working to establish khilafah

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আই.এম.এফ (IMF) প্রদত্ত প্রেসক্রিপশনের সাথে সম্মতি প্রদান শুধুমাত্র দুর্নীতিগ্রস্থ হাসিনা সরকারের টিকে থাকার স্বার্থে, কিন্তু আমাদের অর্থনীতির জন্য তা আত্মঘাতী

 প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আই.এম.এফ (IMF) প্রদত্ত প্রেসক্রিপশনের সাথে সম্মতি প্রদান শুধুমাত্র দুর্নীতিগ্রস্থ হাসিনা সরকারের টিকে থাকার স্বার্থে, কিন্তু আমাদের অর্থনীতির জন্য তা আত্মঘাতী

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে ব্যাপক জনদুর্ভোগ এবং বিদ্যুৎ সংকটে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার মাঝেও প্রতারক হাসিনা সরকার অবশেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১৯.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৬.২০ কিলোওয়াট আওয়ার (kWh) নির্ধারণ করেছে, যা পূর্বে ৫.১৭ kWh ছিল। অথচ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও সরকার খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে না বলে জনগণকে আশ্বস্ত করে, এমনকি উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বানও জানায়। অথচ, মন্ত্রিসভায় একটি আইন পাশের মাধ্যমে সরকার কোনরূপ গণশুনানী ছাড়াই তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে (Govt. wrests control of energy pricing, The Daily Star, 29 November, 2022)। এভাবে সরকার দেশ ও জনগণের বিনিময়ে মাত্র ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তার জন্য পশ্চিমা ঔপনিবেশিক হাতিয়ার IMF-এর কাছে আত্মসমর্পণ করছে! ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় IMF/World Bank (বিশ্বব্যাংক)-এর সামান্য ঋণ কোন সাহায্যে আসবে না, কারণ আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশের মাসিক চাহিদা ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি, এছাড়াও বাংলাদেশকে আগামী বছর সুদসহ বৈদেশিক ঋণ পরিষেবা হিসেবে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, হাসিনা সরকার IMF-এর কাছ থেকে ‘একটি ভালো আচরণের সার্টিফিকেট’ অর্জনের মাধ্যমে মেগা লুটপাট ও আর্থিক অব্যবস্থাপনার কারণে তার অনিবার্য পতন ঠেকাতে IMF-এর আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এই সার্টিফিকেট তাদেরকে আরও বিদেশী ঋণ পেতে এবং World Bank, এ.ডি.বি (ADB), আই.ডি.বি (IDB), জাইকা (JICA), ইত্যাদি কর্তৃক অর্থায়নকৃত মেগাপ্রকল্পসমূহ নিশ্চিতে সহায়তা করবে, যা দুর্নীতিবাজ এই সরকারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাকে নিশ্চিত করবে। আর IMF/World Bank বেসরকারীকরণ ও উদারনীতিসহ অন্যান্য কঠোর শর্তসমূহ আরোপের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির উপর আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, এবং নিশ্চিত করতে চায় যাতে IMF-এর এই প্রেসক্রিপশনগুলো হতে শুধুমাত্র স্থানীয় পুঁজিপতিগোষ্ঠী এবং US-UK-EU ও তাদের মিত্ররাই সুবিধা ভোগ করতে পারে। এটা সর্বজনবিদিত, পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলো সম্পদশালী বহু দেশকে শোষণ করেছে এবং তাদের নব্য-ঔপনিবেশিক হাতিয়ার এই আই.এম.এফ-বিশ্বব্যাংককে ব্যবহার করে সেখানকার জনগণকে দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত করেছে। অতীতে আমরা দেখেছি কাফির-উপনিবেশবাদীরা ইরাক আক্রমণ করেছিল এবং একটি অবৈধ যুদ্ধের মাধ্যমে সেখানকার তেল সম্পদ লুট করেছিল, যার চরম মূল্য সেই জনগোষ্ঠীকে দিতে হয়েছে। তাই এখন তারা IMF/World Bank-এর পুঁজিবাদী নীতির আওতায় হাসিনার মতো দালাল শাসকদের মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো সম্পদ সমৃদ্ধ দেশসমূহকে শোষণ করছে। কাফির-উপনিবেশবাদী শক্তি দ্বারা আমাদের সম্পদ লুণ্ঠন সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। তিনি ﷺ বলেছেন: লোকেরা শীঘ্রই একে অপরকে ডেকে আনবে তোমাদেরকে আক্রমণ করার জন্য, যেভাবে মানুষ খাওয়ার সময় অন্যদেরকে তাদের থালা ভাগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানায় (সুনানে আবু দাউদ)।

হে দেশবাসী, আমরা নিশ্চিতভাবে এমন এক সংকটের মধ্যে আটকা পড়েছি যেটি কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং একটি রাজনৈতিক সমস্যাও বটে, যা পঁচে যাওয়া পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সাথে অন্তর্নিহিতভাবে জড়িত। ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের ব্যাপক দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা এবং IMF/World Bank-এর প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে আরোপিত পশ্চিমা পুঁজিবাদী নীতি অনুসরণের কারণে আজ আমাদের অর্থনীতি ও অর্থব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। পশ্চিমা দেশসমূহের হীন নব্য-ঔপনিবেশিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে IMF/World Bank জেনেশুনে এধরনের দুর্নীতিতে অর্থায়ন করে থাকে। আমাদের এখন একটি বিকল্প রাজনৈতিক দর্শনের নিদারুণ প্রয়োজন। বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনই এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের একমাত্র সমাধান। অতএব, আমাদের অবশ্যই এই নব্য-উপনিবেশবাদী সংস্থাকে এবং সংস্কারের নামে এটি যেসব অশুভ দিক-নির্দেশনাসমূহ প্রদান করেছে সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে, কারণ এগুলো আমাদের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে। আমাদের সামনে একমাত্র পথ হচ্ছে নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় খিলাফত রাশিদাহ্’র অধীনে একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এটিই হচ্ছে পুনর্জাগরণের প্রকৃত প্রকল্প, যার মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে কাফির-উপনিবেশবাদী পশ্চিমা দেশসমূহের মুখের গ্রাস হিসাবে ব্যবহৃত হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারি, এবং উম্মাহ্ ও তার সম্পদকে পুঁজিবাদী-ঔপনিবেশিকগোষ্ঠীর লোলুপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পারি। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুর‘আনে বলেন:

 

*ٱِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا۟ مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ*

“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে” [আল-রা’দ: ১১]

 

হিযবুত তাহ্‌রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়