Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
১০২ তম সংখ্যা । ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
“বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার, কে করবে ব্যর্থতার জবাবদিহি”
“ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শ্রীলঙ্কা, ১১ মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি ৬৯.৮ শতাংশ থেকে কমে ৪ শতাংশ”
“ঢাবি কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়: শিক্ষক সমিতি”
“মার্কিন সংস্থার জরিপ: গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে দেশের ৯১% মানুষ”
“ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ভিন্ন ধরনের ঢাকা সফর”
“আট মাসে ৩৬১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, স্কুলগামীদের সংখ্যা বেশি”
“বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার, কে করবে ব্যর্থতার জবাবদিহি”
খবরঃ
দেশের মূল্যস্ফীতি তাপমাত্রার মতো। কাগজে-কলমে যতটা, অনুভূত হয় আরও বেশি। গড় মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশ হলেও যাদের আয় সীমিত, তাদের কাছে মূল্যস্ফীতির হার হবে দ্বিগুণেরও বেশি। অথচ সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল তা ৬ শতাংশের নিচে রাখা হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এই ব্যর্থতার দায়ভার সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপরেই বর্তায়। জবাবদিহি কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই করতে হবে। (https://www.prothomalo.com/business/economics/hzrkd1jymm)
মন্তব্যঃ
পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যে বৈশিষ্ট্য ঘাতকের মত ধারাবাহিকভাবে জনগণের অর্থনৈতিক শক্তি অর্থ্যাৎ ক্রয়ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয় এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি অন্যতম। দেশে এখন সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ বলা হলেও এটি কিন্তু ক্ষেত্রে বিশেষে ভিন্ন। যেমন খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থ্যাৎ যে খাদ্য পণ্য আগে ১০০ টাকায় কিনতে হত তা এখন ১১২.৫৪ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এটিও আসলে প্রকৃতচিত্র নয়। কারণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম তুলনা করলে বাস্তবে দেখা যায় বেশিরভাগ পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। আগস্ট ২০২২ সালে চিনির মূল্য ছিলো ৮৫টাকা এখন আগস্ট ২০২৩ এ ১৪০ টাকা (বেড়েছে ৫৫ টাকা), রসুন ১৩০ টাকা থেকে হয়েছে ২২৫ টাকা (বেড়েছে ৯৫ টাকা), ইত্যাদি। অর্থ্যাৎ, বাস্তবতা কাগুজে-কলমের হিসাবের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এখন এই ভয়ঙ্কর বাস্তবতার জন্য কি শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়ী? বিষয়টাকে সংকীর্ণভাবে দেখলে কেউ বলতে পারেন যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা তাই এই দায় তার। কেননা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে বাজারে নতুন টাকার ছাড়ার রেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন আবার নীতি সুদহার পরিবর্তন করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অর্থ্যাৎ, মার্কেটে অতিরিক্ত টাকার প্রবাহ থাকলে ব্যাংক যদি সুদহার বাড়ায় তাহলে মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখবে। এই সুবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কেট থেকে অতিরিক্ত টাকা কিছুটা উঠিয়ে নিতে পারবে বিভিন্ন উপায়ে, ফলে মুল্যস্ফীতি কমবে। আর না বাড়ালে অতিরিক্ত টাকা থেকে যাবে মার্কেটে, যা মূল্যস্ফীতি ঘটাবে।
কিন্তু, বিষয়টাকে সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে মূল্যস্ফীতির পেছনে যে ভিন্ন বাস্তবতা আমরা দেখি তা হলো, পৃথিবী সর্বপ্রথম মূল্যস্ফীতির সমস্যায় পড়ে ১৯৬০ সালে। যা স্বাভাবিকভাবে মার্কেটে ‘ডিমান্ড পুল” কিংবা “কস্ট পুশ”-এর ফলে মূল্যস্ফীতি হওয়া থেকে সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক একটা কারণ। যেটি মূলত হয়েছিলো ১৯৪৪ সালে ব্রিটন-উডস্ কনফারেন্সে স্বর্ণ-রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থার পরিবর্তে ডলার ভিত্তিক কাগুজে মুদ্রাব্যবস্থা চালুর ঠিক ১৬ বছর পরেই। যা ছিলো পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কর্তৃক গৃহীত একটি মানবঘাতী পদক্ষেপ। মূলত, ১৯২৪ সালে খিলাফত ধ্বংসের পরবর্তী সময়ে ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রেখে যাওয়া স্বর্ণ-রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থাকে অপসারণে এটি করা হয়। ইসলামি মুদ্রাব্যবস্থায় ইচ্ছেমত মুদ্রাছাপানোর স্বাধীনতা না থাকায় পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ধারকরা নিজেদের ইচ্ছেমত মুদ্রা ছাপাতে এই পদক্ষেপ নেয়। যেখানে, মুদ্রাছাপানোর ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থনৈতিক গ্রামার অর্থ্যাৎ দেশের প্রকৃত সম্পদের হিসেব না করেই এবং স্বর্ণ-রৌপের রিজার্ভ ঠিক না রেখেই যেকোন পূঁজিবাদী রাষ্ট্র চাইলে তার বাজেট ঘাটতি পূরণে কিংবা অন্য প্রয়োজনে ইচ্ছেমত মুদ্রাছাপাতে পারবে। তবে তার মুদ্রার মূল্যায়ন হবে ডলার রেটের ভিত্তিতে। এরপর থেকেই পৃথিবীব্যাপী যেসব রাষ্ট্র পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তারা সকলেই মূল্যস্ফীতির সমস্যায় পড়েছে। যেমন, বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রথম আঠারো দিনেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে নতুন করে ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দিয়েছে, যে পরিমাণ টাকা গত ৫০ বছরেও নেয়নি সরকার। ধারাবাহিকভাবে যা লক্ষ কোটির বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। এর ফলে, দেশে মূল্যস্ফীতির সমস্যা লাগামহীনভাবে বাড়ছেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আসলে এখানে মূল নিয়ন্ত্রক নয়। মূল নিয়ন্ত্রক হচ্ছে শাসকগোষ্ঠী যারা পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হচ্ছে শুধু শাসকগোষ্ঠীর হুকুম মান্য করা। এই সত্যটা জেনেবুঝেও কিছুলোক পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বাঁচাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর দোষ চাপিয়ে আসল সমস্যাকে আড়াল করছে। অথচ, প্রকৃত সমস্যা পূঁজিবাদী অর্থনীতির মধ্যে নিহিত। মানুষকে ধোঁকা দিতে ইচ্ছকৃতভাবে জটিল করা এই অর্থনীতি সাধারণ মানুষ না বুঝার কারণে এখানে অন্যায় করে খুব সহজে তার একটা জাস্টিফিকেশন দাড় করা যায়। ফলে মানুষ বুঝে উঠতে পারে না কেন তারা ধারাবাহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এমতাবস্থায়, এই সমস্যা দূরীকরণে আমাদের অবশ্যই এই ডলারভিত্তিক কাগুজে মুদ্রাব্যবস্থাকে অপসারণ করে দ্রুততার সাথে পূর্বের স্বর্ণ-রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থায় আবার ফিরে যেতে হবে।
– আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শ্রীলঙ্কা, ১১ মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি ৬৯.৮ শতাংশ থেকে কমে ৪ শতাংশ”
খবরঃ
শ্রীলঙ্কা গত বছর ৪৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশী ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে ‘দেউলিয়া’ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থার (আইএমএফ) কাছ থেকে মার্চে ৪ বছর মেয়াদি ২.৯ বিলিয়ন ডলারের বেলআউট প্যাকেজ পায় দেশটি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি এখন ঠিক পথেই আছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের যেসব শর্ত আরোপ করেছে সেসব শর্তও ভালোভাবে মেনে চলছে। (https://bangla.thedailystar.net/news/asia/south-asia/news-510521)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশে আইএমএফ-এর হস্তক্ষেপের পক্ষে জনমত তৈরীর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে একযোগে দেশের বেশিরভাগ প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমে এই সংবাদ পরিবেশন করেছে, যার আপাদমস্তক প্রতারণায় ভরপূর। শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি ১১ মাসের ব্যবধানে ৬৯.৮% থেকে ৪%-এ নেমে আসার তথ্যটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা, যা সিপিআই (consumer price index) বা মূল্যস্ফীতি পরিমাপের base-year manipulation করে করা হয়েছে। বাস্তবতা হল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্যকে নতুন base-year ধরে এখনকার মূল্যস্ফীতি ৪% দেখানো হয়েছে (রয়টার্স, ৫ জুলাই ২০২৩), যেন শ্রীলঙ্কার ব্যাপারে একটি পজিটিভ ধারণা তৈরী করা যায় এবং আইএমএফ-এর পক্ষে গুণকীর্তন করা যায়। প্রকৃতপক্ষে, জ্বালানী, খাদ্যপন্য, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, বাড়িভাড়া, চিকিৎসাসেবার দাম/মূল্য এখনো অনেক বেশি (ক্ষেত্রবিশেষে আরো বাড়ছে, তবে দাম বৃদ্ধির হার আগের তুলনায় কম) (রয়টার্স)। এবছরের জুন নাগাদ পোশাকের দাম ৪৪%, বাড়িভাড়া ২৬%, মেডিকেল সেবা ১৬%, জ্বালানীর দাম ৬৫% বৃদ্ধি পেয়েছে; সরকার নতুন করে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ১১.২% বাড়িয়েছে, ফলে সবকিছুর দাম যে আরো বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শিল্প কারখানার উৎপাদন ২৩.৪% হ্রাস পেয়েছে। গত এক বছরে দেশটির দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২৫% হয়েছে এবং ২০২৩-এর ডিসেম্বর নাগাদ তা বেড়ে ২৭.৫% হবে। দেশটির বৈদেশিক ঋণ এখনো ৩৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা পরিশোধ বা servicing-তো দূরে থাক, পূন:তফসিল বা reschedule করা নিয়েই অনিশ্চয়তা কাটেনি। কলম্বো ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক Advocata Institute বলছে, “Stability means there is no extreme shortages. Inflation is slightly tapering off but compared to pre-crisis levels, the cost of living is very high”।
“আইএমএফের শর্ত মেনে শ্রীলঙ্কা ইতিমধ্যে ব্যয় কমিয়ে রাজস্ব বাড়িয়েছে; সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করে করজাল বিস্তৃত করেছে, দ্বিগুণ হারে কর আরোপ করেছে, জ্বালানি খাত থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে দাম বাড়িয়েছে— মূলত এসব পদক্ষেপের কারণে ঘুরে দাড়িয়েছে দেশটির অর্থনীতি” (প্রথম আলো, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩)। এটাই হল এই সংবাদ পরিবেশনের সারবক্তব্য! আইএমএফের শর্ত যেন শর্ত নয়, যেন জাদুর কাঠি! মূলত: শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে যে সামান্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার মূল কারণ হল এবছর দেশটির পর্যটন খাতের আয় ৩০% (এশিয়া কাপের অবদান সহ) ও রেমিটেন্স ৭৬% বৃদ্ধি পেয়েছে; ফলে এই দুই খাতের সম্মিলিত আয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ০.৩ বিলিয়ন থেকে ৩.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে যার কারণে স্থানীয় মূদ্রার মান ১৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে আইএমএফ-এর কোন অবদান নেই, বরং আইএমএফ-এর ঋণের শর্ত দেশটির অর্থনীতিকে একটি নিশ্চিত ঋণের ফাঁদে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ও ভূ-রাজনীতির হাতিয়ারে পরিণত করছে। আর জনগণের আন্দোলন আপাতত থেমেছে, কারণ গোতাবায়া রাজাপক্ষের উৎখাত তাদের ক্ষোভকে সাময়িক প্রশমিত করেছে এবং তারা অবস্থা পরিবর্তনের মিথ্যা আশায় বুক বেঁধেছে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাই যথার্থ বলেন, “যদি কোন ফাসিক (পাপাচারী) ব্যক্তি কোন সংবাদ আনয়ন/প্রদান করে, তবে তা যাচাই করে দেখ” (সূরা হুজুরাত: ৬)
– রিসাত আহমেদ
“ঢাবি কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়: শিক্ষক সমিতি”
খবরঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়। এখানে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য একই নীতি প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণির জন্য আলাদা কোনো একাডেমিক নীতিমালা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।….যারা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানায় শিক্ষক সমিতি। এ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দাও জানানো হয়েছে। (https://samakal.com/bangladesh/article/2309193800/)
মন্তব্যঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিয়ত শেখানো হচ্ছে “ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মানেই ধর্মীয় সম্প্রীতি ও উদারতা”, অর্থাৎ প্রত্যেকে তার নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে পালনের অধিকার পাবে। কিন্তু প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সংবাদ ও ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে আমরা উল্টো চিত্র দেখতে পাই। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য “নিকাব নিষিদ্ধ” নোটিশ দিয়েছিল। এর কিছুদিন পূর্বে একই বিভাগের মৌখিক পরিক্ষায় হিজাব পরায় এক শিক্ষার্থীকে ভাইভা বোর্ডের প্রধান বলেছিলেন “বোরখা নিকাব পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরতে এসেছ কেন? মাদ্রাসায় পরতে পারো না?” এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা (আই.ই.আর.) বিভাগের অধ্যাপক এম. অহিদুজ্জামান পর্দার বিরোধিতা করে বলেন, “যারা পর্দা করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে বাসায় বসে পড়াশোনা করা উচিত”। এরকম আরও অসংখ্য ঘটনার প্রেক্ষাপটে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন প্রতিবাদ মুখর হয় তখন এর উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বলে “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়”। এখানে মনে হতে পারে বাংলাদেশে হয়তো ঠিকমতো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের চর্চা হচ্ছে না তাই এই অবস্থা। আসুন তাহলে দেখি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ঝাণ্ডাধারী দেশগুলোর কি অবস্থা। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ফ্রান্স গত ২৮ আগস্ট ২০২৩ স্কুলগুলোতে মেয়েদের আবায়া নিষিদ্ধ করে। এছাড়াও প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসাবে ২০১০ সালে ফ্রান্স জনসম্মুখে বোরকা এবং নিকাবের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরবর্তীতে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক, ইটালি, কানাডা, সুইডেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস এবং স্পেনের কাতালুনিয়া জনসম্মুখে এই নিয়ম অনুসরণ করেছে।
প্রশ্ন জাগে, প্রথমত, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের তথাকথিত উদারচিন্তা থেকে নারীর নগ্ন-অর্ধনগ্ন হওয়া ও টিপ পরার অধিকার আদায়ে তারা সোচ্চার হলেও আল্লাহ্ প্রদত্ত নির্দেশ মোতাবেক পোশাক পরার ক্ষেত্রে উল্টো চিত্র কেন দেখতে পাই? দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য পরিচয় নিশ্চিত হওয়া জরুরী বলে হিজাব, নিকাব নিয়ে বাড়াবাড়ি কতটা যৌক্তিক যেখানে প্রযুক্তির উন্নয়নের যুগে অল্পকিছু টাকা খরচ করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিংবা চোখের আইরিশ ও রেটিনা স্ক্যান করে ব্যক্তিকে সনাক্তকরণ খুব সহজেই সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রকৃতপক্ষে কি তা আমাদেরকে বুঝতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মানে সব ধর্ম, দল, মতকে প্রাধান্য দেয়া নয় বরং, এর মূল আক্বীদাই হলো ধর্ম থেকে রাষ্ট্রকে পৃথকীকরণ। সৃষ্টিকর্তা থাকবে শুধুমাত্র মসজিদে, গির্জায় কিংবা মন্দিরে আর দুনিয়া চলবে মানুষের তৈরি নিয়মকানুন দিয়ে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখনই বুঝতে পারল হিজাব শুধুমাত্র এক টুকরা পোশাক নয় বরং আল্লাহ্’র নির্দেশ ও ইসলামের সোশ্যাল সিস্টেমের অংশ তখনই তারা এর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগল। অর্থাৎ তাদের মতে আল্লাহ্’র নির্দেশ থাকবে শুধুমাত্র নামাজ ঘরে, অথচ সেখানে আল্লাহ্’র নির্দেশ শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ম-কানুন ও ড্রেসকোড এর ভেতর প্রবেশ করছে এটা তাদের মধ্যে অন্তর্জ্বালা তৈরি করবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং বুঝতে সমস্যা হয়না যে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হল মুসলিমদের আক্বীদা পরিপন্থী মূল্যবোধ চাপিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা এবং পাশাপাশি যা বৈপরীত্যে পরিপূর্ণ। আর হবেইবা না কেন যেখানে মানুষ সৃষ্টিকর্তার উপর খবরদারি করে আইন-কানুন বানায় সেখানে এমন বৈপরীত্যে ভরপুর ও বঞ্চনামূলক সমাধানের চেয়ে ভাল আর কিইবা আশা করা যেতে পারে?
সুতরাং একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাদের শুধুমাত্র “হিজাব/নিকাব নিষিদ্ধ” আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার জায়গা থেকে পর্দার অধিকার নিয়ে দাবি না জানিয়ে, বরং এই বৈপরীত্যে ভরপুর শোষণমূলক ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা উচিত। এর দ্বিচারিতার মুখোশ উন্মোচন করা উচিত। আমাদের বোঝা উচিৎ একমাত্র ইসলামী ব্যবস্থার বাস্তবায়নই পারে হিজাবের অধিকার নিশ্চিত করতে, কারণ ইসলামের কোন চিন্তা ও দিক নির্দেশনায় কোন বৈপরীত্য নেই যেহেতু এটি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র পক্ষ থেকে আগত ব্যবস্থা। দ্বিতীয়ত, ইসলামী ব্যবস্থার আক্বীদা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” মানে জীবন আর রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ্’র আইন বাস্তবায়িত থাকবে। তাই হিজাব মুসলিম নারীর জন্য ফরজ বা অবশ্যপালনীয় হুকুম যা যেকোন অবস্থায় রক্ষা করা হবে, এমনকি এজন্য প্রয়োজনে রাষ্ট্রের সর্বশক্তিও প্রয়োগ করা হবে যেমনটি আমরা ইতিহাসে দেখি খলিফা (ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান) মুহতাসিম বিল্লাহ জনৈক হাশেমী বংশের এক মুসলিম বোনকে হিজাব নিয়ে অপদস্থ করার জন্য তিনি রোমান সৈন্যদের শায়েস্তা করতে বিশাল সৈন্যবাহিনী প্রেরণ এবং দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে কঠিন শাস্তি প্রদান করেন। আল্লাহ্’র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ইমাম (খলিফা) হচ্ছে ঢাল, যার পিছনে মুসলিমরা যুদ্ধ করে এবং নিজেদেরকে (অত্যাচার ও আগ্রাসন থেকে) রক্ষা করে” (মুসলিম)।
– সায়রা জেবিন
“মার্কিন সংস্থার জরিপ: গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে দেশের ৯১% মানুষ”
খবরঃ
বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে। জনগণ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চান। মানবাধিকারকে বিশ্বের কল্যাণের জন্য একটি বড় শক্তি হিসেবে মনে করেন এদেশের বেশির ভাগ নাগরিক। বাংলাদেশের মানুষের এই অবস্থান উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন নামের একটি অলাভজনক সংস্থার জরিপে। ‘ওপেন সোসাইটি ব্যারোমিটার: ক্যান ডেমোক্রেসি ডেলিভার?’ শীর্ষক জরিপটি এ মাসে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশসহ ৩০টি দেশের ৩৬ হাজার ৩৪৪ জনের অংশগ্রহণে জরিপটি করা হয়েছে। প্রতিটি দেশে গড়ে ১ হাজার জন জরিপে অংশ নেন। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/omedaj97ca)
মন্তব্যঃ
জরিপ সমাজের প্রকৃত চিত্রকে ফুটিয়ে তোলে না। আলোচ্য জরিপটিকে বাংলাদেশ হতে অংশ নেয়া ১০০০জন কিভাবে ১৬ কোটি মানুষের মতামতকে প্রতিফলিত করবে? যেমন, গত ৮ আগস্ট ২০২৩ ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) জরিপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালো কাজ করছেন বলে মনে করেন বাংলাদেশের প্রায় ৭০% মানুষ। কিন্তু, আমরা যারা নিত্যদিন জনগণের সঙ্গে কথা বলি, নানান কাজে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের পক্ষে জরিপের এই ফলাফল মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বলাবাহুল্য, সাময়িকভাবে জনমতকে প্রভাবিত করতে জরিপগুলো হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমরা দেখেছি, পশ্চিমা মিডিয়া এবং জরিপ সংস্থাগুলো মুসলিম বিশ্বে ২০১১ সালে “আরব বসন্ত” নামে ইসলাম দ্বারা শাসিত হওয়ার গণ-আকাঙ্খাকে ভিন্নদিকে প্রবাহিত করতে তারা এটিকে “প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন” বলে প্রচার করেছিল। প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, মুসলিম দেশগুলোতে যেসব শাসকরা ব্রিটেন কিংবা ফ্রান্সের দালাল ঔসব রাষ্ট্রগুলোতে ব্রিটিশ-ফ্রেঞ্চ প্রভাব খর্ব করতে কিংবা যারা মার্কিন দালাল কিন্তু গণআক্রোশের মুখে অত্যন্ত নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে তাদেরকে সরিয়ে নতুন দালাল নিয়োগ দিতে আমেরিকা তথাকথিত প্রকৃত গণতন্ত্রের শ্লোগান নিয়ে হাজির হয়; স্বার্থ হাসিলের উপকরণ হিসেবে গণ্য করা ছাড়া আমেরিকার কাছে গণতন্ত্রের আর কোন মূল্য নাই। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে তারা বাংলাদেশের সাথে বিভিন্ন চুক্তি করতে চায়, যা একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার কর্তৃক সম্পাদিত না হলে জনগণের নিকট সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে জনপ্রতিরোধের মুখে পড়ার আশঙ্কা তারা করে। মার্কিনীদের এই জরিপে আওয়ামী সরকারের দুঃশাসন ‘প্রকৃত গণতন্ত্র’ নয় দাবি করে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পতন ঠেকাতে জনগণকে আবারোও আগামী নির্বাচনে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিতে উদ্ভুদ্ধ করছে। আমেরিকার মতে, গণতন্ত্রের সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্ত হতে আমাদেরকে পুনঃরায় ‘প্রকৃত গণতন্ত্রকেই’ বেছে নিতে হবে! তারা কখনো তাদের জরিপে জনগণের জন্য গণতন্ত্রের বিপরীতে ইসলামের ব্যাপারে মতামত দেয়ার সুযোগ রাখে না।
সর্বোপরী, গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে যদি ১০০ ভাগ মানুষ রায় দেয় তবে কি তা গ্রহণযোগ্য হবে? উত্তর হচ্ছে, তবুও তা পরিত্যাজ্য হবে, কারণ গণতন্ত্র যেমনই হোক না কেন সেটা বিবেচনা করতে হবে আমাদের মৌলিক বিশ্বাস তথা ইসলামি আক্বীদার ভিত্তিতে। গণতন্ত্র আল্লাহ্র পরিবর্তে মানুষকে আইনপ্রণেতার আসনে বসায় এবং মানুষকে আল্লাহ্র উপাসনার পরিবর্তে মানুষের উপাসনা করতে বাধ্য করে, যা সুস্পষ্ট কুফর। সুতরাং এটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য, জনগণের জন্য এতে কোন কল্যাণ থাকুক কিংবা না থাকুক। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত” (সুরা আলি-ইমরান: ৮৫)।
– আবি আব্দুল্লাহ্
“ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ভিন্ন ধরনের ঢাকা সফর”
খবরঃ
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফরটি অন্য যেকোনও ভিভিআিইপি সফরের চেয়ে ভিন্ন। ১০ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে ঢাকায় পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে তাকে অর্ভ্যথনা জানান। ওই রাতেই রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে তিনি অংশ নেন।এরপর তার নিজস্ব কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে রাত প্রায় ১২টার দিকে চলে যান ধানমন্ডিতে সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বাদ্যযন্ত্রী রাহুল আনন্দের বাসায়। সেখানে অবস্থান করেন প্রায় দুই ঘণ্টা। ১১ সেপ্টেম্বর সকালে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গেলে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে হেঁটেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষ হওয়ার পরে দুপুরে ঢাকা ত্যাগের আগে তুরাগ নদীতে নৌকা ভ্রমণ করেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। (www.banglatribune.com/national/816154/ফ্রান্সের-প্রেসিডেন্টের-ভিন্ন-ধরনের-ঢাকা-সফর)
মন্তব্যঃ
পুরো সফরজুড়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের চরম বন্ধু, আত্মার বন্ধু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। সফরজুড়ে বেশীরভাগ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ একে অপরের হাত ধরে রেখেছিলেন। অথচ ফ্রান্স হচ্ছে সেই রাষ্ট্র যে শত-শত বছর ধরে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা ক্রুসেডের নেতৃত্ব দিয়েছিল, অসংখ্য মুসলিমদের রক্ত তাদের হাতে লেগে আছে। নেপোলিয়নের নেতৃত্বে ফ্রান্স ১৭৯৯ সালে ফিলিস্তিন দখল করার চেষ্টা করে। নেপোলিয়ন ইহুদিদেরকে বন্ধু হিসেবে ঘোষণা করে ওসমানী খিলাফতের সাথে যুদ্ধ করে জেরুজালেম দখল করে ইহুদিদের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা। এই ফ্রান্স আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম ভুমিগুলোকে দখল করে শতবছর ধরে মুসলিমদের উপর ব্যাপক নিপীড়ন চালিয়েছে, লুন্ঠন করেছে। সেই উপনিবেশবাদী আগ্রাসন এখনও চলমান। ফ্রান্স শুধু মুসলিমদের জান-মালের উপর আক্রমণ করেছে তা নয়, তারা যুগযুগ ধরে মুসলিমদের আক্বিদার পবিত্রতার উপরও আক্রমণ করেছে। তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পবিত্র সম্মান নষ্ট করার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সফরে আসার আগে আগেই প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ফ্রান্সে আবায়া বা বোরখা এবং জুব্বা পরিধান নিষিদ্ধ করেছে। এটা প্রতিষ্ঠিত যে, ফ্রান্স ইসলাম এবং মুসলিমদের প্রকাশ্য শত্রু। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের সাথে ফ্রান্সের এমন বন্ধুত্ব, হৃদ্যতা, ভালোবাসা হতে পারে! আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদ ও নাসারাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ্ যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না” (সুরা আল-মায়েদা ৫১)।
প্রকৃতই তারা তাদেরই অন্তর্ভূক্ত, তাইতো শেখ হাসিনা বলেছে তার পিতা শেখ মুজিব ফরাসী বিপ্লব দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশে বিপ্লব করেছে। আমরা জানি এই ফরাসী বিপ্লব হচ্ছে আসলে স্যেকুলারিজমকে রাষ্ট্র এবং জীবন ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণের বিপ্লব। আর এই বিপ্লবের ধারাবাহিকতায়ই স্যেকুলারিজমের ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতিরাষ্ট্র গঠিত হয়। বাংলাদেশও সেভাবেই গঠিত হয়েছে। তাই সেক্যুলার বিশ্বাসের শাসকদের নিকট ইউরোপীয়ান ক্রুসেডারদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে কোন কিছুতে বাঁধে না, কিন্তু এই স্যেকুলারিজমকে আমাদের জীবনের ভিত্তি হিসেবে, রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণের অর্থ হচ্ছে আমাদের আক্বিদাহ্ ও আক্বিদাহ্’র দাবীকে বিসর্জন দেয়া, কারণ আমাদের আক্বীদার মূল বক্তব্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ অর্থাৎ আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ (বিধানদাতা, আইনপ্রণেতা) নাই’-এর সাথে সেক্যুলারিজমের মূল বক্তব্য ‘মানুষ ছাড়া কোন ইলাহ নাই’ সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। সেক্যুলার চিন্তা বা চশমা দিয়ে সবকিছুকে দেখলে আমরা আর যা পাই না পাই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা-এর কাছে অন্তত কিছু যে আশা করতে পারি না তা পরিস্কার। কারণ আল্লাহ্ বলেন, “……যারা এরুপ করবে আল্লাহ্র সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না…” (সুরা আলি-ইমরান ২৮)।
– মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“আট মাসে ৩৬১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, স্কুলগামীদের সংখ্যা বেশি”
খবরঃ
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা “আঁচল ফাউন্ডেশন”। তাদের মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ১৬৯ জন, কলেজ শিক্ষার্থী ৯৬ জন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৬৬ জন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৩০ জন। ২০২২ সালের ৮ মাসে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৩৬৪ জন। আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি নারী শিক্ষার্থীদের। চলতি বছর আত্মহত্যা করা ৩৬১ জনের মধ্যে ৫৯.৩০% শিক্ষার্থী মেয়ে। বাকি ৪০.৭০% শিক্ষার্থী ছেলে। নারী শিক্ষার্থীদের বেশি আত্মহত্যার কারণ খতিয়ে দেখা যায়, ২৬.৬০% নারী শিক্ষার্থী অভিমান করে, প্রেমঘটিত কারণে ১৮.৭০%, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ৮.৪০%, পারিবারিক বিবাদের কারণে ৯.৮০%, ৫.১০% শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির কারণে এবং পড়াশোনার চাপ ও ব্যর্থতার কারণে ১২.৬০% আত্মহত্যা করেছে। (https://bangla.dhakatribune.com/70661)
মন্তব্যঃ
আত্মহত্যার প্রবনতা যে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয় বরং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও এর প্রভাব রয়েছে। কিংবা এর অস্তিত্ব যে শুধুমাত্র বাংলাদেশেই বিদ্যমান তা কিন্তু নয়, বরং এটি এখন এক বৈশ্বিক মহামারীতে পরিণত হয়েছে। যেমন, সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ লোক আত্মহত্যা করে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করে। এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তদুপরি যত মানুষ আত্মহত্যা করে, তার চেয়েও ২০ গুণ বেশি মানুষ ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ করে। অর্থ্যাৎ, বছরে বিশ্বে ১ কোটি ৬০ লাখ লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যা হচ্ছে সর্বোচ্চ মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ (মেয়েদের ক্ষেত্রে) ও তৃতীয় কারণ (ছেলেদের ক্ষেত্রে)।
সেক্যুলার-পূজিবাদী ব্যবস্থা মূলত পদ্ধতিগতভাবে একজন মানুষকে আত্মহত্যা প্রবণ করে তোলে। এই ব্যবস্থায় মানুষের জীবন থেকে ধর্মকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই আলাদা করে ফেলে। ফলে, একজন মানুষ তার জীবনের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কেই অজ্ঞতার মধ্যে থাকে। এ জীবনে তার করণীয় কি কিংবা তার জীবন কি শুধুমাত্র বস্তুবাদী ভোগের দাস কিনা – এসকল বিষয়ে কোনরকম ধারণাই থাকে না। ফলে একজন মানুষ স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা শিক্ষকের সাথে অভিমান করেও খুব সহজেই আত্মহত্যা করে ফেলে। কি ঠুনকোভাবে এই ব্যবস্থা আমাদের জীবনকে বুঝতে শিখিয়েছে! তাছাড়া সেক্যুলার বস্তুবাদী চিন্তার কারণে অনেকেই শুধুমাত্র নিজের জীবনে পছন্দনীয় চাকরি না পাওয়া কিংবা ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারার হতাশার কারণেও আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তথাকথিত উন্নত দেশসমূহ যেমন ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন ইত্যদি দেশেও দেখা যায় মানুষজন জীবনের সব বস্তুবাদী ভোগ শেষেও হতাশায় নিমজ্জিত থাকে কারণ এরাও নিজের জীবনের কোন যৌক্তিক উদ্দেশ্য খুজে পায় না। ফলে আমরা দেখতে পাই জীবনের সফলতার চূড়ায় পৌছেও অনেক পশ্চিমা সেলিব্রেটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। অপরদিকে, সেক্যুলার-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানুষকে এমন অর্থনৈতিক দৈন্যতার মধ্যে ফেলে দেয় যে সে আর তার জীবনে কোনরকম আশার আলো দেখতে পায় না। “ঈশ্বরদীতে সুদের টাকা দিতে না পেরে যুবকের আত্মহত্যা”, কিংবা অর্থাভাবে ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা – ইত্যাদি ধরনের মর্মান্তিক সব শিরোনাম এখন ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। আত্মহত্যার এই মহামারী থেকে মুক্তি লাভের জন্য অনেকেই অনেক উপায় বাতলে দিচ্ছেন কিন্তু এর কোনটিই প্রকৃত সমাধান আনতে সক্ষম নয়। আত্মহত্যা প্রতিরোধে টাস্কফোর্স গঠন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চালুকরন, শিক্ষার্থীদের আবেগ অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল শেখানো, শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কৌশল, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে শেখানো ইত্যাদি। কিন্তু এখানে যে মূল বিষয়টি অর্থাৎ মানুষের জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য(যা নির্ধারণে সেকুলারিসম ব্যর্থ) সেই বিষয়ে কোন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না। ফলে, মূল চিন্তার জায়গায় পরিবর্তন না এনে কিছু প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হাতে নিয়ে আত্মহত্যার মত মহামারীকে মোকাবেলা করা যাবে না। জীবনের একটি সুনির্দিষ্ট ও অর্থবহ উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনগণকে শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে এই দুরবস্থা চলমান থাকবে। মানুষ জীবনকে এক বেলার খেলা মনে করেই পার করে দিবে অথবা শেষ করে দিবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “তোমরা জেনে রেখ যে, পার্থিব জীবনতো ক্রীড়া কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়; ওর উপমা বৃষ্টি, যা দ্বারা উৎপন্ন শস্য সম্ভার কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, অতঃপর ওটা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি ওটা পীতবর্ণ দেখতে পাও; অবশেষে ওটা খড়কুটায় পরিণত হয়। পরকালে (অবিশ্বাসীদের জন্য) রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং (সৎপথ অনুসারীদের জন্য রয়েছে) আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়” (সূরা-হাদিদ-২০)
– মো. হাফিজুর রহমান