Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 75
Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৭৫ তম সংখ্যা । ০৮ জানুয়ারী, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
- “মেট্রোরেল চালু হলে বাসমালিকেরা সেবা বাড়াতে বাধ্য হবেন”
- “দুবাইয়ে ইসরাইলি গোয়েন্দার সঙ্গে ভিপি নুরের বৈঠক!”
- “ছাপানো টাকায় ঋণ নিয়ে সরকার তার বাজেট খরচ করছে”
- “বাংলাদেশের উন্নয়ন–অগ্রযাত্রার মুকুটে আরেকটি পালক মেট্রোরেলঃ প্রধানমন্ত্রী”
- ‘সংসদ সদস্যপুত্রের ‘মার’ খেয়েও পুলিশ বলল ভুল–বোঝাবুঝি’
- “থার্টিফার্স্টে আতশবাজি ও উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান নয়: ডিএমপি”
“মেট্রোরেল চালু হলে বাসমালিকেরা সেবা বাড়াতে বাধ্য হবেন”
খবরঃ
এত দিন ঢাকার গণপরিবহন বলতে বাসই ছিল মূল ভরসা। কিন্তু এর কোনো নির্ধারিত স্টেশন নেই, নেই সময় মেনে চলার সংস্কৃতি। এখন ঢাকাবাসী পাবেন মেট্রোরেল। মেট্রোরেল বিশ্বব্যাপী সময়ানুবর্তিতার একটি সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাছাড়া আমাদের বাসব্যবস্থায় সেবা বলতে কিছুই নেই। ভাড়া নিয়ে আছে নৈরাজ্য। মানুষ যখন দেখবেন মেট্রোরেলে দ্রুত যানজটে এড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে, তখন বাসে উঠতে চাইবেন না। বাসমালিকেরা হোঁচট খাবেন। তখন সেবা বাড়াতে বাধ্য হবেন, যৌক্তিক ভাড়া আদায় করতে সচেষ্ট হবেন। (www.prothomalo.com/bangladesh/bpzwbrtaym)
মন্তব্যঃ
তথাকথিত এই বাজার অর্থনীতির তত্ত্বের আলোকে, মেট্রোরেল চালু হলে বাসমালিকদের সেবা বাড়াতে বাধ্য হবার যুক্তি হাস্যকর। পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রদত্ত ধারণা অনুযায়ী, যাত্রীদের চাহিদা ও বিদ্যমান সরবরাহ ব্যবস্থার দৃষ্টিকোণ থেকে ঢাকা শহরের পরিবহন ‘বাজারের’ ধরণ হল মনোপলিস্টিক কম্পিটিশন (monopolistic competition) যেখানে চাহিদার তুলনায় পরিবহনের সংস্থান খুবই অপ্রতুল, ফলে পরিবহনে নতুন কোন সংযোজনের কারণে বিদ্যমান সরবরাহকারী (বাসমালিকরা) কোন ধরণের প্রতিযোগীতার মুখে পরবে না। বর্তমানে কেবল একটি প্রকল্প আংশিক চালু করা হয়েছে, আর প্রস্তাবিত মোট ৬ টি মেট্রোরেল প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়িত/চালু হলেও তা ঢাকা শহরের পরিবহন চাহিদার মাত্র ১৭% পূরণের ‘সক্ষমতা’ (!) অর্জন করবে। ফলে অর্থনৈতিক যুক্তির বিচারে বাসমালিকদের তাদের সেবার মান বাড়ানো বা নৈরাজ্য ও ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ গ্রহণের কোন সম্ভাবনা নেই। অপরদিকে, পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার দৃষ্টিকোণ থেকে ঢাকা শহরের পরিবহন ‘বাজারের’ ধরণ হল কলিউসিভ অলিগোপলি (collusive oligopoly), যেখানে মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতি পুরো খাতকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে। যানযট সমস্যা, ভাড়া নৈরাজ্য কিংবা যাত্রী ভোগান্তি এসবই হল এই অবৈধ নিয়ন্ত্রণের প্রত্যক্ষ ফল। তাই, এই সমিতির নিয়ন্ত্রণকে বহাল রেখে পুরো মেট্রোরেল (৬ টি) দিয়েও ঢাকা শহরের যানযট সমস্যা, ভাড়া নৈরাজ্য কিংবা যাত্রী ভোগান্তির কোন সমাধান সম্ভব নয়। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ঢাকা শহরের বাসগুলোকে কয়েকটি কোম্পানীর আওতায় নিয়ে আসার যে উদ্যোগ চলমান রয়েছে তা এই কলিউসিভ অলিগোপলি (collusive oligopoly)-কে একটি বৈধ ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিবে মাত্র এবং ব্যক্তিক ও ছোট উদ্যোক্তাদের ‘বাজারে’ প্রবেশের পথ রুদ্ধ করে দিবে। ‘বাজারের’ তথাকথিত অদৃশ্য-হাত কোন স্বংয়ক্রীয় ভারসাম্য অর্জনের পদ্ধতি নয়, বরং এই অদৃশ্য-হাত হল পুঁজিপতিদের লুকানো হাত এবং সিটি কর্পোরেশনের ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ তাদের এই হাতকেই শক্তিশালী করবে। অর্থাৎ, মেট্রোরেলকে জায়েজ করার জন্য ‘বাজার অর্থনীতি’ বা ‘বাজার ব্যবস্থা’র যে যুক্তি ‘বিশেষজ্ঞ’ মতামত হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে তা মূলত ‘অর্থনীতির ব্যাপারে অজ্ঞদের’ মতামত যা সরকারের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও লুটপাটকে অড়াল করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বাস্তবতা হল অনেকেই একটু স্বস্থির আশায় মেট্রোরেলে চড়বেন এবং এই সুযোগে সরকার জনগণের পকেট কাটার নতুন একটা উপায় পেয়েছে; তাছাড়া জ্বালানী/বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের নামে ইতিমধ্যে নির্ধারিত অতি-উচ্চ ভাড়া যে জ্বালানী/বিদ্যুতের দামের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে তা সহজেই অনুমেয়। এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কখনোই দেশের যানযট সমস্যা, ভাড়া নৈরাজ্য কিংবা যাত্রী ভোগান্তির কোন সমাধান করবে না কেননা এর জন্মই হয়েছে মানুষের জন্য বিভিন্ন সমস্যা তৈরী করে তা নিয়ে ব্যবসা করার জন্য।
বাংলাদেশে পরিবহন খাতের যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোর কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে এবং এর সমাধান লুকানো রয়েছে এই কারণগুলোকে নির্মূলের মধ্যে। বুয়েটের গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা এগুলো জানেন। তাদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রয়োগের সাথে যখন ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির সম্মীলন ঘটবে কেবলমাত্র তখনই দেশের পরিবহন খাতের সকল সমস্যা দূরীভূত হবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “(হে মুহাম্মাদ (সাঃ)), আপনার উপর এই কুরআন আমি এজন্য নাযিল করিনি যে এটা অনুসরণের পর তা আপনার (ও আপনার অনুসারীদের) কষ্টের কারণ হবে” [ত্বহা – ০২]।
রিসাত আহমেদ
“দুবাইয়ে ইসরাইলি গোয়েন্দার সঙ্গে ভিপি নুরের বৈঠক!”
খবরঃ
রাজনীতিতে নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা গণ-অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মেন্দি এন সাফাদি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টিরও সদস্য। গত ২৮ ডিসেম্বর দুবাইয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর মোসাদের এই সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। গতকাল মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি এবং পেজ থেকে তাদের দুই জনের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে দেখা যায়, একটি রেস্টুরেন্টের সামনে মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর। তবে নুরের দাবি ছবিটি এডিট করে বানিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৬ সালে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বৈঠকের ছবি প্রকাশ পেলে তোলপাড় শুরু হয়। একপর্যায়ে বিএনপির ঐ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি গ্রেফতারও হন। (www.ittefaq.com.bd/626806/দুবাইয়ে–ইসরাইলি–গোয়েন্দার–সঙ্গে–ভিপি–নুরের–বৈঠক)
মন্তব্যঃ
মোসাদের এজেন্ট, আমেরিকান এম্বাসাডর কিংবা ভারতীয় র’এর বদান্যতা প্রাপ্ত হয়ে এদেশে রাজনীতি করা এবং ক্ষমতায় গিয়ে অর্থ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির স্বাদ পাওয়া নতুন কিছু নয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পূর্বেও আমেরিকান এম্বাসীতে বিএনপি আর আওয়ামী লীগের মধ্যে দেনদরবার হয়েছিল। শেখ হাসিনার ভাষ্যমতে, “২০০১ এ আ.লীগকে হারাতে জোট বেঁধেছিল র-আমেরিকা”। সুতরাং মোসাদের এই মেন্দি এন সাফাদির সাথে ভিপি নুরের বৈঠক যদি হয়েও থাকে তবে তাতে আমাদের অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটিই হচ্ছে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর প্রধান চরিত্র। এরা ক্ষমতায় থাকলে সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের হাতে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে দেশকে দেউলিয়া করে নিজেদের ক্ষমতার ট্রেনকে চলমান রাখে। অপরদিকে এরা ক্ষমতায় না থাকলে যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় আসার জন্য প্রচেষ্টা চালায় যদিও তা হয় ইসলাম কিংবা দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের এই বিদেশ নির্ভরতা যেন একটি চিরন্তন ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। যেমন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের দুটি লবিং ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি। এজন্য সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার (বর্তমান বিনিময় মূল্যে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা)। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকার সময় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের নীতিগুলোর বিরুদ্ধে প্রচার চালানো, সুশাসন ও গণতন্ত্রের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের স্বপক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে অন্তত তিন বছর লবিংয়ের জন্য খরচ করেছে ১২ লাখ ৬০ হাজার ডলার (১০ কোটি ৮ লাখ টাকা)। ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী সরকারের পক্ষে কাজ করছে ‘বারবার গ্রিফিথ অ্যান্ড রজার্স এলএলসি’ (বিজিআর) নামের একটি লবিং প্রতিষ্ঠান। এর জন্য প্রতিবছর ৩ লাখ ২০ হাজার ডলার (২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা) করে ফি প্রদান করছে সরকার। আর এসব টাকা-ই কেটে নেয়া হচ্ছে সাধারণ জনগণের পকেট থেকে।
মূলত এই ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে নিজেদের ক্যরিয়ার গড়া। ফলে যেকোন মুল্যে ক্ষমতায় আরোহনই এখানে বড় কথা। ক্ষমতায় যেতে পারলেই জনগণের টাকা লুটপাট করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার সুবর্ণ সুযোগের দ্বার উন্মোচিত হয়ে যায়। ফলে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যাওয়া এবং টিকে থাকাটাই মূখ্য হয়ে দাঁড়ায় কারণ এর ফলে যে রিটার্ন আসে তা অভাবনীয়। যেমন, ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্র ১০ বছরে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে অন্তত এক হাজার ৫৪৬ শতাংশ। সরকারদলীয় সাবেক এমপি আসলামুল হকের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই টাকা তিনি বিভিন্ন কোম্পানির নামে ঋণ নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে প্রদত্ত সম্পদ বিবরণী মোতাবেক রাজধানীর আমিনবাজার এলাকায় তার সাড়ে তিন বিঘা জমি রয়েছে। এর পাঁচ বছরের মাথায় ২০১৩ সালে একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রদত্ত হলফনামায় দেখা যায় তার মালিকানাধীন জমির পরিমাণ ১৪১ একরের বেশি। সম্পদ অর্জনের এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় সবাই। সেজন্যেই আমরা দেখি ক্ষমতাসীন দলের গ্রাম পর্যায়ের কমিটি গঠনেও চলে ব্যাপক দেন-দরবার ও আন্তঃসংঘর্ষ। আর জাতীয় পর্যায়ে চলে বিদেশী শক্তিসমূহের পদলেহনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহনের তীব্র প্রতিযোগীতা।
পরকালের হিসাব-নিকাশের ব্যাপারে বিশ্বাসহীন এই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার রাজনীতিতে এর চেয়ে বেশী আমরা কি-ইবা আশা করতে পারি! এখানে উম্মাহ’র সাথে প্রতারণা, উম্মাহ্’র স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা শাসকগোষ্ঠীর নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। পক্ষান্তরে খিলাফত ব্যবস্থায় শাসক অর্থাৎ খলীফা থাকবেন তাক্বওয়াবান এবং পরকালের ব্যাপারে সচেতন। ফলে উম্মাহ্’র সাথে প্রতারণা করে বিদেশী শক্তির সাথে আতাত করা কিংবা দেশের সার্বভৌমত্ব এবং উম্মাহ্’র স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থকে চরিতার্থ করার মানসিকতা থেকে খিলাফত রাষ্ট্রের শাসকবৃন্দ মুক্ত থাকবেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরস্পর বন্ধু; আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে নিশ্চয়ই সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে” [সূরাঃ আল-মায়েদা-৫১]; রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কেয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের নিতম্বে একটি করে ব্যানার লাগানো থাকবে যা তার বিশ্বাসঘাতকতার সমানুপাতিক হারে উঁচু হয়ে থাকবে, এবং কোন বিশ্বাসঘাতকতা-ই শাসকের বিশ্বাসঘাতকতা থেকে নিকৃষ্ট নয়” [মুসলিম, তিরমিজি]। খিলাফত রাষ্ট্রের শাসকগণ এসকল আয়াত ও হাদীসের উপর আমল করবেন, ফলে তাদের পক্ষে উম্মাহ্’র সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বিদেশী শক্তির সাথে আতাত করা অসম্ভব ব্যাপার।
মো. হাফিজুর রহমান
“ছাপানো টাকায় ঋণ নিয়ে সরকার তার বাজেট খরচ করছে”
খবরঃ
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর ৬ মাসেই ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি টাকা ছেপে সরকারকে দিয়েছে তার বাজেট ঘাটতি দূর করার জন্য, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ। (www.tbsnews.net/economy/banking/cenbank-goes-printing-money-support-budget-562466?amp)
মন্তব্যঃ
টাকা যেহেতু ‘ফিয়াট মূদ্রা’ (কাগুজে মূদ্রা) অর্থাৎ যার পেছনে কোন প্রকৃত সম্পদ রিজার্ভ থাকার বা প্রকৃত সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার বাধ্যবাধকতা নেই সেজন্যই সরকারগুলো ইচ্ছা করলেই যেকোন পরিমানে এটি ছাপতে পারে। যে সম্পদ বাস্তবে নেই তা ইচ্ছামত তৈরি করে বাজারে নিয়ে এসে যেকোন প্রকৃত সম্পদ কেনা বা ভোগ করার সামর্থ স্পষ্ট ডাকাতি। সরকার এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে এমন যেকেউ এই ছাপানো কাগুজে মূদ্রা যেকোন পরিমানে নিয়ে নিতে পারে শুধু এই প্রতিশ্রুতিতে যে সে সুদ যোগ করে এটি সে ফেরত দিবে। এখন এটি স্পস্ট যে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাংক থেকে টাকাগুলো আমাদের দেশের ৪০-৪৫ টি পরিবার যাচ্ছেতাই ভাবে নিয়ে যাচ্ছে। তারা এর বড় অংশ পাচার করে তুলনামূলক শক্তিশালী মূদ্রা ডলারে নিয়ে রাখে কিংবা আমেরিকা ইংল্যান্ডে বিনিয়োগ করে আর দেশের ব্যাংকগুলোকে ফেরত না দিয়ে বারবার খেলাপি ঋণ রিশিডিউল করে আরও নতুন ঋণ নেয়। আর এসব অবৈধ কাজের ফল হচ্ছে প্রতিনিয়ত মূদ্রার মান কমে যাওয়া তথা সাধারণ মানুষের প্রকৃত সম্পদ হারিয়ে ফেলা ও নিত্যপণ্য কেনার জন্য অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজন হওয়া। অবস্থা এত ভয়াবহ যে ১৯২০ সাল থেকে ২০২২ সাল এই শতকে বৈশ্বিক মূদ্রার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০০ গুণ অথচ এর আগের ১০০০ হাজার বছর যখন মূলত স্বর্ণ ভিত্তিক মূদ্রা ছিল ও ইসলামী বিশ্বে সুদ ছিলনা তখন মূদ্রার পরিমাণ বেড়েছে মাত্র ১০ গুণ। এটা থেকে স্পষ্ট যে আগের ১০০০ বছর ছিল স্বাভাবিক কারণ মানুষ কাজ করে এই সময়ের মধ্যে প্রকৃত সম্পদ ও সেবার পরিমান ১০ গুণ বাড়াতে পারাটা স্বাভাবিক। কিন্তু এর পরের ১০০ বছরের ১০০ গুন মূদ্রা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলাতে এই বিশ্বের মানুষের পক্ষে প্রতিবছর কি প্রকৃত সম্পদ ও সেবা দ্বিগুণ করা সম্ভব হয়েছে? উত্তর হচ্ছে, অবশ্য না।
অথচ এরপরও পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদরা শতাব্দী জুড়ে বৈশ্বিক পুঁজিবাদী লুটেরা অর্থনীতির ভয়ংকর এই দুই উপকরণ ‘ফিয়াট মূদ্রা’ ও ‘সুদ’-কে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির একটি চমৎকার নিয়ামক হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। উপরের এসব খবরে এখন এটা পরিস্কার যে ‘ফিয়াট মূদ্রা’ ও ‘সূদ’ এই দুই নীতিসুবিধা আসলে লুটেরা সরকার ও ক্ষুদ্র পুঁজিবাদীগোষ্ঠীকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রাতারাতি জনগণের সম্পদ ডাকাতি করে অবিশ্বাস্য উন্নতিসাধন করার অবাধ সুযোগ করে দিয়েছে। আর এসবের দায় মেটাতে ঐসব তথাকথিত অর্থনীতিবিদসহ সাধারণ জনগণ দিনরাত খাটছে অথচ প্রতিনিয়ত আরও নিঃস্ব হচ্ছে! বাস্তবতা এমন যে ‘ফিয়াট মূদ্রা’ ও ‘সূদ’ এই দুই নীতি যেন শয়তানের দুই শিং যাতে এই লুটেরা সরকার ও ক্ষুদ্র পুঁজিবাদীগোষ্ঠী সাধারণ মানুষকে আটকে চরকির মত ঘুরিয়ে তাদের কতচাপে কতটুকু লম্বা হবার সহনশীলতা আছে তার পরীক্ষা নিচ্ছে।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এসব স্পষ্ট জুলুমের অস্ত্রের চাপে নিজের সহনশীলতা প্রমাণে কষ্ট করা কিংবা নিজের আক্বিদা বা বিশ্বাসের সমাধানকে দূরে ঠেলে পুঁজিবাদী লুটেরা স্বার্থে নিজের বুদ্ধিজ্ঞান নষ্ট করার কোন মানে হয় না। বরং কষ্ট যদি করতেই হয় তবে করা উচিত এই জুলুমের নষ্ট লুটেরা ব্যবস্থাকে সমূলে উৎপাটিত করাতে। খিলাফত ব্যবস্থা আবারও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এসব ‘ফিয়াট মূদ্রা’কে পরিত্যাগ করে রাষ্ট্র শুধুমাত্র স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মূদ্রা চালু করবে। কুর‘আন-সুন্নাহ্’র আলোকে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৬৭ অনুযায়ী স্বর্ণ-রৌপ্য অথবা স্বর্ণ-রৌপ্য ভিত্তিক প্রিন্টেড বা মিন্টেড মূদ্রাই রাষ্ট্র গ্রহণ করবে, অন্যকোন মুদ্রা নয়। ফলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই ধরনের ডাকাতিসুলভ লুটের আর কোন সুযোগ থাকবে না। অনুচ্ছেদ ১৫৭ অনুযায়ী রাষ্ট্র সম্পদগুলোকে জনগণের মধ্যে বিতরণ করার জন্য কাজ করবে, এবং কখনই এগুলোকে অল্পকিছু মানুষের মধ্যে বা কোন শ্রেণী বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে দিবে না। এবং অনুচ্ছেদ ১৬৯ অনুযায়ী সকল ধরনের সুদ ভিত্তিক লেনদেন নিষিদ্ধ। কেবলমাত্র পরবর্তী নব্যুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফতই পারবে এইসব জুলুম থেকে আমাদেরকে মুক্ত করতে, তাই আজকের অর্থনীতিবিদ বা স্কলাররাসহ সকলের উচিত সেই ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “সাবধান! জাহিলিয়াতের প্রত্যেক বিষয় আমার দুই পায়ের নিচে। জাহেলি যুগের ‘রিবা/সুদ’ বাতিল”।
মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“বাংলাদেশের উন্নয়ন–অগ্রযাত্রার মুকুটে আরেকটি পালক মেট্রোরেলঃ প্রধানমন্ত্রী”
খবরঃ
মেট্রোরেলকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার মুকুটে আরেকটি পালক বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশের অহংকারের আরেকটি পালক সংযোজন করতে পারলাম। এটাই বড় কথা।’ …মেট্রোরেল চালুর ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের কারণে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হবে। দৈনিক যাতায়াতের যে সময় নষ্ট হয়, টাকা-পয়সা নষ্ট হয়, তা আর হবে না…চারগুণ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আমরা স্মার্ট জনশক্তি গড়ে তুলবো…।’…প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘…আওয়ামী লীগ সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়া কাজ করছে। ১৪ বছরের মধ্যে দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।’ ৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। আমরা ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা নিয়েছি। (www.banglatribune.com/national/779136/বাংলাদেশের-উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার-মুকুটে-আরেকটি-পালক)
মন্তব্যঃ
আপাতদৃষ্টিতে মেট্রোরেল কিংবা মেট্রোরেলের মত যেকোন মেগা প্রজেক্টের উদ্বোধন দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার নতুন মাত্রা বলে মনে হলেও বাস্তবে তা কতটুকু সঠিক এটা বুঝা জরুরী। কার্যত, যেকোন অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুধুমাত্র তখনি প্রকৃত উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা হিসেবে বিবেচিত হয় যখন উক্ত অঞ্চলের মানব জীবন সম্পর্কিত সমস্যাগুলো আগে সমাধান করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ, প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মত মৌলিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করে যখন কোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন অগ্রসর হয় তখন তা হয় প্রকৃত উন্নয়ন; না হয় যেকোন উন্নয়নই প্রশ্নবিদ্ধ।
দেশের মানুষ এখন প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, জ্বালানি সংকট, রিজার্ভ সংকট, জীবন-যাপনের খরচ বৃদ্ধি, চিকিৎসা সংকট, বাস্তু-সংকট, শিক্ষা-সংকট, খাদ্য-সংকটের মত জীবন যাপনের নানা সংকটে একের পর এক পেটে লাথি খাচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণনির্ভর মেট্রোরেলের মত নানা মেগা-প্রকল্পের নামে একের পর এক দেশী-বিদেশী ঋণ ও চক্রবৃদ্ধি সুদ পরিশোধের দায়ে সরকারি বিভিন্ন ট্যাক্স-ভ্যাটের ভারে কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর অর্থ-শক্তি হারাচ্ছে। সরকারিভাবে পর্যায়ক্রমে স্ব-নির্ভর অর্থনীতিকে আমদানি নির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তরের ফলে অর্থনৈতিকভাবে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারাচ্ছে। আবার, সরকারি ব্যবস্থাপনা এবং ছত্র-ছায়ায় যখন জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ এস. আলম গ্রুপ, এক্সিম ব্যাংক ও আই.এফ.আই.সি ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের মত ঘুটি কয়েক লোক ও তাদের পরিবারের পাইকারি হারে লুটপাটের সুযোগে পরিণত হয় তখন টিকে থাকার শেষ ভরসাটুকুও হারাচ্ছে। এমতাবস্থায়, মেট্রোরেলের উদ্বোধন কোন বিবেচনাতেই উন্নয়নের অগ্রগতি না। বরং, এটি হচ্ছে ঋণ করে বাড়ি বানিয়ে সারাজীবন ভিক্ষাবৃত্তি করে চলার মত বিলাসিতা। বাস্তবচিত্র হচ্ছে, সরকার একদিকে ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মেট্রোরেল কোনরকম দায়সাড়া উদ্বোধন করে জনগণকে উন্নয়নের মূলা দেখাচ্ছে আবার অন্যদিকে শুধু এস আলম গ্রুপকেই নামে-বেনামে ১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ উত্তোলন করে জনগণের অর্থ লোপাটের সুযোগ করে দিয়েছে, বাকি লুটপাটের হিসেব না হয় আপাতত বাদই দিলাম। হিসেব মিলালেতো সবই লস। কেননা, একদিকে মেট্রোরেলের অস্বাভাবিক ব্যয় জনগণকেই নানাভাবে ট্যাক্স এবং অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পরিশোধ করতে হবে অন্যদিকে জনগণেরই সঞ্চয়কৃত অর্থ সরকার পূঁজিপতি ডাকাতদের হাতে উঠিয়ে দিচ্ছে। এতে জনগণের উন্নয়ন কই(!)?হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রাস্তাঘাট, রেল স্টেশন বানিয়ে যদি দেশের জনগণকে সেই রাস্তা কিংবা স্টেশনে খোলা আকাশের নিছে নিরাপত্তাহীনতায় ঘুমাতে হয় তাহলে সে উন্নয়ন অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ।
এই সরকার তার চোখের ছানি পরিস্কার না করা পর্যন্ত জনগণের এমন দুর্দশা দেখবেনা। আর এই ছানি পরিস্কার কখনোই হবেনা যদি না এই শাসকগোষ্ঠী মানুষের উন্নয়নকে মানুষের রব আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র দৃষ্টিভঙ্গি তথা ইসলাম দিয়ে দেখে। ইসলাম সর্বপ্রথম মানুষের মানবীয় সমস্যাগুলোর সমাধান করে এবং এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে অবকাঠামো গড়ে তোলে। তারপর একের পর এক বাকি অবকাঠামোগত উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থায় মানুষ আগে, তাই এই ব্যবস্থায় মানুষের মৌলিক সমস্যার সমাধান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আর পূঁজিবাদী ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠীদের স্বার্থ আগে তাই এখানে সবার আগে তাদের স্বার্থ রক্ষাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই, এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের অবশ্যই পুনরায় ইসলামে ফিরে আসতে হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম…” [সূরা-আরাফঃ ৯৬ ]
আসাদুল্লাহ্ নাঈম
‘সংসদ সদস্যপুত্রের ‘মার’ খেয়েও পুলিশ বলল ভুল–বোঝাবুঝি’
খবরঃ
রাত তখন সাড়ে ১০টা। গুলশান–২ কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগ কার্যালয়ের ফটক। বনানীর দিক থেকে আসা একটি জিপ ধাক্কা দিল ট্রাফিক পুলিশের একটি গাড়িকে।… কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের মারধর শুরু করেন ওই যুবক।… পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশকে মারধর করা ওই যুবকের নাম ইন্তেশার চৌধুরী। তিনি ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর ছোট ছেলে… ওই সময় গাড়িতে তাঁর সঙ্গে এক বান্ধবী ছিলেন।… তখন উপকমিশনার বলেন, পুলিশের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/ri1mdnyofn)
মন্তব্যঃ
বর্তমান গণতান্ত্রিক এই শাসন ব্যবস্থায় ‘ক্ষমতা’ হল এমন একটি ফ্যাক্টর, যেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একই ধরনের ঘটনা কিংবা অপরাধে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করে। যেমন, একদিকে জনতা কর্তৃক পুলিশ তার কৃত অপরাধের কারণে গণধোলাইয়ের শিকার হলে সরকারি কাজে বাধা প্রদানের ভয়ঙ্কর (?) অপরাধে ৩৫০-৪৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়, অনেক লোককে গ্রেফতার করা হয় (পড়ুন ntvbd.com, ১০ জুন ২০২২)। অন্যদিকে, এই ঘটনায় দেখা গেছে, ক্ষমতাসীনদের পরিবারের বখাটে ব্যক্তি কর্তৃক মারধরের শিকার হলেও এটা ‘সামান্য ভুল বোঝাবুঝি’ কিংবা ‘ছোট ঘটনা’ হিসেবে বিবেচিত হয়। বর্তমান এই শাসনব্যবস্থায় আমরা দেখতে পাই, অপরাধী ব্যক্তিবর্গরাই শাসক হিসেবে নিয়োজিত হয়। এই শাসনব্যবস্থার রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে তাদেরই নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্নাড শ’ এর উক্তি হলো-‘নিশ্চিতভাবেই রাজনীতি হল বদমাইশদের (scoundrel) শেষ আশ্রয়স্থল’। তাইতো এখানে আমরা দেখি বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয় জো বাইডেন, পুতিনের মত খুনী-বদমাইশরা যারা নিজেদের স্বার্থে বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষ হত্যায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানেও বর্তমান হাসিনা সরকার ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০ টি বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ৬ শতাধিক ব্যক্তির গুমের জন্য দায়ী। আর এই কাজে তার প্রত্যক্ষ সহযোগী হল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অর্থাৎ এখানে ‘জনগণের বন্ধু’ কিংবা ‘সেবক’ হিসেবে প্রচারিত বাহিনী মূলত বদমাইশ ক্ষমতাসীনদের হুকুমের গোলামে পরিণত হয়। পূর্ববর্তী সরকারের আমলের হাওয়া ভবনের লাঠিয়াল হিসেবে পরিচিত ‘কোহিনূর মিয়া’ কিংবা আজকের ‘হারুন’ এর মতো ক্ষমতাসীনদের তল্পিবাহকরা, কেউই এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে ‘আইন সকলের জন্য সমান’ শুধুই মাত্র একটা ফাঁকা বুলি। তাই এখানে ক্ষমতাবান অপরাধীরা কিংবা তাদের পরিবারের বখাটে সদস্যরা পুলিশকে মারধরের মতো অপরাধ করেও ছাড় পাবে, এটাই স্বাভাবিক।
