দ্রুত বিচার আইন স্থায়ীকরণ প্রমাণ করে হাসিনা হচ্ছে যালিম শাসক, আর ধর্মনিরপেক্ষ-গণতন্ত্র হচ্ছে যুলুমের ব্যবস্থা
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
দ্রুত বিচার আইন স্থায়ীকরণ প্রমাণ করে হাসিনা হচ্ছে যালিম শাসক, আর ধর্মনিরপেক্ষ-গণতন্ত্র হচ্ছে যুলুমের ব্যবস্থা
গত ২৯ জানুয়ারী ২০২৪, হাসিনার মন্ত্রিসভা আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন)-২০২৪-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়, এতে বিরোধী দলসমূহ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কারণ এই আইনটি বিশেষ করে বিরোধী দলসমূহকে দমনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছে, কোনো গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দল দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনটি স্থায়ী করা হয়নি, বরং দ্রুত বিচার হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনটি কার্যকর হয়েছে। এ জন্য আইনটি স্থায়ী করা হয়েছে। অথচ বিএনপি সরকার ২০০২ সালে আইনটি জারি করলে তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিল। আইনটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এখানে শুধুমাত্র অভিযোগকারীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এবং অনির্ভরযোগ্য তথ্য যেমনঃ অডিও, ভিডিও এবং ফটো ব্যবহার করে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়, যা চরম অবিচার এবং যুলুম।
ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর কাছে জনগণের টুটি চেপে ধরা যায় এমন আইনগুলো সব সময় খুব প্রিয়। সাম্প্রতি হাসিনা সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ প্রণয়ন করেছে যার মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার সমালোচনাকে ভয়ঙ্কর অপরাধ বিবেচনা করে কঠিন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এই কালো আইনগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ জনগণের দাবী আদায়ের আন্দোলনকে দমন করার জন্য। এছাড়া উপনিবেশবাদী বৃটিশদের তৈরি করা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীর কেউ বাতিল করে নাই। যেখানে শাসকের দায়িত্ব জনগণের বিষয়াদী দেখাশুনা করা কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসকেরা নিজেদের স্বার্থে খেয়ালখুশি মত আইন তৈরি করে এবং এসকল আইন ব্যবহার করে জনগণের উপর যুলুম করে। ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার আইন প্রণয়নের এই সার্বভৌম কর্তৃত্বই শাসকগোষ্ঠীকে এমন দানবে পরিণত করেছে। এটাই কি স্বাভাবিক নয় যে, সীমাবদ্ধ মানুষের পক্ষে নিজের স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে সার্বজনীন আইন প্রণয়ন করা সম্ভব নয়? ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার শাসন জনগণকে যুলুম ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে নাই, পারবেও না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “যারা আল্লাহ্’র নাযিলকৃত বিধান দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনা করে না, তারাই যালিম” [সূরা আল-মায়িদাহ্: ৪৫]।
যুলুম থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে মানবজাতিসহ মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল-খালিক্ব, আল-খাবীর মহান আল্লাহ্’র বাণীর অনুসরণ। তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন কোন পথে মানবজাতির কল্যাণ নিহিত। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “….বিধান দেয়ার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহ্’র..” [সূরা ইউসুফ: ৪০]।
হে সচেতন দেশবাসী বিশেষ করে বুদ্ধিজীবিগণ, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “…বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান? বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই শুধু উপদেশ গ্ৰহণ করে” [আয-যুমার: ০৯]। আপনারা প্রত্যক্ষ করছেন, বিশ্বব্যাপী ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্ষুদ্র অভিজাতশ্রেণীর স্বার্থ ব্যতীত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে দেখাশুনা করতে ব্যর্থ হয়েছে, মাত্র এক শতাব্দীর মধ্যেই যুলুমকে বৈশ্বিক মহামারীর মত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে। আপনারা এই যুলুমের মুখপত্র হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে, তৎকালীন বুদ্ধিজীবী এবং একজন উঁচু দরের কবি আত-তুফায়ল (রা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করুন। তিনি (রা.) প্রায়ই বলতেন, আমি যখন মক্কায় আসি, রাসূলে করিম ﷺ তখন ওখানে ছিলেন এবং কিছু কোরাইশ তার সঙ্গে দেখা করতে আসে। তারা বলল, ‘এই লোকটা আমাদের বিস্তর ক্ষতি করেছে। আমাদের সম্প্রদায়কে ভেঙে টুকরা টুকরা করেছে, তাদের একতা ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে লোকটা জাদুকরের মতো কথা বলে, সেই কথায় বাপ, মা, ভাই, স্ত্রী থেকে মানুষ আলাদা হয়ে যায়। আপনি ও আপনার লোকজনের উপরও তাঁর কথার পরিণাম এই রকম হবে বলে আমাদের ভয় হচ্ছে। কাজেই তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন না, তাঁর কথা শুনবেন না।’ ওরা এরকম জেদ করল যে আমি ঠিক করলাম, আমি তাঁর কথা শুনব না, তাঁর সঙ্গে কথাও বলব না। মসজিদে যাওয়ার সময় দৈবাৎ যদি তাঁর দু-একটি কথা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার কানে চলে আসে, সেই ভয়ে আমি একেবারে কানে তুলা গুঁজে দিলাম। মসজিদের কাছাকাছি গিয়ে দেখি কাবার পাশে নামাজে দাঁড়িয়েছেন আল্লাহ্’র রাসূল ﷺ। আমি তাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত ছিল যে, আমাকে তাঁর কিছু কথা শুনতে হবে এবং আমি এক সুন্দর কথা শুনে ফেললাম। আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহ্ আমার প্রতি রহম করুন! এই আমি একজন কবি, একজন বুদ্ধিমান মানুষ, যে ভালো-মন্দের ফারাক বোঝে, কাজেই লোকটা কী বলছে আমি কেন শুনব না? তাঁর কথা যদি ভালো হয়, আমি তা গ্রহণ করব। বর্জন করব, যদি তা মন্দ হয়।
নিশ্চয়ই আপনারা বুদ্ধিমান! আপনারা ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে সক্ষম। হিযবুত তাহ্রীর প্রতিনিয়ত বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচীর মাধ্যমে আপনাদের সামনে এই ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং ইসলামের সমাধান খিলাফত বাস্তবায়নের মডেল বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে তুলে ধরছে এবং আপনাদেরকে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে। সচেতন ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি হিসেবে আপনাদের কি হিযবুত তাহ্রীর-এর এই আহ্বানে সাড়া দেয়া উচিত নয়? তাই এই যুলুমের ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করে, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মনোনীত খিলাফত ব্যবস্থাকে মানবজাতির জন্য একমাত্র বিকল্প হিসেবে প্রচার ও প্রসার করুন। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রই পারে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধশালী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
*وَإِنَّهُ لَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ*
“আর নিশ্চয়ই এটি মু‘মিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত” [আন-নামল: ৭৭]।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস