সর্বনাশা বাজেট ২০২৪-২৫: পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অর্থনৈতিক-যুলুমের প্রতিচ্ছবি; “আর যে আমার স্মরণ (কুর‘আন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নিশ্চয়ই তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ, আর আখিরাতে তাদেরকে অন্ধ অবস্থায় উঠানো হবে” [সূরা ত্বাহাঃ ১২৪]
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
সর্বনাশা বাজেট ২০২৪-২৫: পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অর্থনৈতিক-যুলুমের প্রতিচ্ছবি;
“আর যে আমার স্মরণ (কুর‘আন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নিশ্চয়ই তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ, আর আখিরাতে তাদেরকে অন্ধ অবস্থায় উঠানো হবে” [সূরা ত্বাহাঃ ১২৪]
দশকের পর দশক ধরে নব্য-উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ও বিশ্বব্যাংক (WB) এর পরামর্শে দেশে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে; যেমন বেসরকারীকরণের নামে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ খাত দেশী-বিদেশী পুঁজিপতি কোম্পানীর নিকট ইজারা প্রদান করায় দেশের জনগণকে নিজেদের সম্পদ ঐসব লোভী পুঁজিপতি কোম্পানীর নিকট থেকে ক্রয় করতে হচ্ছে এবং ক্যাপাসিটি চার্জসহ চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। মুক্তবাজারের নামে দেশের বাজার এখন বিদেশী কোম্পানীগুলোর দখলে, যেমন বহুজাতিক মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলো ক্রমাগত জনগণের পকেট লুট করছে। IMF এবং বিশ্বব্যাংকের আরোপ করা শর্তানুসারে পৃষ্ঠপোষকতা উঠিয়ে নিয়ে পাট-চিনি শিল্প এবং কৃষি ধ্বংস করার মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য বিদেশ নির্ভরশীল করানো হয়েছে। বৈদেশিক ঋণনির্ভর মেগাপ্রকল্পসমূহ শাসকগোষ্ঠীর নিজেদের, কতিপয় পুঁজিপতির ও উপনিবেশবাদীদের অর্থনৈতিক ও ভু-রাজনৈতিক স্বার্থে গ্রহণ করা হচ্ছে, যে ঋণের ভার জনগণকে বহন করতে হচ্ছে। ফলে, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে পরনির্ভরশীল, ভঙ্গুর ও দেউলিয়াত্বের পথে। এমন প্রেক্ষাপটে, আই.এম.এফ-এর পরামর্শ মোতাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার ও করের পরিধি বৃদ্ধি করে জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে অর্থের জোগান দিতে সরকারকে আগের চেয়ে বেশী ঋণ নিতে হচ্ছে [যুগান্তর, ০৫ জুন, ২০২৪]। একদিকে জনগণের উপর ঋণ ও করের বোঝা, আর অন্যদিকে দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা গোষ্ঠীর জন্য কর ছাড় দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অনৈতিক ও দুর্নীতিগ্রস্থ চেহারাকে উন্মোচিত করেছে। কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে হাসিনা বলেছে, “মাছ ধরতে গেলে তো আধার দিতে হয়। দিতে হয় না?” [banglanews24, June 7, 2024]। তাই নতুন বাজেট মানেই জনগণের উপর ঋণ ও করের বোঝা বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যার ফলে বাজেট পেশ করার পূর্বে জনগণ আশান্বিত হওয়ার পরিবর্তে আতংকিত থাকে। এই অবস্থায় পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদরা দেশের জনগণের দুর্দশা সমাধানে বাস্তবভিত্তিক সমাধান প্রদান করতে শুধুমাত্র ব্যর্থ হচ্ছে তা নয়, বরং তারা আইএমএফ-এর শর্ত যেমন ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করতে বর্তমান শোষণমূলক করের পরিধি বৃদ্ধি এবং আইএমএফ-এর পরামর্শ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের তাগিত দিচ্ছে। যেখানে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে সুশাসন, গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতার কথা বলে তারা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে দায়মুক্তি দেয়ার অপচেষ্টা করছে।
হে দেশবাসী, দশকের পর দশক ধরে আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীর চেহারার পরিবর্তন হলেও জনগণের উপর যুলুমের পরিবর্তন হয়নি, কারণ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। এই ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক যুলুম ছাড়া কোন কল্যান কিভাবে আশা করা যায়! অনেক হয়েছে, হে দেশবাসী, অনেক হয়েছে! এই দুরাবস্থা কখনোই পরিবর্তন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা বর্তমান স্রষ্টাবিবর্জিত পুঁজিবাদী চিন্তা ও ব্যবস্থা আমাদের মনমগজ থেকে মূলোৎপাটন করি এবং আল্লাহ্ ﷻ কর্তৃক মনোনীত খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে মনোনিবেশ করি; “নিশ্চয়ই, আল্লাহ্ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা নিজেদের পরিবর্তন করে” [সূরা রা’দঃ ১১]।
খিলাফত ব্যবস্থায় শোষণমূলক কর ব্যবস্থা বিলুপ্ত হবে, কারণ ইসলামে কর আরোপ করা হয় সম্পদ ও উৎপাদনের উপর জনগণের আয়-ব্যয়ের উপর নয়। এই ব্যবস্থায় নাগরিকদের (মুসলিম ও অমুসলিম) ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসায়-বাণিজ্য ও আমদানী-রপ্তানীর উপর ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ; ওকবা ইবনে আমির থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, “যে মাক্স (শুল্ক) আরোপ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না”। ফলে দ্রব্যমুল্যের উপর করের কোন প্রভাব থাকবেনা। ইসলামী ব্যবস্থায় বাজেটে সকল জনগণের মৌলিক চাহিদা যেমন অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান এবং মৌলিক অধিকার যেমন শিক্ষা-স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খলিফার উপর অর্পিত ফরজ দায়িত্ব। “আর তাদের ধন–সম্পদে নির্ধারিত অধিকার রয়েছে, ভিক্ষুক এবং নিঃস্বদের” [সূরা আল-মা’আরিজঃ ২৪-২৫]। ফলে দারিদ্র জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে প্রয়োজন হলে ধনীদের উপর কর আরোপ করা হবে। তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎসহ গণমালিকানাধীন সম্পদকে বেসরকারীকরণ করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “তিন জিনিষের মাঝে সকল মানুষ শরীক। এগুলো হচ্ছে পানি, ঘাস (চারণ ভূমি) এবং আগুন”। গণমালিকানাধীন সম্পদ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করে প্রাপ্ত রাজস্ব জনকল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, ইসলামী বাজেটই হচ্ছে জনকল্যানমূলক। আল্লাহ্ ﷻ বলেন,
فَمَنْ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلاَ يَضِلُّ وَلاَ يَشْقَى﴾…﴿
“… আর যে আমার পথনির্দেশ অনুসরণ করবে সে [দুনিয়াতে] বিপথগামী হবে না এবং [আখিরাতে] কষ্টে পতিত হবে না” [সূরা ত্বাহাঃ ১২৩]।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস