আই.এম.এফ এবং নষ্ট পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অভিশাপ হচ্ছে জ্বালানি তেলের এই নির্দয় ও নিষ্ঠুর মূল্যবৃদ্ধি

প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
আই.এম.এফ এবং নষ্ট পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অভিশাপ হচ্ছে জ্বালানি তেলের এই নির্দয় ও নিষ্ঠুর মূল্যবৃদ্ধি

সাধারণ মানুষ যখন নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার অসহনীয় ব্যয়ভারের সঙ্গে লড়াই করছে, তখন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হাসিনা সরকার গত শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ ৫১.৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে জনগণের তাজা ক্ষতে লবণ মাখিয়েছে দিয়েছে। এক লিটার অকটেনের দাম এখন ১৩৫ টাকা (১.৪৩ ডলার), যা পূর্বে ছিল ৮৯ টাকা; পেট্রোলের দামও ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা (১.৩৭ ডলার) এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১১৪ টাকা হয়েছে। আই.এম.এফ-এর কাছ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেইলআউট প্যাকেজ পেতে তাদের শর্ত মোতাবেক তথাকথিত জ্বালানি ভর্তুকি অপসারণ করতে ধর্মনিরপেক্ষ হাসিনা সরকার মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কথা উল্লেখ করে দাম বাড়িয়েছে, যেখানে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মন্দার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম আবার কমতে শুরু করেছে। তদুপরি, ২৭শে জুলাই শেখ হাসিনা গর্বের সাথে দাবি করেছে যে বাংলাদেশ পেট্রোল ও অকটেন আমদানি করে না, কারণ এগুলো আমরা গ্যাস উত্তোলনের উপজাত হিসেবে পেয়ে থাকি। এই দাবির মাত্র এক সপ্তাহ পরেই তার মিথ্যাবাদী সরকার এই দু’টি জিনিসের দামও বৃদ্ধি করেছে! বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বি.পি.সি) ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে বিশ্ববাজারের চেয়ে বেশি দামে ভোক্তাদের কাছে তেল বিক্রি করে ৪৮,১১৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আর পুঁজিবাদী হাসিনা সরকার বিভিন্ন মেগা-লুটপাট প্রকল্পে এই মুনাফা ব্যবহার করেছে। তার নির্লজ্জ মন্ত্রীরাও এই সত্যকে অস্বীকার করতে পারেনি (“নসরুল হামিদ দাবি করেছেন: বি.পি.সি’র মুনাফা উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে ব্যয় করা হয়েছে”, দ্য ডেইলি স্টার, ৭ই আগস্ট, ২০২২)। উন্নয়নের নামে লুটপাটের অর্থ যোগাতে তারা এখন জ্বালানির দাম বাড়িয়ে জনগণের রক্ত চোষার ব্যবস্থা করেছে। বিদ্যুৎ, পরিবহন ও কৃষিখাত এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মধ্যে পড়বে কারণ এগুলো ডিজেল ও কেরোসিন ব্যবহারের উপর অধিক নির্ভরশীল। স্বাভাবিকভাবেই জনসাধারণের জীবনযাত্রার সামগ্রিক ব্যয় আরও বৃদ্ধি পাবে, এবং দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

এটা সর্বজনবিদিত যে, আই.এম.এফ নামক এই কুখ্যাত পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠান সর্বদাই উপনিবেশবাদী শক্তিসমূহের স্বার্থ এবং সবকিছুকে বেসরকারীকরণ করার পুঁজিবাদী নীতি চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নিয়ে দেশের অর্থনীতিকে, বিশেষ করে জ্বালানি খাতকে পঙ্গু করে দেয়। আই.এম.এফ-এর নীতি অনুসরণ করে এদেশের কোন ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই রাষ্ট্রীয় জ্বালানি ব্যবস্থাপনার অধীনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)-এ পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করেনি, বরং উৎপাদন বন্টন চুক্তির (পি.এস.সি) অধীনে শেভরন, কনোকোফিলিপস্, ইত্যাদির মতো বিদেশী ঔপনিবেশিক কোম্পানিগুলোকে আমাদের খনিজ সম্পদ তেল-গ্যাস লুট করার সুযোগ করে দিয়েছে। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতকে মুনাফালোভী বিদেশী কোম্পানি (যেমন: মার্কিন কোম্পানির মালিকানাধীন ‘পল্লী বিদ্যুৎ’) এবং দেশীয় পুঁজিপতিদের মালিকানাধীন কোম্পানিসমূহের (যেমন: সামিট গ্রুপ) হাতে তুলে দিয়েছে। অতীতে উপনিবেশবাদী শক্তিসমূহ প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুটপাটের উদ্দেশ্যে সমৃদ্ধ ভূ-খন্ডে আক্রমণ করত। কিন্তু, আজকের তথাকথিত ‘মুক্ত বিশ্বে’ আই.এম.এফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশ্বাসঘাতক দালাল শাসকদের সাথে একজোট হয়ে দেশের সম্পদ লুট করে এবং জ্বালানি সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করে দেয়, যাতে জনগণ পাকাপাকিভাবে পশ্চিমাদের করুণার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তাই আমরা প্রত্যক্ষ করছি, আই.এম.এফ-এর অশুভ বেসরকারীকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে পশ্চিমা মদদপুষ্ট দুর্নীতিবাজ শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সহযোগী ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী জ্বালানি খাত হতে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছে, আর সাধারণ জনগণকে জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্যের উত্তাপ সহ্য করতে হচ্ছে। সুতরাং, ক্ষুদ্র পুঁজিপতি শ্রেণীকে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ প্রদান বন্ধ করতে আই.এম.এফ কখনোই সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে না, বরং এটি তথাকথিত জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহারে সরকারকে বাধ্য করে, যা জনসাধারণের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তোলে। পশ্চিমা কাফিদের দালাল এই শাসকগোষ্ঠী অপরাধের সব সীমা অতিক্রম করেছে। তারা জনগণের দুর্ভোগের প্রতি কোন দৃষ্টিপাত না করে অনুগতভাবে তাদের পশ্চিমা প্রভুদের নির্দেশ পালন করে যাচ্ছে। এই নিষ্ঠুর শাসকগোষ্ঠী ও তাদের অত্যাচারী পুঁজিবাদী ব্যবস্থার হাতে আজ গোটা দেশের জনসাধারণ জিম্মি হয়ে পড়েছে। এখনই সময় পশ্চিমা মদদপুষ্ট নিপীড়নের এই শৃঙ্খল থেকে মুক্তি অর্জনের।

হে দেশবাসী, আপনাদের অবশ্যই নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফত রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাতে হবে, কেননা শুধুমাত্র খিলাফতই মানুষকে এই দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে পারে। খিলাফত রাষ্ট্রে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন হবে না, কারণ ইসলামের অধীনে জ্বালানি ও খনিজসমূহ ‘গণমালিকানাধীন সম্পদ’ বিভাগের অন্তর্গত; মানুষ স্বল্প খরচে বা বিনামূল্যে এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। ফলে জনগণের অর্থ লুট করে কেবল কতিপয় পুঁজিবাদীদের সুবিধা নিশ্চিতে এসব সম্পদ বেসরকারীকরণের কোন অবকাশ থাকবে না। দুনিয়ার বুকে পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে খিলাফত রাষ্ট্র দ্রুততম সময়ের মধ্যে আত্মনির্ভরশীল অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। খিলাফত রাষ্ট্র জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কৃষি, নির্মাণ, শিল্পখাত ও সশস্ত্র বাহিনীর জন্য স্বাধীনভাবে যন্ত্রপাতি ও ইঞ্জিন তৈরির প্রতি মনোনিবেশ করবে। শারী‘আহ্ নির্দেশনা তার অর্থনীতিকে অনুযায়ী সংগঠিত করবে, এবং উপনিবেশবাদী বা তাদের বিভিন্ন সংস্থা যেমন আই.এম.এফ বা বিশ্বব্যাংক‘কে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে দেবে না। খলিফা কখনোই বেইলআউটের জন্য এসব সাম্রাজ্যবাদী সংস্থাসমূহের কাছে ধরণা দেবে না, কারণ খিলাফত কখনোই ডলারভিত্তিক কাগুজে মুদ্রা ব্যবস্থাকে অনুমোদন করবে না। বাস্তব পণ্য ও পরিষেবার উপর ভিত্তি করে অর্থনীতি গড়ে তোলা হবে, এবং স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা চালু করা হবে। তাই খিলাফত রাষ্ট্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হঠাৎ করে বাড়বে না, কিংবা মূল্যস্ফীতি হবে না। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আমাদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে, ঋণে জর্জরিত করেছে, এবং মানুষের জন্য চরম দুর্দশা ডেকে এনেছে। কিন্তু, আমরা যদি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ব্যতীত আর কারও উপর নির্ভর না করি, তবে তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) আমাদেরকে জন্য এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি উপায় বাতলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন:

* فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَى*
“যে আমার পথনির্দেশ অনুসরণ করবে, সে (দুনিয়ার জীবনে) পথভ্রষ্ট হবে না এবং (পরকালেও) কষ্টে পতিত হবে না” [সূরা ত্বাহা: ১২৩]

হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়