অন্যদিকে, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজনীতি করেন এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ সন্তানগণ। এই ব্যবস্থায় পুর্বে রাজনীতি করতে নবীগণ (আঃ)। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “বনী ইসরাইলের রাজনীতি করতেন নবীগণ। যখনই এক নবী মৃত্যুবরণ করতেন তখন তার স্থলে অন্য নবী স্থলাভিষিক্ত হতেন, কিন্তু আমার পরে আর কোন নবী নেই। শীঘ্রই অনেক সংখ্যক খলীফা আসবেন…”। এবং পরবর্তীতে ওমর (রা.)-এর মত নিষ্ঠাবান খলিফাগণ রাজনীতি করতেন। যার ন্যায় বিচারের হাত থেকে তার পুত্রও রেহাই পায়নি। তিনি মদপানের অপরাধে তার পুত্র আবু শাহমাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। খলিফার পুত্র বলে অন্যরা শাস্তি প্রদানে দুর্বলতা প্রদর্শন করতে পারেন-এই আশঙ্কায় তিনি নিজেই এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবং এই কারণে পরবর্তীতে তার পুত্রের মৃত্যু হয়েছিল। ইসলামী শাসনব্যবস্থার বিশেষত্ব হল, শাসকের আল্লাহ্ভীরুতার পাশাপাশি জনগণ কর্তৃক জবাবদিহিতা, শাসকের আইন প্রণয়নের কোন ক্ষমতা নাই ও শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা। তাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে শাসনব্যবস্থার নেতৃত্বে ন্যায়পরায়ন ব্যক্তি থাকার কারণে এই শাসনব্যবস্থায় পুলিশকে (সুরতাহ) ক্ষমতাসীনদের দাসত্ব করতে হয় না। আইন তখন প্রকৃত অর্থেই ‘সকল নাগরিকের জন্য সমান’ এর রূপ পায়। পুলিশ তখন জনগণের জন্য ত্রানকর্তা হয়ে উঠেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর শাসনের সময় কায়েস ইবনে সাদ (রা.) কিংবা আবু বকর (রা.)-এর সময় আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসুদ (রা.) এর মত বিখ্যাত সাহাবীগণ এই দায়িত্বে (পুলিশ) নিয়োজিত ছিলেন।
মো: জহিরুল ইসলাম
“থার্টিফার্স্টে আতশবাজি ও উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান নয়: ডিএমপি”
খবরঃ
নগরবাসীকে ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীতে ইউনিফর্মে ও সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে কোনো প্রকার দুর্ঘটনা না ঘটে। সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড স্ট্যান্ডবাই থাকবে। যেকোন প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে তাদেরকে মোতায়েন করা হবে। তিনি বলেন, রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার বা উন্মুক্ত স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা উৎসব করা যাবে না। উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের ডিজে পার্টির আয়োজন করা যাবে না। তবে হোটেল ও ক্লাবের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইনডোরে অনুষ্ঠান করা যাবে। কোথাও আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা ফানুস উড়ানো যাবে না। তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তেজগাঁও, হাতিরঝিল, যাত্রাবাড়ী, গুলশান ও বনানী এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, লাইটিং ইউনিট ও হাতিরঝিল এলাকায় ডুবুরি মোতায়েন থাকবে। ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগের পুলিশ লাইন্সে মেডিকেল টিম মোতায়েন থাকবে। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কোনো প্রকার হুমকি নেই’। (https://samakal.com/t-20/article/2212148933/থার্টিফার্স্টে–আতশবাজি–ও–উন্মুক্ত–স্থানে–অনুষ্ঠান–নয়–ডিএমপি)
মন্তব্যঃ
‘থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কোনো প্রকার হুমকি নেই’ তারপরও এত সরকারি আয়োজনের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে দেশের মানুষ, বিশেষত তরুণ সমাজের মধ্যে পশ্চিমা কুফর সংস্কৃতি (ইন্দ্রিয়গত পরিতুষ্টিকে জীবনের ধ্যানজ্ঞান হিসেবে নেওয়া) ও পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দিয়ে তাদের সঠিক ইসলামী আক্বীদাহ ও পবিত্র অন্তরকে কলুষিত করা। এই উপলক্ষে পুলিশের যত বিধি-নিষেধ ছিল তার উদ্দেশ্য হল এই রাতকে ঘিরে পুরো নগরীজুড়ে বেহায়াপনা সহ জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে এমন সকল অপকর্ম যেন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় তা নিশ্চিত করা। আতশবাজি, পটকা ফোটানো নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও তা ছিল লোকদেখানো ও কোন দুর্ঘটনা বা অগ্নিকান্ড ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব এড়ানোর জন্য। কেননা, রাতের আকাশ আলোকিত করে তোলা টনকে টন আতশবাজি ও পটকা পুলিশের আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া কেনাবেচা বা ব্যবহার করা কখনোই সম্ভব নয়। উন্মুক্ত স্থানে কোন অনুষ্ঠান না করার নির্দেশনা জারি করা হলেও শহরের বিভিন্ন স্থানে তরুণ-তরুণীরা আসর জমিয়েছে, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় তরুণ-তরুণীদের জমায়েত থেকে দুই শতাধিক ফানুস উড়ানো হয়েছে, সঙ্গে তীব্র শব্দে মুহুর্মুহু আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়েছে, কিন্তু পুলিশ বাধা প্রদান বা অন্যকোন ব্যবস্থা নেয়নি।
থার্টিফার্স্ট বা ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ হল আতশবাজি ও পটকা ফুটানো এবং ফানুস উড়ানো। কাজগুলো আপাতদৃষ্টিতে নিছক আনন্দদায়ক মনে হলেও এগুলোর উদ্ভবের সাথে পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাসের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা জড়িত এবং বিশ্বব্যাপী এগুলোর সংঘবদ্ধ উদযাপনের পেছনে রয়েছে কাফির সাম্রাজ্যবাদীদের বিশেষ পরিকল্পনা। চীনের পৌত্তলিক ও প্রেতাত্মা পুঁজারীরা (Occults) ‘অশুভ আত্মা’-কে ভয় দেখিয়ে তাড়ানোর জন্য নিদিষ্ট দিনে অগ্নিকুন্ড তৈরী করে তার মধ্যে শুকনো বাঁশের কান্ডকে ছুঁড়ে মারত যা ক্রমাগতভাবে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হত। পরবর্তীতে গানপাউডার আবিষ্কার হলে চীনারা তাদের এই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় বাঁশের শুকনো কান্ডের বদলে আতশবাজি ও পটকার ব্যবহার শুরু করে। আর ফানুস হল বৌদ্ধধর্মীয় উৎসবে ব্যবহৃত এক প্রকারের আলোক প্রদীপ যা তাদের প্রভূ গৌতম বুদ্ধের একটি অতিপ্রাকৃত কাজের প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের জন্য করা হয়। বৌদ্ধরা খালি পায়ে, ধর্মীয় গাঁথা বা মন্ত্রপাঠ করে, সাধু-ধ্বনির সুরে সুরে গৌতম বুদ্ধকে উৎসর্গ করে ফানুস উড়িয়ে দেয়। তাদের বিশ্বাসমতে মন্ত্রপাঠ না করলে ও বুদ্ধকে উৎসর্গ না করে ফানুস উড়ালে পাপ হয়। কালের বিবর্তনে কাফির সাম্রাজ্যবাদীদের হাত ধরে এই কর্মকান্ডগুলো সার্বজনীন উদযাপন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদীগোষ্ঠীগুলো তাদের নব্যসাম্রাজ্যবাদ টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে পশ্চিমা ভোগবাদকে বেঁছে নিয়েছে এবং এর সাথে পরিপূরক হিসেবে জুড়ে দিয়েছে নানান ধর্ম, নানান বিশ্বাস (ইসলাম ব্যাতীত) থেকে উদ্ভব হওয়া বিভিন্ন কর্মকান্ড, যা ‘চিন্তাশূণ্য’ মানুষের নিকট আনন্দদায়ক। বস্তুত ইন্দ্রিয়গত পরিতুষ্টিকে জীবনের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও ধ্যানজ্ঞান হিসেবে নেয়াকে মহিমান্বিত হিসেবে উপস্থাপন করে এবং ইন্দ্রিয়গত পরিতুষ্টি অর্জনের যাবতীয় উপায়-উপকরণগুলো রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করে সবার নিকট সহজলভ্য রেখে সাম্রাজ্যবাদীগোষ্ঠীগুলো জনগণকে, বিশেষত তরুণ সমাজকে ‘চিন্তাশূণ্য’ করে রাখতে চায়। তারা এমন একটি প্রজন্ম চায় যারা স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি ব্যবহারে অক্ষম, ‘উন্নত ও জটিল’ (advanced and critical) ‘রাজনৈতিক চিন্তার’ কথা যাদের কল্পনাতেও আসবে না। যেকোন ‘চিন্তাশূণ্য’ জাতির জীবনে আর যাই থাকুক, কোন সম্মান বা মর্যাদা নেই। বুঝে হোক বা না বুঝে, ইন্দ্রিয়গত পরিতুষ্টিকে জীবনের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও ধ্যানজ্ঞান হিসেবে নিয়ে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে এমন সকল অপকর্মে ডুবে থেকে ‘অনন্ত আখিরাত’-এর কঠিন অভিযাত্রাকে স্বেচ্ছায় আরো বিপদসঙ্কুল করে তোলা আর যাই হোক কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “হে মানুষ! কী এমন বিষয়ে তুমি ব্যস্ত যা তোমাকে তোমার প্রতিপালকের (সামনে দন্ডায়মান হওয়া) সম্পর্কে গাফেল করে রেখেছে” (আল-ইনফিতার – ০৬)
রিসাত আহমেদ