ধারাবাহিক মারাত্মক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনাসমূহ ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার ব্যর্থতা, কারণ এটি সর্বদা সরকার প্রধানকে দুর্ঘটনা ও জনগণের দায়িত্ব নেয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখে
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
ধারাবাহিক মারাত্মক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনাসমূহ ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার ব্যর্থতা, কারণ এটি সর্বদা সরকার প্রধানকে দুর্ঘটনা ও জনগণের দায়িত্ব নেয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখে
বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর ধরে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, যেখানে বহু মানুষ নিহত ও আহত হচ্ছে। এবারের ধাক্কায় মাত্র চারদিনে পরপর তিনটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যার সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে ৭ই মার্চে, শহরের কেন্দ্রস্থল গুলিস্তানের কাছে একটি বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ভবনে, যাতে কমপক্ষে ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটে ও বহু মানুষ আহত হয়, এবং এখনও নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ এখনও “সীতাকুন্ড বিস্ফোরণ”, “নিমতলী ট্র্যাজেডি”, এবং “গুলশান ফায়ার”-এর দুঃস্বপ্ন থেকে বের হতে পারেনি। এটা সুপ্রতিষ্ঠিত সত্য যে, অপরিকল্পিত এবং দুর্বল অবকাঠামোই এধরনের দুর্ঘটনাসমূহের প্রধান কারণ, যা বহু মানুষের মৃত্যু, জখম, এবং সম্পদের বিনাশ ঘটায়। এবং, অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অপ্রতুলতা দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে তোলে। এসব ঘটনার কোনোটিরই তদন্ত ও বিচারের ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখা যায়নি, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করাতো দূরের বিষয়।
এধরনের কোন ঘটনা ঘটলেই আমাদের সমাজের বুদ্ধিজীবীরা সরকার প্রধানের দায়ভারের দিকে মনোযোগ না দিয়ে সর্বদা ঘটনার কারণ, প্রভাব ও প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটির বিষয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেন, অথচ সরকার প্রধানই জনগণের বিষয়াদির জন্য চূড়ান্তভাবে দায়িত্বশীল, কারণ তিনিই সেই কর্তৃপক্ষ যিনি মন্ত্রীদের দায়িত্ব দেন এবং তারাই পরবর্তীতে জনগণের বিষয়াদি দেখাশোনার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীগণ সবসময় রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে এসব দুর্ঘটনার দায় থেকে অব্যাহতি দেন। এবং, শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার জন্য দৃঢ়তার সাথে পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে তারা তাকে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ হিসাবে পবিত্র জ্ঞান করেন। আর তিনিও ‘সন্ত্রাসী নাশকতার’ ভুত তাড়া করে চতুরতার সাথে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব এড়িয়ে যান। জনগণের বিষয়ে সরকারের উদাসীনতার পাশাপাশি এধরনের ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীরাও দায়মুক্তি উপভোগ করে, কারণ তাদের সাথে শাসকগোষ্ঠীর সংযোগ থাকে।
বাস্তবতা হচ্ছে যে, ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় শাসকগণ সার্বভৌম, এবং আইন ও কর্তৃত্ব উভয়ই একই মানুষের হাতে ন্যস্ত থাকে। তাই আইন প্রণয়নের মাধ্যমে শাসকগণ সবসময় নিজেদেরকে জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে রাখে। তদুপরি, ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় দায়িত্বশীল হওয়ার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট এবং সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত না হওয়ার কারণে বুদ্ধিজীবীরাও সরকারের অক্ষমতা ও ব্যর্থতা আড়াল করে তাদের পিঠ বাঁচানোর জন্য সর্বদা আলোচনার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
*لَمْ يَكَدْ يَرَاهَا وَمَنْ لَمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُورًا فَمَا لَهُ مِنْ نُورٍ*
“আর আল্লাহ্ যাকে আলো দান করেন না, তার জন্য কোন আলো নেই” [আন-নূর: ৪০]।
হে দেশবাসী! ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার মতো খিলাফতের শাসকদের জন্য দায়মুক্তির কোন অবকাশ নেই। যেকোন দুঃখজনক ঘটনার ব্যাপারে খলিফাকে প্রাথমিকভাবে দায়ী করা হবে। উম্মাহ্ তাকে এবিষয়ে জবাবদিহি করবে যে তিনি দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন এবং কত দ্রুত তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করেছেন। আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকেই রাখাল এবং নিজের মেষপালের জন্য দায়িত্বশীল। জনগণের নেতা একজন অভিভাবক এবং সে তার অধীনস্তদের জন্য দায়িত্বশীল” [বুখারি, মুসলিম]। সুতরাং, খলিফাই যেকোন দুঃখজনক ঘটনার সাথে সম্পর্কিত সকল কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণ করবেন এবং প্রযুক্তিগত বিষয়সমূহ পর্যালোচনা করবেন। তিনি সমাজকে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় পরিব্যপ্ত হতে দেবেন না এবং তার নিজের দায়িত্বের বিষয়ে দায়মুক্তি উপভোগ করবেন না। কারণ ইসলামে খলিফাকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে জবাবদিহি করার কোনো সুযোগ নেই। ইসলামে শাসক পদে যারা অধিষ্ঠিত হন তাদের ভূমিকা কঠোরভাবে সর্বোচ্চ মাত্রার জবাবদিহিতা দাবি করে। আবু যর (রা.) হতে মুসলিম বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন: “আমি বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল (ﷺ), আপনি কি আমাকে গভর্নর/শাসক হিসেবে নিযুক্ত করবেন না? তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার কাঁধ চাপড়ে বললেন: হে আবু যর, তুমি দুর্বল এবং এটি একটি আমানত। কেয়ামতের দিনে এটা হবে লাঞ্ছনা ও আফসোসের বিষয়, তার জন্য ব্যতীত যে প্রাপ্ত অধিকার হিসেবে এটাকে গ্রহণ করে এবং যথাযথভাবে এর দায়িত্ব পালন করে”। সুতরাং, শাসকের দায়িত্ব পালনে যেকোন অক্ষমতা শাসককে তার পদ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে “মাজালিম আদালত” (Court of Unjustice Acts)-এর মাধ্যমে বরখাস্ত করবে। পরিশেষে, আমরা আপামর জনসাধারণের প্রতি, বিশেষ করে সকল নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতি এই আহ্বান জানাই, আপনারা সমাজ থেকে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থাকে সমূলে উৎপাটন করে হিযবুত তাহ্রীর-এর নেতৃত্বে নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফতে রাশিদাহ্ ফিরিয়ে আনার কাজে আত্মনিয়োগ করুন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
*إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا۟ مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ*
“আল্লাহ্ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে” [সূরা আর-রাদ: ১১]।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া কার্যালয়