মিয়ানমারের মতো একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশ সীমান্তে মাসব্যাপী গোলাবর্ষণ ও হত্যার মত উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিক্রিয়ায় হাসিনা সরকারের অব্যাহত ‘সংযম’ প্রদর্শন প্রমাণ করে, সে তার ঔপনিবেশিক প্রভু ব্রিটেনের প্রতি আনুগত্যশীলতার কারণে উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অক্ষম
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
মিয়ানমারের মতো একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশ সীমান্তে মাসব্যাপী গোলাবর্ষণ ও হত্যার মত উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিক্রিয়ায় হাসিনা সরকারের অব্যাহত ‘সংযম’ প্রদর্শন প্রমাণ করে, সে তার ঔপনিবেশিক প্রভু ব্রিটেনের প্রতি আনুগত্যশীলতার কারণে উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অক্ষম
গত ৯ই সেপ্টেম্বর রাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে ইকবাল (১৭) নামক এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়। এর আগে একই দিন দুপুর বেলায় তামব্রুর সীমান্তবর্তী ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ মাইন বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি তরুণের পা উড়ে যায়। কিন্তু এটা কতইনা পরিতাপের বিষয় যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের মাসব্যাপী আগ্রাসন ও গোলাবর্ষণের ফলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়লেও বিশ্বাসঘাতক হাসিনা সরকার গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত ও ভঙ্গুর রাষ্ট্র মিয়ানমারকে প্রতিহত করাতো দূরের বিষয় তাদের বিরুদ্ধে জোরালো কোন প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেনি। যা দেখে সমগ্র দেশের মানুষ আজ হতবাক ও ক্ষুব্ধ। সরকার এই ঘটনাকে মিয়ানমার সীমান্তে তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। অতীতেও আমরা দেখেছি সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের ত্যাগ করে নরঘাতক মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সমর্থনের মাধ্যমে তার কুৎসিত চেহারা প্রদর্শন করেছিল। রোহিঙ্গা মুসলিমগণ যখন মিয়ানমারের নরক থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, তখন বিশ্বাসঘাতক হাসিনা সরকার তাদেরকে শরণার্থী শিবির নামক ‘খাঁচায়’ বন্দীর মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে ‘নিরাপত্তা’ প্রদান করে, যাতে এই জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের জন্য কোন হুমকির কারণ না হয়! শুধু তাই নয়, এই সরকার মুসলিম গণহত্যাকারী কাফির মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করতে আমাদের মুসলিম সামরিক বাহিনীকে মিয়ানমারে প্রেরণের মাধ্যমে তাদেরকে অসম্মানিত করেছে। ফলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সীমান্তে যতই আগ্রাসন করুক না কেন, শেখ হাসিনা কখনই তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করবে না, কারণ শেখ হাসিনা এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তা উভয়েই তাদের ঔপনিবেশিক প্রভু ব্রিটেনের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছে। অতএব, হাসিনা সরকার তার সেই বৃটিশ প্রভুর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত রয়েছে, যারা সর্বদা মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে সমর্থন দিয়ে আসছে, যাতে অং সান সুচি’র মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে যে হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছে তা মোকাবেলা করা যায়। গত শনিবার শেখ হাসিনা লন্ডনে লেবার পার্টির প্রধান ‘কের স্টারমার’–এর সামনে সাক্ষ্য দেয়, কিভাবে সে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে সুরক্ষিত রেখে তার বৃটিশ প্রভুর আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষা করে আসছে। শেখ হাসিনা তাকে বলেছে, বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে সংঘাতের সম্প্রসারিত প্রভাব সত্ত্বেও ‘সর্বোচ্চ সংযম’ রক্ষা করছে (“প্রধানমন্ত্রী হাসিনা: মিয়ানমার সীমান্ত উত্তেজনায় বাংলাদেশ সংযম বজায় রেখেছে”, ঢাকা ট্রিবিউন, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২২)।
অন্যদিকে, রোহিঙ্গা গণহত্যা ও তাদের প্রত্যাবাসনে উপনিবেশবাদী আমেরিকার মেকি আগ্রহ তার আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বহির্ভূত কোন বিষয় নয়। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাসমূহ কখনোই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি তাদের সহানুভূতি থেকে আরোপ করা হয়নি, বরং এটি কেবল রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্দশাকে কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর চাপ সৃষ্টির একটি চক্রান্ত মাত্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি জে. ব্লিঙ্কেন সম্প্রতি বলেছে যে, তার সরকার বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এটা পরিষ্কার যে, যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুকে জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছে, যাতে এটিকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের ব্রিটিশ-সমর্থিত সামরিক জান্তার ওপর চাপ বজায় রাখা যায়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমগণ আজ কাফির-উপনিবেশবাদী বৃটেন ও মার্কিনীদের ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের ঘৃণ্য শিকারে পরিণত হয়েছে। এমনকি বি.এন.পি’র মতো দলেরও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা কিংবা বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ার সাহস নেই, কারণ শেখ হাসিনার মতো তারাও পরাধীনতা ও দালালির রাজনীতি করে। তাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ ও তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে। এ যেন নেকড়েকে ডেকে ভেড়াকে রক্ষা করার আহ্বান জানানোর মতো! এই বিশ্বাসঘাতক ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ও রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে আমরা এর চেয়ে বেশি আর কি আশা করতে পারি, যারা কেবল নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম এবং দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের ঔপনিবেশিক প্রভু মার্কিন-ব্রিটেনের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় সর্বদা নিবেদিত!
হে দেশবাসী, রোহিঙ্গা মুসলিমগণ আমাদের ভাই-বোন, অতএব দালাল ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের অক্ষমতার কারণে আমরা তাদেরকে ত্যাগ করতে পারি না। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন: “এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই, সে তার প্রতি জুলুম করবে না এবং তাকে (শত্রুর কাছে) সমর্পণ করবে না” (বুখারী ও মুসলিম)। খিলাফত ধ্বংস এবং আমাদের উপর কৃত্রিম জাতি-রাষ্ট্র ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়াই হচ্ছে সেই মূল কারণ যা মুসলিম উম্মাহ্’র এই সম্মানিত অংশকে ভীতি ও অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করেছে। জেনে রাখুন, আরাকানে মুসলিমগণ ৮ম শতাব্দী থেকে বসবাস করে আসছে, যারা এই উপমহাদেশে ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রগামী ছিল; এবং ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত রোহিঙ্গারা বাংলার সুলতানের সহায়তায় আরাকান রাজ্য শাসন করেছে। সত্যনিষ্ঠ উম্মাহ্’র অংশ হওয়ার কারণে তারা এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে সম্মুখ কাতারে অবস্থান নিয়েছিল। বৌদ্ধরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে আপোষ করলেও রোহিঙ্গা মুসলিমরা করেনি। তাই এই উপমহাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার আগে ব্রিটেন রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে দৈন্যপীড়িত অবস্থায় পতিত করে এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর করুণায় উপর ছেড়ে দিয়ে যায়। সুতরাং, আমরা তাদেরকে পরিত্যাগ করতে পারি না, হে মুসলিমগণ! নির্যাতিত এই ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের উপর ফরজ দায়িত্ব। ক্রীতদাসতুল্য ধর্মনিরপেক্ষ এই নেতৃত্বকে আমাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং নবুয়্যতের আদলে দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্ রাষ্ট্র ফিরিয়ে আনার জন্য সচেষ্ট হতে হবে, যা রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষা করবে এবং তাদের জন্য সুরক্ষিত ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল নিশ্চিত করবে। আসন্ন খিলাফত তাদেরকে এই অমানবিক ধর্মনিরপেক্ষ-জাতীয়তাবাদী ব্যবস্থার বন্দিদশা থেকে মুক্ত করবে এবং আমাদের ভাই হিসেবে আমাদের সমাজে একীভূত করবে। আল্লাহ্’র ইচ্ছায়, আসন্ন খিলাফত মিয়ানমারকে নতজানু হতে বাধ্য করে এমনকি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বসবাসরত ও নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষা ও উদ্ধার করতে তার সেনাবাহিনী প্রেরণেও দ্বিধাবোধ করবে না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুর’আনে বলেন:
* وَإِنِ اسْتَنْصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ*
“এবং যদি তারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের কাছে সাহায্য চায় তবে তাদের সাহায্য করা তোমাদের অবশ্য কর্তব্য” [সূরা আল-আনফাল:৭২]
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়