হিযবুত তাহ্রীর-এর উপর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার কর্তৃক আরোপিত বেআইনি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পিটিশন দাখিল করা হয়েছে
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
হিযবুত তাহ্রীর–এর উপর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার কর্তৃক আরোপিত বেআইনি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পিটিশন দাখিল করা হয়েছে
দলটির উপর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার কর্তৃক আরোপিত অন্যায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ গত ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। ২০০৯ সালের ২২শে অক্টোবরে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহ্রীর-কে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর অধীনে শুধুমাত্র বিদ্বেষ ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে দলটির কার্যক্রমকে ‘জননিরাপত্তার জন্য হুমকি’ এবং ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা বিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করে বেআইনীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অথচ, হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার এই ধরনের দাবির স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করতে পারেনি।
প্রকৃতপক্ষে, ২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯ পিলখানায় সেনাঅফিসারদেরকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাটি বিশ্বাসঘাতক হাসিনার সহযোগীতায় ভারতীয় ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশের ক্ষেত্রে হিযবুত তাহ্রীর-এর নিষ্ঠাবান ও সাহসী অবস্থানের কারণেই হাসিনা সরকার দলটিকে নিষিদ্ধ করে। দেশ এবং তার সাহসী সেনাবাহিনীর কল্যাণের কথা চিন্তা করে হিযবুত তাহ্রীর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সাহসীভাবে রুখে দাঁড়ায় এবং তাদের ষড়যন্ত্র প্রকাশ করতে ব্যাপকভাবে প্রচারপত্র বিতরণ, আলোচনা সভা, সমাবেশ ও মিছিলসহ ধারাবাহিক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০০৯ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী হিযবুত তাহ্রীর-ই সর্বপ্রথম ভারত ও হাসিনা সরকারের ষড়যন্ত্রকে উন্মোচন করে একটি লিফলেট ইস্যু করে যার শিরোনাম ছিল: “সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে ধ্বংস করার ভারতীয় ষড়যন্ত্র এবং সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ করুন”। হিযবুত তাহ্রীর-কে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে বিশ্বাসঘাতক হাসিনা সরকার দলটির কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করে, এবং অবশেষে ২০০৯ সালের ২২শে অক্টোবরে ‘নিছক একটি প্রেস নোট’-জারির মাধ্যমে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই ‘নিষেধাজ্ঞা’-টি ছিল স্বৈরাচারী হাসিনার জারি করা নিষেধাজ্ঞা, যেটির কোন আইনগত ও সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। কারণ, সন্ত্রাসী আইনের অধীনে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে হলে তা সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ১৮(১) ধারার অধীনে প্রয়োগযোগ্য হতে হবে। কিন্তু স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার হিযবুত তাহ্রীর-কে নিষিদ্ধ করার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের উল্লিখিত ধারার অধীনে কোনো গেজেট বিজ্ঞপ্তিও জারি করেনি। অধিকন্তু, ২০০০ সালে বাংলাদেশে দলটির সূচনাকাল থেকে শুরু করে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ হতে ‘জননিরাপত্তার জন্য হুমকি’ এবং ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা বিরোধী’ সংক্রান্ত বিষয়ে কখনও কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি কিংবা হিযবুত তাহ্রীর-এর কর্মীদের বিরুদ্ধে এধরনের কোন মামলা আদালতে প্রমাণিত হয়নি। এরপরেও, দেশের জনগণের মধ্যে হিযবুত তাহ্রীর-এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার ভয়ে তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার দলটিকে অবৈধভাবে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। এমনকি এই স্বৈরাচারী সরকার হিযবুত তাহ্রীর-কে আত্মপক্ষ সমর্থনে আইনি সহায়তা নেয়ার কোন সুযোগ না দিয়ে দলটির নেতা-কর্মীদেরকে ব্যাপকহারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, এবং জোরপূর্বক গুমের মাধ্যমে দলটিকে দমন করতে শুরু করে। ফলে সমাজের সচেতন মহল সেসময়ে হিযবুত তাহ্রীর-কে নিষিদ্ধ করার নির্লজ্জ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছিলেন। দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার একটি উপ-সম্পাদকীয়তে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী জনাব ফরহাদ মাজহার সরকারের তীব্র নিন্দা করেছিলেন: “…সরকার ব্যাখ্যা দেয়নি যে কেন হিযবুত তাহ্রীর জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। এমনকি তারা কোনো প্রমাণও পেশ করেনি”। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান ২০০৯ সালের ২৯শে অক্টোবর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রথম পাতায় “এজেন্ডা যখন ভিন্নমত দমন” শিরোনামে একটি মন্তব্য প্রতিবেদনে হিযবুত তাহ্রীর-কে নিষিদ্ধ করায় সরকারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেন। ‘অধিকার’-এর মতো বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাও এ ধরনের বেআইনী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। সংস্থাটি তার অক্টোবর ২০০৯-এর মানবাধিকার প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছিল যে: “…কোন প্রমাণ পেশ না করে হিযবুত তাহ্রীর–এর নিষিদ্ধকরণ নিয়মাফিক ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঐতিহ্যবাহী প্রথার পরিপন্থী, এবং এটি সরকারের অগণতান্ত্রিক মনোভাবকে উন্মোচন করে দিয়েছে…”।
আমরা, হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিকট আমাদের বিগত ১৫ বছরের কঠিন রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং অত্যাচারী হাসিনার বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করে দেখার আহ্বান জানাই। হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেয়ার কারণে দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং বহু ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এরপরও দলটি সর্বদাই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আন্তরিক ও সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়াও, জামায়াতে ইসলামী’র উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি দ্রুত কার্যকর করার জন্য আমরা আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। জামায়াতে ইসলামী ছিল স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের নিষেধাজ্ঞার সর্বশেষ শিকার, যেখানে আমরা ছিলাম তাদের প্রথম শিকার এবং গত ১৫-বছর ধরে আমরা অসহায়ভাবে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করছি। ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে হাসিনা সরকারের ফ্যাসিবাদ থেকে আপনারা নিজেদেরকে আলাদা করবেন কিনা তা এখন আপনাদের উপর নির্ভর করছে। যেহেতু আপনাদের সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছে, সেহেতু আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো এবং অনতিবিলম্বে হিযবুত তাহ্রীর-এর উপর থেকে বেআইনী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস