working to establish khilafah

বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ইসলামে বৈধ?

নিচের অনুবাদটি সম্মানিত মুজতাহিদ ও মুফাচ্ছির শাইখ আতা ইবন খলীল আবু রাশতা (আল্লাহ তাকে হেফাজত করুন) কর্তৃক দেয়া এক প্রশ্নের জবাব হতে সংগৃহীত

১) বিটকয়েন কোনো কারেন্সি তথা মুদ্রা নয়। এটি মুদ্রার শর্ত পূরণ করে না। কারণ নবী (সা) কর্তৃক গৃহীত ও বাস্তবায়িত মুদ্রা ছিল স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা অর্থাৎ, দিরহাম ও দিনার। এই ইসলামী মুদ্রা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করে:
– এটি পন্য ও সেবা পরিমাপের ভিত্তি হতে হবে অর্থাৎ, এটি দাম ও মজুরীর নিরুপনকারী হতে হবে।
– এটি একটি কেন্দ্রী কর্তৃপক্ষ প্রচলন করবে। যা দিনার ও দিরহাম প্রচলনের দায়ভার বহন করবে এবং এটি কোনো অজানা পক্ষ হতে পারবে না।
– এটি মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ও সহজলভ্য হতে হবে, শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ হলে চলবে না।
উপরিউক্ত শর্তাদি বিটকয়েন এর উপর আরোপিত করলে এটি পরিষ্কার হয় যে তা এই তিন শর্ত পূরণ করে না:
এটি পন্য ও সেবা পরিমাপের ভিত্তি নয়। বরং নির্দিষ্ট কিছু পণ্য ও সেবা বিনিময়ের মাধ্যম।
কোনো জ্ঞাত পক্ষ কর্তৃক এর প্রচলন হয়নি, বরং তা অজ্ঞাত।
এটি মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ও সহজলভ্য নয়। এবং এটি তাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ যারা এটি বিনিময় করে ও এর মূল্য স্বীকার করে অর্থাৎ, এটি সমাজের সকলের জন্য নয়।
সুতরাং, বিটকয়েন মুদ্রা ইসলামী শরীআহতে কোনো মুদ্রা হিসেবে সিদ্ধ নয়।
২) সুতরাং, বিটকয়েন একটি পন্য ব্যতিত আর কিছুই নয়। তথাপি, এই পন্য একটি অজ্ঞাত উৎস হতে ছাড়া হয়, এর কোনো ব্যাকিং ছাড়াই। উপরন্ত, এটি জোচ্চুরি, প্রতারণা, ফটকাবাজি ও ধোঁকাবাজির বিশাল ক্ষেত্র। তাই এতে ব্যবসা করা বৈধ নয় অর্থাৎ, এটি কেনা ও বেচা বৈধ নয়। বিশেষত এটি যেহেতু অজ্ঞাত উৎস হতে ছাড়া হয়, তাই এটি সন্দেহ তৈরি করে হয়তো এর সাথে বড় পুঁজিবাদী দেশসমূহ সংশ্লিষ্ট রয়েছে, বিশেষ করে আমেরিকা। অথবা অসৎ উদ্দেশ্যে বড় কোনো দেশের গ্যাং কিংবা আন্তর্জাতিক বড় কোনো জুয়া কোম্পানি, মাদক চোরাচালান, অর্থ পাচার কিংবা সংঘটিত অপরাধচক্র জড়িত। নয়তো এর উৎস গোপন কেন?
সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হচ্ছে বিটকয়েন অজ্ঞাত (مجهول) উৎস হতে ছাড়া কেবল একটি পণ্য যার কোনো প্রকৃত মূল্য নেই এবং তাই এটি ফটকাবাজি ও জোচ্চুরির জন্য উন্মুক্ত, এবং এটি উপনিবেশিক পুঁজিবাদী দেশ, বিশেষত আমেরিকার জন্য এটি মানুষের সম্পদ কাজে লাগানোর ও লুঠ করার সুযোগ।
এ কারণেই এটি ক্রয় করা বৈধ নয় যেহেতু শরীআহর দলীল অজ্ঞাত পণ্য বিক্রয় ও ক্রয় হতে নিষেধ করেছে। এবং এর জন্য দলীল হচ্ছে:
«نَهَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ بَيْعِ الْحَصَاةِ، وَعَنْ بَيْعِ الْغَرَرِ»
আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত মুসলিম তার সহীহতে বর্ণনা করেছেন:
আল্লাহর রাসূল (সা) ‘হাসাহ’ ও ‘গারার’ ব্যবসা হতে নিষেধ করেছেন।
আবু হুরায়রা হতে তিরমিযি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন…
এবং ‘হাসাহ ব্যবসা’ বলতে বোঝানো হয়েছে যখন বিক্রেতা ক্রেতার কাছে কাপড় বিক্রির সময় বলে, ‘আমি আপনার কাছে তা-ই বিক্রি করবো যার উপর আমার ছোড়া পাথরটি পড়বে।’ অথবা ‘আমি আপনাকে সেই জমিই বিক্রি করবো যার উপর আমার ছোড়া পাথরটি পড়বে।’ সুতরাং, যা বিক্রি হচ্ছে তা জ্ঞাত নয়, এবং এটি নিষিদ্ধ।
গারার ব্যবসা বলতে যা অনিশ্চিত; অর্থাৎ, হতেও পারে, নাও হতে পারে, যেমন পানির মাছ বিক্রি করা, গরুর বাঁটের দুধ বিক্রি করা কিংবা গর্ভবতী পশুর গর্ভে যা আছে তা বিক্রি করা ইত্যাদি। এটি নিষিদ্ধ কারণ এটি গারার।
সুতরাং, এটি পরিষ্কার যে গারার ব্যবসা বা যা অনিশ্চিত, যা বিটকয়েন এর বাস্তবতা, যা একটি অজ্ঞাত উৎস হতে ছাড়া একটি পণ্য এবং অকর্তৃত্বশালী পক্ষ হতে প্রচলন করা হয় যা এটির গ্যারান্টি দিতে পারে। এটি ক্রয় বা বিক্রয় বৈধ নয়।
আতা বিন খলীল আবু আল-রাশতা ৩০ রবিউল আউয়্যাল, ১৪৩৯ হিজরী ১৮/১২/২০১৭ ইং