একদিকে মানুষ বন্যাকবলিত অবস্থায় খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য হাহাকার করছে, আর অন্যদিকে হাসিনা সরকার দেশবাসীকে তার মেগা-লুটপাটের প্রকল্প পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উদযাপনে বাধ্য করছে – যা পঁচে-যাওয়া পুঁজিবাদী ব্যবস্থার “অলৌকিক উন্নয়নের” স্বরূপকে উন্মোচিত করেছে
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
একদিকে মানুষ বন্যাকবলিত অবস্থায় খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য হাহাকার করছে, আর অন্যদিকে হাসিনা সরকার দেশবাসীকে তার মেগা–লুটপাটের প্রকল্প পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উদযাপনে বাধ্য করছে – যা পঁচে–যাওয়া পুঁজিবাদী ব্যবস্থার “অলৌকিক উন্নয়নের” স্বরূপকে উন্মোচিত করেছে
ভারতের মেঘালয় অঞ্চল ঘিরে থাকা পাহাড় থেকে বর্ষার প্রবল বৃষ্টির পানি নেমে আসায় বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক ভূ-খন্ড এখন ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ষাট লাখ মানুষ দেশের উত্তর-পূর্ব নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে আটকা পড়েছে বা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেকে মারা গেছে এবং জীবিতরা অকল্পনীয় মানবিক সঙ্কটে নিপতিত হয়েছে, কারণ আটকে পড়া বন্যা-পীড়িতরা গত সাত দিন ধরে আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের জন্য সংগ্রাম করছে। সরকারের ত্রাণ সহায়তা কেবল কাগজে-কলমে ও কর্মকর্তাদের দৈনিক ব্রিফিং-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ, অথচ বাস্তবে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখনও ন্যূনতম ত্রাণ সামগ্রীর জন্য হাহাকার করছে। সাধারণ জনগণ স্বেচ্ছায় তাদের সীমিত জ্ঞান, দক্ষতা, সম্পদ ও অর্থ ত্রাণ বিতরণ এবং উদ্ধার কাজে ব্যয় করছে, আর হাসিনা সরকার পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎযাপন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে ব্যস্ত রয়েছে। মেগা-লুটপাট প্রকল্প উদযাপনের জন্য সরকার বহু কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, উদাহরণস্বরূপ: পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিনে জনসমাবেশের জন্য নব্বইটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে নয় কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যেখানে বন্যা কবলিত এলাকার ৪০ লক্ষ মানুষের জন্য মাথাপিছু মাত্র ৬.৫৫ টাকা এবং আধা কেজিরও কম চাল বরাদ্দ করা হয়েছে (দ্য ডেইলি স্টার, ২২শে জুন, ২০২২)! এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকেরা কতটা নিষ্ঠুর ও উদাসীন হয়ে উঠেছে যে তারা এখন জনগণের দুঃখ- দুর্দশা নিয়েও উপহাস করে। হেলিকপ্টার থেকে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট ‘পরিদর্শন’ করার পর হাসিনা চলমান বন্যা পরিস্থিতিকে “নতুন কিছু নয়” বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে যে “(বন্যার) কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে”। এই তথাকথিত পরিদর্শনের সময়ে হাসিনা অন্তত একটি আশ্রয়-কেন্দ্রের দুর্গত মানুষের সাথে দেখা করে তাদের খোঁজ-খবর নেয়ার বিষয়েও মাথা ঘামায়নি। ভুক্তভোগীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের চিন্তা না করে হাসিনা সরকার কেবল তাদের স্বঘোষিত ‘উন্নয়ন’ জোরপূর্বক জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে ব্যস্ত। পদ্মা সেতু নির্মাণে তাদের মেগা দুর্নীতি ও লুটপাট আড়াল করার জন্য তারা চায় যে জনগণ যেন উৎসবের আমেজে মজে থাকে। এমনকি পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারণে এসএসসি পরীক্ষা পুনঃনির্ধারিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বাতিল করা হয়েছে!
হে দেশবাসী, এটাই বিশ্বব্যাংক বা পুঁজিবাদী শাসকশ্রেণী কর্তৃক গৃহীত পুঁজিবাদী নীতির প্রকৃত কুৎসিত চেহারা, যেখানে ‘উন্নয়ন’ শুধুমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ শাসক, তাদের সহযোগী ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী এবং উপনিবেশবাদীদের জন্যই নিবেদিত, এবং এতে গণমানুষের কোন স্থান নেই। এটা সর্বজনবিদিত যে, হাসিনা সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় মূল প্রাক্কলন ব্যয়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি বৃদ্ধি করে এই প্রকল্প থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার লুট করেছে। আর ভারত তার স্বার্থে এই প্রকল্পের জন্য হাসিনা সরকারকে ২০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান হিসেবে প্রদান করেছে, কারণ এটি কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে আগরতলা পর্যন্ত ট্রানজিট রুট এবং তার দীর্ঘদিনের লালিত ভূ-রাজনৈতিক ও সংযোগ স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে (“পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ভারত তার প্রতিশ্রুত ২০০ মিলিয়ন ডলার অনুদানের পুরোটাই প্রদান করেছে”, bdnews24.com, ১৬ই জুলাই ২০১৫)। সেতু নির্মাণের কাজ পাওয়ায় চীনও খুশি হয়েছে, কারণ এর মাধ্যমে সে তার অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে পারবে। সকল বৃহৎ অংশীদারদেরকে খুশি করে এবং জনগণের টাকা লুটপাট করে হাসিনা সরকার প্রকল্প ব্যয়ের পুরো বোঁঝা জনগণের কাঁধে তুলে দিয়েছে এবং উচ্চ হারে সেতু টোল প্রস্তাব করেছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা ব্যাহত হবে। সরকারবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ-রাজনৈতিকগোষ্ঠীও মুশরিক-রাষ্ট্র ও পুঁজিবাদী নীতির স্বার্থরক্ষা করতে প্রকৃত ঘটনা হতে দৃষ্টিকে অন্যত্র সরিয়ে রেখেছে, যা থেকে এদের প্রকৃত চেহারাও উন্মোচিত হয়েছে, কারণ তাদের দাবি অনুযায়ী প্রকল্পটি পুঁজিবাদীদের প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হলে ভালো হতো!
