সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কর্পোরেট প্রক্সি ‘এক্সেলারেট এনার্জিকে’ ব্যবহার করে আমাদের কৌশলগত বন্দর ও সমুদ্রের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যাতে এটি তার ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে পারে
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কর্পোরেট প্রক্সি ‘এক্সেলারেট এনার্জিকে’ ব্যবহার করে আমাদের কৌশলগত বন্দর ও সমুদ্রের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যাতে এটি তার ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে পারে
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক হাই-প্রোফাইল রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস গত বৃহস্পতিবার (৪ঠা সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সাথে প্রায় এক ঘন্টা বৈঠক করেছেন। যদিও কোন পক্ষই আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেনি, তথাপি গণমাধ্যম সূত্রগুলো জানিয়েছে যে আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এল.এন.জি আমদানির সম্ভাবনা, সেইসাথে চলমান সহযোগিতা ও ভবিষ্যত প্রকল্পগুলো নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে। বর্তমানে পিটার হাস এক্সেলারেট এনার্জির একজন কৌশলগত উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন – এই টেক্সাস ভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানিটি কক্সবাজারের মহেশখালীতে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল পরিচালনা করছে। এবং ভবিষ্যতে পটুয়াখালীর পায়রায় আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। হাস এই কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। এক্সেলারেট এনার্জির মতো কোম্পানিগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির (IPS) সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি হল আধুনিক ও পরিশীলিত ‘soft imperialism’, যা যুক্তরাষ্ট্র তাদের অর্থনৈতিক কূটনীতির মাধ্যমে প্রদর্শন করে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অষ্টাদশ শতাব্দীর ঔপনিবেশিক দখলদারিত্বের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব নিশ্চিত করে না। বরং, এটি জ্বালানি চুক্তির মতো হাতিয়ার ব্যবহার করে এমন একটি পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ব্যবস্থা গড়ে তোলে যেখানে জাতিগুলো স্বেচ্ছায় মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের সাথে নিজেদেরকে যুক্ত করে। আর এই বৈশ্বিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করে যে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ এবং ভূ-রাজনৈতিক চোকপয়েন্টগুলো (chokepoint) চূড়ান্তভাবে মার্কিন শক্তির দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত ও সুরক্ষিত থাকে। সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জ্বালানি চুক্তির মানে কেবল আমাদের জ্বালানি অবকাঠামো হস্তান্তর এবং অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলা নয়, বরং তার চেয়েও বেশি কিছু। এছাড়াও, এটি যে শুধুমাত্র আমদানিকৃত ব্যয়বহুল এল.এন.জি’র উপর স্থায়ী নির্ভরশীলতা তৈরি করে আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে তা নয়। বরং, এগুলোর পাশাপশি আরও যা ঘটবে তা হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মতো জ্বালানি আমদানির উপর নির্ভরশীল দেশগুলির জন্য সমুদ্রপথগুলোকে উন্মুক্ত করে দেবে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ তার জ্বালানি চাহিদা পূরণের জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামুদ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এবং, আমাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্ভর করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর, যা ব্যবহার করে সে তার আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানের কারণেই এটি এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। বঙ্গোপসাগর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অঞ্চল, যেটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ চোকপয়েন্ট (chokepoint) মালাক্কা প্রণালীর পাশে অবস্থিত এবং চীনের প্রধান জ্বালানি সরবরাহ রুটগুলোর উপর নজরদারি করতে সক্ষম। তাই, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই এই অঞ্চলে তার সবচেয়ে সামর্থ্যবান প্রক্সি জাপানকে বাংলাদেশের মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে বিনিয়োগ করার জন্য নিযুক্ত করেছে। এই বন্দরটি বড় আকারের মাদারশিপ ধারণ করতে সক্ষম, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বৈশিষ্ট্য। ভবিষ্যতে এটি জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, এবং অন্যান্য কোয়াড (Quad) অংশীদারদের নৌযানগুলিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারবে। এটি সরাসরি আমাদের নিজস্ব স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে সর্বাগ্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলগত স্বার্থকে রক্ষা করার শামিল।
হে দেশবাসী, আমরা আপনাদেরকে আমাদের সার্বভৌমত্ব ও ভবিষ্যতের আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করছি। আর এই বিপদ হলো সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ আধিপত্য, যা আমেরিকার পতাকা উঁচিয়ে তার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে আমাদের তীরে হাজির হয় না। বরং, এটি হাজির হয় আমাদের সচিবালয়গুলিতে, বিভিন্ন ধরণের জ্বালানি চুক্তি নিয়ে। এটি আরও প্রতারণাপূর্ণ, এবং, তাই, আরও বেশি বিপজ্জনক। সামনে এটি একটি অংশীদারিত্বের চেহারা নিয়ে আসে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের কৌশলগত বন্দর ও সমুদ্র ব্যবহারের সুযোগ নেয়, এবং আমাদের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে তোলে। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই চুক্তিগুলো আমাদের দেশের পুঁজিবাদী অভিজাত শ্রেণী ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের নীরবতা কিনে নেয়। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে, আমেরিকার এসব চুক্তি সম্পর্কে আমাদের পরিচিত আন্তরিক রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের নীরবতা, বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে। তাদের এই নীরবতা হলো আমাদের সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ সময় ধরে যুক্ত থাকার ফলাফল, যা এমন নেতাদের জন্ম দিয়েছে যারা মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির সাথে তাল মিলিয়ে চলে। বড়জোর, এই চুক্তিগুলোকে তারা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, এই সত্য উপলব্ধি না করেই যে রাজনৈতিকভাবে এটি আমাদেরকে অংশীদারের পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিরস্থায়ী ক্লায়েন্টে পরিণত করে। অতএব, হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, আপনারা নিজেদের পরাধীনতার বিষয়ে আর নীরব দর্শক হয়ে থাকবেন না। সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম ও যোগ্য দল হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর সাথে ঐক্যবদ্ধ হোন। আপনাদের জোরালো এবং অটল সমর্থন নিয়ে হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফত রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তুত রয়েছে, যা সাম্রাজ্যবাদীদের অধীন হওয়া থেকে রক্ষা করে আপনাদেরকে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তির অবস্থানে নিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ্ ﷻ বলেন:
﴿وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُم فِي الأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ …﴾
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে আর সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে খিলাফত দান করবেন, যেমন তিনি দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে” [সূরা আন-নূর: ৫৫]
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস