতে পারবে এবং এক্ষেত্রে কোন বিধিনিষেধ নেই। খিলাফত রাষ্ট্র জনগণের আমানতের দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এবং খলিফা সর্বদা এর জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন। সুমহান মর্যাদার অধিকারী আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
*إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا*
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে আমানতসমূহ তার মালিকদের নিকট প্রত্যার্পণ করবে। আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে” [সূরাহ আন-নিসা: ৫৮]। উপরন্তু, খিলাফত রাষ্ট্রে ব্যবসা-বাণিজ্য কোন অভিজাত শ্রেণী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না। খিলাফত রাষ্ট্র রাজস্ব ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে এমন উদ্যোগ ও শিল্প স্থাপনে ইচ্ছুক সম্ভাবনাময় আবেদনকারীদেরকে বায়তুল মাল থেকে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করবে। এছাড়াও, খিলাফত রাষ্ট্র অভাবীদেরকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ও দরিদ্র কৃষকদেরকে দারিদ্রতা থেকে মুক্ত করার জন্য বায়তুল মালের রাজস্ব থেকে অনুদান ও সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করবে। এর পাশাপাশি, পঙ্গু বা অসহায় প্রতিবন্ধী নাগরিকদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাতা (নাফাকা) ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। সুতরাং, অনতিবিলম্বে প্রতিশ্রুত এই খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হিযবুত তাহ্রীর-এর নেতৃত্বে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামে যোগ দিন, যাতে আপনাদের আর্থিক নিরাপত্তা, কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত হয়।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়