“গ্যাসের মজুদ নিঃশেষের” এই তথাকথিত আখ্যান প্রমাণ করে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার অধীনস্ত শাসকেরা না পরোয়া করে দেশের জ্বালানী নিরাপত্তার, না জনগণের দুঃখ-দুর্দশার

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

“গ্যাসের মজুদ নিঃশেষের” এই তথাকথিত আখ্যান প্রমাণ করে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার অধীনস্ত শাসকেরা না পরোয়া করে দেশের জ্বালানী নিরাপত্তার, না জনগণের দুঃখ-দুর্দশার

জনগণকে প্রায়শঃই শুনতে হয় দেশের জ্বালানী নিরাপত্তায় একটি বড় সঙ্কট দেখা দিয়েছে, কারণ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ হতে চলেছে। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) বলছে, দেশে কেবল নয় থেকে দশ বছরের জন্য গ্যাসের মজুদ রয়েছে, প্রতিবছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট খরচ হয় ধরে নিয়ে এই হিসাব করা হয়েছে (দ্য ডেইলি স্টার, এপ্রিল ২৭, ২০২২)। কিন্তু হাসিনা সরকার বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ নিঃশেষের যে বর্ণনা দিয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। যদিওবা, সমৃদ্ধ খনিজে পরিপূর্ণ হাইড্রোকার্বন-বহনকারী পাললিক গঠনের কারণে বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ গ্যাসপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত, তথাপি জ্বালানী চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের প্রতি কখনও গুরুত্বারোপ করা হয়নি। ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকা সব ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই গুরুত্বপূর্ণ এই খাতকে পদ্ধতিগতভাবে পশ্চিমা কোম্পানীসমূহের উপর নির্ভরশীল করে রেখেছে, যা আমাদের জ্বালানী সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ১৯৭৪ সাল থেকে চালু হওয়া বিশ্বব্যাংকের স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (এস.এ.পি) আওতায় তারা মার্কিন ও ব্রিটিশ কোম্পানীগুলোকে উৎপাদন বন্টন চুক্তি (পি.এস.সি)-এর নামে আমাদের গ্যাস সম্পদ লুট করার সুযোগ করে দেয়। যদিওবা বাপেক্স (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানী লিমিটেড) বিদেশী কোম্পানীগুলোর তুলনায় অর্ধেক খরচে দেশের স্থলভাগে অবস্থিত গ্যাসক্ষেত্রসমূহ অন্বেষণ করার ক্ষমতা রাখে, তবুও এই দক্ষ প্রতিষ্ঠানকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। গত ২০ বছরে এদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সরকারসমূহ কেবল ২৮টি অনুসন্ধানমূলক কূপ খনন করেছে এবং সম্ভাবনাময় গ্যাস সেক্টরকে অপরিণত ও রুগ্ন করে রেখেছে। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন ২৮৬.৪ মিলিয়ন কিউবিক ফিট পার ডে (mmcfd)–তে নামিয়ে এনে ইচ্ছাকৃতভাবে জ্বালানী ঘাটতি বজায় রাখা হয়েছে। আর এর প্রকৃত কারণ হচ্ছে উচ্চমূল্যে (স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত গ্যাসের চেয়ে ২৪ গুণ বেশী ব্যয়বহুল) তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এল.এন.জি) আমদানী করা, যাতে গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও নতুন করে ঢেলে সাজানোর কাজে বিনিয়োগ না করে তাদের সহযোগী কতিপয় পুঁজিপতিকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ কুক্ষিগত করার সুযোগ দেয়া যায়। ফলে আজ পর্যন্ত আমরা ভারী শিল্পায়নের জন্য আমাদের এই কৌশলগত সম্পদের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারিনি। প্রকৃতপক্ষে, এই দালাল শাসকেরা বাংলাদেশের জ্বালানী সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে কখনোই মাথা ঘামায়নি।

হে দেশবাসী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট চলমান জ্বালানী সংকট ইউরোপের জ্বালানী সার্বভৌমত্বের দুর্বলতাকে দৃশ্যমান করে তুলেছে। রাশিয়ার জ্বালানী প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে জার্মানির মতো শক্তিশালী শিল্পভিত্তিক রাষ্ট্রও তীব্র গ্যাস সংকটে ভুগছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হওয়া সত্ত্বেও চীনকে প্রতিদ্বন্দ্বী কোয়াড রাষ্ট্রসমূহের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে এখনও রাশিয়ার গ্যাসের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ডাঙায় ও সমুদ্র-সোপানে হাইড্রোকার্বন ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যে ভরপুর হওয়া সত্ত্বেও এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর অবহেলার কারণে আমরা আজও অরক্ষিত। এসব অজ্ঞ শাসকদের সম্পর্কে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন:

*وَلاَتُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمْ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا…*

“আর তুলে দিও না নির্বোধদের হাতে তোমাদের ঐ সম্পদ, যেটিকে আল্লাহ্ তোমাদের জীবন নির্বাহের অবলম্বন বানিয়েছেন …” [সূরা নিসা: ৫]।

হে দেশবাসী! যে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষ দালাল শাসকদের মাধ্যমে আমাদেরকে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কার্যকরভাবে ব্যবহার করা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে, সেই ব্যবস্থার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে হলে আপনাদেরকে অবশ্যই নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফত রাশিদাহ্ ফিরিয়ে আনার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। যেহেতু প্রাকৃতিক গ্যাস এবং অন্যান্য জ্বালানী সম্পদ সমরভিত্তিক শিল্পসহ ভারী শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির অন্যতম উৎস, সেহেতু বাংলাদেশ যাতে তার বিশাল জ্বালানী মজুদ ও তার অপার সম্ভাবনা ব্যবহার করে জ্বালানী স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে আসন্ন খিলাফত তা নিশ্চিত করবে। তাই, জ্বালানী খাতে কৌশলগত সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত করতে খিলাফত রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও অন্যান্য সম্পদশালী মুসলিম ভূ-খন্ডসমূহকে একত্রিত করবে। এর উদ্দেশ্য হবে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কুফর রাষ্ট্রসমূহের উপর নির্ভরশীলতা এড়াতে একটি শক্তিশালী সমরভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার পাশাপাশি ভারী শিল্পায়নকে সহজতর করা। আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা বলেন:

*وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ…*

“আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যের (অস্ত্রাদি) মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া (অশ্ববাহিনী) থেকে, যেন ভীতির সঞ্চার হয় আল্লাহ্’র শত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর…” [সূরা আল-আনফাল: ৬০]।

এছাড়াও, খিলাফত অবিলম্বে আমাদের প্রাকৃতিক ও গণমালিকানাধীন সম্পদসমূহ নব্য-উপনিবেশবাদী আদর্শের ভিত্তিতে বেসরকারীকরণ করার পরিকল্পনা চিরতরে নস্যাৎ করবে। খিলাফত রাষ্ট্র উম্মাহ্’র জ্বালানী সম্পদসমূহ সরাসরি তত্ত্বাবধান করবে, যাতে সেগুলো মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করা সম্ভব হয়। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন: মুসলিমগণ তিনটি জিনিসে অংশীদার: পানি, চারণভূমি, এবং আগুন (আহমাদ, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ্ কর্তৃক বর্ণিত)।

হিযবুত তাহ্‌রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়