Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
১২৬ তম সংখ্যা । ১৩ নভেম্বর, ২০২৪
এই সংখ্যায় থাকছে :
“আমার বন্ধু ট্রাম্পকে অভিনন্দন ফিলিস্তিনি-রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানের ভূমিকায় আশাবাদী –এরদোগান”
“যুক্তরাষ্ট্রের টপ লিডারদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে ড. ইউনূসের”
“চট্টগ্রামে পুলিশের উপর ইসকন সমর্থকদের হামলা এসিড নিক্ষেপ”
“বকেয়া নিষ্পত্তি না হলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করবে ভারতের আদানি”
“দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল সাধারণ মানুষ”
“রায়ের আগে ভারতের কাছে হাসিনাকে ফেরত চাইবে না সরকার: ড. ইউনূস”
“আমার বন্ধু ট্রাম্পকে অভিনন্দন ফিলিস্তিনি-রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানের ভূমিকায় আশাবাদী –এরদোগান”
খবরঃ
ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। … সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তুর্কি প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে পুনরায় নির্বাচিত হওয়া আমার বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমি অভিনন্দন জানাই’। একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘ট্রাম্পের নেতৃত্বে তুরস্ক-মার্কিন সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে এবং বিশেষ করে ফিলিস্তিনি ইস্যু ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংকট ও যুদ্ধের অবসান ঘটবে’। এরদোগান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আরও ন্যায়সঙ্গত একটি বিশ্বের জন্য আরও প্রচেষ্টা চালানো হবে। আমি আশা করি এই বিজয় আমাদের বন্ধুপ্রতিম ও মিত্র মার্কিন জনগণের জন্য এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে’। (https://www.facebook.com/share/192Cm2QvB4/ )
মন্তব্যঃ
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান সম্ভবত ভুলে গিয়েছেন তার বন্ধু এই ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে জেরুজালেমকে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার মধ্যে দিয়ে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ইহুদীদের সাথে মুসলিম উম্মাহ্’র সংঘাতকে ত্বরান্বিত করেছিল। তার এই বন্ধু ২৮ জুন ২০২৪ এ বলেছিল, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উচিত ইহুদি রাষ্ট্রকে তার “কাজ শেষ করতে” দেয়া। তিনি যার নিকট যুদ্ধ বন্ধের আশা করছেন এই ট্রাম্পই আফগানিস্তানে ‘মাদার অব অল বোমা’ নিক্ষেপ করেছিল। ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাকের মুসলিমদের উপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করেছে। অথচ, ট্রাম্পের এই অতীত ভুলে গিয়ে এরদোগানসহ মুসলিম দেশসমূহের অনেক শাসকই তাকে নির্বোধের মত বন্ধু ডেকে ফিলিস্তিন যুদ্ধ বন্ধের জন্য তার উপর আস্থা রাখার কথা বলছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা ও সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলোও ট্রাম্পের অনুকম্পা পেতে নির্লজ্জ প্রতিযোগিতামূলক বিবৃতি দিয়েছে।
এরদোগানসহ সেক্যুলার মুসলিম শাসকেরা যদি কি মনে করেন, মুসলিম উম্মাহ্ তার প্রকৃত বন্ধু এবং শত্রু চিনে না তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাইডেন এবং ট্রাম্প যে একই শত্রুর দুই ভিন্ন রূপ মাত্র তা মুসলিম উম্মাহ্ খুব ভালোভাবেই জানে। এবং মুসলিমরা এটাও জানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাথে মুসলিমদের কল্যাণের কোন সম্পর্ক নেই। বুশ, ওবামা, বাইডেন, ট্রাম্প যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন মুসলিমদের প্রতি মার্কিনীদের শত্রুতাপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির বিন্ধুমাত্র হেরফের হবেনা। কেননা, আমেরিকা একটা ডীপ স্টেট। যেটি শক্তিশালী এ্যাডমিনিস্ট্রেশন দ্বারা শাসিত। তাই এখানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে যেই আসুক না কেন তার সাথে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের কোন সম্পর্ক থাকে না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গত ২৫ বছরে ৪৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ হত্যাকারী এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে এত হত্যাযজ্ঞের পরেও কেন এরদোগানের মত মুসলিম বিশ্বের দালাল শাসকরা মানবজাতির কল্যাণ হিসেবে উপস্থাপন করছে? মূলত, মুসলিম বিশ্বের দালাল শাসকেরা উম্মাহ্কে দুইভাবে ধোঁকা দিতে এই ধরণের প্রতারণামূলক কথা বলে। প্রথমত: এটা বুঝানো যে, ফিলিস্তিন মুক্তির পথ আমেরিকা হাতে নিহিত যাতে দালাল শাসকদের নীরবতা ও ইসরায়েলকে সমর্থন প্রদানের বিষয়টি আড়ালে থাকে। যেমন, এরদোগানের মত অনেকে মুখে ইসরায়েল বিরোধী কথা বললেও তাদের সাথে বানিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে, (Protests against trade with Israel at Turkey port, al-jazeera)। আরব আমিরাতের বাদশা মোহাম্মদ বিন যায়েদ বলেন, “হামাসকে অবশ্যই নিশ্চিহ্ন করতে হবে।… আমারা ইসরায়েলকে সময় দিতে পারি। কিন্তু, প্রথমে একে অবশ্যই আমাদের সাহায্য করতে হবে গাজায় সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের ছবি প্রকাশ না করে। যাতে আমরা জনগণকে শান্ত রাখতে পারি (ওয়ার, বব উডওয়ার্ড)।” দ্বিতীয়ত: পশ্চিমাদের দালাল শাসকেরা উম্মাহ্’র কাছে তাদের প্রভু আমেরিকাকে এমনভাবে মহিমান্বিত করে যেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট দুনিয়ার খলিফা, যে কিনা দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। অথচ, দুনিয়াজুড়ে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী এই রাষ্ট্রের ধ্বংস ও সহিংসতা চালানো ছাড়া আর কোন ইতিহাস নেই। এর মাধ্যমে মূলত এসব শাসকগোষ্ঠী উম্মাহ্কে সারাবিশ্বের কল্যাণের প্রকৃত রক্ষাকবচ খলিফার আগমনের চেষ্টা থেকে বিরত রাখতে চায় এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে মার্কিনীদের উপর আস্থাশীল রাখতে চায়। অথচ, বাস্তবতা হচ্ছে পৃথিবীর প্রত্যেকটি ইঞ্চি মাটি আজকে আর্তনাদ করছে আল্লাহ্ রাব্বুল-আলামীনের রহমতস্বরূপ খিলাফতের প্রত্যাবর্তনের। যা এসব দালাল শাসকদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করেছে। তাই তারা নগ্ন বিশ্বাসঘাতকতার পরেও তাদের প্রভু মার্কিনীদের উপর উম্মাহ্কে আস্থা রাখতে বলছে। অথচ তারা জানেনা, “যারা আল্লাহ্ ছাড়া বহু অভিভাবক গ্রহণ করে, তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার ন্যায় যে ঘর বানায়। আর ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো দুর্বলতম যদি তারা জানত।” (সূরা-আনকাবুত-৪১)।
– আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“যুক্তরাষ্ট্রের টপ লিডারদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে ড. ইউনূসের”
খবরঃ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। (https://www.banglatribune.com/national/871667/যুক্তরাষ্ট্রের-টপ-লিডারদের-সঙ্গে-ব্যক্তিগত-সম্পর্ক)
মন্তব্যঃ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হওয়াতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণ ও বুদ্ধিজীবি মহলে দুই ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ আতংকিত হচ্ছেন, কেউ কেউ উল্লসিত হচ্ছেন। প্রত্যেক টকশোর কমন প্রশ্ন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়াতে বাংলাদেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কি নতুন মোড় নেবে? কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে এইমর্মে এক্স হ্যান্ডেলে দেয়া ট্রাম্পের বার্তা এবং পরবর্তীতে পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা কর্তৃক তার দলীয় নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে বিবৃতি নিয়ে অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। বর্তমান সরকার ও ছাত্র সমন্বয়কদের নেতৃস্থানীয়রাও যেন এই আশ্বাস দিতেই তটস্থ যে ট্রাম্প আসাতে কোন সমস্যা হবে না।
আমাদের প্রশ্ন করা উচিত, একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের (বাংলাদেশ) ভবিষ্যত স্থিতিশীলতা যদি আরেকটি রাষ্ট্রের (যুক্তরাষ্ট্র) প্রেসিডেন্ট বদলের উপর নির্ভর করে, তাহলে আমরা কিভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র দাবী করি? কতটুকু নির্লজ্জ হলে আমরা আমাদের চোখের সামনে ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুরতম একটি গণহত্যার সাক্ষী হয়েও এই গণহত্যার মদদদাতা আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে প্রতিযোগীতা করছি! এখানে সহজেই বোঝা যায় এই সেক্যুলার রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবি মহল এখনো “কলোনোলাইজড মাইন্ডসেট” বা “দাসসুলভ মনোবৃত্তি” থেকে বের হতে পারেনি। এবং তারা ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার দোহাই দিয়ে জনগণকেও এই “কলোনোলাইজড মাইন্ডসেট” থেকে বের হতে দেয় না, কারণ এটাই তাদের অন্যতম এসাইনমেন্ট। পশ্চিমারা বিভিন্ন দেশে থেকে সরাসরি উপনিবেশ উঠিয়ে নেয়ার সময় এটা নিশ্চিত করেছে যাতে তাদের দালাল শাসকগোষ্ঠীর মাধ্যমে তাদের কলোনীগুলো বজায় থাকে, এবং বিশ্ববাসী বিশেষত মুসলিমরা যাতে কোনভাবেই বিকল্প শাসনব্যবস্থা ও বিশ্বনেতৃত্বের অনুসন্ধান না করে।
মুসলিম উম্মাহ্’র জন্য অনুকরণীয় আদর্শ আল্লাহ্’র রাসূল (সাঃ)-এর শাসক থাকাকালীন সময়ে, রোম ও পারস্য দুই পরাশক্তি তৎকালীন ভূরাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মুসলিমদের মধ্যে রোম ও পারস্যকে ইসলামের ছায়তলে আনার আকাঙ্ক্ষার বীজ রোপন করেছিলেন। কন্সটান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল) বিজয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন রোম ও পারস্য প্রথম দুই খলিফার আমলে জয় করা শুরু হয়ে গেলেও, কন্সটান্টিপোল বিজয় হয় অনেক পরে। নবীজি (সাঃ)-এর ভবিষ্যতবাণীর প্রায় ৮০০ বছর পর সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতেহ কন্সটান্টিনোপল জয় করেন। এই ৮০০ বছর ধরে প্রায় সকল যুগের খলিফার মনের বাসনা ছিল সেই শাসক হওয়ার যিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর ভবিষ্যৎ বাণীকে সত্য প্রমাণিত করবেন। ইসলামী আদর্শ মানুষকে এই হার না মানা অকুতোভয় করে তোলে এবং দুনিয়ার বুকে একটা নেতৃত্বশীল জাতিতে পরিণত করে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির (কল্যানের) জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে” (সূরা আলি ইমরান: ১১০)।
– জাবির জোহান
“চট্টগ্রামে পুলিশের উপর ইসকন সমর্থকদের হামলা এসিড নিক্ষেপ”
খবরঃ
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন, হাজারী গলি এলাকার মো. ওসমান নামের এক দোকানদার কয়েক দিন আগে তার ফেসবুকে ইসকনের নাম উল্লেখ করে একটি পোস্ট শেয়ার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজন সন্ধ্যার দিকে তার দোকানে গিয়ে হামলা চালায়। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ওসমানকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার সময় ইসকনের সমর্থকরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে তারা অ্যাসিডও নিক্ষেপ করে। এতে সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি অঞ্চল) মাহফুজুর রহমানসহ সাত পুলিশ সদস্য আহত হন। (https://dailyinqilab.com/bangladesh/news/701055)
মন্তব্যঃ
১৩ জুলাই ১৯৬৬ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে ইসকন নামের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেক হিন্দু নেতাদের মতে ইসকন একটি রাজনৈতিক আদর্শ, যা হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে ও হিন্দু ধর্ম থেকে আলাদা একটি বিষয়। হিন্দুত্ববাদী বিজেপির মাতৃ-সংগঠন আরএসএসের সাথে এদের সম্পর্ক, যারা এই অঞ্চলে একটি অখন্ড হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। জায়োনিজম ও হিন্দুত্ববাদ অনেকটা একই ধরনের রাজনৈতিক দর্শন। ইহুদী ও হিন্দুদেরকে ব্যবহার করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে করা একটা উপনিবেশবাদী প্রকল্প। আল্লাহ্ ﷻ বলেন, “তুমি অবশ্যই মুমিনদের জন্য মানুষের মধ্যে ইয়াহূদ ও মুশরিকদেরকে সবচেয়ে বেশি শত্রুতাপরায়ণ দেখতে পাবে…” (সুরা মায়িদাহ্: ৮২)।
পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার এই রাষ্ট্রবিরোধী ও মুসলিমদের শত্রুদের এই দেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। তাই আমরা জানি, জুলাই গণআন্দোলনের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল বিদেশী আধিপত্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা, কিন্তু দুঃখজনকভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পতিত সরকার হাসিনার মতই পশ্চিমা ও ভারতীয় প্রভাবের প্রতি নতজানু নীতি ধরে রেখেছে। বর্তমান সরকার ভারতের মদদপুষ্ট পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইসকনের মত দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী সংগঠনগুলোকে কঠোর হস্তে দমন করছে না। সরকার ও প্রশাসনের পশ্চিমা ও ভারতীয় স্বীকৃত দালালদের অপসারণ করছে না। ভারতের সাথে হাসিনার করা দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিল করছে না, ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের যুদ্ধের হাতিয়ার হাসিনার মতই ইসলামী শাসন তথা খিলাফতের দাবী ও রাজনীতিকদের দমনের হুঙ্কার দিচ্ছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য ভারতকে জবাবদিহি করাতো দূরের কথা, অন্তবর্তীকালীন সরকার এমনকি ভারতের আশ্রয়ে থাকা কুখ্যাত ইসলামবিদ্বেষী ও চরিত্রহীন লেখিকা তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রকাশ্য কার্যক্রম নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তার প্রতিও যথেষ্ট মনযোগী হতে দেখা গেছে।
বিদেশী স্বার্থ সমুন্নত রেখে কখনো ইসলাম ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা যায় না। তাই সেক্যুলার সরকারগুলো দ্রুতই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নিশ্চিতভাবেই ইসলামের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত সরকার হবে অত্যন্ত শক্তিশালী, কারণ এটি আল্লাহ্’র বিধান এবং জনগণের স্বার্থকে সমুন্নত রাখার প্রতিজ্ঞা নিয়ে তৈরি। “এবং কিছুতেই আল্লাহ্ মু‘মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বের পথকে মেনে নিবেন না” (সূরা নিসা, আয়াত ১৪১)। খিলাফত রাষ্ট্রে বিদেশীদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এবং পাশাপাশি ইসলামী আক্বীদা পরিপন্থী ও ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে কোন রাজনৈতিক দল কিংবা প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাতে পারবে না। ফলে স্বাভাবিকভাবে ইসকনের মত বিদেশী মদদপুষ্ট রাষ্ট্র বিরোধী সংগঠন নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সাধারণ অ-মুসলিম, জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে খিলাফত রাষ্ট্র পূর্ণাংগ নিরাপত্তা দিবে। ইসলাম সাধারণভাবে নাগরিকদের উপর যেকোন ধরনের নজরদারী নিষিদ্ধ করে। কিন্তু কোন ব্যক্তি যদি কোন বিদেশী রাষ্ট্র, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সাথে ষড়যন্ত্রমুলক যোগাযোগ করে বলে সন্দেহ হয় তাহলে তাকে রাষ্ট্র নজরদারীর আওতায় আনা হবে।
– মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“বকেয়া নিষ্পত্তি না হলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করবে ভারতের আদানি”
খবরঃ
বাংলাদেশের কাছে আদানির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটি ডলার বা ৭ হাজার ২০০ কোটি ‘রুপি’। এই পাওনা কবে পরিশোধ করা হবে, সে ব্যাপারে একটি পরিষ্কার ধারণা চায় আদানি গোষ্ঠী। বিষয়টি নিষ্পত্তি না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। শেখ হাসিনার পতনের পর আদানি ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য চেষ্টা করছে। ভারত সরকার কোম্পানিকে বলেছে স্থানীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় সংযোগের জন্য আবেদন করতে। (https://www.prothomalo.com/business/ao5zjwtodf)
মন্তব্যঃ
নানা বিনিয়োগে সংকটে থাকা আদানি পাওয়ারের জন্য লাইফলাইন হিসেবে হাজির হয়েছিল পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা। ভারতের কর্ণাটকে নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিটের দাম ৪ টাকা ৮০ পয়সা, অথচ বাংলাদেশে আদানি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রয় করছে ১০–১২ টাকা দরে (কয়লার দাম বৃদ্ধি সাপেক্ষে দাম আরো বাড়বে)। তাছাড়া আদানির সাথে চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় অংশের ৯৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের খরচ বাংলাদেশ বহন করবে, সিস্টেম লসের অংশ অন্তর্ভূক্ত করে বিদ্যুতের পরিমান নির্ধারণ হবে যার পুরোটার মূল্য বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে। ওডিশার ধামরায় অবস্থিত আদানির মালিকানাধীন বন্দর থেকে গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা নেওয়া হবে আদানি নির্মিত ৭০০ কিলোমিটার প্রাইভেট রেললাইনের মাধ্যমে যার নির্মান-ব্যয় বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে (আদানির বিদ্যুৎ ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল, প্রথম আলো)। আর এখন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ভারতের স্থানীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থায় সংযোগ এবং বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাহ! কী চমত্কার! এই পরিস্থিতিতে শক্তিশালী অডিট (audit) ছাড়া আাদনিকে কোন অর্থ পরিশোধ করা উচিত নয়। এই কোম্পানীটিসহ ভারতীয় যেসব কোম্পানী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে দালাল হাসিনা সরকারের সাথে দেশবিরোধী চুক্তি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ তাদের নিকট আমাদের ক্ষতিপূরণ দাবী করতে হবে। এবং সকল নথিপত্র পর্যালোচনা করে সকল অন্যায্য শর্ত বাতিল সাপেক্ষে ন্যায্যতার মানদন্ডে বাংলাদেশ আদানির কাছে কোন টাকা পায় কীনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।
সরকারি তথ্যমতে বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩১,১৪৫ মেগাওয়াট (https://powercell.gov.bd) কিন্তু সর্বোচ্চ চাহিদা ১০,০০০- ১৪,০০০ মেগাওয়াট। দেশীয় সক্ষমতার প্রাইভেটাইজেশন এবং অন্যায্য উৎপাদন ও বন্টন চুক্তির কারণে এই চাহিদা পূরণেও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে; যেই অজুহাতে আদানিকে দৃশ্যপটে নিয়ে আসা হয়েছে। অর্থাৎ আদানি পাওয়ারের মাত্র ১,৪৯৬ মেগাওয়াট ছাড়াও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের বিন্দুমাত্র সমস্যা হওয়ার কোন কথা নয়। মূল কথা হল, আদানির বিদ্যুৎ ছাড়াও আমাদের চলবে; কিন্তু বাংলাদেশ চুক্তি বাতিল করলে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ হাতছাড়া হবে ভারতীয় আদানির।
বিদ্যুৎ হল একটি গণমালিকানাধীন সম্পদ এবং ইসলামী বিধান ও শাসনব্যবস্থার মধ্যে যেকোন গণমালিকানাধীন সম্পদের প্রাইভেটাইজেশন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ফলে, আসন্ন খিলাফত ব্যবস্থা দেশের সকল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ব্যক্তি বা কোম্পানীর মালিকানা থেকে মুক্ত করে সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে এসে বসতবাড়ি ও শিল্পকরখানায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করবে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের আদানির মত শত্রুরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সাথে সকল চুক্তি বাতিল করে বিদ্যুতের মত জনগুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত সম্পদের উপর শত্রুরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সকল পথকে বন্ধ করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, আল্লাহ কখনোই মুমিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব স্থাপনের কোন পথকে বরদাস্ত করেন না। (সূরাহ আন নিসা: ১৪১)
– রিসাত আহমেদ
“দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল সাধারণ মানুষ”
খবরঃ
বাজারে গেলেই কান্না পায়। একটু সবজি কিনে খাওয়ার মতো অবস্থা নেই সাধারণ মানুষের। সবজি এখন ধনী শ্রেণির মানুষের খাবারে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষের যে আয় তা দিয়ে সবজি কিনেই খেতে পারছে না, তাহলে মাছ মাংস কীভাবে কিনে খাবে। মানুষের বেঁচে থাকাই এখন কঠিন হয়ে গেছে। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। চাল, ডাল, তেল, লবণ, গ্যাস, আটা, চিনি, মাছ, ডিম থেকে শুরু করে শাকসবজি এমন কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই, যার দাম বাড়েনি। কিন্তু ভরা মৌসুমেও সবজির দাম আকাশছোঁয়া। বাজারে কোনো সবজির দাম ১০০ টাকার নিচে নেই। (https://www.khaborerkagoj.com/post-office/833965)
মন্তব্যঃ
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এই হতাশা বিরাজ করছে যে, কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও দ্রব্যমূল্যের দাম কমছে না? বরং, একই পুরাতন সূর, যেমন সিন্ডিকেটের কথা আসছে, বন্যা পরিস্থিতিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে ভোক্তা অধিকার সংস্থা, প্রতিযোগিতা কমিশন, টিসিবি এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দৌরাত্ম্য ইত্যাদি সব তথাকথিত প্রচেষ্টা দেখেছি। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও জেলায় জেলায় বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু দিনশেষে সাধারণ মানুষ এই পদক্ষেপগুলোর সুফল কখনো পায়নি এবং পাচ্ছেও না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্ন – যে পুঁজিবাদী নীতিসমূহ দ্বারা স্বৈরাচারী হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল, তা বহাল রেখে আদৌ কি জনমানুষের সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব? যে নীতি অনুযায়ী- রাষ্ট্রের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) অর্জন করাই মূখ্য, প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা নয়। তাই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে যে সিন্ডিকেটের দোহাই দেয়া হয়, তা আপনারা ভাঙ্গতে পারবেন না। কারণ বড় বড় ব্যবসা যদি ধ্বস নামে পুঁজিবাদী নীতি অনুযায়ী অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতেও ধ্বস নামবে। (‘অপরাধী’ ব্যবসায়ীর বিচার হবে, প্রতিষ্ঠান চলবে: আসিফ মাহমুদ; (https://www.jugantor.com/campus/870449)। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের যে দোহাই দেয়া হয় তার স্বাভাবিক সমাধান হচ্ছে- আমদানী করে হোক কিংবা অন্য যেকোন উপায়ে পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে দাম নাগালে নিয়ে আসা; কিন্তু তাও আপনারা করতে পারবেন না, কারণ ভর্তুকি কমাতে পশ্চিমা পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফের যে শর্ত আগের সরকারের মত আপনারাও মানতে বাধ্য। সুস্থ প্রতিযোগিতার নামে রাষ্ট্রীয় বদান্যতায় দেশী-বিদেশী বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের একটা অসম প্রতিযোগিতার আয়োজন করাই হচ্ছে পুঁজিবাদে ন্যায্যতা। ফলশ্রুতিতে, যালিম হাসিনা চলে গেলেও ‘দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি’র মত তার রেখে যাওয়া প্রত্যেকটা যুলুমের লিগ্যাসীকেও আপনাদের বহন করতে হবে, যদি না আপনারা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ত্যাগ না করেন। কারণ মদের দোকানে (পুঁজিবাদ) বসে মধু বিক্রি করা সম্ভব নয়, যদি দোকান পরিচালনাকারী একজন অত্যন্ত সৎ মানুষও হয়। বরং
ইসলামী নীতি অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অবনতি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের দোহাই কোনটাই গ্রহণযোগ্য নয়। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই খলিফা (ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান) হচ্ছেন অভিভাবক যিনি তার নাগরিকদের জন্য দায়িত্বশীল” (সহীহ্ বুখারী)। ইসলাম পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মুক্তবাজার, পুঁজিপতিগোষ্ঠীর নিরাপত্তা, ব্যবসায় সুস্থ প্রতিযোগিতা ইত্যাদির নামে সম্পদ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নিকট পুঞ্জিভূত করার সব রাস্তা বন্ধ করবে, কারণ, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “সম্পদ যাতে তোমাদের একটি গোষ্ঠীর মধ্যে পুঞ্জিভূত না থাকে” (সূরা হাশর: ৭)। ইসলামে দুর্যোগ বা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভর্তুকি প্রদানে কারো শর্ত বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, কারণ মৌলিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্র তার ফান্ড থেকে কিংবা প্রয়োজনে ধনীদের উপর ট্যাক্স আরোপ করে হলেও তা প্রদান করবে। খিলাফত শাসনামলে বাজার ভর্তি পণ্য থাকার পরেও সাধারণ মানুষ না খেয়ে থাকবে বা কম কম খাবে এরকম অদ্ভুত পরিস্থিতি অকল্পনীয়। আর্থিক সক্ষমতার অভাবে কেউ না খেয়ে আছে কিনা আল্লাহ্’র নিকট জবাবদিহিতার ভয়ে খলিফারা রাতে ঘুমাতে পারতেন না। এটা ব্যক্তি খলিফার মহানুভবতা না, বরং ইসলাম শাসককে যে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনে তারই প্রতিফলন। তাই দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিকে সামাল দিয়ে জনগণের জীবনকে সহজ করা এত জটিল কিছু না, এর জন্য প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা, যা পুঁজিবাদে নেই। তাই ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রাঃ) বলেছেন, “আজকে যদি কোন কুকুরও টাইগ্রিস নদীর তীরে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা যায়, আমি ওমর তার জন্য দায়বদ্ধ থাকব”। এই দায়িত্ব কি পুঁজিবাদী নীতি অনুসরণকারী শাসকেরা কখনো নিবে?
– জোহান জাবির
“রায়ের আগে ভারতের কাছে হাসিনাকে ফেরত চাইবে না সরকার: ড. ইউনূস”
খবরঃ
বর্তমান সরকার অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে ভারতকে চাপ দেবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। আজ বুধবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে। ড. ইউনূস বলেছেন, অবিলম্বে ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে চাইবে না সরকার। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ তার বড় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-625846)
মন্তব্যঃ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতরা এখনো হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, চিকিৎসা ও ভবিষ্যত নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারও হাত, কারও পা কাটা পড়ে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছেন ৫২৫ জন। এছাড়া চোখে গুরুতর আঘাত পাওয়া এবং এক বা উভয় চোখ হারানো মানুষের সংখ্যা ৬৪৭ জন। হাজার হাজার আহতরা গায়ে অসংখ্য স্প্লিন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/ks639xtd5e)। অথচ, প্রাণঘাতি মারণাস্ত্র নিয়ে জনগণের উপর হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পরার পেছনের মূল মাস্টারমাইন্ড হাসিনা ও তার দুষ্কর্মের দোসরদেরকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ইউনূস সরকার ভারত সরকারের কাছে নুন্যমত ব্যাখ্যা বা কৈফিয়তও চায়নি, যা জনমনে সন্দেহ আর ক্ষোভের উদ্রেগ ঘটাচ্ছে। হত্যাকান্ডের বিভিন্ন ঘটনায় দেশে অনেকগুলো মামলা হয়েছে, যেখানে হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে আসামি করা হয়েছে, কিন্তু মামলাগুলোর আইনি দুর্বল ভিত্তি ও অভিযোগ প্রমাণের ব্যাপারে আইনজ্ঞরা যথেষ্ট সন্দিহান; বিশেষ করে হত্যা মামলায় আটক ও রিমান্ডে থাকা হাসিনার এক মন্ত্রী একদিন পরেই জামিনে ছাড়া পাওয়ায় এই সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়েছে। তাছাড়া, নানান ক্ষোভ থেকে আন্দোলনের অনেক সমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন, আন্দোলনে সফলতার অন্যতম নিয়ামক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিশ্চুপ হয়ে পড়েছেন। হাসিনার পতনের পর রাজনৈতিক সংগঠন ও জনগণের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও দলীয় স্বার্থের বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে; যার ফলে, হাসিনার জুলুমের দোসর ও কারিগররা আবার সংগঠিত ও মাথাচাড়া দিয়ে উঠার পায়তারা করছে, যা কোন ভাল ইঙ্গিত নয়। আর গণআন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্থদের যথাযথ দেখভাল না করা এবং দেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদিসহ ইসলামের প্রতি হাসিনার শাসনের একই নীতির ধারাবাহিকতা চলমান। যা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় জুলুমের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আহবানে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে সন্দেহ ও অনিহা তৈরী হচ্ছে; যা আমাদের শত্রু ভারতের আগ্রাসী পরিকল্পনা ও অবস্থানকেই শুধু শক্তিশালী করছে।
হাসিনা পতনের আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ত হওয়ার কারণ নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নানান ধরণের ভাষ্য প্রচার করছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সলিমুল্লাহ খান ও ভাইরাল আইনজীবী মানজুর আল মাতিন আন্দোলনের পক্ষে তাদের বক্তব্যের জন্য জনগণের কাছে ভালবাসার পাত্র হয়ে উঠেছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামবিদ্বেষী এলজিবিটিকিউ ধারণার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে জনগণ তাদেরকে সেই ভালবাসার আসন থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। দেশের নামী-দামী স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কলেমা পতাকা হাতে নিয়ে ইসলামের প্রতি তাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চের মতে বাংলাদেশের ৮২ ভাগ মানুষ শরিয়াহ্ আইন দ্বারা শাসিত হতে চায়। (https://www.ntvbd.com/bangladesh/32128/দেশে-শরিয়া-আইন-চায়-৮২-ভাগ-মুসলমান)। এটা স্পষ্ট যে ইসলাম এদেশের জনগণের চিন্তা ও চেতনার মধ্যে গভীরভাবে প্রথিত। জনগণ ইসলাম চায়, ভারতীয় কিংবা পশ্চিমা আধিপত্য থেকে মুক্তি চায়, হাসিনা ও দোসরদের যথাযথ শাস্তি চায় এবং এমন শাসক চায় যারা কোন যুলুম ও বৈষম্য করবে না। এই ব্যাপারগুলোতে জনগণ কোন প্রতারণামূলক বক্তব্য বা ভারত-তোষণ নীতি বরদাস্ত করবে না। ইসলামী জীবনবিধান ও এর শাসন ব্যবস্থা খিলাফতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জনগণের মনোভাবও পতিত হাসিনার মতই হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুসলিমদেরকে বাদ দিয়ে কাফিদেরকে সহায়তাকারী ও বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। (এই কাজ করে) তোমরা কী আল্লাহ্’র নিকট তোমাদের অপরাধের শাস্তিদানের জন্য সুস্পষ্ট প্রমাণ রাখতে চাও?”। (সূরা আন-নিসা: ১৪৪)।
– রিসাত আহমেদ
“সেক্যুলার নাকি ইনক্লুসিভ”
খবরঃ
গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ রাষ্ট্রীয় জবরদস্তি ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদকে প্রত্যাখ্যান করেছে।… গণ-অভ্যুত্থানের সময় ‘সেক্যুলার বাংলাদেশ চাই’ লেখা একটি দেয়াল লিখনে ‘সেক্যুলার’ শব্দটি কেটে পাশে লেখা হয়েছিল ‘ইনক্লুসিভ’।… আমাদের সমাজকে অনেকান্তবাদী হয়ে উঠতেই হবে, কারণ, যেকোনো একান্তবাদই কর্তৃত্বপরায়ণ এবং জবরদস্তিমূলক। (https://www.prothomalo.com/anniversary/yf6phtlbau)
মন্তব্যঃ
পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পাশাপাশি তার শাসনের অন্যতম মূলমন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সেক্যুলার বাংলাদেশের গ্রহনযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এইরকম প্রেক্ষাপটে, সেক্যুলারিজমকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার জন্য এর দেশীয় অনুসারী ও তাদের পশ্চিমা প্রভুরা এটিকে ভিন্ন মোড়কে – ‘ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ’ প্রতিষ্ঠার শ্লোগান দিচ্ছে। এই স্লোগানের মূল উদ্দেশ্য হলো- সমাজে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি Pluralism বা ‘বহুত্ববাদ’ কিংবা আলোচ্য নিউজে লেখকের উল্লেখিত ‘অনেকান্তবাদ’ প্রতিষ্ঠা করা। এই ‘অনেকান্তবাদ’ ধারণাটি সমাজ সম্পর্কে সেক্যুলার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উদ্ভব হয়েছে, যেটা হলো সমাজ হচ্ছে বিভিন্ন আক্বিদা ও মতবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তির সমষ্টি। এখানে বিভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসীরা বিভিন্ন দল তৈরি করবে, যাদের রাজনীতিতে সমভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে- সেটা ইসকন হোক, সমকামী অধিকার আন্দোলন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ হোক, কিংবা আওয়ামীলীগ-বিএনপি হোক। কিন্তু, এক্ষেত্রে মতবাদটি যদি ইসলাম হয় তাহলে তা কষ্মিঙ্কালেও তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ ইসলামে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্র সম্পর্কিত সকল বিধি-বিধান উল্লেখ রয়েছে, যা সেক্যুলারিজমের স্রষ্টা বিবর্জিত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। তবে এই মতবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের দল যদি ইসলাম থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত অংশটি বাদ দেয়, তাহলে এই সেক্যুলার আক্বীদার ফ্রেমওয়ার্কে তারা রাজনীতি করতে পারবে। এই কারণে দেখা যায়, বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন সেক্যুলার সরকার এই ফ্রেমওয়ার্ক মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কতিপয় ইসলামপন্থী দলকে রাজনৈতিক কর্মকান্ড করার সুযোগ দেয়, কিন্তু ‘হিযবুত তাহ্রীর’-কে সুযোগ দেয় না কারণ ‘হিযবুত তাহ্রীর’ ইসলামী বিধানকে সমাজ ও রাষ্ট্রে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।
তাই এটা জরুরি যে, এই অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্লোগানের আড়ালে ‘বহুত্ববাদ’ (অর্থাৎ ইসলাম ব্যতীত সকল ভ্রান্ত ও কুফরী মতবাদ) প্রতিষ্ঠার পশ্চিমা ও তাদের এদেশীয় দোসরদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। কারণ, ইতিমধ্যে আমরা এটাও জেনেছি যে, এ অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের নামে ‘জাতিসংঘ’ নামক পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের সংস্থা কর্তৃক সমাজ ও পরিবার বিধ্বংসী ‘সমকামীতার অধিকার’ প্রতিষ্ঠার নীল নকশা বাস্তবায়ন চলছে। (https://www.un.org/en/lgbtiq-people#:~:text=The%20United%20Nations%20Human%20Rights,and%20respect%20for%20LGBTIQ%2B%20individuals.) তাই তথাকথিত ‘বহুত্ববাদ’ কিংবা অনেকান্তবাদের ধারণা প্রতিরোধের সাথে সাথে আমাদের এগুলোর জন্মদাতা ‘সেক্যুলার আক্বীদা’কেও বর্জন করতে হবে। সেই সাথে সমাজ ও রাষ্ট্রকে ইসলামী আক্বীদা ও বিধি-বিধান দ্বারা গড়ে তোলার জন্য আওয়াজ তুলতে হবে। যা একমাত্র বাস্তবিক ও চূড়ান্তভাবে রাষ্ট্র থেকে বৈষম্য দূর করে একটি ন্যায়পরায়ন ও নেতৃত্বশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর আমি তো তোমাকে (রাসূলকে) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি” (আল-আম্বিয়াঃ ১০৭)
– মোঃ জহিরুল ইসলাম