ধর্মনিরপেক্ষ শাসনের অধীনে উন্নয়ন যদি সত্যিই গণমানুষ-কেন্দ্রিক হত, তবে এই পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দকৃত বাজেটের একটি ক্ষুদ্র অংশ সরিয়ে নিয়ে হাওর (জলাভূমি) অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের জীবিকা, ফসল ও সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্যে মানসম্পন্ন বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ থাকত। এবং, প্রতি বছর বর্ষার সময়ে বন্যার ঝুঁকিতে থাকা নিচু অঞ্চলগুলিকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ড্রেজিং ও বাঁধ নির্মাণের মতো সমাধানসমূহ ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়ে যেত। জনগণের প্রতি ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের অবহেলা এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে যে, বন্যাকবলিত অঞ্চলে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করার জন্য সামরিক উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারী দলসমূহকে “কলা গাছের ভেলা” ব্যবহার করতে হচ্ছে এবং নৌকার অভাবের কারণে উদ্ধার অভিযানে বেগ পেতে হচ্ছে। এটি একটি বৈশ্বিক চিত্র যে, পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থায় সাধারণ জনগণ কখনই অগ্রাধিকার পায় না। উদাহরণস্বরূপ, মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তান নব্য-উপনিবেশবাদীদের নিতি অনুযায়ী বিদেশি ঋণ ও বিশ্বব্যাংক, IMF-এর ঋণ নিয়ে অসংখ্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, ফলে এসব দেশে ইতিবাচক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়া সত্ত্বেও প্রতি বছর একদিকে ঋণের বোঝা অন্যদিকে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং দারিদ্র্যতা ও আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হে মুসলিমগণ, ইতিহাস সাক্ষী যে, কেবলমাত্র খিলাফত ব্যবস্থাই আন্তরিকতার সাথে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবজাতির দেখাশোনা করেছে। খিলাফতের অধীনে উন্নয়ন ছিল সত্যিকার অর্থে গণমানুষ-কেন্দ্রিক, এবং তখন মেগা প্রকল্পগুলোকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য কোন অভিজাত শ্রেণীর অস্তিত্ব ছিল না। দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.) জনগণের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে নানাবিধ মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। দুর্ভিক্ষের সময় মদিনার নাগরিকদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে তিনি মিশরের গভর্নর আমর ইবনুল আস (রা.)-কে নীলনদ ও লোহিত সাগর সংযোগকারী একটি খাল নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। উমর (রা.)-এর নেতৃত্বে ১৩৮ কিলোমিটার (৮৫.৭ মাইল) দীর্ঘ ‘আমির আল-মুমিনীন খাল’ মাত্র ছয় মাসের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। দুটি সমুদ্রকে যুক্ত করা হয়েছিল, যা পূর্ববর্তী পারস্য ও রোমান সম্রাটদের অবাস্তবায়িত স্বপ্ন ছিল। এছাড়াও, উমর (রা.)-এর শাসনামলে ইরাকের বসরা শহর প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি (রা.) সেচ ও খাওয়ার পানি সরবরাহের জন্য টাইগ্রিস থেকে নতুন শহর পর্যন্ত নয় মাইল দীর্ঘ একটি খাল নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
হে মুসলিমগণ, আপনারা এই বিশ্বাসঘাতক ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীকে দীর্ঘদিন সহ্য করেছেন, এবং এখন তাদের ও তাদেরকে জন্মদানকারী পুঁজিবাদী ব্যবস্থার হাত থেকে মুক্ত হওয়ার সময় এসেছে। আপনারা হয়তো এসব শাসকদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ ও সমালোচনা করছেন, বন্যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক ও সম্মেলনের আয়োজন করছেন, কিন্তু এতদিনে আপনাদের অনুধাবন করে ফেলা উচিত যে, পুরো ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা অপসারণ না করা পর্যন্ত আপনাদের দুর্দশার শেষ হবে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিজে কোন অনিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা নয়, বরং পঁচে-যাওয়া প্রতারণামূলক ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থাই সারা বিশ্বের মানবতার জন্য চরম এক বিপর্যয়, যা সাধারণ মানুষের কল্যাণের বিষয়ে কখনই গুরুত্ব দেয় না। আপনারা যদি নবুয়্যতের আদলে খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি বাস্তবায়নের কাজে নিয়োজিত না হন এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে সমূলে উৎপাটন না করেন, তবে সামনের দিনগুলো এখনকার চেয়েও কঠিন হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
* وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِى فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةًۭ ضَنكًۭا وَنَحْشُرُهُۥ يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ أَعْمَىٰ*
“… কিন্তু যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ। এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব” [সূরা ত্বাহা: ১২৪]
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া কার্যালয়