ক্ষমতায় থাকার জন্য হাসিনা সরকার মার্কিন চাপের মুখে নতি স্বীকার করে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে (আই.পি.এস) যোগ দিচ্ছে

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

 ক্ষমতায় থাকার জন্য হাসিনা সরকার মার্কিন চাপের মুখে নতি স্বীকার করে ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে (আই.পি.এস) যোগ দিচ্ছে

শেখ হাসিনা বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে মেকি ‘বাহাদুরি’ দেখিয়ে এতদিন পর্যন্ত নিজেকে জাহির করে আসছে। তার সরকারকে গণতন্ত্রের লেকচার দেয়ার জন্য সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করে, এবং বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে দেশটিকে অভিযুক্ত করে। সবশেষে গত ১০ই এপ্রিলে ২২তম সংসদীয় অধিবেশন চলাকালীন সময়ে সে বাংলাদেশে শাসন-ক্ষমতায় পরিবর্তন চাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করে। অথচ, সংসদে সেই ‘জ্বালাময়ী বক্তৃতার’ দিন-কয়েকের মধ্যেই তার সরকার যুক্তরাষ্ট্র সফরের ঠিক আগে ২৪শে এপ্রিল, ২০২৩ ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। শেখ হাসিনা হচ্ছে সেই বিশ্বাসঘাতক শাসকদের একজন যে তার ক্ষমতা সুরক্ষিত রাখতে উপনিবেশবাদী কাফেরদের কাছে উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করে না। উপরন্তু, তার সরকার একই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ গভীর-সমুদ্রে অবস্থিত ১৫টি হাইড্রোকার্বন ব্লকের সবগুলোই মার্কিন এনার্জী জায়ান্ট কোম্পানী এক্সনমোবিল-এর হাতে তুলে দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে (দৈনিক যুগান্তর, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৩)। মার্কিন কংগ্রেস ও হোয়াইট হাউসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা এমন একটি শক্তিশালী মার্কিন কোম্পানীর বাংলাদেশের গভীর-সমুদ্র জলসীমার অভ্যন্তরে উপস্থিতি মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির জন্য অপরিসীম কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। এছাড়াও, হাসিনা সরকার ইতিমধ্যেই ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান মিত্র জাপানের হাতে বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত মাতারবাড়ি গভীর-সমুদ্র বন্দর তুলে দেয়ার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করেছে – আর এর জন্য হাসিনা মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে সোনাদিয়ায় গভীর-সমুদ্র বন্দর নির্মাণের চীনা পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেছে। মাতারবাড়ি বন্দরকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আই.পি.এস-এর জন্য একটি কৌশলগত অপরিহার্য উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। জাপান যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত আত্মসমর্পণ-পরবর্তী (post-surrender) নীতির কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ “শীতনিদ্রায়” ছিল, তথাপি এখন এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কক্ষপথে দৃঢ়ভাবে আবর্তন করায় যুক্তরাষ্ট্র আবার এটিকে সামরিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে, যাতে চীনকে মোকাবেলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শক্ত অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়। সুতরাং, বাংলাদেশের গভীর-সমুদ্র বন্দরে জাপানের অংশীদারিত্ব প্রকৃতপক্ষে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ তথা তাদের বন্দর ও ঘাঁটি তৈরীর সাথে সম্পৃক্ত, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর আধিপত্য বিস্তারের পথ সুগম করবে। ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা বিষয়ক মার্কিন সহকারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এলি রাটনারের বক্তব্য থেকে আমরা এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি: এমন একটি অঞ্চল যেটির বেশিরভাগ অংশ পানিতে পরিপূর্ণ, সেখানে মার্কিন সামরিক বাহিনী তার আঞ্চলিক অংশীদারদের কাছ থেকে বেইস ও পোর্ট অ্যাক্সেসের মতো লজিস্টিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল (“কেন আমেরিকা ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়, POLITICO, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২২)। তাছাড়া, হাসিনার পক্ষ হতে জাপানের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয়াদেশ জারি চীনের উপর সামরিক নির্ভরতা কমানোর অন্যতম প্রচেষ্টা।

হে দেশবাসী, এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ও রাজনীতিবিদগণই আমাদের দুঃখ ও দুর্দশার একমাত্র কারণ। তারা পশ্চিমা শক্তিসমূহের দাসত্বে একে-অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যই অস্তিত্বে বিদ্যমান। একদিকে হাসিনা সরকার নিজেকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশকে মার্কিন আধিপত্যের ‘ভূ-রাজনৈতিক ঘুঁটি’ হিসেবে ব্যবহার হতে দিচ্ছে; অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলো পশ্চিমা দূতাবাসসমূহের হস্তক্ষেপের জন্য তাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তিসমূহের সহায়তায় তারা ক্ষমতায় আসতে চায়, যাতে তারা পশ্চিমাদের স্বার্থকে আরও ভালভাবে নিশ্চিত করতে পারে। এসব জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের ভণ্ডামি অত্যন্ত পরিষ্কার। তারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও কখনও এই অশুভ মার্কিন-ভারত মৈত্রী এবং মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির আওতায় ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়ে থাকে তার সমালোচনা করে না। হে দেশবাসী, এই অভিশপ্ত পশ্চিমা-সমর্থিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে খিলাফতে রাশিদাহ্ ফিরিয়ে আনা। উপনিবেশবাদী আধিপত্যের অবসান ঘটাতে হিযবুত তাহ্রীর-এর আন্দোলনের সাথে যোগ দিন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সাক্ষী যে আমরা পশ্চিমা দালাল শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের মুখেও দেশের সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে সর্বদা আপসহীন রয়েছি।

হে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারগণ, ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ও রাজনীতিবিদগণ ক্ষমতার জন্য ইঁদুর-দৌড়ে কোন প্রচেষ্টাই বাদ রাখছে না। তারা এই উম্মাহ্’র রক্তচোষা পরজীবী, এবং কেবলমাত্র তাদের কাফির-উপনিবেশবাদী প্রভুদের সেবা করা ছাড়া তাদের আর কোন রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। এই শাসকেরা তাদের উপনিবেশবাদী প্রভুদের যুদ্ধে আপনাদেরকে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করছে। আপনাদের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় এই বিশ্বাসঘাতক শাসকেরা বিভিন্ন চুক্তির আওতায় আমাদের গর্বিত সামরিক বাহিনীকে কাফির-মুশরিকদের হাতে তুলে দিতে বদ্ধপরিকর। নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্ ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে এই বিশ্বাসঘাতকতা ও জনগণের দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটানোর সক্ষমতা কেবল আপনাদেরই রয়েছে। হে নিষ্ঠাবান অফিসারগণ, সতর্ক হোন! আপনারা ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে রয়েছেন এবং আপনারা এখন যে সত্যবাদী ও সাহসী সিদ্ধান্ত নেবেন তার জন্য মানুষ আপনাদেরকে স্মরণ রাখবে। হয় আপনাদেরকে সেনাপতি সা’দ ইবনে মু‘আয (রা.)-এর সাথে একত্রে স্মরণ করা হবে, যিনি আল্লাহ্’র রাসূল ﷺ-কে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিলেন, নতুবা এই উম্মাহ্’র মহা-বিশ্বাসঘাতক সেনাপতি মীর জাফরের সাথে, যে ভারতীয় উপমহাদেশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশদেরকে সহায়তা করেছিল। অতএব, ন্যায়নিষ্ঠ খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কোন প্রকার বিলম্ব ব্যতিরেকে সত্যবাদী দল হিযবুত তাহ্রীর-এর প্রতি আপনাদের নুসরাহ্ (সামরিক সহায়তা) প্রদান করুন। পশ্চিমা উপনিবেশবাদের পতন ঘটিয়ে অত্যাচারের চির-অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় রাশিদুন বাহিনীর অধীনে লড়াই করার মহান সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:

* ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ يُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱلطَّـٰغُوتِ فَقَـٰتِلُوٓا۟ أَوْلِيَآءَ ٱلشَّيْطَـٰنِ ۖ إِنَّ كَيْدَ ٱلشَّيْطَـٰنِ كَانَ ضَعِيفًا*

যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহ্ পথে যুদ্ধ করে আর যারা কাফের, তারা শয়তানের পথে যুদ্ধ করে সুতরাং তোমরা (মুমিনগণ) শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল অতি দুর্বল[আন-নিসা: ৭৬]

 

হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশএর মিডিয়া কার্যালয়