৫ আগস্ট ২০২৪ হচ্ছে যালিম শাসক ও যুলুমের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের অভ্যুত্থান, যা এখনও চলমান; তথাকথিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ হচ্ছে জনগণের অভ্যুত্থানকে ধ্বংস করতে মার্কিন অনুগত রাজনৈতিক দলসমূহের বিশ্বাসঘাতকতার দলিল
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
৫ আগস্ট ২০২৪ হচ্ছে যালিম শাসক ও যুলুমের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের অভ্যুত্থান, যা এখনও চলমান; তথাকথিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ হচ্ছে জনগণের অভ্যুত্থানকে ধ্বংস করতে মার্কিন অনুগত রাজনৈতিক দলসমূহের বিশ্বাসঘাতকতার দলিল
জনগণ চরম হতাশার মধ্য দিয়ে গতকাল ৫ আগস্ট ২০২৫ যালিম হাসিনা ও যুলুমের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার পতনের এক বছর অতিক্রম করল। কারণ হাসিনার পতনের পর মার্কিনীদের অনুগতগোষ্ঠী ও ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দলসমূহ জনগণের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্বভার গ্রহন করে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে এবং অভ্যুত্থানকে হাইজ্যাক করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তথাকথিত ‘জুলাই ঘোষণা’ এই অপচেষ্টার একটি নির্লজ্জ পদক্ষেপ। মার্কিনীদের দাসত্ব ও এই রাজনৈতিক সার্কাসকে জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই জুলাই ঘোষণায় জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন থাকাতো দূরের কথা, পিলখানায় ভারতের ষড়যন্ত্র এবং শাপলা চত্বরে ইসলামপ্রিয় জনগণের উপর গণহত্যার মত ঘটনার স্বীকৃতিও স্থান পায় নাই। একাত্তর (৭১), পঁচাত্তর (৭৫), নব্বই (৯০) তাদের রেফারেন্স, যার মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠীর চেহারা পরিবর্তন হয়েছে; কিন্তু জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি, কারণ শাসনব্যবস্থার সার্বিক পরিবর্তন হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, এবং মার্কিনী ও তাদের আঞ্চলিক চৌকিদার ভারতের আধিপত্য মেনে নিয়েই এটি প্রণয়ন করা হয়েছে। জনগণকে এটাও প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে, ছাত্রজনতার আন্দোলনের নেতৃত্বের দাবীদার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিশ্বাসঘাতক নেতৃত্ব জুলাই ঘোষণার দিনেই কক্সবাজারে পিটার হাসের সাথে প্রমোদ ভ্রমণে মত্ত ছিলো। “তারা শত্রু, তাই তাদের থেকে সাবধান। আল্লাহ্ তাদের ধ্বংস করুন; তারা কিভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছে?” [সূরা মুনাফিকুনঃ ৪]।
গণতন্ত্রের জ্বরে আক্রান্ত বুদ্ধিজীবি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকে আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, গণতন্ত্র নিজেই একটি স্বৈরাচারী ব্যবস্থা, কারণ এখানে মানুষকে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিবেচিত আব্রাহাম লিঙ্কন ১৮৬১ সালে কিছু অঞ্চলে নাগরিক আইন স্থগিত করেছিল এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে স্বৈরাচারের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছিল। ১৮৬২ সালে সে হেবিয়াস কর্পাস স্থগিত করে সামরিক আইনের অধীনে তের-হাজার ‘কপারহেড ডেমোক্র্যাট’ সদস্যকে বন্দী করে, কারণ তারা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি লিঙ্কনের এই পদক্ষেপগুলোকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করায় লিঙ্কন ৮৪ বছর বয়সী সেই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছিল। এই ঘটনা থেকে পরিষ্কার, বর্তমান ব্যবস্থা সংস্কার করে যতই ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হোক না কেন, শাসকগোষ্ঠীই ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকে; আর তাদের উপনিবেশিক প্রভু মার্কিনীরা তাকে ততক্ষণ সমর্থন দিবে, যতক্ষণ সে জনগণের উপর চেপে বসে থাকতে পারবে। আবার জনগণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শাসকগোষ্ঠীর পতন করলে মার্কিনীরা আবারও গণতন্ত্রের ফাঁকাবুলি ফেরি করে জনগণের আন্দোলনকে হাইজ্যাক করবে। এই বাস্তবতা এদেশের জনগণ দশকের পর দশক ধরে প্রত্যক্ষ করেছে। আল্লাহ্ ﷻ বলেন, “তারা আইন–কানুন প্রণয়নে তাগুতকে অনুসরণ করতে চায়, অথচ তাদেরকে তা প্রত্যাখ্যান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে” [সূরা আন-নিসাঃ ৬০]।
এদেশের জনগণ গণতান্ত্রিক শাসনও প্রত্যক্ষ করেছে, তাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জনগণের অন্যতম দাবী ছিল ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ইসলামী সংবিধান কায়েম করা। অন্তবর্তী সরকারসহ মার্কিন অনুগত রাজনৈতিক দলসমূহ গৌরবময় খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবীকে উগ্রবাদ হিসেবে আখ্যা দিয়ে উগ্রবাদ মোকাবেলায় তাদের প্রতিশ্রুতি মার্কিন মুল্লুককে দিয়ে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে। তারা শত্রুরাষ্ট্র ভারতকে মোকাবিলায় দেশের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করাতো দূরের কথা, বরং পিলখানা ট্র্যাজেডির জন্ম দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিনীদের অন্যতম সহযোগী, তাই মার্কিনীদের অনুগত রাজনৈতিকগোষ্ঠী ভারতের প্রতি তাদের নতজানু নীতি অবলম্বন করে চলছে। এদেশের জনগণ গণতন্ত্র ও এই বিশ্বাসঘাতক রাজনৈতিকগোষ্ঠী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং ইসলামী ব্যবস্থা খিলাফত প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। একমাত্র আসন্ন খিলাফত ব্যবস্থা ইসলামী সংবিধান কায়েম করে জনগণের ন্যায্য অধিকারসমূহ নিশ্চিত করবে এবং কাফির উপনিবেশবাদী মার্কিনীদের আধিপত্য থেকে দেশকে মুক্ত করবে, এবং ভারতকে শত্রুরাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করে এদেশ থেকে ভারতের সকল প্রভাব (foothold) উচ্ছেদ করবে।
﴿… فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنْ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلاَ يَضِلُّ وَلاَ يَشْقَى﴾
“… অতঃপর যে আমার হেদায়েত অনুসরণ করবে, সে (দুনিয়াতে) পথভ্রষ্ট হবে না এবং (পরকালে) কষ্ট পাবে না” [সূরা ত্ব-হাঃ ১২৩]।
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস