working to establish khilafah

Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 70

Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৭০ তম সংখ্যা । ২১ নভেম্বর, ২০২২

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

“কাতার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে ইসলামের ঐতিহ্য”
“বোরোতে কৃষকের জন্য নেই তেমন সুখবর”
“অর্থনীতির সংকট গভীর ও দীর্ঘ হচ্ছে”
“খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা”
“ওএমএস চালের লাইনে অপেক্ষমান নারীর মৃত্যু”
“সংসদে সংরক্ষিত আসন চান হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডাররা”
“সৌদিতেও হ্যালোইন উৎসব, নেটিজেনদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া”
“ফেডের নীতি সুদ বৃদ্ধি – বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দরপতনের শঙ্কা”
“অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোনো রাষ্ট্রদূতের নাক গলানো মেনে নেব না: কৃষিমন্ত্রী”
“বায়ু দূষণে শীর্ষ অবস্থানের কাছাকাছি ঢাকা”

 

 

 

“কাতার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে ইসলামের ঐতিহ্য”

খবরঃ
রোববার (২০ নভেম্বর) ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সঙ্গে থাকবে আতশবাজির ঝলকানি। পরে রাত ১০টায় উদ্বোধনী ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে মাঠে নামবে স্বাগতিক কাতার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এবারের আসরের থিম সং ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ ইওরস টু টেইক’ গাইবেন আমেরিকান গায়ক ডমিনিক লিল ববি। এ গানের সঙ্গে মঞ্চ মাতাবেন বলিউড সুপারস্টার নোরা ফাতেহি। এ ছাড়া মঞ্চ মাতাবেন জনপ্রিয় কোরিয়ান ব্যান্ড বিটিএস। তুলে ধরা হবে ইসলামের ঐতিহ্য ও কাতারের কালচার। এ উপলক্ষে ইতোমধ্যে মহানবীর বানী ও কুরআনের আয়াতের অংশবিশেষ দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো কাতার। আরবী ও ইংরেজীতে প্রতিটি কুরআনোর আয়াত ও হাদিসের অনুবাদ ও ব্যাখা করা হয়েছে। (www.dailyinqilab.com/article/534434/কাতার-বিশ্বকাপের-উদ্বোধনী-অনুষ্ঠানে-তুলে-ধরা-হবে-ইসলামের-ঐতিহ্য)

মন্তব্যঃ
কাতারে শুরু হওয়া এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ বিভিন্ন কারণেই আলোচিত। এর মধ্যে অন্যতম হল সমকামী নারী-পুরুষ, উভকামী এবং ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের অধিকার দমনের অভিযোগে বিভিন্ন সেলিব্রেটিদের বিশ্বকাপ বর্জন। যদিও আয়োজক দেশটির কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে, যেকোন মানুষ তিনি যে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, যৌন পরিচয় বা জাতীয়তারই হোন না কেন, তাকে বিশ্বকাপে স্বাগত জানানো হবে। LGBTQ-দেরকে সাদরে গ্রহণ করার ঘোষণা দেওয়ার পরেও আপত্তির কারণ হল কাতার বলেছে ‘জনসম্মুখে প্রেমের প্রকাশ ঘটানো আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়’! তাছাড়া বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলোতে মদ বিক্রি নিয়েও চাপের মুখে পরে কাতার। যদিও কাতারের বড় হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে মদ পাওয়া যায় এবং কেউ ঘরে বসে মদ পান করতে চায় তাহলে কাতার এয়ারওয়েজ পরিচালিত একটি দোকান থেকে তা কিনতে পারে, কিন্তু ফিফার দাবি স্টেডিয়ামগুলোতেও মদের অনুমতি দিতে হবে (বিশ্বকাপে কাতারের স্টেডিয়ামে অ্যালকোহল বিক্রি করতে ফিফার চাপ, যুগান্তর)। পাশাপাশি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নর্তকীদের নির্লজ্জ প্রদর্শনীতো রয়েছেই। এই আপাদমস্তক জাহেলি আয়োজনের মধ্যে ইসলামের ঐতিহ্য তুলে ধরার নামে কুরআনের আয়াত ও বিভিন্ন হাদিসের অংশবিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হায়! ইসলাম পালনের ও প্রচারের কী চমৎকার নিদর্শন! কাতার কিংবা যেকোন মুসলিম রাষ্ট্র কাফিরদেরকে যতই ছাড় দিক না কেন তারা আরো ছাড় আশা করবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আমাদের আক্বীদাকে বিসর্জন না দেই; কেননা তারা আল্লাহ্‌’র নির্ধারিত সীমারেখা কিংবা মুসলিমদের আবেগের কোন তোয়াক্কাই করে না। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, (হে রাসূল) ইহুদি ও খ্রীস্টানরা ততক্ষন পর্যন্ত আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি তাদের মিল্লাতে (জীবনাদর্শে ও ধর্মবিশ্বাসে) প্রবেশ করেন (আল-বাক্বারাঃ ১২০)।

যে বিশ্বকাপ নিয়ে এত উন্মাদনা তার ইতিহাসও আমাদের জানা উচিত। সপ্তদশ শতকের পূর্ব পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার ও উপনিবেশিক কলোনী স্থাপন নিয়ে বিভক্ত ইউরোপীয়রা পরষ্পরের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে চরম অশান্তি ও দারিদ্রতার মধ্যে জীবনযাপন করছিল যাকে তারা নিজেরাই নাম দিয়েছে ‘ডার্ক এইজ’ বা অন্ধকার যুগ। ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে পুরো ইউরোপে এই সময় ‘ক্যাথলিক লীগ’ ও ‘প্রটেস্ট্যান্ট ইউনিয়নে’ বিভক্ত হয়ে পরে। উসমানীয় খিলাফতের ইউরোপ বিজয় অভিযান চলাকালীন সময়ে মুসলিমদের অগ্রযাত্রা মোকাবেলার ব্যাপারে একমত হয়ে ১৬৪৮ সালে এই দুই ব্লকের প্রতিনিধিরা ফ্রান্সের ওয়েস্টফ্যালিয়া-তে বৈঠকে বসে এবং দীর্ঘ আলোচনার পর তারা nation state বা জাতিরাষ্ট্রের ধারণার জন্ম দেয় ও পরষ্পরের জাতিসত্তা অক্ষুন্ন রাখার ব্যাপরে ঐকমত্যে পৌঁছায়। এরপর এই সম্মিলীত খ্রীস্টান জোট মুসলিমদের অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে বেশকিছু সাফল্য অর্জন করলেও তাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ ও অবিশ্বাস বাড়তে থাকে। এই দ্বন্দ ও অবিশ্বাসকে প্রশমিত করার বিভিন্ন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ওয়েস্টফ্যালিয়া চুক্তির প্রধান আটটি দেশ ফ্রান্স, জার্মানী, স্পেন, সুইডেন, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড ১৯০৪ সালে ফিফা (FIFA) প্রতিষ্ঠা করে। মজার ব্যাপার হল ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপে বেলজিয়াম ও ফ্রান্স ছাড়া ফিফার প্রতিষ্ঠাকালীন কোন সদস্য দেশই অর্থের অভাবে অংশগ্রহণ করেনি, অথচ কালের প্ররিক্রমায় এই বিশ্বকাপই এখন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা এবং তাদের জীবনব্যবস্থা ও কুফর সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার একটি হাতিয়ার। কিছু সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র পৃথিবীর বাকি রাষ্ট্রগুলোকে ক্ষুদ্র মানসিকতাকে ছড়িয়ে দিয়ে মনস্তাত্বিকভাবে দুর্বল ও নতজানু করে রাখার জন্যও ফুটবল বিশ্বকাপ সহ আরো নানান প্রতিযোগীতামূলক আয়োজনকে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশকে এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলা যেতে পারে।

বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে একধরণের হীনমন্নতা কাজ করে, কেননা বাংলাদেশের এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণের কোন দূরতম সম্ভাবনাও নেই। ফলে বিশ্বকাপ ফুটবলের মৌসুম আসলেই যার যার সমর্থিত দল নিয়ে শুরু হয় উন্মাদনা। আড্ডা, নাটক-সিনেমা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবখানেই ভীনদেশের খেলোয়ারদের নিয়ে মাতামাতি। বিভিন্ন দেশের পতাকা নিয়ে উদ্ভট প্রতিযোগীতার নেশায় মত্ত হয়ে নানান কীর্তিকলাপের জন্ম দিচ্ছে অনেকে। খিলাফত ব্যবস্থার অবর্তমানে কতটা দুর্বল চিন্তা, নতজানু ও ক্ষুদ্র মানসিকতায় পৌঁছেছি আমরা! আমরা নিজেদেরকে সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে কল্পনা করতেও ভুলে গিয়েছি! ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ কিংবা খেলা দেখা হালাল না হারাম এই আলোচনায় না গিয়ে এই বিশ্বকাপ উপলক্ষে প্রত্যেক সচেতন ও নিষ্ঠাবান মুসলিমের উচিত আমাদের নিজেদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা এবং আমাদের নতজানু ও ক্ষুদ্র মানসিকতার প্রকৃত কারণ অনুধাবন করা। আমাদের উচিত নিম্নোক্ত এই আয়াতের প্রকৃত বাস্তবতা অনুধাবন করা, যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, মানবজাতির কল্যানের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে (আলি ইমরান-১১০)। আমাদেরকে এটাও সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা সাম্রাজ্যবাদীদের ফেরি করে বেড়ানো খেল-তামাশাকে মহিমান্বিত করার জীবনকে বেছে নিয়ে চিরস্থায়ী আখিরাতের কল্যানকে পরিত্যাগ করব কী না? আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, “এবং দুনিয়ার জীবনতো খেল-তামাশা, জাঁকজমক ও অহমিকা প্রদর্শনের প্রতিযোগীতা ছাড়া কিছুই নয়। যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাসস্থলই উত্তম। তবুও কী তোমরা অনুধাবন করবে না? (আন’আম- ৩২)।

– রিসাত আহমেদ

 

 

 

“বোরোতে কৃষকের জন্য নেই তেমন সুখবর”

খবরঃ
ডিজেলের দাম আকাশছোঁয়া। বোরো চাষের মৌসুম আসন্ন। সরকারের তরফ থেকে ডিজেলে ভর্তুকির কোনো আশ্বাস মেলেনি। এতে বোরো উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৪২ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিকে সরকার বিনামূল্যে সার ও বীজ দেবে। তবে এটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এছাড়া সরকারি সহায়তা বা প্রণোদনার বাইরে দেশের অধিকাংশ কৃষক। এককথায়-বোরো মৌসুমে কৃষকের জন্য এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সুখবর নেই।… আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে দাম ৬৫ থেকে ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৮০ টাকা। আট মাসের মাথায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ইস্যুতে ৬ আগস্ট ডিজেলের দাম আরও ৪২ শতাংশ বাড়ায় সরকার। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।… উল্লেখ্য, দেশে প্রতি বছর ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদন করা হয়। (www.jugantor.com/todays-paper/last-page/616726/বোরোতে-কৃষকের-জন্য-নেই-তেমন-সুখবর)

মন্তব্যঃ
সরকার একদিকে দুর্ভিক্ষের ভয় দেখাচ্ছে, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে’ এমন কথা বলছে। কিন্তু আবাদ করার জন্য কৃষককে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে না। তাহলে কেন এই মায়াকান্না? সমস্যার কথা বলা আর মুখে মুখে সমাধান দেয়া শাসকের কাজ না। শাসকের দায়িত্ব হল সমস্যা থেকে উত্তরণের যাবতীয় বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের অপরিহার্য সমস্যা সমাধান সরকারের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। কিন্তু আমরা পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শাসকশ্রেণীর কাছ থেকে তার উল্টোটা দেখতে পাই। পুঁজিপতিগোষ্ঠী ও অতিধনী ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার ব্যবস্থা তারা ঠিকই করতে পারে, হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপিদের ব্যাংক লোন ঠিকই রিসিডিউল হয়। আর যত অজুহাত বেচারা দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের বেলায় – আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম বেশি, সরকারের হাতে টাকা নেই, রিজার্ভ সঙ্কট। এসব গল্প থেকে মুলতঃ লাভবান হয় ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী আর শাসকগোষ্ঠী। আইএমএফ থেকে কঠিন শর্তে যে ঋণ নেয়া হচ্ছে সেটা তো তাদের পকেটেই যাবে কিন্তু তার মাশুল দিতে হবে গরীব কৃষকদের, কারণ ঋণের শর্ত মোতাবেক সরকারকে ভর্তুকি কমাতে হবে কৃষি ও জ্বালানি খাতে।

দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাদ এমন একটা ব্যবস্থা যেখানে সঙ্কট ও উন্নয়ন উভয়ক্ষেত্রে লাভবান হয় শাসক ও অতিধনী পুঁজিপতিগোষ্ঠী আর অন্যদিকে জনগণকে নিতে হয় বাড়তি ঋণের বোঝা। এত সঙ্কটের মধ্যেও নাকি এ দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে (দেখুনঃ “গত অর্থবছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২৩৩ ডলার”, https://amaderorthoneeti.com/new/2022/11/14/350332/) এই বাড়তি আয় গেল কোথায়? কৃষক বোরো আবাদের জন্য ডিজেল কিনতে পারছে না কেন? কিন্তু পুঁজিপতিরা ঠিকই বিলাসবহুল গাড়ী কিনতে পারছে (দেখুনঃ “দেশে গত এক দশকে বিলাসবহুল গাড়ি বেড়েছে ৩৯ শতাংশ”, https://amaderorthoneeti.com/new/2022/01/02/334372/)। সরকারের যে উন্নয়নে বিশ্ব অবাক হয়েছে! সে উন্নয়ন দরিদ্র কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি। ভোর থেকে অপেক্ষা করার পরও যখন ওএমএসের চালের ট্রাক আসে না তখন অসহায় পিতার চোখ বেয়ে আসে কান্না (দেখুনঃ “ওএমএসের ট্রাক- চালের জন্য ভোর থেকে অপেক্ষা”, https://www.prothomalo.com/business/99ytclqazx)।

উর্বর মাটির কৃষিনির্ভর এদেশ অথচ পুঁজিবাদী এই শাসকগোষ্ঠী কৃষকদের প্রতি নজর দেয় না। খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার কোন আন্তরিক ইচ্ছে তাদের নেই। তারা হিসেব নিকাষ করে গার্মেন্টস নিয়ে, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে, যার কাঁচামাল আসবে বিদেশ থেকে আর তৈরি পণ্যটি রপ্তানি হবে বিদেশের বাজারে। এভাবে এদেশের শাসকগোষ্ঠী আমাদেরকে সবসময় পশ্চিমা কাফিরগোষ্ঠীর উপর নির্ভরশীল করে রাখতে চায়। পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থা আমাদেরকে কখন স্বনির্ভর হতে দিবে না।

আত্মমর্যাদা সম্পন্ন স্বনির্ভর জাতিতে পরিণত হতে হলে ধারণ করতে হয় এমন আদর্শ ও ব্যবস্থা যা মানুষের বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। আমাদের জন্য সে আদর্শ হল ইসলাম আর ব্যবস্থাটির নাম খিলাফত। আল্লাহ্‌’র ন্যায্য বিধান ও খলিফার রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা আমাদেরকে প্রকৃত অর্থে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে পারে। অতীতের খলিফাদের মতই আসন্ন খলিফা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সর্বাধিক গুরুত্ব দিবে। কুর‘আন-সুন্নাহ্‌’র ভিত্তিতে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ১৫৫ ধারায় বলা হয়েছে: “রাষ্ট্র কৃষিকাজ ও তার উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয়গুলো কৃষিনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে তত্ত্বাবধান করবে যাতে করে ভূমির পুর্ণাঙ্গ ও সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মাত্রার ব্যবহার নিশ্চিত হয়”। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ থেকে উল্লেখ করা যেতে পারে, তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.) সর্বপ্রথম মদিনার জমিতে গম চাষ করেন। এত বিশাল এলাকাজুড়ে চাষাবাদ করেন যে উৎপন্ন শস্য মদিনাবাসীর এক বছরের খোরাকি হয়ে যেত। ফলে সিরিয়া থেকে খাদ্যশস্য আমদানি নিষ্প্রয়োজন হয়ে পড়ে (সূত্রঃ তারিখে দিমাস্ক ২৫/১০২)। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যার কোনো জমি আছে, সে যেন তা চাষাবাদ করে। অথবা অন্য ভাইকে দান করে দেয় (তবু যেন অনাবাদি না থাকে)। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৯৩)

– আবু যায়িদ

 

 

 

“অর্থনীতির সংকট গভীর ও দীর্ঘ হচ্ছে”

খবরঃ
অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। বরং তা আরও গভীর ও দীর্ঘ হচ্ছে। অর্থনীতির অনেকগুলো সূচকই আরও দুর্বল হয়েছে। জ্বালানী ও বিদ্যুৎ–সংকট আরও বেড়েছে। খাদ্য–সংকটের আশঙ্কা বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়েই। প্রধানমন্ত্রীও দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন। চলতি বছরে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কমেছে ১১ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি। রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের গতি কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় কম বলে লেনদেনের ঘাটতি এখন রেকর্ড পরিমাণ। সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন মূল্যস্ফীতি। এতে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে, কমেছে প্রকৃত আয়। উদ্যোক্তাদের জন্য বড় সমস্যা বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংকট। উৎপাদন কম হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো হিমশিম খাচ্ছে ডলার নিয়ে। সরকারের আয়ও কম। (www.prothomalo.com/business/iannehx12j)

মন্তব্যঃ
সমস্যার তালিকা দীর্ঘ এবং প্রতিটি সমস্যাই গুরুতর, এতে কোন সন্দেহ নেই। সমস্যাগুলো নিয়ে অনেকেই জ্ঞানগর্ভ কথা বলছেন এবেং অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি ও শঙ্কা। বিশেষ করে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনী নিয়ে অনেকেই ভবিষ্যৎবাণী করছেন এবং এর স্বপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি ও তথ্য উপস্থাপন করে একে বিশ্বাসযোগ্য করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। (দুর্ভিক্ষের শঙ্কা: কতটা ঝুঁকিতে বাংলাদেশ? প্রধানমন্ত্রীর কথাই কি তাহলে সত্যি হতে চলেছে? তথ্যসূত্র: একাত্তর টিভি, ১০ নভেম্বর, ২০২২,)। দেশের প্র্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (FAO) বলছে দুর্ভিক্ষ আসছে। আর আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভয় দেখাবে এবং অশ্লীলতা ও কৃপণতার আদেশ দিবে। আর আল্লাহ্‌ নিজের পক্ষ তোমাদেরকে থেকে ক্ষমা ও অসীম বরকতপূর্ণ রিযিকের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ (তার বান্দাদের প্রয়োজন পূরণে) অতিশয় সক্ষম ও সম্যক অবগত (সূরা আল-বাক্বারা: ২৬৮)। সুতরাং, যারা সকল প্রকার নেয়ামতে পরিপূর্ণ আল্লাহ্’র যমিনে খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষের ভয় দেখায় ও কৃচ্ছতা সাধনের আদেশ দেয় তাদের সাথে শয়তানের আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক সহজেই অনুমেয়।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থার শাসকরূপী দুর্বৃত্তরা প্রতারণায় শয়তানের মতই সিদ্ধহস্ত। তাদের অপকর্মগুলোকে তারা অত্যন্ত চতুরতার সাথে আড়াল করে রাখে। যেমন, ব্যাংকে রাখা জনগণের আমানতের টাকা ঋণের নামে লোপাট করে দিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা দেশের অর্থনীতিকে ভিতর থেকে ফোকলা করে রেখেছে। অথচ তথাকথিত সরকারবিরোধী বুদ্ধিজীবীরা কেউই এর ভয়াবহতার প্রকৃত চিত্র নিয়ে কোন কথা বলছে না; তাদের কাছে এটা গ্রে-জোন, কেননা জনগণ সত্য জেনে গেলে তাদের সস্তা আশ্বাস জনগণকে বোকা বানাতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে গ্রাহকদের আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৮২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা, অথচ একই সময়ে ব্যাংকগুলোর হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ লাখ ১৮ হাজার ১৯২ কোটি টাকা! বাকি টাকার মধ্যে সরকার ঋণ নিয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৩১৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা যা ফেরত দেওয়ার সামর্থ বা স্বদিচ্ছা কোনটাই সরকারের নেই এবং অবশিষ্টাংশ প্রায় সাড়ে ৮ লাখ কোটি টাকা ঋণখেলাপি ও ব্যাংক লুটেরাদের পেটে চলে গিয়েছে। Fractional Reserve Banking নামক ঠকবাজি উপায়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এই বিশাল অংকের লোপাটকে আড়াল করে রেখেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হিসাবের খাতায় কাগজে-কলমে এই টাকা গ্রাহকের নামে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এই টাকার কোন অস্তিত্বই নেই। দেশের বর্তমান আর্থনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ হল এটি, যার সাথে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ডলার ঘাটতি সরাসরি জড়িত।

বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট একটি মানবসৃষ্ট সংকট যা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ভুল নীতি ও এর শাসকদের কর্মকান্ডের কারণে তৈরী হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের হওয়ার জন্য যেসকল পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেগুলো এই সমস্যাগুলোর সমাধানতো করবেই না বরং পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে। বিগত ১৬ মাসে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে যার বড় একটি অংশ নতুন ছাপানো টাকা (ডেইলি স্টার, ১১ নভেম্বর, ২০২২ )। ইতিমধ্যে ডলার সংকটের জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে না পারা এবং জ্বালানী ও বিদ্যুৎ–সংকটের কারণে দেশের শিল্পকারখানাগুলোর উৎপাদনক্ষমতার মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ চালু রয়েছে। সংকট দ্রুত সমাধান করা না হলে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক বাবদ সরকারের আয় ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে যা সামনের দিনগুলোতে আরো কমবে। সাধারণ জনগণের ক্রমহ্রাসমান ক্রয়ক্ষমতা আরো কমবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সংকুচিত হয়ে পড়বে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় ব্যাপকভাবে কমে যাবে। যার ফলে সরকার তার বাধ্যতামূলক ব্যয় যেমন, সরকারি বেতন-ভাতা ও ঋণপত্রের সুদ পরিশোধের জন্য এবং বিভিন্ন খাতের ভর্তুকি হিসেবে আরো টাকা ছাপাতে বাধ্য হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার তার দলীয় সন্ত্রাসীদেরকে টাকা দেওয়ার জন্যও প্রচুর টাকা ছাপাবে। ফলে মূল্যস্ফীতি পূর্বের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে এবং জনজীবনে নেমে আসবে চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা। আর এভাবেই মানব রচিত পুঁজিবাদী সমাধান বাস্তবায়ন করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।

যদি এই মুহুর্তে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে অপসারণ করে খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা না হয় তাহলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের শঙ্কা অতি শীঘ্রই বাস্তবে রূপ নিবে। খলিফা আল্লাহ্‌’র আইন বাস্তবায়ন করবেন এবং আল্লাহ্‌ প্রদত্ত অফুরন্ত নিয়ামতসমূহকে সঠিক উপায়ে বন্টনের মাধ্যমে রিযিকের সকল প্রকার শঙ্কা দূরীভূত করবেন, ইনশাআল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, “আর যারাই আল্লাহ্‌‘কে ভয় করে ও তাঁর হুকুম মেনে চলে, তিনি তাদেরকে সকল দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করবেন। এবং আল্লাহ্‌ তাদেরকে এমন উৎস থেকে রিযিক দান করবেন যা তারা কল্পনাও করেনি! যারা আল্লাহ্‌’র উপর ভরসা করে, তাদের জন্য তিনিই যথেষ্ঠ (সূরা আত-তালাক্ব: ২-৩)।

– রিসাত আহমেদ

 

 

 

“খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা”

খবরঃ
খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এযাবত্কালে এটিই সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের অঙ্ক। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনা মহামারির সময় ব্যাংকঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ ছাড় ও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা। বছরের শুরুতে তা তুলে নেওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। গত জুলাইয়ে খেলাপিদের বড় ধরনের ছাড় দিয়ে খেলাপি ঋণসংক্রান্ত নীতিমালা হালনাগাদ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন নীতিমালায় আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেওয়া হয়। আগে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডাউনপেমেন্টের অর্থ জমা দিতে হতো। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ পাঁচ থেকে আট বছরে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়। আগে এসব ঋণ শোধ করতে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো। এছাড়া নীতিমালায় খেলাপি হলেও নতুন করে ঋণ পাওয়ার কথাও বলা হয়। এসব কারণে ঋণ শোধ না করে খেলাপিরা বিশেষ ছাড়ের অপেক্ষায় আছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।(www.ittefaq.com.bd/620369/খেলাপি-ঋণ-বেড়ে-১-লাখ-৩৪-হাজার-কোটি-টাকা)

মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের সহযোগী ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে পদ্ধতিগত শোষণের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। ২০১০-২০১৩ সালের বেসিক ব্যাংকের আর্থিক কেলেংকারী, ২০১২ সালের হলমার্ক কেলেংকারী ইত্যাদির মত সরকার সমর্থিত বড় বড় আর্থিক বিপর্যয়ের ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার লজ্জিত না হয়ে এসব লুটেরাদের ঋণ পরিশোধে সহায়তা দেয়ার জন্য এই ব্যাংকগুলোকে অনৈতিক ভর্তুকী প্রদান করে। ২০১৫ সালে প্রভাবশালী ঋণখেলাপী ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার জন্য খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ এক স্কিম হাতে নেওয়া হয়। ওই সুবিধার আওতায় দেশের বড় ১১টি শিল্প গ্রুপের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছিল যেগুলো আজ অবধি আদায় হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের পুঁজিপতি অভিজাতদের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি আ হ ম মোস্তফা কামাল সৎ ঋণ খেলাপীদের বিশেষ সুযোগ দেওয়ার অজুহাতে বড় ঋণ খেলাপীদের সেবা করার জন্য দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও হাস্যকর একটি বেলআউট স্কিম ঘোষণা করে। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং একটি সরকারী কমিটি খেলাপি ঋণ সহজে পুনঃনির্ধারণের অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি উদার স্কিম চূড়ান্ত করে যাতে এই দুর্নীতিগ্রস্ত ঋণ খেলাপীরা আরও বিশাল আর্থিক সুবিধা পেতে সক্ষম হয়। এই স্কিম অনুসারে বড় ঋণ খেলাপীরা তাদের ঋণ ফেরত দেওয়ার জন্য ২ বছর পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ড (Moratorium) সহ ১২ বছর পর্যন্ত সময় পায়। তদুপরি, এই ঋণ খেলাপীদেরকে তাদের বকেয়া ঋণের ২% ডাউন পেমেন্টের শর্তে ১০-১৫% এর পরিবর্তে ৭% সুদের হারে ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া হয়। এই স্কিমের অধীনেও একইভাবে দেশের ১১ টি বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে আবারও তাদের ঋণ নবায়ন করার সুযোগ দেওয়া হয়, যা এই ধরনের পাইকারি লুটপাট নীতি প্রণয়নের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে তোলে। এই নীতি বাস্তবায়নের ফলস্বরুপ ১৯৯০ সালের ৪ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার খেলাপী ঋণ এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি!

কার্যত, পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা সর্বদাই জনগণের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জিত বিপুল টাকা কতিপয় পুঁজিপতির হাতে সম্পদ জমা করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই মনুষ্যসৃষ্ট পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠী যেকোনো আইন ও নীতি প্রণয়নের সার্বভৌমত্ব পায়, যা তারা তাদের সহযোগী ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর স্বার্থে ও আনুকূল্যে প্রণয়ন করে এবং তারা ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের লুটপাটের মেশিন হিসেবে ব্যবহার করে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সরকারের সহযোগী দুর্নীতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীরা ব্যাংক ঋণের দায় থেকে সহজেই দায় মুক্তি পেয়ে গেলেও সরকার সাধারণ জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের উপর অমানবিক ভ্যাট ও করের বোঝা চাপিয়ে সাধারণ মানুষকে নিংড়ে এসব পুঁজিপতিগোষ্ঠীকে মোটাতাজা রাখার প্রকল্প সচল রাখে। ফলশ্রুতিতে বকেয়া ঋণ, অনাহার ও দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে সাধারণ মানুষ শামিল হয় আত্মহত্যার মিছিলে।

এই শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিপরীতে ইসলামী ব্যবস্থা তথা খিলাফত সুদভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মত সব লুটপাটের মেশিন বন্ধ করে দিবে, কারণ ইসলামে সুদ-ভিত্তিক লেনদেনগুলো শারীয়াহ্‌ দ্বারা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এটি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ্‌’কে ভয় কর এবং সুদ বাবদ মানুষের কাছে যা তোমাদের পাওনা আছে তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। আর যদি তা না কর, তবে ধরে নেয়া হবে যে তোমরা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছ” (সুরা বাকারা: ২৭৮-২৭৯)। খিলাফতের প্রকৃত অর্থনীতি প্রকৃত পণ্যদ্রব্যের উৎপাদনের উপর জোর দিয়ে সম্পদ সৃষ্টি করবে। ঋণভিত্তিক উৎপাদন সংস্কৃতিকে ন্যায়সঙ্গত মালিকানাভিত্তিক অংশগ্রহণের সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত করবে। এছাড়া খিলাফতের রাজস্ব নীতি সকল প্রকার পুঁজিবাদী কর (আয়কর, ভ্যাট, আবগরি শুল্ক) নির্মুল করবে যার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য উৎসাহিত হবে কারণ বিনিয়োগ করার জন্য মানুষের হাতে অধিক পরিমাণ আয় থাকবে। খিলাফত শারীয়াহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত বিধি-বিধানের আলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করবে যাতে অর্থনীতির সুফল ও সম্পদের প্রবাহ সমাজের সকল শ্রেণীর মধ্যে আবর্তিত হয়। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “যেন সম্পদ শুধুমাত্র তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়” (সুরা হাশর: ৭)।

– মোহাম্মদ সিফাত

 

 

 

“ওএমএস চালের লাইনে অপেক্ষমান নারীর মৃত্যু”

খবরঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ওএমএসের চাল কিনতে লাইনে দাঁড়ানোর পর অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন এক নারী। সীতাকুণ্ড পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে চাল বিক্রি শুরুর কথা সকাল ৯টায়। ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই লোকজন লাইনে দাঁড়াতে থাকে এবং অপেক্ষমানদের চাপও বাড়তে থাকে। অনেকের মতো সকাল ৮টার দিকে লাইনে দাঁড়ান শিখা মালাকার (৩৮)। একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। লোকজন ধরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। (samakal.com/whole-country/article/2211141557)

মন্তব্যঃ
ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, চাকুরি হতে ছাটাই, দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বী উর্ধ্বগতি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া ইত্যাদি প্রক্ষাপটে ওএমএস-এর লাইনে যেভাবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সংখ্যা যোগ হচ্ছে, তখন নামকাওয়াস্তে এধরণের কিছু কার্যক্রম সরকারের প্রতারণামূলক প্রচারণা ব্যতীত আর কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রী বড়াই করে বলেছেন, “এক কোটি মানুষকে কার্ড দিয়েছি। তাদের ৩০ টাকা কেজিতে চাল দিয়ে যাচ্ছি। তেল, চিনি, ডাল কম মূল্যে সরবরাহ করে যাচ্ছি।” ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর ডেইলি স্টার পত্রিকায় ‘এখনো অভুক্ত মানুষ, নিশ্চিত হয়নি খাদ্য নিরাপত্তা’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “সারা দিনে এক বেলাও খেতে পায়নি প্রায় ৩ শতাংশ শহুরে দরিদ্র পরিবার; শহরের ৮ শতাংশ দরিদ্র পরিবার না খেয়ে ঘুমাতে যায়; শহরের ১২ শতাংশ দরিদ্র পরিবারে খাবার নেই; শহরের ২১ শতাংশেরও বেশি দরিদ্র পরিবারে পর্যাপ্ত খাবার নেই; ৭ শতাংশ পরিবার কম পরিমাণে খাবার খাচ্ছে।” এ খবর প্রায় দুই বছর আগের। করোনা, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি কারণে এখন অবস্থা নিশ্চিতভাবেই আরো ভয়াবহ। গত ১৩ অক্টোবর ২০২২, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এক জরিপভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয় দেশের মানুষের ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ ১৮ কোটি মানুষের দেশে ১২ কোটি ২৫ লাখ মানুষ খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। কেবল খাবার জোগাড়ে ঋণ করতে বা সঞ্চয় ভাঙতে হচ্ছে মানুষকে। এ বছরের আগস্ট মাসে পরিবারের খাদ্য কেনার জন্য ৬৪ শতাংশ মানুষ ঋণ নিয়েছে। ২৯ শতাংশ পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙেছে। আবার খাবার কিনতে গিয়ে ১০ শতাংশ পরিবার তাদের গত ১২ মাসের সব সঞ্চয় ভেঙে ফেলেছে।

অর্থাৎ, সরকারের দেয়া এক কোটি মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে খাবার বিতরণ প্রক্রিয়া মোটেও যথেষ্ট না, এমনকি এই ক্রমবর্ধমান দুরবস্থার স্থায়ী সমাধানও নয়। মূলত আমাদেরকে একটু গভীরে দৃষ্টি দিতে হবে। এই ক্রমবর্ধমান দরিদ্র শ্রেণির অভুক্ততার সাথে এই পূঁজিবাদী ব্যবস্থার রয়েছে সরাসরি সম্পর্ক। পূঁজিবাদী ব্যবস্থা একদিকে সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি যেমন পুঁজিপতি ও ক্ষমতাসীন দলের সুবিধাভোগীদের হাতে দেশের সম্পদের সিংহভাগ কুক্ষিগত হওয়ার সুযোগ করে দেয়, অন্যদিকে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র পরিমাণ সম্পদ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কাড়াকাড়ি করতে ব্যস্ত রাখে। এছাড়া আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক এর মত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রেসক্রিপশন অনুসারে দেশের শিল্প ও কৃষি উৎপাদন হ্রাস করে আমদানীমুখী রাষ্ট্রে পরিণত করে। ফলে একদিকে আমদানী নির্ভরতা ও ব্যাপক বেসরকারীকরণের কারণে উৎপাদন হ্রাস পাওয়া এবং অন্যদিকে এই আমদানী বাণিজ্য ও জাতীয় সম্পদের উপর গুটিকয়েক পুঁজিপতির একচ্ছত্র আধিপত্যে সম্পদের সুষম বণ্টনের বিশাল অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়, যা মূলত বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থার অন্যতম মূল কারণ। এই দুরবস্থা থেকে উত্তরণে অবশ্যই বিকল্প ব্যবস্থার অনুসন্ধান করতে হবে। তা না হলে শুধুমাত্র ওএমএসের লাইনে দাঁড় করিয়ে মানুষ হত্যার মধ্যেই রাষ্ট্রের সমাধান নিহিত থাকবে!

সমাধান হিসেবে আমরা যদি ইসলামী ব্যবস্থার দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে, ইসলামী রাষ্ট্র পদ্ধতিগতভাবে দারিদ্রতা দূর করে সকলের খাবারের চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধান করবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর নিকট ভিক্ষার জন্য এক ব্যক্তি আসলে তিনি (সাঃ) ঐ ব্যক্তিকে ভিক্ষা না দিয়ে তার জন্য কর্মসংস্থান তৈরির নিমিত্তে তাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে কাঠ কাটার কুঠার কেনার জন্য অর্থসহায়তা প্রদান করেন। আলী (রা.) বলেন, দারিদ্রতার যদি মানুষের কোন স্বরূপ থাকতো তবে আমি তাকে হত্যা করতাম। পূর্বের ন্যায় আগামী ইসলামী তথা খিলাফত রাষ্ট্রও খাদ্য উৎপাদন যাতে নিশ্চিত করা যায় এজন্য কৃষিক্ষেত্রে সর্বপ্রকার পরিকল্পনা গ্রহন করবে। কেউ যাতে আবাদী জমিকে ফেলে না রাখে, সেজন্য ২ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখা জমিকে চাষের জন্য ভুমিহীনদের দেয়া হবে। কৃষকদের বিনামূল্যে সার, বীজ, কিটনাশক প্রদান করা হবে, সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করা হবে। জ্বালানী ও খনিজের মত গণমালিকানাধীন সম্পদ এবং গণ ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প কারখানাগুলোকে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের কবল থেকে মুক্ত করা হবে, ফলে নাগরিকদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে জনগণ নিজেদের খাবারের সংস্থান নিজেরাই করতে পারবে, খিলাফত রাষ্ট্রকে ওএমএসের মত কোন প্রজেক্ট গ্রহন করতে হবে না।

– -হাফিজুর রহমান

 

 

 

“সংসদে সংরক্ষিত আসন চান হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডাররা”

খবরঃ
জাতীয় সংসদসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতিনিধিত্ব নেই। অন্যরা দায়িত্ব নিয়ে এসব মানুষের পক্ষে কথা বলেন না। আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এবং মানববন্ধন শেষে প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেছেন হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডাররা।… মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে আয়োজিত মানববন্ধন ও আলোচনা সভায় ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের পরিচালিত বিভিন্ন সংস্থার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/capital/egibz8kc8b)

মন্তব্যঃ
সংসদে সংরক্ষিত আসনের দাবী করলে কোন লাভ নেই। কারণ, এটা কখনোই কোন অবহেলিত জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করে না। যেমন বাংলাদেশে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং হিজড়া সম্প্রদায়ের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে মূলত এই সকল আন্দোলন বাংলাদেশে এলজিবিটিকিউ+ (সমকামী, উভকামী, নারী পুরুষের পরস্পর পরস্পরের মধ্যে সার্জারির মাধ্যমে রূপান্তরিত হওয়ার ঘৃণিত অধিকার ইত্যাদি) অধিকার প্রচারণার কৌশলমাত্র। প্রকৃতপক্ষে, কুটিল বুদ্ধির অধিকারী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের পশ্চিমা সংস্কৃতি প্রচারের একটা উপায় হল কোন দেশের মানুষের নিকট তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য কোন বিষয়ের সাথে মিলিয়ে নতুন সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশে হিজড়া সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর দুর্বল হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারের সংস্কৃতির কারণে তারা অবহেলিত। এখানে তাদেরকে সামনে রেখে যে পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে আমদানীকৃত এলজিবিটিকিউ+ অধিকার প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা চলছে সেটি এই সমাবেশের আয়োজকদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, এই সমাবেশের অর্থায়ন করেছে ‘গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা’। যাদের ওয়েবসাইটে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে, “আমরা একটি জটিল বৈশ্বিক পরিবেশে কানাডার (অর্থাৎ পশ্চিমা) স্বার্থ ও মূল্যবোধগুলোকে সংজ্ঞায়িত করি, তৈরি করি এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই”। আর তাদের স্বার্থ ও মূল্যবোধ যেসব বিষয়কে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এলজিবিটিকিউ+ অধিকার প্রতিষ্ঠা। যা ইতিপূর্বে বাংলাদেশে সফর করে পশ্চিমাদের স্বার্থে গঠিত প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার মিশেল বেশেলেটেও বলে গিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “সরকার কর্তৃক হিজড়াদের আইনী স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপকে আমি স্বাগত জানাই এবং আমি আশা করি এলজিবিটিআইকিউ+ ব্যক্তিদের মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান, তার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সরকার আরো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে”।

মূলত নিজেদের রাষ্ট্রগুলোতে পরিবার ও পারিবারিক মূল্যবোধ ধ্বংসের পর পশ্চিমারা মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতেও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালাতে বদ্ধপরিকর। তাদের রাষ্ট্রে পরিবারগুলো ভেঙে যাওয়ার কারণে এবং সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে শাসকরা খুব সহজেই তাদের জনগণকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। তারা মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতেও এটা করতে চায়। তাই চিন্তাগতভাবে ও বুদ্ধিভিত্তিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে মুসলিমদের মন ও মগজকে কলুষিত করার জন্য এবং তাদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনগুলোকে ধ্বংস করার জন্য (যেগুলি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা খেলাফত ধ্বংসের পরেও মুসলিমদের মধ্যে ইসলামিক মূল্যবোধ রক্ষার শেষ অবলম্বন) মুসলিমদের মধ্যে এলজিবিটিকিউ+ অপসংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার অপকৌশলে লিপ্ত হয়েছে। এই কাজে তারা তাদের অর্থায়নে তৈরি করেছে সুস্থ জীবন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নয়া সেতু ইত্যাদি বিভিন্ন চটকদার নামের সংগঠন। তারপর হিজড়া সম্প্রদায়কে সামনে এনে এর সাথে সমকামিতা, নারী পুরুষের রূপান্তরের সংস্কৃতি, উভকামিতা ইত্যাদি প্রচারে লিপ্ত হয়েছে। এসবের পেছনে পশ্চিমাদৃষ্টিভঙ্গ হল, একজন মানুষ জন্মগতভাবে নারী হয়ে জন্মায় না বরং নারী হয়ে বেড়ে ওঠে (সাইমন ডি ভিউভার)। অর্থাৎ তাদের মতে মানুষের নারী কিংবা পুরুষ হওয়া তাদের বায়োলজিক্যাল বিষয় নয় বরং সামাজিক বিষয়, যার পেছনে সামাজিক ব্যবস্থা দায়ী। অথচ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর তিনিই যুগল সৃষ্টি করেন- পুরুষ ও নারী” (সূরা নাজমঃ ৪৫)। তাই ইসলামে নারী ও পুরুষের মাঝখানে আলাদা কোন জেন্ডারের অবস্থান নেই। এটা জন্মগতভাবেই প্রত্যেকটা মানুষের জন্য নির্ধারিত। তারপরও যাদের মধ্যে জন্মগত কারণে কিংবা অন্যকোন কারণে লিঙ্গ নির্ধারণের বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে অস্পষ্টতা রয়েছে ইসলামী ব্যবস্থায় তাদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা লিঙ্গ, বৈশিষ্ট্য, আকর্ষণ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে লিঙ্গ নির্ধারণ করা হবে। তারপর হয় তারা পুরুষ কিংবা নারী হিসেবে বিবেচিত হবে। এবং নারী ও পুরুষের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য শারীয়াহ্‌ অনুযায়ী আরোপিত হবে। তখন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তাদের জীবিকা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে কোনরকম বৈষম্য ছাড়াই। এখানে হিজড়া সম্প্রদায় বা তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায় নামক কোন সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব থাকবে না। সেক্সুয়ালি অসুস্থ কিংবা জন্মগতভাবে ত্রুটিযুক্ত কোন মানুষ অবহেলিত থাকবে না। তাদেরকে তাদের অধিকারের জন্য কোন আন্দোলনও করতে হবে না। আর কোন বিদেশী শক্তিও তাদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় কোন মিথ্যা অপসংস্কৃতি প্রচারের সুযোগ পাবে না।

– জহিরুল ইসলাম

 

 

“সৌদিতেও হ্যালোইন উৎসব, নেটিজেনদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া”

খবরঃ
বিশ্বের অনেক দেশের মতো সৌদি আরবেও এবার হ্যালোইন উদযাপন হয়েছে। দেশটির সাধারণ বিনোদন কর্তৃপক্ষ এবার প্রথম এবং সর্ববৃহৎ সর্বজনীন হ্যালোইন উদযাপনের পরিকল্পনা করেছিল। ফলে আমেরিকানদের হ্যালোইন উদযাপনের দুই দিন আগেই রাজধানী রিয়াদের বিনোদনকেন্দ্র বুলেভার্ডেতে ভীতিকর পোশাক পরা মানুষদের নিয়ে ভয়ংকর সপ্তাহান্তের উদ্বোধন করা হয়। সৌদি আরবে হ্যালোইন উদযাপন, হ্যালোইনের জন্য পোশাক পরিহিত মানুষের ছবি এবং ভিডিও প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। টুইটারে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে এখন রিয়াদের হ্যালোইন উদযাপন। (www.kalerkantho.com/online/world/2022/10/30/1198462)

মন্তব্যঃ
মুসলিমদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় নগরী মক্কা ও মদীনা এবং সাধারণ মুসলিম মাত্রই এই অঞ্চলকে পবিত্র ও ইসলামের অনুশাসনের প্রতিচ্ছবি মনে করে। সৌদি আরবকে নিয়ে সাধারণ মুসলিমদের এই ভাবাবেগের বিপরীতে, আমরা দেখছি সেক্যুলার সৌদ রাজাদের ইসলামবিরোধী আয়োজন। একদিকে তারা নিজেদেরকে কাবা ও ইসলামের ‘খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন’ বলে দাবী করে, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় মদদে একের পর এক আয়োজন করে যাচ্ছে নারী-পুরুষ সম্মিলিত অশ্লীল কনসার্ট, হালাল নাম দিয়ে মদের বার, সিনেমা, থিম পার্ক কিংবা সৌদি আইডল প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ইসলামবিরোধী আয়োজন; যার সর্বশেষ যোগ হল ইসলামের পূণ্যভূমিতে খ্রিস্টানদের প্রেতাত্মা পূজা “হ্যালোইন”-কে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন। বিশ্বাসঘাতক আল সৌদ পরিবার, কাবা ও ইসলামের খাদেম নয়, বরং মুসলিমদের পবিত্রতম যমিনে কুফর ও নোংরামীতে পরিপূর্ণ পশ্চিমা সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠাকরণে পাশ্চাত্যের মোনাফেক দালাল।

অন্যদিকে সৌদী আরব কিংবা বাংলাদেশের মত বাকি মুসলিম বিশ্বের সাধারণ মুসলিম, যারা এইসব আয়োজনকে গ্রহণ করে তারা প্রত্যেকেই যে ইসলামবিরোধী তা নয়। বরং, পশ্চিমাদের দালাল ধর্মনিরপেক্ষ দালাল সরকার ও বুদ্ধিজীবিরা মুসলিমদের কাছে এই বিষয়গুলোকে ‘নিছক আনন্দ বা বিনোদন’, ‘সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল’, আধুনিক ‘উদার মনোভাব’ ইত্যাদির মত চটকদার সেক্যুলার স্লোগানের মাধ্যমে স্বাভাবিকীকরণ করা হচ্ছে। যাতে ধীরে ধীরে এগুলো জীবন সম্পর্কে আমাদের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে, আর তা হলো জীবন মানেই উপভোগ। সম্প্রতি নোরা ফাতেহির ঢাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাফাই গেয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, এটির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তিনি একজন স্বনামধন্য অভিনেত্রী, যিনি কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে আইটেম সংয়ে পারফর্ম করবেন (দেখুন: www.dainikamadershomoy.com/post/407889)। পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আসা এই হেডোনিস্টিক (আনন্দবাদ) চিন্তার মূল উৎস হল সেক্যুলারিজম – জীবন তো একটাই, তাকে সর্বোচ্চ উপভোগ করতে হবে, তাই আমাদের এত কট্টর হওয়া যাবেনা। এই চিন্তাধারা থেকেই সেক্যুলারদের নোংরামিতে ভরপুর কনসার্ট, পাব, বার, থার্টিফার্স্ট নাইটে মদ গিলতে গিলতে গ্যাং রেইপ, হ্যালোইন প্রেতাত্মাদের সাজ, ভ্যালেনটাইনস ডে তে সোয়াপিং পার্টনার সহ জীবনকে সর্বোচ্চ উপভোগের প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

কাফিরদের স্রষ্টাবিবর্জিত ব্যবস্থাকে অনুসরণের মাধ্যমে মুসলিমদেরকেও তাদের মত প্রবৃত্তির দাসে পরিণত করা হচ্ছে এবং আনন্দলাভের জন্য বিভিন্ন বিনোদনের টোপ গিলে উদার হতে হতে আল্লাহর সন্তুষ্টির পরিবর্তে প্রেতাত্মার সন্তুষ্টি কামনার মত জঘন্য পাপে লিপ্ত করা হচ্ছে। জীবন সম্পর্কে মুসলিমদের বিশ্বাস হলো, “জীবন হলো আল্লাহ্‌’র নির্দেশ” (আল-ইসরা: ৮৫)। মুসলিমের জীবনের সমস্ত চাহিদা পূরণ ও আনন্দ উদযাপন সবই হবে আল্লাহ্‌’র নির্দেশ মেনে। সুতরাং শুধুমাত্র এসব সংস্কৃতি থেকে ব্যক্তিগতভাবে দূরে থেকে নিজের হজ্জ্ব, নামাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা আজ আর যথেস্ট নয়, বরং পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুপ্রবেশের সকল পথ রুদ্ধ করতে এবং ইসলামী চিন্তাধারা, আবেগ ও কুরআনের বিধানকে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে, আল্লাহ্‌ মনোনীত একমাত্র রাষ্ট্রব্যবস্থা খিলাফত বাস্তবায়নে নিষ্ঠার সাথে কাজ করা উচিত। খিলাফত রাষ্ট্রের খলিফাই আসল খাদেম, যিনি ১৪০০ বছরের ইসলামী শাসনামলে ক্বাবার খাদেমির পাশাপাশি নিষ্ঠার সাথে সমগ্র মুসলিম ভূমিতে ইসলাম ও এর সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণরূপে হেফাজত রেখেছিলেন। খলিফা সুলাইমান আলকানুনি এর সময় পার্শ্ববর্তী দেশ ফ্রান্সে নারীপুরুষের সম্মিলিত এক নাচের (waltz) অনুষ্ঠান আয়োজন শুরু করা হয়, যা জানার সাথে সাথে উক্ত নাচ বন্ধের জন্য খলিফা ফ্রান্সের রাজাকে চিঠি লিখেছিলেন, “আমি, যে কিনা আটচল্লিশটি রাজ্যের খান, কানুনি সুলতান সুলেমান খান। রাষ্ট্রদূতের দেওয়া প্রতিবেদন অনুসারে আমি শুনেছি যে তোমার দেশের নারী-পুরুষ একে অপরকে জরিয়ে ধরে নাচছে! আমি চিন্তিত যে এই রোগটি আমাদের জমিনেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তুমি যদি অনতিবিলম্বে এই আয়োজন বন্ধ না করো তবে অপেক্ষা করো, আমি আমার বিজয়ী সেনাবাহিনী নিয়ে আসব আর তোমাকে ধ্বংস করব”। এর পরবর্তীতে ফ্রান্স ১০০ বছরেরও বেশি সময় এই ওয়াল্টজ আয়োজন করার আর সাহসই পায়নি। ঠিক এভাবেই আসন্ন খিলাফত ব্যবস্থা এই নোংরা সেক্যুলার সংস্কৃতিকে মূলোৎপাটন করে সমগ্র বিশ্বকে জাহেলিয়াত থেকে বের করে আনবে।

– যায়নাব মাইসূরা

 

 

 

“ফেডের নীতি সুদ বৃদ্ধি – বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দরপতনের শঙ্কা”

খবরঃ
মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আমেরিকার শীর্ষ ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বৃহস্পতিবার নীতি সুদহার আরও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করেছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই, তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ সুদ বৃদ্ধির পথে হেঁটেছে ব্রিটেনের ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। তারাও ৭৫ ভিত্তি পয়েন্ট সুদ বাড়িয়ে তা নিয়ে গেছে ৩ শতাংশে। অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ, নীতি সুদহার বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে মন্দার আশঙ্কা গভীরতর হলো। এর জেরে বিশ্ব অর্থনীতি আরও ধাক্কা খেতে পারে। বিশেষ করে বিপাকে পড়বে উন্নয়নশীল দেশগুলো। তাদের মুদ্রা আরও দুর্বল হলে তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি খরচ বাড়বে। চাপ বাড়বে অর্থনীতিতে। (www.prothomalo.com/business/bank/u7yyofz0gn)

মন্তব্যঃ
১৯৭১ সালে President Nixon স্বর্ণের মানকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে ডলারকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে, যার ফলে ইউরোপসহ বাকি বিশ্ব ডলারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য এবং সত্যিকারের বৈশ্বিক পরাশক্তি হয়ে ওঠার জন্য আমেরিকার এটি ছিল অন্যতম পদক্ষেপ। Dollar হয়ে যায় বিশ্বের অবিসংবাদিত reserve currency এবং লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য অন্য যেকোনো মুদ্রার চেয়ে ব্যাপকভাবে এটি ব্যবহৃত হয়। ডলারকে একটি বৈশ্বিক মুদ্রা হিসাবে সংরক্ষণ করে অর্থনীতি ও অর্থের উপর তার আধিপত্য অব্যাহত রাখতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং ডব্লিউটিও’র মতো প্রতিষ্ঠান তৈরী করে। কারণ, নব্য ঔপনিবেশিকতার অধীনে, বিশ্ব ঔপনিবেশিকরা সরাসরি দেশগুলো দখল না করে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের দ্বারা অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশগুলোকে করায়ত্ত্ব করে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক হল ঔপনিবেশিক হাতিয়ার যা অন্যান্য দেশগুলির নিয়মতান্ত্রিক শিল্পায়ন বিকাশে বাধা দেয় এবং অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাদের নীতি অনুসরণে বাধ্য করে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পশ্চিমা নীতি যা মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে বিদেশী পুঁজি, প্রযুক্তি এবং শ্রমের পথকে উন্মুক্ত করে এবং দেশীয় শিল্প বিকাশকে নিরুৎসাহিত করে। ফলে দেশগুলি স্থানীয় চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পণ্য উৎপাদন করতে অক্ষম হয়ে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ে। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ, মুসলিম বিশ্ব তেল, গ্যাস, কয়লা, তামা, সোনা, লোহা, লবণ, চুনাপাথর এবং ইউরেনিয়ামের মতো প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ ও পর্যাপ্ত কৃষিপণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকিযুক্ত আমদানির উপর নির্ভরশীল। ঔপনিবেশবাদের আরেকটি পরিকল্পনা হল উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে খর্ব করার জন্য রপ্তানির বিনিময়ে বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষত ডলার অর্জন ও ডলার লেনদেনে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ করানো। এর মাধ্যমে, উপনিবেশবাদীরা উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রাখে, তাদেরকে পশ্চিমা পণ্যের বাজারে সস্তা মূল্যে ধরে রাখে এবং ডলারের প্রবাহ নিশ্চিত করে।

এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুঁজিবাদী অর্থনীতির অধীনে নির্ভরশীলতার একটি ধারাবাহিক দুষ্টচক্র তৈরি করে, যার ফলে ঔপনিবেশিক পুঁজিবাদের অধীনে উন্নয়নশীল দেশগুলো দারিদ্র্য এবং স্থবিরতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারে না। কারণ, যখন একটি দেশ প্রচুর আমদানি করে, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে পর্যাপ্ত আয় থাকা সত্ত্বেও সবসময়ই তা ডলারের ঘাটতিপূর্ণ দেশ হিসেবেই আবির্ভুত হয়। আর ডলার পাওয়ার প্রধান চারটি উৎস – রপ্তানি, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) এবং বৈদেশিক ঋণ। তাই রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে পর্যাপ্ত আয় থাকা সত্ত্বেও ঘাটতি পূরণের জন্য, তখন সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বা আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং তথাকথিত বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলির কাছ থেকে বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। অন্যদিকে, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স এর মাধ্যমে যদি খুব বড় ডলারের রিজার্ভও থাকে, তবুও ডলারকে শক্তিশালী রাখার জন্য ফেড (Federal Reserve) এর নীতি সুদহার হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা স্থিতিশীল থাকতে পারে না, যেমনটি আমরা আজ চীন, ভারত, জাপানের ক্ষেত্রে দেখছি। এভাবে ডলারের উপর পুরো পৃথিবীর অর্থ ও বাণিজ্য এমনভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে, ডলারের দরপতনের সাথে সাথে পুরো বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধকল/ধ্বস শুরু হয়। যার ফলে আমদানি, রপ্তানি, বিনিয়োগ ইত্যাদি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রই আক্রান্ত হয়। আমেরিকা এভাবেই বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা খর্ব করে এবং অন্যদের সম্পদ লুণ্ঠন করে!

এই দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হচ্ছে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, যা বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে সমূলে উৎপাটিত করবে, একটি সঠিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে উপনিবেশবাদী পরিকল্পনা থেকে বিশ্বকে মুক্ত করবে। খিলাফত রাষ্ট্র শারী’আহ্‌ প্রদত্ত স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক দ্বি-ধাতব মুদ্রা চালু করে ডলারের বিশ্বব্যাপী আধিপত্যকে নির্মূল করবে। ফলে মুদ্রার ইচ্ছামত সংকোচন ও সম্প্রসারণের কোনো সুযোগই কারো থাকবে না। খিলাফত রাষ্ট্র অর্থনীতিতে ঔপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠানের যে কোন ধরণের খবরদারী সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করবে। খিলাফত রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রে সক্ষম/স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের উপর আধিপত্য বিস্তার করার জন্য কৃষিভিত্তিক শিল্প ও ভারী শিল্প গড়ে তুলবে। ফলশ্রুতিতে, কোন ঔপনিবেশবাদী রাষ্ট্র খিলাফত রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতি ও আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পাবে না।

– সুজন হোসেন

 

 

 

“অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোনো রাষ্ট্রদূতের নাক গলানো মেনে নেব না: কৃষিমন্ত্রী”

খবরঃ
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোনো রাষ্ট্রদূতের নাক গলানো আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না। যারা এমনটি করবেন তাদের আবারো সতর্ক করা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি। ‘আত্ম মর্যাদার প্রশ্নে কাউকেই ছাড় দেব না,’ বলেন কৃষিমন্ত্রী। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানী রাষ্ট্রদূতের ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে করা সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, সংবিধানের আর্টিকেল ১২৬-এ সুস্পষ্ট বলা আছে। তার ভাষায়, নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সহায়তা করবে। এর বাইরে কোনো কিছু নেই। (bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-417046)

মন্তব্যঃ
আত্মমর্যাদা, স্বাধীনতা ও বিদেশী প্রভাবমুক্ত রাজনীতি, নির্বাচন ইত্যাদি শুনতে নিঃসন্দেহে খুব আকর্ষণীয়। কিন্তু সরকারের মুখ নিঃসৃত এসব কথা প্রতারণামূলক স্ট্যান্সবাজী ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ আমরা দেখতে পেয়েছি কিভাবে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা প্রতিনিয়ত বিদেশীদের মিনমিনিয়ে আহ্বান জানায় এবং উপযুক্ত বিনিময় দেয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সরকার ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনে এরশাদকে চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করে। ১৫১ আসনে বিনাভোটে জিতে যাওয়া সেই নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের বহুল আলোচিত রাতের ভোটের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত উভয় সরকারকে বৈধতা ও স্বীকৃতি দেয়ার বিনিময়ে হাসিনা সরকার ভারতকে এই সময়ের মধ্যে ট্রানজিট, ট্রানশীপমেন্ট, সমূদ্রসীমা, সমূদ্র বন্দর, সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় ও তথ্যবিনিময় ইত্যাদি অসংখ্য সুবিধা দিয়েছে। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামনের নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতে গিয়ে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য ‘যা যা করা দরকার’, তা-ই করার অনুরোধ করেছেন বলে প্রকাশ্যে বলেছেন। আমরা দেখেছি আমেরিকাকে খুশি রাখতে সরকার তথাকথিত সন্ত্রাস বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির নামে ইসলাম ও ইসলামী রাজনীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। র‍্যাবের মতো একটি পুরো বাহিনীকে একাজে আমেরিকার হাতে বা তাদের স্বার্থে তুলে দিয়েছে (দেখুনঃ আমেরিকা র‍্যাবের ট্রেনিং দেয়, তারাই অস্ত্র দেয়: প্রধানমন্ত্রী, সমকাল ৬ অক্টোবর ২০২২)। এমনকি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছে, “সমস্যা থাকলে র‌্যাবকে নতুন করে প্রশিক্ষণ দিন” (দেখুন: দৈনিক যুগান্তর, www.jugantor.com/todays-paper/first-page/513172/)। এমনকি মার্কিনীদের হাতে রাখতে লবিস্টের পেছনে বিশাল অংকের রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করেছে; দেখুন: samakal.com/bangladesh/article/2211141293/সংকটেও-মার্কিন-লবিস্টের-পেছনে-ডলার-খরচ

তাই জাপানের রাষ্ট্রদূত অথবা আমেরিকান রাষ্ট্রদূত যার বিরুদ্ধেই সরকারের মন্ত্রীরা ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে’ প্রতিবাদ-অভিনয় সুলভ অবস্থান গ্রহণ করুক না কেন তা কেবল নগ্ন গোলামী ঢাকার আর জনগণকে ধোঁকা দেয়ার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। যদি তারা কখনও কোন দেশের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে সেটা কেবলমাত্র তাদের অন্যকোন প্রভুকে খুশি করার জন্যই করে থাকে, এটির সাথে তাদের আত্মমর্যাদা কিংবা সম্মানবোধের ছিটেফোটাও কোন সম্পর্ক নেই। বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রীক ব্যবস্থায় সব ধর্মনিরপেক্ষ ও দালাল রাজনৈতিক দলকেই কোন না কোন বিদেশী শক্তির লেজুড়বৃত্তি বা গুডবুকে থেকে রাজনীতি করতে হয়। তাদের উপর ভর করেই বিদেশী শক্তিগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অর্থনীতিতে প্রবেশ ও হস্তক্ষেপের সুযোগ পায়। তাই যতদিন তারা থাকবে ততদিন আমরা কখনোই বিদেশীদের অযাচিত হস্তক্ষেপ হতে মুক্ত হতে পারবো না।

ইসলামী শাসনব্যবস্থা ‘খিলাফতে’ মুসলিমরা তাদের আক্বিদার শক্তিতে বলিয়ান হয়ে নিজেদের ভুমির নিরাপত্তা নিজেদের হাতে নিয়ে নিজেদের খলিফাকে নিজেরাই নিয়োগ করে। খিলাফত রাষ্ট্রে কোন রাজনৈতিক দলের জন্য বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা নিষিদ্ধ। কুর‘আন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ১৮২ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে: “যেকোন ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠী অথবা সংগঠনের বিদেশী কোন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক থাকা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি কেবলমাত্র রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ, কারণ জনগণের বিষয়াদি তত্ত্ববধানের অধিকার শুধুমাত্র রাষ্ট্রের রয়েছে। উম্মাহ্‌ পররাষ্ট্রীয় সম্পর্কের বিষয়ে রাষ্ট্রকে জবাবদিহি করবে”। খলিফা কোন বিদেশী শক্তির তোয়াক্কা করবেন না, ইসলামের আক্বিদার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রীয় সম্পর্ক গঠিত হবে, যেখানে মূল এজেন্ডাই হবে ইসলামী সমাধান ও ন্যায়ের শাসনকে পৃথিবীর মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং এপথে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। খিলাফত রাষ্ট্রের উপর বিদেশিদের প্রভাবেরতো প্রশ্নই আসেনা, বরং এখানে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা সবসময় খিলাফত রাষ্ট্রের শক্তির বিষয়টি প্রতিনিয়ত উপলব্ধি করতে পারবেন; যেমনটা আমরা দেখেছি ১৮৯০ সালে যখন ওসমানী খিলাফত বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। অথচ তখনকার খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ যখন শুনলেন যে ফ্রান্সের এক চলচ্চিত্র নির্মাতা রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর প্রতি অবমাননাকর একটি সিনেমা মঞ্চায়নের প্রস্তুতি নিয়েছে তখন তিনি তৎক্ষণাৎ ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মন্টেবেল্লোকে ডেকে পাঠান। খলিফা রাষ্ট্রদূতের সামনে যুদ্ধের পোশাক পরে অগ্নিমূর্তির মতো আবির্ভূত হন এবং তৎক্ষণাৎ সিনেমাটির পরিকল্পনা বাতিল করার জন্য তার হাতে একটি চরমপত্র ধরিয়ে দেন।

– মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 

 

 

“বায়ু দূষণে শীর্ষ অবস্থানের কাছাকাছি ঢাকা”

খবরঃ
বায়ু দূষণে বিশ্বের প্রায় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়ালের’ বায়ুমান সূচক (একিউআই) ইনডেক্সে ঢাকার মান ২৫৩, যা মাত্রার দিক থেকে খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে। (www.banglatribune.com/others/environment/772367/বিশ্বে-দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ-বায়ু-দূষণ-ঢাকায়)

মন্তব্যঃ
তথাকথিত মেগা উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও মেগা প্রজেক্টগুলি তৈরীর সময়ে অব্যবস্থাপনায় ঢাকার বায়ু দূষণ বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে, বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে স্থান নিয়েছে ঢাকা। যদিও এসব উন্নয়ন জনগণের স্বার্থেই করা হচ্ছে বলে দাবী করা হয়, কিন্তু বাস্তবে এই শাসকগোষ্ঠী নিজেদের, তাদের বিদেশী প্রভু এবং দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যের কারণেই যে এই এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করছে তা এখন সর্বজনবিদিত। শাসকগোষ্ঠীর নিকট তাদের বিদেশী প্রভু ও পুঁজিপতিদের স্বার্থই এখানে মূখ্য উদ্দেশ্য, পরিবেশ ও জনগণের সুরক্ষা এখানে সম্পূর্ণই উপেক্ষিত। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির নামে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরী করে বিদেশী পুঁজিপতি এনটিপিসি (ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন) এবং ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (ভেল), কয়লা উত্তোলনের জন্য যুক্তরাজ্যভিত্তিক গ্লোবাল কোল ম্যানেজমেন্ট (জিসিএম, সাবেক এশিয়া এনার্জি), চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়াম, নেদারল্যান্ডের ফুগরো, জার্মানির মিবরাগ কনসাল্টিং ইন্টারন্যাশনাল ও অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক রাঞ্জ পিনকক মিনারকো-কে দায়িত্ব দিয়ে তাদের বিদেশী প্রভু ও দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের লুটপাটের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী বিশ্বাসের মূলমন্ত্রই হলো প্রতিটি ক্ষেত্রে বস্তুগত লাভ/মুনাফা অর্জন করা। তাই এই ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠী, তাদের বিদেশী প্রভু ও পুঁজিপতিরা যেকোন উপায়ে মুনাফা অর্জন করার সুযোগ তৈরী করে নেয়। যদিওবা তাতে দূষণ বেড়ে যায় এবং ব্যাপক আকার ধারণ করে, এমনকি মানুষ অসুস্থ হয়ে যায় কিংবা মারা যায়, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কোনও উদ্বেগ তাদের মধ্যে দেখা যায় না। ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় জনগণকেই তার দায়িত্ব নিতে হয়, কারণ পুঁজিবাদ সকলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তৈরী করা হয়নি, মুষ্টিমেয় কিছু পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য এর উৎপত্তি।

তাই আমরা পরিবেশকে সুরক্ষিত করার জন্য যতই আইন বা নীতি তৈরী ও পরিবর্তন করি না কেন, যতদিন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা অটুট থাকবে ততদিন কোন বাস্তব পরিবর্তন ঘটবে না। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রই এই সমস্যা ও বিপর্যয়ের কার্যকর সমাধান করতে সক্ষম, কারণ এটি এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক মনোনীত ব্যবস্থা, যা জনগণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। শাসক (খলিফা) এবং জনগণ উভয়েই পরকালের কঠিন শাস্তির ভয়ে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা প্রদত্ত আদেশ ও নিষেধ মেনে চলবেন এবং নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবেন। ইসলামে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং তাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের বিষয়টির সাথে শাসকের পরকালীন মুক্তির বিষয়টি জড়িত। খলিফা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার উপর অর্পিত শারী’আহ্ দায়িত্ব হিসেবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের প্রয়োজনীয় চাহিদা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন। সেজন্য খলিফা জনগণের ক্ষতি দূর করতেও বাধ্য। ইসলাম ব্যক্তি, সমাজ বা জনগণের জন্য ক্ষতিকর সকল বিষয় নিষিদ্ধ করেছে। রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ বলেনঃ “ক্ষতি করা উচিত নয়, আর ক্ষতির সম্মুখীন হওয়াও উচিত নয়” [ইবন্‌ মাজাহ্]। শুধুমাত্র খিলাফতের অধীনে শারী‘আহ্‌’র প্রয়োগের মাধ্যমে দূষণের সমস্যা মোকাবেলাসহ অন্য সমস্ত দিককে অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে পরিবেশ ও জনগণের সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চভাবে নিশ্চিত হবে; যেমনটি আমরা দেখেছি ‘উমার ইবন্‌ আল-খাত্তাব (রা.)-এর শাসনামলে, তিনি (রা.) একদা বাজারের ভিতরে অবস্থিত এক কামারশালা থেকে কয়লার আগুনের ধোঁয়া, পোড়া গন্ধ, লোহা পেটানোর কর্কশ শব্দ, পোড়া লোহা থেকে বিচ্ছুরিত আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখতে পান, যা থেকে বাতাস দূষিত হয় এবং পরিবেশের ক্ষতি করে। একারণে ‘উমার (রা.) এটিকে বাজার থেকে অন্যত্র সরিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলেন, কারণ বাজার সর্বদা জনসমাগমপূর্ণ একটি স্থান।

– সুজন হোসেন