সমপরিমান প্রকৃত সম্পদের মজুত ছাড়াই নতুন টাকা ছাপানোর মাধ্যমে সরকার জনগণের কষ্টার্জিত সঞ্চয় চুরি করেছে; শুধুমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রের দ্বিধাতু (স্বর্ণ ও রৌপ্য) মানদণ্ড ভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা পুঁজিবাদী আদর্শের আর্থিক আধিপত্যের অবসান করবে
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
সমপরিমান প্রকৃত সম্পদের মজুত ছাড়াই নতুন টাকা ছাপানোর মাধ্যমে সরকার জনগণের কষ্টার্জিত সঞ্চয় চুরি করেছে; শুধুমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রের দ্বিধাতু (স্বর্ণ ও রৌপ্য) মানদণ্ড ভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা পুঁজিবাদী আদর্শের আর্থিক আধিপত্যের অবসান করবে
বাংলাদেশ ব্যাংক বাজেট সহায়তার নামে জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে ৫০,০০০ কোটি টাকারও অধিক নতুন টাকা ছাপিয়েছে, সাম্প্রতিক ইতিহাসে যার পরিমান সর্বোচ্চ (দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, জানুয়ারী ০৩, ২০২৩), মূলত ব্যাংকিং খাত থেকে কতিপয় পুঁজিপতি অভিজাতেরা যে টাকা লুট করেছে তার ক্ষতিপূরণ করতেই এই ঘৃণ্য কাজটি করা হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমান ইতোমধ্যেই ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকায় উপনীত হয়েছে। ব্যাংক খাতে এমন নজিরবিহীন লুটপাট প্রত্যক্ষ করে সাধারণ মানুষ বিগত কয়েক মাস ধরে ব্যাংক থেকে তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় তুলে নিতে শুরু করেছে, যা তারল্য সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। যার দরুন তৎক্ষণাৎ বিশ্বাসঘাতক শেখ হাসিনা জনগণের টাকা চুরির হুমকি দিয়ে বলেছিল: “আপনার টাকা তুলছেন এবং ঘরে রাখছেন, বালিশ কিংবা গদির নীচে, বা আলমারিতে। তবে তো চোর টাকা চুরি করে নিতে পারে” (বিবিসি নিউজ, ডিসেম্বর ৪, ২০২২)। এবং, তার সরকার প্রত্যাশিতভাবেই ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি, বরং অতিদ্রুত আরও নতুন টাকা ছাপানোর মাধ্যমে জনগণকে শাস্তি দেয়া শুরু করেছে। এটি উল্লেখযোগ্য পরিমানে মুদ্রাস্ফীতি ঘটিয়েছে এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে, যেসময়ে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির অসহনীয় চাপের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। অন্তর্নিহিতভাবে মূল্যহীন এই কাগুজে মুদ্রা এভাবেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটি শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, যা সরকারকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের মতো প্রকৃত সম্পদের মজুদ ছাড়াই মুদ্রা ছাপানোর ক্ষমতা প্রদান করেছে। ১৯৭১ সালে আমেরিকার নিক্সন সরকার স্বর্ণ ও মার্কিন ডলারের মধ্যে যে সংযোগ ছিল তা সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন করে। ডলারের আধিপত্য নিশ্চিত করার জন্য আমেরিকা Bretton Woods ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বের সকল মুদ্রাসমূহকে তাদের ডলারের সাথে সংযুক্ত করে। তখন থেকেই এই কাগুজে মুদ্রা সরকারী কারসাজির অবাধ সুযোগে পরিণত হয়। পুঁজিবাদী সরকারসমূহ মুদ্রা ছাপানোর পরিমাণের কোনরূপ সীমা ছাড়াই অর্থ মুদ্রণ করতে থাকে, ফলে মুদ্রাস্ফীতির ঝড় উঠে।
হে দেশবাসী! সীমাবদ্ধ মানব চিন্তা এবং সীমাহীন মানব আকাঙ্ক্ষার উপর প্রতিষ্ঠিত মানবসৃষ্ট এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং ইসলামী শাসনব্যবস্থা তথা খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করুন, যা আপনাদেরকে লোভী পুঁজিপতিদের অর্থনৈতিক দাসত্ব থেকে মুক্ত করবে। যেহেতু কাগুজে মুদ্রানীতি মুদ্রিত অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয় না, সেহেতু পুঁজিবাদী সরকারসমূহ তাদের মেগা প্রকল্পের ব্যয়ভার ও মেগা লুটপাটের ঋণ মেটানোর জন্য প্রয়োজনমাফিক টাকা মুদ্রণ করতে পারে। অন্যদিকে, ইসলাম অর্থ মুদ্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় নিয়ম প্রদান করেছে, যথা স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা। এর দ্বি-ধাতু (bi-metalic) মুদ্রানীতি অনুযায়ী স্বর্ণ ও রৌপ্য মজুদের বিপরীতে অর্থ মুদ্রিত হয়। ফলে কেবল ছাপাখানার সুইচের ঝাঁকুনি দিয়ে টাকা ছাপানো যায় না, বরং স্বর্ণ ও রৌপ্য খনন এবং পরিশোধনের কঠিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টাকা ছাপানো হয়। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ ১ দিনার মুদ্রার জন্য ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ এবং ১ দিরহামের জন্য ২.৯৭৫ গ্রাম রৌপ্য সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। যেহেতু স্বর্ণ ও রৌপ্যের মতো প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন মূল্যবান ধাতুসমূহের সরবরাহ কৃত্রিমভাবে বাড়ানো সম্ভব নয়, সেহেতু স্বর্ণ ও রৌপ্য মান অনুযায়ী অর্থ মুদ্রণ কখনই স্বেচ্ছাচারপ্রসূত ও অবাধ হতে পারে না। তাই স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থায় মুদ্রাস্ফীতি বলে কিছু নেই। খিলাফত রাষ্ট্র কেবল স্বর্ণ ও রৌপ্য মজুদের ভিত্তিতে মুদ্রা ছাপাবে, ফলে সম্পদ ও পণ্যের পরিমানের চেয়ে অতিরিক্ত কাগুজে মুদ্রা ছাপানোর কারণে বর্তমানে যে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি তা দূর করবে। এভাবে, বাইমেটালিক স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য ব্যয় ও রাজস্ব সংগ্রহ উভয় ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলা আরোপ করে, এবং অর্থের ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে ইচ্ছামতো আরও মুদ্রা ছাপাতে বাধা প্রদান করে। নিশ্চয়ই, লোভী পুঁজিপতিদের দ্বারা সৃষ্ট এই অর্থনৈতিক দুর্দশায় নীরবে ভোগান্তি সহ্য করা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। এসব পাপী ও অযোগ্য শাসকদের প্রতি অনুগত ও নিষ্ক্রিয় থাকাও লজ্জাজনক, যেখানে আমাদের মহান দ্বীন মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্যতার সমস্যার প্রকৃত সমাধান প্রদান করেছে। আত্মসমর্পণ ও ভয়-ভীতি জয় করে আমাদের একক উম্মাহ্ হিসেবে জেগে উঠতে হবে, এবং দুর্নীতিগ্রস্ত এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করার জন্য নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
*وَمَنۡ اَعۡرَضَ عَنۡ ذِكۡرِىۡ فَاِنَّ لَـهٗ مَعِيۡشَةً ضَنۡكًا*
“আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ” [সূরা ত্বহা: ১২৪]
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়