প্রাণঘাতী অব্যাহত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাসমূহ প্রমাণ করে যে, শেখ হাসিনার তথাকথিত ‘উন্নয়নের সরকার’ প্রকৃতপক্ষে এক ব্যর্থ সরকার
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রাণঘাতী অব্যাহত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাসমূহ প্রমাণ করে যে, শেখ হাসিনার তথাকথিত ‘উন্নয়নের সরকার’ প্রকৃতপক্ষে এক ব্যর্থ সরকার
হাসিনা সরকার তার ‘অলৌকিক নজিরবিহীন উন্নয়নের’ মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত করছে। শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের নির্মম পরিণতি হিসেবে একের পর এক বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মানুষ এখন আতঙ্কিত। গত ৪ঠা এপ্রিলে ঢাকার বঙ্গবাজারের কাপড়ের মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর ১৫ই এপ্রিলে নিউ মার্কেটে আরেকটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এবং, ১৬ থেকে ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরা, আগারগাঁও ও ওয়ারী এলাকার মার্কেট, বস্তি ও আবাসিক ভবনে আগুন লাগে। যত্রতত্র আগুন লেগে দেশ প্রতিনিয়ত পুড়ছে, অথচ নির্বিকার ও উদাসীন হাসিনা সরকার পূর্বের মতোই এর দায়ভার ভুক্তভোগীদের কাঁধে চাপিয়ে যাচ্ছে। জনগণ আর সরকারকে বিশ্বাস করে না, এবং তারা মনে করে মার্কেটগুলোতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের পেছনে শাসকদের হাত রয়েছে, যাতে তারা তাদের কায়েমি স্বার্থ হাসিল করতে পারে। আগুন ও বিস্ফোরণ প্রতিরোধে অবহেলা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারের ব্যর্থতা জনগণের মনে অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। তাই ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও নিপীড়নের স্টিমরোলার চালানো ব্যতিরেকে সরকার আর জনগণের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারছে না – যা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষণ। এই হাসিনা সরকার পঁচে যাওয়া পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এক আদর্শ নমুনা, যা কেবল পুঁজিপতি অভিজাত শ্রেণী ও তার রাজনৈতিক সহযোগীদের স্বার্থ রক্ষায় তার সমগ্র উন্নয়ন নীতিমালা প্রস্তুত করেছে। এ কারণেই আমরা দেখতে পাই সরকার ‘মেট্রো রেল’ নিয়ে বড়াই করে, অথচ আগুন নেভানোর জন্য একটি আধুনিক ল্যাডার সিস্টেম ও অন্যান্য দ্রুত ও নিখুঁত অগ্নিনির্বাপণ প্রযুক্তি নিশ্চিত করতে পারে না। এটা লজ্জাজনক বিষয় যে, অগ্নিনির্বাপণের জন্য বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হয়! হাসিনার ‘সোনার বাংলায়’ আমরা বহুতল শপিং মল এবং আন্তর্জাতিক ফাইভ স্টার চেইন হোটেল দেখি, কিন্তু আগুন নেভানো ও মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি সরবরাহ ও আধুনিক হাইড্রেন্ট সিস্টেমের কোনো ব্যবস্থা নেই।
হে দেশবাসী! শুধুমাত্র মানুষের খেয়াল-খুশির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ব্যবস্থার উপর ভরসা রাখলে এই দুঃখজনক অবস্থা থেকে আমাদের কখনও উত্তরণ ঘটবে না। এই ধরণের অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণ হচ্ছে একটি অনিবার্য পরিণতি, কারণ আমরা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র শাসনব্যবস্থা পরিত্যাগ করে মানবসৃষ্ট ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা আঁকড়ে ধরেছি। এই ব্যবস্থা এমন শাসক ও রাজনীতিবিদ তৈরি করছে যারা জনগণের বিষয়ে উদাসীন এবং যেকোন ধরনের জবাবদিহিতার বাইরে। এই দুর্দশার একমাত্র সমাধান হল নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্’র অধীনে ইসলামী সিয়াসাহ্ (রাজনীতি) পুনরায় চালু করা। সিয়াসাহ্ বা শারী‘আহ্ বিধান অনুযায়ী উম্মাহ্’র বিষয়াদি দেখাশোনা করা আমাদের দ্বীনের অংশ, এবং রাষ্ট্রপ্রধান (খলিফা) শারী‘আহ্ কর্তৃক নির্ধারিত ফরয হুকুম হিসেবে মানুষের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। আমির-উল-মুমিনীন হিসাবে দায়িত্ব পালনের জন্য খলিফা তার সাথে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মু‘য়াবিন (সহকারী) এবং স্থানীয় পর্যায়ে ওয়ালী (গভর্নর) ও আমিল (মেয়র)-দেরকে নিয়োগ দেবেন। এই ওয়ালী এবং আমিলগণ স্থানীয় পর্যায়ে বর্তমান ব্যবস্থার আওয়ামী-বিএনপি মেয়র ও কাউন্সিলরদের মতো শারী‘আহ্ বহির্ভূত কাজে খলিফার সহযোগী বা বন্ধু হবেন না। বরং তারা জনগণের যত্ন নিবেন ও তাদের প্রয়োজনাদি পূরণ করবেন, এবং তাদের কর্মক্ষমতার বিষয়ে খলিফার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবেন। জনগণের বিষয়াদি ব্যবস্থাপনা এবং তাদের অধিকারসমূহ নিশ্চিতে খিলাফত রাষ্ট্রের সুসংগঠিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকবে। যদিওবা খিলাফত ব্যবস্থায় শাসকের কর্তৃত্ব কেন্দ্রীভূত থাকে, তথাপি যেকোন দুর্যোগ ও সংকটে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিতে নির্বাহী প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীভূত করা হয়। খিলাফতের ১৪০০ বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাসে এটি কখনই সামগ্রিকভাবে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি, এমনকি কোন দুর্যোগের সময়েও নয়। এই আধুনিক যুগে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে মুসলিম বিশ্বের মানুষকে ক্রমাগত উচ্চমূল্য দিতে হচ্ছে, অথচ আব্বাসীয় খলিফা মনসুরের (৭৫৪-৭৭৫) শাসনামলে ইরাকের এই একই বাগদাদ নগর একটি সমৃদ্ধ শহর হিসেবে সুপরিচিত ছিল। আর সেসময়ে ইউরোপ যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, তখন রাতের বেলা মানুষ বাগদাদের রাস্তায় রাস্তায় আলো জ্বলতে দেখতে পেত। প্রকৃতপক্ষে, সেটি ছিল খিলাফতের অধীনে শক্তিশালী ইসলামী সভ্যতা, যা সামারকান্দ, বুখারা, গ্রেনাডা, বাগদাদ, কায়রো, দামেস্ক এবং ইস্তাম্বুলের মতো সমৃদ্ধ নগরগুলোকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পুরো বিশ্বের জন্য সমৃদ্ধি ও প্রশান্তিময় নগর জীবনের উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
হে মুসলিমগণ! আমরা আপনাদেরকে আমাদের মহান প্রভু আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) কর্তৃক মনোনীত এই বরকতময় ব্যবস্থার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এই ধর্মনিরপেক্ষ দুর্বৃত্ত শাসকগোষ্ঠী ও তাদের ব্যবস্থার বোঝা বহন করবেন না, এবং তাদের উদাসীনতা ও বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হওয়াকে আর মেনে নেবেন না। দেরি না করে তাদের বিরুদ্ধে জেগে উঠুন এবং হিযবুত তাহ্রীর-এর নেতৃত্বে নবুয়্যতের আদলে খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন, যাতে আপনারা এই দুনিয়াতে একটি নিরাপদ ও শান্তিময় জীবন পেতে পারেন এবং আখিরাতে নিজেদেরকে বাঁচাতে পারেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
* فَاِمَّا يَاۡتِيَنَّكُمۡ مِّنِّىۡ هُدًىۙ فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَاىَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشۡقٰى وَمَنۡ اَعۡرَضَ عَنۡ ذِكۡرِىۡ فَاِنَّ لَـهٗ مَعِيۡشَةً ضَنۡكًا وَّنَحۡشُرُهٗ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِ اَعۡمٰ*
“সুতরাং অবশ্যই আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সঠিক পথের নির্দেশ আসবে, তখন যে আমার পথনির্দেশ অনুসরণ করবে সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না। আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ এবং আমি তাকে কিয়ামাত দিবসে উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়” [সূরা ত্বহা: ১২৩-১২৪]
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া কার্যালয়