Bangladesh Policy Discourse (BPD) কর্তৃক আয়োজিত “পিলখানা হত্যাকান্ড: হাসিনা ও ভারতের ষড়যন্ত্র” শীর্ষক আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করা হয়
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
Bangladesh Policy Discourse (BPD) কর্তৃক আয়োজিত “পিলখানা হত্যাকান্ড: হাসিনা ও ভারতের ষড়যন্ত্র” শীর্ষক আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করা হয়
আজ রবিবার, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২৪ তারিখে বিকাল ৩ ঘটিকায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-এর নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ পলিসি ডিসকোর্স কর্তৃক আয়োজিত “পিলখানা হত্যাকান্ড: হাসিনা ও ভারতের ষড়যন্ত্র” শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন এর সদস্য মোহাম্মদ যুবায়ের।
জনাব মোহাম্মদ যুবায়ের তার বক্তব্যের শুরুতে ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯ পিলখানায় নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার ৫৭ জন মেধাবী সেনাঅফিসার ও পরবর্তীতে আরো যারা নিহত হয়েছেন তাদের সবাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তাদেরকে যারা হাসিনার ১৫ বছরের দুঃশাসন ও জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে এবং সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন এবং তাদের সকলের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন:
গত ১৭ আগস্ট, ২০২৪, রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে “পিলখানায় ৫৭ সেনাঅফিসার ও ১৭ জন সিভিলিয়ান হত্যার বিচারের দাবিতে” আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিহত সেনাকর্মকর্তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে পিলখানা হত্যাকান্ডটিকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তৎকালীন হাসিনা সরকারের অনেকে সরাসরি জড়িত বলে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। সেনাপরিবারের এই সাহসী পদক্ষেপকে হিযবুত তাহ্রীর সাধুবাদ জানাচ্ছে এবং হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করছে।
সেনাপরিবার ও দেশবাসীকে আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, হিযবুত তাহ্রীর-ই সর্বপ্রথম দল যারা সাহসিকতার সাথে ঘটনার পরপরই হাসিনা সরকারের এই চক্রান্তকে দেশবাসীর সামনে উন্মোচন করেছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ, হিযবুত তাহ্রীর একটি লিফলেট ইস্যু করে যার শিরোনাম ছিল “সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে ধ্বংস করার ভারতীয় ষড়যন্ত্র এবং সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ করুন”, যার কিছু অংশ ছিল এরকম: দেশের প্রতিরক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে বিভক্ত ও দুর্বল করার ভারতীয় ষড়যন্ত্র আমাদের সবারই জানা। ঘটনা প্রবাহে এটাই পরিষ্কার যে এই তথাকথিত বিদ্রোহ একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ, যার সাথে ভারত এবং সরকারের ভিতর ও বাইরের ভারতীয় দোসর শক্তিসমূহ সংশ্লিষ্ট। সেনাবাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তাদের হত্যাযজ্ঞে লাভবান হবে মুশরিক শত্রুরাষ্ট্র ও তাদের দোসররা। পরিস্থিতির বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় ঘটনার শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার রহস্যজনক ভূমিকা পালন করেছে। জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট অতিগুরুত্বপূর্ণ এই পরিস্থিতিতে কেন শুরুতেই অনভিজ্ঞ প্রতিনিধিদের পাঠানো হয়েছে যারা কতিপয় বিদ্রোহীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে? অথচ তারা সেনা সদস্য ও তাদের পরিবারের জান-মাল ইজ্জতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি। দেড় শতাধিক সেনা সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই সরকার কি উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করল? যে ঘোষণার সুযোগ নিয়ে তারা দেড় দিন ধরে লাশ গুম, ব্যাপক লুটতরাজ ও সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারবর্গের উপর নির্যাতন করেছে। ২৬ ফেব্রুয়ারী বিকালে বিডিআর সদর দপ্তরের আশেপাশের লোকজনকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রকৃতপক্ষে কি ঘাতকদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়নি?
যার পরিপ্রেক্ষিতে, ২০০৯ সালের ১-২রা মার্চ লিফলেট বিতরণকালে আমাদের দলের ৩১ জন নেতা-কর্মীকে ও পরবর্তীতে আরও ২ জনসহ মোট ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর ২৭ মার্চ ২০০৯, শুক্রবার বাদ জুমু‘আ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে “সেনাকর্মকর্তা হত্যাকান্ডে ভারতীয় ষড়যন্ত্র, সরকারের ভিতরের ভারতীয় দোসরদের সংশ্লিষ্টতা এবং হিযবুত তাহ্রীর, বাংলাদেশের ৩৩ জন নেতা–কর্মীর গ্রেফতারের প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলে” পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে যেখানে প্রায় দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়, সমাবেশস্থল থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
যালিম হাসিনা সরকার এতেও ক্ষান্ত হয়নি, প্রশাসন ও বিচারিক ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে হিযবুত তাহ্রীর-এর কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের উপর ব্যাপক দমন-নিপীড়নে লিপ্ত হয়।
পিলখানা হত্যাকান্ড দিয়ে দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে হাসিনার এ ষড়যন্ত্রের সূচনা হয়েছিল মাত্র; কিন্তু এটাই শেষ নয়। বিশ্বাসঘাতক হাসিনা দেশের নিষ্ঠাবান সেনাঅফিসারগণ যারা ইসলাম, দেশ ও জাতীয় স্বার্থের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাদেরকে ধারাবাহিকভাবে গুপ্ত অপহরণ, গ্রেফতার এবং বরখাস্ত করেছে, কারণ এসব সেনাঅফিসারগণ ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের পথে প্রধান বাধা। হিযবুত তাহ্রীর হাসিনা সরকারের দমননীতি উপেক্ষা করে, হাসিনা কর্তৃক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অব্যাহত সেসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেও আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। হিযবুত তাহ্রীর যালিম হাসিনা সরকারের সাথে কখনো আপোষ করে নাই। হাসিনা কর্তৃক দেশ, ইসলাম ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রকে জাতির সামনে আপোষহীন ও নির্ভীকভাবে উপস্থাপন করেছে।
হাসিনা শুধুমাত্র তার সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের প্রতি অবাধ আনুগত্যের কারণে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এমন অবস্থান নিয়েছিল। আপনারা জানেন, ২০০৮ সালে মার্কিন-যুক্তরাজ্য-ভারতের সমঝোতার মাধ্যমে হাসিনা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। মার্কিনীরা এই অঞ্চলে তথা পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় খিলাফতের পুনরুত্থান ঠেকাতে এবং একই সাথে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করার নীতি অনুসরণ করছে। আর এ কারণেই সে ভারতের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করেছে, যাতে সে এ অঞ্চলে তার অবস্থান এবং এ অঞ্চলের মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের উপর তার নিয়ন্ত্রণ আরও সুদৃঢ় করতে পারে। তাই তারা ভারতের সাথে বহুদিনের অমিমাংসীত সমস্যাগুলোর সমাধান করে ভারতের হাতকে উন্মুক্ত করতে চায়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে সমস্ত বাধা এবং যারা তাদের এই নীল নকশা উন্মোচন করছে কিংবা এর বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদেরকেই কঠোর হস্তে দমন করেছে। আর এজন্যই আমাদের মেধাবী ও বীর সেনাঅফিসারগণকে পিলখানায় হত্যা করা হয়েছিল এবং সেই বর্বোরোচিত হত্যাকান্ডে হাসিনা সহযোগীতা করেছিল, কারণ এসব সেনাঅফিসারগণ ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের পথে প্রধান বাধা।
আপনাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, শুধুমাত্র হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা কিংবা হত্যাকান্ডের জন্য ভারতকে অভিযোগ করাই ‘যথেষ্ট নয়’। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, পিলখানা হত্যাকান্ড ছিল দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র যা ভারত কর্তৃক পরিকল্পিত এবং হাসিনা কর্তৃক বাস্তবায়িত। তাই হাসিনার বিচারের পাশাপাশি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যাতে আর এমন হুমকীর মুখে না পড়ে এবং এমন নির্মম হত্যাকান্ড ও ষড়যন্ত্র যাতে আর না দেখতে হয় এই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা হিযবুত তাহ্রীর / উলা‘ইয়াহ্ বাংলাদেশ, দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য নিম্নোক্ত অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি,
প্রথমত, হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। এই লক্ষ্যে আমাদের দাবীকে জোরালো করতে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচী দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, দেশের জনগণের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে অবিলম্বে ভারতকে শত্রুরাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে এবং ভারতের সাথে স্বাক্ষরকৃত সকল ইসলাম ও দেশবিরোধী চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক বাতিল করতে হবে।
তৃতীয়ত, ভারতের সকল আগ্রাসন স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে তাকে পুনরায় মুসলিম শাসনের অধীনে ফিরিয়ে আনার সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। কারণ মুসলিমদের শাসনকালে এই অঞ্চলের জনগণ ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে সুখী ও সমৃদ্ধ জীবনযাপন করেছে।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস